আমাদের দিন ছিল রোদ্দুরে, দুপুরের আলোয়ানে মিঠে সব বাতাসের সাথে ছিল একটি প্রফুল্ল বাঁশী সহজাত, দুইটি তবুও ঘুঘু- ডেকেছিল দূরে! বউচি বিকেলে ছিল ডাংগুলি ধুলোদের ষোলঘর-ষোলঘুঁটি, আরও ছিল কানামাছি শেষ আলো ছুঁয়ে যাওয়া ঘুড়িদের আশ্চর্য নাটাই। সন্ধ্যার এলো চুলে তবুও লুকোনো ছিল কতিপয় বিকেলের ঘ্রাণ, আঘ্রাণে মিশে ছিল জলচর এটেল-দোআঁশ। আমাদের ঝোপ নামে ছিল সব ঝাড়বাতি, এলোমেলো কিছুটা সবাক জোনাকি। আমাদের কিন্নর রাত ছিল খোলামেলা জানালায় বুনোফুল চাঁদ, দরোজার নাম ছিল আধখোলা...
আমাদের বসতি গৃহে তবুও গাছেরা জীবিত ছিল আহ্লাদিত বনে! সাধ ছিল চৌকাঠে পরবাসী, মসলিন মাটির প্রলেপে ছিল আধ-ভাঙা চুড়ি, রমণীয় নাম ছিল উষ্ণতা, উঠোনের আকাঙ্ক্ষা ছিল পড়শি ডাহুক। মন্থর পিদিমে-লন্ঠনে ছিল কৃষকের কবিগান-যাত্রা-পালা, কিষাণী সুনাম ছিল সুরে। আমাদের বৈঠার হাল ছিল তিন-দাঁড়ে, মধুমতী সাধ ছিল শাপলা-শালুক! মেঘবতী সমাজের নাম ছিল মল্লারে! আমাদের গোয়ালা ঘাসে জীবদের নাম ছিল আদুরী-সোহাগী, জালহীন মাছেদের নাম ছিল পাবদা-তপসে-বাতাসী। আলতায় রাঙানো ঘানি নিজ থেকে গানখানি গেয়ে যেতো সময়ের -- প্রিয়তোষ সরষের দোটানা শরীর ভেঙে ঝরে যেত কাঁকইয়ের এলায়িত ঘুম!
আমাদের আঁচলের ডাক ছিল মাতৃক, পৈত্রিক ভিটে ছিল খড়িমাটি, পাললিক ভগিনী’র ছিল ভাইফোঁটা সাধখানি ঢের! আমাদের ফুল ছিল অভিমানী, ডাকঘরে জমা ছিল ঝরে যাওয়া পাতা- কোমলতা-ভাষা; আমাদের আবেগের জুটেছিল পৌষালি কিছুটা শিশির- নিমগ্ন। আমাদের মরমের ধার্মিক পরিভাষা জানা ছিল, মর্মে’র চারণে আলেখ্য লিখেছিল সর্বনাম মানুষেরা- মানুষেরা...
আমাদের গ্রামটির পুরোভাগে নাম ছিল চৈতন্যপুর, পরিশেষে পোড়াদহ- নোনাজলে.......... বাঙালীর ভুলে যেতে নাম ছিল বাকি!
উৎসর্গ: লেনিন ভাই, সবসময় চিকিৎসা নিতে যাই কিন্তু আড্ডা দিতে বেশি লাগে ভাল। এই লেখা’র প্রথম লাইনটুকু সবার আগে শুনেছিলেন যিনি!
মন্তব্য
বাহ! গদ্য ছন্দে লেখা মায়াময়তা, কি যেন এক শান্তির পরশ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। আবার দিলো কিছু নাম না জানা বিষন্নতা।
মাসুদ সজীব
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আহ্ কি মায়ামাখা লেখা! মন জুড়িয়ে গেল ভাই, সত্যিই!
ভাল থাকুন।
গান্ধর্বী
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমাদের সেই গ্রামের নামটি অঞ্জনা ---
জায়গামত এন্টার দিলে যা দারুন একটা কবিতা হবে না!!!
____________________________
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে প্রোফেসর, শুভেচ্ছা রইলো কষ্টটুকু করার জন্য।
আমি কিন্তু এভাবে না ভেঙ্গে গদ্যকবিতা হিসেবে পড়ে বেশী আরাম পেয়েছি। কোনদিন যদি কবিতা লেখা নিয়ে কোন ব্লগ লিখি, এই কবিতা সেখানে নমুনা হিসেবে কাজে লাগানোর ইচ্ছে রইল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন।
''আমাদের মরমের ধার্মিক পরিভাষা জানা ছিল, মর্মে’র চারণে আলেখ্য লিখেছিল সর্বনাম মানুষেরা- মানুষেরা...''
সুন্দর লিখেছেন। ছন্দের তালে তালে গদ্য লেখা-অভিনব।
শব্দ পথিক
নভেম্বর ৭, ২০১৩
ধন্যবাদ শব্দ পথিক।
বাহ্, কী সুন্দর
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজু ভাই
এমন মায়াময় গদ্য পড়েছিলাম হুমায়ুন আজাদ এর 'ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা' তে ।।
ধন্যবাদ মামুন মাহমুদ
এ কেমন ব্যবহার কবি, গরীব পাঠকের সাথে কেমন রগড়!
দুরন্ত কবিতা লিখে খামখা ট্যাগায় দিলেন 'ব্লগরব্লগর'!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
রগড় কি ব্যবহারে হয়, গরীব মানুষে?
ব্লগরব্লগর মানে যা লিখি আবেশে...
কবিতা কি ট্যাগ বুঝে- পাঠক সহায়,
এক লহমার আবেগে সব মুছে যায়
যাপিত জীবনের ক্লেদ কিংবা গ্লানি!
ধন্যবাদ আপনাকে
facebook
বরাবরের মতই মায়াবী
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ
নমস্য তুমি হে কবি।
ভালো থেকো তানিম।
শুভেচ্ছা, নিরন্তর।
--------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
ধন্যবাদ পলাশ ভাই। নিরন্তর শুভকামনা।
দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল কবিতাটি । না পড়লে মিস্ করতাম। অনেক দূরে গিয়েছিলাম হেঁটে হেঁটে, কবিতার হাত ধরে ।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
ধন্যবাদ শাহীন ভাই
নতুন মন্তব্য করুন