[গত ১৪ই অক্টোবর ২০২২, যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ বা কংগ্রেসে ওহাইয়োর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবোট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান রো(হিত) খান্না ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। নানা কারণে এই প্রস্তাবনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য এটিই বহির্বিশ্বের কোন আইনসভায় উত্থাপিত প্রথম প্রস্তাবনা। এছাড়া প্রস্তাবনায় বিভিন্ন তথ্যসূত্র উল্লেখ করে ১৯৭১ সালে তিন মিলিয়ন বা ত্রিশ লক্ষ লোকের মৃত্যু, দুই লক্ষের উপর নারী ধর্ষিত ইত্যাদি পরিসংখ্যান দেয়ার মাধ্যমে এটি যে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বাঙালি জাতি ও হিন্দুদের ওপর মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও সর্বোপরি গণহত্যা তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডন্টকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আহবান করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে বিভিন্ন প্রকাশনায় উল্লেখ করা যাবে। পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারকেও এই গণহত্যার দায়ভার স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে এই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রস্তাবনাটি এখানে বাংলায় অনুবাদ করা হলো।]
প্রস্তাবনা ডকুমেন্টের লিংকঃ
https://chabot.house.gov/uploadedfiles/bangladesh_genocide_resolution_-_introduced_version.docx.pdf
=======================================================
যেখানে, অগাস্ট ১৯৪৭ সালে, ভারতে ব্রিটিশ শাসন শেষ হয়, ২টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়, শেষোক্ত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলো বিচ্ছিন্ন এলাকা পশ্চিম পাকিস্তান (পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ), যা পূর্ববঙ্গ নামেও পরিচিত;
যেখানে পাকিস্তানের অভিজাত শাসকেরা অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানী ছিলো যারা পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নের ক্ষতি করে দেশের সম্পদ ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত করেছিলো;
যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তারা বাঙালি-বিরোধী সেন্টিমেন্ট লালন করেছিলো যার প্রচুর তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বাঙালিদের অনৈসলামিক প্রথায় কলুষিত হীন একটি সম্প্রদায় গণ্য করা হতো;
যেখানে ১৯৭০ সালে সংঘটিত নির্বাচনে, আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছিলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে;
যেখানে সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট, জেনারেল আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, পাকিস্তান পিপল'স পার্টি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো, এবং শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছিলো;
যেখানে, ১৯৭১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি এক সভায়, রেকর্ড করা আছে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার মিলিটারির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বলেছিলো "তাদের ৩ মিলিয়ন লোককে হত্যা করো এবং বাকীরা আমাদের হাত থেকে খেয়ে বেঁচে থাকবে (ভিক্ষা করবে)"; "[k]ill 3 million of them and the rest will eat out of our hands";
যেখানে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে, পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবর রহমানকে বন্দী করেছিলো এবং পাকিস্তান মিলিটারির বাহিনীগুলো মৌলবাদী ইসলামী গ্রুপগুলো সাথে নিয়ে সারা পূর্ব পাকিস্তানে 'অপারেশন সার্চলাইট' সাংকেতিক নামের ক্র্যাকডাউন শুরু করেছিলো যার সাথে সাধারণ নাগরিকদের উপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড (massacres) যুক্ত ছিলো।
যেখানে নৃশংসতা পরবর্তী ৯-মাসের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বলবৎ ছিলো যেহেতু পাকিস্তানী মিলিটারি বাঙালি জাতি ও হিন্দুদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করেছিলো এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক, বাঙালি মিলিটারি ও পুলিশের সদস্য, বুদ্ধিজীবি, ছাত্র এবং পেশাজীবিদের টার্গেট করেছিলো, আক্রান্তদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (বাঙালি মুসলিম) এবং সংখ্যালঘু (অমুসলিম) উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন ছিলো;
যেখানে বাঙালি জাতি ও হিন্দুদের উপর চালিত এই গণহত্যা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিস্মৃত গণহত্যা এবং এর অস্বীকৃতি এখনো লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে উন্মুক্ত ক্ষতের মতো যারা এই নৃশংসতায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে;
যেখানে এই নৃশংসতাগুলিতে আনুমানিক কত লোক হত্যা করা হয়েছিলো তার বিভিন্নতা থাকলেও, বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো;
যেখানে ২ লক্ষের উপর নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতার (stigma/কলঙ্ক) কারণে প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না বা ভিক্টিমদের মনে রাখা হবে না;
যেখানে, এই নৃশংসতা ও যুদ্ধের কারণে প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলো এবং আরো অসংখ্য, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত আভ্যন্তরীণভাবে উৎখাত হয়েছিলো (internally displaced);
যেখানে ভারত সরকার ও জনগণ উদারভাবে এই শত্রুতার অবসান হওয়া পর্যন্ত শরণার্থীদের সেবা দিয়েছিলো;
যেখানে ১৯৭১ সালের ১৩ই জুন, দ্য সানডে টাইমসের "জেনোসাইড" শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ কলামে, সাংবাদিক এন্থনি ম্যাসকারেনহাস লিখেছিলেন "এটা মনে হয় পরিস্কার যে এই 'sorting out' করার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিলো টিক্কা খান পূর্ব বাংলার গর্ভনরশিপ গ্রহণ করার পর থেকে" এবং চলেছিলো "যখন আর্মির ইউনিটগুলো ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকায় ছড়িয়ে পড়েছিলো, বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে পরের রাতে/সকালে কিছু সময়ের মধ্যে আক্রমণের জন্য, তাদের অনেকের কাছে কাদের হত্যা করা হবে তার তালিকা ছিলো। এর মধ্যে ছিলো হিন্দুরা এবং অনেক মুসলিম; ছাত্র, আওয়ামী লীগার, অধ্যাপক, সাংবাদিক এবং যারা শেখ মুজিবের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।"
যেখানে, ১৯৭১ সালের ২৮শে মার্চ, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল, আর্চার ব্লাড, ওয়াশিংটনে "Selective Genocide" শিরোনামে একটি টেলিগ্রাম পাঠান যেখানে তিনি লিখেছিলেন "উপরন্তু, পাক মিলিটারির সহায়তায়, অবাঙালি মুসলিমরা বাঙালি ও হিন্দুদের হত্যা এবং গরীব মানুষদের ঘরবাড়িতে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করছে। ঢাকার রাস্তা হিন্দু ও অন্যদের দ্বারা প্লাবিত হয়েছে, যারা ঢাকা থেকে বের হতে চায়। অনেক বাঙালি আমেরিকানদের বাসায় আশ্রয় খুঁজেছে, বেশিরভাগই তা বাড়িয়ে দিয়েছে।"
যেখানে, ১৯৭১ সালের ৬ই এপ্রিল, "ব্লাড টেলিগ্রাম" নামে যা পরিচিত, কনসাল জেনারেল ব্লাড স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরবতার প্রতিবাদে ঢাকার কন্সুলেট জেনারেলের ২০জন কূটনীতিকের সাক্ষরসহ পাঠান যার অংশবিশেষ ছিলো এরকম- "কিন্তু আমরা এতে হস্তক্ষেপ করবো না বেছে নিয়েছি, এমনকি নৈতিকভাবেও, এই আওয়ামী ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণহত্যা শব্দটি প্রয়োগ করা যায়, যা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিখাদ আভ্যন্তরীন ব্যাপার। আমেরিকান নাগরিকরা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।" ব্লাড এই অসন্তোষের সাথে একমত হয়ে উল্লেখ করেন "আমি বিশ্বাস করি এই অফিসাররা, যারা পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকান সরকারের সেরা অফিসারদের মধ্যে অন্যতম তাদের মতামতের সাথে আমেরিকান সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিধ্বনিত হয়েছে, সরকারী ও বেসরকারী উভয়ের। আমিও তাদের সাথে একমত পোষণ করি কিন্তু যতদিন আমি প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে এই পোস্টে আছি তাদের বিবৃতিতে আমার স্বাক্ষর করা উচিত হবে না মনে করি।";
যেখানে, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল, কনসাল জেনারেল ব্লাড আরেকটি টেলিগ্রাম পাঠান যার অংশবিশেষে উল্লেখ ছিলো "হিন্দুদের প্রতি [এই] নগ্ন, পরিকল্পিত এবং ব্যাপক বিশেষ ট্রিটমেন্ট পুরোপুরি "গণহত্যা"... শুরু থেকেই আমেরিকান কমিউনিটির বিভিন্ন সদস্য হিন্দুদের গ্রাম, হিন্দু এলাকা জ্বালিয়ে দেয়া, এবং যেসব হিন্দু এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে পালাতে চেয়েছিলো তাদের গুলি করে হত্যা প্রত্যক্ষ করেছেন অথবা এর ফলাফল প্রত্যক্ষ করেছেন যা পুরো ঢাকা শহর দৃশ্যমান।";
যেখানে সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি, সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির রিফিউজি সাবকমিটির চেয়ারম্যান (Subcommittee To Investigate the Problems Conncected with Refugees and Escapes) কমিটির কাছে নভেম্বর ১, ১৯৭১ একটি রিপোর্ট পেশ করেন, যাতে বিবৃত ছিলো "২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান আর্মি যে পরিকল্পিত সন্ত্রাসের প্রচার এবং এর গণহত্যামূলক পরিণতি শুরু করেছিলো- এর চেয়ে পরিস্কার বা তথ্যসমৃদ্ধ আর কিছুই হয় না। আমেরিকান সরকারের কাছে দেয়া ফিল্ড রিপোর্ট, অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ বিবরণ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট, এবং সাবকমিটির কাছে আসা আরো তথ্য থেকে পূর্ব বাংলায় যে ত্রাসের রাজত্ব চলছে তা প্রতীয়মান। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা যাদের জমি ও দোকান লুট করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কোথাও কোথাও হলুদ রঙ দিয়ে 'H'লিখে মার্ক করা হয়েছে। এগুলো সব ইসলামাবাদ থেকে মার্শাল ল'এর আওতায় সরকারীভাবে অনুমোদনন, আদেশ ও কার্যকর করা হয়েছে।";
যেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয়েছিলো, এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো;
যেখানে, ১৯৭২ সালে "The Events in East Pakistan", শীর্ষক একটি আইনি প্রকাশনায়, দ্য সেক্রেটারিয়েট অফ দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জ্যুরিস্টস বিবৃত করেছিলো, "হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছিলো তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, এবং তাদের ঘরবাড়ি ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে।";
যেখানে, ১৯৯৪ সালে, নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা সিডনি শনবার্গ যুদ্ধ কাভারকালীন স্মৃতি নিয়ে লিখেছিলেন, "পরে আমি রাস্তায় সারা দেশ ঘুরি পাকিস্তানিরা কী রেখে গিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার জন্য। শহরের পর শহর বধ্যভূমি ছিলো যেখানে মানুষকে বেয়োনেট, বুলেট আর পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কোন কোন শহরে, প্রতিদিনই হত্যা করা হতো...এটা যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাস পর (অর্থাৎ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে),...মানুষের হাড়গোর তখনো অনেক রাস্তার পাশে ছড়ানো ছিলো। রক্তমাখা কাপড় আর চিরুনিতে আটকানো চুলের গোছা এই বধ্যভূমিগুলোতে ছিলো। অবুঝ শিশুরা মাথার খুলি দিয়ে উদ্ভট খেলা খেলতো। অবশিষ্টাংশ ছিলো হলুদ "H" অক্ষর যা পাকিস্তানিরা হিন্দুদের বাড়িতে রঙ করতো, মুসলিম সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট টার্গেট ছিলো তারা।";
যেখানে, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী সংগঠন জেনোসাইড ওয়াচ তাদের "বাংলাদেশ গণহত্যার ৫০তম বার্ষিকী স্মারক ঘোষণা"য় উল্লেখ করেছে "পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের স্বাধীনতা-বিরোধী পূর্ব পাকিস্তান দখলের নয় মাস ধরে নিপীড়ন, অত্যাচার, ও হত্যা করেছিলো বাঙালি সংস্কৃতি ও পরিচয়ের যারা প্রতিনিধিত্বকারীদের, এর মধ্যে রয়েছে কবি, সংগীতজ্ঞ, অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, লেখক, এবং সিনেমা নির্মাতা।";
যেখানে ডিসেম্বর ৯, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কনভেনশনের (The Prevention and Punishment of the Crime of Genocide) ঘোষণা অনুযায়ী, গণহত্যা (genocide) "অর্থ নিচের যে কোন একটি কাজের দ্বারা, একটি জাতি, সম্প্রদায়, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠী সম্পুর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে, যথা (ক) গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা; (খ) গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরতরভাবে শারিরীক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা; (গ) গোষ্ঠীর জীবনমান ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বা আংশিক বাহ্যিকভাবে ধ্বংস করা; (ঘ) গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মদানে বাধা দেয়ার অভিপ্রায়ে নানা ব্যবস্থা আরোপ করা; (ঙ) এক গোষ্ঠীর সন্তান জোরপূর্বক অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।" এবং "নিমোক্ত কর্মগুলো শাস্তিযোগ্য হবেঃ (ক) গণহত্যা; (খ) গণহত্যা করার ষড়যন্ত্র; (গ) প্রত্যক্ষভাবে এবং জনগণকে গণহত্যায় প্ররোচিত করা; (ঘ) গণ্যহত্যার চেষ্টা করা; (ঙ) গনহত্যায় সহযোগী হওয়া;
যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী সংগঠন জেনোসাইড ওয়াচ এবং দ্য লেমকিন ইন্সটিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্বারা যে নৃশংসতাগুলো হয়েছিলো তা গণহত্যা (genocide) হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছে; এবং
যেখানে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, এবং গণহত্যাগুলিকে স্মরণ ও সংরক্ষণ করা উত্তরসূরীদের জন্য, যারা এগুলোর শিকার হয়েছে তাদের স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য এবং ভবিষ্যতে এই নৃসংশতাগুলি প্রতিরোধের জন্যঃ এখন, অতএব, হোক
গৃহীত, যে দ্য হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-
(১) নিন্দা জানায় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের জনগণের ওপর মার্চ ১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সংঘটিত নৃসংশতাগুলির;
(২) স্বীকৃতি দেয় যে বাঙালি জাতি এবং হিন্দুদের ওপর চালানো এই নৃশংসতাগুলির মাধ্যমে মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা (genocide) হয়েছে;
(৩) স্মরণ করে এই নৃশংসতার শিকার হয়ে যে অসংখ্য লোক মৃত্যুবরণ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং তাদের কষ্টে গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করে;
(৪) স্বীকৃতি দেয় যে সমগ্র জাতিগোষ্ঠী অথবা ধর্মীয় সম্প্রদায় তাদের সদস্যদের এই অপরাধগুলোর জন্য দায়ী নয়;
(৫) আহবান জানায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের জনগণের ওপর ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃসংশতাগুলিকে মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা (genocide) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার;
(৬) আহবান জানায় পাকিস্তান সরকারকে, এই অসংখ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে, এই গণহত্যার দায়ভার স্বীকার করে নেয়ার এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য, এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেসব অপরাধী এখনো বেঁচে আছে তাদের বিচার করার জন্য; এবং
(৭) পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার নিশ্চিত করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং এই অঞ্চলের সব মানুষের জাতীয়তা, জাতি, বর্ণ, গোত্র, ও ধর্ম নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধার অধিকার প্রসারে।
মন্তব্য
আন্তরিক সাধুবাদ আপনাকে, অনুবাদটির জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন