[অনলাইনে কিছু দেখে বা পড়ে অতীতে যদি আপনার নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হবার কোন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে দয়া করে এই লেখাটি আর পড়বেন না। কারন লেখাটি পড়ে যদি আপনি ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হন’ তাহলে তার দ্বায়িত্ব লেখকের নয়- এমন কথা আইনত: বলতে পারছি না।]
ঘটনার শুরু কিন্তু অতি সামান্য ঘটনা থেকে। কীভাবে যে তিল থেকে তাল হয়ে গেল! এখন এই বয়সে এই কলঙ্কের ভার তিনি কোথায় রাখেন? এই নিয়ে অরিমন বেগমের মন খুব খারাপ। শুধু কী কলঙ্ক? একেবারে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দন্ডিত হবার সম্ভাবনা! কেন যে এই বয়সে এই কাজ করতে গেলেন! কী দরকার ছিল? বেশ সুখেই তো ছিলেন তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে। এখন কী হবে তার? কী করবেন তিনি?
ছোট মেয়ের উৎসাহে তিনি ফেসবুকে একটি একাউন্ট খুলেছিলেন। প্রোফাইলে তার একটি ছবিও দেয়া হলো। দেখতে দেখতে হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু বন্ধুর সন্ধানও মিললো এর মাধ্যমে। কিন্তু অঘটনটাও ঘটলো এর মাধ্যমেই।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হুদ্দুক নামে তার এক সহপাঠী বেশ কিছুদিন তাকে প্রেম নিবেদনের ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো। হুদ্দুক যদিও এটা অনেকের সাথেই করতো, তবু ছেলেটা ছিল ভিষণ বোকা। সবাই তাকে ডাকতো ‘অজ্ঞ’ হুদ্দুক বলে।
এত বছর পর, সেই হুদ্দুক কীভাবে যেন তাকে ফেসবুকে খুজে পেয়েছে। ফেসবুকে বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ জানানোর সাথে সাথে হুদ্দুক তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেম নিবেদনও করে বসেছে। ‘এই বুড়ো বয়সেও হুদ্দুকটা অজ্ঞই রয়ে গেল’ এমনটা ভেবে অরিমন বেগম সাথে সাথে হুদ্দুকের বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে হুদ্দুককে ব্লক করে দিলেন। যখন ভাবলেন সমস্যা মিটলো, তখনি হুদ্দুকের একটা ইমেইল এসে সব ওলোট-পালোট করে দিল। কোন সহবন্ধুর কাছ থেকে সম্ভবত তার ইমেল ঠিকানা জোগাড় করেছে হুদ্দুক।
হুদ্দুকের এই চিঠি-
------------
প্রিয় অরিমন,
তুমি আমার বন্ধুত্বের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে ভালো করোনি। এত বছরে তোমার অহংকার না ভাঙলেও, এবার ঠিকই ভাঙবে। তুমি জানো না তুমি কী আইনি ঝামেলায় পড়েছো। ফেসবুক প্রোফাইলে তোমার আকর্ষনীয় ছবি আমাকে তোমার প্রেমে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। যেহেতু আমরা উভয়েরই বিবাহিত, সেহেতু তোমার প্রেমে পড়া নি:সন্দেহে আমার নীতিভ্রষ্টতা এবং অসৎ হবার লক্ষণ! কিন্তু আইনত: এই দায় আমার নয়, তোমার।
তুমি বোধহয় বাংলাদেশের ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬’ দেখোনি। এই আইনের ৫৭(১) ধারায় বলা হয়েছে-
৫৭৷ (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷
ফেসবুক অবশ্যই একটি ‘ওয়েব সাইট অথবা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাস’। এখানে তোমার সুন্দর ছবিটি তুমি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ‘প্রকাশ’ করেছো। আর তোমার এই ছবি দেখেই আমি ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ’ হয়েছি। কাজেই তোমার এই ছবি প্রকাশ এই আইনে অবশ্যই অপরাধ।
তুমি হয়তো ভাবছো, স্বামী-সন্তান নিয়ে বিদেশে থাকায় তুমি বেচে যাবে? কিস্তু এতো সহজ না। আইনের ৪(১) ধারায় বলা আছে-
৪৷ (১) যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহিরে এই আইনের অধীন কোন অপরাধ করেন যাহা বাংলাদেশে করিলে এই আইনের অধীন দণ্ডযোগ্য হইত, তাহা হইলে এই আইন এইরূপে প্রযোজ্য হইবে যেন অপরাধটি তিনি বাংলাদেশেই করিয়াছেন৷
শুধু তাই নয়, তোমার বিচার দেশের সাধারন আদালতে নয়, বিশেষ ‘সাইবার ট্রাইব্যুনালে’ করা হবে। আইনের ৬৮(১) ধারায় বলা আছে-
৬৮৷ (১) সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের উদ্দেশ্যে, এক বা একাধিক সাইবার ট্রাইব্যুনাল, অতঃপর সময় সময় ট্রাইব্যুনাল বলিয়া উল্লিখত, গঠন করিতে পারিবে৷
৭১ ধারা অনুযায়ী, কতিপয় দুর্লভ ক্ষেত্র ব্যতীত “সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই আইনের অধীন দণ্ডযোগ্য কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি প্রদান করিবেন না”।
৫৭ (২) ধারা অনুযায়ী, “কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন”৷
তোমার বোঝা উচিত ছিল আমি আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মস্তো অজ্ঞ নেই, আমি এখন দেশের তথ্য প্রযুক্তির প্রো-নেতা বিআরটিছি:-র ‘বিশেষ’ অজ্ঞ।
এই আইনের ৪৬(১) ধারায় যেখানে যে কোন ওয়েব সাইট আমরা বন্ধ করে দিতে পারি, সেখানে তুমি তো সামান্য অরিমন বেগম। এইবার বুঝতে পেরেছো আমাদের ক্ষমতা কত আর তুমি কী বিপদে আছো?
- ইতি হুদ্দুক
------------
দ্বিতীয়বার চিঠিটা পড়ে অরিমন বেগমের মন আরো খারাপ হয়ে গেল। কী করবেন তিনি এখন?
[লেখকের কথা-- হুদ্দুকের উল্লিখিত আইনি ধারাগুলি সঠিক হলেও হুদ্দুকের উদ্দেশ্য বা অভিমতের সাথে লেখকের কোন সম্পর্ক নেই।]
মন্তব্য
কি!!! এই অবস্থা!!! কই যামু!!! হে ধরণী বিভক্ত হও... সীতার সাথে সাক্ষাত দিয়া আসি...
হিমাগ্নি
ইহা নীতিভ্রষ্ট বা নাকি ভ্রষ্টনীতি বুঝিয়া পাই না!
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
অনেক জ্ঞান সম্মৃদ্ধ কথা। ভালো লাগলো। অনেক গুলো নিয়ম জানলাম।
==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
================
নিয়মের মধ্যেই আছি
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.
------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.
ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।কি লিখব বুঝতে পারছি না......
হাহাহা.. দুনিয়ার সকল আকর্ষণীয় ছবিওয়ালা নারী-পুরুষের ফাঁসী চাই ...
মানুষের মন কত নীচ, কত ছোট হতে পারে
___________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
সার্ছে।। আমার ফেসবুক তো অপরাধী দিয়া ভর্তি।।
***********************************************
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
পুরা "অপরাধ জগৎ"
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
মরেচে... আমি আবার কাউকে নীতিভ্রষ্ট হইতে ইদ্বুদ্ধ করি নাই তো... যাই, চেক করি গিয়া!!!
---থাবা বাবা!
খু...উ...ব খেয়াল কাইরা!
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
- চিন্তার কথা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আইনের চাপায় আছি
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
একুশে আইন চলতেছে এদেশে
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
তাহা হইলে....
তাহা হইলে 'স্পর্শ' যে আমাকে একটু আগে নীলক্ষেতে নির্বাণ লাভ করিতে উৎসাহিত করিল ইহার কী হইবে। নজরুল সাহেব যে রেলগাড়িতে দৌড়াইয়া উঠিয়া ফিরতি পথে নারীর সহিত ভালোবাসার নখরামি করিতে উদ্বদ্ধু করিল ইহার কী হইবে। আমার এই চরিত্র ভঙ্গের জন্য যদি তাহাদের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করি ইহা কী মওদুদের ক্ষতিপূরণ মামলার চেয়েও কম গুরুত্তপূর্ণ হইবে ?
আর আপনি হুদ্দুক সাহেব অরিমনের ফটো মাথায় পেস্ট করিয়া বাথরুমের দরজা আটকাইয়া কত রাতে যে কত আদম সন্তানের সম্ভাবনাকে পানির তোড়ে ভাসাইয়া দিয়াছেন তাহারইবা কী হইবে ?
আমার ধারনা বিআরটিসি'র আইনের মধ্যে সম্পূরক আকারে এসব প্রোবলেমেরও সমাধান আছে। যদি না থাকে জাতীয় সংসদের পরবর্তি অধিবেশনে আইন সংশোধনের একটি ব্যবস্থা নেওয়া যাইতে পারে। সবশেষে ধন্যবাদ পাইলেন লেখার কষ্টের জন্য। লেখাটির জন্য আপনার কাট্-পেস্ট এর ধকল গেছে ইহা বুঝিতে আমার কষ্ট হয় নাই।
zic2010@yahoo.com
হুমম... আইনী ধারারও প্যারাফ্রেজ!!! "হো হো হো"
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
দেশে ফেরার ইচ্ছা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
তার মানে হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের শাষণতন্ত্রের কোন আইনের সাথে যদি বিরোধ দেখা যায়, তবে এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে??
যারা এই রকম শব্দ লেখে তাদের কাছে কি আর আশা করা যায় - "ত্মেগত্রে "
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
মন খারাপ করার মতনই বিষয়। তবু সবাই মিলে অসঙ্গতি গুলো তুলে ধরা প্রয়োজন।
ভন্ডামী আর মিথ্যা সবসময়ই ভঙ্গুর। এই দেখুন না, প্রথম ডিজিটাল বাংলা নিয়ে এক দশকের একটি ভন্ডামী আমরা কত সহজেই ছুড়ে ফেলতে পারলাম।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
একবার সংবিধান পড়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে সংশোধনীর কাটাছেঁড়ায় পুরো প্ল্যাস্টিক সার্জারির অবস্থা মনে হয়েছিলো; পায়ের আঙুল হাতে, নাকের তরুণাস্থি কানে লাগিয়ে জোড়াতালি দেয়া। আপনার পোস্টের উদাহরণটা থেকেই বুঝা যায়, আমাদের কতো অ্যাবসার্ড আইন আছে। এই আইনগুলো কিন্তু বোকামি করে করা হয় না, অনেক ভেবেচিন্তেই করা হয়। এতে যেটা সৃষ্টি করা হয়, তাকে বলে আইনের ফাঁক। ক্ষমতাবানেরা এই ফাঁকে যেমন অন্যকে অন্যায়ভাবে আটকে দিতে পারেন, তেমনই নিজেরাও অন্যায় করে ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে পারেন।
লেখার স্টাইলটা লাইকাইলাম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- সেই জন্যই, ফেসবুক ব্যান তুলে নেয়া হলেও, বিটিআরছিঃ-র হাতে এই অসীম ক্ষমতা থেকে যাওয়ায় আশংকা একটা থেকেই যাচ্ছে।
শেষ লাইনটার জন্য ধন্যবাদ
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
অচিরেই পাকিস্তানের দেখাদেখি দেশে আসবে "হালাল ইন্টারনেট"।
কি মাঝি, ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন