ঘুরে এলাম সিঙ্গাপুর (পর্ব - ২)

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান (তারিখ: সোম, ১৮/০৮/২০০৮ - ১০:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২. প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
একঘণ্টার গভীর (!) নিদ্রা শেষে সকাল সাড়ে সাতটায় ঘুম থেকে উঠলাম। সিঙ্গাপুরে আমার প্রথম দিন। শরীর ঝরঝরে লাগছে। গরম পানি দিয়ে দ্রুত শাওয়ার সেরে নেয়ায় ক্লান্তির লেশমাত্র আর অনুভব করলাম না। কর্মক্ষেত্রের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নানা সময়ে নানা বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। তারমধ্যে একটা বিষয় ছিলো এনএলপি, নিউরো লিঙ্গুয়িষ্টিক প্রোগ্রাম। যেখানে শেখানো হয়েছিলো কিভাবে অল্প বিশ্রামে শরীরের স্বাভাবিক সতেজতা ফিরিয়ে আনা যায়। ইতিপূর্বে মাঝে মাঝে সেটা কাজেও লাগিয়েছি। প্রথম দিকে পুরো বিষয়টা গাজাখুরি মনে হতো। না ঘুমিয়ে আমার একটানা ৮৪ ঘণ্টা কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এনএলপির সাহায্য ছাড়াই। মনে আছে শেষদিনে আমি প্রলাপ বকতে শুরু করেছিলাম। আর এনএলপির সাহায্য নিয়ে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে আমি দীর্ঘদিন (প্রায় ১ মাস) কাজ করেছি এমন ঘটনা আছে। তবে এবার যে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছি কে জানতো!
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে
পনের মিনিটে কাপড় পরে নাস্তা সেরে ঠিক আটটায় হোটেল লবিতে হাজির হলাম। ড্যানি তার আগেই উপস্থিত। জামার্ন বংশোদ্ভূত ড্যানির গাইড হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। সিঙ্গাপুরের ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থান সম্পর্কের তার চমৎকার বর্ণনা আমার আজীবন মনে থাকবে। ড্যানি স্বাগত জানিয়ে অল্প কথায় আমাদের আজকের কর্ম পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করলো। দেখলাম হোটেলের সামনেই সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের মার্সিডিজ বাস দাঁড়ানো। বাসে ওঠার জন্য অনুরোধ করলো ড্যানি। আমি আমার ছোট্ট দল নিয়ে বাসে উঠেই দেখলাম অন্যরাও আগেই উঠে বসে আছে। পাকিস্তান, ভারত আর শ্রীলঙ্কা থেকে আরো চারটা টিম এসেছে। সবার থাকার ব্যবস্থা এই পার্ক হোটেলেই। সব মিলিয়ে আমরা মোট ১২জনের এক মাঝারি দল। সবাই আমাদের স্বাগত জানালো। প্রথম দিনে আমাদের ফ্লাইট মিসের দুঘর্টনা সবাই জেনে গেছে। আমি একটু লজ্জাই পেলাম। তবে আমরা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করিনি বলে ড্যনি আমাদের আস্বস্ত করলো। প্রথম দিনে আবহাওয়া খারাপ থাকায় দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ বাতিল হয়েছিলো। যাই হোক বাস ছেড়ে দিলো। আমাদের গন্তব্য বিখ্যাত সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটাল।
প্রায় প্রত্যেক বড় হাসপাতালের নিচতলাতেই আছে গিফট শপ, ফুড কোর্ট ইত্যাদি। সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালের নিচে তেমনি একটা শপের সামনে

বাস দ্রুত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটলো। আমি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ক্লিক ক্লিক বিরামহীন ছবি তুলতে থাকলাম। রাস্তা, গাছ, দুপাশের আকাশচুম্বী অট্টালিকা, সবুজ ঘাসের অসাধারণ পার্ক, শপিংমল, মানুষের চলাচল, মন্যুমেন্ট কিছুই বাদ থাকলো না। সবই নতুন, সবই সুন্দর, সবই যেন অবাক বিস্ময়ের অতলান্ত আধার।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালের সেমিনার শেষে আমরা হসপিটাল ঘুরে দেখতে বের হলাম। সে আরেক এলাহী ব্যাপার। এক একটা হসপিটাল এতো বড় যে সবগুলো বিভাগ হেঁটে ঘুরে দেখা মোটেও সুখকর ব্যাপার নয়। আমরা বিশেষ বিশেষ বিভাগগুলো ঘুরে দেখলাম কেবল। এরপর গেলাম সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বিখ্যাত, পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী মা-শিশু বিষয়ক হাসপাতাল কে কে উইমেন এন্ড চিলড্রেন হসপিটালে, সংক্ষেপে কেকেএইচ নামেই হাসপাতালটি বিখ্যাত। প্রতিটি সেমিনার শেষে নানা ধরনের জার্নাল, লিফলেট আর ব্রোসিয়ারে ব্যাগ ভরে উঠতে লাগলো। অভিভূত হলাম বিখ্যাতসব প্রফেসরদের সাথে পরিচিত হয়ে। প্রথমে প্রফেসরদের নাম, পদবী আর কৃতিত্বের ফিরিস্তি শুনে মনে হতো - ডাক্তার সাহেবের বয়েস বোধকরি আশির কম এক মাসও না। কিন্তু দর্শনলাভের পর দেখলাম কারো বয়েসই বোধকরি পয়তাল্লিশের ওপর হবে না। নানা বিষয়ে এক একজন দিকপাল। আর হরেক রকম অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দেখে ভাবছিলাম, চিকিৎসাবিজ্ঞান কোথায় চলে গেছে আর আমরা কোথায় বাস করছি। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে। ভাবছি সিঙ্গাপুরের হেলথ কেয়ার সার্ভিস সম্পর্কে আলাদা একটা লেখায় পুরো বিষয়টা তুলে ধরবো। এখানে তুলে ধরলে ব্যাপারটা আর ভ্রমণ কাহিনীতে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে হয় না।

সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত মা ও শিশু হাসপাতাল কেকেএইচ, শপিংমলের সামনে দাঁড়িয়ে, মা ও শিশুর জন্য বলতে গেলে সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়
সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে এলাম। ঘণ্টখানেক পরেই ডিনারে যেতে হবে। রুমে ব্যাগ রেখে, ফ্রেশ হয়ে, কাপড় পাল্টে দ্রুত লবিতে নেমে এলাম। অন্যরা তখনো লবিতে নামেনি দেখে তাড়াতাড়ি ব্যক্তিগত কিছু টেলিফোন সেরে নিলাম। সিঙ্গাপুরে আমার এক আতœীয় আছেন, খায়রুল ভাই, তাকে রাত দশটায় হোটেলে আসতে বললাম। ইতিমধ্যে অন্যরা চলে এসেছে। আর দেরি না করে বাস আমাদের নিয়ে কাছের এক রেষ্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে ছুটলো। ড্যানি সময়ের ব্যাপারে খুবই কঠোর। শুধু ড্যানি নয়, পুরো সিঙ্গাপুর শহরটাই যেন ঘড়ির কাটায় চলে। সময় মেনে জীবন কিভাবে চলে এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আমার আর চোখে পড়ে নি। পুরো ভ্রমণে এতটাই সময় মেনে চলা হয়েছে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনভ্যাসের জন্য তাল মেলাতে গিয়ে হাপিয়ে উঠছিলো। রেষ্টুরেন্টার নাম ভুলে গেছি। বহুতল ভবন। আমাদের জন্য চর্তুথ তলায় আগে থেকেই জানালার পাশে একটা টেবিল বুক করা ছিলো। আমি স্বভাবতই জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। একটু পরেই রেষ্টুরেন্টের মালিক এসে আমাদের সাথে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গেলেন। আমরা তার ব্যবহারে অভিভূত হলাম। ডিনার শেষে রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় আমি যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ভদ্রলোক (রেষ্টুরেন্ট মালিক) নিজে বালতিতে পানি নিয়ে মপ দিয়ে রেষ্টুরেন্ট ফ্লোর পরিস্কার করছেন। বাংলাদেশে উহা স্বপ্নেও সম্ভব না। মালিকতো দূরের কথা রেস্টুরেন্ট স্টাফ পর্ষন্ত কোনো কিছু মোছা বা পরিস্কার করাকে চরম মানহানীকর মনে করে। যাই হোক সে আরেক কাহিনী।
ডিনার শেষে সবার সাথে গল্প করতে করতে কখন যে দশটা বেজে গেছে টের পাই নি। খায়রুল ভাইয়ের ফোন পেয়ে সম্বিত ফিরে পেলাম। সোজা হোটেলে চলে এলাম। তারপর তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম রাতের সিঙ্গাপুর ঘুরতে। হোটেলে সাংবাদিক সফরসঙ্গীদের গভীর নিদ্রায় রেখে, সেমিনার, হাসপাতাল, তথ্য-উপাত্ত সব ভুলে গিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। ট্যাক্সি নিয়ে সোজা চলে এলাম লিটল ইন্ডিয়া।
লিটল ইন্ডিয়া বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা। বাংলাদেশীদের জন্য লিটল ইন্ডিয়া হচ্ছে এক রকম মিলন কেন্দ্র। বাঙালীদের ভিড় এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি। প্রতি সপ্তাহের রোববার ছুটির দিনে সিঙ্গাপুরবাসী সব বাঙালীদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয় লিটল ইন্ডিয়া এলাকা। বিশেষ করে সেরাঙ্গুনের মোস্তফা সেন্টারকে ঘিরেই এই আড্ডাস্থল। মোস্তফা সেন্টার সিঙ্গাপুরের দিন রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা সবচেয়ে বড় শপিংমল। কী পাওয়া যায় না সেখানে! দামও তুলনামূলক সস্তা। অচার্ড রোড, সানটেক সিটি কিংবা ভিভো সিটির তুলনায় পানির দর। রাত চারটা পর্যন্ত লিটল ইন্ডিয়ার প্রায় সব রাস্তা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো ঘুরে বেড়ালাম।

সেরাঙ্গুনের এক দোকান মালিকের সাথে। দেখে বোঝার উপায় নাই। প্রথমে ভেবেছিলাম ফুটপাথের বিক্রেতা।

আমার মনে হলো সিঙ্গাপুরবাসী জানে কিভাবে তাদের দেশের সম্পদকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে হয়। সাধারণ একটা উদাহরণ দেয়া যাক (দর্শনীয় স্থান তো দূরের কথা), কাম্পং গ্লামের সুলতান মসজিদ। ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়া তেমন দেখার কিছু নাই। আকারে বিশাল। সিঙ্গাপুরের প্রথম মসজিদ। আঠেরশ শতকের শুরুর দিকে (সম্ভবত ১৮২৬ সালে) মসজিদটি তৈরি করা করে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। সুলতান হুসেইন শাহ্ - এর সাথে চুক্তির অংশ হিসেবে এ মসজিদটির তারা তৈরি করে দেয় সেখানকার মুসলীম জনগোষ্ঠি আর মালয়দের জন্য। এতো অসাধারণ করে তুলে ধরা হয়েছে এই মসজিদ যা বলে শেষ করা যাবে না। পাশেই ছোট ছোট দোকানে বিক্রি হচ্ছে মুসলমান ট্যুরিস্টদের জন্য নানা ধরনের সুভ্যিনিয়র, সুলতান মসজিদের ভিউকার্ড। বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে সুলতান মসজিদের ওপর বুকলেট। আরো কত কী! ঢাকায় এ রকম ঐতিহ্যবাহী মসজিদের অভাব নেই। বায়তুল মোকররম মসজিদ, খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ, সাত মসজিদ, হাজী খাজা শাহবাজ মসজিদ ইত্যাদি ইত্যাদি কয়েক ডজন মসজিদের নাম বলা যাবে। শুধু মসজিদ কেনো ট্যুরিস্টদের জন্য আমাদের দেশে অমিত সম্ভাবনার এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যা অবহেলায়, পর্যাপ্ত গুরুত্বের অভাবে স্রেফ পড়ে আছে।

সুলতান মসজিদের সামনে

খায়রুল ভাই সাথে থাকায় ম্যাপের সাহায্য তেমন নিতে হয় নি। লিটল ইন্ডিয়া পুরোটা চষে বেড়ালাম। মাঝে মধ্যেই নোটবুকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য টুকে নিচ্ছিলাম। হোটেলে যখন ফিরলাম তখন ভোর হতে তেমন আর বাকি নেই।
সিঙ্গাপুরের রিক্সা, ছুটির দিনে চায়না টাউন এলাকায় চোখে পড়ে বেশিসিঙ্গাপুরের রিক্সা, ছুটির দিনে চায়না টাউন এলাকায় চোখে পড়ে বেশি

(পর্ব তিন - এ আছে আরো অনেক কথা)


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুন লাগছে সিরিজটা। পরের পর্ব পড়ার এক তীব্র আকর্ষণ অনুভব করছি। তবে ছবি খুব কম হয়ে গেছে। কারো কাছ থেকে শিখে নিয়ে আরো বেশি বেশি ছবি আপলোড করুন। ছবি কিন্তু এক অর্থে ভ্রমণকাহিনীর প্রাণ হাসি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ছবি আপলোড করেছি বহুকষ্টে। এবার কেমন লাগছে?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এইবার আসলেই দারুন লাগছে হাসি
ফেইসবুকে সব ছবি আপলোড করেছেন নিশ্চয়ই। আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি একটা।

ফারুক হাসান এর ছবি

মোস্তফা সেন্টার সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় শপিংমল।

এই তথ্যটি বোধকরি ঠিক নয়। যেমন, আপনার এই লেখাতেই উল্লেখকরা ভিভোসিটি মোস্তফার চেয়ে অনেক বড়। ভিভো'র মত আরো অনেক লাক্সারী শপিং কমপ্লেক্স সিঙ্গাপুরে আছে যেগুলোতে কেবল ঘুরে ফিরে দেখতেই অনেক সময় লাগে, শপিং করলে তো দীর্ঘসময়ের ব্যাপার।
তবে দামের দিক থেকে মোস্তফা অনেক সস্তা। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানীদের দরকারী প্রায় সবজিনিসই এখানেই একত্রে পাওয়া যায়। এছাড়া, এর পাশেই রয়েছে অগ্রণী এক্সচেঞ্জ। মূলত এই দুই কারণেই সেরাঙ্গুন এলাকায় প্রতি রবিবার বাংলাদেশি শ্রমজীবি মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা যায়।

সিরিজ ভালো এগুচ্ছে। চলুক
আর কোথায় কোথায় গেলেন তার বর্ণনা দিয়ে তাড়াতাড়ি পরের পর্ব নামিয়ে ফেলুন।

আর হ্যা, নিউরো লিঙ্গুয়িষ্টিক প্রোগ্রামের ব্যাপারে পরে একটা পোষ্ট দিয়েন। শিখতে হবে। যা রোবোটিক দিনকাল পড়ছে মন খারাপ

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে ২৪ ঘণ্টা খোলা শপিংমলগুলোর মধ্যে মোস্তফা সেণ্টারই সবচেয়ে বড় এতে কোন সন্দেহ নেই। লেখায় ঠিক করে দিয়েছি। শুনেছি মোস্তফা সেন্টার আকারে আরো বড় করার কাজ চলছে।

এন এল পি অনেকটা মেডিটেশনের মতো। তবে লেখার মতো তত কিছু জানি না। আমার বন্ধুদের এ নিয়ে নানা মজার মজার ঘটনা আছে সেগুলো হয়ত শেয়ার করা যাবে।

সময় নিয়ে লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।

santosh এর ছবি

লেখায় গতি আছে। বর্ণনাও অসাধারণ। কিন্তু বারবার বাংলাদেশের সাথে তুলনা করায় খারাপ লেগেছে। ওদের এটা আছে, আমাদের এটা নেই। এভাবে ভাববার কোন কারণ দেখি না। তাহলে আরও হাজারটা তুলনা করা যাবে। এবং শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে যে সিঙ্গাপুরিয়ান না হলে সিঙ্গাপুরের মত সুন্দর দেশ তৈরি করা যাবে না। আমাদের দেশ আমাদের মতই। আমরা যেমন আমাদের দেশও তেমন।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু যা দেশের জন্যে ভালো, আমাদের সাধ্যের মধ্যে সেটুকুও যদি না করি তাহলে আর হলো কী! দেশের অমিত সম্ভাবনার টু্রিজম সেক্টর কিভাবে উন্নত হবে, কিভাবে সারা বিশ্বকে আকৃষ্ট করবে। সেদিক দিয়ে সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে ১০১টা জিনিস শেখার আছে।

মদন্মোহন এর ছবি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান লিখেছেন:

এন এল পি অনেকটা মেডিটেশনের মতো। তবে লেখার মতো তত কিছু জানি না। আমার বন্ধুদের এ নিয়ে নানা মজার মজার ঘটনা আছে সেগুলো হয়ত শেয়ার করা যাবে।

মোটেই না। NLP-তে মেডিটেশন-এর 'ম'-ও নেই, কখনও ছিলোওনা।

আমার সংগ্রহে NLP বিষয়ে প্রচুর বই আছে (এমনকি NLP-র আবিষ্কর্তা ব্যান্ডলার-গ্রাইন্ডার-এর প্রথম বই "স্ট্রাকচার অব ম্যাজিক"-ও আছে)। কিন্তু কোথাও মেডিটেশন-এর নামগন্ধ পাইনি।

যাঁর কাছ থেকে আপনি ট্রেনিং নিয়েছেন, সম্ভবতঃ এই ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান সীমিত। হয়তো, তিনি NLP-র সাথে সিল্ভা মেথড মিশিয়ে গোজাঁমিল মেরেছেন।

সুন্দর ভ্রমণকাহিনী। পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায়।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

মেডিটেশান বা সিলভা মেথড কোনটা সম্বন্ধেই আমার বিশেষ জ্ঞান নেই। সেটা আমি আগেই বলেছি। যার কাছ থেকে শিখেছি তিনি NLP নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। সুতারং তার জ্ঞান সীমিত এ কথা বলা ঠিক হবে না। বরং সেটা আমার ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। যদি সম্ভব হয় শ্রীলঙ্কার রঞ্জন ডি সিলভার "মাইন্ড প্রোগ্রামিং ফর সেলস সাকসেস" অথবা আয়ান ম্যাকডার্মোট ও যোসেফ ওকনোরের NLP & Health বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আমার যা সিমীত জ্ঞান তার উৎস এই বই দুটি, কিছু ইন্টারনেট আরর্টিকেল আর পেশা বিষয়ক হাতে কলমে ট্রেনিং।

কীর্তিনাশা এর ছবি

লেখা পুরা দৌড়াইতাসে সেই জন্য পাঁচতারা। কিন্তু থাইমা গেলে কইলাম নাইতারা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

থামবো না, থামবো না, সবে তো শুরু, দেখতে থাক। আরো অনেক কিছু নিয়া আসতেছি।

দৃশা এর ছবি

লেখা সাবলীল হচ্ছে... বেশ ভাল।
-----------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এক কাজ করেন, একদিন সময় করে সিঙ্গাপুরের একপ্রান্ত থেকে ঘড়ি ধরে হাটা শুরু করেন; দেখেন আরেক প্রান্তে পৌছাতে কতো সময় লাগে। দেখবেন একটা রেকর্ড হয়ে গেছে! আপনার এন.এল.পি না কি যেন ঐটাও কাজে লাগতে পারে এই ক্ষেত্রে!

বাঙালীর তো রেকর্ডের প্রতি আগ্রহ কম। আপনারে বলে লাভ হলো কি না কে জানে!

লেখা আগের মতোই মজালো হচ্ছে! হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

আকতার আহমেদ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

মনোযোগ দিয়ে আপনার লেখাটা পড়ছি। ভ্রমণ কাহিনী এমনিতেই ভালো লাগে। তার ওপর লেখার হাত ভালো হলে তো সোনায় সোহাগা!

অনিশ্চিত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি তো একলা গেছিলাম... খুব একটা কিছু জানতাম না। লোকমুখে শুনে সেরাঙ্গুনে গিয়ে তো তব্দা... দোকানে দেখি বাংলায় সাইনবোর্ড... আজিব!! রাধুনী নামক হোটেলে ঢুকে দেখি বাঙ্গালী চেহারার এক লোক কাউন্টারে... আমি বাংলা না ইংলিশ বলবো ভাবতে ভাবতে সেই বললো ভাত খাবো কি না...
আহ্...
দুইদিন বিদেশী খাবার খেয়ে ভাত তখন অমৃত...
লেখতে থাকেন... ভালো ভালো... ______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কেউ না এর ছবি

সিঙ্গাপুরের ফুট স্টল কনসেপ্ট আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে বাংলাদেশে সেটা আনা গেলে বেশ হতো।

মোস্তফা বলে ঠিকি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে, একদিন সকাল আটটায় গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম, বেশির বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ ছিলো। তবে হ্যা, সবচেয়ে বড় শপিং সেন্টার মোটেই না। তবে দেশী মানুষদের আয়ত্ত্বের মধ্যে আছে মোস্তফার বাজেট। সেজন্যই দেশীরা বোধ হয় এত বলে মোস্তফার কথা।

সুলতান মসজিদের একটা ব্যাপার আমার খুব মজা লেগেছে। ওরা সব সময় টুরিস্টদের জন্য খোলা, ভিতরে গিয়ে দেখতে পারে মুসলিম অমুসলিম যে কেউ। কিন্তু একটাই শর্ত--পোশাক আশাক 'শালীন' থাকতে হবে। শালীনতার সংজ্ঞা হচ্ছে, গলা বড় থাকতে পারবে না, হাত খোলা, পা খোলা থাকতে পারবে না। যদি কারো খোলা থাকে, তখন তাকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ একটা পা পর্যন্ত লম্বা ল্যাব কোটের মত কোট ধরিয়ে দেয়, সেটা পড়ে ভিতরে যেতে হয়। আমার সবচেয়ে মজা লেগেছে যখন আমাদের গ্রুপের একটা ব্রিটিশ ছেলে খালি গায়ে ভিতরে ঢুকতে চেয়েছিলো বলে ওর গায়ে একটা কোট চাপাতে অনুরোধ করলো মসজিদ কর্তৃপক্ষ। নিয়মটা শুধু মেয়েদের জন্য না, এই অনুভূতিটা খুব রিলিফ দিয়েছিল!

আরব স্ট্রীটের ইতিহাস জানেন? ইন্টারেস্টিং কিন্তু।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাসি ভাল লাগল, এরপর?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

সিঙ্গাপুরের রিক্সা কেমন দেখলেন?

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাসি ভাল লাগল, এরপর?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। তৃতীয় পর্ব নিয়ে দ্রুত আসছি। আরেকটু সময় দেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।