জ্যোতি আমার কলেজ জীবনের বান্ধবী। শহরের অন্যতম রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ওর বাবা। একনামে চেনে সবাই। এমনকি যদি আমি তার নামটা বলি এখানে, তাহলে আপনারা সবাইও চিনবেন। তাই আমি সেসবে যাব না। যতটা সম্ভব পরিচয় ঢেকে-ঢুকে কাহিনী বলার চেষ্টা করব। আর এমনিতেই অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখে কাহিনী দূর্বল করার অভিযোগ আছে আমার বন্ধুদের আমার বিরূদ্ধে!
কাহিনী শুরু করার আগে সামান্য একটু ভূমিকা মনে হয় না করলেই নয়। আমাদের বিজ্ঞান বিভাগে দুইটা সেকশন ছিল -- 'ক' আর 'খ'। আমি ছিলাম 'ক' সেকশনে। পার্থক্য হল, সব জোড় সংখ্যার রোলগুলো 'ক'-তে আর বিজোড় সংখ্যার রোলগুলো 'খ'-তে ছিল। শুধুমাত্র প্রভাবশালী পিতার কারণেই বিজোড় সংখ্যার রোলধারিণী (রোল-৮৫) হওয়া সত্তেও জ্যোতি ছিল 'ক' সেকশনে। এখানে একটু বলে নেই, জ্যোতি আবার আমার কিছুটা ঘোরানো-প্যাঁচানো আত্বীয় হয়। আর ওর এই নাটকীয় সেকশন বদলের একমাত্র কারণ (যদিও ওর বাবা-মা'র সিদ্ধান্তেই) ছিল আমার (রোল-৮৬) কাছ থেকে পড়াশুনায় এবং মূলতঃ পরীক্ষায় সাহায্য নেওয়া! বলাই বাহুল্য, পড়াশুনাতে ও ছিল খুবই দূর্বল। তবে মুখস্থ বিদ্যা ছিল সাংঘাতিক!
আমার কলেজ জীবনের কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল এই জ্যোতিকে কেন্দ্র করেই! তার অতি সামান্য কিছু বলার প্রয়াসেই এই লেখার অবতারনা।
১. "এ্যাই, একটু বের কর না!"
কোন এক পরীক্ষার হলে, জ্যোতি বসেছিল আমার ঠিক সামনে। ফিজিক্স পরীক্ষা ছিল। ঘন্টাখানেক যাওয়ার পর যথারীতি ও শুরু করল বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করা। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা "না পারি সইতে, না পারি কইতে" অবস্থা। তারপর আমাকে বলল হাত সরিয়ে কোনাকুনি করে খাতা ধরে রাখতে, যাতে করে ও বাঁকা হয়ে বসে আঁড়চোখে দেখতে পারে কি লিখেছি আমি। এটা খুব একটা ফলপ্রসু না হওয়াতে এরপর চাইল আমার লেখা লুজ শীট। আমার ইতস্তত অবস্থা দেখে ও শুরু করল কাতর গলায় অনুরোধ, "এ্যাই একটু বের কর না, প্লীজ, একটু বের কর না! তুমি বের না করলে আমার কি হবে!" আমিও খুব ভালমানুষের মত বুঝেও না বোঝার ভান করে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, "কি বের করব??"
আমি তো মনের বিরূদ্ধে খানিকটা জোর করেই ওর সরল কথার ইঙ্গিতপূর্ণ অর্থ না চিন্তা করে পরীক্ষার খাতায় মন বসাতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত লুজ শীটটা "বের করে" দিতেই হল ওকে! কোন মেয়ের এমন করুন আহ্বানে সাড়া না দেওয়ার মত পাথরহৃদয় তো আমার না!
২. "বাবা, আমার মেয়েটাকে একটু দেখো!"
পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েছি। মাঠে সবাই জড়ো হয়েছে, আড্ডা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর কলেজবাস ছাড়বে। অনেক গার্জিয়ানও ছিলেন। দেখা হয়ে গেল জ্যোতির মায়ের সাথে। জ্যোতি তার পাশে দাঁড়ানো। আন্টি প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন পরীক্ষা কেমন দিয়েছি। কিছুক্ষণ এটা সেটা নিয়ে কথা বলার পর চলে এলেন আসল কথায়, "বাবা, আমার মেয়েটাকে একটু দেখো"। তার কথার অর্থ ছিল আমি যেন পরীক্ষায় জ্যোতিকে সাহায্য করি। আমি আবারো নিরীহ ভালমানুষের মত উত্তর দিলাম, "জ্বি আন্টি, আমি তো পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলেই ওকে দেখি"!
আন্টি তো বেশ খুশি। আমিও। কারণ আমি কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকেই ওকে দেখতাম। আর বেশিরভাগ সময়ই ও বসতোও কিছুটা বাঁকা হয়ে! বাকিটা না হয় না বলি!
পুনশ্চ: জ্যোতি একটা বেসরকারি মেডিকেল থেকে ডাক্তারি শেষ করেছে। যে মেয়ে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজিতে এত্ত দূর্বল ছিল যে বলতে গেলে রেগুলার ফেল করত, সে কিভাবে ডাক্তারি শেষ করেছে আমি জানি না। তবে এটুকু অন্তত জানি, আত্মহত্যার শখ না জাগলে কখনো ওর কাছে চিকিৎসার জন্য যাব না!
মন্তব্য
স্কুলে থাকাকালে এরকম সাহায্য মেয়েদেরকে যে কতো দিয়েছি, তা লিখতে গেলে একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। সাহায্য করতে গিয়ে স্যারের কানমলা খাওয়ার ইতিহাসও আছে। অতন্দ্র প্রহরী বলেই আপনি কানমলা খাননি। চোখ কান খোলা রেখে খাতা দেখাতে পেরেছেন।
পান্থ রহমান রেজা
একবার ধরা খেয়েছিলাম! স্যার আমাকে জায়গা বদল করে একেবারে সামনে বসিয়ে দিয়েছিলেন, আর পাঁচ মিনিটের জন্য খাতাটা কেড়ে নিয়েছিলেন!
জ্যোতির সাথে এখনও সম্পর্ক আছে নাকি?
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
না রে ভাই, আর সরাসরি যোগাযোগ নাই। সে দিন হয়েছে গত ...
বান্ধবী শব্দটা ব্যবহার করছেন দেখে খুব ভালো লাগল। আইজকালকার পোলাপাইনরা বলে 'জাস্ট ফ্রেণ্ড'।
বাকীটা না বলার তেব্র পেরতিবাদ জানাই...
আত্নহত্যার শখ জাগলে কী জ্যোতির কাছে যাবেন...
লেখা অনেক ভালো লাগল।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
* 'জাস্ট ফ্রেন্ড' শব্দটা আমার বেশ অপছন্দের।
* সত্যি কথা বলতে, তোমার আশুলিয়া কাহিনী পড়ার পর লেখাটার আইডিয়া আসছে মাথায়! আর সন্ন্যাসীদার কামরাঙা ছড়া!
* আত্মহত্যার শখ জাগলে বলা যায় না, যাইতেও পারি
ধন্যবাদ!
আমি প্রাণ খুলে হাসলাম -----!
উদ্ধৃতিঃ
কারণ আমি কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকেই ওকে দেখতাম। আর বেশিরভাগ সময়ই ও বসতোও কিছুটা বাঁকা হয়ে! বাকিটা না হয় না বলি! "
------ হায় হায় আমাদের বন্ধু বান্ধবেরাও তাহলে এইসব ইতরামী করত ------ সর্বনাশ! ওদের তো ফেরেশতা ভাবতাম _____--
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
আপামনি, এইটারেই যদি ইতরামি কন, তাইলে আপনে তো আসল ইতর পোলাপান দেখেনইনি!
সেই তুলনায় আমি তো আসলেই ফেরেশতা!
আরে! এই বিডিআর দেখি ছোটদের ধূ. গো. !
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মন্তব্যে (বিপ্লব)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি একগামী পুরুষ। একমাত্র নারীদের ভালোবাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বিপ্লবদা, আমারে "ছোটদের ধূ.গো" বলাতে খুবই মজা পাইলাম! তবে আমি তো গোধূলিদার সব ইতিহাস জানি না, কিভাবে জানা যাবে??
সত্যি কথা বলতে, "জ্যোতি!" পোস্টটার মূল কৃতিত্ব আমি দেব সন্ন্যাসীদার কামরাঙা ছড়া (যা আমি সবগুলো খুঁজে খুঁজে পড়ে ফেলেছি!) আর পরিবর্তনশীলের আশুলিয়া কাহিনীকে! আমি তো আসলে নিতান্তই ভালমানুষ!
শয়তানি না?
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ছেলেরা কি পাজি হয়, বাবা...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ছেলেরা পাজি না হলে কী আর মেয়েরা রাজী হয়?
আপনাকেও (বিপ্লব)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি একগামী পুরুষ। একমাত্র নারীদের ভালোবাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সচলের বিডিআর দেখি ভারি ইয়ে...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি একগামী পুরুষ। একমাত্র নারীদের ভালোবাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বস, আপনারে তো গুরু মানি!
আমাদের কলেজের রিইউনিয়ন। ড়্যাপিং পেপারে মোড়ানো গিফট বক্স চালাচালি হচ্ছে। শুভাশীষ উপস্থাপক "... হ্যাঁ শর্মী, খুলো... খুলো না! আরে, দুইটা খুলে ফেলছো কেন? খালি তো উপরেরটা খুলতে বলছিলাম।"
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
খুবই মজা পাইলাম!
জীবনে অনেক খাতা দেখিয়েছি, নিজেও দেখেছি টুকটাক, কিন্তু আপনি যা দেখেছেন, তা আমি দেখতে পারি নি এর বিনিময়ে। আপনার সঙ্গে কখনো দেখা হলে আপনার চোখের সঙ্গে আমার চোখ দুটো ঘষে নিতে হবে!
-------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
নো প্রবলেমো! আপনি সাদরে আমন্ত্রিত!
আত্মহত্যা মানুষ তখন করে যখন সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
আপনি ভাগ্যবান এবং চতুর,
অই সময়কার জন্য জ্যোতিকে রিজার্ভড রেখেছেন,
উত্তম।
আপনারও আত্মহত্যা করার দরকার হলে (আল্লাহ না করুক) আমার সাথে পরে যোগাযোগ করতে পারেন! আর কিছু না হোক, অন্ততপক্ষে জ্যোতির ঠিকানাটা দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারি!
জ্যোতি কি দেলোয়ার হোসেন সাহেবের মেয়ে? তার এক মেয়ে শুনছিলাম ওকালতি পড়ে, সেইরম জিনিস।
তার কাছে চিকিৎসার জন্য না যান, চেকআপের জন্য মাঝেসাঝে যাইয়েন। গল্প দারুণ হইছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
না বস, জ্যোতি দেলোয়ার সাহেবের মেয়ে না। আপনি তাইলে অন্য জ্যোতির কথা বলতেছেন। তয় বুদ্ধিটা খারাপ দেন নাই! চেকআপের জন্য যাওয়া যায়! ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন