পুতুলনাচ

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/১২/২০০৯ - ৪:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোপেনহেগেনে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন চলছে। এটা নিয়ে তেমন আশাপ্রদ কিছু দেখছি না। এর একটু অন্য চেহারা নিয়ে কিছু কথা বলি। সম্প্রতি ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা’ বিষয়ক একটি ফোরামে গিয়েছিলাম। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন ক্লিনটন সরকারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Under Secretary of State) এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম উপদেষ্টা ফ্রাংক ই. লয়। গতানুগতিক আমলাধর্মী দীর্ঘ বক্তৃতা, যার সারাংশ এই আর্টিকেল থেকে দেখে নিতে পারেন। একঘেঁয়ে বক্তৃতা শুনতে শুনতে যখন বিরক্ত হয়ে উঠেছি, এমন সময় জ্বালানী তেল ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কথা শুরু হলো। আমিও আবার কান খাড়া করলাম।

মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে যাবার আগে মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য থেকে আমেরিকার জ্বালানী তেল বিষয়ক কিছু উপাত্ত দেই। আমেরিকা তার আভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে নিজস্ব চাহিদার মাত্র শতকরা দশ ভাগের মতো যোগান দেয়। বাকী প্রায় নব্বই ভাগ জ্বালানী তেলই তারা বহির্বিশ্ব মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানী করে। আমেরিকার রাস্তায় আনুমানিক মোট ২৪০ মিলিয়ন গাড়ি চলাচল করে। এগুলোর মাত্র ৩%-৪% জৈব অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে। একই অবস্থা বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। প্রধানত বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ- এ দু’ সেক্টর থেকেই সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস তথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি নির্গত হয় যা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। মন্ত্রী বলেছেন আমেরিকা ও চীন মিলে বিশ্বের মোট ৪০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে। আসলে আমেরিকায় বসবাসরত পৃথিবীর মাত্র ৫ শতাংশ লোক বিশ্বের মোট ২৫ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। মাথাপিছু জনসংখ্যা হিসেব করলে চীনের দায়ভার অনেক কম পড়ে। সারমর্ম হলো জীবাশ্ম জ্বালানীর কোন যোগ্য বিকল্প এখনো আবিষ্কৃত হয় নি এবং আমেরিকার বেঁচে থাকার জন্য এই বস্তু ছাড়া কোন গতি নেই যার সাপ্লাই আসে বাইরের দেশগুলো থেকে।

এবার আসল কথা বলি। এমন নয় যে বিষয়টি আগে শুনিনি বা আন্দাজ করিনি। কিন্তু একজন সাবেক মন্ত্রী ও নীতি-নির্ধারকের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি শোনার কারণে তখন বেশ উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। ফ্রাংক লয় উল্লিখিত উপাত্তগুলো নির্দেশ করে বলছিলেন তেলের ওপর আমেরিকার এই পরনির্ভরশীলতার কারণে বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক এবং বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিকল্প যোগ্য জ্বালানী আবিষ্কৃত হলে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে এবং সে লক্ষ্যে ওবামা সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সম্পর্ক খারাপের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি প্রথমে বললেন ইরানের কথা। বললেন, একসময় কিন্তু ইরানে গণতান্ত্রিক মোসাদ্দেক সরকার ছিল। কিন্তু তারা তেল জাতীয়করণ করায় বাধ্য হয়ে আমেরিকাকে হস্তক্ষেপ করতে হয় যার ফলে ইরানে শাহরা ক্ষমতায় আসে এবং তখন থেকে ইরানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, যার জের এখনো চলছে। তার মানে আসলে ‘এক্সিস অফ ইভিল’ ‘পারমাণবিক অস্ত্র’ ‘গণতন্ত্র/স্বৈরতন্ত্র’ ‘আহমেদিনেজাদ’ এইগুলো কোন ইস্যু না; ইরান আমেরিকার চাহিদামতো তেল সরবরাহ করলেই আবার গুডবুকে উঠে যাবে! উইকি নিবন্ধ থেকে মোসাদ্দেক উচ্ছেদের একটু বর্ণনা দেই- “In 1951 Dr. Mohammed Mossadegh was elected prime minister. As prime minister, Mossadegh became enormously popular in Iran after he nationalized Iran's oil reserves. In response, Britain embargoed Iranian oil and, amidst Cold War fears, invited the United States to join in a plot to depose Mossadegh, and in 1953 President Dwight D. Eisenhower authorized Operation Ajax. The operation was successful, and Mossadegh was arrested on 19 August 1953. After Operation Ajax, Mohammad Reza Pahlavi's rule became increasingly autocratic. With American support, the Shah...”

এর পরের বোমাটা ফাটালেন তিনি ইরাকের উদাহরণ দিয়ে (আসলে আমার কাছেই বোমা মনে হলো, বাকী সবাইকে দেখলাম নির্বিকার; যেন এটাই খুব স্বাভাবিক)। আমার মনে আছে যখন প্রথম আমেরিকায় আসি তখন এখানকার মিডিয়াগুলো সারাদিন প্রচার করতো- আম্রিকা ও তার বন্ধু-বান্ধবদের ইরাক আক্রমণ করা কেন খুবই প্রয়োজন, সাদ্দাম একজন দুরাচারী স্বৈরাচার, তার হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে; সিনেমার মতো সারাদিন লাইভ গোলাগুলি দেখানো হতো- বীর সৈন্যরা লড়ছে দেশের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, কতো কতো নীতিবাক্য! আর এখন মন্ত্রী সাহেব বললেন, ইরাকেও আমেরিকা হস্তক্ষেপ করেছে তেলের জন্য! ইরাকে নাকি বিশ্বের দশভাগ তেল আছে। ইরাক যখন ’৯০ সালে কুয়েত দখল করে নিল তখন বড় বুশ নাকি কংগ্রেসে বলেছিলেন, ‘আমাদের ইরাকে এখন অবশ্যই সামরিক হস্তক্ষেপ করতে হবে, কারণ ইরাক এখন বিশ ভাগ তেলের মালিক হয়ে গেছে’।

নিজেকে হঠাৎ খুব ক্ষুদ্র আর খেলার পুতুল মনে হলো। তাহলে পৃথিবীতে এখন এত যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তপাত, জঙ্গী-জঙ্গী খেলা সবকিছু এই তেলের জন্য? কিছু লোক তেল খরচ করে গাড়ি চালাবে, ব্যবসা করবে, নির্ঝঞ্জাট বিদ্যুৎ পাবে, শিল্প-কারখানা করে আয়-উন্নতি করবে, তার জন্য আরো অনেককে মাশুল দিতে হবে? পরিবেশের কথা না হয় বাদই দিলাম। দু’চারটা ছোট দেশ ডুবে যাবার সম্ভাবনা আসলে তেমন বড় কোন সমস্যা না। কিছু টাকা ঢাললেই তো মানে পুঁজি বিনিয়োগ করলেই ঝামেলা শেষ- পরিবেশবান্ধব নতুন বাণিজ্যের বাজার তৈরী ফতে। কপ সম্মেলনে আসলে এই বাণিজ্যের ট্যাবলেটই গেলানো হবে- আমরা আমাদের মতো কার্বন ছাড়বো, তোমরা বরং আমাদের কাছ থেকে পরিবেশ বান্ধব জিনিষপাতি কেনো, দেশে পরিবেশ বান্ধব সামগ্রীর বাজার তৈরী করো!

কিছুদিন আগে একটা খুব ছোট শহরে গিয়েছিলাম। শহর ছোট হলেও সেখানে কিছু প্রাইভেট এলাকায় বিলিওনিয়ারদের বাস, যদিও এগুলোই তাদের একমাত্র প্রাসাদ নয়- পৃথিবীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে তাদের আরো প্রাসাদ আছে। কিন্তু বিলিওনিয়ারদের কারণে সে শহরে জীবনযাত্রার মূল্য অত্যধিক। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এই বিলিওনিয়ার শহরে সাধারণ লোকেরা থাকে কীভাবে? সে বলল, এখানে শুধু দু’ধরনের লোকই থাকে- Either you are one of them or you serve them.

পৃথিবীটা মনে হয় ওই শহরের মতো। কিছু লোকই এখানে রাজা। এখানে ভালোভাবে বা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার শর্ত হলো- Either you are one of them or you serve them. আপনি নিজে না চাইলেও তা করতে হবে। লাইনের এপারে যে যত বড় সেবাদাস সে তত বেশি ধনী ও ক্ষমতাশালী। গন্ডগোল লাগে তখনই যখন মাঝে মাঝে কোন দাস বা দাস-সর্দার একটু গাইগুঁই করে। পড়াশুনা, স্কিল ইত্যাদি এসব আর কিছুই না, নিজেকে যোগ্য দাস হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি (প্রতিযোগিতা?)। এ পৃথিবীতে দরিদ্র শুধু তারাই যারা দাস হবার যোগ্যতায় পেছনে পড়ে থাকে।

And freedom, oh freedom well, that's just some people talkin'
Your prison is walking through this world all alone


মন্তব্য

পুতুল এর ছবি

পড়াশুনা, স্কিল ইত্যাদি এসব আর কিছুই না, নিজেকে যোগ্য দাস হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি (প্রতিযোগিতা?)। এ পৃথিবীতে দরিদ্র শুধু তারাই যারা দাস হবার যোগ্যতায় পেছনে পড়ে থাকে।

ঠিক।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

.........................................................................
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ইয়ে, মানে...
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মামুন হক এর ছবি

লগাইতে বাধ্য করলেন তানভীর ভাই। শেষ প্যারার কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। 'আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে'--এই জীবনে আর দেখে যাওয়া হবে না।

দ্রোহী এর ছবি

এই জন্যই আমি ত্যাল লইয়া পড়ালেখা করছি। ☻

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খারাপ লাগে।

নৈষাদ এর ছবি

বিশ্লেষণটা ভাল লাগল। বেশ কিছু প্রশ্ন মনে চলে এসেছে, ইন্টারনেট ঘেটে দেখার চেষ্টা করব। (যেমন ৩%-৪% গাড়ি জৈব অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে, সেগুলি কী)

পড়াশুনা, স্কিল ইত্যাদি এসব আর কিছুই না, নিজেকে যোগ্য দাস হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি (প্রতিযোগিতা?) – বড় শক্ত কথা বলেছেন। হয়ত ঠিক, হয়ত পুরো পড়াশুনা কিংবা স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রকৃয়াটাই দাস গড়ে তোলার মত করে তৈরী করা হয়েছে, বা হচ্ছে। তবে তানভীর ভাই লাইন ক্রস করে ওপারে যেতে হলেও তো পড়াশুনা, স্কিল ইত্যাদিই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

তানভীর এর ছবি

যেমন ৩%-৪% গাড়ি জৈব অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে, সেগুলি কী

মূলত ইথানল মিশ্রিত ফুয়েল, ব্যাটারি চালিত হাইব্রিড গাড়ি এর মধ্যে পড়ে। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি ইত্যাদি। এখন ফেডারেল অর্থে কোন স্থাপনা তৈরী হলে তার মধ্যে কিছুটা বিকল্প শক্তির ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক; দু'একটা সোলার প্যানেল বসাতে হয় তাই।

লাইন ক্রস করে ওপারে যেতে হলেও তো পড়াশুনা, স্কিল ইত্যাদিই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

হুঁ, তা ঠিক। তবে লাইনের ওপারে যাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো উত্তরাধিকার। রাজার ছেলে এখনো রাজাই হয়। তবে রাজা ব্যবহার করলাম রূপক অর্থে। এটা মনে হয় একটা সংঘের মতো। লাইনের ওপার থেকে যোগ দিতে হলে আরো অনেক শর্ত বোধহয় পূরণ করতে হয়। আমি নিজেও জানি না।

শামীম এর ছবি

পড়লাম। একমত হৈলাম। পছন্দের পোস্টে যুক্ত করলাম। বিপ্লব দিলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাফি এর ছবি

চমৎকার লাগলো লেখাটা। এরকম বড় গলায় এখন স্বীকার করাও শুরু করেছে তাহলে।

তানভীর এর ছবি

ঠিক তা না। ফ্রাংক লয় এখন রিটায়ার্ড ডিপ্লোম্যাট। তার বক্তব্য সরকারী প্রেসনোটের মধ্যে পড়ে না চোখ টিপি

ফাহিম এর ছবি

অসাধারণ ফাটাফাটি একটা লেখা হইসে তানভির ভাই। হ্যাটস অফ।

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

দুর্দান্ত এর ছবি

খুব প্রাসঙ্গিক একটি লেখা আমাদের পড়তে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
----
আমিরিকা পৃথিবীর অনেক সমস্যার জন্য দায়ী। সেদিক থেকে দেখলে তো বৃটেনও অনেকটা দায়ী। বৃটেনের বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তে কুফলগুলো থেকে কি আমরা আজো মুক্তি পেয়েছি? আর চীন ও ভারতকে ছাড় দেবারও কি কোন কারন আছে। আজকে কার্বন সমস্যাটি সবার সামনে আছে বলে আমেরিকাকে দেখাচ্ছে ভিলেনের মত। এর পর যখন আমরা ভুমির ব্যাবহার আর মিঠাপানির সংকট নিয়ে পড়ব, তখন কিন্তু আমেরিকা, ভারত চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল আর মালয়শিয়ার মধ্যে কে বড় ভিলেন, সেটা আর আলাদা করে চেনা যাবে না।

অর্থনৈতিক মন্দা এসেই সব গোল বাধালো। নইলে আমরা ফ্রান্কি লয়কে এভাবে মিয়া কুল্পা মিয়া কুল্পা করতে দেখাতাম না। কোথায় ছিলেন তিনি, যখন ক্লিন্টন হাজার হাজার খনি কর্মির সামনে বড়াই করে বলেছিলেন যে তিনি থাকতে আমেরিকা কিওটো তে স্বাক্ষর করবে না।

আমাদের সাবধান হতে হবে। পরশু আমেরিকার যে লবিবাজেরা ছিল তামাকের পক্ষে, গতকাল তারাই কয়লা, তেল আর ভুট্টার জয়জয়কার করেছে। আজকে সবাই সবুজ রংকে ভালবাসে, তাই দেখা ফ্রান্কি লয় এর মত লোক ডিগবাজি খাবে, তাতে অবাক হই না।

----

ইরান সমস্যায় আমেরিকার চাইতে বৃটেনকে আগে দোষারোপ করা যায়। যে কম্পানিটি ধরা খেয়েছে, সেটি হল এংলো-পার্সিয়ান, যেটা কিনা আজকের বিপি। বিপি মূলত ইউরোপীয় পিলিয়ার, এবং তাদের ক্রুড সুয়েজ ঘুরে ফ্রান্স বা উত্তর সগরের দিকে অথবা মালাক্কা হয়ে যেত সিঙ্গাপুরের দিকে। সেই সময়ে ইরানী ক্রুড আমেরিকায় যাওয়ার প্রয়োজনই ছিল না - কারন? মেক্সিকো আর ভেনেজুয়েলা। ইরান যদি এংলো-পার্সিয়ানকে জাতীয়করন করে কারো পাকা ধানে মই দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা করেছে ইউরোপিয়দের।

----

কপ সম্মেলনে আসলে এই বাণিজ্যের ট্যাবলেটই গেলানো হবে- আমরা আমাদের মতো কার্বন ছাড়বো, তোমরা বরং আমাদের কাছ থেকে পরিবেশ বান্ধব জিনিষপাতি কেনো, দেশে পরিবেশ বান্ধব সামগ্রীর বাজার তৈরী করো!

আগেরগুলোতে এইসব হত। তবে এইবার বাইম মাছকে হাত ছাই মাখিয়ে ধরা হয়েছে। কিওটোতে সয় করলে কার্বন ছাড়া কমাতেই হবে। তারমানে আমেরিকানদের এখন এস ইউ ভি ছেড়ে রেলে চড়ার কথা ভাবতে হচ্ছে। আমেরিকার বেকার/ফকিরও যেমন কাঠের তৈরী আলিশান বাংলোতে থাকে, যেগুলো শীতকালে গরম রাখতে আর গরমকালে ঠান্ডা রাখতে আমিরিকার জ্বালানী খরচ আর কার্বন নির্গমন বেড়ে যায়, সেগুলো ছেড়ে সরকারি পয়সায় গায়ে গায়ে লাগানো ইঁটের তৈরী বাড়ী (রো হাউজ) তৈরীর কথা হচ্ছে। কার্বন ছাড়া কমাতে এগুলোর কথাই যখন ওবামা কংগ্রেসে তুলবে, দেখা যাবে তাকে আর কেউ ভালবাসে না।

----

তবে আমেরিকার ৩০ কোটির মত এমন পয়সাওয়ালা আরো ১০০ কোটি লোক আছে চীন-ভারতে। তাদের জীবন যাত্রা আমেরিকানদের চাইতও আরো বেশী বিলাসিতার। তারাও আমিরিকানদে মত পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে চলেছেন। শুধু তাদের দেশে হাজারকোটি ফকির মিসকিনের পেছনে লুকিয়ে আছেন বলে তাদের কুকর্ম চোখে পড়েনা। একারনেই ভারত আর চীন শুধু মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের কথা বলে, আসল নির্গমনের কথা এরা ভুলেও তোলে না।

তানভীর এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি সমস্যাটা দেশ হিসেবে দেখছেন, আমি দেখছি না। মহাপ্রভুদের আসলে কোন দেশ নেই। তারা সারা বিশ্বই লুটেপুটে খেতে চান। আমেরিকা আমাদের চোখে ভিলেনের মতো লাগে কারণ প্রভুরা দীর্ঘদিন এর ঘাড়ে চেপে আছেন। আসলে তারা পৃথিবীর সবদেশের কলকাঠিতেই আছেন। ব্রিটেন, আমেরিকা, বাংলাদেশ আরো যা যা বলবেন সব একই গোয়ালের গরু। খালি এদের শক্তিটা একটু কল্পনা করুন। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে একটা দেশের আবেগকে পুঁজি করে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে এরা লেলিয়ে দিতে পারে।

কিয়োটোতে আমেরিকা সই করছে না, নিশ্চিন্ত থাকুন। এইগুলা ওবামার হাতে নাই। তারপরও সে এর মধ্যে অনেকের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে দিসে। এতেই আমি খুশি হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কিচ্ছু বলার নাই ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সাকিব [অতিথি] এর ছবি

এই ডকুমেন্ট্রি টা দেখার অনুরোধ রইল ...
Zeitgeist

Zeitgeist: Addendum

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।