রাত নয়টা পাঁচ মিনিটে সদ্য কেনা মোটরবাইক নিয়ে এসে উপস্থিত হন চক্রবর্তী মহাশয়, আমরা রওনা দেই ঠিক নয়টা সাত মিনিটে, ৫ই এপ্রিল ২০১২, পূর্ণিমার ঠিক আগের রাতে। বরিশাল টু কুয়াকাটা - ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট! গন্তব্য খুঁজে পাওয়ার পরেও স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুতে হয়, এই যাত্রার সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে গত ১৮ ঘণ্টায় কতকিছু ঘটে গেলো!
সে কাহিনী থাক। সিদ্ধান্ত একদম চূড়ান্ত হল কীর্তনখোলা নদীতে বসে। চক্রবর্তী আজ রাতে না যেতে পারলে আর পারবেনা, তার এক কথা, ‘ভাই, আপনে বলছিলেন পূর্ণিমা রাতে যাইতে চান, তাইলে আইজকা রাইতেই চলেন, আমি আছি; আপনে না গেলে আমি অন্য কাউরে নিয়া হইলেও চইল্ল্যা যামু।’ অথচ তার কাজ আছে বলেই পরেরদিন সকালে আরেকজনের সাথে যাব বলে ঠিক করে রেখেছি।
তবুও, কতদিন পর এরকম একটা আহ্বান! বুকের ভেতর খাঁচা বন্দি একটা পাগল যেন হুট করে ছাড়া পেয়ে যায়, চক্রবর্তী টের পাননা আমার ভেতরের আলোড়ন, আমি সে আলোড়ন সামলাতে সামলাতে চোখমুখ শক্ত করে জানতে চাই, ‘যেখানে যেখানে সম্ভব হেডলাইট অফ করে যেতে হবে, রাজি আছেন?’ উত্তর আসে, ‘হেডলাইট জ্বলবেনা। আপনে চলেন।’ এইসব সিদ্ধান্ত কাউকে জানাতে নেই। কাউকে না বলে হুড়মুড় করে বের হবার মধ্যে যে অপার্থিব আনন্দ তা আমার বেশ কিছুদিন ধরে চলা সব অস্থিরতা দূর করে দেয়। শেষবার ১৯৯৯ সালে নিয়মমাফিক হুট করে বেরিয়ে কোনকিছু না ভেবেই প্রায় দুইমাস লাপাত্তা থেকে বাড়ী ফিরে বাবা-মায়ের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর কোনদিন এমন করবোনা, সেটাও ভুলে যাই। এই এখন লিখতে যেয়ে মনে পড়লো।
চক্রবর্তী কুয়াকাটায় হোটেল রুম বুক করেন। যাত্রাপথে আমতলীতে খেয়ে নেয়া যায় কিনা জানতে ‘ভাই ভাই হোটেল’ এ ফোন দিলে মোহন ফোন ধরে জানায় রাত সাড়ে দশটার পর দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়, তারপর জানতে চায় আমাদের পৌঁছুতে কয়টা বাজবে। আমরা হিসেব করে জানাই, এগারোটা। সে থাকবে বলে জানায়, আমি মানা করতে গেলে সে বলে ‘কোন কথা নাই, আপনেরা আসেন।’ আমি কুয়াকাটায় নজরুলকে ফোন দেই, নজরুলও বলে সে যত রাত হোক অপেক্ষা করবে। নজরুল এর সাথে আমার এর আগে দুইবার দেখা হয়েছে, মোহন এর সাথে খুব বেশি হলে আট-দশবার -- এদের গলায় সত্যিকারের অপেক্ষার কথা শুনে কেমন ভেজা ভেজা মন নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। মোটরবাইকের নামকরণ করা হয় ‘চন্দ্রগ্রস্ত’।
দপদপিয়া ব্রিজ এর কাছাকাছি আসতেই দেখি টোল প্লাজার সামনে দুইজন মানুষ খুব কষ্ট করে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করছেন, জানতে চাই, ‘টোল কত?’। ‘দশ টাহা’, এই দশ টাকার জন্য দুইজন মানুষ এইভাবে বাঁশ নিয়ে তোড়জোড় করছেন কেন জানতে চাইলে উত্তর আসে, ‘মানুষ টাহা না দিয়া পলাই যায়’। এইরকম একটা সহজ কিন্তু কঠিন সত্য কথা শুনে আমরা হাসি। ব্রিজ এর উপর আলো, তার দুইপাশে নদী, নদীর জল জোছনায় কেমন উপচে উঠা কুয়াশার মত মনে হয়। পরপর দুইটা ব্রিজ পার হতে হতে আমার শুধুই মনে হতে থাকে এই নদীটাতেও কিছুদিন পর চর দেখা দেবে...
ব্রিজ পার হতেই সুন্দর মসৃণ রাস্তা, মোটরবাইকের হেডলাইট নেভানোর কথা মনে করিয়ে দেই আমি চক্রবর্তী মশাইকে, হেডলাইট নিভে যায়। চারপাশে ধোঁয়ার মত জোছনা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে সব -- ঘর-বাড়ী-গাছ-পুকুর সব মনে হয় ফিকে-দুধরঙ একটা ফিনফিনে আলোয়ানে মোড়া, সে আলোয়ানে কোন জড়তা নেই, চাকচিক্য নেই, নেই কোন আহামরি অভিলাষ; শুধু আবছায়া! পুকুরে নিকটবর্তী গাছের ঝিমঝিম ছায়া, সে ছায়ার ভেতর আরো আলো আরো ছায়া, আলো-ছায়া ঘিরে ফেলে বসে থাকা একচিলতে প্রায় অন্ধকারের আঁকিবুঁকি, সে আঁকিবুঁকির ভেতর কোন এক চিত্রকরের সবটুকু রহস্যময়তা --- ক্লান্ত চোখের ভেতর একটা ক্যানভাস আড়মোড়া ভাঙতে থাকে, ভাঙতেই থাকে...
সব পাখী ঘর ছাড়ে, সব সন্ধ্যেগুলো ফিরে আসে ঘরে
মানুষের ঘর নেই, মানুষের ঘর থাকে একান্ত নিকট বাহিরে...
একটা ঝাঁকুনিতে ঘোর কাটে, টের পাই মাথার ভেতর গান, আশেপাশে কেউ নেই, নিজের কাছে নিজেই পরম অভয় পেয়ে আমি গাইতে থাকি, চক্কোত্তি মশাই ঘাড় ফিরিয়ে হাসেন, গলা মেলান। যেখানেই সম্ভব হেডলাইট নেভে, আবার জ্বলে কিন্তু জোছনার তারতম্য নেই, সে নির্লিপ্ত উদার। ছোট ছোট বাজার পার হই আমরা, পথে দেখি টর্চ হাতে একজন দু’জন মানুষ হেঁটে যান, হুট করে চোখে পড়ে বড়সড় ভিড়। মাঝে মাঝে আমাদের চলে যাওয়া দেখার মত থাকেনা কেউ, রাস্তার দু’পাশে গাছের সারি, তার পাশে হুটহাট চোখে পড়ে গাঢ় ঝোপের মত ঘর-বাড়ী অন্ধকারে ঢাকা পড়ে আছে। আমরা গান গাইতেই থাকি...
এক জায়গায় চোখে পড়লো বহুদূরে একটা বাড়ীর আঁচলে কুপি-বাতির মত কি যেন জ্বলে আছে, হুড়মুড় করে কত স্মৃতি মনে পড়ে! কুপি বাতি’র ভেতর আমাদের অজস্র শৈশব জমা রাখা, অজস্র গল্প-গাঁথা জমা রাখা লন্ঠনে-হারিকেনে, হ্যাজাক বাতিগুলো রাখে সব পূজা-পার্বণ আর মেলা’র খবর, মোমের আলোতে রাখা গল্পের বই... কৃত্রিম আলোর ভিড়ে পিদিমের সেই রহস্যময়তা কই, গোপনীয়তা কই -- কোথায় সেই নিভু নিভু এই বুঝি নিভে গেলো ঝপ করে চারপাশে তবু থাকে মানুষের ছায়া!
বাকেরগঞ্জ যেতে যেতেই তিনবার চোখে পড়ে ওয়াজ মাহফিল, আলোর বন্যার ভেতর মাথায় পাগড়ী পড়া কিছু মানুষ বসা মাটি থেকে উপরে, তাদের থেকে একটু দূরে আরো একটু নিচু জায়গায় মাটিতে আসন পেতে বসে থাকা সাধারণ মানুষ ফেলে দ্রুত চলে যেতে থাকি আমরা; পৃথিবীর সবগুলো ধর্মের আচারের সাথে নতুন শস্যের একটা বৈষয়িক সম্পর্ক আছে, ধারণাটা আরো পোক্ত হয়।
লেবুখালীতে ফেরী পেয়ে যাই আমরা, একদম সরাসরি ফেরীতে যেয়ে উঠি। আরো তিনটা ফেরী বাকি আছে। এরপর পটুয়াখালীতে লোহালিয়া নদীর উপর দিয়ে যেতে যেতে দেখি বিদ্যুৎ নেই। কি অদ্ভুত লাগে দুইপাশ জুড়ে শহরটাকে দেখতে, ব্রিজের উপর থেকে লোহালিয়া নদী’র পশ্চিম প্রান্তটা দেখতে বেশি সুন্দর। এই নদীটা ভেতর দিকে ভীষণরকম আটপৌরে। পটুয়াখালী খুব দ্রুত পিছু ফেলে আসি আমরা।
একটা জায়গায় এসে আমরা দাঁড়াই, আমতলী থেকে ফোন আসে, জানাই আর বেশিক্ষণ লাগবেনা। নজরুল ফোন করে জানায় সে আলীপুরে খেয়া নৌকা ঠিক করে রাখবে। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে চারপাশে তাকাই -- পাশেই অনেক বড় একটা পুকুর, চারপাশে ধানি জমিতে ধান নেই, পড়ে আছে ধানগাছ উৎসমুখ। পুকুরের পাড়ে গাছগুলোর উপর ঝাঁকে ঝাঁকে বাতাস উড়ে আসে, প্রতিটি বাতাসের কাছে আরো সব গাছেদের খবর, সে খবর শুনেই বুঝি গাছগুলো উচ্ছ্বসিত হয়ে তাদের নিজেদের খবর দিতে থাকে ডালপালা নাড়িয়ে, জোছনায় প্রলম্বিত ছায়া পড়ে সে নড়াচড়ার; পুকুরের জলেও বুঝি আরো সব জলের খবর চলে আসে, জলগুলো উৎফুল্ল ঢেউ কাটে, পাড় থাকে স্থির!
ছল করে কি যায়রে ভালোবাসা, ছল করে কি ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ!
ছল করে কি বেঁচে থাকে ছল-কপালে কেউ!
ছল করে কি যায়রে বলা কথা, ছল করেই কি বাঁচি
আছি, আছি সত্যের কাছাকাছি!
আমরা আমতলীতে ভাই ভাই হোটেলে পৌঁছাই এগারোটা নয় মিনিটে। হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখি টেবিলে ভাত এর সাথে পোমা মাছ ভাজি আর কোরাল মাছের তরকারী রাখা, পাশে এক প্লেটে কাঁচামরিচ মাখানো টমেটোর সালাদ। সালাদের প্রতি আমার দুর্বলতা মোটামুটি অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে। আমরা জাহাঙ্গীরনগরে থাকতে ১৯৯৬ সালের দিকে এক শীতের সকালে নাস্তার সাথে টমেটোর সালাদের চর্চা শুরু করি ডেইরি ফার্ম গেটের সামসু ভাইয়ের হোটেলে, সে টমেটো একদিন ডিম ভাজির সাথেও ঢুকে যেয়ে তার নামকরণ হয়ে যায় ‘লণ্ডভণ্ড’; আহা, সেই লণ্ডভণ্ড নিয়ে কত স্মৃতি!
মোহন এগিয়ে এসে আরেকটা প্লেট এগিয়ে দেয়, তাতে শুকনো মরিচ-পেঁয়াজ মাখানো, আমি খুব বেছে খানিকটা পেয়াজ উঠিয়ে নিয়ে জানতে চাই, ‘বোম্বাই মরিচ নাই?’, মোহন হেসে একদিকে দেখিয়ে দেয়। এরা কি করে মনে রাখে এতসব! অজানা একটা ভালোলাগায় মন ভরে যায়, বোম্বাই মরিচে কামড় দিয়ে আমি পোমামাছের সাথে ভাত খেতে শুরু করি...
চাইলেই হয়ে যায় দেখেছি
জানতে চাইতে পারো কত কি পেয়েছি
যদি বলি চাইনি কিছুই তবু যাকিছু হয়েছে পাওয়া
তার হিসেবের খাতা তুমি রেখে দাও, আমার চিরল বিরল চাওয়া!
মন্তব্য
মনটা খারাপ হয়ে গেল পড়ে। আহ কি সব দিন
লেখা সেইরকম দারুন হইছে।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আপনে মিয়া শুধুমাত্র মন্তব্য কইরাই হাচল হয়া গেলেন, তাড়াতাড়ি লেখা দেন নাইলে খবর আছে
বহুদিন পর দেখলাম মনে হলো আপনাকে, আছেন কেমন?
বিনিময়মূল্য পরিশোধ না করে ফ্রি সার্ভিস গ্রহণের যে কালচার রয়েছে অনেকের মাঝে, তাকে
অসাধারণ! আধাঁর আমারও খুব প্রিয়। আর কোথাও হারিকেন দেখলেই হারিয়ে যাওয়া শৈশব তীব্র ঝাকুনি দিয়ে ফিরে আসে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই :-)। ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা।
দারুণ !
facebook
গুড় সবসময়ই দারুণ, বিশেষ করে খেজুরের গুড়
চমৎকার লেখনি ... আটপৌরে, দ্যোতনাহীন, ব্যন্জনাবহুল ।
অনেক ধন্যবাদ ভাই
দারুণ। ,কুয়াকাটা গিয়েছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে এবং যথারীতি যায়গাটা আমার খুব বেশী ভাল লেগেছে।আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন একদমই কোন ভিসিটর ছিল না। পুরো বিচ টাই আমার ছিল। অসাধারণ অনুভূতি। কক্সবাজারে ভিড় খুব বেশী থাকে
-- একদম ঠিক কথা, কুয়াকাটা গেলে এটাই মনে হয়।
ভালো থাকবেন ভাই, শুভেচ্ছা
বড়ই রোমান্টিক
রোমান্টিক মুডে ছিলেন মনে হয় আপনি
কি লিখব বুঝতে পারছি না। কতটা হিংসে করব তাও বুঝতে পারছি না। সবটাই চোখে ভাসছে, ভীষণ...
কিন্তু বড্ড তাড়াতড়ি শেষ হয়ে গেলো তানিম ভাই, বিশ্বাস করেন পড়তে পড়তে হঠাত নীচে এসে দেখি শেষ। আরও পড়তে চাইছিলাম যে...
অনেক শুভেচ্ছা।
ডাকঘর | ছবিঘর
এটা প্রথম পর্ব, মাত্র আমতলীতে ভাত খেতে বসেছি, কুয়াকাটা এখনো দুইঘন্টা পথ বাকি
তাইতো বলি পড়তে না পড়তেই শেষ! পরের পর্বের অপেক্ষায়----
আচ্ছা
খুব ভালো লাগলো, বিশেষ করে খাবারের বর্ণনাটুকু।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
তারমানে আপনারও বোম্বাই মরিচ পছন্দ ভালো থাকবেন ভাই, শুভেচ্ছা :-
মোটরবাইক চালানোর শখ আমার আজন্ম। কিন্তু এই শ্যালক দৌহিত্রের সাথে সখ্যতা ঠিক জমে ওঠে নাই এখনতরি। শুরুতে ঝাঁ চকচকে মোটর বাইক নিয়ে খালে পড়ে যাওয়ার পর জারী হওয়া ১৪৪ ধারার সাথে কানে ধরেছিলাম। তারপর থেকে স্টার্টারে কিক মেরেছি হাতে গুনে দুইবার। আপনার চান্নিপসর রাতের মোটরবাইক ভ্রমনের বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে আরেকবার হলেও কিক মারতে হবে, যা আছে কপালে!
গাড়িতে করে, হেডলাইট নিভিয়ে পাহাড়ি এলাকায় কিংবা বনে-বাঁদাড়ের ভেতর দিয়ে কিংবা একপাশে শান্ত-নিবিড় মহাসমুদ্র রেখে কিংবা হোয়াটএভার অবস্থায় জোছনা রাতের ভ্রমনের অভিজ্ঞতার কথা লিখলে মন্তব্যে কিছু যোগ করার উপাদান পেতাম আমি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মোটরবাইক আমিও চালাতে পারিনা আপনিতো খালে পড়েছিলেন, আমার ঘটনা আরো করুণ, থাক সে কথা। গাড়ীতে করে হেডলাইট নিভিয়ে চলার বিষয়টা অন্যরকম আনন্দ, আশা করছি একদিন আমাদের শোনাবেন সে ঘটনা।
ভালো থাকবেন, আমার পোস্টে আপনার প্রথম মন্তব্য, খুশী হলাম খুব
বেরসিকের মতো একটা কথা বলি। হেডলাইট নিভিয়ে গাড়ি হোক আর মোটরসাইকেল হোক কোনটা চালানোই সমর্থনযোগ্য নয়। পথিমধ্যে আপনার জনপদ পার হয়েছেন, বাজার পার হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সবার সৌভাগ্য যে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদি ঘটতো তাহলে তার দায় কে নিতো? কোন পথচারী গুরুতর আহত হলে তার গোটা জীবন থেকেই তো জ্যোৎস্না বিদায় নিতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত।
ভুল বুঝবেননা ভাই, এইসব খেয়াল করার বেলায় বন্ধুমহলে ‘বেশি বেশি’ নিয়মের কথা বলি বলেও একটা বদনাম আছে আমার। লেখা ঠিক করে দিয়েছি।
ভালো থাকবেন, তবুও মন্তব্য করলেন আমার লেখায়, এটাই আনন্দ দিলো বেশিরকম
পান্ডবদা, আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হল হেডলাইট নেভানোর কথা বলে আবার জ্বালানোর কথা কোথাও বলা হয়নি, ভুল বোঝার অবকাশ থেকেই গেছে। একদম প্রথমে যেভাবে অনুরোধ করেছিলাম, শুধুমাত্র সেভাবেই, যেখানে যেখানে সম্ভব শুধুমাত্র সেখানেই আমরা হেডলাইট নেভানোর চেষ্টা করেছি। আপনার মন্তব্যের সূত্র ধরে লেখাটা ঠিক করে নিলাম।
সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।
আপনার একান্তই হেডলাইট নেভানোর শখ হলে দয়া করে পায়ে হেঁটে চলাচল করেন। আপনি মনে হয় এখনও উপলব্ধি করতে পারছেন না পথের বাকীদের জন্য আপনি কতখানি ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক। যেখানে সম্ভব সেখানে হেডলাইট নেভানোর মানেটা কী?
ভাই, এই রাস্তাটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ এমনকি দিনের বেলাতেও নির্জন থাকে। আমি কোনভাবেই নিজেকে বিপদজনক মনে করছিনা, আমি নিজের কাছে প্রতিটি কাজে স্পষ্ট থাকতে চেষ্টা করা একজন মানুষ। গতরাতে চক্রবর্তী মশাই এর সাথে দেখা হল, তিনি পুরোটা সময় বাইক চালিয়েছেন, তাকে কোনকিছুই বলিনি, এমনি জানতে চাইলে তিনি বললেন পাঁচ ঘণ্টার এই যাত্রাপথে সর্বোচ্চ ৫ বার তিনি হেডলাইট নিভিয়েছিলেন।
যেখানে যেখানে সম্ভব মানে যেখানে যেখানে নিজেদের এবং অন্যদের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলোনা। আপনি এই একটি লেখার সূত্রে একদম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে বলে দিয়েছেন যে আমি পথচলতি মানুষের জন্য বিপদজনক, এটা আমাকে অবাক করলো। পাশাপাশি মনে হল আপনি নিজেই অন্য মানুষের প্রতি দায়িত্ব সচেতনতার বেলায় সিরিয়াস, এটা ভালো লাগলো। তবে আপনি আমার ব্যাখ্যা কতটা মেনে নেবেন তাই নিয়ে একটা কৌতূহল কাজ করছে ভেতরে।
আপনার জন্য শুভকামনা
দুঃখিত তানিম ভাই। আমার মন্তব্য এখন আরেকবার পড়ে দেখলাম বেশ রুঢ় শোনাচ্ছে। আসলে খুব কাছের এক বন্ধুকে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়েছি। এ কারণে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। আসলে দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসেনা। আপনি পথের যে অংশকে নির্জন মনে করছেন, সেখানে কোন কারণে কোন সময়ে মানুষ আসতেই পারে। মানুষা নে এসে গরু ছাগল আসতে পারে। অনেক কিছুই হতে পারে। আমার মনে হয় না সড়ক দুর্ঘটনা কেউ ইচ্ছে করে ঘটায়। সবাই আসলে মনে করে আমি "নিরাপদে" এবং নিজের আয়ত্বের মধ্যেই গাড়ি চালাচ্ছি কিন্তু দুর্ঘটনা যখন আসে তখন তা আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। আমি আশা করব আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে হেডলাইট নিভিয়ে চালানো নিরুৎসাহিত করবেন। শুধু নিজের ক্ষেত্রে না অন্যদের ক্ষেত্রেও।
আরে, দিনের বেলায় প্রতিমন্তব্য করলাম সেটা গেলো কই! সাফি ভাই, আপনার মন্তব্য পড়েই মন ভালো হয়ে গিয়েছিলো। সেই মন ভালো লাগাটা এখন আবার বাড়লো
মনে পড়লো লিখেছিলাম -- হেডলাইট জ্বালানোই থাকবে, মস্তিষ্কে আলো না জ্বললে মানুষের আর বাকি থাকে কি!
লেখা হিসেবে এই লেখাটা ভীষণ ভীষণ সুন্দর। প্রায় কবিতার মত সুন্দর। কিন্ত পান্ডবদার সাথে আমিও একমত। কাব্যের স্বার্থে এইরকম রিস্ক নেয়া অনুচিত।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
কাব্যের স্বার্থে রিস্ক
লেখা ঠিক করে দিয়েছি। প্রিয় ব্লগারের মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম
আপনার ভ্রমণের কাহিনী অনেক অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। সেই হারিকেন, হ্যাজাক লন্ঠন, আহা সে কতকাল আগের কথা। এই কাঠ-পাথরের শহরে বসে মনটা বড়ই উদাস হয়ে পড়লো। আমাকে নেবেন ভাই সাথে!
চলে আসেন
হুমমম
চাইলেই হয়ে যায় দেখেছি, জানতে চাইতে পারো কত কি পেয়েছি, যদি বলি চাইনি কিছুই তবু যাকিছু হয়েছে পাওয়া তার হিসেবের খাতা তুমি রেখে দাও, আমার চিরল বিরল চাওয়া!
আপনারও নাকি! আসেন
তানিম ভাই, ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে অপেক্ষা করছিলাম কিছু একটা লেখা আসছে ।.।.।. আমারও এই অভিজ্ঞতা আছে ঢাকা থেকে বরিশাল তারপর সন্ধ্যায় কুয়াকাটা
পূর্ণিমার রাতে হেড লাইট নিভিয়ে চলার আনন্দ তারা বুঝবেনা যারা কখনই চলেনই। চাঁদ এর আলোর তিব্রতার কাছে ক্রিত্তিম আলো খুবই কুৎসিত ।.।.।. এবং এটা মটেও ঝুঁকিপূর্ণ না।
ভাল থেকো --- শিপলু
শিপলু!!
কোন খবর নাই কেন? পোলাপান আছে কেমন সব? ফোন দিবোনে।
কইসে আপনাকে। হেডলাইট শুধুমাত্র গাড়ির চালককে রাস্তা দেখায় না, পথিক বা অন্যান্য গাড়ির চালকের কাছে নিজেকে দৃশ্যমানও করে তোলে। এরকম অর্বাচীন চিন্তাভাবনা দেখে ব্যাঙের কুয়োতে ঢিল ছুড়ে আনন্দরত বাচ্চাগুলোর কথা মনে পড়ল।
নরওয়েতে দেখেছি দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক।
"
" সূত্র।
হারিকেন , কুপি (বিষাদময় সৃতি জাগানিয়া) আহারে ছেলেবেলা ,
""কাঁচা মরিচ মাখানো টমেটো!
পোড়া মরিচ!!
আবার বম্বে মরিচ!!!!(আমাকে দিলেন্না ?) অভিশাপ দিলাম , পেট ভাল থাক ""
শেষের চারটি লাইন ,অসাধারন ।
আর পুরা পোষ্টে হিংসা
পেট ভালো থাকার অভিশাপ!! হাহাহাহাহা, ভালো লাগলো। আপনি ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা
ঘুরতে যামু
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
চলে আসেন, আপনার জন্য আমি নিজে সব ব্যবস্থা করে দেবো। আমাকে শুধু একটু আগে থেকে জানাবেন।
অসাধারণ কাব্যগন্ধী লেখা। লেখার বর্ননা ভালো লেগেছে তানিম ভাই।
কুয়াকাটা যাবার জন্য ভীষণ অপেক্ষা নিয়ে আছি।
পাণ্ডব দার সাথে অফ টপিকে বলি- হেড লাইট নিভিয়ে মোটর সাইকেল চালানো শুধু নিজের জন্য না, অন্যের জন্যও সমান বিপদজনক। একটা গল্প মনে পড়ল। এক অন্ধ সাঁঝের বেলায় লাঠি ঠুকে ঠুকে বাড়ি ফিরছিল। হাতে লণ্ঠন। অন্ধের হাতে লণ্ঠন দেখে একজন খুব উপহাসের সুরে বলল, ভাই, লণ্ঠনের আলো দিয়ে আপনি কি দেখছেন?
অন্ধ লোকটি বলল- আরে বুদ্ধু, লণ্ঠনের আলো আমার দেখার জন্য না। এই আলো দেখে তোমার মত চক্ষুষ্মান অন্ধ বুদ্ধুরা যাতে আমার গায়ে এসে না পড়ে, তাই বয়ে বেড়াচ্ছি।
-------------------
রাতে এমনকি গাড়ির দুটো হেডলাইটের বদলে একটা জ্বললেও বিপরীত দিকের গাড়িচালকদের ভীষণ অসুবিধা হয়। দিনে রাতে মহাসড়কে প্রচুর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, গাড়ির লাইটের ডিপার না জ্বালালেও ক্রসিং -এর সময় অসুবিধা হয়।
পথ চলার নিয়মগুলো নিজের নিরাপত্তা ছাড়াও অন্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করার জন্যও সমান প্রয়োজনীয়।
ধন্যবাদ।
----------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ
কেন যেন বারবার ডিফেন্স করছি, করতে ইচ্ছে করছে। আমি এই কাজটা এই প্রথম করলাম, এর আগে কোনদিনই করিনি। কারণ হচ্ছে রাস্তা, এই রাস্তা দিয়ে আমি খুব বেশি যাতায়াত করি কাজের প্রয়োজনে, এটি দিনের বেলাতেও এক তৃতীয়াংশ জায়গায় প্রতিবার পুরোপুরি নির্জন থাকতে দেখেছি। তবু, সব ডিফেন্সের পরেও পান্ডবদার কথা নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, বহুদিন কোন লেখা পাইনা আপনার কাছ থেকে; ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা
এত সহজ করে দৃশ্যাবলী তৈরী করা সত্যি কঠিন
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
রিশাদ ময়ূখ, ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। বেড়াতে চলে আসেন অবসরে
কাব্যময় ভাষায় রোমান্টিক অনুভূতির অপূর্ব অভিব্যক্তি! দারুন লাগল। এই অনুভূতিগুলি আমারও হয় বিভিন্ন সময় ঘুরতে গিয়ে, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করার শক্তি নাই। ঈর্ষা! ঈর্ষা!
ও হ্যাঁ, আপনি যেভানে 'বোম্বাই' মরিচে (এটাকে 'নাগা' বা 'কামরাঙা' বললেই বোধহয় ঠিক হয়) রীতিমত 'কামড়' দিলেন তাতে আমি শিহরিত। আমি স্রেফ প্লেটের সাথে একটু ঘষা দিয়েই ভাত খেয়ে নিই। তাতেই হু-হা! আপনি শিওর আপনি আসলি চীজ কামড়িয়েছেন?
****************************************
খাওয়ার সময় কিংবা এমনিতেই চিজ পেলে বর্তেযাই, ব্যাপক পছন্দ। আমার সব পছন্দ, টক-ঝাল-মিষ্টি-পানীয়, সব।
আজকাল মরিচে ঝাল কই! সব হাইব্রিড হয়ে গেছে, হাইব্রিড খেতে পারিনা, কোনরকম হাইব্রিডই হজম হয়না :-)। বরিশালের লোকেরা বলে বোম্বাই মরিচ, সিলেটে বলে নাগামরিচ আর কামরাঙা বলেন হারিয়ে যাওয়া একজন “.... সন্ন্যাসী”, ওনার বই বেরিয়েছে ‘কামরাঙা ছড়া’ নামে, কিনেছেন? (এই মানুষটার সাথে দেখা করার খুব শখ)
আপনার মিশরের ব্লগ গুলো পড়ি, কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা। যেসব জায়গায় যাব বলে ঠিক করে রেখেছি সেসব বর্ণনা আত্মস্থ করতে ইচ্ছে করেনা, যাবার সময় একদম নিরপেক্ষ থাকতে চাই নিজের কাছে। তবে লিংকানো আছে। আপনি এতদিন পরপর লিখেন কেন ভাই?
ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা আপনার মন্তব্য, উৎসাহ পেয়ে আমার ভালো লাগছে
"ঘর-বাড়ী-গাছ-পুকুর সব মনে হয় ফিকে-দুধরঙ একটা ফিনফিনে আলোয়ানে মোড়া, সে আলোয়ানে কোন জড়তা নেই, চাকচিক্য নেই, নেই কোন আহামরি অভিলাষ; শুধু আবছায়া! পুকুরে নিকটবর্তী গাছের ঝিমঝিম ছায়া, সে ছায়ার ভেতর আরো আলো আরো ছায়া, আলো-ছায়া ঘিরে ফেলে বসে থাকা একচিলতে প্রায় অন্ধকারের আঁকিবুঁকি, সে আঁকিবুঁকির ভেতর কোন এক চিত্রকরের সবটুকু রহস্যময়তা --- ক্লান্ত চোখের ভেতর একটা ক্যানভাস আড়মোড়া ভাঙতে থাকে, ভাঙতেই থাকে..."
অসাধারণ, কবি, চমৎকার বর্ণনা। মনে হলো তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আমিও আপনার পিছনে বসে আছি.............আহা!!
_____________________
Give Her Freedom!
কবি মৃত্যুময় ঈষৎ, কেমন আছে হে বালক!
কবি নই --- পাখা নেই, তবুও প্রাণপণ চেষ্টা একটি পালক
যদি খুব করে জুটে যেত একদিন যাপিত জীবনে!
কবি নই।
তুমি কবিতায় থেকে যেও
মনে হল এমন একটা জার্নি যদি আমি ও করতে পারতাম, আপনাকে মেলা হিংসা হচ্ছে।
আবার পড়লাম লেখাটা। এবার কুয়াকাটা ঘুরে এসে।রাস্তাটা খুবই নির্জন মাঝে মাঝে ছুটে চলা মটর বাইক কিংবা বাস ব্যতীত।
ভালো থেকো।
মুখোমুখি বসে শুনবো কুয়াকাটা কেমন লাগলো। তোমার জন্য সবসময় শুভকামনা।
নতুন মন্তব্য করুন