১.
খোমাখাতার স্ট্যাটাসের মাথামুন্ডু প্রায়ই আমি বুঝি না। অনেকে সুন্দর সুন্দর বর্নছবি ব্যবহার করেন, যেমন-
মানুষের মুখ ٩(-̮̮̃-̃)۶ ٩(●̮̮̃•̃)۶ ٩(͡๏̯͡๏)۶ ٩(-̮̮̃•̃)۶ ...
অথবা ছবি... _̴ı̴̴̡̡̡ ̡͌l̡̡̡ ̡͌l̡*̡̡ ̴̡ı̴̴̡ ̡̡͡|̲̲̲͡͡͡ ̲▫̲͡ ̲̲̲͡͡π̲̲͡͡ ̲̲͡▫̲̲͡͡ ̲|̡̡̡ ̡ ̴̡ı̴̡̡ ̡͌l̡̡̡ ...দেখতে বেশ লাগে।
আবার যখন দেখি কেউ একান্ত আলাপচারিতা বা অন্যকে শুভেচ্ছা জানাতে দেয়ালের বদলে নিজের স্ট্যাটাস ব্যবহার করছে, তখন বিরক্ত লাগে। মাঝে মাঝে অবশ্য খোমাতলীয় (খোমাখাতায় কাকতলীয়) ব্যপারও ঘটে, দেখা যায় একাধিক বন্ধু যারা একে অপরকে চেনেই না, তারা সবাই প্রায় কাছাকাছি বিষয়ের উপরই স্ট্যাটাস দিয়ে রেখেছে।
তাই এই শনিবার যখন বেশ কিছু বন্ধুর স্ট্যাটাসে নানা রকম রঙের নাম লেখা দেখলাম, খুব একটা অবাক হলাম না। প্রথমে অবশ্য খেয়ালই করিনি যে এই রঙীন স্ট্যাটাসধারীরা সবাই নারী। কেউ কালো, কেউ লাল, অনেকেই হালকা বাদামী (Beige)। কেউ কেউ আবার দু-একটা লাইনও লিখে রেখেছে যা থেকেও কিছু বোঝার উপায় নেই কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। যাই হোক, দেখলাম আবার ভুলেও গেলাম।
ঘটনা বুঝলাম পরদিন যখন খবরটা গুগল নিউজে আসলো। স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির এ হলো এক অভিনব প্রচারাভিযান। যখন এটা রঙ না-কি wrong এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল তখন বুঝলাম ইতোমধ্যে আরো অনেকেই এটা জেনে গিয়েছেন। অনেককেই দেখলাম প্রতিবাদ জানাচ্ছেন- কেউ তীব্রভাবে, কেউ মৃদুভাবে। কেউ সহমত প্রকাশ করছেন, আবার কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের স্ট্যাটাস দেখে বিব্রতও হচ্ছেন। কেউ আবার নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়টির ভালো-মন্দ ব্যাখ্যা করছেন।
একজনের গঠনমূলক প্রশ্ন ছিল এমন (অনুবাদ)-
"যে দেশে ইজ্জত রক্ষার জন্য মেয়েদের ওড়না পরতে হয়, কর্মজীবি মেয়েরা সমস্যা এড়াতে ঘোমটা দেয়, এবং শেষ পর্যন্ত কাউকে কাউকে হিজাবও পড়তে হয় রাস্তার লাঞ্ছনা থেকে বাচার জন্য, সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ফেসবুকে ‘বক্ষবন্ধনীর রঙ’ স্ট্যাটাস হিসেবে দেয়াটা কি স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করবে, না-কি অসুস্থ্য কামানন্দ বিতরন করবে?"
অনেকেই একটি সংস্কারপন্থী মুসলিম রাষ্ট্রে এর প্রকৃত কার্যকারীতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ এটাকে আবার নিছক আনন্দের খোরাক হিসেবেও নিয়েছেন। অনেকে এই আলোচনাকে অশোভন বা অশ্লীল বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
কে এই স্ট্যাটাসের জন্ম দিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে মাত্র পাচ মিনিটের গুগলানুসন্ধান আমাকে জানিয়ে দিল যে এর ভালো-মন্দ নিয়ে যেমন বিতর্ক হচ্ছে, তেমনি এর প্রচার-প্রসারের অবাক করার মতন ব্যাপ্তী আর দ্রুততা নিয়েও আলোচনা চলছে বিশ্ব ব্যাপী। এই ভাবে চলতে থাকলে দেখা যাবে জানুয়ারির ২ তারিখ একটা বিশেষ দিনের মর্যাদাও পেয়ে গিয়েছে।
২.
আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশে যখন জন্মনিয়ন্ত্রন প্রচারাভিযান শুরু হয়, তখন এর সাফল্য নিয়ে ব্যপক সন্দেহ ছিল। তত্ত্ব মতে, মধ্য আয়ের দেশে পরিনত না হওয়া পযর্ন্ত জন্মহার কমানো সম্ভব নয়। কারন একটি মধ্য আয়ের পরিবারের কাছে অধিক সন্তান মানে অধিক ব্যয়। কিন্তু নিন্ম আয়ের পরিবারে যেখানে সন্তান পালনের ব্যয় অত্যন্ত নগণ্য, সেখানে অধিক সন্তান বরং ভবিষ্যৎ আয়ের জন্য বাড়তি হাত। তদুপরি বাংলাদেশ একটি সংস্কারপন্থী (এবং এরশাদ চাচুর কল্যাণে মুসলিম রাষ্ট্র) হিসেবেই পরিচিত ছিল। সেই দেশে কনডমের ব্যবহার নিয়ে প্রচারাভিযান?
অথচ যে দেশে এসব নিয়ে কথা বলা ছিল রীতি-নীতি-সংস্কারের বাইরে, সেই দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে সম্ভব হয়েছে ছেলে-বুড়ো-নারী-পুরুষের একত্রে বসে জন্মনিয়ন্ত্রনের উপর আলোচনা শোনা আর ভিডিও দেখা। আড়াই দশক আগে গ্রামের লোক কনডম কী জিনিস তাই বুঝতো না, অথচ চার বছর আগে বাংলাদেশেই এক বিলিয়ন রাজা কনডম বিক্রর সাফল্য উদযাপিত হয়েছে। মধ্য আয়ের দেশ হবার আগেই, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবার আগেই এদেশ তার জন্মহার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। মনে আছে স্কুলে রচনা পড়ার সময় নিন্ম আয়ের দেশে ‘বিনোদনের অভাবে জন্মহার বৃদ্ধি হয়’ কেন তার কোন সদুত্তোর পাইনি কারো কাছে। কিন্তু এখন এই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের সাফল্যের কথাই বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে পড়ানো হয়। এটা যে কত বড় একটা সামাজিক উত্তরণ তা আসলেই অনির্বচনীয় (দেখুন এখানে)!
৩.
বাংলাদেশে সম্প্রতি এইডস বিষয়ে ব্যপক প্রচারনা শুরু হয়েছে। শুধু আফ্রিকা নয়, উন্নত দেশগুলিও এইডস মোকাবেলায় কঠিনতম যে প্রতিবন্ধকতার সম্মখীন হয়েছে তার নাম- সঙ্কোচ। শুধু এইডস নয়, কার্ভিক্যাল ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতন বিষয়গুলির প্রধান শত্রুও এই সঙ্কোচ।
এই সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলার সাফল্য আমাদের চেয়ে কে কবে বেশি দেখিয়েছে?
কিছু প্রশ্ন অবশ্য ঘোরাফেরা করছে। এই যেমন-
- এক দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস কী পৃথিবী থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার দূর করে দিয়েছে?
- না। কিন্তু একটা দিনের জন্য হলেও তো এটা মানুষকে ভাবিয়েছে। এটার প্রতিত্তোরে ম্যামোগ্রাম বা নিয়োমিত চেকআপ নিয়ে যে আলোচনাগুলো হয়েছে তাই বা কম কী? (এক বন্ধুকে দেখালাম একটা মজার ভিডিও পোস্ট করতে, দেখুন এখানে)
- কিছু লোক কি এর মধ্যে আনন্দ নেবার চেষ্টা করবে না?
- জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রচারণায় এরা আরো বেশি আনন্দ নিয়েছে। পরিধানের রঙ জানা যে ভাগ্যাহত লোকের একমাত্র আনন্দ, তার জন্য করুণা। সবাই সচেতন হলে এরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।
- কিন্তু কারো কারো স্ট্যাটাস তো আর রঙে সীমাবদ্ধ থাকেনি… কিছু ক্ষেত্রে ভব্যতার সীমা ছাড়িয়েছে?
- তাদের ভ্রক্ষেপ না করলেই হয়। সব কাজেই তো কিছু ‘নাপতা’ থাকে। তারা হয়তো জানে না, বিষয়টা আসলে রঙ প্রকাশের বা ছবি প্রকাশের না, বিষয়টা পরীক্ষা করার (দেখনু এখানে)।
বটি দিয়ে খুনও করা যায় বলে তো আর দেশ থেকে বটি উঠিয়ে দেয়া যায় না, তাই না? এইডস প্রতিরোধ, জন্মনিয়ন্ত্রন ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে কিঞ্চিৎ হাসিঠাট্টা তো অনেকেই করেন। অনেক কৌতুকেরও জন্ম হয়েছে এর থেকে। তাই বলে কী এর আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হয়েছে?
মনে আছে বিটিভির সেই বিজ্ঞাপনের কথা? “আগে ছিলাম বোকা, এখন হইলাম বুদ্ধিমান”!
আমরা যদি এখন এই সামান্য বিষয় নিয়ে সংস্কার গেল সংস্কার গেল রব তুলি, তখন লোকে কী বলবে? বলবে- “শুরুতে ছিলো বোকা, তারপর হয়েছে বুদ্ধিমান… আর এখন হয়ে যাচ্ছে ভোাই”!
আসলে আমি তা, যা আমি বিশ্বাস করি। আমরা সবাই যদি বিশ্বাস করি যে এর থেকে ভালো কিছু সম্ভব, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। আমি বিশ্বাস করি-
সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান,
সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ।
মুক্ত করো ভয়,
আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।
আমার দেশের মায়েরা, মেয়েরা সুস্হ্য থাকুক।
[লেখাটি আমার সেই বন্ধুটিকে উৎসর্গ করছি যার জন্য এই প্রচারণা আর কোন নতুন অর্থ বহন করে আনবে না… ইতোমধ্যেই অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে… কেমো চলছে জানি, তবু ভালো থাকিস বন্ধু…]
মন্তব্য
সব ক্যাম্পেইন তাৎক্ষণিক ফল বয়ে আনবে তেমনটি হয়তো নয়। তবে আমার স্কুল পড়ুয়া বোনটি স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে তেমনটি হয়তো জানেও না, সে যদি ফেইসবুকের রঙ প্রচারণার মাধ্যমে কিছুটা সচেতন হয়, তবে ক্ষতি কী! আমি এই হুজুগটাকে ভালোভাবেই দেখছি।
যদিও প্রথমে বুঝি নাই, শুধু মেয়েরাই কেনো রঙ স্ট্যাটাস দিচ্ছে।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
- বুঝলাম, রঙ প্রকাশ করাটাই মূল উদ্দেশ্য না। মূল উদ্দেশ্য ছিলো রঙ দেখে নেয়ার সময় পরিধানের চারদিকে হাত বুলিয়ে দেখে নেয়া কোনো কিছু অস্বাভাবিক বোধ হয় কীনা! এখন কথা হলো, যাঁরাই তাঁদের খোমাখাতার স্ট্যাটাসে 'রঙ'টা প্রকাশ করেছেন, তারা কি ঐ কাজটুকু সচেতনভাবে করেছেন, অন্যকে করাতে পেরেছেন?
করে থাকলে ফেসবুকের এই উদ্যোগটি সফল হয়েছে। আর না হলে উদ্যোগটি কেবলই রঙ প্রকাশ করে wrong পথে কিছু অসুস্থ কামুককে তাদের জিভ লকলক করাতে সাহায্য করেছে কেবল।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সহমত।
আমার বন্ধু তালিকায় যারা আছে, তাদের কেউ এই জাতীয় স্ট্যাটাস দেয় নাই, তাই জানাও ছিল না। তবে, যারাই করে থাকুক, যারাই স্ট্যাটাস দিয়ে থাকুক, তারা নিজেরা অন্তত: সচেতন হয়ে নিজেরা চেকআপ করালে সেটাই এই স্টান্টের সার্থকতা। অন্যথায় পুরো পরিকল্পনাই ব্যর্থ।
হু সেটাই
ইন্টারনেট জেনারেশনের লেটেস্ট হুজুগ। যুগটাই এমন - একে তো মানুষের অ্যাটেনশন কম, নিত্যনতুন থ্রিল দরকার, সেটা যেখান থেকে আসুক - ব্রা-এর রং হলেই বা মন্দ কি। আরেক হলো ফেসবুকের কল্যাণে হাজার পদের নার্সিসিস্টিক লোকের আনা-গোনা - নিজের ব্রা-এর রং দুনিয়াকে জানিয়ে নিজের প্রতি আবারো একটু দৃষ্টি আকর্ষণ হলো। নেট প্রজন্মের সবকিছু ''শেয়ার'' করার এই প্রবণতা, নিজের/অপরের প্রাইভেসির জন্যে পাঁচ পয়সার পাত্তা না দেয়ার ট্রেন্ড কোথায় গিয়ে শেষ হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
এই তথাকথিত ক্যাম্পেইন-কে খুব সস্তা যৌন সুড়সুড়ির থেকে বেশী কিছু মনে হলো না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ইন্টারনেটে "প্রাইভেসী" যে "প্রায় ভেসে" গিয়েছে তা আর বলতে!
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
গত কয়দিন ধরে এসব ড্রামা দেখছি ফেইসবুকে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। আরো মেজাজ খারাপ হয় যখন বাংলাদেশে অবস্থিত স্কুলের বান্ধবীরা গণমেইল করে সবাইকে এই ফালতু রঙ ছিটাছিটি খেলায় অংশ নিতে অনুরোধ করে... "দেখিতো ছেলেরা বুঝতে পারে নাকি কিসের কথা হচ্ছে!"...
নিজেকে 'সুপার ডুপার ওহ সো কুউল' প্রমাণ করার প্রবনতাটা আজকাল প্রায় সবার মধ্যেই দেখছি। সেই জন্যে যদি তাদের এই ফালতু হুজুগে মাতামাতি করতে হয় ভালো কথা। সরাসরি করুক, খামাখা ব্রেস্ট ক্যান্সার আওয়্যারনেসের ছুতা ধরার তো কোন মানে নাই।
মেজাজ গরম হওয়ার মতো কোনো কিছু পেলাম না। যৌন সুড়সুড়ি কিংবা প্রাইভেসী ভেসে যাওয়ার মতোও কোনো কিছু মনে হয়নি।
ফেইসবুকে অনেক বন্ধুকে অনেক অশ্লীল স্ট্যাটাস দিতে দেখি। কই সেইখানেতো কাউকে আঙ্গুল তুলতে দেখি না। বরং অনেক বন্ধুকে দেখি সেটাতে লাইক মারতে আর হে হে করে হাসতে। দেখি আর অবাক হই।
সাঈদ ভাইকে ধন্যবাদ বিষয়টাকে সামনে নিয়ে আসার জন্যে।
স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এমন প্রচারণা বাস্তবে চালানো হয়। ফেইসবুকে তারই একটা প্রতিফলন ঘটেছে।
গত প্রায় ১২ বছর ধরে দেখছি এইদিনে রাস্তায় মিছিল বেরোয়। ছেলে ও মেয়েরা জামার বাইরে রঙ-বেরঙের বক্ষবন্ধনী পরে রাস্তা ধরে হেঁটে যায়।
অনভ্যস্ত চোখে একটু হাস্যকর ঠেকে। কিন্তু একটু ভাবার পর আমার কাছে একে একটা মহত্ চেষ্টা মনে হয়েছে। স্তন সম্পর্কে মানুষের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দূর করা না গেলে স্তন ক্যান্সার বা এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে নারীরা ডাক্তারের কাছে আসবেন কীভাবে।
স্তনে টিউমার হওয়া অনেক নারী খুব কাছের মানুষকেই একথা বলতে পারে না। কেন?
যে স্তন পান করে মানব-শিশুগুলো বড় হয় তারা বড় হয়ে স্তনকে দেখে যৌনআবেদনের বিষয় হিসেবে। পাশ্চাত্য সমাজে অনেক নারীরা তাই ছুরি-কাচিঁর নীচে অহেতুক শুয়ে পড়ে এর আকার ছোট-বড়ো করার জন্য। আর প্রাচ্যে কিশোরীটি মাথা ঝুঁকিয়ে বুক লুকিয়ে হাঁটে - যাতে কোনো দুষ্ট পুরুষের মতিভ্রম না হয়। শরীরে তারা জড়িয়ে নেয় বাড়তি কাপড়ের আস্তরণ। যেন শরীরে এরকম একটা বাড়তি অংশ না থাকলেই ভালো হতো।
সেই স্তনে টিউমার হয়েছে কি হয়নি তা নিজের হাত দিয়ে পরীক্ষার কথা জানা থাকলেও করে দেখার কথা ভাবতেও অনেক নারী লজ্জা বোধ করে। আর এসব নিয়ে ডাক্তার পর্যন্ত যেতে যেতে যে দেরি হয়ে যায় তা আমরা জানি।
মানুষ অনেকদূর এগিয়েছে।
স্তন, নিতম্ব, লিঙ্গ, সঙ্গম ইত্যাদি খুব স্বাভাবিক শব্দাবলী ব্যবহারে এত সংবেদনশীল থাকার কোনো মানে নেই। এতে যেহেতু বিপদ বাড়ে সুতরাং এ থেকে মুক্তি পাওয়াও দরকার। এ ধরণের সামাজিক প্রথাই মানুষই চালু করেছে - কোনো একটা সময়ে। এই সময়ে যদি সেটা অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর মনে হয় তবে তা বাদ দিতে পারাটাই মানুষের অগ্রসরতা।
একজন অগ্রসর মনের মানুষ পাবর্ত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে খোলা বুকের নারীদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন দেখে লজ্জা পেতে পারে না। তেমনি বিবিসি - ওয়ানের ফ্রাইডে নাইট উইথ জোনাথন রস অনুষ্ঠানে জোনাথন যখন এক্স-ফ্যাক্টর অনুষ্ঠানের বিচারক শ্যারন অসবোর্নের স্তন ধরে তাতে কতটা সিলিকন ভরা তা পরীক্ষা করে তখনই তা অশ্লীল হয়ে যায় না।
স্তন সম্পর্কে অহেতুক অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা ভাঙতে পারলেই আমরা স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ থেকে বেশি সংখ্যক নারীকে বাঁচাতে পারবো।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আমার মনের কথাগুলো লিখে ফেলেছেন।
আসলেই মানুষ অনেকদুর এগিয়েছে।
শোহেইল মতাহির চৌধুরী, আপনার কথায় যুক্তি আছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আসুন ৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে প্রস্টেট ও অন্ডকোষের ক্যান্সারের সচেতনতা তৈরীতে আমাদের জাঙ্গিয়ার রং তুলে দিই ফেসবুকের স্টেটাসে।
দুর্দান্ত,
প্রস্টেট ক্যান্সার চেক করার দুইটি উপায় আছে- ডাক্তারের কাছে গিয়ে পিএসএ চেক, অথবা 'এসো নিজে করি' পদ্ধতি।
আপনি যেহেতু ফেসবুকের এই হুজুগটাই অনুসরন করতে চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছি আপনি নিজেই চেক করতে চাচ্ছেন।
নিজে কীভাবে চেক করতে হয়, তা এখানে পাবেন। এটা জেনেও যদি আপনি এগিয়ে যেতে চান, তাহলে শুভেচ্ছা রইলো।
[না বলে দিলে আমি আবার মাঝে মাঝে রসিকতা বুঝি না। আপনার মন্তব্য যদি রসিকতা হয়ে থাকে, তাহলে এই মন্তব্যটি অগ্রাহ্য করবেন।]
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
রসিকতা নারে ভাই। পোস্ট পড়ে মনে হল যে স্তনের ক্যান্সারের ব্যাপারে আপনি সচেতন, তবে এভাবে প্রচারে আপনার আপত্তি আছে। আমি বলতে চাই অপপ্রচার বলে কিছু নেই। যেকোন আকারে সচেতনতা মূল্যবান। নারীরা এগিয়ে এসেছে। আমরা কেন পিছিয়ে পড়বো?
প্রচারে আপত্তি করিনিতো, অপপ্রচারে আপত্তি করেছি মাত্র।
যদি সত্যিই সবাই সচেতন ভাবে করে থাকে, তাহলে আনন্দিত। না করে থাকলে, তাদের ভুল ভাঙ্গুক।
আর এ বিষয়ে নারীদের থেকে পিছিয়ে তো আপনাকে পড়তেই হবে, কারন স্তন ক্যান্সারের গ্ল্যান্ড পরীক্ষা যত সহজ, নিজে নিজে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড পরীক্ষা তত সহজ নয় (কিঞ্চিৎ রসিকতা করলাম)।
তবে এই বিষয়ে সহমত যে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে কেউই যেন পিছিয়ে না থাকে।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
আমি এটাকে অত নিগেটিভলি দেখছি না। (যদিও ফেসবুকে নাই।)
স্তন আমাদের সংস্কৃতিতে নিষিদ্ধ একটা কিছু। বলা বাহুল্য হয়ত একটা মেয়েও নিজের শরীর সম্পর্কেও এ ধরনের ধারণা পোষণ করে। কিন্তু স্তন ক্যান্সারে সচেনতাই তো সবচেয়ে বেশী কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। একটা মেয়ে যদি জানতে পারে যে তার স্তনে কোথাও গ্রোথ দেখা যাচ্ছে, এবং সেটা বাবা/মা/বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারে সেটা কি কাম্য নয়?
হুজুগ হলেও,এটা ননসুইসাইডাল হুজুগ।
হুজুগের একটা পজিটিভ দিক আছে। হুজুগের চোটে একশজন পথে নামলে তার মধ্যে ৯৫ জনই হুজুগ শেষে ভুলে যেতে পারে হয়তো। কিন্তু অন্তত ৫ জন ব্যাপারটা অনুধাবন করে। তাই সব হুজুগরে আমি ফালতু বলতে রাজী না। অনেকেই হয়তো হুদাই বা না জেনে না বুঝে স্ট্যাটাস পাল্টেছেন। কিন্তু এর ফলে অল্প কিছু জনও যদি সচেতন হয়, তাহলেও এটা স্বার্থক।
লেখককে ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভালো লিখেছেন সাঈদ আহমেদ।
আপনার বন্ধুর মঙ্গল কামনা করি............
প্রিয় সাঈদ, ফেসবুকে ভালো করে ঢুকি না বহুদিন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে যে প্রচারণার যে ধরনের কথা শুনলাম, সেটা শুনে হাসি পেল। ব্যাপারটা হাস্যকর আর হুজুগে, সন্দেহ নেই।
কিন্তু আমিও তোমার মতো দেখছি এর ভালো দিকটাই। এতে যদি কিছু সচেতনতা তৈরি হয়, সেটা তো খুবই উত্তম।
হুজুগ তো কতরকমেরই দেখি, তার ভালো দিক বিশেষ একটা তো চোখে পড়ে না।
আমিও তোমার মতোই কামনা করছি, সুস্থ থাকুন বাংলাদেশের মায়েরা ও মেয়েরা!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
নতুন মন্তব্য করুন