কি লিখব বুঝতে পারছি না! অনেক গল্প, অনেক কবিতা মাথার ভেতর জমে আছে। আমার পুরনো লেখার খাতা ভর্তি অসমাপ্ত, অর্ধসমাপ্ত লেখা। অনেকদিন পর আজকে লেখার খাতাটা বের করে পড়তে পড়তে ভীষণ অচেনা মনে হল লেখা গুলিকে। আজ এতদিন পর আমি নিজে এইসব লাইন লিখেছি বিশ্বাস হচ্ছে না। হাতের লেখাও বদলে গেছে। আমি নিজেও যে বদলে গেছি কতখানি আয়নার সামনে দাঁড়ালে টের পাই। কুমড়োর মত ভুঁড়ি বাগিয়ে আয়নার ভেতর যে দাঁড়িয়ে তাকে কিছুতেই নিজের প্রতিচ্ছবি বলে মেনে নিতে ইচ্ছে করেনা। কেমন একটা বিতৃষ্ণা বোধ হয়। নিজেকে কষে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে। অফিসের বাসে রাস্তার দুপাশ দেখতে দেখতে যাই। কত কি চোখে পড়ে! কত চলমান ছবি, কত চলমান গল্প, কবিতা চোখের সামনে হুশ হুশ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। মনে মনে ভাবি সব লিখে রাখব দিনলিপিতে। অফিসে পৌঁছে র ম্যাটেরিয়াল, ফিনিশড গুডস আর ব্যাচ ম্যানুফ্যাকচারিং রেকর্ডের পাহাড়ের নিচে সব হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
সচলায়তনও আর আগের মত নেই। কি দারুণ একটা লেখার জায়গা এটা! অথচ লেখকেরা কোথায় যে হারালেন! মাঝে মাঝে দুয়েক ফোঁটা বৃষ্টির মত প্রিয় লেখকদের লেখা পাই। গোগ্রাসে পড়ে ফেলি সব। আমি তো আসলে সচলায়তনের ভীষণ মনোযোগী পাঠক ছিলাম। সচলায়তন পড়তে পড়তে কিভাবে কিভাবে যেন অতিথি লেখক হয়ে গেছি! এই রাইটার্স কম্যুনিটির লেখকেরা কি দারুণ ভাবে যে আমার পাঠাভ্যাস, দৃষ্টিভঙ্গির কাঠামো গড়ে দিয়েছেন। লেখকদের কিছু বললেই বলেন সময় নাই, ব্যাস্ত, লেখা আসেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ ফেসবুকে বড়বড় লেখা লিখছেন, আলোচনা করছেন। সচলায়তনের জন্যে সময় নেই। ফেসবুকে কি এমন মধু আমি ভেবে পাইনে!
এই ফেসবুকের কারণেই আমার বই পড়া শুন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছিল। মাস তিনেক আগে রেগেমেগে ফেসবুক ব্যাবহার দিনে আধঘন্টায় বেঁধে ফেলি। অবাক হয়ে খেয়াল করি গতবছর গুডরিডস রিডিং চ্যালেঞ্জে ফেল করা এই আমি তিনমাসের ভেতর এবছরের চ্যালেঞ্জের চেয়ে সতেরটা বই বেশি পড়ে ফেলেছি।
কদিন আগে পড়লাম সুসান কেইনের বই “Quiet”। ইন্ট্রোভার্টদের নিয়ে লেখা ভীষণ পরিশ্রমী একটা বই। আর সুসানের লেখাও দারুণ, তরতর করে এগিয়ে যায়। সারাজীবন মুখচোরা, ঘরকুনো এইসব শুনে শুনে বিরক্ত আমি। আমাকে জোর করে ‘সামাজিক’ বানানোর চেষ্টা করে গেছেন আমার অভিভাবকেরা, আমার কাছের মানুষেরা। বই থেকে খানিক অংশ তুলে দিলাম-
“Introversion- along with its cousins sensitivity, seriousness, and shyness- is now a second-class personality trait, somewhere between a disappointment and a pathology. Introverts living in the Extrovert Ideal are like women in a man's world, discounted because of a trait that goes to the core of who they are. Extroversion is an enormously appealing personality style, but we've turned it into an oppressive standard to which most of us feel we must conform.”
আরো পড়া হল সদ্য নোবেল প্রাপ্ত কাজুও ইশিগুরোর “রিমেইন্স অব দ্যা ডে”। সিনেমাটা বেশি ভাল লেগেছিল। সিনেমা দেখার সময় অবশ্য এটা ইশিগুরোর বই থেকে করা সেটা জানতাম না। মনে পড়ে নীলক্ষেতে অনেক আগে একবার ইশিগুরোর বই “নেভার লেট মি গো” দেখে ভেবেছিলাম এটা মনে হয় সস্তা মেলোড্রামাটিক বই হবে। নোবেল পাবার পর অলরেডি বাংলার হনুবাদককুল ইশিগুরোর বইগুলির গুষ্টি উদ্ধারে নেমে পড়েছেন। আমি পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নীলক্ষেতের ফুটপাতে জ্বলজ্বল করছে ‘আমাকে যেতে দিওনা’ শিরোনামের বই।
আগে মাঝে মাঝে সাহিত্য পত্রিকা কিনে কিনে পড়তাম। এখন আর কিনি না। সেদিন কি মনে হল রাস্তার পাশের পত্রিকার দোকান থেকে বাংলা একাডেমী থেকে বের হওয়া ‘উত্তরাধিকার’ কিনে ফেললাম। পত্রিকাগুলিতে সাধারণত আমি কবিতার অংশ এড়িয়ে যাই। এদিন হঠাৎ সায়ন্ত নামের একজন কবির কবিতা চোখে পড়ল। অজস্র ‘কোবিদের’ কোবিতার ভীড়ে অনেকদিন পর কয়টি লাইন মনে দাগ কেটে গেল-
“শরীরের নিভৃতে এসে রোপণ করে যেতে পারো দুঃখ
বোগেনভিলিয়ার স্নিগ্ধতার পাশেই রেখে যাও একটি নদী!
জলের গল্পের পাশে প্রবাল দ্বীপ রেখে তুমি চলে যাও
যেদিকে যেতে চাও, যাও
শোকের সঞ্চার রেখে যাও
জোয়ারের মত নেমে যাক কবিতার পঙক্তিমালা
শিরা উপশিরা জুড়ে রেখে যাও ব্যথাতুর মেঘ!”
কবিতার মানেটানে অতো বুঝিনি। কিন্তু ভালো লাগল লাইনগুলি।
যাকগে আজকে অনেক আজেবাজে বকে ফেলেছি। লেখাটা কোথা থেকে কোথায় এসে পড়ল। সচলায়তনের নীড়পাতায় এই লেখা মানাবে কিনা কে জানে! তবু লিখলাম অনেকদিন বাদে। আঙুলের ব্যায়াম অন্তত হল। আর নামের পাশে অতিথি ল্যাজ যেহেতু আছে এই লেখা প্রকাশের দায়ভারটাও তাই মডু সাহেবের।
মন্তব্য
পুরোনো লেখারা গেঁটে বাতের মতো। পূর্ণিমা আমাবস্যায় চাগিয়ে উঠে। পূর্ণিমার সময় বেশি বেশি বেলি ফুলের গন্ধ শুঁকে দেখতে পারেন। আর আমাবস্যায় বসে যান একটা ভুতের গল্প নিয়ে। কোনমতে কটা দিন কাটিয়ে দিলেই ব্যাস।
লেখা ভালো লেগেছে।
----মোখলেস হোসেন।
ধন্যবাদ,মোখলেস হোসেন ভাই।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আঙুলের ব্যায়ামটা চলতে থাকুক।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
ধন্যবাদ, সোহেল ইমাম
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
নোবেল প্রাইজ পাবার আগেই যে অতি অল্প কয়েক জন সাহিত্যিকের লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে কাজুও ইশিগুরো তাদের একজন। তবে স্বীকার করে নিচ্ছি আমি তার আধখানা বইয়ের পাঠক। 'নেভার লেট মি গো' পড়তে নিয়ে কোনভাবেই তা শেষ করে উঠতে পারিনি। এই বইটা না পড়তে পারার ট্রমা কাটিয়ে ওঠার পর তার অন্য কোন বই পড়ার চেষ্টা করবো।
বই পড়াটা একটা অভ্যাসের ব্যাপার। যার এই অভ্যাস আছে তিনি শত ব্যস্ততা আর ঝামেলার মধ্যেও প্রতিদিন বই পড়ে যান। আর যার এই অভ্যাস নেই তিনি অফুরন্ত অবসর পেলেও বই পড়ার কথা ভাবেন না।
যারা লেখার ক্ষেত্রে বা পড়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াতে মগ্ন তাদেরকে ওখানেই থাকতে দেয়া ভালো। ব্লগে লেগে থাকার জন্য আগ্রহ, নিষ্ঠা, ধৈর্য, ভালোবাসা ইত্যাদি লাগে। ওসব যাদের নেই বা যারা ব্লগের জন্য ওসব খরচ করতে চান না তাদেরকে তাদের পছন্দের জায়গায় থাকতে দেয়া ভালো। খামাখা টানাটানি করার কী দরকার!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একমত
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আমার মনেহয় ব্লগে লেখার সবচে বড় পাওনা যেটা ছিলো সেটা পাঠকের মিথস্ক্রিয়া। সচলায়তনে 'পছন্দের' পাঠকের মন্তব্য-আলোচনা পাওয়া যেতো বলে সচল আমার একটা পছন্দের লেখার জায়গা। মিথস্ক্রিয়ার লোভ ছাড়া, লিখতে চাইলে তো লিখে রাখার জায়গার অভাব নেই।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সচলায়তনে কিছু মানুষের মন্তব্য পেলে, নিদেনপক্ষে একটা থাম্বস আপ পেলেও খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
১৮ মাস পরে খুচরা লেখা দিলে চলপে? এতদিনে তো পাইকারি লেখা রেডি হয়ে যাওয়া উচিৎ। গুডরীডস চ্যালেন্জের মত পীরের মহাচ্যালেন্জ দিলাম: বছরে ৪টা লেখা নামান। র গুডস আর ব্যাচ ফিনিশ তো অনেক হইল।
..................................................................
#Banshibir.
পীরবাবার মহাচ্যালেঞ্জ গৃহীত হইল
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
লেখকরা (বেশিরভাগই) চান লেখাটা বেশি মানুষ পড়ুক। সেকারণে হয়তো ফেসবুকে লিখছেন অনেকে। তাদের দোষ দিই না। আসলে সচলে লিখে ৩ দিন পরে সেই লেখা নিজের ফেবু ওয়ালে দেয়া যায়, সেটা কেন তারা করছেন না সেটাও জানি না। হয়তো, বিশাল পাঠক গোষ্ঠীর তুলনায় সচলের পাঠকের সংখ্যা তুলনীয় নয়।
সেই গরম গরম সচলের কথা মনে পড়লে মন চরম উদাস হয়। এটা একদিক থেকে ভালো যে সচল মানের প্রশ্নে আপোষ করছে না, তবে একই সাথে পুরোনো লেখকদের লেখা কম আসছে। সাথে সাথে নতুন ভালো লেখকদের লেখাও আমরা খুব একটা পাই না (ব্যতিক্রম আছে)। এমন না যে ভালো গল্প লিখিয়ে তৈরি হচ্ছে না দেশে-বিদেশে, তবে তারা সচলে আসছেন কিনা লেখা নিয়ে সেটা অনিশ্চিত।
আগে প্রতিদন সকালে সচল খুলো নতুন লেখা খুঁজতাম। সময়ের পরিক্রমায়, এখন দুদিন পর এসও হতাশ হয়ে ব্রাউজারের ট্যাব বন্ধ করি।
আবার গরম হয়ে উঠক সচল, যার নাম সচল -তা কখনো অচল হবার না।
শুভেচ্ছা
শুভেচ্ছা, মেঘলা মানুষ
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
লেখা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো, সচলায়তনের পাতায় মানালো কিনা ইত্যাদি দায়ভারে লেখাকে চাপা না নিয়ে আনন্দ নিয়ে লেখাই ভালো। মানে আমি বলছিনা যে লেখা উত্তরোত্তর ভালো করার ইচ্ছে চাপা দিতে। বলছি যে লেখায় যেনো কোনো দৃশ্য অদৃশ্য শেকল না থাকে। থাকলে সেসব না মানাই ভালো বলে আমার মনে হয়।
ভালো লিখেছেন। খুচরা লেখাও চলুক। কঠিন খটমটে ইত্যাদি লেখাও চলুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ, অনার্যদা। আপনার লেখা পড়তে চাই
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
অনেকদিন পর লিখলেন। এই কথাগুলোর সাথে আমাদের অনেকেরই সহমত। কিন্তু আগের জমজমাট যুগটা ফিরবে না যেসব কারণে ফেসবুক তার মধ্যে অন্যতম, কিন্তু একমাত্র নয়। নানান কারণে মানুষের সাথে ব্লগের দূরত্ব বেড়ে গেছে। আমার পর্যবেক্ষণে ২০১৩ সালের শাহবাগ মুভমেন্টের পর এটা হতে শুরু করেছে। একটা ভীতি, একটা সংকুচিত রক্ষণশীল অবস্থান গড়ে উঠেছে। যেটা ২০০৮-১২ সময়কালে ছিল না। তবে কিছু কিছু লেখা নিয়মিত করা যায়। সাহিত্য না হোক, ভারী লেখা না হোক, এরকম হাতখোলা লেখালেখি চলুক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ, নীড়দা
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
নতুন মন্তব্য করুন