আমার অচলায়তন!
আমি নাই!
আমার চিহ্ন চোখে পড়ে খুব কম সহ-ব্লগারের, তবু যে ক'জনই আমার অত্যাচার অনর্থাচার এক আধটু সহ্য করেন হজম করেন সদয় চোখে দেখে টেখে চেঁখে চুঁখে, তাদেরও দু'একজন হ'লেও খেয়াল ক'রে থাকবেন যে আমি নাই। যেমন, আর কেউ করুক না করুক, আমার অন্যতম প্রিয় ব্লগভাই শা.মা. তার ব্লগীয় নিকের দিকে সুবিচার ক'রে জাগ্রত সতর্ক প্রহরায় অব্যর্থভাবে খেয়াল করতে পেরেছেন যে আমি অচল হয়ে গেছি। হ্যাঁ, কিংবা না, আমি নাই।
খুব যে সচল ছিলাম আমি, তা কখনও না। আমার নামের আগায় 'অতিথি' উপাধির কথা বলছি না, ছোট্ট এ জীবনে বড় বড় ইচ্ছা-অকাজের ভার আর ব্যথা নিয়ে আমার কর্ম আর নির্বাণের পরিমাণ বরাবরই সত্যিকার অর্থেই অপ্রতুল নেহাত। এর মধ্যেও এই নতুন জমিনে যা একটু আশা-চাষাবাদ করি টরি, অন্তত অন্যের ফলনগুলো ছুঁয়ে দেখি, গন্ধ শুঁকি, দাঁতে কেটে চেঁখেও দেখি, সেইটে করতেও আমি নাই।
অজু ছাড়া অজুহাত তো না-ই, নিজের অনুপস্থিতি কিংবা তার মাধ্যমে বরং উপস্থিতিকেই কোনোভাবে অতি-গুরুত্বারোপে আন্ডারলাইন করার জন্যও নয়। আজ এটা লিখছি এই সচল দাওয়ার মাতাল হাওয়া আর এ মাঠের সবল সব কিষাণ-কিষাণীর কর্মযজ্ঞ মর্মস্পর্শ মিস করছি ব'লেই একটু উঁকি দিয়ে বলার চেষ্টা করছি কোথাও না কোথাও আমি আছি বটে! কিন্তু আমি নিজেও জানি- আমি নাই।
"বাইরেতে রোদ,
কিন্তু অবরোধ-
ভিতরে সব কাজ
আর বদমেজাজ।
শরীর জুড়ে মিষ্টি শীতের কাঁপ,
মনে তবু ভ্যাপ্সা গুমোট ভাঁপ!"
"কতোকাল আগে লেখা গতকাল এখনও অস্থির" (এই ষড়ষ্পদী বদনামী লাইনের চারুস্রষ্টা কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। তবে, তার আগের প্যারায় আমার ওই ষড়ভুজ গতকাল-টা আমারই লেখা, গত দু'বছর আগে)!
সত্যিই, এখনও অস্থির। এখনও সত্য সেই অস্থিরতা, এই অনুর্বরা।
কাজের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি দিনকেদিন। তার মধ্যে আমার দৌড় আছে এমন কোনো চিকনের মধ্যেই আজকাল চাম পাচ্ছি না তেমন। ;( [অবশ্য কোনকালেই বা চাম-চিকনের দূরদর্শী পারদর্শী ছিলাম আমি!]
একটা উপন্যাসের সাহস করেছিলাম গত বছরই, এবারের মেলায় পাড়বো ব'লে। কিন্তু সে-বছরের লেজটায়, মহা-শ্রমের সেই উপ-ন্যাসের জন্য রসদ-সময় যোগাড়যন্ত্রের সেই চরম সময়টার মধ্যেই মেজাজ বিগড়ে পারিপার্শ্বিক চাপগুলো আরো ভয়ানক জগদ্দল হয়ে উঠলো যখন, তখন সত্যিই "এবছর আর করছি না তবে" সিদ্ধান্তটি নিতে পেরে তবেই কেবল একটু অন্তত হালকা হয়েছিলাম নিজের সাথে দাঁত কেলিয়ে, কারণ ছোট্ট নিচু মন থেকে একটা বড় উচ্চচাপ তো নামলো তবে। তাই, ওই সাহসটাকে কর্মরূপ দেয়া "আমার হইলো না আদায়"। সারাজীবনের জন্য যেন স্থগিত না হয়ে যায় সেই প্রকাশ প্রয়াস, তার জন্য অবশেষে এই ফেব্রুয়ারিকেই বেছে নিলাম শক্ত একটা রেজোল্যুশন-সমেত, যে- ভাষার লড়াই আর বইয়ের কড়াই-বড়াই মিলিয়ে পবিত্র যে ফেব্রুয়ারি মাস, এই মাসেই তবে সম্পন্ন করতে চাই আমার সেই বীজ বপন, পারলে চারারোপণ নাগাদও। অথচ, সাগর-শুকানো অভাগা দৃষ্টি আমার- 'নিজের' কাজের জন্য সন্ধ্যে সন্ধ্য কুলায়-ফেরার ওয়াদা যখন করলাম, তখনই যেন বেতনভূক 'পরের' কাজের পাথর চাপলো আরো বেশি বিষম চাপ নিয়ে। ইহ কিংবা ইশ্বরের স্রোতের প্রতিকূলই আমার সারাজনমের বরাদ্দ হিসেবে সার্থক সফল হয়। আর, আমি নিজেকে খুশি করার চেষ্টা করি রাত ক'রে ঘরে ফিরে এক রাতে এক প্যারা, আরেক রাতে আরেক লাইন লিখে। প্রতিরাতে একটু হ'লেও লিখবো ব'লে গোঁ ধরেছি, সে যতোই পৃথিবীসুদ্ধ পর-কাজীরা তাদের কাজে আমার মাথা ভাঁজ করুক কিংবা তাড়িয়ে কুপিয়ে যতো বেশিই ঝাঁঝ করুক। জানি এ-ও, তবুও, হায় রে, আসলেতে সেখানেও আমি নাই।
মন-মানসিক অকালের মধ্যে আবার সময়ের এই ভীষণ বিষম আকাল! আমি নাই।
এখানে থাকার মুরোদ অতএব আরো নাই আমার। চেষ্টা তবু চালিয়ে যাচ্ছি, যাবো।
পরের কাজের বারো বাজার ঝুঁকি না নিয়ে যতোটুকু উঁকি মারার হ্যাডম হয়, এখনও মারবো উঁকি। আসবো। এখন তবে যাই।
[সহজ কথার পাদটীকা:
এ কয়দিন লেখা পড়তে পারছি না কারো। অবশ্যই আপাতত'র জন্য এই আপাত পিঠটান। ক্ষমা করবেন সবাই, নিজ নিজ গুণে।]
মন্তব্য
হঠাৎ করে কোথায় উধাও হইসিলেন!
তাও ভাল যে দেখা পাওয়া গেল। এরপর থেকে ডুব মারলেও বেশি দিরং কইরেন না। আপনার উপন্যাসের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা থাকল। আশা করি, যতই কাজের চাপ থাকুক, শেষ করতে পারবেন এটা খুব তাড়াতাড়ি। মাথার ভেতর যেভাবে চিন্তা করে রাখসেন কাহিনী, ঠিক সেভাবেই। আগামী বইমেলায় পাওয়া যাবে তো? ভাল থাইকেন
উধাও হওয়ার জায়গা আর কই, বলেন? আমার তো আছেই এক কাজ-কামুকগিরি'র অফিস, আর এক সেপাইগিরি'র চিলেকোঠা! ছিলাম, যদিও নাই।
না, বেশি দিরং না করার চেষ্টা করমু। ভালো বলছেন।
ধন্যবাদ, শুভকামনার জন্য। সামনে আর কোনো সত্যনাশ সর্বনাশ না ঘটলে, সামনের বইমেলায় পাবেন ব'লেই জোরদার আশা করি।
আপনিও ভালো থাকেন। দেখা হবে। [কালকে বইমেলায় গেছিলাম তো, আপনি অবশ্য ছিলেন না!]
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এত চিন্তা করেন আপনে?!
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
- খান ভাই, এইটা কী জিনিষ খাওয়াইলেন কন দেখি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হায় হায়! খায়া ফালাইছেন?
আমি তো খাওনের লেইগ্যা দেই নাই!
কী করলেন আপ্নে এইটা?!
ফিরায়ে দেন আমার লেখা।
;-(
আর, অতো খামচাখামচিন্তা কইরেন না ভাই, কখন জানি আপনার থুতনিটা ছিইল্যা যায়!
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
আরে, এতো চিন্তা লইয়েন না। জীবন তো এমনই বহুত ঝামেলাময়। সমস্যা আসবে, আবার কানাগলিতে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ধনুভাঙ্গা পণ ঠিক থাকলেই হয়। তাহলেই মুফতে আপনাকে আমরা পেয়ে যাবো কি সচলে- নতুন লেখার তরী নিয়ে, কি বইমেলায় প্রকাশকের স্টলে অটোগ্রাফ দিতে।
কই? সমস্যা হারানোর চাইতে আমি নিজেই বেশি হারাই সেই কানাগলিগুলানে।
অনেক ধন্যবাদ পান্থ, তোমার আন্তরিক পরামর্শুভকামনার জন্য।
পারবো মনে হয়।
আর, অটোগ্রাফ দিয়ে কী হবে বলো? ফটোগ্রাফ দিতে তো গেছিলামই কাল্কে! ;(
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন