আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কোল অপঘাতে বড় হয়েছে, তবু-ও ভুল শিক্ষা নেয়া থেকে কেউ বের হয়ে আসতে পারেনি। জামাতে ইসলাম কোলে চড়েছে, কাঁধে উঠেছে, সময়ে পায়ে ধরেছে, নাক ঘষেছে কাঁদতে কাঁদতে, কিন্তু জামাতে ইসলামের উদর কমেনি, বরং প্রতিবার ভিন্নভাবে স্ফীত। সে উদরে যে প্রচুর টাকা আর সেই টাকা থাকে যে ছাকশালে তার রং লাল- আমাদের রক্তে!
জামাতে ইসলাম বাংলাদেশে শুধুমাত্র টাকার কারণে ধোপা হয়ে ধোপে টিকে যাবে, এটা কোনদিন কোনভাবে একমাত্র বিচার্য বিষয় হতে পারে না, যার শেকড় নেই তার আবার বৃক্ষ-প্রদাহ! বিচার্য বিষয় হয়েছে কারণ সে তার অস্তিত্বের রাজনীতি করে, বাকি সবাই শুধু করতে শিখেছে ক্ষমতার বৃত্তাবদ্ধ রাজনীতি। আমি মানতে রাজি আছি ধাপে ধাপে সব হয়, আমি প্রতীক্ষা করেছি আশৈশব, আমাদের উদ্ভাসিত স্বাধীনতার সুমহান ঔদার্যে সমস্ত গ্লানি কোনদিন ধুয়ে মুছে যায়নি, বারবার জন্ম হয়েছে নতুন প্রতীক্ষার। যারা বলেন বিষয়টা সহজ নয় আমি তাদের সাথে-ও দ্বিমত করতে পারি না। আবার একমত হতে পারি না একটা জায়গায়, কতটা ছাড় দিলে পরে আমাদের মেনে নিতে হবে আমরা এগিয়েছি!
ছাড় দেয়া যায়, ছাড়ে একটা ত্যানার দামে যখন তিনটা ত্যানা না চাইলে-ও বয়ে নিয়ে বেড়াতে শিখেছি তখন ছাড়ে আরও ত্যানা কিনে নেয়া যায়, কিন্তু কতবার কিনবো?? দেশাত্মবোধক রাজনীতির সবক নিতে নিতে যখন তাকিয়ে দেখি আড়ালে হায়েনা আর শকুনেরা উঁকিঝুঁকি দেয় টাকার গরমে, তখন ভয় পাইনা বরং প্রচণ্ড রাগ হয়। রাগ কমে গেলে ইতিহাস নিয়ে গর্ব বাড়তেই থাকে, গর্ব একবার বাড়তে থাকলে তা বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে, এতটা বাড়তে থাকে যে তখন আর নিজেকে সভ্য মানুষ হিসেবে ভেবে ঠকে যেতে ইচ্ছে করে না।
লড়ে যাওয়ার স্পর্ধা’র রাশ টেনে ধরা খুব সহজ, কঠিন সেই স্পর্ধার আগুনে সলতে নিভিয়ে দেয়া। প্রতিবাদ প্রতিভূ নয় কিন্তু প্রতিকার চাইতে-ই পারি, চাওয়ার আগে তাকিয়ে দেখতেই পারি কেন চাই, তাকালে চারিদিকে টাকা দেখি না, শহীদের সমাধি চোখে ভাসে! আমরা স্বাধীনতার গর্বোদ্ধত প্রজন্ম, জামাতি টাকার কাছে আমাদের সবকিছু’র স্পন্সরশীপ দিয়ে দিলে দুদিন পরে জামাতি সেন্সরশিপের কাঁচির নিচে নিজেদের দেশপ্রেমের ওজন মাপতে হবে! এটা সম্ভব না, হবে না!
যে গোষ্ঠীর টাকা জাতীয় সঙ্গীত বদলে দিতে উদয়াস্ত প্রচার চালায় চোখ রাঙিয়ে, জাতীয় সঙ্গীতে খুঁজে বেড়ায় ল্যাজের আড়ালে কেন ল্যাজ নেই, সেই গোষ্ঠীর টাকায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে! কোন যুক্তিতে এটা হতে পারে? ১) শত্রুর টাকা কাজে লাগিয়ে কাজ উদ্ধার হচ্ছে, ভাল-তো ভাল না? ২) এর মাধ্যমে জাতীয় সঙ্গীত মেনে নিচ্ছে জামাত, ঠ্যালার নাম বাবাজি! এর চাইতে ভাল হয় ইসলামী ব্যাংকের লোকজন’কে বাধ্যতামূলকভাবে আগামী তিনমাস নিয়ম মেনে যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা সহযোগে নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলা; তিনমাস নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার পর যদি মনে হয় তারা ঠিকমত কাজটা করছে না তাহলে পরবর্তী কর্মসূচী ঠিক করা। ঠ্যালা দিতে হলে ভালমত দিন, আমরা আছি, ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে এখন কারা? আমরা নিশ্চিত জানি তিনি আছেন বলেই এখনো আশায় বুক বাঁধা যায়। কিন্তু তাঁর আশেপাশের সবার উপর আমাদের আস্থা নেই, প্রচুর ত্যাগের বিনিময়ে কিছু ধামাধরা’রা আমাদের আস্থাহীনতা বর্জন করেছেন! ইসলামী ব্যাংকের উপর ভিত্তি করে যে জামাতে ইসলাম মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই ইসলামী ব্যাংক আপনারা বন্ধ করতে পারছেন না, মানলাম, কিন্তু তাই বলে উপুড় হয়ে হাঁটতে হবে!! বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত সবকিছু কি ব্যবসার পণ্য নাকি যে ঠুকরেই খেতে দিতে হবে! এই ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে জামাত কতবড় সুযোগ নিচ্ছে সেটা কেউ একবার ভাবছে না!
এই ৩ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হোক। বাংলাদেশের মানুষ এখনো এতটা মাকাল ফল হয়ে যায়নি যে ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্বরেকর্ডের নিচে ইসলামী ব্যাংকের নাম দেখে কিছুই মনে করবে না। যে দেশ বিশ্বব্যাংক’কে ‘তুমি আঙুল চুষতে থাক আমি আমার টাকায় পদ্মা সেতু বানাবো’ বলতে পারে সেই দেশে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্বরেকর্ডে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের ৩ কোটি টাকা লাগবেই কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এই টাকা ফেরত দিতে বলুন। আর আপনার অগোচরে যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে তাহলে মনে হয় আশেপাশের মানুষগুলোর ব্যাপারে আপনার আরও একটু কঠিন হওয়ার সময় চলে এসেছে।
৩ কোটি দারুণ একটি সংখ্যা বলে মনে হচ্ছে না? ৩০ লক্ষ শহীদের মাথাপিছু কত করে বরাদ্দ দিলে ৩ কোটি টাকার প্রায়শ্চিত্ত হয়! খুব বেশি আস্পর্ধা মনে হচ্ছে না? তাও আবার ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসে! আমরা শিখতে শিখবো কবে! কতটা পথ পাড়ি দিলে ভাল-মন্দ বুঝতে পারবো?
হে রক্ত তুমি ধমনীতে স্থিত থাক- গৌরবে!
মন্তব্য
এর পরে আর কিছু বলার থাকতে পারে না। স্যালুট, তানিম এহসান।
----ইমরান ওয়াহিদ
আওয়ামী লিগের এই আপোসের রাজনীতি যে সবসময় বুমেরাং হয়...এটা আওয়ামী লিগ আর কবে বুঝবে???
সাইদ
জাতীয় সঙ্গীত গাইব , চোখের জলে একলাই গাইব, আমার রেকর্ড লাগবে না ।
যেকোন ছুতোয় জামাতের টাকায় যদি শ্যামলা মাটির বুকে দাঁড়িয়ে এই গান গাইলে ,এই মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা শহীদেরা ক্ষমা করবে না । যুক্তি দিয়ে কেউ প্লিজ সরকারের এই কাজ জাস্টিফাই করতে যাবেননা ।
এই টাকায় শহীদের রক্ত লেগে আছে ।
রাজর্ষি
এরকমভাবে রেকর্ড করার কীইবা প্রয়োজন?
রেকর্ড লাগবেনা, আমার সংগীত আমি একাই গাইবো।
শুভেচ্ছা
জামাতে ইসলাম বাংলাদেশে শুধুমাত্র টাকার কারণে ধোপা হয়ে ধোপে টিকে যাবে কিনা সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু জামাত বাংলাদেশের শরীরের কোষে কোষে ভাইরাস হয়ে কিভাবে দুষিত করছে এই ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ।
কিছুদিন আগে কোন মন্ত্রী যেন বলেছিলেন (প্রতিষ্ঠাতা/মালিক রাজাকার বলিয়া) ইসলামী ব্যাংককে দূরে ঠেলিবেন না।
সুতরাং টাকার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মেলাইবেন না। সবকিছু আলিদা আলিদা বিচার করতে শিখুন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
কথা শেষ।
আমরা কি এমন রেকর্ড চাই?
শেষ লাইন তা অসাধারন। হে রক্ত তুমি ধমনীতে স্থিত থাক। যথার্থই স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন
কথা সেটাই ......
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ইনু বলেন, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে লাখো কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি হতে পারে না। আমি কথা দিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের টাকায় জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে না।
ঠিক।
সুবোধ অবোধ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মন্তব্যের জন্য সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন