ততদিনে ২৪তম ব্যাচ ভর্তি হয়েছে জাবি ক্যাম্পাসে, এরা ভর্তি হয়েই ক্যাম্পাসটাকে একেবারে বদলে দিলো, মনে-ই হলোনা যে এরা কেউ কাউকে আগে থেকে চেনে-না। নতুন করে গঠন হলো মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড, কিন্তু এসব ছাপিয়ে ক্যাম্পাস ভরে উঠলো তারুণ্যে আর স্পর্ধায়। (আমার খুব-ই প্রিয় আরেকটা ব্যাচ ছিলো ২০তম ব্যাচ, দারুণ দারুণ সব বড়ভাই বড়বোন- বন্ধু।) ১৯তম ব্যাচ তাদের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছে, ১৮তম ব্যাচের র্যাগ শেষ। পহেলা জুলাই সুবেহসাদিকের আগে ভিজে বেড়ালের মত গায়ের চাদর খুলে যখন শিবির ক্যাম্পাস দখল করলো তখন জাবি ক্যাম্পাসে ঘুম...
দখল করা হলো সবগুলো হল, ঘড়ির কাঁটা ধরে হলের গেটের দরোজা খুললো, কোন কোন রুম থেকে বেরিয়ে এলো নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ছেলে-মেয়েরা, নির্দিষ্ট রুমে রুমে দরোজা নক করা হলো, বাইরে থেকে আটকে দেয়া শুরু হলো প্রায় সব রুমের দরোজা। গতবারের শিক্ষা মেনে মেয়েদের হলগুলো সহ দখল করা হলো সবগুলো হল, শুধুমাত্র আমাদের মীর মশাররফ হোসেন হল (এম এইচ) দখল করা হলোনা (এমএইচ হল মূল ক্যাম্পাস থেকে দূরে)। বাইরে থেকে আরও একটা দল এসেছিলো, সবারই বয়স ১৮-২৫ এর মধ্যে, এদের একটা বড় অংশ বহিরাগত, তাদের নেতৃত্ব দিয়ে নিযে এলো ১৯৯৫ সালে বেরিয়ে যাওয়াদের ভেতর থেকে ১৯ জন। সবারই নিজ নিজ চেতনা থাকে, রাতের আঁধারে এসব বিচিত্র কাণ্ডকারখানা দেখে ফেললো কেউ কেউ, চুপিচুপি তথ্য বিনিময় হলো, কোন কোন হলের কর্মচারীরাও এক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা পালন করলেন। বিভিন্ন হল থেকে বিভিন্নভাবে খবর পেয়ে হল ছেড়ে বেরিয়ে এলো ছেলেরা। হল থেকে পালিয়ে এসে ২৪তম ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ডের সহযোদ্ধারা যখন আমাকে ঘুম থেকে উঠালো ততক্ষণে এমএইচ হলে চলে এসেছে আরও মানুষ, জাগিয়েছে আরও কিছু মানুষকে।
আমরা বেরুলাম হল ছেড়ে, ভোরের আলোয় নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই, প্রায় ২০-২৫জন মানুষ এক সময় হাঁটতে হাঁটতে শহীদ হাবিবুর রহমান কবির সরণীতে আসতেই দীর্ঘ বাঁধা, সামনে রোবটের মত কিছু মানুষ, যন্ত্রের মত নড়েচড়ে, হাতে অস্ত্র, নানান-রকম করে বাঁশি বাজে, সেই বাঁশির আওয়াজে আওয়াজে বদলে যায় তাদের নড়াচড়া। বই-এ পড়া গল্পের মত মনে হয়না তখন আর। আরও লোকজন আসতো লাগলো ছোট ছোট, বড় বড় দলে দলে। আমরা ঢিল ছুঁড়ি, তারা গুলি করার ভয় দেখায়, অস্ত্র হাতে সামনে আগায়, আমরা পেছুই... একসময় কিভাবে কিভাবে যেন পৌঁছে যাই রেজিস্টার বিল্ডিং এর সামনে, তারপর মাঝামাঝি, দু’দিকে শিবির, মাথার উপর দিয়ে গুলি করেছিলো বেশ ক’বার, আমরা পিছু হটে যেয়ে আবার ইট হাতে মুখোমুখি হয়েছি। এভাবে চলতে থাকলো...
জাবি’তে উদ্বোধন হওয়ার বহু পরে সবাই মিলে প্রশাসন’কে বাধ্য করা হয়েছিলো নতুন দুইটি ছাত্রী হলের নাম রাখতে। প্রাক্তন ৩ নাম্বার হলের নাম রাখা হয় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর নামে, ২২তম ব্যাচ এর ছাত্রী’দের দিয়ে শুরু হয় এর যাত্রা। আর ৪ নাম্বার হলের নাম রাখা হয় বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ২৪তম ব্যাচের ছাত্রী’রা সর্বপ্রথম সে হলে থাকতে শুরু করে। ছাত্রী হলগুলোতে ছাত্রী’রা প্রতিরোধ করতে করতে একসময় হল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হলো প্রবল তোড়ের মত। জাহানারা ইমাম হল এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হল, এই দুই হল থেকে ছাত্রী’রা বেরিয়ে আসে সর্বপ্রথম।
বহুদূর থেকে বহু মানুষের গলার আওয়াজ শুনছি, আওয়াজটা খুব কাছাকাছি আসতে দেখলাম চৌরঙ্গী মোড় থেকে একটা জনস্রোত আসছে, দৌড়ে। তারা কাছাকাছি আসতেই লাগলো, ট্রান্সপোর্ট পেরিয়ে রেজিস্টার বিল্ডিং, কাছাকাছি আসতেই দেখি কাউকে কারো কাছ থেকে আলাদা করা যাচ্ছেনা, কারো কারো চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে, কারো মুখে তীব্র স্লোগান, বাকিদের সম্মিলিত শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠলো পুরো এলাকা, তাঁরা সবাই স্লোগান দিতে দিতে একসাথে প্রবল স্রোতের মত ডিঙিয়ে গেলো শিবিরের প্রতিরোধ। আমাদের সময়ে জাবি’তে ছেলে-মেয়ে এইসব ভেদাভেদ ছিলোনা, এই এখনও বন্ধু বলতে ছেলে-মেয়ে, বড়-ছোট আলাদা করতে পারিনা আমরা। মেয়েদের এই চরম সাহসিকতায় আমরা ঘুরে দাঁড়ালাম, ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ নেই, সবাই সম্মিলিতভাবে মানুষ, বাঙালী, জাবি একটুকরো বাংলাদেশ!
শিবিরের সবকিছু আগের মতই, ছকে কাটা, মেয়েদের হল ভেঙে এইভাবে বেরিয়ে আসার বিষয়টা তাদের পরিকল্পনার অংশ ছিলোনা, একটা বড় গ্রুপ রেজিস্টার বিল্ডিং এর ভেতর আটকা পরে গেলো, তাদের পেছন দিকটা খোলা আর চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে গেলাম আমরা। আমি এখনও অবাক হই, ইটের পর ইট ছুটে গেছে তাদের দিকে, যাদের হাতে অস্ত্র তারা একবার-ও আমাদের কাউকে গুলি করেনি, এইবার-ও কাউকে না মেরে ক্যাম্পাস দখলের পরিকল্পনা ছিলো তাদের, কাউকে সরাসরি গুলি করেনি। শিবিরের একজনের হাতে ওয়াকিটকি, সে পেছনে একটা জায়গায় নিরাপদ দূরত্বে বসে আছে, সর্বক্ষণ কথা বলছে। একসময় বাঁশীর ভিন্নরকম আওয়াজ হলো, দেখলাম এরা সবাই দলে ভাগ হয়ে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত, যাবার সময় খুব সাবধানে ঝোলা থেকে বের করলো ককটেল, নামিয়ে রাখলো চলে যাবার পথ ধরে ধরে। আবাবিল বাহিনী বলে তাদের একটা রেসকিউ বাহিনী আছে সেটা সেবারই প্রথম জানতে পারি আমরা, সেই বাহিনী দাঁড়িয়ে ছিলো ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মাইক্রোবাস নিয়ে। আমরা ক’জন একদিক দিয়ে দৌড়ে পেছনে গেলাম, দেখলাম সবাই সাবলীলভাবে সাবলীলভাবে সাঁতরে পার হলো সামনের জলাশয়, তারপর চলে গেলো।
আমরা ঘুরলাম, কামালউদ্দীন হল থেকে বেরিয়ে আসা একটা গ্রুপের মুখোমুখি হলাম শহীদ হাবিবুর রহমান কবির সরণীর সামনে, প্রবল মানুষের চাপে এরা পেছাতে লাগলো মাথার উপর দিয়ে গুলি করতে করতে, আমাদের স্রোত তাদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে ফেললো মাওলানা ভাসানী হলের সামনে, তারপর একসময় তারা গেরুয়া গ্রাম এর কাঁচা রাস্তা ধরে চলে গেলো। এই সময় আমি আবিষ্কার করি প্রচুর ছেলে-মেয়ে আছে যারা ক্রান্তিকালে ঠিক-ই পথে নামে, পেছনে থাকেনা, কিন্তু এদের এমনিতে কোথাও কখনো উচ্চকিত হতে দেখা যায়-না। আমার এই ভুল ভেঙে যাওয়াটা খুব প্রয়োজন ছিলো, এর আগ পর্যন্ত এই ইস্যুতে সরাসরি কেউ অংশগ্রহণ না করলে তাকে খাটো করে দেখার একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছিলো আমার।
সব হলের ভেতর শিবির, আমরা এক সময় পেছন দিক দিয়ে ভাসানী আর কামালউদ্দীন হলের মাঝামাঝি জায়গায় চলে আসি । হলের ছাদে, বিভিন্ন রুম থেকে, বারান্দা থেকে অস্ত্র বের করে শিবিরের ছেলেরা, গালি দেয়, ভয় দেখায়, আমরা ঢিল মারি, পাল্টা গালি দেই, সেইসব গালি’র ইম্প্রোভাইজেশন হয়, আমরা হাসাহাসি করি। একসময় জানা যায় পুলিশ এসে ঢুকেছে ক্যাম্পাসে। হুট করে একজন একসময় পাইপ বেয়ে কামালউদ্দীন হলের দোতলায় চলে যেতে শুরু করলে তারসাথে আরও একজন যোগ দেয়, একটা সময়ের পর টের পাই আমরা কয়েকজন কামালউদ্দীন হলের দোতলায় দাঁড়িয়ে আছি, হল জুড়ে ছুটোছুটি, আমাদের দেখে চারজনের একটা দল আমাদের দিকে এগুতে থাকে, বেশ কয়েকবার বাঁশির আওয়াজ হলে তারা আবার ঘুরে নিচের দিকে নামতে থাকে দ্রুত, তারপর দেখি আরও কিছু ছেলে এভাবে করে গেস্ট রুমে জড়ো হলো, একজন বাইরে থেকে গেস্টরুমের দরোজা বন্ধ করে দিয়ে হারিয়ে গেলো। একটু পর হলের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকলো পুলিশ।
ততক্ষণে শিক্ষক’রা চলে এসেছেন, গেস্টরুমের দরোজা ভাঙা যাচ্ছেনা, বাইরে থেকেই ঢিল ছোড়া শুরু হলো। ভেতরে শিবিরের কেউ কেউ ভেঙে পড়ে, হাত জোর করে ক্ষমা চায়, কারো চোখে পলক পড়েনা, গায়ে ঢিল লাগলেও চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে। জামাতের কাওসার বলে এক শিক্ষক সেই ছেলেদের বাঁচাতে এসে এই সময় ভিড়ের ভেতর ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে আক্রান্ত হলো, তাকেও উদ্ধার করে নিয়ে গেলো পুলিশ। আরও বেশ কিছুক্ষণ পর আমাদের সরিয়ে দিয়ে গেস্টরুম ভেঙে একজন একজন করে শিবিরের ছেলেদের নিযে তোলা হলো গাড়ীতে। বহু খুঁজেও গেস্টরুমে তালা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ছেলেটাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না!
আরেকভাবে দেখলে সেবার সরাসরি আক্রমণে অংশ নিয়েছিলো চারটি দল, একদম নতুন ভর্তি হওয়া (২৪তম ব্যাচ) একটা দল, অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ফেলা একটা দল (১৯তম ব্যাচ, নতুন নতুন মুখ যাদের ১৯৯৫ সালে দেখা যায়নি, এদের কেউ কেউ ততদিনে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতা, কেউ খুব ভালো ছাত্র, শৃঙ্খলাপরায়ন বলে শিক্ষকদের কাছে-ও খুব প্রিয়)। এই দুই’টি গ্রুপের সাথে যোগ দেয় দু্ ১৯৯৫ সালে বেরিয়ে যাওয়া একটা দলের সদস্য’রা এবং মাদ্রাসা-সহ ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাঙ্গন থেকে আসা ছেলেরা। কিন্তু যতদূর মনে পড়ে মুল নেতৃত্বে ছিলো ১৯তম ব্যাচের হাতে। আমরা পরে জেনেছিলাম যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা গ্রুপ আনা হয়েছিলো এইবার। আরও জেনেছিলাম একবার শিবিরে ঢোকা মানে আমৃত্যু শিবির, খুব বেশি তথ্য নিয়ে শিবির থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় থাকেনা কারও, সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা আছে, বিয়ে থেকে শুরু করে পরিবারের যাবতীয় কেনাকাটা, হাসপাতাল, লন্ড্রি, চাকুরী, মায় মাজাব্যথার মালিশ -- সবকিছুই সাংগঠনিক। একদম নতুন ভর্তি হওয়া একটি দল আর অনার্স ফাইনাল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া এইসব ছেলেদের লেখাপড়া নিয়ে পরে জামাতের খুব বেশি চিন্তা করতে হয়নি বোধহয়, পরিকল্পনাটা করা-ই হয়েছিলো সবদিক বিবেচনা করে, ভাবা যায়!
বাংলাদেশের বামদল-গুলো চীন কিংবা রাশিয়ার সমাজতন্ত্র উত্থান থেকে কতটা শিক্ষা নিয়েছে আমি জানি-না কিন্তু শিবির নিয়েছে, একটা নিয়মের ভেতর দিয়ে নাকি সবাই-কে যেতে হয়, একটা ছেলে কিংবা মেয়ে শিবিরে ঢোকা মানে তার পরিবারের ভেতর জামাত সমর্থন কিংবা শিবির তৈরি করা তার দায়িত্বের ভেতর চলে আসে, প্রতিটি পরিবার’কে সবরকম সাহায্য দেয়ার নিশ্চয়তা থাকে, বাংলাদেশের প্রচুর সেক্টরের ব্যবসা বহুলাংশে জামাত-শিবিরের হাতে নিয়ন্ত্রিত। অধ্যাপক আবুল বারাকাত ‘মৌলবাদের অর্থনীতি’ নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন বহু আগে, পরিমার্জন, পরিবর্ধনের প্রচুর সুযোগ ছিলো কিন্তু তিনি আর এই নিয়ে কোনদিন কাজ করেন-নি, কেউ করেনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ভৌগলিক তাৎপর্য আছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণে যেতে হয়, পাশেই সাভার ক্যান্টনমেন্ট, আরও দূরে গাবতলি ব্রিজ, সেই ব্রিজের কাছাকাছি আমিনবাজারে এদের প্রবল পরাক্রম। যতদূর জানি, ১৯৭০ এর নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটে এই এলাকায়, বিষয়টির একেবারে ফেলনা নয়। লেজেহোমো এরশাদ আমলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দাপিয়ে বেড়িয়েছে তার দলের নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু ছেলে, এরশাদ পতনের সময় প্রবল বিক্ষোভে উত্তাল জাবি’তে সাভার ক্যান্টনমেন্ট থেকে আক্রমণ করেছে সেনাবাহিনী কিন্তু ক্যাম্পাস পুরোপুরি দখল করতে পারেনি, আমরা যখন পড়তে যাই তখনও তাদের ছোঁড়া গুলির চিন্হ রয়ে গেছে বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে, শিক্ষকদের মন থেকে মুছে যায়নি হামলার স্মৃতি, প্রাক্তন শিক্ষার্থী’রা এখনও বলেন সেই আক্রমণের বিভীষিকার কথা। ১৯৯২ সালেই জাকসু বন্ধ হয়ে যায়, একে একে সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বন্ধ হয়েছে, কমেছে সাংস্কৃতিক দলগুলোর সংখ্যা। সারা দেশেই খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কমেছে কিংবা কিছু হাতেগোনা লোকের হাতে বন্দী হয়ে গেছে। (আমরা ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ী বেড়াতে গেলে নাটক দেখতে যেতাম উপজেলার শিল্পকলা একাডেমীতে, সেখানে সবসময় প্রোগ্রাম হতো, দাদা’র রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সব ফুপু, মা-চাচী-খালা সহ গিয়েছি সিনেমা হলে, কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সিনেমার গান সবার মুখে মুখে ফিরতো; সারা বছর নানারকম খেলাধুলা হতেই থাকতো -- ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু এমনকি পাড়ায় পাড়ায় পাল্লা দিয়ে লাইব্রেরী তৈরি কিংবা নাটক হতে দেখেছি আমরাই। আমাদের ছেলেবেলায় প্রতিবছর ম্যাগাজিন বের হতো প্রচুর, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর মানে একটা ম্যাগাজিন বের না করতে পারলে মন খারাপ করে বসে থাকা, আমাদের বাসাগুলোতে উদার প্রশ্রয় ছিলো সেসবের, সেইসব ম্যাগাজিন বেড়াতে যেত দূরে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে। এই দেশটা থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনটা একেবারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।)
আমরা চোখে না দেখা পর্যন্ত সুনিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করিনা বহু কিছু। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারী’দের সংগ্রামের কথা পুরুষ’রা ঠিকভাবে লেখেনি, একটা বেহায়া লজ্জা আর আড়ষ্টতা আছে সব জায়গায়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব নারী’রা লিখেছেন তাদের লেখায় তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞাগুলো এসেছে। সামগ্রিকভাবে নারী’দের মনের সাহস আর শৌর্য আমি প্রথম দেখি জাবি’তে, পহেলা জুলাই ১৯৯৬ সালে, তারপর রেপিস্ট বিরোধী আন্দোলনে, ছেলেদের তোয়াক্কা করেনি তারা, নিজেরাই নেমে গেছে মাঠে, যেমন ছেলেদের-ও কারো কাছে নিজেদের প্রমাণ করার তাগিদ ছিলোনা, সবাই নিজ নিজ জায়গায় থেকে কাজ করে গেছে।
আমাদের পারস্পরিক সম্বোধন-গুলো কতটা আবেগ ধরে রাখে সেটা প্রমাণ করার দায় থাকে না কারুরই, সার্বিক আচরণে প্রকাশ পায়। আমাদের জাবি’র সময়টায় ভাই-বোন সম্পর্কগুলো মনে হতো ফোঁটা দিয়ে বরন করে নেয়া, সে সম্পর্ক এখনো নষ্ট হয়নি, কার্যত হতে-ও দেখিনা আমরা। যে-কারণে আমাদের সবার বাসায় সবার প্রবেশাধিকার থাকে, একজন সমস্যায় থাকা মানে বাকি’দের কিছুটা উচাটন ভাব থাকে, আবার কেউ কারুর কাছে দায়বদ্ধ নয় – বিষয়টা একদিনে তৈরি হয়নি, বিভিন্ন ঘটনার ভেতর দিয়ে তৈরি হয়েছে সেসব। বাইরের মানুষ অবাক হয়। আমরা যখন কারও সাথে সত্যিকারভাবে মিশি তখন বেদম মিশে যাই, জাবি’র বন্ধুত্বের সংজ্ঞা আমাদের সময় ছিলো খুব সরল। এই সম্পর্কগুলো যখন সমস্যার মুখামুখি হয় তখন-ই মনে হয় সবাই দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে শুরু করে, তৃতীয়বার সিদ্ধান্ত নেয়!
জাবি ছাত্রলীগের ভেতর যখন দুই গ্রুপ একেবারে মুখোমুখি হয়ে গেলো তখনও আমাদের কারুরই ধারণা ছিলো-না পরিণতি কতদূর গড়াতে পারে। একটা মারামারি থেকে এক গ্রুপ শহীদ সালাম-বরকত হল থেকে গিয়ে দখল করে ফেললো আরেক-গ্রুপের সামরিক রাজধানী কামালউদ্দিন হল, সব ঝকঝকে তকতকে, গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে কারণ কোন গ্রুপেরই কেউ আহত কিংবা নিহত হয়নি, কোনরকম বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ ছিলো বলে শুনেছি পরে। এমন সময় গুলির আওয়াজ, একটা সময় পরে দেখা গেলো পরাজিত গ্রুপের এক নেতা’কে পাওয়া গেছে তার রুমে, তার শরীরে ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে, সেই ছেলে মারা গেলো বেশ কিছুদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে। প্রাক্তন পরাজিত মহিবুল্লা গ্রুপ লাশের উপর ভর করে ফিরে এলো ক্যাম্পাসে, সামগ্রিকভাবে কায়েম হলো তাদের একছত্র আধিপত্য। জাবি একটা বাড়ীর মত ব্যাপার, আবাসিক, সবাই সবাইকে চেনে, মেয়েদের সাথে কোন খারাপ আচরণ করলে কঠোর সামাজিক শাস্তি ছিলো। মেয়েরা খোলামেলা মেশে সবার সাথে, সবারই নিজস্ব জগত আছে, সেখানে কেউ কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়-না যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা আর কারো জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এরমাঝে একদিন ছাত্রলীগের নামধারী ছেলেরা ছাত্র-শিক্ষক-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে পেটাল, রাতের বেলা সব হলে বেছে বেছে নির্মমভাবে মারা হলো ছেলেদের। ছাত্রলীগ নেতা আমার বন্ধু মোর্শেদসহ বাকিরা আমাকে জোর করে আরেক রুমে নিয়ে রাখলো, বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে চলে গেলো, এভাবে আরও কিছু মানুষ মার খাওযার হাত থেকে বেঁচে গেলো সে-রাতে সব হলেই (এটা সবসময় হতো, বন্ধুরা বাঁচিয়ে দিতো বন্ধুদের)। কোন বিচার হলোনা, তৎকালীন ভিসি আলাউদ্দিন আহমেদ হজম করে ফেললেন সব। এই গ্রুপেরই নেতা ছিলো মহিবুল্লা, আমাদের-ও বহু সিনিয়র’রা তাকে ভাই বলে ডাকে, তার বয়সের কোন গাছ-পাথর নেই, আজীবন ছাত্র। জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন হলো, বিভিন্ন সময় হল থেকে শিবির হিসেবে বের করে দেয়া ১৩জন ঠাঁই পেলো সে কমিটিতে। তারা তাদের শক্তি বাড়াতে ঢাকা থেকে ভাড়া করে নিয়ে এলো বহিরাগতদের। বড় হয়েছি ঢাকায়, সব জায়গায় যাতায়াত, বন্ধু ছিলো, ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার পর সেখানকার বন্ধুদের মাধ্যমে আরও জায়গায় বন্ধু তৈরি হয়েছে। এক সময় জানতে পারলাম বহিরাগতরা মূলত এসেছে পল্লবী আর পুরনো ঢাকার নওয়াবপুর রোড থেকে। একটা সময় আমরা টের পেতে লাগলাম বহিরাগতের চাপে সবজায়গায় বসা যায়না, তারা খেলা দেখতে যেয়ে নানারকম কমেন্ট করে মেয়েদের, প্রকাশ্যে মাদক গ্রহণ করে, কোথাও কোথাও প্রতিবাদ হলো কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের উদার প্রশ্রয়ে এরা বহাল তবিয়তে থেকে গেলো সেখানে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে হল নির্মাণসহ আরও বিল্ডিং তৈরির কাজ। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর রেপিস্ট-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, সেই ইতিহাস আমি এখানে বর্ণনা করতে যাবো-না।
আমার কাছে ক্ষেত্রবিশেষে দলের চাইতে ব্যক্তি বড় বলে মনে হয়, ব্যক্তিগত বিশ্বাসের সমষ্টি একটি দলগত পরিচয় নিয়ে দাঁড়াতে পারে। জাবি’তে দেখেছি ছাত্রদল-ছাত্রলীগ কিংবা বামপন্থী দলগুলোর সবাই একরকম নন, দলগত পরিচয়ের সূত্রধরে তারা সামগ্রিকভাবে পরিচিত হলেও নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি’র একটা ছাপ থাকে-ই সবার চলাচলে, মিথস্ক্রিয়ায়। যে কারণে, কোন মানুষটা টলটলায়মান তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হয়না শিবিরের কিংবা যে-কোন অপশক্তির। শিবির যখন নিজ থেকে প্রকাশ্য হতে পারেনা তখন ভিন্ন মানুষ দিয়ে তার উদ্দেশ্য হাসিল করে, যে-কোন কিছুতে যে-কোন উপায়ে তাদের হাতে ক্ষমতার মালিকানা থাকতে-ই হবে, তারা রাখে। এরা প্রতি বছর তাদের নিজস্ব ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে, দলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান থাকে সেখানে, নতুন নতুন ছেলে-মেয়ে রিক্রুট করা চলতে থাকে, সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়, তারা সে-সব পালন করে, কেউ কেউ হয়ে যায় ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতা। যে-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন-ই শুনি মারামারি’তে চাপাতি কিংবা ধারালো জিনিস খুব সুনিপূণভাবে করা হয়েছে, আমার তখন মনে হয় এটা একমাত্র শিবিরের পক্ষে সম্ভব। যখনই শুনি নির্যাতন ছিলো বিভৎসরকম পদ্ধতিগত, আমার তখন-ই মনে হয় এটা শিবির – আমার মানসিক রোগ আছে বলে মনে হতে পারে কিন্তু এই নিয়ে আমি গর্বিত।
প্রতিটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, এলাকায়, পাড়ায়-মহল্লায় আমরা জানি-না আমাদের মত কারা আছে কিন্তু জামাত-শিবিরের সবাই সবার সাথে সম্পর্কিত, একদম রসুনের কোয়া, এদের চলার পথে এদের লেজ এদের হেঁটে যাওয়ার সমস্ত পদচিহৃ মুছে ফেলে কিন্তু শ্বদন্ত আর নখরের ছাপ মুছতে পারেনা প্রচুর প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ড, খবরের কাগজের ক্লিপিংস কিংবা ভিডিও। পশুসম অপরাধী’দের আমি আপনি মাফ করে দিতে পারি কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের মাফ করতে পারেনা বলে সবসময় আতংকে থাকে কখন তাদের মূল রহস্য উন্মোচিত হয়ে যায়, এরা চক্রান্ত করতেই থাকে। আর আমরা একা-একা, দলে দলে মিশি, নির্দিষ্ট কোন সুবৃহৎ উদ্দেশ্য থাকেনা, একজনের সাথে আরেকজনের সময় কাটানোটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়, মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় কোন কারণ ছাড়াই বোকামি করে হাসাহাসি’র মুহূর্তগুলো, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রেম – একটি পতাকার গর্ব, একটি মানচিত্রের সামগ্রিক অহংকার, একটি জাতীয় সংগীতে টের পাওয়া বুকের ভেতর একটা সুউচ্চ পাহাড় বসবাস করে, একটি রণসঙ্গীত তবু আমরা প্রতিদিন ভুলে যাই!
শিবির আশেপাশেই থাকে, মোলায়েম দৃষ্টিভঙ্গি হলে টের পাওয়া যায়-না, দৃষ্টিভঙ্গি’তে যদি দ্বিধা থাকে তাহলে সেটা কাজে লাগানো হয়ে যায় টের পাওয়ার আগেই, মতান্তরে তবু যদি কারো মনে হয় যে মুক্তিযুদ্ধ করে তার পূর্বপুরুষ’রা ভুল করেছিলো (পাকিস্তান আমল-ই ভালো ছিলো, চালের দাম আর সোনার দাম ছিলো এক!) তাহলে তার টাকায় ব্যবসা করবে জামাতি’রা (চাল-ডাল-তেল-নুন), আর যাদের মনে হবে ‘নিজে বাঁচলে একদিন-না-একদিন বাপের নাম’ তাহলে তার পরবর্তী প্রজন্মের নারী’দের ঠাঁই হবে আজকের জামাতি’র কল্পনার হারেমে, একদম ছোট ছোট ছেলেদের সুন্দর চেহারা দেখে জিভ চাটবে শক্ত পুরুষাঙ্গের যাতনায় আশৈশব পাছা হারানো আজকের কোন এক জিন্স পড়া শিবির।
এটা প্রজন্মন্তরের লড়াই, সবার নিজস্ব লড়াই, আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি এর শুরু হয়েছিলো দেশ-ভাগের আগে, জামাতের মূল তাত্ত্বিক মওদুদি’র উত্থান ব্রিটিশ শাসিত ভারতে, প্রায় কাছাকাছি সময়ে হিন্দু মৌলবাদের উত্থান-ও ঘটে। আমার এখনো মনে আছে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় এলে জামাত তাতে অভিনন্দন জানিয়েছিল। পরিচিতির প্রয়োজন নেই, কোনদিন ছিলোনা, কাজটাই মুখ্য, তার চাইতে মুখ্য হচ্ছে চেতনা’টা ধরে রাখা। সেই ধরে রাখার কাজটা কেউ ব্লগে লিখে করবে, কেউ ক্লাস নিতে নিতে করবে, ছবি আঁকতে আঁকতে করবে, গান গাইতে গাইতে করবে, কেউ কেউ তার পরিবারে নিশ্চিত করবে, নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করবে, যার-যাকিছু ক্ষুদ্র সামর্থ্য তাই নিয়ে কাজ করে যেতে থাকবে নিজের মত... আমাদের সবারই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি আছে, আলাদা আলাদা আচরণ, বহিঃপ্রকাশ কিংবা নীরবতা। সেখানে প্রতিটি মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মানুষের মূল চেতনার জায়গাটায় একটা সাযুজ্যের সুযোগ থাকা।
এই দুইটি পর্ব লিখতে গিয়ে আমার বারবার নিজের ভেতর দ্বন্দ্ব কাজ করেছে, খুব বেশি ব্যক্তিগত হয়ে গেলো কিনা এই সামগ্রিক আন্দোলনের ইতিহাস। একবার লিখে কয়েকজনের সাথে আলোচনা করেছিলাম, তাদের কারো কারো তাগিদ ছিলো তাদের নাম ব্যবহার না করার জন্য, আমি তাদের সে অবস্থানকেও সম্মান করি, আমি জানি সময়ে তাঁরা মাঠে-ই থাকবেন। তারপর বিভিন্নভাবে লিখার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনদিন শেষ করতে পারিনি কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এর শেষ নেই। আমি ভেঙে ভেঙে লিখতেও পারিনা, যা লিখি একটানা লিখি। প্রথমে ১৯৯৫ এর লিখাটার শিরোনাম এমন ছিলোনা, তারপর মনে হলো প্রতিটি আক্রমণ এবং প্রতিরোধের ইতিহাস ভিন্ন, তাকে ভিন্নভাবেই বলা উচিত। ১৯৯৫ এর পর এই লিখাটা লিখতে বসেছি বেশ কয়েকবার, প্রতিবার আলাদা আলাদাভাবে শুরু করেছি তারপর আজকে এক বসাতে শেষ করলাম।
পুরোটা সময় এই বিষয়ের উপর লিখতে যারা উৎসাহ দিয়েছেন আমি মনে করি তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সেই প্রতিরোধের সংগ্রামকে উৎসাহ দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন অসংখ্য মুখের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া আমাদের নির্দিষ্ট মুখ, সেখানে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত আরও সব মুখ দেখি, আমি টের পাই আমাদের সামগ্রিক একটা অস্তিত্ব আছে, আমরা আদতে কেউ একা নই, কোনদিন ছিলাম-না, থাকবোনা। একজন যোবাযের হোসেন রিমু কিংবা এমন আরও সব হত্যার বিচার পায়নি বাংলাদেশ... কতগুলো যুগ কেটে গেলে পরে মিথ্যে চেনা যায়!!!
আমাকে সামগ্রিক দ্যোতনায় বেঁচে থাকতে শেখানো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময়কার সব মানুষ এর জন্য কুর্ণিশ!
মন্তব্য
পুরানো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন ভাই! শিবির তাড়ানোর পর কয়েক সপ্তাহ ধরে রাত জেগে হল পাহারা দিয়েছিলাম। পুরা রোস্টার করা ছিল, কোনদিন কারা কোথায় পাহারা দিবে। জামাতপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে ফিজিক্সের ইমামউদ্দিনের কথা মনে আছে, পরে প্রভিসি হয়েছিল।
-২৩ তম ব্যাচ, ভাসানী হল, ই ক বি
ইমামউদ্দিনের প্রভাব সবসময় ছিলো জাবি ক্যাম্পাসে। ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি’র মত সাবজেক্টে শিবির সবসময় সবচাইতে বেশি সুবিধা পেয়েছে শুধুমাত্র ইমামউদ্দিন, মীর আকরাম আর বাকি’র কারনে। আরও কত শিক্ষক এরা ঢুকিয়েছে এখন কে জানে!
আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এই জানোয়ারগুলো কে প্রতিরোধ করতে না পারি তাহলে আমরা সবাই নিজেদের বিবেকের এবং উত্তরপ্রজন্মের কাছে দোষী থেকে যাবো আজীবন।
অসাধারণ হচ্ছে তানিম ভাই। চলুক।
ফারাসাত
আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এই জানোয়ারগুলো কে প্রতিরোধ করতে না পারি তাহলে আমরা সবাই নিজেদের বিবেকের এবং উত্তরপ্রজন্মের কাছে দোষী থেকে যাবো আজীবন।
শিহরণ জাগা। স্যালুট আপনাকে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমি কেউ নই।
ডাকঘর | ছবিঘর
কিহে, আসামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মৌলবাদের চর্চা কেমন? আমরা কিছুই জানিনা এই ব্যাপারে।
facebook
গুলি করেন কেন
১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বরে শিবিরের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাওয়া চবির সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কথা মনে পড়লো। একই দৃশ্য বারবার মনে করিয়ে দেয় অশুভের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। সেদিন আমরা একজন ফারুককে হারালেও সেই ঐক্যটা শিবিরের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর অবস্থানকে দীর্ঘদিন অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনারা কি ধরনের গান গাইতেন তখন? দেশাত্মবোধক গান এইধরনের সময়গুলোতে ছিলো একটা পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া ব্যাপারের মত। সবাই গায়, কে ভুল গায় আর কার সুর নেই, এইসব গোনাগুনতি নেই, গান গাও --- সম্মিলিত শক্তিতে তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর কিংবা হটাত করে দেখা গেলো কেউ একজন জীবনেও কারো সামনে গান গায়নি সে মনের ভুলে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে টের পেয়েছে সবাই গাইতে শুরু করেছে। এইসব গল্প শুধুমাত্র কথা বলে, লিখে কোনদিন বোঝানো যাবেনা। চলচ্চিত্র উৎসব হতো -- জীবন থেকে নেয়া যে আমরা কতবার দেখেছি! আমরা বইয়ে পড়া ইতিহাসের প্রচুর চরিত্রের উপর, ঘটনার উপর -- মুক্তিযুদ্ধের উপর ডকুমেন্টারি, ক্লিপিংস দেখেছি কতবার আমি বলতে পারবোনা। সাংস্কৃতিক কর্মীদের তুলনা হয়না যতক্ষণ তারা নিজেদের কাছে নিরপেক্ষ থাকে।
জাবি’তে একটা সংশপ্তক আছে!
মিছিলে আমাদের গান গাওয়ার রেওয়াজ ছিল না। কিন্তু প্রিয় শ্লোগান ছিল "একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর"।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মিছিল না, মিছিলের ভাষা আলাদা। শিবির বিরোধী প্রতিরোধের সময়টাতে আমাদের খুব গাওয়া হতো।
যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার উদ্যোম ধরে রাখাটা অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার।
আপনার চেতনার পরিচয় আমরা পাই সচলে।
চমৎকার, তানিম ভাই। প্রাণের ছোঁয়া টের পাওয়া যায় পরতে পরতে। এ সময়ের জন্য লেখাটা জরুরি ছিল। আন্দোলনের ইতিহাস সাধারণত লিখিত হয় না। সংগ্রাম আর জয়ের ইতিহাসগুলো আড়ালে থেকে যায়। লড়াইয়ের প্রেরণা হারাতে থাকে। প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর সংগ্রামের প্রেরণা হারায়নি। আপনারা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই পথ ধরে সরব ছিলাম আমরাও। এখনও তরুণতর বন্ধুরা সজাগ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর আমাদের এক টুকরো অহংকার।
আপনার এই লেখাটাই অনেকে জাবি’র শিবির বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস হিসেবে পাঠ করবে। সে বিবেচনায় ছোট্ট একটা বিনীত সংশোধনী- দ্বিতীয় এবং একাদশ প্যারায় আপনি ২৬তম ব্যাচের কথা উল্লেখ করেছেন, এটা সম্ভবত ২৪তম ব্যাচ হবে।
অনেক ধন্যবাদ, তানিম ভাই।
তোমরা কততম ব্যাচ শশাংক? ২৫?
আমরা বেরিয়ে যাওয়ার পর ২৪তম ব্যাচ থেকে কি কোন শিবির বেরিয়েছিলো ১৯৯৯ এ? যতদূর মনে পড়ে ২৪তম ব্যাচ থেকে ১৯৯৬ সালে শিবির বেরিয়েছিলো হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু ২৪তম ব্যাচ পুরো জাবি দাপিয়ে বেড়িয়েছে একটা সময়জুড়ে। ফোন দিমুনে।
তেমন কোন তথ্য তো মনে আসছে না। ৯৯তে ঘটলে আমার মনে থাকার কথা। অন্য কারও জানা থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন।
১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেতন ফী আন্দোলন চলার সময় ক্যাম্পাস একভাবে বামের দখলে। ছাত্রলীগ বা দল কারোই কমিটি নাই। জাতীয়তাবাদী ছাত্রলীগের ব্যানারে ছালা থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসতে থাকে দীপু হত্যা মামলার আসামীরা (বাবুল-ইলিম-মতি-রুস্তম গং) এবং ধর্ষণকারীদের সমর্থকেরা। ঐ সময় এমএইচ হলে রিউমার ছড়িয়ে পড়ে যে শিবির যেকোন মুহূর্তে হল দখল করতে পারে আর এবারের লক্ষ্য মীর মশাররফ হোসেন হল। রিউমারটা যারা ছড়িয়ে ছিল তাদের নেতৃত্বে ছিল ছাত্রফ্রন্টের এক ছদ্মশিবির। আমার কাছে সে শুরুতেই ধরা পড়লেও ফ্রন্টওয়ালারা বিশ্বাস করতো না। আমি নিজে মাসুমভাইকে বলে এসেছি। সে আমার দৃষ্টিভঙ্গী বদলানোর পরামর্শ দিয়েছে। যাই হোক শিবির শেষ পর্যন্ত এলো না। আন্দোলন তীব্রতর হলো। শিবির সমর্থক ছাত্রদল আর ধর্ষনকারী সমর্থক ছাত্রলীগ (দুইগ্রুপই শিবিরের সৃষ্টি এমন কথাও প্রচলিত ছিল) আন্দোলন সাবোট্যাজের চেষ্টা চালিয়ে সফল হলো এবং ১৯৯৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা থেকে পুরো ক্যাম্পাস ভ্যাকেন্ট ঘোষনা করা হলো। শিবির সরাসরি না এলেও লীগ দলের মাধ্যমে বামের পিঠে ছুরি মেরে গেলো। আর এই পলিট্রিক্সে বামেরা একতরফা পরাজিত হলো।
অজ্ঞাতবাস
আমরা ২৫তম ব্যাচ। ৯৭-এর ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ক্লাস শুরু হয়।
আমিও ২৫। সোহাগও ২৫।
অজ্ঞাতবাস
আমার কথা শশাঙ্ক বলে দিয়েছে।২৬ এর বদলে ২৪ ব্যাচ হবে।
সোহাগ, তোমার সাথে পরিচয় হলো ব্যস্ত সময়ে, বিদায়টা পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারিনি। সামনেরবার যাবো একদম নিজের মত করে, দেখা হবে।
অনেক কথা বলার ছিলো, বলতে ইচ্ছা করছে না। বাবা জাহাঙ্গীরনগর এর ছাত্র ছিলেন, সবসময় তাঁর মুখেই এই ক্যাম্পাসের প্রশংসা শুনি।
লেখা চলুক।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমাদের আরেকজন বড়-ভাই পাওয়া গেছে!
১৯৯৬ সালে যে দিনটিতে এই ঘটনা ঘটে সেদিন ভোর থেকে আবহাওয়া ছিল গুমোট। টিপটিপ বৃষ্টি। প্রকৃতি যেন আগে থেকেই একটা বিপদের আভাস দিচ্ছিল। সকালে কিছু ছাত্র ( তাদের নাম আমার মনে পড়ছে না) নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে এসে শিবির আক্রমণের কথা জানাল। ছাত্র ফ্রন্ট আর ইউনিয়নের কর্মীরাসহ সিনিয়র কিছু ছাত্রী মেয়েদের জড়ো করে বিষয়টা জানাল। প্রীতিলতা আর জাহানারা ইমাম হল থেকে আসা মিছিলের সাথে, ফয়জুন্নেসা হলের বিভিন্ন দলের কর্মীসহ, হলে উপস্থিত প্রায় সব সাধারণ ছাত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়। সৌভাগ্যক্রমে আমিও সেদিন মিছিলের একজন ছিলাম। এটা ছিল আমার প্রথম মিছিলে যাওয়া, হয়ত আর অনেকেরই। কোন ভয় আমরা পাই নি, স্লোগান দিতে দিতে যখন চৌরঙ্গী পার হয়ে সামনে এগুবো, দেখি একদল ছেলে আমাদের দিকে দৌড়ে আসছে । তারা আমাদের থামিয়ে ফিরে যেতে বলল। ক্ষণিকের মধ্যে বুঝে গেলাম এরা শিবির। এরা যত বাধা দেয় আমরা তত জোরে স্লোগান দিয়ে সামনে বাড়ি। এদের মধ্যে একজন লম্বা ওভারকোট পরা, আমাদের বলল, তোমরা মেয়ে, মায়ের মত বোনের মত, তোমাদের কিছু বলব না, তোমরা ফিরে যাও। কে শোনে তাদের কথা ! পরে মরিয়া হয়ে ওভারকোট পরা ছেলেটা ভয় দেখানোর জন্যে তার কোট সরিয়ে দেখাল কাটা রাইফেল, চাপাতি, ছুরি, সব ঠিক চিনিও না। এরপরও যখন মেয়েরা পিছু হটছিল না, তারা একটা হাতবোমা ধরনের কিছু ফাটাল। প্রচণ্ড শব্দে প্রকম্পিত হল চারদিক-এতে ভয়ে বিস্ময়ে কিংকতৃর্ব্যবিমূঢ় অবস্থা। আমরা দৌড় দিয়ে চৌরঙ্গী থেকে পানির পাম্পের কাছে থামলাম, কিন্তু কেউ ফিরল না, কিছুক্ষণ পর আবার আমরা এগুলাম, ততক্ষণে ছাত্ররাও জড়ো হয়েছে। একযোগে মিছিল স্লোগানে স্লোগানে এগিয়ে যেতে লাগল। তারপরের ঘটনা উপরে বর্ণিত আছে। জাবিতে এর পর প্রায় ৫ বছর কাটিয়েছি। শিবির আর প্রকাশ্যে দেখিনি। শিবিরবিহীন ক্যাম্পাসের এই ঐতিহ্য আজো বজায় আছে দেখলে গর্ব হয়। অন্তত একটা দৃষ্টান্ততো আছে। ১৯৯৯ সালে বাংলা বিভাগ থেকে আমরা শিক্ষাসফরে রাজশাহী যাই, সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার ব্যবস্থা হয়। (সম্ভবত) দ্বিতীয় দিন খুব সকালে মেয়েদের বাইরে ডেকে পাঠানো হয়। ব্যাপার কী ? শিবিরের ছেলেরা বাসের সামনে ঝোলানো আমাদের ব্যানার খুলে ফেলেছে, আমাদের ছাত্রদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। জাবি-র ছাত্রদের তারা রাবি-তে থাকতে দিবে না। আমরা আর থাকি নি।কারণ, এই ক্যাম্পাসে থাকা বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না ভেবে, এখানে শিবিরের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটিও করে না, এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে সবার মধ্যে। সিডিউল কিছুটা পরিবর্তন করা হল। কিন্তু এতে মনে মনে একটা গর্বও অনুভব করছিলাম যে, আমাদের ক্যাম্পাসের প্রভাব এতদূর পর্যন্ত এসে পড়েছে।
"এই সময় আমি আবিষ্কার করি প্রচুর ছেলে-মেয়ে আছে যারা ক্রান্তিকালে ঠিক-ই পথে নামে, পেছনে থাকেনা, কিন্তু এদের এমনিতে কোথাও কখনো উচ্চকিত হতে দেখা যায়-না।" -তানিম ভাইয়ের এই কথাটির সাথে আমিও একমত। তাই আমি কখনও আশা ছাড়ি না। এখন অপেক্ষা, কখন সেই সময় আসবে।
আয়েশা আক্তার, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল,
২৪তম ব্যাচ,
জাবি।
ফারাসাত
জাবি’র ছাত্রদের কেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের থাকতে দেয়া না দেয়ার মালিকানা শিবিরের হাতে না, তারা বড়জোড় ভয় দেখিয়েছিলো যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিযাতন করবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা জানি, কিন্তু আপনারা কেউ আতংকে ছিলেন বলে আমি শুনিনি কিন্তু, সবার নিরাপত্তা একসাথে নিশ্চিত করার জন্য সবাই চলে এসেছিলো ক্যাম্পাস ছেড়ে, নিরবভাবে মোকাবেলা করা হয়েছিলো সব, রাজশাহী’র বেশকিছু মানুষও তাদের সাথে পরে যোগ দেন বলেও শুনেছি। আপনি এটা এভাবে জানেন-না কেন?
আমরা আতঙ্কে ছিলাম সেটা বলিনি। আতঙ্কে থাকলে আমরা রাবিতে পা'ই ফেলতাম না। আমি বলতে চেয়েছি রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীর মধ্যে চাপা আতঙ্ক ছিল শিবির নিয়ে। ঠিক ঐ মুহূর্তে নিরাপত্তার খাতিরে চলে আসার সিদ্ধান্ত শিক্ষক-ছাত্ররা মিলে নিয়েছে। যখনকার ঘটনা ঠিক তখন আমাদের পাশে এসে কেউ দাঁড়ায় নি। রাবি'র কিছু শিক্ষক আমাদের সাহস দিয়েছিলেন থাকার জন্য কিন্তু আমরা তাতে ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারি নি।
আমার-ই ভুল আপু। সেই ঘটনাটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি লিখা যায় সচলে? না আগেই লিখেছেন? আমি আলাদা ঘটনার কথা বলেছি আসলে, ঠিক এমন একটা ঘটনা ঘটেছিলো ভূ-গোল বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে, খুব সম্ভবত ৯৬ এর প্রতিরোধের পরপর। ১৯৯৮ সালে আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।
আচ্ছা, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কোনটা, ট্রান্সপোর্টের কাছাকাছি যেটা সেটা? উপরে শশাঙ্ক বলেছে ২৪তম ব্যাচ-ই ছিলো সবচাইতে নতুন, ২৫তম ব্যাচও কি আসেনি ক্যাম্পাসে?
আপনারা মনে হয় ১৯৯৯ সালেও আরেকবার শিবির প্রতিরোধ করেছিলেন। ২৪তম ব্যাচের বাংলার ফয়সাল, কবির, সেলিম, ঝুমুর এদের চিনি।
জাবি’র ছাত্রী’দের সবধরনের লড়াইয়ে কুর্নিশ!
১৯৯৯ সালে শিবির প্রতিরোধ হয় নাই।
১৯৯৮ সালের আন্দোলনে বিতাড়িত ছাত্রলীগের রেপিস্ট গ্রুপ ১৯৯৯ সালের ৩১ জুলাই ক্যাম্পাসে ফিরলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ২ আগস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এখানে পাবেন সেসময়কার কিছু কথা। তবে সবই শোনা কথা কারণ আমি তখন হাসপাতালে। শশাঙ্ক, আয়েশা বা সবুজ বাঘ ডিটেলসে বলতে পারবে তখনকার কথা।
অজ্ঞাতবাস
ধন্যবাদ।
শিবির- বাংলাদেশের আক্ষেপ।
বুনো পথিক
মনে হয়-না, বরং বাংলাদেশ, বাঙালী -- এইটা জামাত-শিবিরের আক্ষেপ। শিবির প্রক্ষেপণযোগ্য একটা লেজবিশিষ্ট প্রাণী, কোন মানুষ এমন হয়ে যেতে পারেনা, পৃথিবীর ইতিহাসে মানবিকতা বিরোধী সবার চেহারা হয়তো কাছাকাছি হতে পারে তবে চরিত্র একই।
পৃথিবীর ইতিহাসে আজকে হয়তো এদের তবুও কথা বলবার সুযোগ আছে, বাঙ্গালী জাতি হিসেবে তবুও মানবিক। বেশিরভাগ সময়টাতেই একটু বেশি মানবিক আর কি এই-যা!
এপর্বে আপনার ব্যাক্তিগত চিন্তা বেশি এসেছে ঠিকই, কিন্তু তা লেখার মূল উদ্দেশ্যেকে ব্যহত করেনি বলে মনে করি।
শুভেচ্ছা জানবেন।
জাবি’র সংশপ্তক দেখেছেন? কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে, দেখলেই একটা আলদা আবেগ জাগে। আপনি ফিরেছেন তাহলে, আমার সচলের একদম প্রথম সময়টাতে কৌস্তুভ, আপনি, আশালতাদি, তুলি’দি আর অপছন্দনীয়ের সারাক্ষণ আক্রমন-প্রতি আক্রমনের কথা খুব মনে পড়ে। ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা।
তবু অবাক লাগে অনেক ছেলে শিবিরকে সমর্থন জানায়।সব ছেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে তাদের করম পদ্ধতি পরিবর্তন করা।তাবলীগকে ব্যবহার করে এরা সমস্ত কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ভবিষ্যতে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে
বুনো পথিক
তাই নাকি? জানতাম-না, তাবলীগ হচ্ছে ওহাবী’দের একটা ব্যাপক গোছানো, পরিকল্পিত চর্চা, তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ইলিয়াসের শুরু-ও সেই ব্রিটিশ আমলে, ব্যাটা নিজেকে নবীও দাবী করেছিলো বলে পড়েছি। ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী উপরে উপরে খাতির থাকা স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে তাবলীগ জামাতের সমালোচনা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি আমি, আমার পারিবারের লোকজনের কাছে এরা যুক্তিতে কোনদিন পাত্তা পায়নি, দেখতে মজাই লাগতো। তবে এদের যে মাত্রার সেট-আপ আর যে-পরিমান টাকা সেটা কোথায় কি কাজে ব্যবহার হয় তাই নিয়ে কৌতূহল ছিলো খুব।
শিবিরের সাথে তাদের সম্পর্ক সেসময় সুনির্দিষ্টভাবে আমরা দেখিনি, ১৯৯৫ এর আক্রমনের পরপরই তাবলীগের একটা বিশাল গ্রুপ আসে আমাদের হলে, যথারীতি সবাইকে চেক করা হলো কিন্তু হলের ভেতর ঢুকতে দেয়া হলোনা, এদের ভেতর রিটায়ার্ড ব্রিগেডিয়ার, যুগ্ম সচিব -- এইধরনের লোকজন ছিলেন, তখন এতসব দেখার টাইম নেই। সেই ব্রিগেডিয়ার সাহেবের সাথে কথপোকথন মনে আছে এখনো। তাদের একসময় ঢুকতে দেয়া হলো, পরদিন বিকেলে আমাদের জন্য এলো নাস্তা, হায়রে খাবার! বিশাল ব্যাপার-স্যাপার, প্রশ্ন করেছিলাম, জানা গেলো যে এরা সব সাথে নিয়েই এসেছেন; যখন বললাম যে এই এক নাস্তার টাকা দিয়ে দশটা গরীব মানুষ পেটভরে ভাত খেতে পারে, সেটা করেন-না কেন আপনারা, তখন তারা নানান যুক্তি দিয়েছিলো, খাইনি আমি, আমার এখনো মনে আছে।
যে-কোন ব্যনার ব্যবহারে এদের জুড়ি নেই। আপনি উপরের মন্তব্যে ই-মেইল ঠিকানা দিয়েছিলেন। নতুন করে মন্তব্যে দিলেন-না! দুইবার দুইটা আলাদা আলাদা বিষয়ে মন্তব্য করলেন যার কোনটাই আমার কাছে মূল বক্তব্যের সাথে গেলোনা বলে মনে হচ্ছে। আপনার আরও কোন বক্তব্য আছে??
আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন তারপর সব প্রমাণ পাবেন।আমি নিজে এর সাক্ষী।
বুনো পথিক
সাথে ঐ সময়ের কিছু পত্রিকার কাটিং থাকলে আরো ভাল হত - যদিও বিষয়টা কষ্টসাধ্য।
সময় নাই হাতে। সাংবাদিকতায় থাকা কয়েকজনকে জানিয়েছিলাম, তারা সময় বের করতে পারেনি। খসড়া হিসেবেই না-হয় থেকে গেলো এটা, কিংবা আরও কেউ কোনদিন এর সাথে সংযুক্ত করবে আরও কিছু ইতিহাস, উপরে আয়েশা আক্তার যেমন করেছেন। এভাবেই হবে।
শাবাস মাম্মা।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
তুই কই থিকা আইলি!!
স্যালুট!!
( আমার বাবা জাবির ছাত্র ছিল, সময় বদলায় না; অথচ দরকার খুব বদলানোর!)
_____________________
Give Her Freedom!
জাবি বদলায় বাইরে থেকে, ভেতরে আলাদা, একদম-ই আলাদা।
খুব ভালো।
তানিম।, তোমার জন্য শুভকামনা।
-----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
তোমাকেও ধন্যবাদ পলাশ ভাই
নতুন মন্তব্য করুন