১.
দয়া নদীর পারে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। ঢাউলির প্রান্তর ভেসে যাচ্ছে রক্তবন্যায়। শুধু একজনের মনেই তখন কোন দয়া-মায়া নেই। কলিঙ্গের নারী-পুরুষ-শিশুদের আজ তিনি সমানে কচুকাটা করছেন। তিনি মগধের অধিপতি মৌর্য সম্রাট অশোক- মধ্য এশিয়া থেকে বঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত যাঁর সাম্রাজ্য। নিষ্ঠুরতার জন্য প্রজারা যাঁকে ডাকে চণ্ডাল- ‘চণ্ডাশোক’, আজ তারই চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে তিনি কলিঙ্গ (উড়িষ্যা) জয় করে নিয়েছেন।
কলিঙ্গ জয়ের পর অশোক নগরীতে তার বিজয় দেখতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের শৌর্য, বীর্যের বদলে তিনি দেখতে পেলেন তাঁর কাপুরুষতা, মানুষের ঘৃণা আর হাহাকার। স্বজন হারানো ক্রুদ্ধ এক নারী এগিয়ে এসে তাঁকে বললো- ‘হে অশোক, তোমার কারণে আমি স্বামী-সন্তান-পিতা সব হারিয়েছি, এখন আমি আর কী নিয়ে বাঁচব?’
যে অশোক ক্ষমতারোহণের জন্য বৈমাত্রেয় সব ভাইদের হত্যা করেছিলেন, অবাধ্য প্রজাদের নির্যাতনের জন্য রাজধানীতে আক্ষরিক অর্থে ‘নরক’ স্থাপন করেছিলেন, নিজ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য একের পর এক রাজ্য দখল করে নিয়েছিলেন- কলিঙ্গের হাহাকার তাঁর মনে এতই তীব্রভাবে বেজেছিল যে এরপর তিনি ‘অহিংসার’ পথ বেছে নিয়েছিলেন। অশোক স্তম্ভে তাঁর সেই আর্তনাদ আজো খোদিত আছে-
What have I done? If this is a victory, what's a defeat then? Is this a victory or a defeat? Is this justice or injustice? Is it gallantry or a rout? Is it valor to kill innocent children and women? Do I do it to widen the empire and for prosperity or to destroy the other's kingdom and splendor? One has lost her husband, someone else a father, someone a child, someone an unborn infant.... What's this debris of the corpses? Are these marks of victory or defeat? Are these vultures, crows, eagles the messengers of death or evil?
২.
কলিঙ্গ যুদ্ধের প্রায় সতেরশ’ বছর পর ঢাউলির যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরো পূর্বে একদা অশোকের অধীনস্থ বঙ্গে আরেকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়- 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ'। কলিঙ্গ যুদ্ধের সাথে তুলনা করলে অবশ্য এখানে বাংলাদেশ প্রায় কলিঙ্গের অবস্থানে। কলিঙ্গের মতোই লাখো লাখো সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল হানাদারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য। তবে পার্থক্য হচ্ছে কলিঙ্গের মতো পরাজয় তাদের বরণ করতে হয় নি।
কলিঙ্গ যুদ্ধে জিতেও অশোক তাঁর বিজয় দেখতে পান নি। আমরা কি পেরেছি?
ইতিহাস ‘চণ্ডাশোক’কে আলাদা করে মনে রাখে নি। যুগে যুগে তাঁর মতো আরো অনেক চণ্ডাল অধিপতি পৃথিবীতে এসেছিল। কিন্তু ভারতবর্ষে যদি কখনো ‘স্বর্ণযুগ’ বলে কিছু থাকে তবে তা ছিল অশোকের আমলেই- কলিঙ্গ যুদ্ধের পরে যিনি ‘ধর্মাশোক’ হয়ে উঠেছিলেন। কলিঙ্গের অদেখা সে বিজয় তিনি নিশ্চিত করেছিলেন প্রজাদের নিরলস সেবায় তাঁর পরবর্তী শাসনামলে; শুধু ভারতবর্ষ কেন প্রজাপালনের এমন নিঃস্বার্থ উদাহরণ পৃথিবীর আর কোন সাম্রাজ্যেই নেই। ইতিহাসের পাতায় এই অশোকই তাই অক্ষয় হয়ে গেলেন।
আমি জানি, অশোক বা কলিঙ্গের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের তুলনাটা তেমন যায় না। তবু দয়া নদীর পারে বসে অশোক যে আর্তনাদ করে উঠেছিলেন হাজার বছর পরেও মনে হয় তা ঘুরে বেড়ায়। স্বাধীনতার ৩৮/৩৯ বছর পরেও যখন মানুষ মৌলিক অধিকারবঞ্চিত থাকে, যখন হানাদারের দোসর আর তার পৃষ্ঠপোষকরা বার বার ক্ষমতায় যায়, যখন লুটেরাদের ভোগেই সাধারণ মানুষের সর্বস্ব যায়, যখন বাঘাইছড়ি-খাগড়াছড়ির উপত্যকা রক্তে লাল হয়, তখন স্বাধীনতা নিয়ে আসা রাজাকারের লাথি খাওয়া কোন মুক্তিযোদ্ধা আলী আমানও কি আর্তনাদ করে ওঠে-
If this is victory, then what is a defeat?
মন্তব্য
আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে ওরা আমাদেরও ভাই-বোন? ওরা আমাদেরই এই মাটির সন্তান?? আমরা কেনো শুধু পাকিস্তানীদের গালী দেই, আমরা কি ঐ বর্বর পাকী গুলোর মতো পাহাড়ীদের সামান্য ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও কেড়ে নেইনি???
এই উগ্র জাতীয়তাবাদী আগ্রাসন বন্ধ হোক, আমার ভাইয়ের রক্তে ভেজা মাটি মাড়িয়ে আমি প্রকৃতির কোনো সৌন্দর্যই দেখতে চাইনা।
আমার ভাই-বোন হত্যার বিচার চাই !!!
===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
কিচ্ছু বলার নাই।
আমার ভাই-বোন হত্যার বিচার চাই !!!
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
-----------
------------------------------------------
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ডাগতর সাব, মার্চেই তাইলে খেলা ফাইনাল?
সত্যি কথা। কিন্তু আজকের ধর্মাশোক কোথায়?
কৌস্তুভ
হুম। আজ কোন ধর্মাশোক নাই। কে কার চেয়ে বড় চণ্ডাল হতে পারে তারই শুধু প্রতিযোগিতা চলছে।
এক অন্তহীন লজ্জায় অবনত হয়ে যাই এক একবার স্বদেশ তোমার দিকে তাকিয়ে
বিডিআরের দরবার হলের রক্ত বন্যা...
পাহাড়ের ঢালে এই রৌরব নৃত্য ...
রাজাকারদের নিয়ে এখনো সুবিধাবাদিতার এক্কা দোক্কা...
.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ধন্যবাদ।
পাহাড়ে অনাচার বন্ধ হোক। সুবিচার হোক।
আপনাকে পেয়ে ভালো লাগল। শুরুতে এমনি লেখা শুরু করেছিলাম। তারপর ভাবলাম আপনের মতো গল্পের ফরম্যাটে দেই। তবুও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেছি। অভ্যাস না থাকলে যা হয় আর কি।
শুভবোধ ক্রমশঃ ম্লান হয়ে আসছে সবপাশে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভেতরটা কাঁপিয়ে দিলেন ভাই।
-- ধারে কাছেও যাইতে পারি নাই...
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন