হর্নবিল উৎসবের চোখ জুড়ানো শতাধিক পার্ফমেন্সের একটি
এক. ভিসা, নাগাল্যান্ড, হর্ণবিল উৎসব ও আমরা পর্যটক কতিপয়
ভ্রমণ শুরুর আগেও থাকে ভ্রমণের কত কত গল্প! তার উপর আমাদের এবারের ভ্রমণ ঐতিহাসিক ও বহুমাত্রিক। গল্পে গল্পে ঠাসা। পুরো ভ্রমণের সবকিছু তুলে ধরা যেমন কঠিন তেমনি আমার সাধ্যেরও অতীত। তবুও সকালের আলো যেমন মেঘ, কুয়াশা, ধুলোর আস্তরণ আর বৃক্ষশাখার পল্লবঢাল অতিক্রম করে মাটির কাছে পৌঁছতে চায় তেমনি এই ভ্রমণ কাহিনীও আপনাদের হৃদয়েরর কাছাকাছি পৌঁছার জন্য সাধনা চালিয়ে যাবে।
এবারের ভ্রমণে আমরা আট জন পর্যটক আছি। আমাদের ভ্রমণদলের নাম দেয়া হয়েছে ‘টিম নাগা’। দলে আমার সাথে আছেন বাংলাদেশের দুইবার এভারেস্টবিজয়ী একমাত্র পর্বতারোহী এম. এ. মুহিত, আছেন বিশ্বপর্যটক তারেক অণু এবং তানভির অপু - দুই সহোদর, আছেন আমাদের দুই ভ্রমণরসিক ডাক্তার-বন্ধু তন্ময় কৈরী ও তার ছোটভাই ডাক্তার প্রণব কৈরী আর আছেন স্বল্পভাষী, দীর্ঘদেহী ও বিশাল বপুর মালিক নাদিম ভাই, যিনি মাঝেমধ্যে হারিয়ে যান আর আমরা হারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজেটুজে তাকে আবার দলে ঢুকাই।
বাম থেকে দ্বৈপায়ন দা, মুহিত ভাই, আমি অধম, নদিম ভাই, পাখির ডানা মেলে সামনে অপু আর পেছনে অণু ভাই। একেবারে ডানদিকের ভদ্রলোক কোথ্থেকে এসে ফ্রেমে ঢুকলো কে জানে! ছবিটা তুলেছে মিচ। ছবিতে তন্ময় কৈরী ও প্রণব কৈরী নেই। তাহারা তখনো এসে পৌঁছান নাই। আগামী পর্বে চেরাপুঞ্জিতে তাদের দেখা মিলবে।
আমরা এবার বহুল আলোচিত, অনন্য ও অদ্বিতীয় হর্নবিল উৎসব দেখার জন্য বিষ্ময়কর নাগাল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছি। নাগাল্যান্ড নামটা শুনলেই ভেতরে কেমন একটা আলোড়ন তৈরি হয়! নাগাল্যান্ড ভারতের সেভেন সিস্টার্সখ্যাত সাত রাজ্যের একটি। উত্তর-পূর্ব ভারতে এর অবস্থান। এক সময় নাগাল্যান্ড বাংলাদেশিদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। কেউ যেতে পারতো না। এখন সিকিম যেমন। নাগাল্যান্ড নিয়ে বহু ঘটনা শুনতাম, মিথের মতো। এখানকার আদিবাসীরা নাগাযোদ্ধা হিসেবে অনেক আলোচিত। তারা যুদ্ধে জিতলে প্রতিপক্ষের মাথা কেটে নেয়। এইসব যোদ্ধাদের বলে ‘হেড হান্টার’ বা মস্তক শিকারী। শুনলেই কেমন গা ছমছম করে। নাগাল্যান্ডের গভীর অরণ্যে এখনো নাকি তাদের বসতি আছে। ইন্টারনেটে বহু তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু তথ্যগুলো কতটা সত্য আর কতটা মিথ কে জানে! নাগাল্যান্ডের জঙ্গলে নাকি বাঁদর চোখেই পড়ে না, রাস্তাঘাটে কুকুর কদাচিত দেখা যায়, কোথাও ইঁদুর নেই। সাপ-বেজি, পোকামাকড়ও কম। ওরা যা পায় সব নাকি ধরে খেয়ে ফেলে। কী সাংঘাতিক! নাগাবাসীদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো সে গল্প যথাসময়ে জানতে পারবেন।
২০১০ সালে এই নিষিদ্ধ রাজ্য বাংলাদেশিদের উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তারপর থেকে ‘ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি)’ নিয়ে বাংলাদেশিরা নাগাল্যান্ড ভ্রমণ করতে পারে। আমি নিজে পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত বলে নাগাল্যান্ড পর্যটন দপ্তরের সাথে কিঞ্চিত যোগাযোগ আছে। দপ্তরের সেক্রেটারি সাহেবের কাছ থেকেই এসব তথ্য জানা। তিনি আরো জানিয়েছেন, এর আগে এই উৎসবে কোনো বাংলাদেশি দল কখনো যোগ দেয়নি। সে হিসাবে আমরাই অফিসিয়াললি প্রথম পর্যটক দল। উৎসবে যোগ দিতে হলে বিদেশিদের আগে থেকে নাম রেজিস্ট্রিশন করতে হয়, ইনার লাইন পারমিট পেতে হয়। ফলে পর্যটন দপ্তর প্রকৃত ডেটা পায় - কোন বছর কোন দেশ থেকে কতজন পর্যটক যোগ দিয়েছিলো।
যাই হোক, হর্নবিল উৎসবের নাম হর্নবিল কেন, এ প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর জানা নেই। হর্নবিল একটি পাখির নাম। বাংলায় যাকে আমরা ধনেশ পাখি বলে জানি। নাগাল্যান্ডের লোককাহিনীতে এই পাখির অনেক উপস্থিতি আছে। তাছাড়া এই পাখিটার মতো উৎসবটাও বহু বর্ণে বর্ণীল। এক সময় বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এই পাখি বেশ দেখা যেতো। হলুদ লম্বা ঠোঁটের জন্য বিখ্যাত। বিশাল আকার। অপূর্ব সুন্দর দেখতে এই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। একটা পাখি শিকার করলেই কয়েক কেজি মাংস পাওয়া যায়, তাই শিকারির নজরে পাখিটা শুরু থেকেই শীর্ষলক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। এই হর্নবিল পাখি নাগাল্যান্ডের যুদ্ধ, বীরত্ব, ইতিহাস, লোককাহিনী আর ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে। নাগাদের সেরা যোদ্ধাদের মাথার মুকুটে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে থাকতো এই ধণেশ পাখির পালক। নাগাল্যান্ডের নানা জাতির মধ্যে উৎসব লেগেই থাকে। উৎসবকে তারা পবিত্র কর্ম বলে মনে করে। ফলে সকল উৎসব উদযাপনে তাদের আগ্রহ, উদ্দীপনা, শ্রদ্ধা আর একাগ্রতার কোনো কমতি নেই। আর এত সব উৎসবের মধ্যে হর্নবিল উৎসব হলো সবচেয়ে সেরা, সবচেয়ে জাকজমক পূর্ণ। রাজ্য সরকার এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক। বাস্তবায়ন আর নিরাপত্তার দায়িত্ব ভারত সেনাবাহিনীর।
সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা আসে এই উৎসব দেখতে। উৎসবের উৎসব হলো এই হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল। বলা হয় - ফেস্টিভ্যাল অব ফেস্টিভ্যালস। নাগাল্যান্ডের নানা জাতির সংস্কৃতি, জীবনযাপনের গল্প, তাদের সুখ-দুঃখের সাতকাহন বিভিন্ন উপস্থাপনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এই উৎসবে। থাকে তাদের বাড়ি ঘরের প্রমাণাকৃতির মডেল। বৈচিত্রময়, দারুণ দেখতে। তাদের বসবাস পদ্ধতি, খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি অনেক কিছুই তুলে ধরা হয় এখানে। চলে প্রতি বছর ১লা ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর টানা দশ দিন। এক সময় মাত্র ১ দিন ছিলো এই উৎসবের আয়ূ। প্রচন্ড চাপ সামলাতে না পেরে সময়কাল ১দিন থেকে ৩দিনে বাড়ানো হয়। তাতেও সামলাতে না পেরে পরবর্তীতে ১ সপ্তাহ করা হয়। একসময় উৎসবের এই সময়কালও যথেষ্ট হলো না, বাড়িয়ে করা হলো ১০ দিন। উৎসবের তিন মাস আগে থেকেই নাগাল্যান্ডের কোহিমা শহরের সব হোটেল, মোটেল এমনকি হোমস্টে পর্যন্ত প্রায় সবকিছু বিক্রি হয়ে যায়। তাই গত বছর থেকেই আমরা এই ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করে তক্কে তক্কে ছিলাম। আগেভাগেই পারমিট জোগাড় করে সব সার্ভিস বুক করে রেখেছি।
আপনি যদি ম্যাপ খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন গাড়ি পথে নাগাল্যান্ড গেলে আপনাকে মেঘালয়, আসাম এই দুই রাজ্য পাড়ি দিতেই হবে। আর নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা শহর থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে মনিপুর। সুতরাং সবাই মিলে ভাবলাম, নাগাল্যান্ড দেখার জন্য যখন এতটা দূরেই যখন যাচ্ছি তখন আর একটু দূরের মনিপুর নয় কেন! মনিপুরতো বারবার আসার স্থান নয়, হয়ত সারা জীবনে আর কখনো এখানে আসা হবে না। এই প্রথম, এই-ই শেষ। সুতরাং সবার সম্মতিক্রমে মেঘালয়, আসাম আর নাগাল্যান্ডের সাথে মনিপুর রাজ্যও আমাদের ভ্রমণ তালিকায় যুক্ত হয়ে গেলো। এবার যায় কোথায় সবাই আমারা উত্তেজনায় টগবগ আর আনন্দে হৈ হৈ করতে লাগলাম। আমি আমার সমস্ত সোর্স আর গবেষণা কাজে লাগিয়ে মোট ১২ দিনে - সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে আকর্ষনীয় - যা যা দ্রষ্টব্য সেগুলো ভ্রমণ পরিকল্পনায় যোগ করে ফেললাম।
আর এখন আমাদের সেই বহুকাঙ্খিত ভ্রমণ যাত্রার মাহেন্দ্রক্ষণ।
ভিসা জটিলতা সম্পর্কে একটু বলে রাখা দরকার। ভারতীয় ভিসা বলে কথা। নিয়ম হচ্ছে, যে ডাউকি বর্ডার থেকে ভারতে ঢুকবে তাকে ডাউকি বর্ডার থেকেই ফিরতে হবে। আর যারা বেনাপোল বর্ডার থেকে ভিসা পেয়েছে তারা বেনাপোল বর্ডার ছাড়া অন্য কোনো বর্ডার ব্যবহার করতে পারবে না। আমার ৩ বছর মেয়াদী ভিসা আগে থেকেই বেনাপোল বর্ডার থেকে করা। ফলে বাড়ির পাশের শিলং রাজ্যে যাওয়ার জন্য একেবারে বিপরীতমুখে আমাকে যাত্রা করতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানচিত্রের কিনারা ধরে ঘুরে ঘুরে ২/৩ দিন পর শিলং-এ পৌঁছতে হয়েছে। অপু ভাইর ফিনল্যান্ডের পাসপোর্ট। সুতরাং তার মহা আনন্দ। যে কোনো বর্ডার থেকে ঢুকতে এবং যে কোনো বর্ডার থেকে বেরুতে পারবে। অণু ভাই এই ট্যুরে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছে। সুতরাং তিনি অভাগাদের দলে। নাদমি ভাই, দ্বৈয়পায়নদা, তন্ময় দা ও প্রণব কৈরী বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে দাউকি বর্ডার থেকে ৬ মাসের মাল্টিপল ভিসা পেয়েছে। লক্ষনীয় হলো, তারা যদি আগামি ৬ মাসের মধ্যে কখনো কলকাতা যেতে চান, তাহলে ডাউকি বর্ডার দিয়ে আসাম হয়ে দিন দুয়েক পরে কলকাতা পৌঁছতে হবে। লে হালুয়া! আমাদের এভারেস্ট বিজয়ী মুহিত ভাইর ভিসা বড়ই স্পেশাল। ভিআইপি ভিসা। এই ভিসা পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি আসে। সার্ক ভিসা। আগমী ৩ মাস তিনি এই ভিসা দিয়ে শুধু ভারত নয়, সার্কের সবগুলো দেশের সবগুলো পোর্ট থেকে যতবার খুশি ততবার যাতায়াত করতে পারবেন। লে হালুয়া! মশা মারতে কামান দাগানো আরকি। কোনো ই-টোকেন ফোকেনের বালাই নেই। এই ভিআইপি ভিসা নিয়ে বর্ডারে কী-যে কা- হয়েছিলো সে-গল্প আসিতেছে।
আমার ভিসা বেনাপোল বর্ডার থেকে। ফলে আমি ছিলাম সবচেয়ে বিপদে। আমাদের ভ্রমণ শুরুর তারিখ ৩ ডিসেম্বর হওয়া সত্ত্বেও আমি ঢাকা থেকে কলকাতা রওয়ানা হয়েছি ৩০ নভেম্বর রাতে। ১ ডিসেম্বর তারিখ মাঝ রাতের ট্রেনে শিয়ালদা থেকে যাত্রা শুরু করে পরদিন ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পৌঁছেছি আসামের রাজধানী গুয়াহাটি। গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে ট্যাক্সি পাকরাও করে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর শিলং শহরে পৌঁছেছি রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ। ৪২ ঘন্টার ভ্রমণ শেষ করে একদিন আগেই শিলং পৌঁছে গেছি।
৩ ডিসেম্বর শিলং শহরে ঘোরাঘুরি করলাম। (যে ঘোরাঘুরি গল্প গতপর্বে আপনাদের বলেছি।) ঢাকা থেকে বন্ধুরা আসছে পরের দিন, ৪ ডিসেম্বর। গাড়ি নিয়ে তাদের রিসিভ করতে যাবো সকাল সকাল। ভ্রমণের সব আয়োজন - হোটেল, গাড়ি-ঘোড়া, নাগাল্যান্ড আর মনিপুরের ইনার লাইন পারমিট ইত্যাদি সব ঠিকঠাক আছে কিনা চেক করলাম সারাদিন। সব আয়োজন রেডি।
মেঘালয় মানে মেঘের আলয়, মেঘের বাড়ি। খুবই যথার্থ এই নামকরণ।
দুই. ৪ ডিসেম্বর - শুরুর দিনের শুরুটা
শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ঘুম ভেঙে গেলো। বালিশের তলা হাতড়ে ঘড়িটা বের করে দেখি সকাল সাড়ে ৫টা। হোটেলের রুম হিমশীতল হয়ে আছে। মনে হলো খোলা আকাশের নিচে হিমালয়ের বরফের ওপর শুয়ে আছি। হোটেলটা শিলং শহরের লাবান-এর বাত্তিবাজার এলাকায়। নাম বনি গেস্ট হাউজ। এটা ছোট পাহাড়ি ঢালে গেস্ট হাউজটা। রুম হিটার চলছে, তবু কেন এত ঠান্ডা লাগছে বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, জানালার পর্দাটার একটা কোণা দুলছে। তার মানে জানালাটার একটা পাট সারা রাত খোলা ছিলো। জানালার পর্দা সরাতেই চোখে পড়ল কালচে নীল আকাশটা। কোনো তারা নেই। পশ্চিমের আকাশটা বড়ই শোকার্ত, ব্যাথিত আর থমথমে। বৃষ্টির কোনো নাম গন্ধ নেই। হঠাৎ একটা দমকা বাতাস পর্দাফর্দা উড়িয়ে ধাক্কা মেরে রুমে ঢুকলো। মনে হলো জুয়েল আইচের যাদুর মতো কলজেটা জমে গেলো। তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে রাথরুমে ঢুকলাম।
ভ্রমণে আমি যতটা সম্ভব কম কাপড় চোপড় নেই। লম্বা ভ্রমণ হলে কয়েকদিন পর পর সুযোগ বুঝে দরকারি কাপড় চোপড় ধুয়ে ফেলি। গতকাল রাতেও কিছু কাপড় ধুয়েছি। তারপর রুম হিটারের কাছে শুকাতে দিয়েছি। একটা কাপড়ও শুকোয় নি। ভেজা কাপড়গুলো দ্রুত ওয়াটার প্রুফ ব্যাগে ভরে ব্যাকপ্যাকে চালান করে দিলাম। ঘড়িতে ছটা বাজে। ডাউকি বর্ডারে যেতে হবে। ঢাকা থেকে আজকে ভ্রমণ বন্ধুরা আসবে। কথা মতো কাজ হলে দশটা নাগাদ তারা বর্ডার ক্রস করবে। আমি সাড়ে নয়টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে বর্ডারে থাকতে চাই। আমার শিলং এর বন্ধু জন ওয়াংখার সব আয়োজনের দায়িত্বে। তাঁর আসার সময় হয়ে গেছে। তারপরও একটা ফোন করলাম। জন ফোন ধরছে না। তার মানে জন কি এখনো ঘুম থেকেই ওঠেনি? সর্বনাশ! মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। যাত্রার শুরুর দিনটায় আমি কোনো ঝামেলা চাই না। হোটেলের সাথে কাল রাতেই সব দেনাপাওনা চুকিয়ে ঘুমিয়েছি। সকালে সোজা ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে উঠবো।
তাড়াতাড়ি জনকে আবার ফোন দিলাম। এবার ফোন ধরলো - ‘হ্যালো, আমি আর দশ মিনিটের মধ্যে হোটেলে পৌঁছচ্ছি। তুমি নিচে নামো।’ বলেই লাইন কেটে দিলো। নো গুড মর্নিং, নো গুড বাই। জন আমার টেনশনটা বুঝতে পেরেছিলো হয়তো। ভ্রমণে সহযোগীরা টেনশন টের না পেলে বড় বিপদ। ব্যাগ নিয়ে সোজা নিচে নেমে এলাম। এই হোটেলে লবি বলতে কিছু নেই। সুতরাং সামনের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগলাম।
জন সাড়ে ছয়টার একটু পরেই চলে আসলো। সাথে মারুতি সুজুকি সাইজের একটা ছোট গাড়ি। বড় জোড় ঠেসে ঠুসে ৩ জন বসতে পারবে। আমরা মানুষ মোট ৮ জন। গাড়ির সাইজ দেখে আমারা মাথা ঘুরে গেলো। নিশ্চয়ই কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
আমার চেহারায় লেখা প্রশ্নটা জন চট করে পড়ে ফেললো, ‘এটা তোমার চূড়ান্ত গাড়ি নয়।’ বলেই সে একগাল হেসে বরফ ঠান্ডা হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে বলল, ‘গুড মর্নিং।’
যাক বাবা আশ্বস্ত হওয়া গেলো। আমিও উত্তরে ‘গুড মর্নিং’ বলে আসল কাহিনীটা জানতে চাইলাম।
জন ব্যাখ্যা করলো, ‘তোমার ভ্রমণের মূল ড্রাইভার খাসীপল্লীর তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে সাড়ে সাতটায়। খাসী পল্লী ডাউকি বর্ডার যাওয়ার পথেই। আমরা এই ছোট গাড়িতে এখান থেকে সেই তিন রাস্তার মোড়ে যাবো। তারপর আমি ফিরে আসবে শিলং। তুমি মূল ড্রাইভার নিয়ে চলে যাবো ডাউকি।’ বেশ, আমি আশ্বস্ত হয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
গাড়ি চলতে শুরু করলো। দশ মিনিটের মধ্যে শিলং শহর থেকে বেরিয়ে এলাম। পুরো শহর বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। রাস্তার কমলা বাতিগুলো জ্বলছে। পুরো পথে দু’একটা গাড়ি চোখে পড়লো মাত্র। পুরো উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়েই দেখেছি সন্ধ্যার পর সবাই ঘরে ঢুকে যায়। দোকান-পাট, রেস্তোরা, ঝপাঝপ বন্ধ। সকাল হয় নয়টা-দশটায়। এগারটা-বারোটায় কাজ-কর্ম শুরু হয়।
ভ্রমণে আমার কাছে ড্রাইভারের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ড্রাইভার চাইলে আপনার লাখ টাকার ভ্রমণকে বিষিয়ে নরকীয় করে তুলতে পারে আবার সাধারণ ভ্রমণকে চিরস্মরনীয়ও করে তুলতে পারে।
আমাদের ড্রাইভারের নাম মিচেল। ডাক নাম মিচ। জাতিতে খাসি। পুরো মাথা কামানো। দুই কানে দুল। গায়ে দামি কালো লেদার জ্যাকেট। গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে পথের দিকে চেয়ে আছে। সকালে সূর্যের আলো তার চেহারায় পড়ে তাকে আরো সম্ভ্রান্ত করে তুলেছে। আমাদের তথাকথিত ড্রাইভার চরিত্রের বিন্দুমাত্রও তার মধ্যে নেই। কাছে আসতেই জন পরিচয় করিয়ে দিলো। মিচ হেসে হাত বাড়ালো। চোখে পড়ল তার পান খাওয়া লাল দাঁতগুলো। হাসিতে, চোখে, মুখে, আনন্দে, পুরো অবয়বে তার আন্তরিকতার শোভাযাত্রা। আমার ব্যাগটা নিজ হাতে তুলে নিয়ে গাড়ির পেছনে রাখলো। টাটা সুমো নন-এসি গাড়ি। আট জনের জন্য উপযুক্ত। হাতে সময় কম। জন দ্রুত বিদায় নিয়ে শিলং ফিরে চলল। আর মিচ আমাকে নিয়ে কুয়াশা-মেঘের কুন্ডলী ফুঁড়ে ডাউকি বর্ডারের দিকে গাড়ি হাঁকালো।
মিচেলের সাথে সম্পর্ক আরো সহজ করতে কিছু কথপোকথন শুরু করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘মিচ, তোমার বাড়িতে কে কে আছে?’
মিচ বললো, ‘স্ত্রী, একছেলে আর এক মেয়ে।’
আমি কী ভেবে যেন অনুমান করলাম, ‘তোমার ছেলে বড় তাই না?’
‘হ্যাঁ, ঠিক তাই। কী করে বুঝলে?’ মিচ অবাক হলো।
অনুমান খেটে গেলো দেখে আত্মতৃপ্তি হাসি হাসলাম, ‘সাধারণত আমরা বড় সন্তানের কথা আগে বলি। আমারো এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে বড়।’
আবারো জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কত বছর ধরে গাড়ি চালাও?’
মিচ দুই সেকেন্ড ভেবে উত্তর দিলো, ‘বাইশ-তেইশ বছরতো হবেই। আগে বড় বাস চালাতাম। এখন স্বাধীন পেশা।’
আমি শুরুতেই ওর ভেতর ড্রাইভার ব্যাপারটা লক্ষ্য করিনি। বললা, ‘এটা তোমার নিজের গাড়ি।’
‘জ্বী, স্যার।’ মিচের কণ্ঠস্বর গর্বদীপ্ত।
আমার স্যার শুনতে কানে অস্বস্তি লাগলো। বললাম, ‘স্যার বলো না। কল মি আখতার।’
সাথে সাথে আজ্ঞাবহের জবাব, ‘ওকে আখতার।’
জানতে চাইলাম, ‘তুমি কি ডাউকি বর্ডার গিয়েছো আগে?’
সামনে একটা ট্রাক বাঁক নিয়ে এগিয়ে আসছে। মিচ গাড়ির গতি কমাতে কমাতে বলল, ‘কয়েকবার গিয়েছি। অধিকাংশই চিনি। তোমরা যেখানে যেখানে যাবে সেগুলো আমার চেনা আছে। ’
শুনে ভালো লাগলো। বললাম, ‘বেশ বেশ।’ ট্রাকটা কাঠের গুড়ি নিয়ে ঘড়ঘড় করতো করতে শিলং এর দিকে চলে গেলো।
মিচ গাড়ি চালাতে দক্ষ। বাঁক ঘোরার সময় তার গতি ও কৌশল লক্ষ্ করার মতো। তার স্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা, ছেলে কলেজে পড়ে, মেয়ে স্কুলে। তাদের ফলাফলও ভালো। গল্প করতে করতে আমরা পথ চলেত লাগলাম।
সকালের সোনালী আলোয় পাহাড়গুলোর মাথা উজ্জ্বল হয়ে আছে। গাড়ি চলছে মাঝারি গতি নিয়ে। মাঝে মাঝেই ছোট ছোট পাহাড়ি বসতি চোখে পড়ছে। অধিকাংশই খাসিপল্লী। মিচ নিবিষ্ট মনে গাড়ি চালাচ্ছে। রাস্তার এক পাশে পাহাড়ের খাড়া দেয়াল নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছে অন্য পাশে অতল খাদ যেন মৃত্যুদূত, হাতছানি দিয়ে ডাকছে। গাড়ি ডানে বামে মোড় নেয়ার সময় নিজের অজান্তেই আঁতকে উঠি। পাহাড়ি পথে গাড়ি ভ্রমণ তাই বেশ রোমঞ্চকর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন হৃদয় কাড়ে তেমনি আতঙ্ক হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে দেয়। কিন্তু এই বেলা ক্ষুধায় পেট মোচড়াচ্ছে। এখনো সকালের নাস্তা করা হয়নি। আমাদের চালক মিচকে সেকথা জানাতেই মিনিট খানেকের মধ্যেই এক বিচ্ছিন্ন প্রান্তরে একটি মাত্র ছোট পাখির বাসার মতো খবার দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করালো।
দুজনে গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের মধ্যে ঢুকতে গিয়েই থমকে দাঁড়ালাম। আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে এখন ভাবছেন, আমরা এমন আজব চিজ কী দেখলাম যা প্রবেশ-দরজার কাছে হঠাৎ আমাদের পাথর বানিয়ে দিলো! সংকোচে আড়ষ্ট করে ফেললো! মাঝে মাঝে তাই ভাবি, ভ্রমণ কেন নেশাগ্রস্ত করে, ভ্রমণ কেন জীবনের সমস্ত দিশা কেড়ে নেয়, আর নতুন দিশার প্রেমে উদভ্রান্ত ও দিশেহারা করে দেয়। পথের পাশের এই ছোট্ট রেস্টুরেন্টটার পুরো মেঝে এত পরিচ্ছন্ন, এত সুন্দর, এত গোছানো যে জুতা নিয়ে পা-টা রাখতেই পারলাম না। আমি জীবনে এই প্রথম কোনো খাবার রেস্টুরেন্টে খালি পায়ে ঢুকলাম। পুরো রেস্টুরেন্টটা এক সুশ্রী যুবতীর তত্বাবধানে চলছে। বোঝা-ই যাচ্ছে এই খাসী রমনীই এর অধিকর্তা, খাদ্য প্রস্তুতকারী এবং পরিবেশনকারী। স্বচ্ছ একটা ছোট্ট কাপে টকটকে লাল এক কাপ চা আর একটা রুটি খেয়ে তৃপ্তিতে হৃদয় ভরিয়ে ফিরে চললাম পথের টানে। স্মৃতিতে গেঁথে রইলো একটা সুন্দর অলংকৃত বাজুওয়ালী হাত। স্মৃতিতে স্বর্ণখচিত হয়ে রইলো চেরাপুঞ্জির মিষ্টি রোদ মাখা একটি অপূর্ব সকাল।
জানালার কাঁচ নামিয়ে দিয়েছি। সূর্য পুরোপুরি উঠে গেছে। হালকা বাতাসে মন ফুরফুর করছে। এক সময় রাস্তার দুপাশে আর পাহাড় দেখতে পেলাম না। পাহাড় দিগন্তে সরে গেলো। গাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় মাঠের মাঝখান থেকে চলতে লাগলো। মনেহলো আফ্রিকার কোনো জীপ সাফারিতে আছি। এক্ষুনি দূরের কোনো ঘাসের ঝোপ থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়বে সিংহ, সাথে গোটা তিনেক শাবক। পুরো যাত্রাপথ দারুণ উপভোগ করছিলাম। কিন্তু ডাউকির কাছাকাছি আসতেই পথ খারাপ হতে শুরু করলো।
তিন. ডাউকি বর্ডার, মুহিত ভাইয়ের ভিআইপি পাসপোর্ট ও ভ্রমণের প্রথম দিন
ডাউকি বর্ডার ধূলোয় ধূসর হয়ে আছে। চেয়ারে ধূলো, টেবিলে ধূলো, জামা-কাপড়-গাছের পাতায় ধূলো। হাতে-পায়ে, মাথায় ধূলো। বেলা দশটার মতো বাজে। আকাশ পরিস্কার। শীতের সকাল রোদে ঝলমল করছে। বাংলাদেশের সিলেট থেকে ভারতের মেঘালয়ে যেতে এই বর্ডারপোস্ট ব্যবহার করা হয়। বর্ডারের এপারে বাংলাদেশ-অংশের নাম তামাবিল। আর ওপারে ভারত-অংশের নাম ডাউকি। সিলেট অঞ্চল এমনিতেই সবুজের সমারোহে বড়ই মনোরম। মেঘালয়ের অপরূপ পাহাড়ে ঘেরা দিগন্ত এই সবুজকে আকাশেরর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। কেবল ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল করা পাথরবাহী সারি সারি লক্করঝক্কর ট্রাকের চাকায় যে ধূলোর কু-লী আমাদের চারপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন করে রেখেছে সেটুকু না থাকলেই মেঘালয় ভ্রমণের এই প্রথম দিনটা আরো অপূর্ব হতে পারতো। কিন্তু উতলা হয়ে কোনো লাভ নেই, ভ্রমণে এই বিপত্তিগুলোও উপভোগ করতে হয়।
মিচ গাড়ি দাঁড় করালো ডাউকি বর্ডার পোস্টের একদম কাছে। একটা বট গাছের ছায়ায়। ঘড়িতে দশটা বাজে। এবার তারেক অণুকে ফোনে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করলাম। বিধি বাম! নেটওয়ার্ক নেই। মিচের ফোনেও নেটওয়াকের্র করুণ দশা - এই আসে এই যায়। এদিক ওদিক একটু হাঁটাহাঁটি করের নেটওয়ার্কের কোনো দেখা পেলাম না। ভারতীয় ফোনের সার্ভিস বর্ডারের কাছাকাছি এলেই এমন দূর্বল হয়ে যায়। হঠাৎ মাথায় এক কুবুদ্ধি এলো। ভাবলাম বাংলাদেশের সিমটা মোবাইলে ঢুকিয়ে দেখি তো চালু হয় কিনা! বাহ! সিমটা ঢুকিয়ে মোবাইল চালু করতেই ফুল নেটওয়ার্ক পেলাম। অণু ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। বর্ডার কার্যক্রম শেষ করতে তাদের আরো সময় লাগবে। সুতরাং অপেক্ষার পালা শুরু হলো।
বর্ডার ইমিগ্রেশন অফিসের পথের দিকে চেয়ে চেয়ে পাক্কা দুই ঘণ্টা বসে রইলাম।
বেলা সাড়ে বারোটায় আমাদের ৮ জনের ভ্রমণ দলের ছয় জনের দেখা মিললো। (বাকি দুজন - তন্ময়দা ও প্রণব কাইরী - ভিসা জটিলতায় আজকে আসতে পারছে না। আগমীকাল তারা আমাদের সাথে চেরাপুঞ্জিতে যোগ দেবে।) তারা পায়ে হেঁটে ভাঙা রাস্তাটুকু পাড় হয়ে এগিয়ে এলো। আমরা মিলিত হলাম। তারপর একটা ছোট্ট বাজারের মতো জায়গায় এসে দাঁড়ালাম।
অপু ভাই বেশ বিরক্ত। মুহিত ভাইয়ের ভিআইপি পাসপোর্ট নিয়ে কোনো জটিলতা দেখা দিয়েছে। আর সে কারণেই হয়তে দুই বাল্যবন্ধু কৌতুকমিশ্রিত তর্কবানে একে অপরকে বিদ্ধ করে চলেছে। দ্বৈপায়নদার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। নাদিম ভাই নির্বকার। অণুভাই বললেন, চলেন আমাদের ড্রাইভার সাহেবের সাথে সবাইকে পরিচয় করাই। সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলাম মিচের সাথে।
কাস্টমসের কাজ এখনো বাকি। সুতরাং সব ব্যাগপত্র-লাগেজ নিয়ে চললাম কাস্টমস অফিসে। চেকপোস্ট থেকে কাস্টমস অফিস তিন মিনিটের হাঁটা-পথ। অফিস কক্ষ বলতে গেলে ফাঁকা। আমরা কজন ছাড়া আর কেউ নেই। ঢিলেঢালা ভাব। ক্স্যানিং মেশিন বন্ধ ছিলো। আমরা ঢোকার পর চালু হলো, তারপর শুরু হলো ফর্ম ফিলাপ পর্ব। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে সব ব্যাগ খুলে খুলে চেক করা হলো। সবাই ভালোয় ভালোয় উতরে গেলেও, বিধি বাম! মুহিত আটকা পরে গেলা। একেতো বেচারা আমাদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে সিনিয়র। তার ওপর ন্যাশনাল ফিগার। তার পাসপোর্টে লাগানো ভিআইপি ভিসা। মুশকিল হলো চেকিং অফিসার জীবনে কোনোদিন ভিআইপি ভিসা দেখা নাই। ফলে অহেতুক নানা প্রশ্নবানে মুহিত ভাইকে জর্জরিত করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মুহিত ভাইয়ের পাসপোর্ট নিয়ে সে তার বসের কাছে গেলো এবং আরো অনেকক্ষন পর বিষন্ন মুখে ফিরে এলো। মনে হলো, অজ্ঞতার জন্য বস তার ওপর একটি স্বল্পকালীন ঘুর্ণিঝড় বইয়ে দিয়েছেন। আর সেই ঘুর্ণিঝড়ের প্রকোপে তার চুল উস্কখুস্ক, চোখ ঘোলাটে আর চোয়াল ঝুলে পড়েছে। এবার শুরু হলো মুহিত ভাইয়ের ব্যাগ চেক করার পালা।
ঘাড়-ত্যাড়া চেকিং অফিসার মুহিত ভাইয়ের ব্যাগের কিছুই চিনতে পারছে না। বাইনোকুলার দেখে বলে, ‘এটা কী? আপনি এটা দিয়ে কি করেন? দেখি আপনার পাসপোর্টটা আবার দেখি, কী পেশা লেখা আছে? ’
মুহিত ভাই রুমের ছাদের দিকে তাকিয়ে ফ্যানের পাঙ্খায় লাগানো ঝুলের বয়স ঠাহর করার চেষ্টা করছেন। এত গরমেও লোকগুলো কেন ফ্যান চালাচ্ছে না তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না।
চেকিং অফিসার এবার মুহিত ভাইয়ের ব্যাগ থেকে একটা লাল রং-এর ক্যাপসুল সাইজের ইলেক্ট্রিনিক বস্তু আবিস্কার করে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। ছোট চাল কুমড়া বা বড় সাইজের ক্যাপসুলের মতো দেখতে। এমন আজব সাইজের গান শোনার স্পিকার আমিও আগে কখনো দেখিনি। বর্তমানে নানা অদ্ভূত অদ্ভূত আকৃতির দারুণ সব রিচার্জাবল স্পিকার বাজারে পাওয়া যায়। চেকিং অফিসার এবার এই বস্তুর কুষ্ঠি উদ্ধার করতে মুহিত ভাইকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, ‘এটা কী, কোন দেশের, নতুন না পুরাতন, দাম কত...... ’।
একদিকে অন্যান্য ভ্রমণসঙ্গীরা অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অপু ভাই। তিনি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভিআইপি ভিসা সংক্রান্ত মুহিত ভাইয়ের গর্বভরা সব বাক্য এখন ডায়লগ আকারে আবৃত্তি করছেন, যাতে অন্তত মুহিত ভাইয়ের কান পর্যন্ত পৌঁছায়। অসহিষ্ণু সঙ্গীরা এতে ব্যাপক আনন্দ পাচ্ছে। বুঝতে পারছি এতে কিছুটা হলেও তাদের ক্ষুধা যন্ত্রণা লাঘব হচ্ছে। কিন্তু মুহিত ক্রোধ যন্ত্রণা এতে বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছিলো। আর দেরি না করে আমি আর তারেক অণু আগ বাড়িয়ে গিয়ে চেকিং অফিসারের সঙ্গে কথা বললাম। যখন তিনি মুহিত ভাইয়ের স্পিকার ছেড়ে সবেমাত্র ক্যামেরা প্রসঙ্গে জেরা শুরু করতে চলেছেন। বুঝিয়ে বলার পর, চেকিং অফিসার কী বুঝলো কে জানে, মুহিত ভাইকে বলল, ‘ঠিক আছে। ধন্যবাদ। চলে যান।’
আমরা সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এবং দ্রুত গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। অপু ভাই হঠাৎ করে আমাকে বললেন, ‘আখতার ভাই, জানেন আমার প্রিয় গান কি?’ আমি উত্তর আগেই তিনি বললেন, ’ফান্দে পরিয়া বগা কান্দে.....এইটা আমার প্রিয় গান। আচ্ছা আমি কী আমার প্রিয় গানটার দুটো লাইন আপনাকে গেয়ে শোনাতে পারি। মনে বড় আনন্দ পেতাম তাহলে।.....’ আমি মুহিত ভাইয়ের দিকে এক ঝলক তাকাতেই বুঝতে পারলাম, এই মিছরির ছুড়ি কাকে রক্তাক্ত করে চলেছে। বললাম, না ভাই , চলেন তাড়াতাড়ি দুটো ডাল-ভাত পেটে দেই। এখন আর গান গেয়ে কাজ নাই। ফান্দে যে কে কখন পড়ে তার কোনো ঠিক নাই।
চা খাওয়া দরকার। ইতমধ্যে মিচ সবার লাগেজ গাড়ির ছাদে বেঁধে ফেলেছে। দলের সবাই বেশ ক্লান্ত। তারা গত রাতে বাসজার্নি করে ঢাকা থেকে এসেছেন। দ্বৈপায়নদা এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। আর আমিতো আগে থেকেই শিলং পৌঁছে গিয়েছিলাম।
বাজারের ছোট্ট চায়ের দোকানে চা অর্ডার করার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চা পরিবেশন করা হলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম একটা বাজে। রওয়ানা হওয়ার আগে এক কাঠের দোকানে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। সাধারণ আইটেম, মাছ-মুরগী, সব্জি ভাজি আর ভাত। কিন্তু কী অসাধারণ স্বাদ! পরিচ্ছন্ন পরিবেশনা।
পাহাড় বেয়ে বেয়ে মাউলিনং গ্রামের পথে
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চল্লিশ কিলোমিটার দূরে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম ‘মাউলিনং’। যেতে ঘন্টা দুয়েক সময় লেগে যাবে। মিচেল বেশ আরাম করে পান চিবুতে চিবুতে গাড়ি চালাচ্ছে। জীবনে তার একটাই নেশা - পান। প্রতি ঘণ্টায় গোটা দশেক রসালো পান না খেতে পারলে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। গাড়ি চালাতে যেমন তেল বাধ্যতামূলক, মিচেলকে সুস্থ রাখতে পানের ভূমিকাও তাই। গাড়ি পাহাড়ের অনেকটা উপর থেকেই চলছে। সিলেটের সমতল ভূমি, ধান খেত, পাংথুমাই, বিছনাকান্দি ইত্যাদি চোখে পড়লো। পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে তৈরি হওয়া ছোট্ট ঝিরি নদীর আঁকাবাঁকা রূপ মাঝে মাঝেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। মনেহলো আমরা বাংলাদেশের মানচিত্রের কোল ঘেঁষে চলছি। বর্ডার পার হয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা চলার পরও দেখলাম বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু আছে। কথপোকথন পরিস্কার বোঝা যায়। তারপর আমাদের রাস্তা সুপারি গাছের এক জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়লো। আমরা আর বাংলাদেশ দেখতে পেলাম না।
শুনশান সুপারির অরণ্যের ভেতর থেকে চলছে আমাদের রাস্তা
গাড়ি চলছে মাউলিনং গ্রামের দিকে। রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার অগণিত সুপারি গাছ। দেখলে মনে হয় এই সুপারি-অরণ্য প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে ওঠা। কোনো সারি নেই, সীমানা নেই। জঙলের মতো বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে গজিয়ে আছে। বাতাসেও যেন সুপারির ঘ্রাণই পাচ্ছিলাম। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আমরা মাউলিনং গ্রামে পৌঁছে গেলাম। গ্রামের মূল ফটকের মিনিট পাঁচেক আগেই মিচেল গাড়ি থামালো রাস্তার বা পাশে। বলল, এখানে আমরা ব্যালেন্সড রক দেখবো। সবাই নামলাম। কী এই জিনিস?
একটা ছোট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। গেটের মুখেই এক শিশু দাঁড়িয়ে জনপ্রতি দশ টাকা করে টিকেট নিচ্ছে। আশেপাশে প্রচুর গাছগাছালি। মাঝখানে একটু খোলা জায়গার মাঝখানে বিশাল এক পাথর আরেকটা ছোট্ট পাথরের ওপর বিস্ময়কর ভারসাম্য বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সবাই ছবি তুললাম পাথরের সাথে। একা একা, গ্রুপে, নানা ভঙ্গিমায়। এখানে পনের মিনিটের মতো সময় কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম। তারপর একটু সামনে এগিয়েই বিখ্যাত মাউলিনং গ্রামের ফটক। ভেতরে ঢুকতেই ছোট উঠানের মতো একপ্রস্থ খোলা জায়গা। মিচেল এখানেই আমাদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করলো।
মাউলিনং গ্রামের শিশুরা
আমরা মাউলিনং গ্রামটি ঘুরে দেখলাম। সত্যিই পরিচ্ছন্ন। লক্ষ করলাম শিশুরা পর্যন্ত কোথাও এতটুকু ময়লা ফেলছে না। সর্বত্র ডাস্টবিন আছে। বয়স নির্বেশেষে সেখানেই সবাই ময়লা ফেলছে। সুতরাং গ্রামটি নোংরা হওয়ার কোনো সুযোগই থাকছে না। একজন বৃদ্ধার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, এই গ্রামটি পরিচ্ছন্ন রাখার মূল দায়িত্ব নাকি গ্রামের শিশুদের ওপরই ন্যাস্ত। কারণ এই শিশুরাই আগামী দিনে গ্রামের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করবে। তাদের সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন গ্রামবাসী।
পরিচ্ছন্ন মাউলিনং গ্রামের পথে
গ্রামের ঘরগুলো আকারে বেশ ছোট। তবুও প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে বাহারি ফুলের বাগান। নানা গাছপালায় সবুজ ছায়াঘেরা গ্রামখানি আমাদের খুব ভালো লেগে গেলো। লম্বা সরু সরু রাস্তা ধরে আমরা আশেপাশের এলাকা যতটা পারলাম ঘুরে দেখলাম ছবি তুললাম। একটা ছোট্ট চায়ের দোকানও পাওয়া গেলো। সবাই চা বিস্কুট খেলাম। তারপর আবার এগিয়ে চলা। এবার আমরা দেখতে যাবো আরেক আশ্চর্য প্রাকৃতিক নির্দশন - গাছের জীবন্ত শেকড়ের তৈরি প্রাকৃতিক সেতু।
রিওয়াই গ্রামের ঘর-বাড়ি
মাউলিনং গ্রাম থেকে রিওয়াই গ্রাম মিনিট বিশেক পথ। এই রিওয়াই গ্রামেই প্রাকৃতিক জীবন্ত শেকড়ের সেতুর অবস্থান। পাহাড়ি ঝর্ণার ফলে তৈরি এক বহমান ঝিরির ওপর এই সেতু। দুপাশের জীবন্ত গাছের শেকড় এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে এই সেতু তৈরি হয়ে আছে যে অনায়সে তিন চারজন মানুষ পাশাপাশি হেঁটে এই সেতু পাড় হতে পারবে। না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন যে প্রকৃতি কত ভাবে তার মহিমা প্রকাশ করতে পারে। আমরা দৈত্যাকার পাথুরে পথ ধরে কিছুটা ট্রেকিং করে বিশাল সব মহীরুহের গোড়ায় গিয়ে পৌঁছলাম। যাদের শিকড়গুলো দিয়েই শত শত বছর ধরে এই সেতু তৈরি হয়েছে।
এই জীবন্ত সেতুটি দেখার অভিজ্ঞতা বহুদিন স্মৃতিতে খোদাই হয়ে থাকবে। মেঘালয় ট্যুরিজম বোর্ড সারা পৃথিবীর কাছে এই ব্রীজের কথা বেশ জোড়েসোড়ে প্রচার করে। তাদের সকল মাঝপথে আমরা গ্রামের শিশুদের বিক্রি করা জাম্বুরা খেলাম। সবাইকে কলাপাতায় করে খেতে দিলো। বিকেলের হলুদ আলো নিভে এসেছে। সন্ধ্যা হয় হয়। এবার আমরা ফিরতি পথে সোজা রওয়ানা হলাম শিলং শহরের দিকে। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। আজ রাতে আমাদের অবস্থান শিলং শহর।
[আগামী পর্বে আমরা শিলং শহর কিছুটা ঘুরে মেঘ-পাহাড়ের স্বর্গরাজ্য চেরাপুঞ্জির গুহা আর ঝর্ণা দেখতে বেরুবো। পথে পথে মজার মজার কত ঘটনা! দারুণ সব ছবিসহ আসছি শীঘ্রই। সাথেই থাকুন।]
যারা এ বছর হর্নবিল উৎসব যোগ দিতে চান তারা তথ্যের জন্য এখানে খোঁজ নিতে পারেন।
মন্তব্য
বাহ, এতো দিনে বিস্তারিত বর্ণনা আসা শুরু হইল! ভাল হচ্ছে, চলুক গাড়ি টিম নাগার সাথে।
মিচ ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে দারুণ ছিল, বেচারার খুবই ফ্লেক্সিবল। দেখা হলে শুভেচ্ছা দিয়েন আমাদের। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
facebook
ভয়ে ভয়ে লিখছি। সবার কেমন লাগে কে জানে!
নভেম্বরেই অরুণাচল ট্রিপে মিচের সাথে দেখা হবে মনেহয়।
খুবই ভালো লাগল লেখাটা। একটানে আগ্রহের সাথে পড়ে গেলাম। ছোটবেলায় কিছু বইয়ে এসব জায়গার নাম জানার পর থেকেই বেড়াতে যাবার অনেক আগ্রহ। এই লেখা পড়ে সেই আগ্রহ বেড়ে গেল অনেকগুণ।
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।
এ বছর ডিসেম্বেরর ৩ তারিখ ঢাকা থেকে হর্ণবিল উৎসবে যোগ দিতে আবারও রওয়ানা হচ্ছি। ছোট দল হবে। যেতে চাইলে দ্রুত আওয়াজ দিতে হবে। ১৩ তারিখ আবার ঢাকায় ফিরে আসবো।
সঙ্গে আছি!
ভারতীয়রা তো দেখা যায় ভিসা নিয়ে ইউরোপিয়ান-আমেরিকানদের চেয়েও বেশী ঝামেলা করে! নাকি এত নিয়ম কেবল বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যই?
Emran
ধন্যবাদ ভাই ইমরান। আর হ্যাঁ, বাংলাদেশিদের জন্য একটু কড়াকড়িই বটে। যেমন আমরা বৈধত সিকিম যেতে পারি না। লে ও লাদাখের নুবরা ভ্যলী, প্যাঙ্গং লেকসহ চীনা সীমান্তবর্তী কিছু কিছু জায়গায় যেতে মানা। কী আর করা নাগাল্যান্ড যেমন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে তেমনি অন্যরাও হয়তো তুলে নেবে একদিন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অসাধারণ লেখনী! আপনার ভ্রমন কাহিনির কোনো বই আছে?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অাসন্ন বই মেলায় ছায়াবীথি প্রকাশন থেকে আসিতেছে....
আগাম অভিনন্দন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হর্নবিল শব্দটা ইংরেজি না? একটা লোকজ উৎসবের নাম ইংরেজি কেন?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এ প্রশ্ন আমার মাথায়ও এসেছে। সঠিক উত্তর এখনো জানতে পারিনি। এ বছরও উৎসবে যাচ্ছি। দেখি কর্তৃপক্ষের কারো কাছ থেকে উত্তরটা পাই কিনা।
আচ্ছা এই জীবন্ত সেতু হেটে পার হয়েছিলেন? সেতুটা আসলে আশ্চর্যজনক!
এই সেভেন সিস্টার, বিশেষ করে, শিলংয়ে যাওয়ার ইচ্ছে বহুদিনের, আর সড়কপথেই যেতে হবে, তিনদিন লাগে লাগুক, এতটা নতুন পথ ও পথের ধারের জীবন দেখার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না।
।।।।।।।
অনিত্র
জ্বি, হেঁটে পাড় হয়েছি। দারুণ সে অভিজ্ঞতা। গভীর সেই শুনশান জঙ্গলের মধ্যে প্রকাণ্ড শেকড়বাকড়গুলোকে যেন জীবন্তই লাগছিলো।
শিলং ও চেরাপুঞ্জি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবো আগামি পর্বে। পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
পড়তে ভাল লাগছে, চলুক।
কিছু টাইপো আর ২/১ টা উটকো শব্দ (যেমন " মেঘালয় ট্যুরিজম বোর্ড সারা পৃথিবীর কাছে এই ব্রীজের কথা বেশ জোড়েসোড়ে প্রচার করে। তাদের সকল মাঝপথে আমরা গ্রামের শিশুদের বিক্রি করা জাম্বুরা খেলাম।") ঠিক করে দিতে পারেন।
ছবি ২ বার দেখাচ্ছে, আপলোড করার সময় ইনসার্ট এর পর একটা অপশন থাকে তালিকা/সরাও - চেকমার্ক তুলে দিলে একবার দেখাবে।
এদ্দিন কুন্ঠে ছিলেন স্যাম ভাই! ছবিগুলো নিয়ে ম্যালা ঝামেলায় ছিলাম। জান বাঁচাইলেন।
লেখাটা আবার পড়ে লাইনগুলো ঠিক করে দিচ্ছি।
আচ্ছা ২০১০ এর আগে নাগাল্যান্ড বাংলাদেশীদের জন্যে নিষিদ্ধ ছিলো কেন সেটি জানেন কি?
গুডরিডস
এই কারণগুলো আম জনতার কাছে বড়ই ধোঁয়াশার। আসল কারণ লিখিতভাবে কোনোপক্ষই বলেছে বলে জানা নেই। যেমন ভারতের সিকিম, কেন বাংলাদেশীদের জন্য নিষিদ্ধ আজো অজানা।
পরের পর্ব দেন
কলকাতা থেকে গতকাল ফিরেই পরের পর্ব ধরেছি। শীঘ্রই পোস্ট দিচ্ছি।
নতুন মন্তব্য করুন