শাস্তি প্রদানের ক্ষণটুকু থেকে মানুষের সাথে কথা হচ্ছে, কোথাও সরাসরি, কোথাও কান পেতে শুনছি। একটা সরল উপসংহারে পৌঁছালে যা পাওয়া যাচ্ছে,
১) শাস্তি দিয়েছে ঠিক আছে, খুব ভাল কাজ হয়েছে কিন্তু এখন শান্তি দরকার, এইভাবে কতদিন চলতে পারে? (তার মানে বিচার বন্ধ করে দিতে হবে???) ২) ঢাকা শহর’কে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে, সরকার সামলাতে পারছে-না, কয়েকদিন পর ঘরে ঘরে আক্রমণ হবে, এইভাবে আর কয়দিন? ৩) আম্রিকা, ইউরোপ সহায়তা করছে-না বর্তমান সরকার’কে, যে-কোন মুহূর্তে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হতে পারে, আমরা তখন কোথায় যাবো? ৪) পাকিস্তান এর আস্পর্ধা খুব বেড়ে গেছে, প্রতিবাদ করা দরকার কিন্তু বেশি কিছু করতে গেলে আবার ঝামেলা হয়ে যেতে পারে, পারে-না? ৫) বিএনপি জামাতের সঙ্গ ছাড়ছে-না কারণ আওয়ামী লীগ চায়-না, আওয়ামী লীগের ভেতরে-ও রাজাকার আছে, সব দলে রাজাকার আছে, ওরা খুব শক্তিশালী, আমাদের কে আছে? আমাদের কে দেখবে? ৬) বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দলগুলো একটা আরেকটাকে দেখতে পারতো-না, আওয়ামী লীগ এদের’কে একসাথে হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে, পাকিস্তানের মত একটা সিচুয়েশন তৈরি হচ্ছে, দুইদিন পর জানমালের নিরাপত্তা কে দেবে? ৭) ইত্যাদি ইত্যাদি......
এই কথাগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা হচ্ছে, প্রতিটা বক্তব্যের শেষে একটা করে প্রশ্ন। এরা চিরকাল প্রশ্ন করে গেছে, করতেই থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় কিন্তু কথা দিয়ে আরেকজনের মনে অশান্তি তৈরি’তে তার দক্ষতা মোটামুটি আন্তর্জাতিক মানের। এবং সবচাইতে বড় যে বিষয়টা খেয়াল করলাম সেটি হচ্ছে ভয়, খুব সুকৌশলে মানুষের ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ব্যবহার করতে পারলে ভয় একটা কার্যকর অস্ত্র। মানসিকভাবে ভীত করে তোলার পাশাপাশি বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সংস্কৃতি কর্মীদের উপর বেছে বেছে হামলা হচ্ছে, বাড়ী-ঘরে বোমা মারা হচ্ছে, ককটেল মারা হচ্ছে। জামাত চাইছে সবাই আরও বেশি ভয় পাক, ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাক।
জামাতের কর্মীদের দলের প্রতি আনুগত্য প্রশ্নাতীত, যে-কারণে তিনজন মানুষের মধ্যে একজন জামাতি থাকলে সে বাকি দুইজন’কে আলাদা করে ফেলবে; ‘ডিভাইড এন্ড কনকার’ সে শেখে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে এবং সচেতনভাবেই এর প্রয়োগ ঘটায়। সবাইকে দলে টানার প্রয়োজন নেই, শেকড়ে বিশ্বাসের জায়গায় একজন দ্বিধাগ্রস্ত মানুষ জামাতের জন্য আরও ভাল, এমন একজন মানুষ আরও দশজন’কে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে নিজের অজান্তে। কিছু মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে স্বচ্ছ এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভীতু, এরা ভয় হাতড়ে বেড়ায়, নিজেদের খেয়ে ফেলা ভয় ছড়িয়ে বেড়ায়, এইসব ‘ভয়-হাতুড়ে’ মানুষগুলো চিরকাল জামাতের পারপাস সার্ভ করে যাচ্ছে। চিরস্থায়ী শান্তির সুবাতাস কোন ছেলের হাতে মোয়া নয় যে চাইলেই গাছ থেকে থোকা থোকা পেড়ে এনে খাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে শিক্ষিত, সুবিধাভোগী এই ‘ভয়-হাতুড়ে’ জম্বিগুলো জামাতের হয়ে সব কাজ করে দিচ্ছে।
উপরের ছয়টি প্রশ্নের উত্তর অন্তত সচলায়তনে দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি প্রথম প্যারায় তাকাই তাহলে যে প্রশ্নটা দিয়ে শেষ হয়েছে সেটা দিয়ে আবার শুরু করি। আর সবার কথা বাদ দিলাম, একজন কসাই কাদের কী অন্তত জামাতের কাছে মূল বিবেচ্য, যে কারণে সে সারাদেশ জুড়ে জামাত তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি বহির্বিশ্বে লবিইস্ট নিয়োগ পর্যন্ত করা হয়েছে, বস্তায় বস্তায় টাকা ঢালা হচ্ছে? একজন দেইল্লা চোরা কী মূল বিবেচ্য যার কারণে মহাবিশ্বে চাঁদের নামে ঢি ঢি পড়ে গেছে? বিষয়টা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত? উত্তরের জায়গায় বাংলাদেশের মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে কিন্তু জামাত একদম পরিষ্কার শুরু থেকেই, দলীয় নেতাদের সে সাংগঠনিক স্বীকৃতি এখন-ও দিয়ে যাচ্ছে, দিয়ে যাবে-ই; সেই স্বীকৃতি তারা তাদের বাবা নাপাকিস্তান থেকেও পেয়ে গেছে।
জামাতের এটা অস্তিত্বের লড়াই, এমন একটা অস্তিত্ব যার শুরু থেকে বর্তমান এমনকি ভবিষ্যৎ পর্যন্ত অপর নাম বিশ্বাসঘাতকতা, যার শেকড় কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক আফিমে মোহাচ্ছন্ন, প্রশাখায় শঠতা, শাখায় শাখায় মওদুদীবাদের আলখাল্লা, পাতায় পাতায় মিথ্যার বেসাতি, রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিংস্রতা, বর্বরতা আর অন্ধত্ব। মুক্তিযুদ্ধের পর ঘাপটি মেরে থেকে মানুষের ভেতর এরা ছড়িয়ে বেড়িয়েছে ভয়, গুজব, দ্বন্দ্ব আর দ্বিধা, তারপর যখন সময় এসেছে সেইসব দ্বিধাগ্রস্ত, সন্দেহপ্রবণ মানুষগুলোর কাঁধে ভর দিয়ে এরা ইতিহাস বিকৃত করতে করতে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি করে ফেলেছিল। তারা এতো সহজে আপনাকে, আমাকে মুক্তি পেতে দেবে?
লড়াইটা ব্যক্তিগত, তাই কেবলমাত্র দলীয় কোন বিভক্তিতে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে নেই, আপনি হাঁটু দিয়ে হাতড়ে দেখলেই কেবল সেটা পেতে পারেন। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে একটা মহৎ পর্বত-চূড়ায়, নীচে ৪২ বছরের মীমাংসিত ইতিহাস যার অমীমাংসিত ক্ষত আর পচনগুলো এখনও দূর করা বাকি। ইতিহাস বিনির্মাণের জন্য এই চূড়া থেকে আমরা যদি স্পাইডারম্যান-সুপারম্যান হয়ে নেমে যাবার স্বপ্ন দেখি তাহলে আমরা বোকা। আর যদি মনে করি সেখান থেকে সড়াৎ করে স্লাইড করে নেমে যাওয়া যাবে তাহলে আমরা মহামূর্খ! ইতিহাসে যখন রাজনীতি ক্লেদাক্ত থাবা নিয়ে হামলে পড়ে এবং আমরা যখন সেটা মেনে নিতে পারি না তখন আমাদের করণীয় কর্তব্য শুধু ইতিহাসের উপর বিশ্বাস রেখে পথে অবিচল হেঁটে যাওয়া, লড়াইটা ব্যক্তিগত, সবসময়...
ভয় পাওয়া ভাল, ভুল-ত্রুটি কম হয় কিন্তু ভয় খাওয়া ভাল-না, আরও খারাপ ভয় ছড়ানো। শীত চলে এসেছে, ভয় খাওয়া বাদ দিয়ে বেশি করে শীতের শাক-সবজী খেলে, সন্ধেবেলা নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেললে কিংবা শুধুমাত্র নিয়ম করে হাঁটলে শরীর ঠিক থাকবে, কাজকর্মে মন বসবে বেশি। আমরা চিরকাল পেরেছি, রক্তের দাম দিয়ে জয় করে নিতে শিখেছি স্বাধীনতা, এবার-ও পারবো। লড়াই চলুক! জয় বাংলা!
মন্তব্য
এই কথাটা, তানিম ভাই, দারুণ বলেছেন। এদের প্রশ্ন কখনোই শেষ হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। আপনি সবগুলো প্রশ্নই বলে দিয়েছেন। সঙ্গে আর একটা প্রশ্ন যোগ করতে পারেন। আপাত রাজাকারবিরোধী এক লোক সেদিন বলছিলঃ
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
এইরকম কথা এই প্রথম শুনলাম। সবাই বলে ইচ্ছে করে দেরি করেছে।
লড়াই চলুক!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
চলুক!
কথা একটাই - এ লড়াই জিততেই হবে।
সে আর বলতে।
৭১ এ প্রগতিশীল বাঙালি সংখ্যায় কম হয়ে ও ভয় পেয়ে কখনো নিজের অস্তিত্বের জায়গাটুক ছেড়ে দেয়নি, নিজেরক শিকড় কে ছেড়ে অন্যের শিকড়ে আশ্রয় নেয়নি। সুতরাং ২০১৩তে এসেও সেই একি অস্তিত্বের যুদ্ধে, সেই শিকড়ের কাছে পৌছানোর যুদ্ধেও মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারনকারী প্রজন্ম ভয় পাচ্ছে না, পিছু পা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। লড়াই চলছে, লড়াই চলবে, জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।
মাসুদ সজীব
সেই শিকড়ের কাছে পৌছানোর যুদ্ধেও মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারনকারী প্রজন্ম ভয় পাচ্ছে না, পিছু পা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। লড়াই চলছে, লড়াই চলবে, জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।
"মুক্তিযুদ্ধের পর ঘাপটি মেরে থেকে মানুষের ভেতর এরা ছড়িয়ে বেড়িয়েছে ভয়, গুজব, দ্বন্দ্ব আর দ্বিধা, তারপর যখন সময় এসেছে সেইসব দ্বিধাগ্রস্ত, সন্দেহপ্রবণ মানুষগুলোর কাঁধে ভর দিয়ে এরা ইতিহাস বিকৃত করতে করতে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি করে ফেলেছিল। তারা এতো সহজে আপনাকে, আমাকে মুক্তি পেতে দেবে?"
অসম্ভব! কঠিন লড়াই সামনে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হ্যাঁ, কঠিন লড়াই। লড়াইটা মানসিক সবার আগে।
সংক্ষেপে টু দ্য পয়েন্ট।
ধন্যবাদ আপনাকে, মন্তব্য করার জন্য।
এইটা একটা কঠিন সত্যি কথা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
‘কিন্তু’, ‘যদি’, ‘না-মানে’, ‘তবে’, ‘হয়তো’ --- মানুষ পারে-ও!!
লড়াই চলবেই।
____________________________
লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অপর নাম-ই মুক্তি!
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন