তুষার ঝড়ে প্রায় পুরো আমেরিকা এই সপ্তাহে বিপর্যস্ত- তুষারের ছোবল যেন টেক্সাসেরও দক্ষিণ পর্যন্ত নেমে এসেছে। আপাতদৃষ্টিতে, এমন ঘটনা বিরল মনে হলেও অস্বাভাবিক নয়। আমরা ইদানিং পোলার ভরটেক্সের নাম বেশ শুনে আসছি এবং আবহাওয়াবিদরা বলছেন পোলার ভরটেক্স কলাপ্স করার কারণে আর্কটিক আবহাওয়া এত নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু এই পোলার ভরটেক্স ব্যাপারটা কী বা উত্তর মেরুর আবহাওয়া এত নিচে নেমে আসারই কারণ কী? সাধারণভাবে, পোলার ভরটেক্স হলো মেরুর উপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে (৫ থেকে ৩০ মাইলের মধ্যে) বায়ুমণ্ডলের যে প্রবাহ (atmospheric circulation) সেটাই পোলার ভরটেক্স। এর নিচে ভূমিসংলগ্ন যে ট্রপোস্ফিয়ার রয়েছে যেখানকার আবহাওয়া আমাদের মূলত এফেক্ট করে, সেটাকেও সাম্প্রতিককালে (১৯৭০ এর পর থেকে) পোলার ভরটেক্স বলা হচ্ছে, কিন্তু দু'টোর ডোমেইন আসলে ভিন্ন (চিত্র ক দ্রষ্টব্য)।
এখন এবারের এই তুষার ঝড় এত নিচে দক্ষিণে কেন হচ্ছে? মূলত দু'টি কারণে। প্রথমত, মেরুর উপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের যে ভরটেক্স আছে, সেটা হঠাৎ একটু উষ্ণ হয়ে গিয়েছিলো (প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো) জানুয়ারীর শুরুতে (জানুয়ারী ৫ এর দিকে)। এখন যেটা হচ্ছে সেটা তার চেইন-রিএকশন। এই উষ্ণ হওয়ার একটা গালভরা নাম আছে Sudden Stratospheric Warming (SSW). এখন এই SSW বা মেরুর উপরে বায়ুমণ্ডল হঠাৎ এইরকম গরম হয়ে গেলে কী ঘটে? বা এই মিয়া হঠাৎ এইরকম গরম হয়ে যায় কেন, যার কারণে আমাদের এত হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে?
আসলে মেরুর উপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বায়ুমন্ডল বা পোলার ভরটেক্স বেশ ঠান্ডা কিসিমের, নিজের মতো থাকে এবং যেহেতু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে দূরে তাই পৃথিবীতে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নাই। কিন্তু আমাদের ট্রপোস্ফিয়ার বা ভূমিসংলগ্ন বায়ুমন্ডল খুব এক্টিভ। সাধারণত, উষ্ণ বায়ু থাকে ট্রপিক বা ক্রান্তীয় এলাকায় এবং মেরুর দিকে থাকে ঠাণ্ডা বায়ু এবং এই ঠাণ্ডা বায়ুর এলাকা যেখান থেকে শুরু সেখান থেকেই আরম্ভ ট্রপোস্ফেরিক পোলার ভরটেক্সের সীমানা। এই সীমানায় ঠান্ডা, গরম এই দুই ধরনের বায়ুকে পৃথক করে রাখে পশ্চিম থেকে পূবে চলা জেট স্ট্রিম (চিত্র খ-তে সর্পিলাকার গোলাপী/বেগুনী কুন্ডলী- নাম দিয়েছি 'বাতাসের নদী')। মূলত এই জেট স্ট্রিম ব্যারিয়ার তৈরি করার কারণে উত্তরের ঠান্ডা বায়ু বা আর্কটিক আবহাওয়া দক্ষিণে আসতে পারে না।
কিন্তু আমাদের ট্রপোস্ফিয়ার যখন বেশি এক্টিভ হয়ে যায়, সে গিয়ে স্ট্র্যাটোস্ফেরিক পোলার ভরটেক্সে ছোবল মারে যার ফলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এই ট্যানট্রাম বা Sudden Stratospheric Warming (SSW) হয়। এর ফলে জেট স্ট্রিম তখন দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ে এবং আর্কটিক অঞ্চলের ঠান্ডা বায়ু হুড়মুড় করে দক্ষিণে নেমে আসে, যা আমরা এখন আমেরিকা জুড়ে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে প্রত্যক্ষ করছি।
দুই, আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আর্কটিক ওসিলেশন (AO) ইনডেক্স, যার উপর জেট স্ট্রিম কোথায় থাকবে বা প্রবাহিত হবে তা নির্ধারণ করা যায়। AO ইনডেক্স যখন পজেটিভ থাকে তখন জেট স্ট্রিম সাধারণভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে স্বাভাবিক দিকে প্রবাহিত হয় এবং আমরা মোটামুটি একটা স্বাভাবিক শীতকাল পাই (অন্যভাবে বলা যায়, মেরুর চারপাশে একটা শক্তিশালী বায়ুর বলয় থাকে যা ভেদ করে উত্তরের ঠাণ্ডা বায়ু নিচে নামতে পারে না)। AO ইনডেক্স যখন নেগেটিভ হয়, তখন জেট স্ট্রিম চিত্র গ-তে দেখানো নেগেটিভ ফেইজের মতো ত্যারচা হয়ে নিচে বেঁকে যায় (বা দুর্বল হয়ে ঠাণ্ডা বায়ুকে নিচে নেমে আসতে দেয়) , তখন আর্কটিক আবহাওয়া শীতকালে এরকম দক্ষিণে নেমে আসতে পারে।
এই বছর শীতকালে AO ইন্ডেক্স নেগেটিভ (চিত্র ঘ), তার সাথে যুক্ত হয়েছে SSW, দু'টো মিলে হয়েছে 'সোনায় সোহাগা' যার পরিণতি আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি। উষ্ণ থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মন্তব্য
যে কাপানি দিয়া গেছে, আশাকরি আগামি কয়েক বছরে আর না আসে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ভবিষ্যতে এ জিনিস কি আরও নিচের দ্রাঘিমায় নেমে আসতে পারে? ডরাইলাম।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন