আমরা ততদিনে টম সয়্যার আর হাকলবেরি ফিন পড়ে ফেলেছি, পড়েছি নোঙর ছেঁড়া... পাহারা দেয়া নিয়ে আমাদের সেকি তীব্র উত্তেজনা আর প্রস্তুতি! এইসব ঘটনার সময় নিজেদের নাম দিতে হয়- ‘দুর্ধর্ষ’ আর ‘দুরন্ত’ নাম নিয়ে আমাদের দল ভেঙে যাবার উপক্রম হওয়ায় দুটি নামই একসাথে করে আমরা হয়ে গেলাম- ‘দুর্ধর্ষ দুরন্ত’... বানানো হল তীর-ধনুক, সেগুলো’র কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করতে যেয়ে দেখা গেল কাজ হচ্ছে-না কিন্তু এতে করে আমাদের উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে গেল, আবার বানাও! গুলতি ছোঁড়ায় নজরুলের হাত খুব ভাল, তাঁর নেতৃত্বে আমরা কয়েকজন প্রশিক্ষণ নিতে লাগলাম। চুপিচুপি বাঁশ কাটা হল, সেগুলো’কে কেটে কেটে বানানো হল ছোট ছোট বর্শা। একটা কলাবাগান আমাদের এইসব পরীক্ষা’র জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া হল; কলাবাগানের মালিকের ছেলে আমাদের দলে কিন্তু প্রথম দিন পরীক্ষা-পর্ব শেষ হওয়ার পর সে আপত্তি জানিয়ে বসলো, কারণ কলাবাগানের সব গাছ আমাদের পরীক্ষার তীব্রতায় নাজেহাল অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে। এই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে-ই আমরা আরও বড় সমস্যায় পড়ে গেলাম।
বাড়ী ভর্তি মানুষ, কে কখন কোথা থেকে আসছে, যাচ্ছে, খাচ্ছে কোন হিসেব নেই। কিন্তু তার ভেতর দলে ভাগ হয়ে গেছে, মুরুব্বী গ্রুপ, তারপর আরেকটা মুরুব্বী গ্রুপ, তারপর আরেকটা মুরুব্বী গ্রুপ... বড়’রা সংখ্যায় কম হলে কি হবে, তাঁরা সবসময় সঠিক! আমাদের অবাক করে দিয়ে সবচাইতে যন্ত্রণা শুরু করলো আমাদের থেকে ২-৪ বছরের বড় গ্রুপ’টা, এদের বেশিরভাগ-ই সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে বা এসএসসি পরীক্ষা দেবে, আমাদের দেখে রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের উপর। তাঁরা নিজেদের মত সময় কাটানো বাদ দিয়ে আমাদের উপর চড়াও হতে শুরু করলেন; দুইদিনের মাথায় তাদের শাসনের যন্ত্রণায় আমরা অস্থির হয়ে গেলাম, সকাল-বিকেল ধমক আর আচরণ শিখতে শিখতে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল! এদের ভেতর একজন বহিরাগত অতিথি, পুরাই স্যাডিস্ট, তার নেতৃত্বে একদিন আমাদের দলের শহর থেকে আগত দুইজন’কে একদম প্ল্যান করে লাল-পিঁপড়ের ঢিবি’তে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হল! এইসব মানহানিকর বিষয় নিয়ে বিচার দেয়া যায় না। আমার চাচা-বন্ধু এই গ্রুপটা’র সবার সম্পর্কে চাচা কিংবা মামা হন, এইরকম আরও দুইজন আছে আমাদের দলে কিন্তু সেই তাঁরা-ও প্রতিদিন হেনস্থা হতে লাগলেন -- সম্বোধন দিয়ে-ও যখন কোন ব্যবস্থা করা গেল না তখন চাচা ঘোষণা দিলেন যে এইভাবে হবে না; হবে-না ভাল কথা কিন্তু উপায় কি? প্রথম কাজ হল কথা বন্ধ করে দেয়া এবং পাত্তা না দেয়া। ফলাফল হল ভয়াবহ! আমাদের পাহারা দেয়া নিয়ে তাঁরা তীব্র আপত্তি জানিয়ে বসলেন এবং পাহারা দেয়া থেকে আমাদের বাদ দিয়ে দেয়া হল। বাদ দেয়ার পর সেই গ্রুপের লিডার, আমার বড় ফুপুর ছেলে আমাদের বলে বসলেন, ‘ডাকাত আসলে-তো ভয়ে প্যান্ট খারাপ করে ফেলবি!’ এত বড় কথা!
ঠিক করা হল কঠিন শাস্তি দিতে হবে। কঠিন শাস্তি দেয়ার আগে নিয়ম হচ্ছে সাবধান করে চিঠি’র নামে চরমপত্র পাঠাতে হয়, আমরা চরমপত্র পাঠালাম। সেই চরমপত্রে রক্ত দিয়ে নাম লিখতে হয়, তাই শুনে চাচা ঘ্যাচাং করে তার আঙুল কেটে ফেললেন কিন্তু সবাই সেটা করতে রাজি হল-না। মুরগীর রক্ত জোগাড় করা হল, তারপর একটা কাগজে লিখা হল, ‘এখন-ও সময় আছে, আমাদের পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দেয়ার জন্য বড়দের না বললে কিছুদিনের মধ্যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। আমরা জানি আপনারা লুকিয়ে লুকিয়ে কি করেন, সবাইকে বলে দেব...’ তারপর মুরগীর রক্ত দিয়ে আমাদের সবার নাম লিখা হল। ‘আপনারা লুকিয়ে লুকিয়ে কি কি করেন’ এই কথাগুলো নিয়ে তাদের’কে ব্যাপক পেরেশান দেখা গেল, কিন্তু রক্তে রঞ্জিত সেই চরমপত্র তারা পাত্তাই দিলেন-না, আমরা-ও দূরত্ব বজায় রাখলাম। পাল্টা শাস্তি হিসেবে বরং এইবার আমাদের আরও দুইজন’কে পিঁপড়ের ঢিবিতে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হল! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে চরম ব্যবস্থা নিতে হয়, আমরা তাই করলাম। বিয়ে উপলক্ষে প্রচুর পটকা, তারাবাতি আর মরিচা-বাতি কেনা হয়েছে বড়দের না জানিয়ে, সিদ্ধান্ত নেয়া হল সেগুলো কাজে লাগানো হবে। রাতের বেলা তাঁরা ঘুমান সবচাইতে দূরের ঘরে, আশেপাশে প্রাচীন বড় বড় গাছ ঘিরে শুধু বাঁশঝাড়, পুরো পথ অন্ধকার থাকে বলে খুব নিরিবিলি, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ যায়-না; এবং সেই ঘরে তাঁরা খুব সিগারেট খান, সাথে বিড়ি; সিদ্ধান্ত নেয়া হল আমরা সেখানে যেয়ে হামলা করবো। পাঁচ-ছয়’টা পটকা একসাথে বাঁধা হল শুকনো দড়ি’তে, এইরকম চারটা ক্লাস্টার বোমা বানানোর পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেয়া হল মরিচা-বাতি জ্বালিয়ে ভেতরের ঘরে ছেড়ে দিতে হবে। যুদ্ধ পরিকল্পনা কাগজে জটিল জটিল সব রেখা টেনে টেনে করতে হয়, তারপর সেটা সবাই’কে দেখাতে হয়, গম্ভীর মুখে মতামত দিতে হয় -- সব-ই করা হল। আমাদের দুইজন মলিন মুখে কাজটা ঠিক হচ্ছে কিনা তা জানতে চাইলে তাদের দিকে আমরা সবাই মিলে এমন জ্বালাময়ী দৃষ্টি দিলাম যে তারা চুপসে গেল।
রাতের আক্রমণে মুখে কাল রঙ মাখার নিয়ম, মুখোশ-ও পড়তে হয়, মুখের রঙ পরিষ্কার করা নিয়ে ব্যাপক সমস্যা হবে ভেবে সেটা বাদ দেয়া হল, মুখোশ পাওয়া গেল-না; আক্রমণের পর ধোপদুরস্ত হয়ে ঘরে যেতে হবে, সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবাই হাফ প্যান্ট (লুঙি হলে কাছা) খালি গায়ে আক্রমণে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হলাম, গায়ের জামা-কাপড় সব খুলে রাখা হল সেই ঘরের পাশে একটা বাঁশঝাড়ে। রাতের খাবার খাওয়া শুরু হওয়ার আগে আক্রমণের “জিরো-আওয়ার”, আলম আমাদের মনে করিয়ে দিল, ‘বলছে যে ডাকাত আসলে আমরা প্যান্ট ভিজায়ে ফেলবো, কত বড় অপমান!’ সবার ভেতর একটা দাবাগ্নি জ্বলে উঠলো যেন! আমরা দলে ভাগ হয়ে গেলাম; আক্রমণের আগে একদম কাছে যেয়ে ক্রলিং করার নিয়ম, আমরা ক্রলিং করে চলে গেলাম ঘরের দুই জানলা’র পাশে। নজরুল পেছন দিকে থেকে তরতর করে উঠে গেল একটা গাছ বেয়ে, গাছের একটা ডাল ধরে দোল খেয়ে নেমে এলো ঘরের টিনের চালে’র উপর, তারপর মৃদু পায়ে হাঁটতে শুরু করলো। ঘরের ভেতর থেকে কেউ একজন ‘ক্যারে-এএএ!’ ধরনের কিছু বলতেই নজরুল খোনা গলায় সেই স্যাডিস্ট অতিথি’র নাম ধরে ডাকতে শুরু করলো, ‘মাঁছ খাঁবো, মাঁছ দেঁ-এঁএঁএঁ’... সাথে সাথে বাড়ল টিনের চালে ক্যাঁচক্যাঁচ-মচমচ আওয়াজ। ঘরের ভেতর প্রথমে নেমে এলো পরিপূর্ণ নীরবতা, তারপর ঘরের ভেতর থেকে একটা ভাঙা গলায় কেউ কিছু একটা বলতেই পরিকল্পনা মোতাবেক প্রথমে একটা তারাবাতি উঠে গেল আকাশে, সাথে সাথে শুরু হল ত্রিমুখী আক্রমণ! উপর থেকে নজরুলের হাতে থাকা কাঠের গদা দিয়ে টিনের চালে ধুমধাম আওয়াজ, দুই জানালা দিয়ে সলতেয় আগুন জ্বালিয়ে ক্লাস্টার বোমা আর মরিচা-বাতি ফেলা হল ঘরের ভেতর; তারপর আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে জমা করে রাখা সিগারেটে আর বিড়ি’র ভাঙা টুকরো জানলা দিয়ে ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে দিয়ে উধাও! কলেজ-পড়ুয়া গ্রুপ ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসার আগেই বাড়ী’র সবাই চলে এলো তাদের কাছে... আমরা সবাই পরিকল্পনামত সেই বাঁশঝাড়, তারপর পেছন দিক দিয়ে খালে ডুব দিয়ে বাড়ী’র কাছে এসে ‘এত হৈ-চৈ কেন, কি হয়েছে?’ এমন ভাব করে আবার চলে এলাম বাড়ী’র ভেতর!
ফলাফল হল একেবারে অপ্রত্যাশিত রকম ভাল। সবাই কিভাবে যেন নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে কলেজ-পড়ুয়া গ্রুপ নিজ থেকে পটকা আর বোমা ফাটিয়েছে এবং সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার- এরা এই বয়সে বিড়ি-সিগারেট খায়! যারা এই বয়সে বিড়ি-সিগারেট খায় তারা স---ব করতে পারে! যা হয় সাধারণত, একটা খারাপ কিছু হলে, পূর্বজন্মের সব খারাপ বিষয়গুলো মানুষের মনে পড়তে থাকে, সবার তাই নিয়ম করে এই গ্রুপের লোকজনের নানান অপকর্মের কথা মনে পড়তেই থাকলো; পরদিন দুপুরের ভেতর এই গ্রুপের উপর থেকে সবার আস্থা উঠে গেল পুরোপুরি। আমরা তাল মেলালাম, সুযোগ পেলেই সবাই’কে বলে দিতে লাগলাম যে আমাদের সাথে কি ভয়াবহরকম খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে গত কয়েকটা দিন, পিঁপড়ের ঢিবি’তে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হল সবচাইতে বেশি। একদম ছিঃ ছিঃ পড়ে গেল আত্মীয় মহলে! (এই দুর্নাম নিয়ে তাদের চলতে হয়েছে সুদীর্ঘ সময়, বড় ফুপু’র ছেলে আমাদের সাথে এরপর প্রথম কথা বলেন তাঁর বিয়ের সময়।)
সেদিন রাতের বেলাতেই আমরা দলে ভাগ হয়ে হয়ে পাহারারত গ্রুপের সাথে মিশে গেলাম, তারপর আস্তে আস্তে একসাথে হয়ে চলে গেলাম স্কুল-ঘরের বারান্দায়। কেউ কিছু বলল না। তারপরের রাতে-ও একইরকম ঘটনা ঘটলো। আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম আর ঝামেলা নেই। কিন্তু ডাকাত-তো আর আসে-না! আমাদের এই নিয়ে খুব মন খারাপ, ডাকাত যদি না আসে তাহলে ‘দুর্ধর্ষ-দুরন্ত’ দল বীরত্ব দেখাবে কিভাবে! ডাকাত এলো প্রথম বিয়ের আগের রাতে...
ছিপ নৌকা বলে একধরনের নৌকা আছে, অসম্ভব দ্রুতগতি’র। বিয়ে-বাড়ী’র পেছনে যে খাল সে খাল নদী থেকে এসে মিশেছে, তারপর পেছন দিক দিয়েই চলে গেছে আরও দূরে রেললাইন এর সমান্তরাল একটা রেখা ধরে; মানে, পেছন দিকে দিয়ে জলে-স্থলে যে-কোন দিক দিয়ে এসে আবার চলে যাওয়ার মত প্রচুর সুযোগ। বর্ষাকাল, সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছে, রাতে-ও প্রবল বৃষ্টি, আমরা তখন দিন-রাত ভিজি কিন্তু আমাদের সর্দি লাগে-না। রাতের বেলা বসে আছি স্কুল ঘরের বারান্দায়, প্রবল বৃষ্টির আওয়াজে আর কোন শব্দ নেই, হুট করে একজন জানালো যে কৈবর্ত পাড়ার দিক থেকে চিৎকার ভেসে আসছে। আমরা কেউ কোন শব্দ টের পেলাম-না। পাশাপাশি, টর্চ জ্বালানোর কথা, টর্চ জ্বলতে-ও দেখা যাচ্ছে না। সবাই একদম চুপচাপ বসে আছি, হটাত করে চাচা জানালেন যে আমাদের বাইরে বের হওয়া দরকার, বৃষ্টির কারণে মনে হয় টর্চের আলো আসছে না এতদূর। বলতে না বলতেই দেখলাম রাস্তায় দুইটা টর্চ নাচতে নাচতে চলেছে আর দুইজন মানুষ প্রবল চিৎকার করতে করতে চলেছেন, ‘ডেহাইত (ডাকাত) আইতাছে-গো, ডেহাইত আইতাছে-এএএ!’
আসল মুহূর্তে কি করতে হবে তা আসলে আমরা জানি না, পুরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছি। তারপর ফুপাত ভাই আর নজরুল দৌড় দিলো বাড়ী’র দিকে একইরকমভাবে চিৎকার করতে করতে। স্কুল-ঘরের পেছনে একটা গর্ত খুড়ে সেখানে তিনটা ছালা’র ব্যাগে রাখা ছিল আমাদের সব খেলনা অস্ত্রপাতি, কে যেন সেটা মনে করিয়ে দিতে আমরা সেদিকে রওনা দিতেই দেখলাম বৃষ্টির ভেতর দিয়ে দূরে তিনটা বিন্দু বড় হচ্ছে ক্রমাগত। চাচা প্রচণ্ড জোরে একটা চিৎকার করলেন ‘ধর ধর’ বলে, আমরা-ও চিৎকার শুরু করলাম, চাচা আমাকে একটা ছালা’র ব্যাগ দিলেন, তাঁর হাতে আরেকটা, আমার দৌড়াতে শুরু করলাম বাড়ী’র দিকে। ততক্ষণে চারপাশ চিৎকারে চিৎকারে ভরে গেছে, পুরো গ্রাম জেগে উঠছে... বাড়ী’র ভেতর থেকে একটা বন্দুক গর্জে উঠলো, পশ্চিম পাড়া থেকে আরেকটা বন্দুকের আওয়াজ ভেসে এলো। আমরা দৌড়ে চলে গেলাম বাড়ী’র কাছাকাছি; বাড়ী’র পেছনের লোহার গেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঘড়ঘড় শব্দ করে কিন্তু একপাশের দেয়ালের উচ্চতা কম, সবাই মিলে ফুপা’কে দেয়াল নিচু করে বানানোর জন্য দোষ দিতে শুরু করলো, তিনি সমানে দোয়া পড়ছেন... নজরুল দেয়ালের পাশে একটা উঁচু গাছে উঠে গেল, তারপর শুরু করলো উচ্চস্বরে ধারাবর্ণনা দেয়া- ‘বাচ্চু চাচার বাড়ীর সামনে খালের হেই পাড়ে একটা টর্চ জ্বলছে কয়েকবার... তিনটা ছিপ নৌকা, মানুষে ভর্তি... নৌকা তিনটা যেখানে টর্চ জ্বলছে সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে...’ কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে চারিদিক থেকে, উচ্চস্বরে দোয়া-দরুদ পড়ছে সবাই, কে-যেন একটা প্রচণ্ড ধমক দিতেই সব কান্না বন্ধ হয়ে গেল, তারপর সুনসান নীরবতা। পশ্চিম পাড়া থেকে আরেকবার বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ হল, কিন্তু ফুপা’র হাতে’র বন্দুক থেকে আর গুলি হয়-না... আবার উচ্চকিত কান্নার শব্দে ভরে গেল চারপাশ... হটাত করে নজরুল বলতে লাগলো যে কৈবর্ত পাড়া’র দিকে, পশ্চিম পাড়া’র দিকে, খালের উল্টো পাশে’র দূরের গ্রামে অসংখ্য আলো দেখা যাচ্ছে, সাথে বাড়ছে চিৎকার...
কতটা সময় গেলে পরে সময়ের টুকরো-টুকরো ঘটনাগুলো প্রবল উত্তেজনা’য় হারিয়ে যায় -- আমাদের জানা নেই। আমার শুধু এতোটুকু মনে আছে যে তারপর নৌকাগুলো প্রচণ্ড জোরে খালের ওপার ঘেঁষে চলে যায়, যাওয়ার আগে তারা একসাথে অনেকগুলো টর্চের তীব্র আলো দেয়ালের উপর ফেলতেই একটা আলো-ছায়া তৈরি হল, আমি তাকিয়ে দেখি আমার পাশে আমার চাচা-বন্ধু...... তারপর চারিদিকে আর কোন আলো নেই, আর কোন শব্দ নেই, শুধু নিরাপদ নৈঃশব্দ্য...
মন্তব্য
মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে শ্বাসরুদ্ধ অভিজ্ঞতা পড়ার দারুণ অভিজ্ঞতা হয়ে গেল এ যাত্রা!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
বাহ, দারুণ লাগলো তানিম সয়্যার
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দারুণ !
দুর্ধর্ষ দুরন্ত গল্প হইসে।
- একলহমা
অসাধারণ! এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম।
ধন্যবাদ শান্ত মৃদুল।
অসাধারণ! মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ছিলাম----
-এস এম নিয়াজ মাওলা
ধন্যবাদ ভাই।
বাহ্ ! দারুণ হয়েছে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ দাদাভাই।
ডাকাতি তাহলে ঠেকিয়েই দিলেন আপনারা! দারুন লেখা! রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেললাম।
সুহাস শিমন
ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছিল বলা যাবে কি? বরং চিৎকার, চারপাশে আলো, মানুষের জেগে যাওয়া আর দুইপাশ থেকে বন্দুকের গুলি’র কারণেই মনে হয় ডাকাতের দল হামলা না করেই চলে গিয়েছিল। এবং এর পুরো কৃতিত্ব আসলে কৈবর্ত পাড়ার মানুষের, ডাকাত দল নদী’র বাঁকে আসার আগেই তাঁরা খবর’টা পৌঁছে দিতে পেরেছিল... ডাকাত ঠেকিয়ে দেয়ার বেলায় সংঘর্ষ হয়, এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে, মেজ ফুপু’র বিয়ের সময়, সেটা আক্ষরিক অর্থেই ঠেকিয়ে দেয়া ছিল; রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বলা যায়, আমি তখন খুব ছোট, পুরোপুরি মনে নেই, আরও অনেকের সাথে আমার বড় মা (বড় চাচী) সেটাতে খুব বেশি রকম আঘাতপ্রাপ্ত হন, আঘাতপ্রাপ্ত অজ্ঞান চাচা’কে বাঁচাতে যেয়ে ডাকাতের ক্রমাগত আঘাত তিনি নিজের শরীরে নেন, বহুদিন শয্যাশায়ী থাকার পর মারা যান। আমাদের হাওর এলাকায় একটা সময় বিয়েবাড়ি মানেই ডাকাতের আক্রমণ অবধারিত ছিল।
ধন্যবাদ সুহাস শিমন।
"ছিপ নৌকা বলে একধরনের নৌকা আছে, অসম্ভব দ্রুতগতি’র"
- এটা কি সেই "ছিপখান তিন দাঁড় তিনজন মাল্লা"?
বড়দের ভয় দেখানোটা কীযে মজার হয়েছে - ছেলেবেলার কিছু ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
সবমিলিয়ে হাকলবেরি ফিনের থেকেও ভালো লাগলো (ওখানে শেষ দিকে এরকম ডাকাত ধরার একটা পর্ ছিল না?) -স্বচ্ছন্দ্য গদ্য, ঝরঝরে ভাষা আর আশৈশব চেনা আবহ মিলিয়ে জম্পেশ একটা ঝালমুড়ি!!
____________________________
বড়দের ভয় দেখানোর ঘটনা আরও ঘটেছিল সেবার। আমরা সমবয়সী ছেলেদের প্রায় ১৫ জনের একটা দল ছিলাম শুরুতে, প্রথম প্রথম জড়তা থাকলেও পরে মেয়েরা আমাদের সাথে যোগ দিতে শুরু করে, সে এক বিশাল দল! তুমুল সব ঘটনা ঘটিয়েছিলাম সবাই মিলে, শুধু বিয়ে বাড়ি না, পুরো গ্রাম জুড়ে ছিল আমাদের রাজত্ব।
ছিপ নৌকায় আমি আরও বেশি দাঁড়-ও দেখেছি, খুব সম্ভবত যেভাবে প্রয়োজন হয় সেভাবে বানানো, আমি নিশ্চিত নই।
ধন্যবাদ প্রোফেসর সাহেব!
ধন্যবাদ নজু ভাই।
এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। দারুণ!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
'নরজুল' এর পর থেকে অন্যরকম লেখা পড়ছি - চলুক।
কি জানি, খুব বেশি স্মৃতি কাতর হয়ে গেছি হুট করে কিন্তু যেটা ভাল লাগছে সেটা হচ্ছে এই ধরনের মজার ঘটনাগুলো আবেশ ছড়িয়ে রেখেছে চারিদিকে...
‘দুর্ধর্ষ তানিম’ আমার পরবর্তী সিনেমা। ফাইনাল। সিকু্যয়াল করব কিনা বুঝতে পারতেছি না।
স্বয়ম
কন কি! খাইসে, সিনেমা বানাইবেন! বানান, আমারে সাথে রাইখেন, আরও সব ঘটনা আছে, সব একসাথে করে জটিল সিনেমা বানান যাইবো।
আরে না, আমি খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা ধরনের মানুষ, দুর্ধর্ষ সবার সাথে একসাথে হয়েছিলাম বলেই না এরকম-সব ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পেরেছিলাম।
ধন্যবাদ স্বয়ম।
অসাধারণ বর্ণনা !
বহুদিন পর হাত কাটা রবিনের কথা মনে পড়লো। শিউরে ওঠার মত ব্যাপার !
ধন্যবাদ সাত্যকি!
দারুণ! দারুণ!
সবটা মনে থাকবে কী করে? ভয়ে তো আপনি তখন ফিট খেয়ে ছিলেন। সেকথা কেমন সুন্দর গোপন করলেন
তাই-তো। আমি মনে হয় আসলেই ফিট হয়ে গেছিলাম
নতুন মন্তব্য করুন