বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করি তাঁর ‘বই পড়া কর্মসূচী’র জন্য। সেই কবে ক্লাস সেভেনে এতে নাম লিখিয়েছিলাম। আজো হয়ত বাংলাদেশের নানা স্কুল- কলেজে এই কর্মসূচী চলছে। স্থায়ী পাঠাগার, ভ্রাম্যমান পাঠাগার, স্কুল- কলেজে বই পড়ার নানা কর্মসূচী ইত্যাদির মাধ্যমে জাতির মধ্যে ‘আলোকিত মানুষ’ গড়ে তোলার জন্য নিভৃতে তিনি যে সংগ্রাম করে চলেছেন তাঁর অপরিসীম মূল্য হয়তো কখনোই সেভাবে বোঝা যাবে না। ভক্ত কবীরের কথা উদ্ধৃত করে তিনি একবার বলেছিলেন- “যা ক্ষতিকর, যেমন মদ্যপান- তার জন্য মানুষ শুঁড়িখানায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে; অথচ যা উপকারী, যেমন দুধ- তাকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কষ্ট করে দিয়ে আসতে হয়। আমরাও জাতির সমৃদ্ধির জন্য প্রতিটি দরজায় আলো পৌঁছাতে চাচ্ছি, তাই হয়তো আমাদের এত কষ্ট!”
সায়ীদ স্যারের একটা লেখা হাতে এসেছিল বেশ কয়েক বছর আগে। একটু অন্য ধাঁচের লেখা, নাম ‘বিস্রস্ত জর্নাল’। নিজের পছন্দের কিছু বাক্য, উদ্ধৃতি, কবিতা, গল্প দিয়ে সাজিয়েছিলেন; সব নিজের লেখা নয়। সেখান থেকে আমার পছন্দের অংশগুলো দিয়ে কয়েকটা পোস্ট দেব ভাবছি (আসল কারণ হল- ইদানীং ব্লগে ফাঁকিবাজ হয়ে উঠছি, তাই ফাঁকি দিয়ে সচল থাকার চেষ্টা )। এই রূপক গল্পটি সেখান থেকে নেয়া।
-০-
পথে একটি অপরূপ সুন্দর মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এক যুবকের। মেয়েটিকে দেখেই যুবক তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাকে পাওয়ার জন্য সে উতলা। মেয়েটিরও ছেলেটিকে অপছন্দ নয়। কিন্তু এই মূহুর্তে বিয়েতে কিছুটা অসুবিধা আছে। মেয়েটি তার বাবার সঙ্গে নিজের দেশে যাচ্ছে। সে দেশ এখান থেকে সাত সমুদ্রের ওপারে। যাওয়ার সময় মেয়েটি তাকে বলে গেল, যদি সে সাত সমুদ্র পার হয়ে তাদের দেশে কোনদিন আসতে পারে, তবে তাকে সে বিয়ে করবে।
ছেলেটি সাত সমুদ্র পার হয়ে প্রেমিকার দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। প্রথমে সে হাজির হলো প্রথম সমুদ্রের ধারে। সেখানে সে দেখা পেল এক খেয়ামাঝির। সেই পারবে তাকে সমুদ্রের ওপারে নিয়ে যেতে।
সে খেয়ামাঝিকে অনুরোধ করল তাকে ওপারে নিয়ে যেতে। মাঝি উত্তরে বলল, সে অনায়াসেই তা পারবে। তবে তা শুধু এক শর্তে। এই দুরূহ পথের পারানির কড়ি হিসেবে তার হৃৎপিন্ডের সাত ভাগের এক ভাগ তাকে দিয়ে দিতে হবে।
যুবক ভাবল, এ আর এমন কী। হৃৎপিন্ডের সাত ভাগের এক ভাগই তো মাত্র। এমন ভালোবাসার প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য এ তো সে অনায়াসেই দিতে পারে। মূহুর্তে সে রাজী হয়ে গেল। সমুদ্র পেরোবার পর মাঝিকে হৃৎপিন্ডের সাত ভাগের এক ভাগ দিয়ে সে এগিয়ে গেল দ্বিতীয় সমুদ্রের ধারে। দ্বিতীয় মাঝির চাহিদাও একই- পারানির কড়ি হিসেবে তার হৃৎপিন্ডের সাত ভাগের এক ভাগ দিয়ে দিতে হবে। সাত ভাগের এক ভাগই তো মাত্র। এ আর এমন কী? এবারেও সে রাজী হয়ে গেল। এভাবে এক এক করে সাত মাঝিকে হৃৎপিন্ডের সাত ভাগের এক ভাগ করে দিয়ে সে যখন তার প্রেমিকার সামনে দাঁড়াল তখন দেয়ার মত হৃদয় বলে তার কিছুই আর নেই।
নেহাতই একটা রূপক গল্প। হয়তো অতীতের কোন সম্পন্ন রূপকথার। কিন্তু কী গভীরভাবেই না আমাদের কালের কথা বলেছে। হাজারো লোভ আর বৈষয়িক চাওয়া-পাওয়ার ঘাটে হৃদয়কে কেটে কেটে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনী।
মন্তব্য
গল্পটা অন্যরকম করে লেখা গেলে কেমন হয়?
হাঁটুপানির জলদস্যু
পুরুষ নাকি দুই প্রকারের হয় - জীবিত এবং বিবাহিত।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে এই কারনেই খুব ভালো লাগে...এত্তো সুন্দর করে মানুষ কথা বলতে পারে ভাবাই যায় না...
লাইনগুলো অসাধারন লাগলো...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
৮৯ থেকে ৯৪ টানা পাঁচ বছর আমি কাজ করেছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে
সিলেটের সংগঠক ছিলাম
(ঢাকায় আসলেই আড়াই তলার ফ্রি গেস্ট রুম আর জামাই আদর... আহারে...)
সায়ীদ স্যারের ক্যারিশমার অনেক কিছুই একেবারে কাছে থেকে দেখা আমার...
এবং সব ক্ষেত্রেই তার আরও একটু ভালো থিওরিটা আমি এখনও মেনে চলি
০২
বিস্ত্রস্ত জার্নালেই বোধহয় পড়েছিলাম। অথবা তার কোনো কবিতায়
একটা বাস জার্নির বর্ণনা। যেখানে কেউ কারো সাথে খুনসুটি করছে
কেউ ঘুমাচ্ছে। কেউ ঝগড়া করছে
কেউ কথা বলছে রাজনীতি নিয়ে
শুধু একজনের কোনো ঝগড়া নেই। কোনো গল্প নেই। কোনো খুনসুটি নেই
সে হলো সে বাসের ড্রাইভার
যার দায়িত্ব হলো নিজের সব গল্প- সব ঝগড়া সব খুনসুটি বাদ দিয়ে সবাইকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়া
সায়ীদ স্যারকে আমার সেই ড্রাইভারই মনে হয়...
আপনার দেখি ব্যাপক অভিজ্ঞতা। স্যারের কারিশমার গল্প কিছু আমাদের সাথেও শেয়ার করুন।
বাস জার্নির বর্ণনা কবিতারই হবে। জার্নালে খুঁজে পেলাম না।
= = = = = = = = = = =
তখন কি শুধু পৃথিবীতে ছিল রং,
নাকি ছিল তারা আমাদেরও চেতনায়;
সে হৃদয় আজ রিক্ত হয়েছে যেই,
পৃথিবীতে দেখ কোনখানে রং নেই।
ক্লাস সিক্স থেকে টেন, এই সময়টাতে বই পড়া বলতেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই। প্রতি সপ্তাহের একটা দিন বাসা থেকে বের হবার দারুন ছুতা। ছেলেদের স্কুল (কুমিল্লা জিলা স্কুল) পড়ার সুবাদে মেয়েদের দেখাই মিলতো না...সাহিত্য চর্চার কল্যানে কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা আর আওয়ারলেডী অফ ফাতিমা গার্লস স্কুলের বালিকাদের দেখা ও মিলতো সেই বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রর আড্ডায়...
বছর শেষে এক বস্তা বই পুরস্কার আর চলতি বছরের বই গুলো জমা নাদিয়ে রেখে দিয়ে আমার নিজের লাইব্রেরী গড়ার চর্চাটাও সেখান থেকেই শুরু..
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
পুরান কথা মনে করায়ে দিলেন। আমাদের সভা হত সেন্ট প্লাসিড স্কুলে। তবে বালিকারা সভায় আসত কিনা মনে নাই আর আসলেও পড়ুয়া বালিকাদের চেহারা মনে হয় এতই খারাপ ছিল স্মৃতিতে কিছু অবশিষ্ট নাই। তবে বই পড়া কর্মসূচী থেকে বই চুরি করতে পারি নাই। চট্টগ্রামের সংগঠক (বিশ্বজিতদা নাম মনে হয়) ব্যাটা বেশী ত্যাঁদোড় ছিল। বই চুরি করেছি কেন্দ্রের পাঠাগার থেকে। তবে সেটাকে চুরিও বলা যাবে না। ৫০ টাকা জামানত ছিল। পাঠাগারের সব বই-টই পড়ে শেষ করার পরে ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' উপন্যাসখানা আর ফেরত দেই নি, ওইমুখোও আর হই নি। 'মা'-এর দাম ছিল মনে হয় ১০০ টাকার মত। বেছে বেছে দামী বইখানাই (সব অর্থে) তাই মেরেছি
= = = = = = = = = = =
তখন কি শুধু পৃথিবীতে ছিল রং,
নাকি ছিল তারা আমাদেরও চেতনায়;
সে হৃদয় আজ রিক্ত হয়েছে যেই,
পৃথিবীতে দেখ কোনখানে রং নেই।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কুমিল্লার কথা মনে হলেই নওশাদ ভাইয়ের কথা মনে হয়। মিষ্টভাষী অসম্ভব এই প্রিয় এই তরুন সংগঠক বছর কয়েক আগে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। নিউজটা শুনে আমার ভীষণ ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো।
আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই চুরির তালিকা দিলে সাঈদ স্যার তার লন্ডন কেন্দ্রের লোক মারফত আমারকাছে লোক পাঠাবেন বই ফেরত দিতে !
তবে 'লা মিজারেবল' পড়ে আমার বইটা মেরে দেয়ার শখ হলো, তখন আমাদের যে টালি কার্ড ছিলো আমি সেই ভীরের মধ্যে টালি কার্ডে বই টা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে চুরি করে টিক মার্ক দিয়ে দিয়েছিলাম, ব্যস সাহস গেলো বেড়ে ।
তার পর একে একে...'আন্কল টমস কেবিন', 'রুশদেশের উপকথা', 'জীবনীমালা প্রথম-তৃতীয় খন্ড' ডক্টর জেকিল এন্ড মিষ্টার হাইড', 'গীলগামেশ', 'বিক্রম ও বেতালের গল্প' .....সব চলে আসলো আমার পাঠাগারে।
তবে পদে পদে ধরা খেতাম। সাবাই বুঝে যেতো ওগুলো মারা বই, কারন প্রতি পাতায় সিল দেয়া থাকতো, 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র' 'পাতা মুড়বেন না' এই টাইপের কথা বার্তা।
-----------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
কিছুদিন আগে তাঁর এক টিভি-সাক্ষাত্কার ডাউনলোড করে দেখেছিলাম। কী নিরহঙ্কার মানুষ!
মাহবুব লীলেন লিখেছেন,
সায়ীদ স্যারকে আমার সেই ড্রাইভারই মনে হয়...
লক্ষ্যভেদী মন্তব্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
খুব খারাপ লাগে যখন কিছু নিন্দুকের মুখে স্যারের সমালোচনা শুনি।
ফেরারী ফেরদৌস
নিন্দুকের মুখে সমালোচনা শুনে আমি কখনও অবাক হই না। আর একজন মানুষের কাছ থেকে আমরা সব সময় দেবতা সুলভ আচরণই প্রত্যাশা করবো সেটাই বা কেন..? তার সাফল্য আর ভালো কাজের পাল্লাটা যদি ভারী থাকে তাহলে মন্দলোকের কথায় কান না দিলেই বরং আমরা আলোর পথে আগাতে পারি।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
একদম ঠিক কথা বলেছেন!
ফেরারী ফেরদৌস
সায়ীদ স্যার, মাফ করবেন! কয়েকটা বই ফেরত দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ধন্যবাদ, এই পোস্টের লেখা ও মন্তব্যে অনেক কিছু জানলাম।
নতুন মন্তব্য করুন