হলোডোমর

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৩/২০২২ - ৭:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইউক্রেনে রাশিয়ার সহিংস আক্রমণের বেশ অনেকদিন হয়ে গেলো। হামলার আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছিলেন "ইউক্রেন কোন সত্যিকারের দেশ নয়"। এটা অবশ্য গোয়েবলসীয় কায়দায় পুতিন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা বহুদিন ধরে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছেন- ইউক্রেন বলে কিছু নাই, ইউক্রেন আর রাশিয়া এক, তারা ভাই-ভাই, ইউক্রেন রাশিয়ারই অংশ ইত্যাদি। গত বছর এ নিয়ে একটা রচনাও ফেঁদেছিলেন পুতিন। বলা যায় মোটামুটি বহুদিন ধরে পরিকল্পনা নিয়ে রাশিয়া একরকম ইউক্রেন দখল করার অভিপ্রায় নিয়ে হামলা চালিয়েছে। অজুহাত হিসেবে আছে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদান করলে রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে; ইউক্রেনের দুই রুশ অধ্যুষিত এলাকা নাকি কিয়েভ রেজিমের অত্যাচার আর গণহত্যা থেকে বাঁচতে রাশিয়ার সাহায্য চেয়েছে; তাই ইউক্রেনের ‘নাৎসি’ সরকারের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে রাশিয়ার এই আক্রমণ!

কথায় বলে ‘দুর্জনের ছলের অভাব হয় না’। ইউক্রেন একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে যে কোন জোটে যোগদান করতে পারে। তাই বলে সে অজুহাতে একটা সার্বভৌম দেশে আক্রমণ করতে হবে? ইউক্রেন দখল করার পর ন্যাটো জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো তো আরো কাছাকাছি চলে আসবে। তারপর কি সেগুলোও দখল করা হবে? আর জেলেনস্কির সরকারকে ‘নব্য নাৎসি’ হিসেবে প্রচারণা, কিয়েভ রেজিমের “গণহত্যা” ইত্যাদি শুনে মনে হলো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা। নিউইয়র্ক টাইমস আর ভক্স বিস্তারিত দেখিয়েছে রাশিয়া কীভাবে ফেইক ছবি ইত্যাদি দিয়ে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাই সেগুলোতে আর বিস্তারিত গেলাম না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশেও অনেকে দেখলাম এসব প্রপাগান্ডা বিশ্বাস করে রাশিয়াকে সমর্থন করে যাচ্ছে! সবচেয়ে মজার ব্যাপার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজেই একজন ইহুদী, তার দাদাও হিটলারের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজ পরিবারের সদস্য হারিয়েছিলেন- আর পুতিন নাকি তাকে উৎখাত করে ইউক্রেন ডি-নাজিফাই করতে চায়! স্বয়ং গোয়েবলসও মনে হয় এইরকম উদ্ভট প্রপাগান্ডা চালায়ে লোকজনের ব্রেইনওয়াশ করতে পারতো না!

পুতিনের ‘ইউক্রেন-রাশিয়া ভাই ভাই, ইউক্রেনের অস্তিত্ব নাই’ এই প্রচারণা অনেকটা পাকিপ্রেমীদের আহাজারির কথা মনে করিয়ে দেয় যে আমরা একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিলাম। আরো একটু পেছনে গেলে যে আমরা দিল্লীরও অধীনে ছিলাম সেটা অবশ্য তেমন শোনা যায় না। তবে কি সেই অজুহাত তুলে এবং নিরাপত্তার খাতিরে পাকিস্তান বা ভারতের বাংলাদেশ দখল করে নেয়া জায়েজ হবে? বাস্তবে বহু বছর আগে নবম শতাব্দীতে শুরু হওয়া কিভকেন্দ্রিক এক ফেডারেশন ‘কিভান রাস’ এর অংশ ছিলো এই দুই জনগোষ্ঠী যেখান থেকে রাশিয়া নামের উৎপত্তি। পুতিনের তাই দাবী কিভ আমাদের সব শহরের মাতা (রাশান উচ্চারণ কিয়েভ, ইউক্রেনিয়ান উচ্চারণ কিভ। ইউক্রেনের সম্মানে এখানে কিভ লেখা হয়েছে)। মঙ্গোলদের আক্রমণে এই ফেডারেশন ত্রয়োদশ শতকে ভেঙ্গে যাওয়ার পর এই অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে নানা আঞ্চলিক শক্তি, বাইজেন্টিন, অটোমান এবং জারদের অধীনে ছিলো।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউক্রেন এলাকা অস্ট্রিয়া এবং রাশান সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভক্ত ছিলো। এই দীর্ঘ সময় ইউক্রেনিয়রা নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিস্বত্ত্বা নিয়ে সবসময়ই স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার ছিলো। পুতিনের ‘ইউক্রেন রাশিয়া ভাই ভাই’ দাবী যে ধোপে টিকে না, তার অন্যতম প্রমাণ হলো ১৭১০ সালে Pylyp Orlyk এর নির্বাসিত সরকার প্রণীত ইউক্রেনের প্রথম সংবিধানে রাশিয়ার কবল থেকে মুক্ত করে ইউক্রেনিয়দের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে ইউক্রেনের এই বেনডেরি সংবিধানকেই সবচেয়ে পুরনো সংবিধান বলে মনে করা হয়। ১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে বলশেভিকরা জারদের উৎখাত করে রাশিয়ায় অস্থায়ী (প্রভিশনাল) সরকার গঠন করলে, ইউক্রেনও অস্থায়ী সরকার গঠন করে ১৯১৮ সালে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে। এরপর দীর্ঘ তিন বছর (১৯১৮-১৯২১) ইউক্রেনিয়ান পিপলস রিপাবলিক বলশেভিক রেড আর্মির সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধ করে পরাজিত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে যোগ দিতে বাধ্য হয়। ১৯২২ সালে ইউক্রেনের নাম হয় ইউক্রেনিয়ান সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক (UkrSSR)। এই হলো পুতিনের লেনিন কর্তৃক ইউক্রেন সৃষ্টির ইতিহাস! সোভিয়েত পতনের পর ১৯৯১ সালে ইউক্রেন অবশেষে স্বাধীনতা লাভ করে। দীর্ঘ সময় রাশিয়ান জার ও সোভিয়েতের অধীনে থেকে ইউক্রেনীয়রা স্বাধীনতা পাওয়ায় পুতিন ও পুতিনভক্তদের খারাপ লাগারই কথা। তাই সম্ভবত উদ্ভট নানা প্রপাগান্ডা ফেঁদে ইউক্রেন দখল করে নিতে চায় পুতিন।

ইউক্রেনের প্রতি রাশিয়া যে কতটা সহিংস্র হতে পারে এবং ‘ইউক্রেন-রাশিয়া ভাই ভাই’ যে একটা নিছক প্রপাগান্ডা তার সবচয়ে বড় উদাহরণ হলো হলোডোমর- সোভিয়েত আমলে সংঘটিত যে দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৪ থেকে ৭ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছিলো (জাতিসংঘের এক বিবৃতি অনুযায়ী ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন লোক মারা গিয়েছিলো যাতে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেছিলো), যা গণহত্যা হিসেবেও অনেক দেশে স্বীকৃত এবং অনেক বিশেষজ্ঞ তাই মনে করেন (নিচে বিস্তারিত)।


হলোডোমর কী এবং কেন হয়েছিলো?

হলোডোমর একটি ইউক্রেনিয় শব্দ। এর আক্ষরিক অর্থ হলো ‘অনাহার বা ক্ষুধায় মৃত্যু’। সোভিয়েত ইউক্রেনে ১৯৩২-১৯৩৪ সালে জোসেফ স্ট্যালিনের পৈশাচিক দমন নীতির কারণে দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যের অভাবে আনুমানিক ৪ মিলিয়ন থেকে ৭ মিলিয়ন লোক (ইউক্রেনের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৪৪ মিলিয়ন) মারা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) কর্তৃক ইউক্রেনে এই সিস্টেমিক হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে ‘হলোডোমর’ নামে পরিচিত।
[এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার বেশ মিল। পাকিস্তান ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালিয়ে তিন মিলিয়ন বাঙালী হত্যা করে ক্ষমা না চেয়ে এখন ‘ভাই-ভাই’ দাবী করে। পুতিন আইন করে হলোডোমরসহ স্ট্যালিন আমলে সংঘটিত সব ঘটনার নথিপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ‘ভাই-ভাই’ দাবী করছে! ব্রিটিশরাও অবশ্য এইদেশে দুর্ভিক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন লোক হত্যা করে এখন সভ্যতার ধ্বজাধারী, যদিও সেটা হয়তো স্ট্যালিনের মতো পরিকল্পিত ছিলো না]

ইউরোপের ‘ব্রেডবাস্কেট’ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনকে দমিয়ে রাখার জন্য এই সিস্টেমিক দুর্ভিক্ষ ও হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন সৃষ্টি হবার কিছু সময় পরেই। বলশেভিক আর্মির কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয়ের পর ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিভুক্ত হলে লেনিন বুঝেছিলেন স্বাধীনতাকামী ইউক্রেনিয়দের কিছু ছাড় না দিলে চলবে না। মূলতঃ নন-রুশ তথা ইউক্রেনিয়দের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রমোট করে সোভিয়েত ইউয়নিয়নে আত্মীকরণের জন্য ১৯২৩ সালে ‘ন্যাশনাল ইন্ডিজিনাইজেশন পলিসি’ চালু করা হয় যার আওতায় ‘ইউক্রেনাইজেশন’ বা ইউক্রেনের ভাষা, শিল্প, সাহিত্য এসময় বিকাশ লাভ করে। ১৯২৮ সালে স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে তার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সোভিয়েতকে একটি আধুনিক ইকোনমিক পাওয়ারহাউসে রূপান্তরের প্রস্তাব দেন। এই পরিকল্পনার মূল অংশ ছিলো বিশ্ববাজারে ইউরোপের ‘ব্রেডবাস্কেট’ ইউক্রেনের শস্য বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে শিল্পায়ন ও সামরিকায়ন করা (অনেকটা পাকিস্তান আমলে পূর্বপাকিস্তানের পাট ও অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানি করে সে অর্থে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পায়নের মতো)। স্ট্যালিন আরো দেখলেন ইউক্রেনাজাইশনের ফলে ইউক্রেনিয়রা স্বাধীনতার জন্য আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। লেনিনের এই ইন্ডিজিনাইজেশন/ইউক্রেনাজাইশেন পলিসি স্ট্যালিন বন্ধ করে দিলেন।

স্ট্যালিন তার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১৯২৯ সালে ইউক্রেনের সব জমিজমা-শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনলেন। ইউক্রেনের যেসব কৃষকের নিজস্ব জমিজমা ছিলো তাদেরকে ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ এবং কুলাক (Kulak- the fist) ঘোষণা করে এই শ্রেনীকে নির্মূল করার অভিপ্রায়ে ডিকুলাকাইজেশন করা হলো- এ সময় ৫ লক্ষের অধিক কৃষক এবং তাদের পরিবার যারা প্রতিরোধ করেছিলো তাদেরকে হত্যা করা হলো, কিছু সাইবেরিয়ায় ডিপোর্ট করলো এবং বাকীদের গুলাগ ক্যাম্পে পাঠানো হলো। এছাড়া এসময় হাজার হাজার গির্জা ও উপাসনালয় ধ্বংস করা হয়েছিলো, যাজকদের গ্রেফতার ও হত্যা করা হয়েছিলো।


চিত্রঃ সোভিয়েত সৈন্য ইউক্রেনীয়দের শস্য দখল করে নিয়ে যাচ্ছে

স্ট্যালিনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এসময় ইউক্রেনে খাদ্যশস্যের উপর উচ্চহারে কোটা আরোপ করা হলো। কোটা পূরণের জন্য এসময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশী হতো কেউ খাদ্যশস্য লুকিয়ে রেখেছে কিনা। এমনকি ‘The Law of Five Stalks of Grain’ ডিক্রি জারী করে কোন শিশুর হাতেও যদি দুই মুঠো শস্য পাওয়া যায় তার দশ বছরের জেল বা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো। যেসব গ্রাম কোটা পূরণ করতে পারতো না, তাদেরকে ব্ল্যাকলিস্ট করে কোন রকম খাবার সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করা হতো। ইউক্রেনের তিন ভাগের এক ভাগ গ্রাম এইসময় সোভিয়েতের ব্ল্যাকলিস্টে ছিলো। এমনকি অনাহারী কৃষক ও গ্রামবাসীরা যেন নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্যখানে গিয়ে খাবার পেতে না পারে সেজন্য আভ্যন্তরীন পাসপোর্ট সিস্টেমও এসময় চালু হয়েছিলো। ইউক্রেনে ১৯৩২-১৯৩৩ এই সময়কালে আনুমানিক ৪ থেকে ৭ মিলিয়ন (মতান্তরে আরো বেশি) লোক খাদ্যের অভাবে মারা গিয়েছিলো। হলোডোমর ১৯৩৩ সালের জুন মাসে যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিলো, তখন গড়ে ২৮ হাজার লোকের মৃত্যু হতো প্রতিদিন। মানুষ রাস্তার ধারে মরে পড়ে থাকতো, বেঁচে থাকার জন্য নরমাংস, কীটপতঙ্গ ভক্ষণ থেকে শুরু করে কিছুই এ সময় বাদ যায় নি। হলোডোমরের বিস্তারিত টাইমলাইন এখানে পাওয়া যাবে।

হলোডোমর কি গণহত্যা?

হলোডোমর জেনোসাইড বা গণহত্যা কিনা সেটা নিয়ে একাডেমিক ডিবেট থাকলেও, রাফায়েল লেমকিনের মতো অনেক বিশেষজ্ঞ হলোডোমরকে গণহত্যার ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গণহত্যা বিশেষজ্ঞ রাফায়েল লেমকিন যিনি “জেনোসাইড” শব্দচয়ন করেছিলেন, তিনি ইউক্রেনে সোভিয়েত গণহত্যা নিয়ে বিশদ গবেষণা করেছেন। আর্টিকেল ২ জাতিসংঘ কনভেনশনে গণহত্যার যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার আলোকে লেমকিন হলোডোমর সময়কালীন সময়ে ইউক্রেনে সোভিয়েত গণহত্যা ঘটার চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন-

১) এ সময় ইউক্রেনের জাতীয় নেতা ও অভিজাতদের নির্মূল করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি আমাদের বুদ্ধিজীবি হত্যার মতো। লেমকিন লিখেছেন, “The nation is too populous to be exterminated completely with any efficiency. However, its leadership, religious, intellectual, political, its select and determining parts, are quite small and therefore easily eliminated, and so it is upon these groups particularly that the full force of the Soviet axe has fallen, with its familiar tools of mass murder, deportation and forced labor, exile and starvation.”
অর্থাৎ ইউক্রেনের জনসংখ্যা এত বেশি যে তাদের সম্পূর্ণ নিমূর্ল করা সম্ভব ছিলো না, কিন্তু ইউক্রেন যেন কখনো স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে না পারে সেজন্য এর লিডারশিপে এবং বুদ্ধিজীবি হিসেবে যারা ছিলো সেই ক্ষুদ্র অংশকে এ সময় হত্যা, নির্বাসন ও অনাহারে শেষ করে দেয়া হয়েছে।

২) ইউক্রেনের অর্থোডক্স চার্চগুলো এ সময় ধ্বংস করা হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার যাজককে এসময় হত্যা করা হয়েছে।

৩) ইউক্রেনের কৃষকদের অনাহারে মেরে ফেলা হয়েছে। ডিকুলাকাইজেশন বা কৃষক শ্রেণী নির্মূল এসময়ের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিলো। এজন্য হলোডোমরকে ক্লাসিসাইড (Classicide) বা শ্রেণীহত্যাও বলা হয়।

৪) এদেরকে সোভিয়েত রাশিয়া এবং অন্যত্র থেকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৭টি দেশ এবং ভ্যাটিক্যান এ পর্যন্ত হলোডোমরকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। হলোডোমর নিয়ে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে নির্মিত ‘Bitter Harvest’ উল্লেখযোগ্য।


মন্তব্য

জুনায়েদ আহসান এর ছবি

চমৎকার লেখা

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ইউক্রেন সম্ভবত সাবেক সোভিয়েত অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ। পরিসংখ্যানে নয় অনুমান করে বললাম। আমি পৃথিবীর নানান দেশের অঞ্চলের আবাদযোগ্য ভূমিগুলো গুগল আর্থের সাহায্যে আকাশ থেকে দেখি। মূলত বাংলাদেশের জমির সাথে তুলনা করার জন্য। সেটা করতে গিয়ে একবার ইউক্রেনের জমিজমা দেখতে গেলাম। আমি রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম পাখির চোখে তাদের শস্যক্ষেতের সৌন্দর্য দেখে। চীনের বাইরে পৃথিবীর আর কোন দেশে এত বিপুল এলাকা ফসলে ভরপুর অবস্থায় দেখিনি। সে কারণেই অনুমানটা করলাম। আপনার লেখায়ও তার প্রমান পেলাম।

তবে ফসলের লোভে ইউক্রেন দখল করছে না রাশিয়া, এটা সবাই জানে। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার নিরঙ্কুশ আধিপত্য রাখাই আসল ব্যাপার মনে হয়। ক্রিমিয়া দখল করেও মাঝখানে ইউক্রেনের মতো পশ্চিমাক্রান্ত দেশকে রেখে সেটা সম্ভব নয়, রাশিয়া তা জানে। তাই এতদিন ছলেবলে কৌশলে যা সম্ভব হয়নি, এখন কাছা খুলে নেমে গেছে পুতিন। আর পুতিন বিশ্ব বাস্তবতা ভালোই বোঝে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি আছে এমন কাজ আমেরিকা বা পশ্চিমা কোন দেশ করবে না। তবু বড় যুদ্ধের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। একটা বেফাঁস মিসাইল ভুল জায়গায় নিক্ষিপ্ত হলেই ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যাবে। মাত্র একটা গুলি দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল।

সারা পৃথিবীতে বিশ শতকের ত্রিশ দশক কী ফিরে এলো আবার?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মন মাঝি এর ছবি

এটা আসলে দুই সাম্রাজ্যবাদীর, দুই দানবের লড়াই। সোভিয়েত আমলে আফগানিস্তান নিয়ে এই দুই পরাশক্তিরই সেই পুরনো খেলার পুনরাভিনয় মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা। সেইম ওল্ড প্লেবুক। ভাল ভাল যত যুক্তি দেয়া হচ্ছে সেগুলি তখনও যেমন ১০০% ভুয়া ছিল, পরবর্তীকালে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই তাই ছিল, এখনও তাই!!! উদ্দেশ্যগুলিও প্রাই একই এখনও। ইউক্রেন ফাটা বাঁশের চিপায় পড়েছে।

প্রোপাগাণ্ডা সব পক্ষই করছে। কেই কারও চেয়ে কম যায় না। তফাৎ শুধু এই যে পক্ষগুলির প্রোপাগাণ্ডার স্টাইল, কৌশল আর মান আলাদা। নিজ নিজ বায়াস অনুযায়ী কারও চোখে এদেরটা ধরা পড়ে, কারও চোখে ওদেরটা। কিন্তু তিনটা পক্ষের অন্তত দুইটা মেজর পক্ষই বহু পুরানা প্রমাণিত বেহদ্দ হারামজাদা। এসব "ব্লু আইড ব্লণ্ড হেয়ার্ড" (ইউক্রেনীয় ডেপুটি চীফ প্রসিকিউটারের ভাষায়; তবে এটা ওদের সবারই মনোভাব। আপনার বিবিসিও তার সাথে সহমত পোষণ করে!) স্বঘোষিত-"সিভিলাইজড" ও অতিমানব দানব, যারা আমাদের মত এশিয়া-আফ্রিকার কালাকুলা মানুষদের ঠিকমত মানুষ বলেই গণ্য করে না আসলে, তাদের কোনো পক্ষের প্রোপাগাণ্ডাতেই আমাদের বিশ্বাস করার বা অশ্রুসাগর ভাসিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন দেখি না। এত অশ্রুর সাপ্লাই আমাদের নাই। আধুনিক পৃথিবীর এই প্রাগৈতিহাসিক জঙ্গলে নিজেদের স্বার্থের হিসাব কষে সেইমত চলে কোনোমতে বেঁচেবর্তে থাকতে পারলেই অনেক পাওয়া হবে আমাদের মত ব্ল্যাক-আইড ব্ল্যাক-হেয়ার্ড ব্লাডি ব্ল্যাকি কাইল্লা ভূতদের!!!

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।