অনন্ত তারার মাঝে এখন তোমার মুখ স্থির
চোখের গভীরতর মৌনতায় পাথরের ঘুম
তাকাই আকাশ মুখে আচ্ছন্ন অতীত কাতরায়
অন্ধকার ছায়াপথে রজনীর শুকতারা নিঝঝুম
উন্মুখ বিষাদ স্মৃতি বিষের ফলার মতো বেঁধে
রণ-উত্তাল সংসার, কখোনো উচ্ছল চারপাশ
কী পেয়েছি কী পাইনি - সবকিছু যায় রসাতলে
মুখে গণিতশাস্ত্রের পাঠ, চোখ ভরা আদিম উল্লাস
অতীতের দাবদাহ আজ রক্তাক্ত মেঘের মতো
বজ্রের আঘাত হয়ে বুকের ওপর ধেয়ে আসে
আমার কাতর ধ্বণি ঝাউগাছের মৃত বাকল
চোখের লবন জলে পানসীর ভাঙা বৈঠা ভাসে
বারবার ফিরে যাই অনুতাপ বিদ্ধ ইতিহাসে
ইতিহাস ঘুরপাক খায় মরিচীকা বালুচরে
হৃদয়ের রক্তে লাল হয়ে আমার পলাশ ফোটে
পলাশের মৃতদেহ আজো শীতল বাসর ঘরে
অবশ দুহাত মেলে ধরি আদিগন্ত আসমানে
চাঁদের ভেলায় চড়ে আমার বেহুলা ফিরে আসে
চাঁদের আলোর নিচে তোমার সাথে দেখা হবে
আমার শরীর রক্ষিত আছে লখিন্দরের লাশে।
মন্তব্য
আমি মনে করি, এই কবিতাটিতে কবি তার অসাধারণ দক্ষতার আবহমান বাংলার মিথলজিতে নবরূপ প্রাণসঞ্চার করেছেন। আমাদের নদীবিধৌত বাংলার আবহমান সংগ্রামের রূপটি তো একাকিনী বেহুলার আজন্ম ভেলা ভাসানো দুঃখ-রাতের মাঝেই খুঁজে পাই। চাঁদ সদাগর তাই তো আমাদের কাছে 'জ্বলে পুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়' সেই সংগ্রামী প্রতিমূর্তিতেই ফিরে আসে বার বার। 'আমার শরীর রক্ষিত আছে লখিন্দরের লাশে' বলে কবি যে পুনর্জন্মের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তা আমাদের যুগে যুগে ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে নবজীবনের ঊষালোকে উম্মেষ ঘটানোর মন্ত্র শেখায়। বর্ষার জলে গর্ভসঞ্চারী প্রকৃতি মনসার কুটিল বিনাশের প্রতি নীরব ভ্রুকুটি হেনে ফের ঘটায় নতুন জীবনের অঙ্কুরোদ্গম। কবিকে সেলাম এমন একটি নির্ভেজাল কবিতা উপহার দেবার জন্য।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
মুখে গণিতশাস্ত্রের পাঠ, চোখ ভরা আদিম উল্লাস
উপমাটা কোনক্রমেই স্পষ্ট করতে পারলাম না।
নতুন মন্তব্য করুন