অনেক উঁচুতে

তাহসিন রেজা এর ছবি
লিখেছেন তাহসিন রেজা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৪/০৩/২০১৪ - ১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
ঝোড়ো বাতাস হচ্ছে সেই সকাল থেকে। দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু উড়িয়ে নেবে বলে পণ করেছে দক্ষিণের এই নাছোড়বান্দা বাতাস।
ডাকপিয়ন কোনমতে আমাদের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ালেন। তাঁর হাতে থাকা কাগজপত্র গুলো উড়ে যেতে চাইছে বাতাসের দমকে।
আমার মা কোনক্রমে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালেন।

“আপনার একটা চিঠি আছে” ডাকপিয়ন হেসে বললেন।

হলুদ রঙের খামটা নেয়ার জন্যে মা হাত বাড়াতেই সেটা উড়ে দরজা দিয়ে আমাদের ঘরের ভেতর এসে পড়ল। মা ঘরের ভেতর ছুটে এলেন চিঠিটা কুড়িয়ে নেবার জন্যে। তাঁর পেছনে সশব্দে দরজা বন্ধ হয়ে গেল বাতাসের ধাক্কায়।

আমার ঘরের জানালার পাল্লা খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরেই মন বসছে না ঘরের ভেতর। এমন সুন্দর উড়ুক্কু দিনে কেউ কি ঘরে বসে থাকে ?

“মা, আমি কি একটু বাইরে যাব ?” অবশেষে মনে চেপে রাখা কথাটা বলেই ফেললাম মাকে।
“ঠিক আছে যাও, বেশি দেরি করবেনা কিন্তু” মৃদু হেসে বললেন মা।
আমি এক লাফে বিছানা থেকে নেমে নতুন কেনা রানিং সু পরে নিলাম। মা আমার তাড়াহুড়া দেখে আবারো মৃদু হাসলেন। আমি যখন বের হব মা পেছন থেকে চেঁচিয়ে বললেন-“ সাবধানে ঘোরাফেরা করিস বাবা, আজ বড্ড জোরে বাতাস বইছে”।

২।

বাইরে এসে দেখি হুলুস্থুল কাণ্ড! উথালি পাথালি বাতাসে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়। তবু এই ওলটপালট করা বাতাস এক দারুণ প্রশান্তির অনুভূতি এনে দিচ্ছে।

বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে নানারকম গাছের পাতা। হরেক রঙের হরেক আকৃতির পাতা। সবুজ, লালচে, বাদামী নানান রঙের পাতা। গাছের ডাল থেকে ঝরে পড়ছে নানা রকম পাতা। তারা উড়ে গিয়ে পড়ছে ছাদের উপর, ছাদ থেকে আবার উড়ে যাচ্ছে দিগ্বিদিক। মনে হচ্ছে পাতাগুলো কোন এক প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে। কে কতদূর যেতে পারে!

আমার মনে হল, ইশ আমি যদি পাতা হয়ে যেতে পারতাম! তাহলে কেমন উড়ে বেড়ানো যেত দুনিয়া জুড়ে!

“বিভুউউ...” আমার মা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আমাকে ডাক দিলেন। কিন্তু মা আমাকে দেখতে পেলেন না। কারণ আমি ততক্ষণে একটা পাতা হয়ে গেছি!

আমি আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে উড়ে যাচ্ছি অন্যসব পাতাদের সাথে। কি যে ভালো লাগছে আমার! আমার গাইতে ইচ্ছে করছে-“ আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে”।

একটা মেরুন রঙের মেহগনি পাতা উড়ে এলো আমার সামনে। এতো সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। সূর্যের আলোয় মেহগনি পাতার শিরা উপশিরা দেখা যাচ্ছে।

“আমরা কোথায় উড়ে যাচ্ছি বলতে পারবে?”, আমি জিজ্ঞেস করলাম মেহগনি পাতাকে।

“কি জানি কোথায়, আর জানার দরকারটাই বা কি?”, সে উত্তর দিল। “জীবন ছোট, ফুর্তি করো না কেন, বন্ধু?” মেহগনি পাতা বলল আমাকে।
“না হে বাপু, জীবন ছোট হতে পারে কিন্তু তুমি যেটাকে শেষ বলে মনে করছ জীবন সেখানে শেষ নাও হতে পারে”, কে যেন বলে উঠল আমার পাশ থেকে। তাকিয়ে দেখি একটা বুড়ো রেইনট্রি পাতা।

“তাহলে আপনিই বলুন, আমরা কোথায় উড়ে যাচ্ছি?” আমি বুড়োকে শুধালাম।

“আমরা যদি সোজা উড়ে যাই তবে শহরের সেন্ট্রাল ডাস্টবিনে গিয়ে পড়ব”, বুড়ো জবাব দিল।

“না না আমি ওখানে যেতে চাইনা”, আমি প্রায় চিৎকার করে উঠলাম।

বুড়ো রেইনট্রি পাতা আমার দিকে চেয়ে বললেন, “ তবে যদি ডানদিকে উড়ে যাই আর বেশ অনেকখানি উঁচু দিয়ে উড়ে যাই তবে এমনসব আশ্চর্য জিনিস দেখা যাবে যা কোন পাতা কোনদিন দেখেনি”।

“বন্ধু, তুমি আমার সাথে আসতে পারো ওই ডাস্টবিনের দিকে, ওখানে আমার সব বন্ধুরা জড়ো হয়েছে”। মেহগনি পাতা আমন্ত্রণ জানালো আমাকে।

বাতাস খুব জোরে বইতে লাগল। আমি আর মেহগনি পাতা উড়ে চললাম ডাস্টবিনের দিকে।

বুড়ো রেইনট্রি আমাদের সাথে আসলো না। সে ডানদিকে উড়ে চলল অনেক উপরের বাতাস দিয়ে।

বুড়ো চিৎকার করে ওখান থেকে বলল-“ এইযে, তোমরা দেখলেনা কি দারুণ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এইখান থেকে!”

আমি আর মেহগনি পাতা বুড়োর কোথায় কর্ণপাত করলাম না।

৩।
বুড়ো আবার চিৎকার করে উঠল-“ এদিকে এসো বাছারা, ওদিকে যেও না, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি ডাস্টবিনে! ধোঁয়া উড়ছে, এসে দেখে যাও, ওদিকে যেও না”।

“আমি তো কোন আগুনের আভাস পাচ্ছি না”, মেহগনি পাতা বলল আমাকে।

আমিও কোন আগুন দেখতে পাচ্ছিলাম না। বরং খুশি খুশি লাগছিল অনেক বন্ধুদের সাথে দেখা হবে বলে।

আমি আর মেহগনি পাতা ডাস্টবিনের দিকে উড়ে যাচ্ছি। আগুন আছে কি নেই সেই ভাবনা আমাদের নেই!

হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দে আমি চমকে উঠলাম!

“তোমাকে এইখানে খেলতে নিষেধ করেছি না। দেখছ না ধোঁয়া উড়ছে?” গাড়ি থেকে নেমেই আমার মা চিৎকার করে উঠলেন।

আমি অপরাধীর মত মাথা নিচু করে থাকলাম। দেখি সেই মেহগনি পাতাটা ডাস্টবিনের দেয়ালে লেগে আছে। আরেকটু হলেই ডাস্টবিনে গিয়ে পড়বে। আমি দৌড়ে গেলাম ওটার দিকে।

কিন্তু আমার হাত ওই পর্যন্ত যাচ্ছে না। আমার মা এসে ওটা তুলে নিলেন। আমি পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম আমার বন্ধুকে।

আমি গাড়িতে উঠলাম।

মা গাড়ি চালু করলে আমি গড়ির জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম।

সেই বুড়ো রেইনট্রি পাতাটা কোথায়?

কি দেখেছিল ওই বুড়োটা!

ওই বুড়ো পাতা যা দেখেছিল হয়ত আমিও কোন একদিন দেখতে পারব।

হয়ত!

Original: High & Lifted Up (Mike Krath)
ঈষৎ পরিবর্তিত


মন্তব্য

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

চলুক

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তাহসিন রেজা এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক
হাচল হয়ে গেছেন দেখি, অভিনন্দন রইল! হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তাহসিন রেজা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপু। আপনার জন্যে অনেক শুভকামনা। হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহসিন রেজা, ভাল লাগলো। তৃপ্তির জায়গাটা কয়েকটা স্থানে ফাঁকা ছিলো। ডায়ালগগুলো স্পেশাল সাইন দিয়ে দিলে দেখতে ভাল্লাগে। আমার মতামত আরকী। তবুও সুন্দর অনুবাদ করেছেন।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

তাহসিন রেজা এর ছবি

পরের লেখায় শূন্যস্থান ভরাট করার চেষ্টায় থাকব। শুভেচ্ছা ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

আয়নামতি এর ছবি

'তিথি'র মত অনবদ্য না হলেও ভালো লাগলো তাহসিন চলুক
হাচলত্বের অভিনন্দন থাকলো। আরো বেশি বেশি লেখুন।

তাহসিন রেজা এর ছবি

পঠনে কৃতজ্ঞতা দিদি। অনেক শুভেচ্ছা হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মূল গল্পটা পড়েছিলাম আগে। কিছু কিছু জায়গা বাদ দিলে আপনার ভাবানুবাদ বেশ ভালো হয়েছে। যেমন, শুরুর দিকে "কোনোমতে" আর "কোনোক্রমে" পরপর দুই বাক্যে ব্যবহার একটু চোখে লাগে। তারপর মা তার ছেলেকে দুইবার "তুমি", একবার "তুই" করে বললেন। যাই হোক, সব মিলিয়ে গল্প ভালো লেগেছে। হাসি

তাহসিন রেজা এর ছবি

এই "কোনোমতে" আর "কোনোক্রমে" নিয়ে আমারো একটু খটকা ছিল।
আর আমার মা আমাকে মাঝে মাঝে তুমি আবার মাঝে মাঝে তুই বলে ডাকতেন। হাসি সেখান থেকেই গুলিয়ে ফেলেছি। পরের লেখা গুলোতে এইসব দিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করব।

পঠনে কৃতজ্ঞতা অতন্দ্র প্রহরী। শুভেচ্ছা জানবেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

এক লহমা এর ছবি

হাচলাভিনন্দন! হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তাহসিন রেজা এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অভিনন্দন হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তাহসিন রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।