হালের নামী মহিলা ব্যান্ড Dixie Chicks-এর “Lubbock or leave it” গানটা হয়ত অনেকেই শুনেছেন। ডিক্সি চিকসের সুন্দরী ভোকাল নাটালি মেইন্স গানটিতে তার জন্মস্থান Lubbock (উচচারণ লাবাক বা লাবোক) শহরের প্রতি ঘৃণা উগড়ে দিয়েছেন। লাবাক পশ্চিম টেক্সাসের বিস্তীর্ণ তুলা ক্ষেতের মাঝে (উইকি নিবন্ধে পড়লাম পৃথিবীর বৃহত্তম তুলা ক্ষেত অঞ্চল) একটি মাঝারি সাইজের (লোকসংখ্যা ২ লক্ষের কিছু বেশী) রক্ষণশীল শহর। আশেপাশে বড় শহর বলতে প্রায় ৩৫০ মাইল দূরে (গাড়ীতে যেতে লাগে ৫-৬ ঘন্টা) রয়েছে ডালাস। মাইনকার চিপায় পড়ে আমাকে এই ভোদাই শহরে প্রায় চার বছর বন্দীজীবন যাপন করতে হয়েছিল। আজ তাই এ শহর নিয়ে একটু বয়ান করতে ইচ্ছা হল।
নাটালির গানের প্রথম কয়েক ছত্র দিয়েই শুরু করা যাক--
Dust bowl, Bible belt
Got more churches than trees
Raise me, praise me, couldn't save me
Couldn't keep me on my knees
ধূলি-ধূসরিত বাইবেল বেল্টের একটি শহর, যেখানে গাছের চেয়ে গীর্জার সংখ্যা বেশী- এক কথায় এটাই হতে পারে লাবাকের সবচেয়ে ভালো বর্ণনা। রক্ষণশীল ইভানজেলিস্ট খ্রীস্টানদের আধিপত্যের কারণে আমেরিকার দক্ষিণের বিশাল অংশ ‘বাইবেল-বেল্ট’ নামে পরিচিত (ম্যাপ দ্রষ্টব্য)।
চিত্রঃ আমেরিকার 'বাইবেল বেল্ট'
লাবাক এবং আরো কিছু শহর এই বাইবেল-বেল্টের ‘বাকল’ মানে ‘গোঁড়াদের গোঁড়া’ হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে লাবাকের বৈশিষ্ট্য হল পুরো আমেরিকায় এ শহরেই মাথাপিছু গীর্জার সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এছাড়া সাম্প্রতিক একটি জরিপে আমেরিকার সবচেয়ে রক্ষণশীল শহরের তালিকায় এটি ছিল দ্বিতীয় স্থানে।
তবে ডিক্সি চিকসের লাবাকের প্রতি ক্ষোভ অবশ্য অন্য কারণে। আজ থেকে বছর চারেক আগে ইরাক যুদ্ধের সময় নাটালি প্রেসিডেন্ট বুশ সম্পর্কে বলেছিল, “I am disappointed that President Bush is from Texas” ব্যস, আর যায় কোথায়। এ উক্তির জন্য নাটালির জন্মভূমি লাবাকের রেডিও স্টেশনসহ টেক্সাসের প্রায় সবকটি রেডিও স্টেশন ডিক্সি চিকসকে বয়কট করা শুরু করল, আর নাটালি হলেন নিজভূমে নিন্দিত। এই গান হচ্ছে ডিক্সি চিকসের সে আগুনে ঘি দেয়া, যেখানে লাবাককে একটি হিপোক্রেটিক টাউন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
লাবাক- এ হিপোক্রেট টাউন?: লাবাকের গীর্জা এবং এর রক্ষণশীলতার কথা মোটামুটি বিখ্যাত। কিন্তু এ শহরে বাইরে থেকে কেউ আসলে পাশাপাশি আরো যেটা চোখে পড়বে তা হল এখানে গীর্জার সাথে পাল্লা দিয়ে শুড়িখানারও অভাব নেই।
ডাউনটাউনের যে কোন বারে গিয়ে বসলেই আপনি জানালা দিয়ে গীর্জার চূড়া দেখতে পাবেন। শুনেছি দুবাই-এ আরব সাগরের ওপর গড়ে তোলা ক্যাসিনোর পাশেই লাগানো মসজিদ আছে। জুয়া খেলে শেখেরা মসজিদে ঢুকে পাপ ধুয়ে ফেলে। ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। শহরের ঠিক বাইরে রয়েছে রাস্তা জুড়ে সারি সারি লিকার স্টোর- শুধু লাবাক না গোটা পশ্চিম টেক্সাসের মদের উৎস- ‘স্ট্রিপ’ নামে যা বিখ্যাত (স্ট্রিপের ছবি)। নাটালির মুখেই শুনুন-
On the strip the kids get lit
So they can have a real good time
Come Sunday they can just take their pick
From the crucifix skyline
বাডি হোলির শহরঃ লাবাককে শিল্প-সংস্কৃতির শহর ঠিক বলা না গেলেও, গানের বা কান্ট্রি মিউজিকের শহর বলা যায়। সংগীত পিপাসুদের কাছে লাবাক রক এন্ড রোল লিজেন্ড বাডি হোলির শহর হিসেবে বিখ্যাত। এলভিস প্রিসলির যুগে বাডি হোলি এবং তার বিখ্যাত ব্যান্ড ‘দ্য ক্রিকেটস’-এর যাত্রা এখানেই শুরু হয়েছিল। নাটালি মেইন্স যেমন লাবাকে এখন নিন্দিত, অন্যদিকে প্রথম দিকে লাবাকবাসীর কাছে বাডি হোলি কিছুটা নিন্দিত হলেও এখন তাদের বরপুত্র। বাডি হোলির সম্মানে ডাউনটাউনে বাডি হোলি এভিনিউ আছে, আছে বাডি হোলি মিউজিয়াম এবং বাডি হোলির বিশাল মূর্তি। খোঁচা দিয়ে নাটালি তাই বলছেন,
I hear they hate me now
Just like they hated you
Maybe when I'm dead and gone
I'm gonna get a statue too
লাবাক লাইটসঃ যারা UFO নিয়ে একটু খোঁজ খবর রাখেন তারা হয়ত লাবাক লাইটসের কথা শুনেছেন। UFO নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা এই লাবাকেই ঘটেছিল। ১৯৫১ সালে টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রফেসর এবং আরো কিছু মানুষ রাতের আকাশে স্পেসশীপের মত দেখতে নীলাভ একটি আলো দেখেছিলেন। এক ফ্রেশম্যান ছাত্র এর কিছু ছবিও তুলেছিল যা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। ইউ এস এয়ারফোর্স আলোর উৎস নিয়ে অনেক অনুসন্ধান চালায়, কিন্তু সন্তোষজনক কোন ব্যাখা দিতে পারে নি। এটা আজ পর্যন্ত একটা অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
টেক্সাস টেক ও রেড রেইডার্সঃ লাবাকের প্রাণ-ভোমরা টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি। মূলত এটা একটা ইউনিভার্সিটি শহর। শহরের অর্ধেক অধিবাসী কোন না কোনভাবে ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত। ক্যাম্পাস হিসেবে খুবই সুন্দর; পুরোটাই গড়ে তোলা হয়েছে স্প্যানিশ কলোনিয়াল আর্কিটেকচারের রীতি অনুসারে। এছাড়া একক ক্যাম্পাস হিসেবে আয়তনের ক্ষেত্রে এটা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাস।
টেক্সাস টেকের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এর বাস্কেটবল কোচ ববি নাইট; যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যিনি সর্বাধিক জয়ী কোচ হিসেবে পরিচিত। তার নিক নেম হল 'দ্য জেনারেল'। জেনারেল সম্প্রতি ছেলের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে অবসরে গেছেন। তবে লাবাকে যিশু খ্রিস্টের পর যদি কাউকে পূজা করা হতো, তবে তা হতেন অবশ্যই ববি নাইট। এছাড়া প্রাক্তন মহিলা বাস্কেটবল কোচ মার্শা শার্পও এখানে বিশাল সেলিব্রেটি, কিন্তু লেসবিয়ান হবার কারণে খানিকটা বিতর্কিত। ১৯৯৩ সালে মার্শা শার্পের হাত ধরে ইউনিভার্সিটির মহিলা বাস্কেটবল দল আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
টেক্সাস টেকের ছাত্র-ছাত্রী, খেলার দলের নিক নেম হলো ‘দ্য রেড রেইডার্স’। বাংলাদেশের আবাহনী-মোহামেডানের মত রেড রেইডার্সের শত্রুদল হল ‘দ্য এগিজ’ (Aggies) বা টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটি। রেড রেইডার্সদের প্রতীক ঘোড়সওয়ারের মূর্তিকে এগিদের সাথে খেলার সময় লাল কাপড়ে মোড়ানো হয়। দুর্জনেরা বলে এই ঘোড়ার পাছার ডিরেকশন নাকি টেক্সাস এএন্ডএমের মূল ক্যাম্পাস কলেজ স্টেশনের দিকে তাক করা। আমি অবশ্য টেক্সাস টেক থেকে বের হয়ে সুবোধ ছেলের মত শত্রুদলে নাম লিখিয়েছি। তোমরা নিজেরা __মারামারি কর, আমার কী!
মন্তব্য
আহারে লাবোক! আমার এককালের বেস্ট ফ্রেন্ড টেক্সাস টেক-এ মাস্টার্স করছিলো। আর আমি ব্লুমিংটনে নামার এক মাসের মাথায় ববি নাইটের চাকরি গেলো গিয়া, যুগের পর যুগ ইন্ডিয়ানাতে কোচিং করার পরে। ক্যাম্পাসে তো রীতিমত রায়োট! ঐখান থেকে পরে সে টেক-এ চাকরি নেয়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
হ। ববি নাইটের এতগুলা জয় প্রায় সবি তো মনে হয় ঐখান থিকা। টেকে তো খালি হারতেই দেখছি। যে যায় লংকায়...
=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"
লাবোক লাইটসের অনুসন্ধানের দায়িত্বটা আসলে শিয়ালের হাতে মুর্গি বর্গা দেয়ার মতো হইসে। মার্কিন বিমানবাহিনীর কোন এক্সারসাইজের অংশ এইটা, আর কিছু না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এটা ভেবে দেখি নি। তবে লাবোকে কিছুদিন আগেও বিমানবাহিনীর বিশাল ঘাটি ছিল। বাজেট কাটের জন্য গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। এ কারণেও তখন দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"
নতুন মন্তব্য করুন