ব্যাপারটা সচলের বন্ধুদের অনেক দিন ধরেই জানাবো জানাবো বলে ভাবছিলাম। কিন্তু নানা কাজের ঝামেলায় পেরে উঠিনি। বন্ধু কীর্তিনাশাকে বলতেই লেখাটা দাঁড় করিয়ে ফেলল। সে এ ব্যাপারে ওস্তাদ কিসিমের লোক। তার লেখাটা এতই ভালো লাগলো যে আমার আর কিছুই সংযোজন করতে হলো না। আশা করি ঘটনাটা তার লেখা থেকেই যথেষ্ট পরিস্কারভাবে আপনারা বুঝতে পারবেন। নিচে তার লেখাটা তুলে দিলাম।
দ্বিতীয় দফার ১০০০ কিলোমিটার
সবাইকে ঈদ মোবারক এবং সেই সাথে গুরুতর সংবাদ, আমি আর সৈয়দ আখতারুজ্জামান সাইকেল ভ্রমণে বের হচ্ছি।
ভ্রমণ আমাদের নেশা। নেশার চেয়েও বেশি কিছু। সেই স্কুল জীবনে যখন বন্ধুরা মিলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাসে করে প্রথম গুলিস্তান, সদরঘাট গিয়েছিলাম, সে স্মৃতিও জীবনের রোমাঞ্চকর ভ্রমনের তালিকায় রয়ে গেছে এখনো। তারপর বড় হয়েছি। ধীরে ধীরে বেড়েছে আমাদের পৃথিবীর পরিধি। কলেজ জীবনে অসংখ্যবার চষে বেড়িয়েছি দেশের আনাচে কানাচে ভ্রমনের তৃষ্ণায়, দেখার জানার আগ্রহে। তারপর স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে হাতে পেলাম কিছু অবসর। ব্যাস, তিন বন্ধু মিলে সাইকেলে করে দেশ ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম। তখন রুহুল আমীন নামে আমাদের আরেক বন্ধু সাথে ছিলো। সে এখন সিডনীতে। তাকে এখন ভীষণ মিস করছি। তখন আমরা গিয়েছিলাম দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে। ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর পেরিয়ে বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলা আমরা ঘুরেছি সেই পনের দিনের ভ্রমণে। পটুয়াখালির কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে দেখেছি সূর্যদয়, সূর্যাস্ত। জঙ্গলের ভেতর কাঁচা মাছ পুড়িয়ে খেয়েছি। আরো কত কী! সে সময় কত বিচিত্র মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছে। দেখেছি অখ্যাত অথচ অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কত স্থান! যেমন বরগুনার পাথরঘাটা থানার উপকুলীয় এলাকা, বুড়ির খালের গোড়া অথবা কোরালিয়া গ্রাম। সেখানকার জেলেদের বিচিত্র জীবন। সেই ভ্রমণের সময়ই আমরা অনুধাবণ করি আসলে বাংলাদেশ পর্যটনে কত অপার সম্ভাবনা ধারন করে বসে আছে।
জীবন ও জীবিকার টানে এরপর আমরা আর সাইকেল ভ্রমণে বেরুতে পারিনি। তবে আমাদের ভ্রমণ থেমে থাকেনি। চাকরি জীবনের ফাঁকে ফাঁকে আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, যশোরসহ আরো কত অখ্যাত এলাকা। তবে সাইকেলে ভ্রমনের যে আনন্দ এবং এর মাধ্যমে যেভাবে সব কিছু উপভোগ করা যায়, মানুষের সাথে যেভাবে মিশে যাওয়া যায়, তার অভাব আমরা বোধ করেছি প্রতি পদে পদে।
আর তা থেকেই আমাদের বর্তমান পরিকল্পনার উদ্ভব। আমরা এখন পুরোদস্তুর চাকরিজীবি। তাই একটানা অনেক দিনের ভ্রমণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সে জন্যে আমরা ঠিক করেছি আগামী এক বছরে আমরা ছয় বার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়বো। প্রতিটি ভ্রমণের পরিসর হবে চার থেকে ছয় দিন। বাংলাদেশকে ছয়টি অঞ্চলে বিভক্ত করে আমরা এই এক বছরে গোটা বাংলাদেশ ঘুরে আসবো। তবে এবার শুধু ভ্রমণই নয়। আমাদের থাকবে আরো নির্দিষ্ট লক্ষ্য। বাংলাদেশে পর্যটনের বিকাশে আমরাও আমাদের অবদান রেখে যেতে চাই।
আমাদের ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা এ দেশের আরো নতুন নতুন পর্যটনের সম্ভাবনাময় স্থানের কথা তুলে ধরতে চাই। সেই সাথে বর্তমান যে সব বিখ্যাত পর্যটন স্থান গুলো রয়েছে তারও নতুন নতুন দিক তুলে ধরতে চাই। আমাদের এই ভ্রমনের তাই স্লোগান ঠিক করেছি আমরা - এক্সপ্লোর বাংলাদেশ । আর আমরা গঠন করেছি একটি এ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। পুরো নাম বিয়ন্ড এ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। এই নামের ব্যানারে হবে আমাদের সকল কর্মযজ্ঞ।
প্রতিটি ভ্রমন শেষে আমরা লিখবো আমাদের কাহিনী। সময় ও সুযোগ বুঝে আয়োজন কররো চিত্র প্রদর্শনীর। আমাদের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে বছর শেষে এক মলাটে আবদ্ধ করে প্রকাশ করবো পুস্তক আকারে। প্রকাশিত হবে আমাদের তোলা ছবির পোষ্টকার্ড। আরো অনেক অনেক পরিকল্পনা আছে আমাদের হাতে। সময়মতো সব জানানোর আশা রাখছি।
আমাদের প্রথম ভ্রমণ শুরু করতে যাচ্ছি আমরা আগামীকার, ৩ অক্টোবর, ভোর পাঁটটায়। আমাদের এবারের গন্তব্য - বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকা। ঢাকা থেকে শুরু করে পুরো বৃহত্তর ময়মনসিংহ আমরা ঘুরে বেড়াবো আমাদের ছয় দিনের ভ্রমণকালে। মোটামুটি ১০০০ কিলোমিটারের মধ্যে ভালুকা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, গজনি, বিরিশিরি, গারো পাহাড়, শাদা পাহাড় ইত্যাদি সব কিছুই ছুঁয়ে আসার ইচ্ছা আছে আমাদের। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়!
হাইওয়ে অনেক বিপদজনক। হাইওয়েতে সাইকেল চালানো খুব একটা আরামের ব্যাপারও নয়। তার ওপর বাংলাদেশের হাইওয়ে বলে কথা! কে বলতে পারে, আমরা দুজনেই আবার ফিরে আসবো সচলে? অক্ষত অবস্থায়?
আপনাদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আবার ফিরে আসবো এবং আমাদের ভ্রমণ কাহিনী লিখে জানাবো এই প্রত্যাশায়...
কীর্তিনাশা
২ অক্টোবর ২০০৮
মন্তব্য
আন্তরিক শুভ কামনা থাকল ।
এখনও কিছু মানুষ খুটির দড়ি ধরে টান দিতে চায় , আমার মতো খুটির ভয়ে জাবর কাটে না , ভাবতে ভালো লাগে ।
আবার কষ্টও হয় ।
এই দুইটা এখনো ঠিক আগের মতোই রইলো... সেই যখন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আসতো দেখতাম...
এখনো এইগুলা মানুষ হইলো না... দুষ্টু হয়া রয়া গেলো...
যা বেটা... ঘুরে আয় সহি সালামতে।
ঈর্ষা করলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ময়মনসিংহ যাবেন আর তালিকায় ইটনা নেই?
আপনার মন্ত্যব্যের পর ইটনা সংযুক্ত করলাম। আসলে সব তো আর আমাদের মুখস্থ নেই। পথে যেতে যেতে সব কাভার হয়ে যাবে আশাকরি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বন্ধুরা সবাই মিলে দার্জিলিং ঘুরতে যাচ্ছে। নানান ব্যস্ততায় যেতে পারলাম না। এর মধ্যে আপনারা যদি এরকম ভ্রমনপিপাসা জাগানো লেখা দেন, তাইলে ক্যামনে কী ?
ভালো থাকেন, ভালো মত ঘুরে আসেন। ছবি তুলতে ভুইলেন না।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
চরম রে ভাই, চরম। পারলে আমিও যাইতাম। ভালো মতো ফিরে আসেন।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
শুভ কামনা এই প্রানবন্ত দুই তরুনের জন্য
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
স্যালুট আপনাদের ... কতকিছুই তো করতে ইচ্ছা করে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই করা হয় না ...আপনাদের ব্যতিক্রম দেখে খুব ভালো লাগলো ...
ছয়দিনে এক হাজার কিলো ... দিনে প্রায় দুইশ ... সাইকেলের এভারেজ স্পীড ঘন্টায় বিশ ধরলে প্রতিদিন প্রায় দশঘন্টা ... বাপরে, ব্যাপক স্ট্যামিনার ব্যপার ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
কিঙ্কু ভাই, আমাদের টার্গেট এক হাজার কিলো। এর পর দেখা যাক কদ্দুর গিয়ে দাঁড়ায়।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খুব ভালো লাগছে
এতোসব জটিলতায়ও এই আনন্দটুকু থাক আপনাদের
আর পর্যটনের দ্বায়িত্বে থাকা মহান জনদের
হোক বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
সাইকেলবাজ সচল দু'জনের যাত্রা শুভ হোক।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আহারে শেরপুর যাইবেন? আমি থাকলে তো আপ্যায়ন করতে পারতাম। গজনি, বিরিশিরি, আর শেরপুরে বেশী করে ছবি তুইলেন।
অল দা বেষ্ট। হেভ এ সেফ এণ্ড নাইস জার্নি এহেড।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
যাত্রা সফল হোক। চোখ খোলা রাখলাম, পরবর্তী আপডেটের জন্য।
শুভেচ্ছা থাকলো আপনাদের সাথে। উদ্দিষ্ট পরিকল্পনা যাতে সফল হয় সে কামনা করছি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সাইকেল দুইটা আগে পিছে জোড়া দিয়া লইতেন। ডবল প্যাডেল এক হ্যান্ডেলে চলতো এক চাপে দ্বিগুন রাস্তা। সময় লাগতো অর্ধেক। কী ভুলটাই না কর্লেন!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
দেশের বাইরে অনেক ঘোরাঘুরি করলেও নিজের দেশটা ভাল করে দেখা হয়নি আমার। এ ব্যাপারে আপনারা সৌভাগ্যবান।
আপনাদেরকে অভিনন্দন। খুব ভালো লাগলো কাহিনী।
আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্যেও অযুত শুভকামনা রইলো।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বিয়ন্ড এ্যাডভেঞ্চার ক্লাব এর জন্য অনেক অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
বাহ দারুণতো !! ঘুরে এসে লিখুন সব!
যাত্রা শুভ হোক ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
মন্তব্যের জন্য সকল বন্ধুদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ফিরে এসে আবার কথা হবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
যাত্রা শুভ হোক । ভালো থাকুন ।
-------------------------------------------------------
কারা যেন চলে গেছে দূরে...বহুদূরে..আর ফিরবে না জানি । কোন কারন ছাড়াই , কোন যুক্তি ছাড়াই চুপচাপ হয়ে গেছে সারিবদ্ধ প্রাণ গুলো । জানি , আমাকেও আসতে হবে এই বিষন্ন নগরীতে..একদিন.. কোনদিন --মলাগোফরুমা
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
নতুন মন্তব্য করুন