এক যোদ্ধা-দম্পতির প্রেম ও যুদ্ধ

সাঈদ আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন সাঈদ আহমেদ (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৫/২০১১ - ১২:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম যুদ্ধ

বানু বিবি যখন নিতান্তই অপ্রাপ্তবয়স্কা কিশোরি, রুস্তম বেপারী তখন বয়:প্রাপ্ত যুবক। দুজনের বাড়ি ছিল নদীর দুই পাড়ে—পূর্বে বানু বিবি আর পশ্চিমে রুস্তম বেপারী। কিন্তু প্রকৃতির কী খেয়াল, নদীর ভাঙন বানু বিবিকেও নিয়ে এলো এই পাড়ে। ভাঙনের পর বানু বিবির বাবা নতুন ঘর তুললেন শরিয়তপুর এসে। পাশের বাড়িটিই ইকবাল আহমেদ বাচ্চুর—যেই বাড়িতেই দিনমজুরের কাজ করেন রুস্তম বেপারী। সেখানেই বানু-রুস্তমের প্রথম পরিচয়।

বেনী দুলিয়ে ছুটে বেড়ানো বানু বিবি আর ক্ষেতের মাঝ দিয়ে হেটে চলা রুস্তমের চোখে কী দেখেছিলেন বানু আর রুস্তমের বাবা কে জানে, কিন্তু দুজনেই এই উচ্ছল কিশোরী আর যুবকটিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে মনস্থির করলেন। কিন্তু বানুর দাদা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন—বানুকে তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিবাহ দিবেন না।
সুখের দিন দ্রুত যায়, অপেক্ষার প্রহর থমকে থাকে। দাদা যেন সুনীলের ‘মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী’—

‘বড় হও বানু বিবি!’

বানু বিবি আর কত বড় হবে? কিন্তু বানু বা রুস্তমের মতো অপেক্ষার প্রহর যেহেতু আমাদের গুনতে হচ্ছে না, তখন বরং গল্পটা একটু ফাস্ট-ফরয়োর্ড করে দেই— ধরে নিন এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটি বছর, দেখতে দেখতে বানু বিবির বয়স হলো কুড়ি। রুস্তম বেপারীর ত্রিশে পা। অবশেষে দাদা রাজী হলেন, এক শুভদিনে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তারাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। বানু বিবির ভাষায়—

‘আমাদের খুব ভাব-ভালোবাসা ছিল। সে ছিল অনেক সুন্দর, আপনার চেয়ে সুন্দর। আমারে খুব মহব্বত করতো’।
কিন্তু জীবন তো নাটকের চেয়েও নাটকীয়, তাই সুখ আর নিরুপদ্রব রইলো না। বিয়ের দেড় বছর না যেতেই শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। রুস্তম বেপারী দিনমজুরের কাজ করতো যে ইকবাল আহমেদের বাড়িতে, তিনি একদিন এসে বললেন—

: রুস্তম, বঙ্গবন্ধু তো যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে যুদ্ধে নামতে বলছে। চলো যুদ্ধে যাই।
: কিন্তু যুদ্ধে গেলে জমির কাজের কী হবে?
: দেশ স্বাধীন হলে জমির কাজও হবে। স্বাধীন না হলে জমি দিয়ে কী করবো?

গ্রামের আরো অনেকেই যুদ্ধে যেতে চায়। কিন্তু নতুন বউকে রেখে যুদ্ধে যেতে একদম মন চায় না রুস্তমের। বানু বিবিকে এসে বলে—

: বউ, আমি যুদ্ধে যাবো। কিন্তু তোমারে ছেড়ে থাকতে মন চায়না। তুমিও চলো আমার সাথে।
: কী কন আপনি? আর কারো বউ তো সাথে যাচ্ছে না, আমি গিয়া কী করবো?
: তুমি সাথে থাকলে আমি মনে অনেক জোর পাবো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি চলো আমার সাথে।

কী আশ্চর্য, রুস্তমের চোখের দিকে তাকিয়ে বানু মুহুর্তেই রাজী হয়ে যায়! কিন্তু ইকবাল আহমেদ, যিনি পরে গোসাইরহাটের যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন, তিনি বাধ সাধেন—

: রুস্তম, এটা তুমি কী বলো? আমি তো আরো ভাবলাম তোমার বউ বরং তোমাকেই যেতে দিতে রাজী হবে না!
: জ্বী না, সে নিজেও যেতে রাজী। আপনার ভাবী আমার চেয়েও অনেক বেশি সাহসী। তাকে নিয়ে চলেন, যুদ্ধে অনেক কাজে দিবে।

কী আর করা, অবশেষে একদিন গ্রামের আরো কিছু স্বপ্নবাজ মানুষের সাথে রুস্তম আর বানু রওয়ানা হয়ে গেলো ভারতের উদ্দেশ্যে—প্রশিক্ষণ শিবিরে। এই পথ ঘুরে, সেই পথ ঘুরে তারা পৌছুলো বিশাল এক বালুময় প্রান্তরে। ভারতের বর্ডারে কাছে এটাই তাদের প্রশিক্ষন কেন্দ্র। তাবু টাঙিয়ে সেখানেই সবার সাথে থাকা-খাওয়া, বানু-রুস্তমের নতুন ‘সংসার’!

‘সেখানে প্রশিক্ষনের সংগঠক ছিল মণি শেখ [শেখ ফজলুল হক মনি]। সেখানে আমাদের প্রশিক্ষণ চলতে লাগলো দিনের পর দিন। যুদ্ধের প্রশিক্ষণ অনেক পরিশ্রমের কাজ। এখানে আমি শিখলাম কীভাবে কাধে ঝুলিয়েই এলএমজি ফায়ার করতে হয়, আর কাঁধে ঠেকিয়ে নিয়ে করতে হয় রাইফেলের নিশানা। গ্রেনেড ধরতে হয় আলতো করে, তারপর ছুড়ে মেরেই শুয়ে পড়তে হয়’।

চার যুগ আগের কথা, কিন্তু এখনও বানু বিবির মনে আছে সেসব কথা—

‘যেদিন আমি হাতের মুঠোয় গ্রেনেডটা নিয়ে ঠিক নিশানাটা লক্ষ্য করে ছুড়ে মারলাম, সেই দিন আমার ট্রেনার খুব খুশি হয়েছিল। আমারে বলছিল- বানু বিবির জয় হবেই’।

এরপর সুদীর্ঘ ট্রেনিং শেষ করে বানু বিবিরা দেশে ফিরলেন। মুক্তি বাহিনী ফিরেছে ট্রেনিং নিয়ে—গ্রামে যেন শোরগোল পড়ে গেল। শুরু হলো তাদের মুক্তির সংগ্রাম। সেই আগুনঝড়া দিনগুলির কথা এখনও বানু বিবির চোখে ভাসে—

‘আমার কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ বিভিন্ন জায়গায় পৌছে দেয়া। আমি ঝাকার মধ্যে অস্ত্র-গোলা-বারুদ নিয়ে তার উপর পেঁয়াজ-রসুন দিয়ে ঢেকে বহন করতাম। শাড়ির আচলে একটা বন্দুকও ঢাকা থাকতো— যেন পাকিস্তানীদের হাতে ধরা পড়লে আত্নরক্ষা করতে পারি। মাঝে মাঝে পাকিস্তানী সৈন্যের সামনেও পড়েছি। আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করতো—

: এ লাড়কি, ইয়ে কেয়া হ্যায়?
: স্যার, এ পেঁয়াজ হ্যায়… বিক্রি হ্যায়।

তখন আর কিছু বলতো না, ছেড়ে দিত। পেঁয়াজের মধ্যে হাত দিলেই কিন্তু আমি ধরা পড়ে যেতাম’।
এভাবেই চলছিল বানু-রুস্তমের মুক্তি সংগ্রাম। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে রুস্তম বেপারী যখন সম্মুখ যুদ্ধে, বানু বিবি তখন যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহে ব্যস্ত— যেন নিছকই নতুন সংসার গোছানোর কাজ ভাগ করে নেয়া!

এরই মধ্যে পাকিস্তানী সৈন্যরা এসে হাজির হলো গোসাইরহাটে। বাচ্চু কমান্ডারের বাড়িটা চিনিয়ে দিয়েছিল রাজকারেরা। পুরো এলাকা ঘেরাও করে ফেললো পাকবাহিনী— বাড়ি বাড়ি শুরু করলো খোঁজ। এদিকে বাচ্চু কমান্ডার আর রুস্তম বেপারী তখন অন্যত্র সম্মুখ যুদ্ধে ব্যস্ত। গ্রামে আর কাউকে না পেয়ে পাক বাহিনী নারী ও শিশুদের উপর তাদের বীরত্ব জাহির শুরু করলো।

‘বাড়ি বাড়ি হানা দিল। মাইয়া মানুষ পাইলেই নির্যাতন। কী সুন্দর একটা বউরে কয়েক পাকিস্তানী মিলে কী নির্যাতনটাই না করলো… সেই সাথে আমাকেও!’

তিন দিন রুস্তমদের কোন খোঁজ নেই— ওরা সবাই অপারেশনে। পাকিস্তানী সৈন্যদের বহনকারী একটা লঞ্চ ডুবিয়ে দিল তারা এই সময়। রুস্তম যখন যুদ্ধের ময়দানে— তখন সে জানতেও পারেনি তার ভালোবাসার বানু কী কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছিল। সুযোগ বুঝে কী ভাবে যে বানু সেই ঘর থেকে ছুটে পালালো, তা সে নিজেও ঠিক মতন আর মনে করতে পারে না এখন। কিন্তু মনে আছে, সে যখন ধান ক্ষেতের মধ্য দিয়ে ছুটে পালাচ্ছিল, পাকিস্তানীরা গুলি করতে করতে পিছু ধাওয়া করছিল। সামনে নদী, পেছনে পাকবাহিনী। বানু বিবি কোন রকম চিন্তা না করেই ঝাপ দিল পানিতে। তবে তাদের অবিরাম গুলিবর্ষন অবশ্য একদম বৃথা গেল না— একটি বুলেট এসে লাগলো বানু বিবির পেটের বা দিকে। মুহুর্তেই রক্তে লাল হয়ে গেল নদী। তারপরও অনেক কষ্টে সাতার কেটে নদীর অন্যপাড়ে এসে লুকালেন বানু বিবি। ক্লান্তিতে শরীর আর চলে না। প্রায় অচেতন অবস্থায় অন্য এক নারী তাকে উদ্ধার করলেন, লতা-পাতার রস দিয়ে ক্ষত স্থানের প্রাথমিক চিকিৎসা করালেন। এরপর তাকে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার বললেন, ‘ভয়ের কোন কারন নেই, ভেতরে বুলেট নেই। সম্ভবত গুলির ছড়ড়া লেগেছে, কিছু দিনেই শুকিয়ে যাবে’।

এর তিন দিন পর আবার দেখা হলো রুস্তম বেপারী আর বানু বিবির।

‘আমি কাউকে সেই নির্যাতনের কথা বলিনি। কেমন করে বলি সেই শরমের কথা? কিন্তু যখন আমার স্বামী ফিরলো, তখন আর তার কাছে কিছু লুকাইনি। শুনে আমার স্বামী আমারে জড়ায়ে ধরে কাইন্দা দিল। আমারে অনেক ভালোবাসতো সে’।

পাকবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের শিকার মা-বোনদের যখন দরকার ছিল প্রিয়জনের ভালোবাসা, তখন আমাদের অনেকেই সমাজের দোহাই দিয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু সবাই তো আর সেরকম নয়—একাত্তরে রুস্তম বেপারী আর বানু বিবিরাও ছিল।

সেই যুদ্ধে রুস্তম বেপারী আহত হয়ে প্রায় পঙ্গু হয়ে যান। কিন্তু দেশতো স্বাধীন হয়। যে নবদম্পতি হাতে হাত ধরে জীবন যুদ্ধের বদলে দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, সহধর্মিনী যার সহযোদ্ধা, যাদের কাছে হানিমুন ছিল যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া, যাদের সংসারে খুনসুটির বদলে ছিল শত্রু নিধনের অস্ত্র চালনা, তাদের কাছে দেশের জন্য এটুকু ত্যাগ স্বীকার হয়তো কোন বিষয়ই ছিল না। আর তাই দ্রুতই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান তারা, সংসার ভরে ওঠে নতুন সন্তানের আগমনে। একে একে তিনটি সন্তান তাদের সংসারে আবার নতুন আশার আলো নিয়ে আসে। নয় মাসের যে যুদ্ধ তাদের সাজানো সংসারকে এলোমেলো করে দিয়েছিল, সবকিছু ভুলে আবার সেই সংসারই নতুন করে গড়ে তুলেন দুজন মিলে।

[গল্পটা এখানে শেষ করতে পারলে সুন্দর একটা সিনেমা বা নাটক বানানো যেত। কিন্তু আসুন, বানু বিবির দ্বিতীয় যুদ্ধের গল্পটাও শুনি]
***
দ্বিতীয় যুদ্ধ

এভাবেই কেটে যায় আরো কয়েকটি বছর। সব যখন ঠিক ভাবে চলছিল, তখনই একদিন কার গুলিতে যেন মারা যান রুস্তম বেপারী! কেউ বলে এটা রাজাকারদের কাজ, আবার কেউ বলে অজানা আততায়ীর কাজ। এক মুহুর্তেই আবার লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় বানু বিবির সাজানো সংসার। তিনটি সন্তান নিয়ে অকূল পাথারে পরেন বানু বিবি। শুরু হয় তার মুক্তিসংগ্রামের দ্বিতীয় অধ্যায়— এবার সহযোদ্ধা রুস্তম বেপারীকে ছাড়া!

‘সাহায্যের আশায় ঢাকায় আসলাম, উঠলাম আমার বোনের বাসায়। পচাত্তরের অগাস্ট মাসে একদিন অসুস্থ অবস্থায় বত্রিশ নম্বর বাড়ির কাছে বসে থাকলাম অনেক্ষণ। মণি শেখ আমাকে দেখে চিনলো। বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললো—

: বানু বিবি, তুমি তো বীরাঙ্গনা না, তুমি মুক্তিযোদ্ধা। তোমাদের জন্যই তো আমরা স্বাধীন হইছি, তুমি আমার মা। আমি যদি তোমারে এখন না দেখি, তাইলে আমি মরণেও পস্তাবো। তুমি তোমার বোনের যে বাড়িতে আছো, আমি ওই যায়গায় একটা খাস জমি তোমার নামে বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি।

আমার হাতে বঙ্গবন্ধু পাঁচ হাজার টাকাও দিয়া দিল। আমি আশায় বুক বেধে ফিরে এলাম। কিন্তু তার ঠিক একদির পরই বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেললো’।

এরপর জীবন সংগ্রামের সাথে যুক্ত হলো প্রতিশ্রুত যায়গাটুকু পাবার জন্য সরকারের অফিসে অফিসে ঘোরা আর প্রত্যাখ্যাত হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা। জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে অনেকের সাথেই তিনি দেখা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতারোহনের পর শেখ হাসিনার সাথেও দেখা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুত জমিটুকু বন্দোবস্ত পাবার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছিলেন। কিন্তু ইতোমধ্য ওই জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে অন্যান্য দাবীদার তৈরি হয়েছে। সরকার থেকেও তাকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে—ওখানে খাস জমি নেই, তাই অন্যত্র তাকে ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। কিন্তু বানু বিবির মতে—

‘যেখানে আমি এখন ঘর দখল নিয়ে আছি, সেখানে ২৫ শতাংশ খাস জমি আছে। আমাকে তো এখানেই বন্দোবস্ত করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সরকারী অফিসে এখন আমাকে বলে উত্তরার নলভোগে যেতে। সেখানে একটা অকৃষি খাসজমি আমার কাছে তের লক্ষ পয়ষট্টি হাজার টাকা সেলামী নিয়ে বন্দোবস্ত করে দিতে চায়। আমি যতই বলি এতোটাকা আমি কোথায় পাবো.. আমাকে আমার বর্তমান জমিতেই বন্দোবস্ত করে দেন, ততই তারা আমাকে ঘুরায়। আমি আরেক বার একটু প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই, কিন্তু কেউ আর সেই সুযোগ দেয়না আমাকে।

‘আমার স্বামী আর আমি দুইজনেই অস্ত্র হাতে ট্রেনিং নিয়েছি, যুদ্ধ করেছি। অনেক কষ্টে তার নামটা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় উঠানো হলেও, আমার নামটা এখোনও তালিকায় নাই। বাচ্চু কমান্ডার অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অথচ যারা যুদ্ধের আশে-পাশেও ছিল না, তাদের নামও আছে মুক্তিযোদ্ধা লিস্টে’!

[লেখকের কথা: গত সপ্তাহে ধানমন্ডির এক রাস্তার ফুটপাতে সাহায্যের হাত পেতে বসে থাকা এক বৃদ্ধাকে দেখে থামলাম। পাশে বসে কুশল বিনিময় করতে গিয়েই অবাক হবার পালা। ইনি নাকি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকলাম তার গল্প। কিন্তু এই শহরে কে যে ঠিক আর কে যে ভুল—তা বোঝা মুশকিল। তাই পরের দিন একই স্থানে আবার দেখা করবো বলে বাসায় ফিরলাম। গুগল সার্চ করতেই পেয়ে গেলাম বানু বিবির ুনাম—সংবাদে একটি প্রতিবেদন বের হয়েছিল তাকে নিয়ে। পরের দিন প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে দেখা করলাম তার সাথে। আগের দিনের শোনা গল্পই আবার শুনতে চাইলাম তার কাছে। একাত্তর তো সেই চার যুগ আগের কথা, এর মধ্য বার্ধক্যও ভর করেছে তার স্মৃতিতে—অনেক কিছুই মনে থাকে না। একই গল্প তিনবার শুনলাম তার কাছে—প্রতিবারই নতুন কিছু খুটিনাটি যোগ হলো। এমনি করেই পেলাম এই যোদ্ধা দম্পতির গল্প।]

ছবি: 
15/05/2009 - 4:07am
15/05/2009 - 4:07am
15/05/2009 - 4:07am

মন্তব্য

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

কিছু বলার ভাষা নাই, এসব জানলে কিংবা শুনলে এখন আর তেমন কিছু হয়না মনে। এতটাই নীচ আর হীন হয়ে গেছে আমাদের অনুভূতিগুলো

অতীত

ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ এমন চমৎকার একটি পোস্টের জন্য। যোদ্ধা দম্পতিকে শ্রদ্ধা।

-----------
সাঈদ আহমেদ ভাইকে অনুরোধ করবো কিছু কথা রেকর্ড করে আপলোড করার জন্য। রুস্তম বেপারীর কোন ছবি কি তাঁর কাছে আছে?

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ। তার গল্প শুনলে মনে হয় মেহেরজানের কল্পিত ন্যারেটিভের সত্যিকারের কাউন্টার ন্যারেটিভ।

আমি কিছু অডিও আর ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করে রেখেছি-- সময় করে কিছু একটা করতে হবে। যদি কয়েকজন মিলে তার গল্পটা রেকর্ড করে একটা স্লিম ভার্শান বের করতে পারতাম, তাহলে চমৎকার হতো।

-----------
চর্যাপদ

অপছন্দনীয় এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। যোদ্ধা দম্পতির জন্য স্যালুট।

সংসপ্তক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। এমন একটি গল্প অজানা থেকে গেলে খুব বড় অপরাধ হত।

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

এমন একটি গল্প অজানা থেকে গেলে খুব বড় অপরাধ হত।

ঠিক এই অনুভুতিটাই হচ্ছিল আমার।

-----------
চর্যাপদ

তাসনীম এর ছবি

গল্পটা পড়ে আমারও একই অনুভূতি হল।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

..................

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

নাট্যুকাররা কেনু এসব নিয়ে নাটুক বানায় না.. কেনু কেনু কেনু? হাসি

-----------
চর্যাপদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

নাটকের যা অবস্থা তাতে এই গল্পগুলো নষ্ট করার মানে হয় না

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্পর্শ এর ছবি

নজুভাই, এমন ঘটনাগুলো নিয়ে আসুন না নাটকে। নাটকের অবস্থা পালটাক। বানু বিবির গল্প সবাই জানুক। কিছু না করতে করতে এমন কত জীবনের গল্প যে হারিয়ে গেল মন খারাপ

বানু বিবির প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

হিমু এর ছবি

নাটক না, যদি কিছু নির্মাণ করতে হয়, একটা ডকুমেন্টারি হোক।

স্বাধীন এর ছবি

সহমত। ডকুমেন্টারি অনেক বেশি কার্যকর। খুব যে প্রফেশানাল কাজ হতে হবে সেটাও কিন্তু নয়। কিন্তু একবার রেকর্ড হয়ে থাকলে সেটা একটি প্রামান্য দলিল হয়ে থাকবে। আর যত দিন যাবে এমন ইতিহাস জানার সুযোগ হবে আরো দূর্লভ।

স্পর্শ এর ছবি

হ্যা, ডকুমেন্টেড থাকার জন্য ডকুমেন্টরি অপরিহার্য। (মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনাগুলো সংগ্রহ করার এ ধরনের একটা প্রজেক্ট চলছে শুনেছিলাম নজরুল ভাইয়ের মুখেই)

ওদিকে, চলচ্চিত্র/নাটক বেশি মানুষের কাছে পৌছায়। এর 'সোস্যাল ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরও' বেশি। নইলে শুধু বিশেষ আগ্রহী দর্শক বা গবেষক এর বাইরে অডিয়েন্স তৈরি হবে না। সবারই জানা উচিৎ জীবনের এমন গল্পগুলো।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্বাধীন এর ছবি

শ্রদ্ধা!

স্বাধীন এর ছবি

এই মন্তব্য এখানে কেমনে আইলো অ্যাঁ , এইটা তো ২৭ এর পরে দিয়েছিলাম ওঁয়া ওঁয়া

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

বানু বিবির বয়ানে পুরো গল্পের ভিডিও রেকর্ডও একটা ভালো ডকুমেন্টারি হতে পারে। তার যুদ্ধকালীন কমান্ডারও বেচে আছেন--- তার সাক্ষাৎকারও নেয়া যেতে পারে। উদ্যোগটা একা নেয়া কঠিন হবে। ইচ্ছুক সহসচল দরকার।

-----------
চর্যাপদ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শ্রদ্ধা।

হিমু এর ছবি

কত অজস্র গল্প ছড়িয়ে আছে, তাই না?

বানু বিবিকে সাহায্য করার জন্যে আমাদের কী করা প্রয়োজন?

মন মাঝি এর ছবি

হ্যাঁ, এটাই মনে হয় আপাতত জরুরী বেশি।

****************************************

তিথীডোর এর ছবি

যোদ্ধা দম্পতির জন্য শ্রদ্ধা।
লেখককে ধন্যবাদ।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রু (অতিথি)  এর ছবি

বানু বিবিদের শ্রদ্ধা জানাতেও লজ্জা লাগে। উনাকে কীভাবে সাহায্য করা যায়?

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

হিমুর পর অন্যরাও সাহায্যের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করায় আলাদা করে এই মন্তব্যটি করছি।

বানু বিবির সমস্যা আর প্রত্যাশা মোটামুটি তিনটি, যার সবই হয়তো সচলদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়--

১. জমি সমস্যার সমাধান:
তার আবাসনের একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। আপাতত: মিরপুরের যে জমি তিনি ভোগ-দখল করছেন, তা সরকার কর্তৃক বন্দোবস্ত করার কথা থাকলেও, এখন তা ঝুলে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আদেশ ছিল তার সমস্যার সমাধান করার জন্য। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল চাচ্ছে তাকে মিরপুরের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে। তাই সরকারী কর্মচারীরাও তাকে মিরপুর ছেড়ে উত্তরায় একটি জমি প্রায় চৌদ্দ লক্ষ টাকায় কিনে নেবার জন্য বলছে। সে সংক্রান্ত কাগজ-পত্রের কপি আমার কাছে আছে।

এটার সমাধান প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে। বানু বিবি বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখা করার জন্য বলেছিলেন, কিন্তু কেউ আর তাকে তাঁর দেখা করতে দিচ্ছে না। আমরা লেখা-লেখি করে বা নিজেদের পরিচিত লোক ধরে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

২. মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া
রুস্তম বেপারীর নাম আছে তালিকায়, কিন্তু বানু বিবির নাম নেই। তিনি চেষ্টা করছেন এইটুকু স্মীকৃতি আদায় করতে। তার যুদ্ধাঞ্চলের কমান্ডার নিজেও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এদেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্তির রাজনীতি অনেক জটিল। তবে আমরা অন্তত তার একাত্তরের কাহিনীটা সংরক্ষণের চেষ্টা করে যেতে পারি।

৩. সাময়িক সাহায্য
আবাসন সমস্যার সমাধান হলে হয়তো একটা ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে চলতে তেমন সমস্যা হবে। তবে এখন তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। একটি ছেলে অসুস্থ হয়ে ঘরে থাকে। অন্য যে ছেলেটি কাজ করতো, সে সাভারের গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডের সময় সম্ভবত পুড়ে মারা যায়। কিন্তু লাশ না পাওয়া যাবার কারনে তিনি কোন ক্ষতিপূরণও পাননি।

তার জন্য যদি কিছু করা যায়, খারাপ হয় না।

এছাড়াও, তার একটা মোবাইল নম্বরও আছে আমার কাছে। কেউ যোগাযোগ হরতে চাইলে জানাবেন।

-----------
চর্যাপদ

হিমু এর ছবি

৩. আমরা গেরিলা সিনেমার নির্মাতা গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করে বানু বিবির জন্যে গেরিলার টিকিট বিক্রির টাকা থেকে এককালীন একটি ফান্ড উত্তোলনের অনুরোধ করতে পারি। একজন জীবিত গেরিলার জন্যে মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ অন্তত এটুকু করবেন বলে বিশ্বাস করি। প্রয়োজনে এই উদ্যোগটির সাথে কোনো ব্যাঙ্ককেও শামিল করা যায়, যারা তাঁকে আপাতত একটি মাসিক ভাতা দিতে পারবেন। যদি প্রচারের ব্যাপারটা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে হয়তো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অরাজি হবে না।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

গেরিলা ছবির সাথে সংযুক্ত কাউকে চিনিনা। তবে আমার সীমিত গন্ডির দু'একজনের সাথে কথা বলে দেখছি। অগ্রগতি জানাবো। তবে ব্যক্তি-কেন্দ্রীক না হয়ে সচল-কেন্দ্রীক হলে বিষয়টা বেশি কার্যকর হবে।

-----------
চর্যাপদ

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি



ধন্যবাদ লেখাটার জন্যে। বানু বিবিকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি, জানিয়েন। আপাতত শুধু ফেসবুকে শেয়ারটুকুই করতে পারলাম ...

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আভূমি নতজানু হয়ে কুর্ণিশ জানাই বানু বিবিকে। আর রুস্তম বেপারীর জন্যে শ্রদ্ধা । যদি আপনারা কেউ কোনও উদ্যোগ নেন এই মহান নারীকে একটু সন্মানিত করতে (আমি একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্য করার ধৃষ্ঠতা দেখাতে পারবো না, তাদের সন্মানিত করা আমাদের দায়), প্লিজ আমাকে জানিয়েন। সাধ্যমত চেষ্টা করবো।

বানু বিবি, তুমি তো বীরাঙ্গনা না, তুমি মুক্তিযোদ্ধা।

শেখ মুজিবুর রহমানের এই অনুভূতি নারীকে পুরুষের সমান উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করে। যে নারী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তার প্রথম এবং একমাত্র পরিচয় তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তার মহিমা কোনওকিছুতেই ম্লান হওয়ার নয়। সম্ভবত সেই একই অনুভূতি থেকে আমার আম্মা তার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দ্বিতীয় বইটার এমনই একটা নাম রেখেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের এই মহান উক্তির পরে আমি আম্মার রেফারেন্সটা না দিয়ে পারলাম না। ক্ষমাপ্রার্থী।

New Image

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আপনার আম্মার প্রতিও শ্রদ্ধা।

[ফ্লিকারের ছবিটার কি কোন লো-রেজুলেশন ভার্সান আছে? যেটা দিয়েছেন, সেটা লোড হতে অনেক সময় নিচ্ছে]

-----------
চর্যাপদ

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ব্লগে লেখালেখির বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে শক্তিশালী যে দুটি দিক আমাকে আকর্ষণ করে -

১। খুব সহজে লেখাটাকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
২। আইডিওলজির দিক থেকে ভিন্নতা থাকা সত্বেও কোন ঘটনা বা লেখার সত্যতা প্রমানের জন্য প্রয়োজনীয় রেফারেন্স লেখার শেষে বা লেখার মাঝে লিঙ্ক করে দেয়া যায়। পাঠক লিঙ্কে ক্লিক করে যাচাই করে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

লেখাটি পরে তখন আর কারো মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে নিয়ে করা নাটকের কেন্দ্রিয় চরিত্র করিমন বেওয়াকে নিয়ে সাংবাদিকদের নিজেদের প্রচারের উদ্দ্যেশ্য টানাটানির কথা না স্মরণ করিয়ে দিবে না।

ধন্যবাদ এমন একটি ঘটনা লেখার জন্য। ফেইসবুকে শেয়ার দিচ্ছি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কে তার প্রাপ্য সম্মানে সম্মানিত করার যে কোন উদ্যোগে আমি সুইডেন থেকে অংশ গ্রহন করার জন্য আগ্রহী।

- ছাইপাশ

সাফি এর ছবি

টানাটানির ঘটনাটা কী হয়েছিল?

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

নাটকটি অনেক বছর আগে দেখা। স্মৃতি থেকে যতটুকু মনে পরে নাটকটিতে দেখায় মুক্তিযুদ্ধের অনেক বছর পর একজন গবেষক প্রথম করিমন বেওয়াকে খুঁজে বের করেন এবং নারী সংগঠন গুলো তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় পত্রিকা আর নারী সংগঠন গুলো তাকে নিয়ে মেতে উঠে নিজেদের প্রচার বারানোর জন্য। স্বার্থান্বেষী লোকজন নিজেদের লেখা বক্তৃতা তার মুখ দিয়ে বলানোর চেষ্টাও করে।

এখন এমন হয়েছে যে, আমি পোস্টের এই ঘটনা আমার এক বন্ধু কে বলার চেষ্টা করতেই সে ওরকম একটা ইঙ্গিত করেছিল তাই নাটকটির ঘটনা মনে পরলো! আমি বললাম তোমার যদি সন্দেহ থাকে মন্তব্যের ঘরে লেখককে সরাসরি জিজ্ঞাস করো, আগে প্রকাশিত একটি পত্রিকার লিঙ্কও দেয়া আছে সেটা পড়ে দেখ।

-ছাইপাশ

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

১. এ দেশে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্পোরেট বিক্রয় মূল্য অনেক, যে কারনে অটবি পালংকের পাশে বন্দুক রাখে আর প্রথম আলো কাঁপিয়ে দেয় একুশের চেতনা। সেখানে পত্রিকাওয়ালারা তো একটু প্রচার চাইবেই। একারনেই এই পোস্টের মূল বিষয় "বানু বিবিকে আমি কিভাবে পাইলাম" না করে, কেবল তার বলা গল্পটিই তুলে ধরা হলো।

২. আমার কাছে বানু বিবির যুদ্ধ-সংক্রান্ত কাগজপত্রের কপি আছে। সরকারি পর্যায়ে খোজ-খবর নিয়েই তার জন্য জমি বন্দোবস্তোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, সে সংক্রান্ত কাগজপত্রের কপিও আছে। কয়েক দিন সময় নিয়ে সবধরনের খোজ-খবর করে, তারপরই পোস্টটি দিয়েছি। আপাতত: যুদ্ধকালীন কমান্ডারের চিঠিটি মূল পোস্টে যুক্ত করে দেবার ব্যবস্থা করছি (আমার নেট অনেক স্লো, একটু সময় লাগবে)।

-----------
চর্যাপদ

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

আমার মন্তব্যটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য ধন্যবাদ। লেখার সাথে নতুন কিছু দলিল যুক্ত হওয়ায় পোস্টটি পড়ার পর কোন সন্দেহ বাতিক মনও কোন কৈফিয়ত দিয়ে এড়িয়ে যেতে পারবে না।

- ছাইপাঁশ

আয়নামতি1 এর ছবি

খুববেশি দেরী হয়ে যাবর আগেই বানুবিবির জন্য কিছু একটা করা উচিৎ(কারণ তাঁর বয়স হয়েছে)। এই মুক্তিযোদ্ধা দম্পত্তির জন্য শ্রদ্ধা। লেখক কে ধন্যবাদ।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

বানু বিবিদের জয় হোক!

সাফি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সাঈদ ভাই আপনাকে, বানু বিবির গল্প না হলে অজানা থেকে যেত।

সারাটা জীবন যুদ্ধই করে গেলেন বানু বিবিরা, আর আমরা এখন গোলাপী জামা পড়ে ডিয়ার ডাইরী খেলি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বানুবিবিদের প্রথম পর্ব সফল হলেও দ্বিতীয় পর্বের পরিণতিই কেন দেখতে হয় আমাদেরকে বারবার? বিজয়ের চল্লিশ বছর পরেও বানু বিবিদের রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয়, আর মতি রাজাকারেরা গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে বেড়াবার অধিকার পায়। বানুবিবির আবেদন এই সরকারের কানেও যদি পৌঁছানো না যায়, তাহলে এই জনমে তার কিছু পাওয়া হবে না আর।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

সহমত।

-----------
চর্যাপদ

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

লিঙ্কটা ফেইসবুকে শেয়ার দিলাম ভাই। আর কিছু প্রকাশ করার ভাষা আমার নাই ।

লাবিন রহমান এর ছবি

এমন কাহিনী শুনলে নিজেকে স্বাধীন ভাবতে ইচ্ছে হয় না।
labin rahman

লাবিন রহমান এর ছবি

এসব কাহিনী শুনলে নিজেকে বাঙ্গালী বলতে লজ্জা লাগে।
labin rahman

লাবিন রহমান এর ছবি

বানু বিবির মঙ্গল কামনা করছি।
labin rahman

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সাঈদ ভাই, আমরা আলাদা আলাদা একেকজন চুনোপুঁটির কিসিমের পাবলিক। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত এক্সেস পাবো না। একটু উপরের গণ্ডির কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে হবে। একটা উপায় হিমু উপরে বলেছে, 'গেরিলা বাহিনী'র সাথে কথা বলার ব্যাপারে। আরেকটা উপায় হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এরা বানু বিবির জন্য সরাসরি কিছু করতে পারবে, এমনটা আশা করা হয়তো ঠিক হবে না। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বানু বিবিকে নিয়ে যেতে এরা মোক্ষম ভূমিকা রাখতে পারবেন।

সচলরা মিলে বানু বিবির জন্য কিছু একটা করতে পারবে বলেই বিশ্বাস করি। কিন্তু সেটা হবে সাময়িক। বানু বিবির দরকার স্থায়ী একটা সমাধান আগে।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

"আমরা আলাদা আলাদা একেকজন চুনোপুঁটির কিসিমের পাবলিক।"

- সহমত, তবে আমরা যদি ভুত-থেকে-ভুতের মতন আবেদনটা ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে হয়তো রাঘব-বোয়ল না হলেও, কোন না কোন সহৃদয় ইলিশ-রুই এগিয়ে আসতে পারেন। আমিও চেষ্টা করছি এমন কাউকে খুঁজে বের করতে যে অন্তত: একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করতে পারবে।

-----------
চর্যাপদ

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

যোদ্ধা দম্পত্তিকে শ্রদ্ধা জানাই, লেখককে অশেষ ধন্যবাদ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ, সৎ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এমন অনেক বিস্ময়কর কাউন্টার ন্যারেটিভের সন্ধান পাওয়া দুস্কর নয়। সেটা খুব জরুরী বলেও মনে হয়।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

বইখাতা এর ছবি

মুক্তিযোদ্ধা এই দম্পতির জন্য শ্রদ্ধা। এটুকু বললেও মনে হয় যথেষ্ট হলো না। বানু বিবির দুরবস্থা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে কিনা জানতে পারলে ভাল লাগতো।

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

শুনে আমার স্বামী আমারে জড়ায়ে ধরে কাইন্দা দিল। আমারে অনেক ভালোবাসতো সে’।

এই না হলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা!!!!

‘আমাদের খুব ভাব-ভালোবাসা ছিল। সে ছিল অনেক সুন্দর, আপনার চেয়ে সুন্দর। আমারে খুব মহব্বত করতো’।

বানু বিবির জীবনে সেই ভালোবাসা ফিরে আসুক।

এই মর্মস্পর্শী পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।

জুয়েল এর ছবি

এই দম্পতির প্রতি লাল সালাম।

সচলরা বানু বিবির জন্য কিছু করার উদ্যোগ নিলে আমিও থাকবো সেই আলোর মিছিলে।

লেখকের জন্য রইল শুভ কামনা ও ধন্যবাদ।

বন্য আমি এর ছবি

ধানমন্ডি কততে আপনার সাথে বানু বিবির দেখা হয়েছিলো, তা জানতে চাই। আসলে আমিও ওনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছি... একটু নির্দিষ্ট করে বললে সুবিধা হয়।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

দেখা হয়েছিল ধানমন্ডি সাতাশ এর কাছে, কিন্তু তিনি হঠাৎই সেদিন সেখানে ছিলেন। দেখা করতে চাইলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। আমার কাছে তার মোবাইল নম্বরটি আছে, যা সাধারনত তার ঘরেই থাকে। সন্ধ্যার পর তাকে ওই নম্বরে পাওয়া যায়। তবে এভাবে অনলাইনে নম্বর প্রকাশ করাটা বোধহয় ঠিক হবেনা-- আপনি ahamed ডট syeed এ্যাট জিমেইল.কম এ যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

-----------
চর্যাপদ

কৌস্তুভ এর ছবি

গুরু গুরু

পাগল মন এর ছবি

বানু বিবিদের মত অনেকেই হয়ত আছে, খুঁজলে পাওয়া যাবে। এদের জন্য অশেষ শ্রদ্ধা।
এরকম একটি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমার একজন মায়ের গল্প... শ্রদ্ধা

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

samiul এর ছবি

লেখক কে ধন্ন্ববাদ। এই বানু বিবি কে সালাম।

আবু শাহেদ ইমন এর ছবি

সাইদ ভাই, আমি আপনার ফেসবুকে আমার ফোন নাম্বার পাঠিয়েছি।

এটার ভিডিও ডকুমেন্টেশনের ব্যাপারে আমার ইচ্ছা ব্যক্ত করছি। সাক্ষাতে আলোচনায় ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার রুপরেখা করা যাবে। আমার মনে হয় আপনার লেখা থেকে একটা আউটলাইন পাওয়া গেছে। বাকীটা কাজ শুরু করলে পাওয়া যাবে।

আপনার লেখাটা ভালো লাগল খুব।

ইমন

সৌরভ বিশ্বাস এর ছবি

দুর্দান্ত ঘটনা।

লেখক কে অজস্র ধন্যবাদ। ঘটনা টাকে লিপিবদ্ধ করার জন্য।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

মনটা বিষন্ন লাগছে। আমার দেশের জন্মদাত্রীকে এইভাবে রাস্তায় হাত পাততে হয়। সবকিছুর আগে বানুবিবির মুখে একটু হাসি ফোঁটাবার উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানাই। শ্রদ্ধেয়া বানুবিবিকে উনার সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হোক।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

 শুভাশীষ মনি এর ছবি

ধন্যবাদ এমন চমৎকার একটি পোস্টের জন্য। যোদ্ধা দম্পতিকে শ্রদ্ধা।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

শেষ পর্যন্ত কি কিছু করা গিয়েছিল? জানতে ইচ্ছে করছে।। কেউ কি আপডেট টা দিবেন দয়া করে?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।