হারুণের পড়ালেখা এবং কিছু ধিকৃত বাঙালী

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: সোম, ২৬/০১/২০০৯ - ৩:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নাম তার হারুণ-উর-রশিদ। বয়স ১৭। বাংলাদেশের কোন এক গ্রামের ছেলে। তিন বছর আগে তার মা বাংলাদেশী এক লোককে টাকা দিয়েছিল ছেলেকে আমেরিকায় পাঠানোর জন্য। যাবার দুই দিন আগে হারুণের মা ছেলেকে বলেছিল, ‘তুই আমেরিকা যা, ওখানে তোর ভালো পড়ালেখা হবে’। তারপর বাংলাদেশী সেই লোক হারুণকে আমেরিকা নিয়ে আসল। কিন্তু পড়ালেখা করানোর পরিবর্তে সে তাকে নিউইয়র্কের এক বাংলাদেশী পরিবারের কাছে দিয়ে দিল, যে বাসায় হারুণকে কাজের ছেলে বা চাকর হিসেবে ব্যবহার করা হত। তিন বছর সে বাসায় চাকর হিসেবে কাজ করার পর একদিন সবাই যখন পার্টিতে গেছে তখন সুযোগ বুঝে হারুণ জানালা দিয়ে পালাল।

না, এটা কোন সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়। আজ নিউইয়র্ক টাইমসের ভিডিও লাইব্রেরিতে এটা পোস্ট করা হয়েছে-

http://video.nytimes.com/video/2009/01/24/nyregion/1194836160759/the-education-of-harunur-rashid.html?hp

পালানোর পর মোহম্মদ চৌধুরী নামক আরেক বাংলাদেশী যিনি নিউইয়র্কে জলখাবার নামক একটি রেস্টুরেন্টের মালিক, হারুণকে নিজ বাসায় আশ্রয় দেন। তিনি এখন হারুণের লিগ্যাল গার্ডিয়ান, হারুণের জন্য ইমিগ্রেশনের আবেদন করেছেন। হারুণ এখন ইমিগ্রান্টদের জন্য পরিচালিত একটি স্কুলে যায়, যা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে।

ভিডিওটা দেখতে যত সরল, বিষয়টি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর। যা বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকার বিত্তশালী বাঙালীরা দেশে দালাল পাঠিয়ে গ্রামের শিশু, কিশোর, হয়তো নারীদেরও ধরে নিয়ে আসছে বাসায় চাকর হিসেবে কাজ করার জন্য! কি স্পর্ধা এদের!! হারুণের মত আরো অনেকে হয়ত বিদেশে আটকা পড়ে আছে। আর বাংলাদেশের কথা কিছু না হয় নাই বা বললাম। আমাদের দেশের এই ‘আধুনিক দাস প্রথা’, আমাদের এই নির্লজ্জ মানসিকতার অবসান হবে কবে?!

ভিডিও দেখে যেটা সবচেয়ে হতাশ হয়েছি- যে পরিবারের কাছে হারুণ চাকর হিসেবে ছিল তাদের বিষয়ে কোন তথ্য উল্লেখ না থাকায়। কারা এই বঙ্গসন্তান?- জানার বড় ইচ্ছা ছিল।


মন্তব্য

জিজ্ঞাসু এর ছবি

শুনেছি অন্য অনেক দেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টরাও এ ধরনের কাজ করে। অর্থাৎ আমেরিকায় অনেক বিত্তের মালিক হয়েছে এবং নিজ দেশ থেকে কম পয়সায় বা বিনা পয়সায় পাওয়া কাজের লোককে এভাবে বন্দী করে রাখে যা যুক্তরাষ্ট্রের শেরিফ বিভাগ মাঝে মাঝে উদ্ঘাটন করে। কী জঘন্য! কী অমানবিক!

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

পুরুজিত এর ছবি

এদের ইমিগ্রেশন বাতিলের ব্যবস্থা থাকলে কি চমৎকার হোত!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুবই দুঃখজনক। তবে এই 'আধুনিক দাসপ্রথা' শুধু আমেরিকাতে কেন বাংলাদেশেও তো খুব খারাপ ভাবে উপস্থিত!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দৃশা এর ছবি

ইতর-বদমাইশ পৃথিবীর সর্বত্রই বিদ্যমান।
------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

শামীম এর ছবি

এদেশে "কাজের লোক" পাওয়া যায় বলে সকলে "অকাজের লোক" হয়ে পড়ে সহজেই।

যেই লোক এভাবে ঐ ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিল সে হয়তো ভেবেছিল, আমেরিকা এখনো ১৮৬৫ সালের আগের নিয়মে চলে। এনার জ্ঞান আপডেট করা দরকার।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

তানভীর এর ছবি

এনাদের জ্ঞান আপডেট আছে ঠিকই। উপরে উপরে এনারা হয়তো অনেক মানবাধিকার সংগঠনের হর্তাকর্তাও। কিন্তু বিদেশেও এনারা দেশের 'আলগা' জমিদারী ভাব বজায় রাখতে চান অন্যের অধিকারের তোয়াক্কা না করে।

রায়হান আবীর এর ছবি

দুঃখজনক।

=============================

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

এনকিদু এর ছবি

" কাজের লোক " ধারনাটাই খুব খারাপ লাগে আমার কাছে । দেশেও আমার অনেক আত্নীয় স্বজনকে মাঝে মাঝে দেখি আফসোস করতে যে " এখন আর আগের মত কাজের লোক পাওয়া যায়না, ছেমড়িরা সব গার্মেন্টসে কাজ করে " । আমি দুই একবার এরকম আলোচনায় উল্টা-পাল্টা কথা বলে গুরুজনদের চোখে ভীষণ বেয়াদব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছি দেঁতো হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুব দুঃখজনক। একদমই সমর্থনযোগ্য নয়। শাস্তি হওয়া উচিত ওই পরিবারের সদস্যদের। আর, "কাজের লোক"- এই কনসেপ্টটারও বিলুপ্তি ঘটা উচিত।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হায়!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমি "কাজের লোক" হিসেবে আমেরিকা যেতে চাই... আছেন কি কোনো বড় ভাই? শুধু আওয়াজ দিবেন, হাতের কাছে চলে আসব... চোখ টিপি
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তানভীর এর ছবি

এইরকম french cut, পাইপখোর লোক "কাজের লোক" হিসেবে আমেরিকায় "ভাত" পাবে বলে মনে হয় না হো হো হো

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

বুঝছি, যাই, কুলসুমের বাপের পার্টটা আবার মুখস্থ করি গা...
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তানবীরা এর ছবি


কারা এই বঙ্গসন্তান?- জানার বড় ইচ্ছা ছিল।

জেনে কি হবে? পরিচিত মুখই হবে, এরা কি আমাদের অপরিচিত কেউ? আমরা কিন্তু ওদেরকে অবশ্যই চিনি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অমিত আহমেদ এর ছবি

অবাক হলাম না কারণ এমন ঘটনা প্রায়ই পড়ি। প্রতিবারই যাদের কারণে এদের এমন পর্যুদস্ত হতে হয় তাদের উপর মনটা বিষিয়ে ওঠে।

চাইনিজরা মনে হয় এদিক থেকে সব চেয়ে বাজে। বেশ কয়েকবার খবরে এসেছে এরা কিভাবে ছোট নৌকা ভরে শ্রমিক নিয়ে আসে। তাদের রাখে বেসমেন্টে। দিনে চাইনিজ রেস্তোরা-দোকান-গ্রোসারিতে কাজ করে। বেতনের বালাই নেই। এই দুই কি তিন বছর আগে টরন্টোতে এক দূর্ঘটনায় একটা মিনিভ্যান ভচকে গেলো। ভেতরে মৃত দলা পাকানো অবস্থায় আবিষ্কার করা হলো অনেক চাইনিজ মানুষ। ভ্যানের ভেতরে সব সরিয়ে কাঠের বেঞ্চ তৈরি করা ছিলো। তারে সারিবাঁধা মানুষগুলো। যারা বেঁচে গেলেন তাদের মুখে জানা যায়, প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই তাদের কাজ করানে নানান জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। বিভৎস... যেনো সেই দাসপ্রথা ফিরে এসেছে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

মানুষ যে কেন এরকম হয়? জানি না।

; এই লেখায় ভুলে আমার একটা আরেকটা কমেণ্ট চলে এসেছে- অন্য কোন লেখায় কমেণ্ট করতে গিয়ে. এজন্য দু:খিত
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

অমানবিক!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।