তখন আমি বৃষ্টি কুড়াই আমের বনে; ফুল-বাগানের হীরেমানিক, ঘুমিয়ে থাকি আঁচলদিঘীর নিদ্রাকুসুম জলে --- চাঁদকপালে কাজলরেখা টিপ মানে তাই বালাই-বালাই-ষাট! কৌতূহলী ভোরের ডাকে কিচিরমিচির স্তব্ধতাকে জাগিয়ে তুলি, মাকে বলি, ‘খিদে পেলে ছেলে বুঝি ডাহুক ডাকে মা!’ তখন আমার জনান্তিকে ইচ্ছে নামের সুতোয় বোনা নানামুখী তৎপরতা, আর বারতা পরাগ বুকে প্রবহমান উচ্ছ্বসিত বেনীআ--সহকলা!
তখন আমার উপচে পড়া সুখ ছিলও তাই দু:খ ছিলো খুব!
দুই.
নিয়ম মানা ছুটির দিনে কুউঝিকঝিক বাড়ী ফেরা, বাড়ী মানেই বন্ধু-প্রতিম ছোট চাচা, আমায় ডাকেন ‘ভাতিজ্’! দুই বন্ধুতে একটা পথেই হেঁটে যাওয়ার যাত্রা শুরুর প্রথমদিকে খোলা বাড়ী, মৎস্য-দীঘি, তার ওপারে আউল-বাউল-নামা-ক্ষেতে আধেক বছর জলবিধৌত হাওর-বাঁওড়।
পিঠে-পুলি পিঠে-পুলি! মেলায় কেনা হাওয়াই মিঠাই, মুড়কি-মুড়ি-খই
কষ্ট যত কাব্যে আছে, ঘুমভাঙানি গদ্য আছে, ঘুমপাড়ানি পদ্য মেলে কই...
তিন.
হুট-দুপুরে বাঁওড় ছেড়ে আরও দূরে তিলোত্তমা সময় শেষে হটাত দেখি মেঘ করেছে গহন কালো, শীতল হাওয়া আরও শীতল বয়ে গেলে চাচা বলেন, ‘ওহে ভাতিজ্, ওই দেখা যায় বৃষ্টি আসে, দৌড় দিয়ে যাই, কে কার আগে চি-বুড়ি ছুঁই বসতবাড়ি---’
দৌড় দৌড় দৌড়, এলো বুঝি অই, রিমিঝিমি ধিমিধিমি বৃষ্টি
পাছে ভিজে যাই, ঠাণ্ডা লাগাই -- মায়ের বকুনি কি যে মিষ্টি!
চার.
হাসতে হলে বাসতে যে হয় ভালো! কল্লোলিনী ঝর্ণার মত হাসতে হাসতে, দৌড়ুতে দৌড়ুতে আজ-অবধি-দীঘি’টার মাঝামাঝি আসতেই বৃষ্টির প্রবল ঝাপটা আমাদের অতিক্রম করে গেলো... দিঘী’র সোমত্ত জলে ঝুপঝুপ ঝুপঝুপ, জলগুলো সব ফোঁটায় ফোঁটায় বিভক্ত হয়ে যেন একটাই তাল আর লয় মেনে ফুটতে শুরু করলো স্ফটিক-স্বচ্ছ ফুলের মত! এমনও কি নাচ হয়! এমনও কি হতে পারে স--ব জড়তা ভাঙা গান!
পাঁচ.
শীতল হতে পারে আমাদের শরীর, হৃদয় নয়! হৃদয় বলে নিরাকার কোন কিছু আমাদের এতোটা ব্যপিত রাখে বলে সেখানে নিরঙ্কুশ আবেগের আধিপত্য, সহজাত... হাসতে হলে বুকের ভেতর উথলপাথল বিষাদ বোঝা চাই! আমরা চাচা-ভাতিজা একটা সময় পৃথিবীর সব জলাক্রান্ত বোধের আগল ছুঁয়ে কি করে যেন বৃষ্টির চাইতেও বেশি করে বৃষ্টি হতে হতে জেনে গেলাম সবার সাথে দু:খ ভাগাভাগি চলেনা!
ছয়.
এখন আমার দু:খ নেই, প্রতিস্থাপিত! বোধজাত সবটুকু অস্তিত্ব নিয়ে এখন আমি শিখিয়ে দেয়া সব অভিনয় শিখে গেছি বলেই বোধহয় বৃষ্টি হলে স্বার্থ-বিহীন অর্থে কেনা সব প্রকরণ বাঁচিয়ে রেখে ভিজতে ভীষণ ভয়! আর কিছু নয়, শুধু একদিন বৃষ্টির সাথে খুউ-উব অভিনয় করে পাল্লা দিয়ে পালাতে পালাতে বড্ড সাধ করে হেরে যেতে চাই...
সাত.
আমিও বৃষ্টি নই, তুমি নও জলধিবিশেষ!
আমাদের বেঁচে থাকা অবশেষ
সবটুকু দুর্নিবার সাধ নিয়ে বারবার ফিরে আসা হয়;
যেমন আসেনা ফিরে যা-কিছু চাই অথচ চাইবার নয়!
মানুষের মৃত্যু হয়, রহস্যে বেঁচে থাকে পরিগণিত কথক;
তুমি আর আমি তবু বিচ্যুত নই, মানুষ হিসেবে অনন্য, পৃথক...
মন্তব্য
(গুড়)
শিরোনামটা অন্যরকম একটা আশা তৈরি করেছিল মনে, পড়ে মনে হলো আশা পূরণ হয়েছে।
সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে শেষেরটি। কী অসাধারন প্রকাশ!
"তুমি আর আমি তবু বিচ্যুত নই, মানুষ হিসেবে অনন্য, পৃথক"
আপনাকে চুপি চুপি বলি, এই অধম আপনার এই বৃষ্টি গদ্য-পদ্যের প্রেমে পড়ে গেছে ।
আমার এইসব খুব সাধারণ ছাপোষা লেখার একজন ভক্ত পেয়ে গেলাম! কি অদ্ভুত!
আপনার জীবন সুন্দর হোক। অশেষ কৃতজ্ঞতা.........
'আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি এঁকেছি...... ' ...... উচ্ছ্বাস, সরলতা, স্রোত, জীবন কেমন যেন একটা জট মনে হয়। হয়তো নীরবতার কথকতায় একটা যতিচিহ্ন এঁকে দিতে পারলে ভালো হত। বড্ড ক্লান্ত লাগে আজকাল......
''মন খারাপ করা বিকেল মানেই মেঘ করেছে, দূরে কোথাও দু'এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে।''
বদ্দা আপনের জন্য এত্তডি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
ডাকঘর | ছবিঘর
এই বয়সে এত ক্লান্তি কিসের? এই ছেলেটা কেবল ক্লান্ত হতে শিখে গেছে দেখছি, ঘুরে আসুন
বৃষ্টির জন্য হাহাকার দিনে এরকম বৃষ্টিমূখর লেখা খুব উপাদেয় পেলাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
লেখাটা নিজেই আবার পড়লাম, এখন আবার নতুন করে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে!
তখন আমি বৃষ্টি কুড়াই আমের বনে - এই লাইনটা পড়েই তো মন ভালো হয়ে গেলো।
ভাল্লাগলো অনেক।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আচ্ছা
চমৎকার উপলব্ধি।
খুব বেশী ছুয়ে গেল লাইনগুলো ।
অনেক ধন্যবাদ। নতুন লেখা কোথায়?
(Y)
পথিক পরাণ
ঠিক বলেছেন
(গুড়)
facebook
এই গুড় আমার ভালো লাগেনা, আমার ভালো লাগে ঝোলাগুড়, সাথে পাউরুটি! কার কথা যেন মনে পড়ে গেল হে প্রিয় উড়ন্ত ঘুড়ি
বেশি ভাল- বেশি ভাল---
কড়িকাঠুরে
ভাই, কড়িকাঠুরে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
চমৎকার!!
ধন্যবাদ বুনোফুল!
কী অসাধারন সব লাইন, কোনটা রেখে কোনটা বল্বো।
একটাও বলার দরকার নাই
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাই নজরুল ইসলাম, আপনার জন্য
ভারি ভালো লাগলো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন