গত লেখাটি যারা পড়েছেন, পড়তে পড়তে একেবারে শেষে এসে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেকে মনে করেছেন বিচ্যুত একজন মানুষ, এবং সবশেষে ‘একটি জাগ্রত বাংলাদেশ বুকে নিয়ে আমাদের মৃত্যু হোক’ পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভেবেছেন ‘আহা, তাই যদি হতো!’ -- নিশ্চিত থাকুন এরমাঝে আপনার সর্বাঙ্গীণ চেতনার মৃত্যু ঘটেছে। মানুষের নিজের লড়াই নিজের সাথে আগে, এই লড়াইয়ে সব ক্ষেত্রে আপোষ করাটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা একটি পারস্পরিক প্রক্রিয়া।
স্বদেশের সবকিছুতে সবধরনের আদর্শ পরিবেশ প্রত্যাশা করে বড় হই আমরা, বয়স বাড়ে, ক্ষয়িষ্ণু সময়ের তক্তপোষের শক্ত কাঠে পিঠ ঠেকাতে ঠেকাতে একসময় সবধরনের মানবিক প্রেরণা’কে ‘না, না’ বলতে বলতে একজন স্বপ্ন দেখা মানুষ যখন চোখ বন্ধ করেও স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়, কারও উপর আস্থা রাখতে পারেনা, তখন একটি দেশের মৃত্যু ঘটে -- আপনাকে আমাকে এই মৃত্যুর দায় নিতে হবে, নিতেই হবে; নিতে হয় কারণ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা কেউ আলাদা নই, প্রকৃতি সবাইকে নিয়ে প্রকৃতি, একটি দেশ সবাইকে নিয়ে দেশ এবং সেই সামগ্রিক বেঁচে থাকায় ঘরের গাঁথুনির একটি পাথর অকারণে নড়বড়ে হয়ে গেলে আমাদের সমগ্র অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেতে পারে, হয়!
দেশপ্রেম এর কোন সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই, কোনদিন হয়না। সবার সবধরনের সংজ্ঞা সবার নিজস্ব, পার্থক্য থাকে চর্চায়, বিশ্বাসে। আপনি যদি আমাদের ইতিহাস শুধুমাত্র ১৯৭১ সাল থেকে পাঠ করে থাকেন তাহলে আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই। একটি বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে কোন মানচিত্রের আত্মপরিচয় ছাড়া দাঁড়িয়ে আছে সহস্র বছর, পৃথিবীর খুব কম জাতি’র ইতিহাস এতটা সমৃদ্ধ। আলেকজান্ডার এর মত দখলদার এই গাঙেয় অববাহিকা পাড়ি দেবার স্পর্ধা দেখাতে পারেনি, মোঘলরা কোনদিন স্বস্তিতে ছিলোনা, বেনিয়া ব্রিটিশ কতবার এখানে মার খেতে খেতে পাছার কাপড় খুলে দৌড়ে পালিয়েছে তা পড়ে মুখস্থ করতে হয়না। আর পাকিস্তান! পাকিস্তানের জন্ম প্রক্রিয়াতেই সমস্যা, সিজারিয়ান বেবি যার মাতৃপরিচয় নেই, পিতৃপরিচয় ভাগাভাগি করে নিয়েছে যারা তাদের মূল পরিচয় চোখ মেলে তাকালেই আপনি দেখতে পারবেন। সবকিছু যদি সবাইকে দেখিয়ে দিতে হয়, সব প্রশ্নের উত্তর যদি দিয়ে দিতে হয় তাহলে এই শতাব্দীতে জন্মানো পাপ হয়েছে প্রচুর মানুষের!
পাকিস্তানের সমালোচনা করলে পাঠকসমাজের একটা অংশ যারা মুখ কুঁচকে আমাকে ভাবছেন ভারতের দালাল, তাদের দলিল-দস্তাবেজে সমস্যা আছে -- আমার নেই। আমি ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, জাতিসংঘ বুঝিনা -- বাংলাদেশ বুঝি! এই ৪১ বছর পর আমি কোন দল বুঝিনা, বাংলাদেশ বুঝি! আমার নিজস্বতা ছাড়া আমার আর কোন অস্তিত্ব নেই। এবং এই নিজস্বতার সম্পূর্ণ ভিত্তিভূমি দাঁড়িয়ে আছে একটি ভাষা, পতাকা, মানচিত্র, সংস্কৃতি আর যতটা মেনেছি তত দূর ঐতিহ্য বোধের উপর।
দলে ভাগ হয়ে, ইতিহাসকে অস্বীকার করে যতটা বিপন্ন নয় তার চাইতে অধিক বিপন্ন বোধ করতে করতে যারা তবুও চন্দ্রবিন্দু সমেত মূল্যায়ন আশা করেন তাঁদের কাছে একটি দেশের বড়জোর চাওয়া থাকতে পারে করুণা। যারা কাজের চাইতে ঘেমে যান বেশি, প্রতিদিন রাস্তা পার হতে চোখ যায় সবরকম ময়লা আর আবর্জনার ভেতর, তারা একবার তাকিয়ে দেখুন এমনকি রাস্তার পান বিক্রেতার কাছেও আপনি শিখতে পারবেন। স্যুট-টাই না পড়লে, দুই কথা ইংরেজি না বললে, প্রতি সপ্তাহে ভিনদেশী খাবারের রেস্টুরেন্টে খেয়ে কিংবা একবেলা মাতলামি করে যারা দেশ’কে ক্রমাগত গালি দেন তাদের সমস্যা তারা নিজেই। আপনি যতবার দেশকে গালি দেন ততবার আপনি আপনার নিজেকে গালি দেন, যতবার ভাবেন এই দেশ নষ্ট হয়ে গেছে ততবার আপনি নষ্টামিকে প্রশ্রয় দেন, যতবার ভাবেন এই দেশ কোনদিন বদলাবে-না ততবার আপনি একটা বদলে যাবার প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেন... মানসিক মৃত্যুর চাইতে বড় পরাজয় আর নেই মানুষের!
মাটি বোবা নয়, আপনি যতবার কোন অন্যায় দেখে প্রতিবাদ লুকোতে লুকোতে ঘরে ফেরেন ততবার মৃত্তিকার পরাজয় ঘটে। এইসব অস্ত্র, নৈরাজ্য, ভীতিকর মানুষের সাথে কিভাবে লড়াই করবো? লড়াই করুন মানসিকভাবে, ইতিবাচক হওন, ধৈর্য ধরুন। প্রতিবাদ লুকিয়ে ঘরে ফিরে নেতিবাচক চিন্তায় অস্থির না হয়ে, সেই অস্থিরতা আর দশজনের ভেতর ছড়িয়ে না দিয়ে ভবিষ্যতের কাছে ভাল কিছু প্রত্যাশা করুন, হয়ে যায়। আবেগাক্রান্ত মানুষের সবচাইতে বড় সমস্যা আবেগের ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকার পরিণামে সবকিছুতে পালাই পালাই ভাব। আসুন তো একটা শপথ নেই -- চাইলেই পারা যায়, মন থেকে একবার চেয়ে দেখুনতো। টাকা নেই, বাড়ী-গাড়ী নেই, ছোট চাকুরী করেন, কোথাও আপনার কোন মূল্যায়ন নেই, কি হয়েছে তাতে? নিজেকে মূল্যায়ন করুন, সামনে তাকান, এমনকি আঁধারেরও নিজস্ব আলো আছে! জেগে উঠুন। একটি বিজয় দিবসে আপনার বিজয় আসুক মানসিকতায়, চৈতন্যে...
আগামী একটা বছর জামাত’কে টাকা না দিয়ে থাকতে পারবেন? যদি না পারেন তাহলে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত চেষ্টা করে দেখবেন একটু? চাইলেই হয়ে যায়, সবকিছুকে যদি না বলতে পারেন তাহলে নিজের সক্ষমতা’কে অন্তত একবার হ্যাঁ বলে দেখুন!
গর্বিত হেঁটে যাই স্বদেশের পথে পথে,
এ-পথ সাহসী পূর্বপুরুষের শ্রম-ঘাম-রক্তের পললে স্নাত;
এ দেশের জলে-স্থলে ধুলার পরতে পরতে
বিদ্রোহ, বিপ্লব আর ত্যাগের যে অযুত-নিযুত বীজ রোপিত
তার দিব্যি দিয়ে বলে দিতে পারি আশ্চর্য সাহসে-
লাখে শহীদের রক্ত যে মাটিতে আছে মিশে,
সে মাটি জাগবে ফের দেখে নিও একদিন!
বন্ধু হে, শুধোতে জন্মেরও ঋণ-
তৈরি আছোতো?
-------------------------------------------------------------------------------
এই লেখাটি উৎসর্গ করতে চাই আইসিএসএফ এর সকল যোদ্ধার জন্য। সাথে আছি।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আর যারা ঘাপটি মেরে এই লেখা পড়তে বসেছে, লিখতে শুরু করার আগেই বাম হাতে তাদের ভেতরের লুকিয়ে রাখা পশুটার লেজ ধরে কব্জির মোচড়ে শূন্যে ছুড়ে দিয়েছি বেজন্মা-বেইমান-নিমকহারাম-হারামখোর! তারপর শরীরের সমস্ত ক্রোধ নিয়ে হপ-স্টেপ এন্ড জাম্প এর মত শূন্যে উঠে প্রাণপণ একটা লাথি কষেছি তোর পাছায়, তোর পাছায় আঘাত করার কথা ভাবতেও বিবমিষা হয়। এমনকি আমার আকাশেও তোর ঠাঁই দিতে নারাজ আমি! মার লাথি, বাঙালীর বুট লাগেনা জাম্বুরায় লাথি মারতে! মা-----র লাথি! সীমান্তের ওপারে এমনকি ভারতের মাটিতে তোকে ফেললেও তুই ‘ভারত বিরোধিতা’র কথা বলে ভিক্ষা চাস বেজন্মা জারজ! আমি ভারত চিনিনা, বাংলাদেশ চিনি! সীমান্তের এপারে দাঁড়িয়ে শরীরের সমস্ত গর্ব এক করে তোকে সর্বশেষ লাথি’তে পিণ্ডি নয়, লাহোরে তোর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দিলাম আজ এই বিজয় দিবসে! ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২!
ভাগ মাদারচোদ! তোর প্রেতাত্মা নিয়ে দুর হ এই পবিত্র ভূমি থেকে!
মন্তব্য
অসাধারণ
চর্যাপদ আমার অহংকার, দশম শতাব্দীর জীর্ণতা আমাদের অন্ধকারে ঠেলে দেয়, চতুর্দশ শতক চৈতন্যের হাত ধরে নবজাগরণের ডাক শোনায়, ১৭৫৭ লাশের মাঠে ইতিহাসকে আটকে রাখে, ১৮৫৭ আমাকে ঠেলে নিয়ে যায় রক্তের মোহনায়, ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত শত শত বাংলার বীর আমাকে জানায় বাংলার শৌর্যের কথা, বিভক্ত দেশ আমাকে দুমরে মুচরে শেষ করে দেয়, ১৯৫২ আমাকে একটা কথাই বলে - আমার ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভাষা, আমার ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা, আমার ভাষায় 'প্রকাশ' যখন হয় তখন তাতে থাকে মায়া, লালিত্য, ছন্দ, সুর, কলতান ... একটা ভাষা যে জীবনকে বেধে ফেলতে পারে অপরিসীম মায়াবোধে তা আমার ভাষাই শিখিয়েছে আমাকে। আমার বাংলা ভাষা ..। ১৯৭১ আমাকে ত্রিশ লক্ষ শহিদের গাঁথা শোনায়, বাতাসে আটকে আছে বোনের সম্ভ্রম, মায়ের অশ্রু, ভাইয়ের মুক্তি সংগ্রাম। আমি আগে 'বাঙালি' তারপর অন্যকিছু। বাংলার সবকিছু আমাকে হৃদ্ধ করে, আটকে রাখে চরম মোহমুগ্ধতায়। ছিন্নমূল একজন বাঙালি আমি বাংলাকে বুকে নিয়ে ঘুরি...
ডাকঘর | ছবিঘর
৪১ হবে মনে হয় তানিমদা, ।
টাইপো মনে হয়,নাকি আপনি ৬৯ এর গন অভ্যুথান থেকে হিসেব করেছেন।
আমি ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, জাতিসংঘ বুঝিনা -- বাংলাদেশ বুঝি!-- খুব মন ছুঁয়ে যাওয়া কথা।
সব মিলিয়ে অসাধারন।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
৪১ হবে, ঠিক করে দিচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
তবুও ৬৯ এর ৬ দফা কেন যেন আমি একদমই ভুলতে পারিনা, শুরু ওখানেই। আমাদের ইতিহাসে ৬৯ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে লড়াই তাতে কত মানুষ যে কতবার কতভাবে নিগৃহীত হয়েছে, কারাবরণ করেছে, সয়েছে নিদারুণ দাবদাহ, সে ইতিহাস আমি এখনও পুরোটা পাইনি; সচলের কারও কাছে যদি কোন রেফারেন্স থাকে তাহলে দেবার দাবী জানিয়ে গেলাম।
"৬ দফা দাবী" বা "৬ দফা আন্দোলন" নামে পরিচিত স্বাধিকার/স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলনটা '৬৯-এর না - '৬৬-র। এখানে দেখেন। আপনি কি এটাকে "৬৯-এর গণ-অভ্যুথান" নামে পরিচিত আন্দোলনের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন?
****************************************
“চর্যাপদ আমার অহংকার ......একজন বাঙালি আমি বাংলাকে বুকে নিয়ে ঘুরি...”
ছিন্নমূল বলে কিছু নেই, সবার শেকড় নিজ নিজ বোধে প্রোথিত।
চোখ বন্ধ করে দেখেছেন? আপনি দেখলেই কাজ বহুদূর এগিয়ে যায় কিন্তু।
মার লাথি।
..................................................................
#Banshibir.
সবাই মিলে একদিন লাথি উৎসব যখন হবে তখন আপনার সাথে দেখা হোক
গোল পৃথিবী দেখা তো একদিন হবেই।
..................................................................
#Banshibir.
লেখায় অজস্র তারা।
তারা দিলে হবে শুধু? স্বপ্ন দেখতে হবে এখনই। শুরু করুন।
পুরোটাই বারুদ!
_____________________
Give Her Freedom!
তীব্র !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কয়েক লক্ষ তারা লেখায়।
হ্যা বললাম।
আমিও হ্যা বললাম
গুড। একজন পাওয়া গেলো যার সৎসাহস আছে।
আমিও হ্যা বললাম।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আপনাদের দেখে বড্ড আশাবাদী হই। আরেক জনম যুদ্ধ করার প্রেরণা পাই।
চলুক লড়াই।
যে মাটির বুকে ...
হ্যাঁ বলেননি কিন্তু এখনো!
শুধু অসাধারণ কথাটা যথেষ্ট নয়... প্রতিটা লাইন ধাক্কা দেয়, ঝাঁকিয়ে দেয়... চিরে ফেড়ে দেয় বধিরতা!!
হ্যাঁ বলেছেন ধরে নিচ্ছি!
ভালো লাগলো।
''দিবাকর''
হ্যাঁ বলেছেন ধরে নিচ্ছি!
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে ।
"পাকিস্তানের জন্ম প্রক্রিয়াতেই সমস্যা, সিজারিয়ান বেবি যার মাতৃপরিচয় নেই"
ভাই সিজারিয়ান বেবির মাতৃ পরিচয় থাকে তাই কথাটা টেস্ট টিউব বেবি হলে ভালো হয় কেননা সিজারিয়ান জন্মে মায়ের জরায়ুদারের ব্যবহার না হলেও মায়ের পেটে বাচ্চা বড় হয় এবং মা এর থেকে যাবতীয় শক্তি গ্রহন করে ,পাকিস্তানের মত নিকৃষ্টদের জন্য সিজারিয়ান বেবিদের ব্যবহারটা না করলে ভালো হতো ।
আমি ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, জাতিসংঘ বুঝিনা -- বাংলাদেশ বুঝি! এই ৪১ বছর পর আমি কোন দল বুঝিনা, বাংলাদেশ বুঝি!
facebook
অসাধারণ। ভালো থাকবেন।
নতুন মন্তব্য করুন