মুসলমান হিসেবে নিজেকে দাবী করতে গেলে যে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে শতেক বছরের পুরনো সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশীর বাড়ী-মন্দির-মানুষ পুড়িয়ে দিতে হয় এটা এরশাদ নামের এক বেহায়া-কুলাঙ্গারের শাসন আমলে শিখেছে বাংলাদেশ। ইমানযুক্ত জোশ খুব ভয়ংকর জিনিস, এই জোশে মানুষ মুহূর্তের ভেতর হিংস্র দানব হয়ে যেতে পারে কিন্তু এই একই জোশে মানুষের পক্ষে সম্ভব আরেকজন মানুষকে শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে ভালবাসতে পারা। মানুষ তা পারেনা কেন? কারণ তার ধর্ম চুরির ভয়, তার চাইতে বড় ভয় পরকালে। বাঙ্গালী সারাদিন চুরি করে রাতের বেলা ঘরে ফিরে ডাকাতের মত আচরণ করে নারীদের সাথে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে চামারের মত হিসেব কষে, ঘুম থেকে জাগে গাড়লের মত মনোবাসনা নিয়ে... চাইলে পরে বাঙালীর মত মুখচোরা সুযোগসন্ধানী চরিত্র ধারণ করতে পারার সক্ষমতা রাখে পৃথিবীর খুব কম জাতি।
বাঙ্গালী অহরহ মিথ্যা বলে, ভণ্ডামি করে, শঠতা করে, আরেকজন’কে ঠকায়, সুযোগ পেলে দুর্বলের উপর অত্যাচার করে, হিংসা করে, না বলে পরের জিনিস নেয়, ফেরত দিবে বলে নিলে-ও ফেরত দেয়না, গরীব আত্মীয়’র হক আদায় করেনা, এতিমের টাকা মারে, বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করেনা....... অথচ এইসব ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী অংশ বলে শিখেছি ছোটবেলাতে। নামায নিয়ে সবচাইতে বেশি কথা বলতে, পেরেশান হতে দেখেছি সারাজীবন ফটকামি/মাস্তানি/নেশা করে হুট করে বদলে যেতে চাওয়া ‘আঁতকা মুসলমানদের’ ভেতর! বাঙ্গালী রোযা রাখে, ইফতারি খায় হাভাতের মত, মনের ভেতর যে শুদ্ধি তার কোন খোঁজ থাকেনা। কোরবানি দেয় পশুর মত কিন্তু কোন বছর তার মনের ভেতর থাকা কোন পশুত্ব বিসর্জন দিতে সে নারাজ। এই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ভেতর-ও কতশত স্রোত, বিভক্তি, মারামারি, মুখ দেখাদেখি বন্ধ! বাংলাদেশের মানুষ এতো বদলাল কবে? নাকি আগে থেকেই এমন ছিলো এই সূফীবাদ, মরমিয়া, সহজিয়া, ভক্তিবাদ আর ‘যত মত তত পথ’ এর দেশ! নাকি আপনার আমার নীরবতাই এর মূল কারণ, নীরব পাঠক আপনার কি মনে হয়?
সবকিছুর পরেও মওদুদীবাদ ইসলাম নয়; ব্রিটিশ আমলেও নয়, এখনো নয়, ভবিষ্যতে হবে কি হবেনা এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে নেয়ার সময় এসেছে আমাদের। ধর্ম কোন পতাকা নয়, ধর্ম কোন মানচিত্র নয়, ধর্ম একটি আচরণবিধির কথা বলে এবং ধর্ম ব্যক্তিগত। যে মানুষ কোন ধর্মীয় আচরণকে স্বীকার করেনা, নিজস্ব যুক্তি দিয়ে যে মানুষ নিজ থেকে আলাদা থাকতে চায় তার বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সংবিধান তাকে সেই অধিকার দেয়। তার চাইতে বড় দায়িত্ব সমাজের, সমাজের চাইতে বড় দায়িত্ব আপনার, আমার -- আমি, আপনি, আমরা মিলেই সমাজ। এ এইসব খুব সাধারণ কথা, ব্লগে নতুন করে লিখার মত কিছু নয়। কিন্তু লিখতে হচ্ছে।
মনের ভেতর কু ডাকছে বেশ কিছুদিন। জামাত-শিবির এর চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মিথ্যা আর শঠতা... সহজ কথায় আমরা যাকে বলি, ‘পরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করা’, জামাতের অভ্যাস হচ্ছে এই। কোন এক বিচিত্র কারণে এই গোষ্ঠীটির পরিচয় নিয়ে আমাদের ভেতর আর যাই হোক সন্দেহ কাজ করেনা, আমরা জানি; কিন্তু সমস্যা হয় যখন এরা ধর্ম’কে সামনে রেখে পেছন থেকে আমাদের সামনে ঠেলে দিয়ে বলে, ‘তোর ধর্ম চুরি গেলো হতভাগা, ধর্মের নামে যা ইচ্ছা কর!’ বাংলাদেশের মানুষ করে। শাহবাগ নিয়ে যখন জামাত-শিবির প্রোপাগান্ডা চালাল যে এখানে যেসব মেয়েরা আসে তারা পতিতা, অসংখ্য মানুষ তা নিয়ে দুইবার ভাবেনি কারণ সে নারীদের কামনা করার বেলায় চরম লম্পট কিন্তু মুখোশের আড়ালে সে ধার্মিক। সে ধরেই নেয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন-ই। নিজের কাছে ক্ষমা পায় কতজন?
আজকে শাহবাগ থেকে যখন বলা হল ৩/১০ কর্মসূচী, কেন যেন মেনে নিতে পারিনি, তারপর একসময় নিজেকে বোঝালাম থাক, এরা যেভাবে চায় সেভাবেই পূর্ণ আস্থা নিয়ে থেকে যাই এদের সাথে। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছিলাম-না। তারপর রাত ১১:৪৬ মিনিটে এক সহসচল এর কাছ থেকে মেসেজ পেয়ে জানলাম একজন ব্লগার’কে মেরে ফেলা হয়েছে জবাই করে। জবাই করে! কেন তাকেই মেরে ফেলা হয়েছে? কারণ তিনি কোন ধর্ম মানতেন-না, কেন মানতেন-না সেটা নিজের ব্লগে নিজের মত করে লিখে রাখতেন, তাঁর মত আরও বহু মানুষ সেই ব্লগ পড়তেন, মন্তব্য করতেন, তাঁর একটা নিজস্ব জগত ছিল। জামাত ধরেই নিয়েছে ধর্মের নামে এই হত্যাকাণ্ড সমর্থন করবে বাংলাদেশের মানুষ। জামাত-শিবির সফল, কি বলেন? ফেসবুকে এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ চলছে। সেই যোগাযোগে দেখছি প্রচুর মানুষ আহমেদ রাজীব হায়দার’কে নাস্তিক নামে ট্যাগিং করে এই হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিচ্ছে, এর পক্ষে সাফাই গাইছে, আপনি নিশ্চয়ই সেই দলে? নিজের সাথে কাকুতি-মিনতি করে যারা মাঝামাঝি থাকাটাকেই বেছে নেয় তারা আসলে কোথাও থাকেনা, শারীরিকভাবে মাঠে থাকতে না পারেন, মানসিকভাবে থাকুন, নাকি মন নেই জামাত-কানা?
মানলাম-না। আমি বাংলাদেশের দিন-আনি-দিন-খাই, সৎভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে থাকা একজন নাগরিক এই হত্যাকাণ্ড মানলাম-না। এই দেশ আমার বাপ-দাদা’র কিনা এই নিয়ে আমি প্রশ্ন শুনছি গত বেশ কয়েকদিন; হ্যাঁ, এই দেশ শুধুমাত্র আমার বাবা-দাদা’র না, পরদাদার-ও পরদাদা’র... একদম দলিল-দস্তাবেজ সমেত, কারো কোন সমস্যা আছে? আমি কোনকিছু বুঝিনা, আমি শুধু বুঝি ‘থাবা-বাবা’ নাম নিয়ে যে মানুষটা তাঁর নিজস্ব মতামত নিজস্ব ব্লগে প্রকাশ করে গেছেন তাকে কোন আইন-আদালত ছাড়া এইভাবে খুন করা কোনভাবে, আবার-ও বলছি কোনভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। পৃথিবীর বুকে মানবতা দেখাতে যেয়ে আমরা আমরা ঘাতক-দালালদের আমাদের ট্যাক্সের টাকায় লালন-পালন করি, জামাই আদরে রাখি আর তাদের জান্তব পরহেজগার অনুসারী’রা জবাই করে বাহবা পাবে, এ হতে পারেনা।
আওয়ামী লীগ আমাদের আবেগ বিক্রি করে দিক, বিএনপি কিনে নিক আমাদের সব আগুন, বাম, চাম সব দল ভবিষ্যতে কি করবে আমি তা জানতে চাইনা, আমরা বর্তমান বুঝি। আমি বুঝি আজকে যদি এইসব প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে আগামীকাল বলে কোনকিছু থাকবে-না। আমি বুঝি আজ যদি এই হত্যাকাণ্ড আমি মেনে নেই তাহলে আগামী পরশু আমি বাঁচবো জন্তু-জানোয়ারের খেয়াল-খুশিমতো। তার চাইতে আমি মুদি দোকানের দোকানদারের ইচ্ছায় বিক্রি হতে রাজি আছি, কিন্তু জামাত-শিবিরের ইচ্ছামত নয়।
যে জাতি’র সাত কোটি মানুষের ভেতর তিরিশ লক্ষ মানুষ হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে পারে সে জাতি’র রক্ত বুকে লালন করে পথে হাঁটি আমরা; ষোল কোটি মানুষের ভেতর এইরকম হাসতে হাসতে মরে যাওয়ার স্বপ্ন শৈশবেই দেখে এসেছি আমরা কম করে হলেও ষাট লক্ষ মানুষ এবং আমাদের কেউ কোনদিন সহিংসতাকে উস্কে দেইনি। প্রতিবার জামাত-শিবির একটা একটা করে খুন করে পার পেয়ে যায় আর আমাদের মেনে নিতে হবে? কেবলমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে? মওদুদী কোন নবী যে তাঁর অনুসারীদের কথা বেদবাক্য হিসেবে মেনে নিতে হবে আমাকে? গোলাম আযম পৃথিবীর ইতিহাসে শুধুমাত্র বেতনভূক্ত পশুর কলম কিংবা কি-বোর্ডে তবুও পশু! জামাত-শিবির-রাজাকার মানে নিজের অজান্তে থু ফেলা!
আমাদের আসলে কোন কর্মসূচী নতুন করে দিতে হবেনা, তোদের অপকর্ম আর পাপের দায়ভার এত বেশি বেড়ে গেছে যে সেই পাপ এর অপরাধবোধ থেকে তোরা একের পর এক ভুল করে যাবি, আমরা সামনে এগুবো, সেই এগুনো ঠেকাতে তোরা আবার ভুল করবি, আমরা আবারে এগুবো... একাত্তরের হাতিয়ার শুরুতে অস্ত্র ছিল-না, কি ছিল সেটা বোঝার ক্ষমতা তোদের কোনদিন ছিলোনা, তোরা অভিশপ্ত সম্প্রদায় তাই সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া তোদের আর কোন অস্তিত্ব নেই....
এটা ফাগুন মাস! শহীদ জহির রায়হান ভুল বলে যান-নি; আজকেই আমরা দ্বি-গুন হয়েছি, আর এই ফাগুনে বহুগুন হবো! পারলে আটকে দেখা বেজন্মার দল!
মন্তব্য
সব কিছুর ঊর্ধ্বে গতকাল রাতে একজন মানুষ নৃশংসভাবে খুন হয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।সবকিছুর শেষে মানুষই দাঁড়াবে মানুষের পাশে।
এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনোদিন আমরা যে ভাঙবোই
মুক্ত প্রাণের সারা আনবোই
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত সাক্ষরে
নুতন অগ্নিশিখা জ্বলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই।
--- ঈয়াসীন
সাবাশ তানিম! ঠিক বলেছ!! তোমার সাখে একমত আমি ও! মন পড়ে আছে তোমাদের কাছে!!
এই হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। ধর্মের দোহায় দিয়ে তো না-ই। তবুও কিছু অমানুষ এই কাজটা করে যাবে। যাচ্ছে। এবং বিচারের সম্মুখিন হচ্ছে না। এই বৃত্ত থেকে বের হতেই হবে।।। এই ফাল্গুনে আমাদেরকে বহুগুণ হতেই হবে।।।
লতিফুল ইসলাম শিবলী'র হত্যা জায়েজের চেষ্টা
অপু
প্রখ্যাত গীতিকার ও কবি লতিফুল ইসলাম শিবলী একজন ধর্মান্ধ মৌলবাদী। প্রিয় আকাশীর মত কবিতা/গানের লেখক যদি এরকম কথা বলে তবে তাকে অন্ধ মৌলবাদী ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না।
এক জন মানুশ আস্তিক কি নাস্তিক অথবা তার ধরম কি এইতা কন বিসয় না । সব্চেয়ে বর কথা সে এক্জন মানুশ ।এই তার পরিচয়।
নতুন মন্তব্য করুন