প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: কী আছে কী নেই

সাঈদ আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন সাঈদ আহমেদ (তারিখ: রবি, ১৭/০১/২০১০ - ৭:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নেতা-নেত্রীদের কল্যাণে পরের মুখে খাওয়া আর পরের কানে শোনার এমনি অভ্যেস হয়েছে, যে তাঁরা না বলা পর্যন্ত বোধকরি এ জগতের কোন কিছুই আর বিশ্বাস হয় না। ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বললেন সফর একশত ভাগ সফল আর বিরোধীদল বললেন সফর একশত ভাগ বিফল। এদিকে আমজনতা দুভাগ হয়ে কেউ ঢোল কেউ কপাল চাপড়াতে শুরু করলাম। সবাইকে শুধু তালি আরা গালি দিতেই দেখছি, কিন্তু চুক্তিতে আসলে কী আছে তা নিয়ে তারা তেমন কিছুই বলছেন না।

শেষ পর্যন্ত পরের মুখে ঝাল/মিষ্টি খাবো না এই সীদ্ধান্ত নিয়ে সফর সংক্রান্ত সরকারী যৌথ ইশতেহার (joint communiqué) নিয়ে বসলাম। মূলত: এই ইশতেহার, সরকারের ব্যাখ্যা আর বিরোধীদলের প্রতিবাদ পর্যালোচনা করেই এই লেখা।

সফরের উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত এবং চুক্তির বিষয়বস্তুই এই লেখার প্রতিপাদ্য। মোট একান্নটি অনুচ্ছেদ আছে যৌথ ইশতেহারে যা সংক্ষেপে পুরো সফরের কর্মকান্ড তুলে ধরেছে। প্রাথমিক অনুচ্ছেদগুলো (অনুচ্ছেদ ১-১৬) মূলত: স্মৃতিচারন, আনুষ্ঠানিকতা আর সৌহার্দ বিনিময় সংক্রান্ত। এই লেখাটি অনুচ্ছেদ অনুসারে না সাজিয়ে, বিষয় অনুসারে সাজানো হয়েছে। মূল ইশতেহারটি এখানে আছে

বন্দর ও ট্রানজিট
অনুচ্ছেদ ২৩ অনুসারে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে সড়ক ও রেলপথে ভারতে পণ্য আনা-নেয়া অনুমোদন করবে।

নৌবন্দর একটি স্থায়ী সম্পদ যা তেল-গ্যাসের ন্যায় নি:শেষিত হয় না, কিন্তু এর সেবা অন্যান্য দেশে রপ্তানী করা যায়। আমাদের দুইটি বন্দরের যে সামষ্টিক সামর্থ্য, তার পুরোপুরি ব্যবহার তো হয়ই না, বরং মংলা বন্দরের ন্যায় একটি প্রাকৃতিক বন্দরের সিংহভাগ সুযোগই অব্যবহৃত রয়েছে। আমরা যদি ভারতের কাছে এই বন্দর-সেবা বিক্রি করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন ভারতীয় পন্য ব্যবস্থাপনা ও জাহাজের খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি সরবরাহসহ বিভিন্ন সেবাখাত প্রসার লাভ করবে, অন্যদিকে তেমনি চলমান বন্দরের খরচ economy of scale এর কারনে কমে গিয়ে দেশীয় আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের পরিবহন খরচও কমাতে সাহায্য করবে।

নেপাল ও ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেবার বিষয়েও বাংলাদেশ আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছে যার জন্য ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট প্রয়োজন হবে। অনুচ্ছেদ ২৬ অনুসারে নেপালকে রোহানপুর-সিংবাদ রেলপথের মাধ্যমে ট্রানজিট দেবার বিষয়ে ভারত স্বীকৃতি দিয়েছে। ভুটানের জন্যও অনুরূপ ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানিয়েছে এবং এই অমীমাংসীত বিষয়টির দ্রুত ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা প্রয়োজন। তবে অনুচ্ছেদ ৩৮ অনুসারে নেপাল-ভুটান উভয়ই ট্রাকের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাংলাবন্ধ-ফুলবাড়ী স্থলবন্দর পযর্ন্ত ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করতে পারবে।

ভারতের প্রায়-বিচ্ছিন্ন পূর্বাঞ্চলকে ট্রানজিট সুবিধা দেবার জন্য আশুগঞ্জ থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত নৌ-বন্দর সংস্কারের কাজ হাতে নেবার কথা বলা হয়েছে (উল্লেখ্য, ভারতকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌ-ট্রানজিট আগেই দেয়া ছিল)।
অনুচ্ছেদ ২২ অনুসারে আশুগঞ্জ এবং শিলঘাট ব্যবহৃত হবে নৌ-ট্রানজিটের পোর্ট অব কল হিসেবে। ভারত এজন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবে এবং বাংলাদেশ তাতে প্রশাসনিক সহায়তা দেবে। ট্রানজিটের সুবিধার্থে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উন্নয়নেও ভারত বিনিয়োগ করবে (অনুচ্ছেদ ২৪)।

সীমানা সমস্যা
সীমানা সংক্রান্ত দুটি বিষয় উঠে এসেছে ইশতেহারে- সীমান্ত রক্ষীদের হাতে হত্যাকান্ড (অনুচ্ছেদ ১৮) এবং ভারতের সাথে স্থল ও সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি (অনুচ্ছেদ ২০, ২১)।

ভারতের বিএসএফ-এর হাতে নিয়মিত প্রাণহানির বিষয়টি আলাদা ভাবে ইশতেহারে স্থান পায়নি। তবে সীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম রোধ ও হত্যা বন্ধের জন্য স্ব স্ব বাহিনীর নিয়ন্ত্রন ও নিয়মিত বৈঠকের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে এবং এধরনের হত্যাকান্ডের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও অবগত।

স্থলভাগের সীমানা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে যে যৌথ সীমানা দল (Joint Boundary Working Group) ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, তা আমলাতন্ত্র আর বৈঠকের বাধনে আটকে না গিয়ে যেন দ্রুত কাজ শুরু করে, তা এখন নিশ্চত করতে হবে।

এই সফরের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে সমুদ্রসীমা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সমাধানের ব্যর্থতায় জাতিসংঘের (UNCLOS) দ্বারস্থ হবার বিষয়ে ভদ্রলোকচিত ঐকমত্য (অনুচ্ছেদ ২১)।
বড় দেশ হিসেবে ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমাধানের বদলে জাতিসংঘের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানই আমাদের জন্য সহজ হবে এবং বাংলাদেশ এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় সমাধানের বাধনে আটকে না রাখাটা দেশের জন্য ভালো হয়েছে।

পানি বন্টন ও নদী সংস্কার
তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে এই সফরে কোন চুক্তি স্বাক্ষর বা বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। তবে বিষয়টি দ্রুত (২০১০ এর মার্চ এর মধ্যেই) যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সমাধানের জন্য বলা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮)। তিপাইমুখে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কোন পদক্ষেপ ভারত গ্রহন করবে না, এই মর্মে আশ্বাস পাওয়া গেলেও (অনুচ্ছেদ ৩১), তিপাইমুখ বাধ বাতিল করার কোন ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। তাই তিপাইমুখ-বিরোধী চলমান কর্মসূচী অব্যহত রাখার পাশিপাশি বাধের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ ও তার সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে যেন তা ভারতের এই আশ্বাসের বিপরীতে ব্যবহার করা যায়।

তবে বন্যা নিয়ন্ত্রন এবং যোগাযোগের সুবিধার জন্য ইছামতি নদীর খনন এবং মহানন্দা, করতোয়া, ধরলাসহ সাতটি নদী রক্ষায় ভারতের সহযোগিতার বিষয় নিশ্চত করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ২৯)।
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ৯টি নদীতল খনন যন্ত্র ভারত জরুরী ভিত্তিতে সরবরাহ করবে (অনুচ্ছেদ ৩০)।

বিদ্যুত, বাণিজ্য, ঋন
ভারত বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যুত ব্যবস্থার আন্ত:সংযোগের প্রয়োজনীতা নিয়ে কথা হলেও বাংলাদেশ কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। তবে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনসহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উৎপাদন ও উন্নয়নে একত্রে কাজ করার বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে (অনুচ্ছেদ ৩২)।

শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে আলোচনা হলেও, খুব একটা ফল এই দফায় পাওয়া যায়নি। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশকে ভারতের দেয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রায় কোন কাজেই আসে না, যেহেতু বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানী দ্রব্য এর আওতার বাইরে। ভারত যদিও তার এই সংরক্ষিত-তালিকা (negative list) থেকে আরো কিছু পণ্য বাদ দিয়েছে (অনুচ্ছেদ ৩৩), কিন্তু তা এখোনও যথেষ্ট নয়।

ভারত তার মেঘালয় সীমান্তে যে পরীক্ষামূলক সীমান্ত-বাজার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে (অনুচ্ছেদ ৩৭), তা ভারতের স্থলাবদ্ধ ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রসারে সাহায্য করতে পারে। ভারত থেকে প্রায়-বিচ্ছন্ন এ অঞ্চলে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানীতে ভারত প্রায়ই বিভন্ন রকম অশুল্ক বাধা আরোপ করে থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়টি আগেই মাথায় রাখতে হবে।

সীমান্ত বাণিজ্য সচল করার জন্য অবোকাঠামো উন্নয়নে উভয় দেশের সম্মতি প্রকাশ ছাড়াও (অনুচ্ছেদ ৩৬), বাংলাদেশের বিএসটিআই-এর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত সক্রিয় সহযোগিতা দিবে (অনুচ্ছেদ ৩৪) বলে অঙ্গীকার করেছে।
এছাড়াও, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য ভারত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে (অনুচ্ছেদ ৩৯) এবং ভবিষ্যতে ঢাকায় সড়ক ও ফ্লাইওভার উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রেখেছে (অনুচ্ছেদ ৪০)।

শিক্ষা-সংস্কৃতি-অন্যান্য
২০১১ সনে রবীন্দ্রনাথের জন্মের দেড়শত বছর পূর্তি উৎসব ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পালন করবে (অনুচ্ছেদ ৪১) বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারে।

ভারত আগামী পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশকে বার্ষিক ৩০০টি বৃত্তি প্রদানের কথা ঘোষনা করেছে যা আলোচনার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা যেতে পারে (অনুচ্ছেদ ৪২)। তবে এই অনুচ্ছেদে “scholars and persons in government employment” বলতে শুধু সরকারী কর্মকর্তাদের কথাই বলা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বৈদেশিক বৃত্তি কুক্ষগত করা ও বেসরকারী ছাত্রদের বৈদেশিক বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টিকে বাংলাদেশের কিছু সরকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন (পরে এক সময় এ নিয়ে লিখবো আশি করি)।

জাতিসংঘে ছোট দেশগুলির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার সাধনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করা হয়। যদি কখোনও নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার সাধিত হয়, তবে তাতে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সমর্থন আছে বলে বলা হয়েছে।

তবে আপাতত: নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে ২০১১-২০১২ মেয়াদে বাংলাদেশ ভারতকে, এবং ২০১৬-১৭ মেয়াদে ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন দেবার বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

চুক্তি নয়, সম্মতি
ইশতেহারে বন্দর, পানি এবং সীমানাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয়েই দুই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রকাশিত হয়েছে মাত্র, কিন্তু বাস্তবায়নযোগ্য/বাধ্যতামূলক কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। যে বিষয়গুলিতে চুক্তি হয়েছে, তা মূলত: প্রশাসনিক বিষয়। অপরাধ বিষয়ে পারস্পারিক আইনি সহায়তা; সাজাপ্রাপ্ত বন্দী বিনিময়; এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, সংঘবদ্ধ অপরাধ আর মাদক পাচার প্রতিরোধে পারস্পারিক সহায়তার জন্য তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত চুক্তি করলে বাংলাদেশে সন্ত্রাস আছে বলে প্রমাণিত হবে- কারো কারো মধ্য এধরনের একটি আশঙ্কা রয়েছে। এটি দূর করার জন্যই সম্ভবত: শুধু সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত চুক্তির বদলে সংঘবদ্ধ অপরাধ আর মাদক পাচার সংক্রান্ত বিষয়ও এই চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তির পর বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্যা নেই বললেই চলে, সেহেতু বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস মোকাবেলায় এই চুক্তি ভারতকে বেশি সুবিধা দেবে। অন্যদিকে, আন্ত:সীমান্ত (আন্তর্জাতিক নয়) সন্ত্রাস মোকাবেলায়- তা চোরাচালান কেন্দ্রিকই হোক অথবা পলায়নপর দেশীয় সন্ত্রাসী মোকাবেলার ক্ষেত্রেই হোক- বাংলাদেশ ভারতের থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাবে। কারন, ভারতের স্থল সীমানার স্বল্প অংশই বাংলাদেশের সাথে, কিন্তু বাংলাদেশের স্থল সীমানা প্রায় পুরোটাই ভারতের সাথে।

এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনিময় সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে (অনুচ্ছেদ ৪৯)।

কিন্তু বন্দর, সীমানা ও পানি বন্টনের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখোনও স্বাক্ষরিত হয়নি যেখানে জনমত প্রকাশের সুযোগ এখনও রয়েছে। এটাকে ভালো-মন্দ দুই দিকেই বিচার করা যায়। চুক্তি হয়ে গেলে হয়তো পানি বন্টনের মত জরুরী বিষয়গুলি বাস্তবায়ন দ্রুততর হতো, কিন্তু অন্যদিকে চুক্তি না হওয়ায় এসব বিষয় নিয়ে দেশে আলোচনার সুযোগ তৈরী হয়েছে। চুক্তি পরবর্তী অকার্যকর সমালোচনার বদলে, এই প্রাক-চুক্তি আলোচনা দেশের গনতন্ত্রের জন্য অনেক ভালো।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই সাঈদ আহমেদ।
খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। আশাকরি পোস্টটি স্টিকি হবে।

শেখ আমিনুল ইসলাম

হিমু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

হিমুদা, আপনার বিস্ময়ের (সম্ভবত বিরক্তির) কারন হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।
আপনার মেসেজ আমি বুঝতে পেরেছি। যথাসম্ভব সচেতন থাকব।
অনেক ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন।

শেখ আমিনুল ইসলাম

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। এই পোস্টে আশা করছি আলোচনার ঝড় বয়ে যাবে। আমি পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

ঝড় শুনলেই ভয় লাগে! মনে হয় মুজিব-জিয়া, ভারত-পাকিস্তান, আওয়ামী লীগ-বিএনপি, স্বার্বভৌমত্ব-ভাবমূর্তি ইত্যাদি নিয়ে শুরু হয়ে যাবে হাসি

ভাবছি এর মধ্যে না গিয়ে তথ্য আর যুক্তির ভিত্তিতে একটা আলোচনা চালালে কেমন হয়? কারো কাছে কোন নতুন তথ্য বা যুক্তি থাকলে তা বিনিময় করি। কী হইলে কী হইতে পারতো আর কী না হইলে কী না হইতে পারতো এই গোলকধাঁধায় না ঢুকে... কী করা উচিত তাই নিয়ে একটা আলোচনা করি।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

সিরাত এর ছবি

সমস্যা কি, মূলত বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের ভয়ে এসব বিষয়ে আলোচনার ঝড় বয় না। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে তো অনেক কথাই বলে যাই/বলা যায়, কিন্তু তাতে আর লাভ কি? হাসি

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

সিরাত,
বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের কমতির চেয়ে সাধারন জ্ঞানের কমতি বেশি বিপজ্জনক। মাঝে মাঝে তো মনে হয় এই সচলে যে স্তরে মন্তব্য আদান-প্রদান হয়, তার অর্ধেক যুক্তি নিয়েও যদি আমাদের নেতা-নেত্রীরা বিতর্ক করতেন, তাহলে আমাদের অনেক বেশি উপকার হতো।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

অতিথি লেখক এর ছবি

সাঈদ ভাই সুন্দর পর্যালোচনামূলক লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। একটা বিষয় খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখনো অনেক গুলো চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি গুলো ভারত সরকার কতটুকু রক্ষা করেছিলো তা কিন্তু আমরা জানি না। বা বর্তমান সরকার কিন্তু সেই বিষয়ে কোন কথা বলেনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় আসবে আমরা কী ততবারই ভারতের সাথে চুক্তি করতে দেখব? ফারাক্কা বাঁধে পানি বন্টনের যে চুক্তি হয়েছিল, ভারত সরকার তা কতটুকু রক্ষা করেছে। যদি রক্ষা করত তাহলে আমাদের পদ্মার অবস্থা এত করুণ হত না। ধন্যবাদ সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য।

কামরুজ্জামান স্বাধীন

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

স্বাধীন,
চুক্তি তো হতেই পারে... বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে দ্বি-পাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তি না করে দেশ চালানো কঠিন।

একটু খোজ নিলে দেখবেন, কোন সরকারের আমলেই চুক্তি কম হয়নি...তা সে বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের সাথেই হোক আর বিদেশের সাথেই হোক। সমস্যা হলো চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে।

পানি বন্টণের ক্ষেত্রে ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল যেহেতু বাধঁ তার সীমানার মধ্য এবং পানির প্রবাহ তার দিক থেকে আমাদের দিকে আসে... ফলে চুক্তি না মেনে চলা সহজ ছিল। তাছাড়া, চুক্তি যদি নাও থাকতো, তাতেও যে তারা পানি দিত, এটাই বা কী করে বলি। কিন্তু বন্দরের ক্ষেত্রে তো আমাদের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা... যেহেতু বন্দর আমাদের সীমানার মধ্যে এবং পণ্য সরবরাহ আমাদের ভূখন্ডেই হবে।

রাষ্ট্রীয় চুক্তি আসলে বৈবাহিক চুক্তির (কাবিন নামা) মতোই... দু'জন ভালো হলে সংসার টেকাতে চুক্তি বের করতে হয় না.....কিন্তু একজন যদি সমস্যাকর হয়, তখনই কাবিন নামার খোজ পড়ে।

এজন্য চুক্তি সম্পাদন করতে হয় বিবাহ বন্ধনের মতোই....

বিশ্বাস নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে (যেন সম্পর্ক সৌহার্দপূর্ণ হয়), কিন্তু তার আগে অবিশ্বাস নিয়ে চুক্তির ধারাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখে নিতে হবে (যদি কখোনও বিরোধ সৃষ্ট হয়, এজন্য)।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

সুরঞ্জনা [অতিথি] এর ছবি

পোস্টের জন্যে ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

এই বিষয়ে এই ধরনের পোস্ট খুব দরকারি। আমি মূলত বন্দর ব্যবহার নিয়েই মন্তব্য দেবার চেষ্টা করব। বাংলাদেশের তিনদিকে ভারতের সাথে সীমান্ত। এখন বাংলাদেশে পূর্বে আর পশ্চিমে ভারতের ভূখন্ডের যেই অংশ তার মধ্যে পন্য এমনকি যাত্রী পরিবহনে ভারতে প্রচুর কস্ট পরে। কারন বাংলাদেশের তিন দিক ঘুরে এই দুই দিকের ভূখন্ডকে সংযুক্ত করতে যে পরিমান দূরত্ব পেরোতে হয় তার খরচ কমিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট চাওয়াটা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটা স্বাভাবিক চাওয়া। কোন রকম রাজনৈতিক দুরভিসন্দি ছাড়াই এই চাওয়াটা অর্থনৈতিক সেন্স তৈরি করে।

তার মানে কি এই যে ঝুকি গুলো বিবেচনায় আসবে না? অবশ্যই আসবে। কিন্তু এখানে ভারতকে প্রতিপক্ষ না ভেবে বরং নেগোসিয়েশনের দৃষ্টিতেই ব্যপারটা দেখা উচিত মনে করি।আর নেগোসিয়েশনে ভারতের কৌশলগত দক্ষতা মোটামুটি সুবিদিত বলেই জানি। আর জাতীয় স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে হোম ওয়ার্ক করার ব্যপারেও তাদের মোটামুটি সুনাম রয়েছে। আমরা কেন সেই রাস্তায় যাইনা সেটাই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি।

একটা ব্যপার ভাবছিলাম। ভারত তো বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়া নিয়ে ব্যপক হাঙ্গামা করে। বাংলাদেশ যদি সে দিকে না গিয়ে একেবারে উলটো রাস্তায় হাটে তাহলে কেমন হয়। অর্থাৎ ভারতের জনগনের জন্য ভিসা খুব সহজ করে দিতে পারে। আর ট্রানিজিটের মধ্যে মালামালের সাথে সাথে যাত্রী পরিবহনকেও যোগকরে দিতে পারে। যেসব ভারতীয় এই সুযোগ ব্যবহার করবে তারা বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের পন্য কিনে নিয়ে যেতে পারবে (বিনা শুল্কে)। এতে করে আমাদের পন্যের চাহিদা ভারতে বেড়ে যাবে, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এই ভাবে বাংলাদেশ ভারতকে ইন্টিডাম্পিং ক্লজ ব্যবহার করে আটকানর যেই সহজ কায়দা ব্যবহার করে সেটাকেও পাশ কাটান যাবে।

মুক্তবাজারের শিকার না হয়ে এর কলাকৌশলকে নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করি না হয়। এটা নিছকই ভাবনা। সব দিকগুলো এখনো ভেবে দেখিনি। কিন্তু আমার কাছে এটাকে বেশ প্রমিজিং একটা ব্যপার মনে হচ্ছে।
কেবল জ্বালানী ক্ষেত্রে ভুর্তকিটা একটা দুর্বলতা। আমি মনে করি এটা তুলে নেয়া উচিত। বাংলাদেশের মত দেশে এই ভুর্তকির কোন মানে হয় না। কেবল কৃষকদের ক্ষতি কিভাবে ঠেকান যায় সেটাই ভেবে বের করা দরকার।

কিন্তু কৃষকদের নাম করে গাড়ির মালিকদেরকে জ্বালানীতে ভুর্তকি দেয়াটা আমার কাছে একটা মুর্খতা মনে হয়। পৃথিবী জোড়া যেখানে জ্বালানির ব্যবহার কমান জন্য জ্বালনিত উচ্চহারে কর আরোপ করা হয় সেখানে বাংলাদেশে জ্বালানীতে ভুর্তকি দেবার বুদ্ধি কই থেকে আসল বুঝিনা।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

রিয়াজ,
ধন্যবাদ। ভালো বলেছেন। আপনার মন্তব্যের এই অংশে আমাতের সমস্যার মূল বিষয়টাই উঠে এসেছে-

তার মানে কি এই যে ঝুকি গুলো বিবেচনায় আসবে না? অবশ্যই আসবে। কিন্তু এখানে ভারতকে প্রতিপক্ষ না ভেবে বরং নেগোসিয়েশনের দৃষ্টিতেই ব্যপারটা দেখা উচিত মনে করি।আর নেগোসিয়েশনে ভারতের কৌশলগত দক্ষতা মোটামুটি সুবিদিত বলেই জানি। আর জাতীয় স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে হোম ওয়ার্ক করার ব্যপারেও তাদের মোটামুটি সুনাম রয়েছে। আমরা কেন সেই রাস্তায় যাইনা সেটাই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

রিয়াজ,
ধন্যবাদ। ভালো বলেছেন। আপনার মন্তব্যের এই অংশে আমাদের সমস্যার মূল বিষয়টাই উঠে এসেছে-

তার মানে কি এই যে ঝুকি গুলো বিবেচনায় আসবে না? অবশ্যই আসবে। কিন্তু এখানে ভারতকে প্রতিপক্ষ না ভেবে বরং নেগোসিয়েশনের দৃষ্টিতেই ব্যপারটা দেখা উচিত মনে করি।আর নেগোসিয়েশনে ভারতের কৌশলগত দক্ষতা মোটামুটি সুবিদিত বলেই জানি। আর জাতীয় স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে হোম ওয়ার্ক করার ব্যপারেও তাদের মোটামুটি সুনাম রয়েছে। আমরা কেন সেই রাস্তায় যাইনা সেটাই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও আগে পিছে কিছু তেমন ভেবে দেখিনি । তবে ভারতকে ট্রানজিট ও ভিসা দেয়ার ব্যাপারে আপনার ভাবনাটির সাথে আমি একমত।

সাগর শহীদুল্লাহ

দুর্দান্ত এর ছবি

বন্দর ও ভিসার ব্যাপারে রিয়াজ ভাইয়ের মন্তব্যগুলোর সাথে একমত।

তাসনীম এর ছবি

সাঈদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ বিভিন্ন দিকগুলি তুলে ধরায়। বাংলাদেশের রাজনীতির একটা ধারায় ভারত বিরোধীতা একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, অপর ধারাটি কিছুটা ভারতপন্থী। এই অবস্থায় মোটামুটি যেসব ইনফরমেশন পাওয়া যায় সেগুলো কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট, আপনার লেখায় আসল চিত্রটা পাওয়া গেল।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব নিঃসন্দেহে একটা ভালো জিনিস, কিন্তু ভারতের সাথে নিজের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে কিছু করা বেশ কঠিন কাজ। যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জন্য খারাপ হবে না, কিন্তু আসলেই সঠিক বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটা বুঝতে সময় লাগবে।

আপনাকে আবারও ধন্যবাদ তথ্যপূর্ণ লেখার জন্য।

--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতির একটা ধারায় ভারত বিরোধীতা একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, অপর ধারাটি কিছুটা ভারতপন্থী।

অথচ রাজনীতি হবার কথা ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে! তবে একটা কথা, বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যের গত তিন যুগের তথ্য-উপাত্ত দেখলে কে যে ভারতপন্থী আর কে যে ভারতবিরোধী তা বোঝা আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়!

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

সিরাত এর ছবি

২০১১ সনে রবীন্দ্রনাথের জন্মের দেড়শত বছর পূর্তি উৎসব ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পালন করবে (অনুচ্ছেদ ৪১) বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারে।

আমার মতে এটা বেস্ট। হাসি

আসলে না, তবে এটা খুব ভাল লাগলো।

জাতিসংঘে পানির ব্যাপারটা ঠিক হইলেই হইলো। কথা হল, বার্মা বাবাজি কি করবে?

ভেজা নক্ষত্র [অতিথি] এর ছবি

উদ্ধৃতি

….. বৈদেশিক বৃত্তি কুক্ষগত করা ও বেসরকারী ছাত্রদের বৈদেশিক বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টিকে বাংলাদেশের কিছু সরকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন (পরে এক সময় এ নিয়ে লিখবো আশি করি)……

ভাই সাঈদ আহমেদ, আপনার লেখার শুরুটা দেখে আপনাকে বিচক্ষনধর্মী পক্ষপাত দোষমুক্ত লেখক বলেই মনে হয়েছিল, শুরুতে লিখেছিলেন, পরের মুখে ঝাল/মিষ্টি খাবো না এই সীদ্ধান্ত নিয়ে..। আপনার অবগতির জন্য, বৈদেশিক বৃত্তি দাতাদেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনি দেখে থাকবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যেসব বৃত্তি প্রদান করা হয় তার বেশিরভাগ বেসরকারী ছাত্ররা পেয়ে থাকেন (শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর সাইট দেখা যেতে পারে)। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে দাতাদেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী কর্মকর্তাদের কিছু বৃত্তি প্রদান করা হয় (যা খুবই অপ্রতুল)।আর বর্তমানে দেশের বাহিরে সরকারী চাকুরেরা যারা আছেন তাদের একটা বড় অংশ নিজ মেধা দিয়ে বৃত্তি অর্জন করে গেছেন।

একটা ঘটনা মনে পরে গেলো, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক তখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। সংসদে ওনার উপস্থিতিতে জনৈক সাংসদ বলেছিলেন স্পিকার মহোদয় এবার নিয়োগে খুব দূনীর্তি হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের ভাগনেরা বেশি চাকুরী পেয়েছে। উত্তরে শেরেবাংলা বলেছিলেন, “আমার ভাগনে বলে সব কমবুদ্ধি সম্পন্ন হবে এমনতো কোন কথা নেই”।
সরকারী চাকুরেরা যখন নিজ মেধা দিয়ে বৃত্তি অর্জন করে বিদেশ যান তখন এই বলতে হয় সরকারী চাকুরেরা সব কমবুদ্ধি সম্পন্ন হবে এমনতো কোন কথা নেই। পরের মুখে ঝাল/মিষ্টি না খাওয়াই ভালো এতে অধিক লালা ঝরে জিহবার ক্ষতি হতে পারে।

ভেজা নক্ষত্র

…………………………………………………..
বৃষ্টিটা তুলিতে নিয়ে নদীর জলে আকাঁ ঝুঁকা

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

ভেজা নক্ষত্র,
ওই নির্দিষ্ট মন্তব্যটি আপনাকে আহত করে থাকলে দু:খিত। আপনাকে নিশ্চত করে বলতে পারি, এই ঝালটি আমার নিজ মুখে খাওয়া, অন্যের মুখে নয়।

লক্ষ্য করে দেখবেন, আমি সরকারী কর্মকর্তাদের ছোট করছি না অথবা তাদের মেধা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছি না। আমি "কিছু সরকারী কর্মকর্তা-র" কর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছি।

বাংলাদেশে দুধরনের বৈদেশিক বৃত্তি যায়, নিয়মিত সরকারী বৃত্তি (ইউএসএ-র **, ইউকে-র শিভিনিং, ইউকে-কানাডার কমনওয়েলথ, অস্ট্রেলিয়ার এডিএস) এবং অনিয়মিত সরকারী বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তি। প্রথম বৃত্তিগুলি যদিও সংশ্লিষ্ট দেশ দিয়ে থাকে, কিন্তু রাষ্ট্রকেন্দ্রীক কিছু নীতিমালা আমাদের দেশের প্রশাসনই নেগশিয়েট করে থাকে। আমি প্রত্যেকটা বৃত্তির অনিয়মগুলো একে একে বলতে পারি।

যেমন- অস্ট্রেলিয়ার এডিএস প্রথমে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ ভাগ আর সাধারন জনগনের জন্য ৫০ ভাগ হিসেবে বন্টণ করা ছিল। ২০০৪ এর পর সরকারী কর্মকর্তাদের বৃত্তি বৃদ্ধি করার জন্য যে নেগসিয়েশন হয়, তাতে শেষ পযর্ন্ত সাধারন জনগনের বৃত্তি বাতিল করে সম্পূর্ণ এডিএস সরকারী কর্মকর্তাদের দেবার সীদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে শুধু ঢাকাস্থ আইসিডিডিআরবি-কে কয়েকটি বৃত্তি দেবার সীদ্ধান্ত হলেও এ বছর আইসিডিডিআরবিকে মাত্র একটি বৃত্তি দেয়া হয়। ২০০৭ সন থেকে অস্ট্রেলিয়া নতুন আরেকটি (এএলএ) বৃত্তি চালু করে যেখানে সবার অংশগ্রহন উন্মুক্ত করা হয়। চাইলে আমি আপনাকে তথ্য দিতে পারি এখানেও কিভাবে প্রভাব বিস্তারে প্রচেষ্টা চলছে।

এটা শুধু সরকারী বনাম বেসরকারী বিষয় নয়, এই "কিছু" কর্মকর্তা অন্য মেধাবী কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার সর্বত চেষ্টা করে। ২০০৭-এ এডিএস-এ আগত অন্তত তিনজন কর্মকর্তার কথা জানি যাদের পূর্বের আবেদনপত্রগুলিকে প্রসেস না করে স্রেফ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়েছিল। একজনের কথা বলতে পারি যে জনৈক দপ্তরি মারফত অন্য কর্মকর্তা কর্তৃক তার দরখাস্ত ফেলে দেবার কথা শুনে পরে তা উদ্ধার করতে পেরেছিল এবং সচিব পর্যায়ে যোগাযোগ করে শেষ পযর্ন্ত তা প্রসেস করতে পেরেছিল।

আর আপনি নিশ্চত থাকতে পারেন, অন্যের বৃত্তি দেখে আমার লালা ঝরে না... আমি ২০০৬ এ ইউকে-তে কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়েও তা গ্রহন না করে অন্য বৃত্তিতে পড়তে গিয়েছি (ইউজিসি-তে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন)।

তবে, আবারো বলছি, মেধাবী সরকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই... সম্ভবত আপনার চেয়ে বেশি সংখ্যক সরকারী কর্মকর্তাদের সাথেই আমার বন্ধুত্ব আছে এবং আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে প্রায়ই আলাপ হয়।

আপনি চাইলে আমাকে ইমেইল করতে পারেন, আমি আপনাকে নাম, তথ্য ইত্যাদি সরবরাহ করতে পারি।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

ভেজা নক্ষত্র [অতিথি] এর ছবি

উদ্ধৃতি
…প্রথম বৃত্তিগুলি যদিও সংশ্লিষ্ট দেশ দিয়ে থাকে, কিন্তু রাষ্ট্রকেন্দ্রীক কিছু নীতিমালা আমাদের দেশের প্রশাসনই নেগশিয়েট করে থাকে।….

রাষ্ট্রকেন্দ্রীক কিছু নীতিমালা আমাদের দেশের প্রশাসনই নেগশিয়েট করে থাকে, কিন্তু তার সংখ্্যা এবং অভিষ্ঠ বৃত্তিপ্রাপ্তগনের প্রকার সে নেগশিয়েশনে থাকে না, আর দাতারা সরকারী চাকুরেদের কেন অগ্রাধিকার দিতে চায়, সেটা বোধকরি আপনি ভালই জানেন।

উদ্ধৃতি
….এর বাইরে শুধু ঢাকাস্থ আইসিডিডিআরবি-কে কয়েকটি বৃত্তি দেবার সীদ্ধান্ত হলেও এ বছর আইসিডিডিআরবিকে মাত্র একটি বৃত্তি দেয়া হয়। ২০০৭ সন থেকে অস্ট্রেলিয়া নতুন আরেকটি (এএলএ) বৃত্তি চালু করে যেখানে সবার অংশগ্রহন উন্মুক্ত করা হয়। চাইলে আমি আপনাকে তথ্য দিতে পারি এখানেও কিভাবে প্রভাব বিস্তারে প্রচেষ্টা চলছে। …..

বৃত্তিতো ভাই কোটার বিষয় নয়, যোগ্য না পাওয়া গেলে আইসিডিডিআরবিকে বেশি বৃত্তি কিভাবে দেবে? আইইএলটিএস এর স্কোরটা এবার একটু বেশী কড়া ছিল কিনা।
এএলএ-র বিষয়ে কিভাবে প্রভাব বিস্তারে প্রচেষ্টা চলছে তথ্যটা পেলে উপকৃত হতাম। তথ্য দিতে পারেন বললে হবেনা, তথ্যটা দিন। সবাই জানুক।

উদ্ধৃতি
….এটা শুধু সরকারী বনাম বেসরকারী বিষয় নয়, এই "কিছু" কর্মকর্তা অন্য মেধাবী কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার সর্বত চেষ্টা করে।….

সহমত, একারনেই আমার এতো অবতারনা। এটা সরকারী চাকুরেদের শিল্প নয় বরং কতিপয় নষ্ট মানূষের নষ্টচিন্তা যা দাতাদেশ সমূহ জেনে গেছে। তাইতো এখন প্রসেসিং এ দাতাদেশ সমূহ থাকে ও সিদ্ধান্ত দেয়(এডিএস দ্রষ্টব্য)।

উদ্ধৃতি
….আমি ২০০৬ এ ইউকে-তে কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়েও তা গ্রহন না করে অন্য বৃত্তিতে পড়তে গিয়েছি (ইউজিসি-তে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন)।….

এটা কেন বললেন বোঝা গেল না। অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আপনার মেধা নিয়ে আমার মন্তব্য নয় আপনার সূত্রবিহীন ভাবাবেগপ্রলাপ নিয়ে আমার মন্তব্য। তবে ভালো লাগলো জেনে যে, আপনি মেধাবী। ইউজিসি অনেক বড় জায়গা ওখানে আমার খোজ নেয়ার সার্মথ্য নেই। আপনারতো অনেক সরকারী কর্মকর্তাদের সাথেই বন্ধুত্ব আছে, দয়া করে আমাকে ইউজিসিতে একজনের পরিচয় দিলে উপকৃত হতাম।

উদ্ধৃতি
….সম্ভবত আপনার চেয়ে বেশি সংখ্যক সরকারী কর্মকর্তাদের সাথেই আমার বন্ধুত্ব আছে এবং আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে প্রায়ই আলাপ হয়।….

সম্ভবত না, আমার চেয়ে আপনার বেশি সংখ্যক সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে বন্ধুত্ব আছে, এটা সত্য। আমি আপনার কথা ধরে যদি বলি তাহলে বলতে হয়, আপনার একাধিক বৃত্তিপ্রাপ্তির মূলে আপনার ওইসকল সরকারী বন্ধুরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে কিনা সে প্রশ্ন রয়ে যায়।

উদ্ধৃতি
….আপনি চাইলে আমাকে ইমেইল করতে পারেন, আমি আপনাকে নাম, তথ্য ইত্যাদি সরবরাহ করতে পারি।….

আমি আমার লেখায় ইমেইল প্রদান করি। সূত্রভিত্তিক হলে প্রেরন করতে পারেন, তবে আলোচনা ভিত্তিক কথা পরিহার করাই ভালো। আগাম ধন্যবাদ।

ভেজা নক্ষত্র

…………………………………………………..
বৃষ্টিটা তুলিতে নিয়ে নদীর জলে আকাঁ ঝুঁকা

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

এটা সরকারী চাকুরেদের শিল্প নয় বরং কতিপয় নষ্ট মানূষের নষ্টচিন্তা যা দাতাদেশ সমূহ জেনে গেছে। তাইতো এখন প্রসেসিং এ দাতাদেশ সমূহ থাকে ও সিদ্ধান্ত দেয়(এডিএস দ্রষ্টব্য)

- নষ্ট হোক আর যাই হোক, তারা তো মন্ত্রনালয়েরই কর্মকর্তা... আমি ভদ্রভাবে এদেরকে "কিছু সরকারী কর্মকর্তা" বললাম, তাতেই আপনি বিষয়টা নিজের উপর নিয়ে এমন ক্ষেপে গেলেন! আর এখন নিজেই এদেরকে বলছেন "কতিপয় নষ্ট মানুষ" যাদের জন্য দাতারা প্রসেসিংটা পর্যন্ত দেশীয় প্রশাসন থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে!

শুরুতে বললেই পারতেন যে, এসব "নষ্ট মানুষ" নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার শুধু আপনার/আপনাদেরই আছে।

বৃত্তিতো ভাই কোটার বিষয় নয়

- আমিও তো তাই বলি... খেয়াল করে দেখুন, আলোচনার সূত্রপাত এর উপর ভিত্তি করেই।

একাধিক বৃত্তিপ্রাপ্তির মূলে আপনার ওইসকল সরকারী বন্ধুরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে কিনা সে প্রশ্ন রয়ে যায়

- বৃত্তিপ্রাপ্তির মূলে সরকারী বন্ধুরা তাহলে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে? বাহ জেনে বেশ ভালো লাগলো।

আপনার সাথে তো দেখছি আর কোন দ্বিমতই থাকছে না... শুধু শুধু আর তাহলে কথা না বাড়াই। আসুন বরং বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির দিকে মনোযোগ দেই। আপনাকেও ধন্যবাদ।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

ভেজা নক্ষত্র [অতিথি] এর ছবি

উদ্ধৃতি
যাদের জন্য দাতারা প্রসেসিংটা পর্যন্ত দেশীয় প্রশাসন থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে!

সেজন্যই বলেছিলাম বেসরকারী ছাত্রদের বৈদেশিক বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা সরকারি চাকুরেদের নেই, ওই ক্ষমতা একমাত্র দাতাদেশসমূহের। সকল ক্ষমতা দাতাদেশসমূহের। একমত পোষন করার জন্য ধন্যবাদ।

ভেজা নক্ষত্র

…………………………………………………..
বৃষ্টিটা তুলিতে নিয়ে নদীর জলে আকাঁ ঝুঁকা

আলমগীর এর ছবি

অন্তত লিংকটার জন্য ৫তারা।
কোথাও কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ।
আমি নিজেও পাচ্ছিলাম না... সর্বত্রই শুধু মন্তব্য আর কথামালা। আশা করি শিঘ্রই স্বাক্ষরিত চুক্তি গুলিও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

হিমু এর ছবি

সাঈদ ভাই, বিদেশী বৃত্তি নিয়ে সরকারী কর্তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশদ জানতে ইচ্ছুক আমি। আপনার আগ্রহ, সময় ও সাধ্যে কুলালে এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র একটি পোস্ট দেবেন আশা করি।



হাঁটুপানির জলদস্যু বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

আগ্রহ আর সাধ্য আছে... সময় বের করে নিয়ে লিখে ফেলবো একদিন। ধন্যবাদ।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

কল্লোল  এর ছবি

নৌবন্দর একটি স্থায়ী সম্পদ যা তেল-গ্যাসের ন্যায় নি:শেষিত হয় না, কিন্তু এর সেবা অন্যান্য দেশে রপ্তানী করা যায়। আমাদের দুইটি বন্দরের যে সামষ্টিক সামর্থ্য, তার পুরোপুরি ব্যবহার তো হয়ই না, বরং মংলা বন্দরের ন্যায় একটি প্রাকৃতিক বন্দরের সিংহভাগ সুযোগই অব্যবহৃত রয়েছে। আমরা যদি ভারতের কাছে এই বন্দর-সেবা বিক্রি করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন ভারতীয় পন্য ব্যবস্থাপনা ও জাহাজের খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি সরবরাহসহ বিভিন্ন সেবাখাত প্রসার লাভ করবে, অন্যদিকে তেমনি চলমান বন্দরের খরচ economy of scale এর কারনে কমে গিয়ে দেশীয় আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের পরিবহন খরচও কমাতে সাহায্য করবে।

প্রশ্ন হলো, বন্দরের যে সামর্থ্যটুকু অব্যাবহ্রত, সেটা কি কারণে? বাংলাদেশের শিল্পায়ন একেবারে সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, আমদানি রপ্তানি বাড়ার আর কোন সুযোগ নাই- ব্যাপারটি কি এরকম নাকি বাংলাদেশের শিল্প-কৃষি বাণিজ্য অবিকশিত বলেই এখনো বন্দরের সামর্থ্য অব্যবহ্রত রয়ে গিয়েছে? এখন আমরা যদি আমাদের শিল্প-কৃষি অর্থনীতির বিকাশ ঘটাই তাহলে অচিরেই এ ক্ষমতার পুরোটাই লাগবে। কিন্তু যদি চিরকাল পরনির্ভরশীল ও কমিশন ভোগী ভাড়াজীবি অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে টিকতে চাই, তাহলে হয়তো এই সামায়িক অব্যাবহ্রত বন্দর-ক্যাপাসিটিকে রপ্তানি করার প্রশ্ন আসে। কারণ একবার ভারতকে এই সুবিধা দিয়ে দেয়ার পর আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে যখন বন্দরের পুরো ক্ষমতাই আমাদের লাগবে তখন কিন্তু চাইলেই আমরা ভারতের কাছ থেকে সেই সুবিধা ফিরিয়ে নিতে পারব না- কারণ ততদিনে ভারতীয় অর্থনিতি এর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, ভারত বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে হলেও এই সুবিধা বজায় রাখতে চাইবে।

বলা হতে পারে, সাময়িক ভাবে হলেও তো নির্দিষ্ট কিছু বছরের জন্য ভারতকে বন্দর ব্যাবহারের চুক্তি করা যেতে পারে- আমি এ কথাটিকেও সঠিক মনে করি না কারণ বন্দর ব্যাবহারের ক্ষমতা কেবল বন্দর সংশ্লিষ্ট নয়, বন্দরে আসা যাওয়ার প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, যানবাহন, টোল, চেকিং ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ব্যাবস্থাপনার ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট- আমাদের রাস্তাঘাট এখনই অতিব্যাহ্রত ও ওভারলোডেড- ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক সহ সরাদেশের মহাসড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। এখন ট্রানজিটের ফলে ভারতীয় যানবাহন আমাদের রাস্তা ঘাট ব্রিজ ইত্যাদির উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্তিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা এখন ভারতের মাথা ব্যাথার বড় কারণ হয়ে উঠবে কারণ এখানে একদিন হরতাল থাকলে ভারতের আমদানী রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে বাংলাদেশের অভ্যান্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ হতে থাকবে। তাছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের যে বর্তমান বাণিজ্য সেটা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কেননা ট্রানজিটের ফলে ভারতের কেন্দ্র থেকে এখন সহজেই বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশের চেয়ে সস্তায় উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সরবরাহ করা যাবে ফলে তারা বাংলাদেশ থেকে আর পণ্য আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। এতকিছু ক্ষতির বিনিময়ে আমরা কি পাব- কিছু সার্ভিস চার্জ। এই সার্ভিস চার্জ কত হবে? সেটা কি আমাদের এই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে দেয়ার মতো য়থেষ্ট?

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

কল্লোল,
আপনার মন্তব্য পড়ে প্রথমেই যে প্রশ্ন মনে এলো তা হলো, আমাদের বিরোধীদল কেন "দাসখত", "দেশ বিক্রি" ইত্যাদি কথামালা বাদ দিয়ে এমন সুনির্দিষ্ট সমস্যাগুলি নিয়ে সামনে নিয়ে আসে না?!

যাই হোক, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বাধ্যতামূলক কোন বন্দর-চুক্তি করে না এসে কেবল অভিপ্রায় ব্যক্ত করে এসেছেন, সে কারনেই এ ধরনের আলোচনা বেশি বেশি করা উচিত যেন মূল চুক্তির আগে সবদিক বিবেচনায় আসে।

আপনার সব আশঙ্কার সাথে একমত হয়েই বলছি, এই আশঙ্কার ভয়ে সব বাদদিয়ে বসে না থেকে বরং আশঙ্কাগুলোর যথাযোগ্য সমাধান করেই বন্দর সেবায় যাওয়া উচিত।

প্রশ্ন হলো, বন্দরের যে সামর্থ্যটুকু অব্যবহৃত, সেটা কি কারণে?

- আপনার উল্লেখ করা কারনগুলির পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পের (রপ্তানীমূখী নয়) পতন, বিকেন্দ্রীকরণের অভাব, চাহিদার স্বল্পতা, অস্থীতিশীলতা, আমাদের দূরদশির্তার অভাব, মংলা বন্দরের নিয়মিত উন্নয়ন না করা ইত্যাদি কারন নিয়ে তো হরহামেশাই আলোচনা হয়। তবে এগুলোর সমাধান করে আত্মনির্ভরশীল হবার বিষয়ে আমি একমত।

একবার ভারতকে এই সুবিধা দিয়ে দেয়ার পর আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে যখন বন্দরের পুরো ক্ষমতাই আমাদের লাগবে তখন কিন্তু চাইলেই আমরা ভারতের কাছ থেকে সেই সুবিধা ফিরিয়ে নিতে পারব না

- সামর্থ্য তো একটি আপেক্ষিক বিষয়। এক সময় বন্দরের সামর্থ্য কম ছিল, তখন আমরা আরো কম ব্যবহার করেছি... এরপর আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধির সাথে সাথে বন্দরের আধুনিকায়ন করে সামর্থ্য আরো বৃদ্ধি করা হলো যা এখোনও ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদা তৈরী হলে আগামীতে সামর্থ্য আরো বৃদ্ধি করা হবে। নিচের ছবিটি দেখুন... বন্দর সেবা ও সামর্থ্যে আমরা কত পিছিয়ে আছি আর তা কোথায় নেয়া সম্ভব!

auto

- এই নৌ-মানচিত্রে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার, তা হলো নিকটতম প্রধান রুট থেকে আমাদের যে দুরত্ব, তা এমনিতে জাহাজ আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু আমরা যদি এটাকে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার (শুধু ভারত নয়) একটি কেন্দ্র হিসেবে তৈরী করতে পারি, তখন তাহলেই শুধু এটাকে লাভজনক করা যাবে।

এতকিছু ক্ষতির বিনিময়ে আমরা কি পাব- কিছু সার্ভিস চার্জ। এই সার্ভিস চার্জ কত হবে? সেটা কি আমাদের এই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে দেয়ার মতো যথেষ্ট?

- শুধু ভারতের আশায় বসে থাকলে যথেষ্ট তো নয়ই, বরং আপনি অন্যান্য যেসব সমস্যার কথা বললেন, সেগুলোও তৈরী হবে। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়ে, আঞ্চলিক সংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা যদি চীন (ইউনান প্রদেশ) সহ অন্যান্য অঞ্চলকে বন্দর সুবিধা দিতে পারি, তাহলেই আমরা সিঙ্গাপুর মডেল অনুসরন করতে পারবো।

এজন্য শুধু ভারতমুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। বরং ভারতের সমীহ আদায়ের জন্য "চায়না কার্ড" ব্যবহার করতে হবে। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে অবশ্য অঙ্গীকার করেছিল যে তারা পার্শ্ববর্তী দেশসমুহের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ তৈরী করবে এবং মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর সমস্ত এশিয়ার জন্যই উন্মুক্ত করবে (নির্বাচনী ইশতেহার, অনুচ্ছেদ ১৫.৩ ও ১৫.৪)।
আশা করি তারা প্রতিশ্রুতি রাখবে এবং ভারত-নেপাল-ভুটানেই থেমে থাকবে না।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

দুর্দান্ত এর ছবি

পরনির্ভরশীল ও কমিশন ভোগী ভাড়াজীবি অর্থনীতির একটি দেশ
সিঙ্গাপুর, দুবাই, পানামা, জিবুতি, হল্যান্ড - এগুলোতো এই করেই এতদিন কাটিয়ে দিল। ভাড়াজীবি হওয়ায় খারাপ কি দেখলেন?

এখন ট্রানজিটের ফলে ভারতীয় যানবাহন আমাদের রাস্তা ঘাট ব্রিজ ইত্যাদির উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্তিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা এখন ভারতের মাথা ব্যাথার বড় কারণ হয়ে উঠবে কারণ এখানে একদিন হরতাল থাকলে ভারতের আমদানী রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে বাংলাদেশের অভ্যান্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ হতে থাকবে।

তাহলে দেশের টাকাওয়ালাদের বলুন, আরো মোটা রাস্তাঘাট আর আরো মজবুত ব্রীজ বানাতে। সমস্যা যেগুলো আছে, সেগুলোর কারন কিন্তু একটাই, দেশের পাবলিকের পকেটা পয়সা নেই। ভারতকে ট্রানজিট দিলে (ও তার বদলা আমরা আমাদের হকের পাওনা ফেরত পেলে) দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্র চওড়া হবে। এতে করে কিছু গরীব মানুষের পকেটে যে পয়সা আসবে, সেটা তো মানেন?

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত চায়না যাচ্ছেন কুনমিংকে বন্দর সেবা দেবার জন্য। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম তারা গভীর সমুদ্র-বন্দর তৈরীর জন্যও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

গভীর সমুদ্র-বন্দর করলে চট্টগ্রামের বর্তমান বন্দরের কাজ কমে যাবার একটি আশঙ্কা ছিল। সেজন্যই কী চায়না-ভারত-নেপাল-ভুটানকে বন্দর সুবিধা দেয়া হচ্ছে যাতে উভয় বন্দরে কাজের চাপ বৃদ্ধি পায়? তাহলে তো খারাপ হয় না!

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

কল্লোল এর ছবি

পরনির্ভরশীল ও কমিশন ভোগী ভাড়াজীবি অর্থনীতির একটি দেশ
সিঙ্গাপুর, দুবাই, পানামা, জিবুতি, হল্যান্ড - এগুলোতো এই করেই এতদিন কাটিয়ে দিল। ভাড়াজীবি হওয়ায় খারাপ কি দেখলেন?

সিঙ্গাপুর ভাড়াজীবীতার মাধ্যমে আজকের অবস্থানে এসেছে কিংবা সিংগাপুরের অর্থনীতি ভাড়াজীবী- একথা কে বলল আপনাকে? সবগুলো দেশের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারলে ভালো হতো, কিন্ত সেটা আপাতত পারছিনা বিধায় আপাতত এখানে সিংগাপুর নিয়েই কিছু কথা বলি। আন্তর্জাতিক সি লেন এ সিংগাপুরের স্ট্রাটেজিক অবস্থানের কারণে এবং বন্দরের উন্নয়নের কারণে সিংগাপুরের বন্দর দুনিয়ার ব্যাস্ততম বন্দর যার ৭০ ভাগ কনটেইনারই হলো মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড, কিন্তু তার মানে কিন্তু এই না সিংগাপুর এই বন্দর ভাড়া দিয়ে তার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করেছে!

সিঙ্গাপুরের বন্দর ব্যাস্ততম হয়ে উঠে ১৯৮৬ সাল থেকে কিন্তু সিঙ্গাপুর ১৯৬০ সাল থেকে প্রতিবছর ৮% হারে প্রবৃ্দ্ধি লাভ করছিল- যার মূলে ছিল রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন। এখনও সিঙ্গাপুরের মোট অর্থনীতির ৬০ ভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ২০০০ সালে ইলেক্ট্রনিকস্ সহ ম্যানুফ্যাক্চারিং খাত সিংগাপুরের জিডিপি’র ২৬ ভাগ এবং ফাইনান্সিয়াল ব্যাবসা ছিল জিডিপি’র ২২ ভাগ। সুতরাং বর্তমানে সিঙ্গাপুরকে স্রেফ ভাড়াজীবি কমিশনভোগি অর্থনীতি বলা যেমন ভুল তেমনি ভাড়াজীবিতার মাধ্যমে সিংগাপুরের আজকের অবস্থান সেটা বলাও ভুল। তারচেয়েও বড় ভুল হলো স্ট্রাটেজিক অবস্থান, অর্থনীতির ভিত্তি ও শিল্পায়নের হার, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় না রেখে স্রেফ বন্দরের উদাহরণ সামনে এনে বাংলাদেশের বন্দর ও ট্রানজিটের সাথে তুলনা টানা।

তাহলে দেশের টাকাওয়ালাদের বলুন, আরো মোটা রাস্তাঘাট আর আরো মজবুত ব্রীজ বানাতে। সমস্যা যেগুলো আছে, সেগুলোর কারন কিন্তু একটাই, দেশের পাবলিকের পকেটা পয়সা নেই। ভারতকে ট্রানজিট দিলে (ও তার বদলা আমরা আমাদের হকের পাওনা ফেরত পেলে) দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্র চওড়া হবে। এতে করে কিছু গরীব মানুষের পকেটে যে পয়সা আসবে, সেটা তো মানেন?

মোটা রাস্তাঘাট আর মোটা ব্রিজ অবশ্যই বানানোর দরকার আছে কিন্তু সেটা টাকা ওয়ালাদেরকে বানাতে বলবো কেন? সেটা বানানোর দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু তার আগে বোঝা দরকার রাস্তাঘাটা আর ব্রিজ অর্থাত ভালো যোগাযোগ ব্যাবস্থা কেন দরকার? ভারতের আমদানী রপ্তানির জন্য, নাকি আমাদের শিল্প ও কৃষি অর্থনীতির প্রয়োজনে? কোন দেশের অর্থনীতির তিনটি ভাগ- প্রাইমারি বা কৃষিখাত, সেকেন্ডারি বা শিল্পখাত এবং টারসিয়ারী বা সেবা খাতা যার মধ্যে যোগাযোগ ব্যাবস্থা অন্তর্ভুক্ত। আপনি টারসিয়ারী খাতের বিকাশ ঘটাবেন প্রাইমারী বা সেকেন্ডারি খাতের প্রয়োজন মাথায় রেখে- কারণ স্বনির্ভর, দীর্ঘস্থায়ি, স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি শিল্পখাতের উন্নয়ন বেশি জরুরী- সেবা খাত হতে পারে এসবের সহযোগী। কেউ যদি মনে করে স্রেফ সেবাখাতের মাধ্যমে কোন দেশের অর্থনীতির স্থায়ী উন্নয়ন ঘটাবে তাহলে সেটা ভুল চিন্তা- কেননা সেবাখাত বড়ই অস্থিতিশীল ও পরনির্ভরশীল ফলে সহজেই ভেঙে পড়ে, সংকটে পড়ে। ফলে কোন দেশ সেবাখাতকে মূল ভিত্তি ধরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভের আশা করতে পারে না- সেবা খাতের উন্নয়নের জন্যও একটা শক্তিশালী শিল্প বা কৃষি ভিত্তির প্রয়োজন হয়। আমি মনে করি বাংলাদেশ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় অর্থনেতিক ভিত্তি তৈরী করার পরই কানেক্টিভিটি, ট্রানজিট করিডোর ইত্যাদির কথা ভাবতে পারে- তার আগে এসব কানেক্টিভিটি স্রেফ গুটি কয়েক লোকের পকেট ভারী করবে এবং দেশের গোটা অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করবে যার ভুক্তভোগি হবে দেশের বেশির ভাগ গরীব মানুষ- গরীব মানুষের জন্য যদি কারও দরদ থাকে তাহলে এ বিষয়গুলো ভেবে দেখার আহবান রইল।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

কল্লোল,
সিঙ্গাপুরের ভৌগলিক অবস্থান আর উৎপাদনশীল খাত নিয়ে যা বলছেন, তা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও সত্যি যে বন্দর আর শিল্প সেখানে এক অপরকে সাহায্য করেছে।

তবে সিঙ্গাপুর মডেল বলতে কিন্তু শুধু সেবা খাতের প্রসার বোঝায় না, বরং বন্দরকে কীভাবে উৎপাদনশীল খাতের উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়, তা বোঝায়। ট্র্যানজিট রুট হিসেবে যখন কোন স্বল্পোন্নত দেশ ব্যবহৃত হয়, তখন সেখানে ক্রমেই শিল্প কারখানাও গড়ে ওঠে। কারন, ট্র্যানজিটের কারনে economy of scale এ বন্দরের পরিবহন খরচ কমে যায়, তাতে দেশীয় আমদানী-রপ্তানীর খরচও কমে যায়।

স্বল্পোন্নত দেশ হবার কারনে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশী শুল্ক সুবিধা পায় এবং পুন:রপ্তানীর জন্য আমাদের value addition এর হারও কম (অর্থাৎ, অন্যদেশ থেকে অসম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ন পণ্য আমদানী করে তাতে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ value add করলেই আমরা তা আবার রপ্তানী করতে পারি যেখানে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পাওয়া শুল্ক সুবিধা বজায় থাকবে)।

এর ফলে একই কাচামাল আমদানী করে ভারত যে পণ্য যে শুল্কে তা উন্নত দেশে রপ্তানী করতে পারবে, আমরা তার থেকে কম শুল্কে তা রপ্তানী করতে পারি, যা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক দাম পেতে সাহায্য করে।

সিঙ্গাপুরের বন্দর সেবার সাথে এই শিল্পোন্নয়নের সম্পর্ক নিয়ে একটি লেখার রেফরেন্স এখানে পাবেন (উইকি পোস্টের চার নং রেফরেন্স)।

কাজেই বন্দরের মাধ্যমে শুধু সেবা খাতই প্রসার লাভ করবে, এটা আসলে ঠিকনা।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

দুর্দান্ত এর ছবি

সুতরাং বর্তমানে সিঙ্গাপুরকে স্রেফ ভাড়াজীবি কমিশনভোগি অর্থনীতি বলা যেমন ভুল তেমনি ভাড়াজীবিতার মাধ্যমে সিংগাপুরের আজকের অবস্থান সেটা বলাও ভুল।

সহমত নই। বন্দর না থাকলে ও সেই বন্দরের ভাড়া ব্যাবসায় গড়া স্থানীয় মিলিয়নিয়ার সিন্ডিকেট না থাকলে সিঙ্গাপুরে আজকের অবস্থানে আসা তো দূরে থাকে মালায়শিয়া থেকেই স্বাধীনতা পেতো না। যাকে আপনি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বলছেন, তা যে আসলে চীনা বংশোদ্ভুত সিন্ডিকেটের ভাড়া বানিজ্য, তা আপনি সিঙ্গাপুরী ব্যাবসায়ী মহলে কয়েক সপ্তাহ কাটালেই বুঝতে পারবেন।

কেউ যদি মনে করে স্রেফ সেবাখাতের মাধ্যমে কোন দেশের অর্থনীতির স্থায়ী উন্নয়ন ঘটাবে তাহলে সেটা ভুল চিন্তা- কেননা সেবাখাত বড়ই অস্থিতিশীল ও পরনির্ভরশীল ফলে সহজেই ভেঙে পড়ে, সংকটে পড়ে।

এটার বিরুদ্ধেও তো প্রমান আছে। হল্যান্ডে যেমন মানুষের কাজ যোগাচ্ছে আবকাঠামো, রেল-রাস্তা-নদীপথ আর এগুলোকে ঘিরে গড়ে ওঠা সুবিশাল মূল্যসংযোজন শিল্প - না এটি আমাদের গার্মেন্টস এর মত উতপাদন নির্ভর মূল্যসংযোজন নয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা সরবরাহ ব্যাবস্থা (সাপ্লাই চেইন, লজিস্টিক) মূল্যসংযোজন। মূলত বন্দর ও অবকাঠামো নির্ভর সেবা যেমন মালামালের মজুদ, বিতরন (ব্রেকবাল্ক), একত্রীকরন (কন্সোলিডেশান), এবং এইসবকে চালু রাখতে দ্বিতীয় ধাপের সেবা যেমন ব্যাঙ্ক/বীমা ও তথ্যপ্রযুক্তি। এই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় এখানে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় বন্দরের ব্যাপারটার একটা ভালো দিক আছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক বিষয়েই আমরা ভারতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের উপর ভারতের নির্ভরশীলতা অনেক কম। ভারত যদি আমাদের বন্দরগুলো ব্যবহার করে, খুব কম পরিমাণে হলেও তারা তাদের অর্থনীতে আমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আমরা এ নির্ভরশীলতাটাকে আমাদের দরকারে ব্যবহার করতে পারব। আমরা যখন আমাদের কোন দরকারে যাব, ভারতকে দুবার চিন্তা করতে হবে এ ব্যাপারে। এ কথাটা শুধু বন্দরের ক্ষেত্রে সত্যি তা নয়, ট্রানজিটের ক্ষেত্রেও সত্যি।

নির্ভয় প্রতীক

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

ঠিক বলেছেন। এটাকে ভারতপ্রীতি-ভারতভীতি হিসেবে না দেখে কৌশলগত অবস্থান থেকে দেখা উচিত।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

অতিথি লেখক এর ছবি

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের আনান্দবাজার পত্রিকার নিউজ প্রণিধানযোগ্য মনে হলো।

http://www.anandabazar.com/archive/1100112/12desh1.htm

এখানে অবশ্য 'ভারতের উপহার' হিসাবে "টিপাইমুখে নিমার্ণকাজ বন্ধের ঘোষণা" আছে। আর, ভারত মুলত আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করতে চেয়েছে। বাংলাদেশ, "প্রয়োজনে", চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।