১. হোয়াট'স সো 'গুড' অ্যাবাউট 'বাই'?!
অক্টোবরের ১৮-তে লন্ডনে বউয়ের কাছে চ'লে গ্যালো এক তুলনামূলক দীর্ঘকালের তুলনামূলক ভালো বন্ধু। বেশ ক'বছরের জন্যই গ্যালো।
ঘর-পরিবার ছেড়ে আমার একলা হয়ে যাওয়ার প্রাচীন প্রকল্পে, সেই ২০০৬ সালে, প্রথম ধাপ হিসেবে যে দুই অনুজপ্রতিম সহদল নাট্যবন্ধুর সঙ্গে উঠেছিলাম 'অন্যপুর' নাম দিয়ে একটা অন্য ফ্ল্যাটের অন্যরকম জীবনে, সে ছিল সেই দু'জনেরই একজন। সে-বছরেরই শেষের দিকে নাট্যদলটা ছেড়ে দিলাম লিখিতভাবে মন-মেজাজ খারাপ ক'রে, কিন্তু সে-বন্ধুরা তারপরও ছিল আমার সাথে। দলে একদিকে আমাকে 'ষড়যন্ত্রী' আখ্যা দেয়া হ'লো এবং কিছুদিনের মধ্যেই তার ফল হিসেবে ওই দু'জনেরও ঈমানের পোক্ততার বিষয়ে সন্দেহ উঠলো, আর সেই একই সুতোয় আমাদের সেই রামপুরা'র 'অন্যপুর'টাকে চিহ্নিত করা হ'লো সকল নষ্টের উত্সস্থল হিসেবে। 'অন্যপুর'র 'বাড়তি' ঘরটা থেকে স'রে গ্যালো, যতোটা না স'রে গ্যালো ততোটা আসোলে আমিই সরিয়ে দিলাম, দলের নাটকের বিস্তর মঞ্চ-সরঞ্জাম। আমি অন্যদিকে এই বিষয়েও শিক্ষিত হ'লাম, যে- বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মৌলশর্তের মধ্যে টাকা ধার না-দেয়ার সাথে সাথে একসাথে এক বাসায় না-থাকাটাও পড়ে।
২০০৭-এর মাঝামাঝি থেকে '০৯-এরও মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ওখানে সেখানে অন্য তিনটে বাসায় আমার 'অন্যপুর' আমি একাই গাড়লাম, একাই দেখলাম ছিন্নমূল একঘরে জীবনের অষ্টপ্রাহরিক রঙবেরঙ, একাই উন্মূল হ'লাম আরো আরো ভাব-ভাবনা-স্বপ্ন-বিলাস থেকে। এই পুরো সময়টায় তবু অন্য বসতিতে থেকেও যথেষ্ট পাশে পাশেই ছিল সেই বন্ধুটা, যতোটা কি না আশাও ছিল না আমার। সবই এই যেন সেদিনের কথা। তবে, আরো সেদিন, এই যে একেবারে ওইদিন, অক্টোবরের ১৮, সে গ্যালো, সে দীর্ঘই গ্যালো।
আরো যে একটা বন্ধু ওই প্রায়েকলা জীবনেও বেশ ভালো আলো ফেলে ছিল আমার সাথে, কখনই এক বাড়িতে না থেকেও সকালসন্ধ্যাই ঝাড়ি দিয়ে আমাকে কিছুটা হ'লেও লাইনে রেখেছিল, এভাবে ওভাবে সে-ও হয়ে ছিল আরো আপনের আপন। হ্যাঁ, এখনও আছে। তবু, তাকেও বহুদিনের জন্য সশরীরে বিদায় দিলাম ২৯ অক্টোবরের রাতে, আমার বাড়ির পাশের বিমানবন্দরটা থেকে, সুদূর অস্ট্রেলিয়া’র পথে, যেখানে আগে থেকেই আছে তার স্বামী।
বিদায়ের চেনা কোনো সুরে 'বিদায়' বলতে পারিনি, ভিতর থেকে কোনো বিলাপও শব্দে-বাক্যে বেরিয়ে আসেনি দু'বারের কোনোবারই। শূন্যস্থান তো কিছুটা হ'লেও হ'লোই এপারে, ওপারের সুখগুলো তবু বেঁচেবর্তে থাক, বাড়তে থাক লতায়পাতায় ফলেফুলে শতদলে।
২. ব্যস্ততা সমস্ততা
ডিক্লেয়ার করতে লজ্জাই লাগে- আজকাল আমি অ্যাটেন্ড করতে পারি তেমন জিনিস বা বিষয় বা ঘটনার সংখ্যা শুধু কমেই যাচ্ছে দিনের পর দিন। অসামাজিক হচ্ছি আরো। আগের চেয়ে বেশ কিছু কারণে ভালো আছি আজকাল, কিন্তু যেকোনো তৃতীয় চক্ষুর বিচারে নিশ্চয়ই দেখা যাবে- আরো এককেন্দ্রিক বা আত্নকেন্দ্রিক এবং আরো জড় পদার্থ হয়ে যাচ্ছি।
সচলায়তন থেকে দূরে ছিলাম আরো যেই বড় কাজের কারণে, সেটারও কিছুই হচ্ছে না আসোলে। অথচ হাতে সময় এতই কম, যে- বেশ কিছু বোমা হয়তো ফাটানো যাবে এর মধ্যে চাইলে, কিন্তু গঠনমূলক কাজ তেমন ভালো ক'রে কিছুই করা হবে না। তবু, নিজের জন্য অজুহাত আরো লম্বা করছি, লম্বা একটা ছুটি নিচ্ছি অফিস থেকেই। বার্ষিক ছুটি! কিছু টাকা পাবো বাড়তি বিনোদনভাতা হিসেবে, তবে আসল দরকার টাকার পাশের ওই ফাঁকাটার। তবু, আসোলেই যে করা হবে সেই কাজের কিছুমাত্র- তেমনটা জোর গলায় বলার মতো জোর আজকাল আরো নেই। ডিটারমিনেশনেরই টারমিনেশন হয়ে গ্যালো মনে হচ্ছে, এমনই বুড়ো হয়ে গেছি!
৩. ব্যাচেলড়াচড়া
একটু ড্র্যামাটিক রিলিফ নেন, আসেন। 'অ্যালিয়েনেশন' ব'লে যদি চেনেন, তবে সে নামও দিতে পারি এর। পরশু পরদুপুরে মধ্যরোদের মধ্যে বাসার বাইরে বেরিয়ে একটা মজার দৃশ্য দেখলাম। মজা পেয়েছি একটু মিশ্রভাবে। কারণ, বিষয়টা একইসাথে ফানি আর প্যাথেটিক (কেউ অরুচিকরও বলতে পারেন ওই দৃশ্য আর তার এই পুনরাবতারণাকে, তবু রসরহিত বা আদপেই-সিরিয়াস সেই পাঠককে 'স্যরি' বলা ছাড়া আর কিছু করার নেই সেক্ষেত্রে আমার। বড়জোর, সেজন্যেও আরেকবার স্যরি।)!
উত্তরায় বহু ফ্ল্যাটেই বহু ব্যাচেলর পোলাপান থাকে। একা একা খুব কম, বেশিরভাগই বন্ধু বা সহকর্মীদের সাথে গ্রুপ ক'রে। তো, পরশু দুপুরে আমার অন্যদিক থেকে চ'লে আমাকে অতিক্রম করলো অন্য একটা রিকশায় থাকা অন্য দু'টো ব্যাচেলর ছেলে (তাদের এলিজিবিলিটি'র লেভেল আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি অবশ্য কিছুই বলতে পারবো না। আর কেন কীভাবে আমি বুঝতে পারলাম যে তারা ব্যাচেলর, সে-প্রশ্নও আমাকে নিশ্চয়ই করবেন না পুরোটা পড়ার পরে)। দৃশ্যে ওরা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল আমার গোচরে, কারণ বেশ কিছুটা দূর থেকেই সেই মজার ব্যাপারটির জন্য তারা আশেপাশের কয়েক জোড়া চক্ষুকে অন্তত আকর্ষণ করেছিল বেশ সঙ্গতভাবেই, আমার সূক্ষ্ম বিড়ালচক্ষুকে তো অবশ্যই। অবশ্যই-হুড-খোলা রিকশায় ওই দু'জন খোলা ব্যাচেলর যাচ্ছিল সময় তাদের দু'জনেরই পরনে ছিল পৌনের চেয়েও একটু ছোট প্যান্ট, আর দু'জনেরই কোলের মাঝখানে ধ'রে রিকশার মেঝের ওপর দাঁড় করানো দু'টো কোলবালিশ! সদ্য-কেনা কিংবা সদ্য-বানিয়ে-আনা ও দু'টোরই বাইরের কাপড়ের টেক্সচার গার্ডেন-প্রিন্ট-মার্কা- একটা লাল-ভিত্তিক, আরেকটা সবুজ-ভিত্তিক (লেখায় 'লাল' আর 'সবুজ' দেখে, এই সমন্বয়ের মধ্যে আর যা-ই থাক, অন্তত দেশপ্রেম খুঁজতে যাবেন না অত্যাগ্রহী হয়ে, কেন না ওই লাল আর সবুজ দুটোই এমন হালকা শেডের, যে ওগুলো দেখলে আর যা-কিছুই মনে আসুক, পতাকা বা বাংলাদেশ ঘুণাক্ষরেও মনে আসতো না আপনারও)।
এখন, এটা এভাবে গল্প করার কী আছে?!- তাই তো ভাবছেন? আছে। ওই ব্যাচেলরজোড়া এমনভাবে তাদের নিজ নিজ কোলবালিশ ধ'রে রেখে এমন আবেশে এমন আদিরসিক হেসে হেসে এমন ঘনিষ্ঠ প্রেমের গান গাইতে গাইতে চলছিল, যে- বিজ্ঞাপনজগতের আকাশপাতাল সৃষ্টিশীলতায় অল্পবয়সে পঁচতে-দেয়া পস্তাতে-দেয়া আমার চোখ আর মাথা একটু বেশিই খাইষ্ঠ্যা ব'লেই হোক আর যে-কারণেই হোক, আমার পুরোপুরি এটাই মনে এলো তত্ক্ষণাত্, যে- ওদের মাথায় তখন এমনই একটা ভাব কাজ করছিল যে ওরা কোলবালিশ দু'টো এমন সাড়ম্বরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে বউয়েরই একরকম বিকল্প হিসেবে! হ্যাঁ, আমি আড়াইকোটি মার্কিন ডলার বাজিও ধরতে পারি এই বিষয়ে, ইচ্ছুক যেকোনো চ্যালেঞ্জারের সাথে। তাদের হাসিরসের দিকে চেয়ে একবার হাসলাম নাটক-সিনেমার 'পাগল-ছেলে' মার্কা মা-বাবা হাসি। আর, এই হঠাত্-দেখা ঘটনাটার পারক্ষণিক অধঃক্ষেপ হিসেবে, ওই রিকশাটা আমাকে পার হয়ে যাবার পরই, নিজের নির্বউ জীবনের ইদানিন্তন নির্ঘণ্টের দিকে তাকিয়েও আরো একবার হাসলাম নিজের মধ্যেই।
'পিথিমি' যে কী একটা প্যাথেটিক্যালি ফানি 'ধারমা'! এখন আমাকে নিয়ে হাসছেন তো? অকৃপণ হেসে নেন আপাতত একটু। বিনোদনের কতো অভাব আমাদের চারপাশে!
৪. নভেমবরযাত্রা
গত কিছু বছর ধ'রে নভেম্বর মাসটা আমার কাছে বেশ মিশ্র হুলুস্থুলের। প্রিয় আর বিরহী-হুহু'র ঋতু শীতের মূলভাবের শুভাশুভ আগমনটা এই মাসেই খুব স্পষ্ট আর প্রতাপী হয়। তাছাড়া, খুব কাছের আর প্রিয় কিছু মানুষের 'জর্মদিন' আর হঠাত্ দূরের হয়ে যাওয়া মানুষের ধর্মদিন, আবার একমাত্র চাচার মৃত্যুদিন- এসব মিলিয়ে এই মাসটা আমার ক্যালেন্ডারে একটা সেইরকম আউলা সময়! এমনকি, ২০০৭-এর শুরুর দিকে দেখা, খুব নাড়িয়ে-কাঁদিয়ে-ভাসিয়ে যাওয়া 'সুইট নভেম্বর' ছবিটাও (২০০১-এর টা। আজই হঠাত্ গুগলমামা'র কাছে শুনছিলাম- সেই সুদূর ৭-এর দশকেও নাকি আরেকটা 'সুইট নভেম্বর' হয়েছিল, সাদাকালো!) তারপর থেকে একটা বড় কারণ এর পরের বছর বছর আমার নভেম্বরগুলোকে ভয়ঙ্কর ক'রে যাওয়ার পিছনে। '০৭-এরই নভেম্বর জুড়ে অন্য একটা কম্যুনিটি সাইটে (তখন সেটাতে নিয়মিত ছিলাম, এতদিনে প্রায় মৃত!) নিজের পেজ-এ শোকের বিলবোর্ডও ঝুলিয়ে রেখেছিলাম- "থার্ড নভেম্বর পাস্ট ইউ!" এর কারণ ছিল আমার জীবনের এক অন্যরকম মহানারী, যে ২০০৫-এর শুরুতে আমার সব-ক'টা জানালায় উঁকি দিয়ে, ঝাঁকি দিয়ে, বাকি জীবনের জন্য বিষম এক ঝুঁকি দিয়ে, ব'লে ক'য়েও ফাঁকিই দিয়ে, চূড়ান্তভাবে আমাকে ছেড়েও গিয়েছিল সে-বছরেরই নভেম্বরেই; যার জন্য পরে এমন শপথও ক’রে বসেছিলাম, যে- অন্য কোনো নারীর পাণিস্পর্শ করবো না জীবনে, এমনকি ওই একা একা সাগর-পাহাড়-সুন্দরও দেখবো না সামনের জীবনে আর!
যাক, চিত্ত-চরিত্রের দুর্বলতা হোক না তো অধর্মই হোক, যে-কারণেই যেভাবেই হোক, এবছরের শুরুতেই সেইসব নকশা বা নখরা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম আমি। এমনকি, বেশ কো-ইনসিডেন্টালি-ই তার দুই মাসের মধ্যেই পাতায়া-ব্যাংককের ট্যুর পেলাম অফিশিয়াল ম্যান্ডেটে, যেটা কি না আগের বছরের শেষে হ'লেও আমি হয়তোবা বর্জনই করতাম সেই ট্যুর! না, ওখানে গিয়েও অবশ্য রমণীর পাণিস্পর্শ করা হয়নি, শুধু সাগরের পানিস্পর্শই হয়েছে।
তো, তারপর আমার এই দ্বিতীয় জীবনে আবার এটাই প্রথম নভেম্বর। জীবনের আরো কিছু সূত্রেও হয়েছে কিছু বদল। চশমার ওপর দিয়ে তাই একরকম পরীক্ষকের দৃষ্টিতে তীর্যক চেয়ে আছি নিজের দিকেই- দেখি, এই নভেম্বর-টা আমি কেমন কাটাতে পারি!
৫. হাতের পাঁচ, মাথার প্যাঁচ
সেইরকম বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা কেউ আনেন বা না-ই আনেন, আমি কিন্তু আসোলেই বুড়ো হয়েছি বেশ।
উদ্যমী গৃহপরিচারিকা জুটেছে বেশ কিছুদিন পরে। সকালবেলা আবার আমরা রুটি খাচ্ছি ঘরে। ডিমভাজার সাথে গুনে গুনে পাঁচটা পাতলা আটারুটি দেয়া হয় আমাকে। সকালে সময়মতো অফিসে পৌঁছানোর জন্য সহযাত্রী সক্ষম বাবা'র তাড়া তো থাকেই, শরীর কেমন অবশ হয়ে থাকে রাতের নিদ্রা-অনিদ্রা যেকোনোটারই চাপে! তিনটা রুটির পর থেকেই গুনে গুনে খেতে হয় বাকি দু'টো। চারটা থেকেই কষ্ট শুরু, তারপর দম নিয়ে নিয়ে সাড়ে চার, তার আরো পরে পাঁচ! ক'দিন ধ'রেই মাঝেমধ্যেই পাঁচ নম্বরটা আর খেতেই পারছি না!
উত্তরায় থাকি লিফ্ট-ছাড়া সাততলা বাসার ছয়তলায়। দু'দিন পর ওই বাসারই তিনতলায় যাচ্ছি অবশ্য, সেটা মূলত আব্বার সিঁড়ি-বাওয়ায় অসুবিধার জন্যই। কিন্তু, আমিও কিছুদিন হয় চারতলার পরই, পাঁচতলা-ছয়তলা'র জন্য সিঁড়ির বাকি প্রস্থদু'টো গুনছি! রাতে ক্লান্ত পায়ে উঠতে গিয়ে সত্যিই হাঁপিয়ে উঠছি আমিও আজকাল। পাঁচতলার জন্য চতুর্থ-প্রস্থের সিঁড়ি আর ছয়তলার জন্য পঞ্চম-প্রস্থের সিঁড়িগুলো যেন শেষই হ'তে চায় না। নেহাত অন্যের বাসায় রাত কাটানো যাবে না ব'লেই বেশ কষ্টে হাঁপিয়ে জিরিয়ে সময় নিয়ে নিয়ে কোনোমতে উঠতে হয় ছয়তলা পর্যন্ত। উঠি।
সেই প্রাচীনকালে (২০০০-'০১) দু'টো পত্রিকায় দু'বছর কনট্রিবিউট করার পর পার্ট-টাইম কাজও আরো করেছিলাম দু'টো অফিসে- দশমাস আর ছয়মাস। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার নয়দিনের মাথায় সেগুলোরই একটাতে পূর্ণকালীন হিসেবে ঢুকে নয়মাসেই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম বস-স্থানীয় এক খবিসিনী'র মূর্খতায় আর বৈরিতায়। যেহেতু বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করার বেশ ইচ্ছা ছিল আরো ক'বছর আগে থেকেই, শেষের মরিয়া চেষ্টায় সময়মতোই উত্তীর্ণ হয়েছিলাম একটা সেই পদেরই সংস্থায়। সেখানেও ছয়মাস কাজ করতে করতেই জায়গাটা বিষিয়ে উঠলো নির্দিষ্টত সেই অফিসের কিছু চরিত্রের কারণে। ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্যও প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হয়ে চ'লে আসি আরেকটু গভীর আরেকটা সমুদ্রে। এখানে খুব সুযোগ-স্বাধীনতা আর খুব অন্যরকম জ্ঞানী দার্শনিক বস পেয়ে অল্প কিছুদিনেই নিজেকে আর পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখতে পেলাম। প্রেমে পড়লাম' মহাকর্মের, এমনকি কর্মস্থলেরও। মাঝেমধ্যে মনখারাপ হ'তোই, ক্লান্তিও আসতোই পৃথিবীর বাস্তব নিয়মে। তবু, সামগ্রিক আলোটা ভালো ছিল ব'লে তীব্রভাবে স্বভাব-বিরুদ্ধ এবং ইতিহাস-বিরুদ্ধ হ'লেও অন্তত পাঁচ বছর এখানে থেকে যেতে পারবো ভাবছিলাম, পরে পারলে আরো বেশিই বা কেন নয়! কারণ, মনে হচ্ছিল- এই দেশে অনেক জায়গা যেমন কোনোভাবেই আমার জায়গা নয়, সেখানে এই একটা জায়গা বিস্ময়করভাবে আমার! তো, প্রেম হবেই বা না কেন!
কিন্তু বিধি রে বিধি! খুবই সাম্প্রতিক একটা গোপন খবর হ’লো- বেশিদিন (আসছে ডিসেম্বরেই চার বছর পুরো হবে) হয়ে গ্যালো ব'লেই কি না জানি না, এখানে আর ভাল্লাগছে না। পাঁচ গুনে কুলাতে পারলাম না মনে হচ্ছে এক্ষেত্রেও। চার বছরের শেষটায়ই বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে চেষ্টাটা! এর চে' বিপদের কথা বর্তমান আমার জন্য আসোলে আর হ'তে পারে না। কারণ, বাজারটা যতোটুকু বুঝে গেছি, তাতে এই দেশের আর কোনো এজেন্সি-তে গিয়ে যে গ্রস মাথামোটাগুলোর অধীনে বা সাথে কাজ করতে পারবো শান্তি আর বুদ্ধি বজায় রেখে, তেমন আশা বা সাহসও করতে পারি না আর। সুতরাং, এই মোড় বা খাদটা থেকে কই যাবো, কীভাবে যাবো, কী করবো- একদমই কিচ্ছু জানি না!
[সন্ধ্যা ০৭:৫৫
০১ নভেম্বর ২০০৯
মহাখালী, ঢাকা]
মন্তব্য
জীবন নামক বস্তু নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করে কি লাভ বলেন সাইফুল ভাই তার থেকে এরে নিজের ইচ্ছায় চলতে দেওয়াই ভাল
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কিন্তু, চিন্তা না কইরা কই পলান যায় রে ভাই?! জীবন নামের দুষ্ট পুলা তো খালি গুত্তা খায়া আইস্যা আমার ঘাড়ের উপ্রেই পড়ে!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
যে যায় সে বড় দীর্ঘ যায়!
সো হোয়াট'স 'গুড' অ্যাবাউট 'বাই'?!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হ্যাঁ মোরশেদ ভাই।
ধন্যবাদ।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
বস! আপনে ছুটিতে? আপনের অফিস চলবে ক্যামনে?!
কোম্পানীতে লালবাত্তি জ্বালানোর প্রচেষ্টার তেব্র নিন্দা
ঢাকায় থাকতেছেন ছুটিতে?
৫ নাম্বার পয়েন্ট নিয়া আপনের সাথে একদিন বিশাল কথাবার্তা হইছিলো, যেইখানে আগি ছিলাম মূলতঃ শ্রোতা। আপনে বিশাল ফ্রাস্ট্রেটেড হইয়া আছেন গোবরগণেশদের জন্যে। কিন্তু কী করা! At the end of the day, we need bread.
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
না চললে না চলবে।
ঢাকাই থাকবো। তবে, কিছু কাজ আছে জরুরি ব্যক্তিগত। দেখা যাক।
হ্যাঁ। তবে, দিনশেষে অবশ্য ব্রেড খাই না আমি, ভাত খাই। ব্রেড খাই দিনের শুরুতে!
অনেক ধন্যবাদ সিমন।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
যাক- একটু সময় নিয়ে এই লেখাটা লিখলেন। পড়ে আরাম পেলাম। ১ আর ৫ পড়ে বুঝলাম আমি আর আপনে একই চিপায় আছি। "নিধুয়া পাথারে..."
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
কী কও এইসব?! ১ না হয় তবু মানলাম, এই তরতাজা যুবা বয়সে ৫-এর প্যাঁচে তুমি ক্যাম্নে পড়লা?!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
বস, ক্ল্যাসিক 'চর্চাপদীয়' লেখা!!
লেখার অন্যসব বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন না করে একটা উৎকট প্রশ্ন করছিঃ তোমার 'আসল' গুলো আসলে 'আসোল' কেন?
না বস, উত্কটের কিছু নাই। খুবই সঙ্গত প্রশ্ন। এইভাবে লিখি নিজেরই একটা খুঁতখুঁত থেকে, যেমন কি না অভিধান-মাফিক 'গেল' না লিখেও 'গ্যালো' লিখি আমি। কারণ, 'আসলে' লিখলে তো প্রথম পড়ায় 'আসা' ক্রিয়া থেকে পাওয়া 'আস্-লে' পড়ার একটা সমূহ আশঙ্কা থাকে। 'আসোলে' লিখলে সে পথ পুরোপুরি রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই, একটু ম্যানিপুলেট ক'রে ফেলি বড় মুখ ক'রে।
ধন্যবাদ বস। অনেক ধন্যবাদ।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
প্যারা ভাইঙ্গা না দিলে পড়তে পারুম না।
ভাইঙ্গা দিলে আরো কত্তো বড় হইয়া গ্যাছে, দেখছেন বস?
তবু, আপ্নের লেইগ্যা ভাঙলাম। তাও যদি একটু পড়েন আপ্নে।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
পড়ছিলাম তো। আগামী পর্বের জন্য অগ্রীম মন্তব্য ছিলো
নতুন চাকরিতে ভাল সময় কাটুক, এই কামনা করি।
ওহ্, আমি অবশ্য এইর'মই এট্টা কিছু সন্ধ করছিলাম। থ্যাংকস বস।
না, সুইচ যে করতেই পারবো, তা-ও অবশ্য জানি না এখনও। মন বড়ই বিচিত্র এক কয়েদি! যাক, দেখা যাক। থ্যাংকস বস, সিন্সিয়ারলি।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
বিনোদনের জন্য আমার একটা কোলবালিশ কিনতে হবে! আজকেই কিনবো কী'না ভাবতেছি!
....................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
অল দ্য বেস্ট! খিয়াল কইরা ভালো দেইখ্যা কিইনো!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ব্যবহারকারী নির্দেশকা বুঝে নিতে ভুলবেন না কিন্তু
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
(হোহোহো)
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আপনার লেখা পড়ে সংক্ষেপে উত্তর দেওয়া খুব মুশকিল, কিন্তু মাঝরাত্তিরে মাথাধরা নিয়ে লেখাও মুশকিল, এদিকে ঘুম আসে নি বলে চিৎপাতও হতে পারছি না।
যাক, ব্যাপারটা হলো (আপনার নিজের ও লক্ষ্যবস্তু ঐ সব যুবকাদিদের ধরে নিয়ে) জীবনে একটা দ্বিতীয় উদ্দেশ্যের খুবই দরকার। যে কারণে পাশবালিশসমেত যুবকদের দেখে এতো কথা মনে হচ্ছে সেই একই কারণে চাকরিবাকরি নিয়েও বোরড হয়ে যাচ্ছেন বলেই মনে হয়। একখানা জোরদার প্রেম শুরু হলেই সব আবার লাইনে চলে আসবে। নাঃ, আমার প্রেমের জয়গান গাইবার বা আপনার শুনবার বয়স নেই সেটা জানি, আঠারোর উপরে ও জিনিস চলে না বোধ'য়। আমি আসলে বলতে চাইছি এই যে কাব্যেটাব্যে এতো ঢাকঢোলবাজনা শোনেন সে কিন্তু আদতে রোমান্টিক কারণে নয়। আসলে প্রেম (এবং সে বাবদ বিরহ, আশ্লেষ, বিচ্ছেদ, শালাশালি, প্রেমপত্র, মেকাপসেক্স, আর্চিস), আসলে আমাদের মনটাকে ব্যস্ত রাখার জন্যই এতো আয়োজন। প্রেমাস্পদ না থাকলেও ব্যস্ত থাকা যায়, সে বস্তুর খোঁজ ক'রে। কিন্তু খঁোজ করার আগ্রহও না থাকলেই মুশকিল, তখন চাকরি থেকে জীবনের জন্য পুরোটা বিনোদন খুঁজতে হয়, আর চাকরি জিনিসটা, আফটারঅল চাকরিই তো!
বোঝানো গেলো?
উরেব্বাস! অফলাইনে উঁকিঝুঁকিতে দেখা এই বিশাল দায়িত্বশীল এবং সুহৃদ মন্তব্যটা তো এদিকে টেনে আমাকে আবার কাজের প্যাঁচের মধ্যেও টেনে এনে লগাওয়ালো।
ঠিকই বলেছেন হয়তো আপনি। দ্বিতীয় জীবনে এখন দ্বিতীয় উদ্দেশ্য দরকার। দেখা যাক।
ব্যাচেলরি আর চাকরি নিয়ে আপনার সুন্দর বিশ্লেষণ পছন্দ হ'লো বরাবরের মতোই। হ্যাঁ, বোঝানো তো গ্যালোই। বুঝেছি। অনেক ভালোও পেয়েছি।
অনেক ধন্যবাদ মূপাদা'। কোনো-না-কোনোভাবে জানতাম যদিও, আপনার কাছ থেকে এভাবে এই মলাটে শুনে কথাগুলোকে সহৃদয় পরামর্শ বা উপদেশ এবং সে-সুবাদে প্রেরণা হিসেবেও নিয়ে ধন্য ও আহ্লাদিত বোধ করছি। সিন্সিয়ারলি।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন