"বলো আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি
সবচেয়ে ভালবাসো?
তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নীকে?
পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নী-কিছুই নেই আমার।
তোমার বন্ধুরা?
ঐ শব্দের অর্থ আমি কখনোই জানিনি।
তোমার দেশ?
জানি না কোন দ্রাঘিমায় তার অবস্থান।
সৌন্দর্য?
পারতাম বটে তাকে ভালবাসতে- দেবী তিনি অমরা।
কাঞ্চন?
ঘৃণা করি কাঞ্চন, যেমন তোমরা ঘৃণা করো ঈশ্বরকে।
বলো তবে, অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কী ভালবাসো তুমি?
আমি ভালবাসি মেঘ, চলিষ্ণু মেঘ…উঁচুতে…ঐ উঁচুতে…
আমি ভালবাসি আশ্চর্য মেঘদল।"
(L'Étranger- Charles Baudelaire, আশ্চর্য মেঘদল- অনুবাদঃ বুদ্ধদেব বসু)
ঢাকার আকাশে কিছুদিন আগে (সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩) বিকাল চারটার দিকে এক দুর্লভ 'রংধনু মেঘ' দেখা গেছে। এর আগে চীনের আকাশে গত বছর এই মেঘ দেখা গিয়েছিলো। এরকম আরও কিছু দুর্লভ মেঘ আছে যা কদাচিৎ দেখা যায়। সেগুলো সম্পর্কে জানার আগে, যে মেঘগুলো আমরা সচরাচর দেখতে পাই সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলি। তবে প্রথমেই আসলে জানা যাক, মেঘ জিনিসটা কী? আকাশে এগুলোকে গ্যাসের মতো দেখা গেলেও আসলে এগুলো বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা পানির ক্ষুদ্র কণা। সূর্যের তাপে পৃথিবীর উপরিতলের পানি বাষ্পীভবনের ফলে উপরে উঠে যায়, সেখানে সেগুলো শীতল ও ঘন হয়ে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণার সমন্বয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই কণাগুলো যখন আরও বেশি ঘন হয়ে যায়, তখন সেটা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। এটাই সংক্ষেপে পৃথিবীতে পানির জীবনচক্র (water cycle), মেঘ যার একটা পর্যায়।
আকাশে নানারকম মেঘের সমাহার দেখা গেলেও আমরা আসলে সচরাচর তিন রকম (বা দুই রকম) মেঘ দেখতে পাই। এই তিন রকম মেঘ আবার নানাভাবে, নানা উচ্চতায় মিশে আরো অনেক রকম বা নামের মেঘের সৃষ্টি করে। যেমন- কুদ্দুস নামের কোন মেঘকে যদি নিচে দেখা যায়, মধ্য আকাশে গিয়ে তার নাম হয়ে যায় মধ্য কুদ্দুস, আরো উঁচুতে উঠে সে হয়ে যায় উড়াল কুদ্দুস। আবার আব্দুল নামের মেঘের সাথে মিশে গেলে তার নাম হয় আব্দুল কুদ্দুস। নিচের বর্ণনা থেকে ব্যাপারগুলো আশা করছি আরো পরিস্কার হবে। এই তিন রকম মেঘের ল্যাটিন নাম হলো- স্ট্র্যাটাস (stratus), কিউমুলাস (cumulus), আর সিরাস (cirrus)।
১) স্ট্র্যাটাস বা ছড়ানো মেঘঃ ল্যাটিন ভাষায় স্ট্র্যাটাসের অর্থ হলো লেয়ার বা ছড়ানো (to spread out)। আমরা বাংলায় এটাকে তাই 'ছড়ানো' মেঘ বলতে পারি। এই মেঘ ধূসর বা সাদা ও বৈশিষ্ট্যহীন। সাধারণত মেঘলা দিনে আমরা এমন মেঘ প্রত্যক্ষ করি, যেটা অনেকটা কুয়াশার চাদরের মতো ছড়ানো মনে হয়। এই মেঘ থেকে কদাচিৎ বৃষ্টি হয়। নিচের আকাশে অর্থাৎ পৃথিবীর তল থেকে উপরে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত এই ছড়ানো মেঘ দেখা যায়।
২) কিউমুলাস বা স্তুপ মেঘঃ আমাদের মনে মেঘ বলতে আকাশে যে 'সাদা মেঘের ভেলা' বা চলিষ্ণু মেঘের ছবি ভেসে ওঠে, তা হচ্ছে আসলে এই কিউমুলাস মেঘ (ছবি- http://tiny.cc/yoqbvz)। ল্যাটিনে কিউমুলাস মানে হচ্ছে স্তুপ বা বোঝা, তাই একে আমরা বাংলায় 'স্তুপ' বা স্তুপাকার মেঘ বলতে পারি। এই মেঘ সাধারণত নিচের আকাশে দেখা গেলেও স্তুপাকারে অনেক উঁচু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। কিউমুলাস মেঘ সাধারণত পরিস্কার আবহাওয়া নির্দেশ করলেও, অনেক সময় তা ঝড়ো আবহাওয়াতেও রুপান্তরিত হতে পারে। বৃষ্টি মেঘ বা rain clouds (ল্যাটিন নাম nimbus) এর সাথে যুক্ত হয়ে তখন সেটা Cumulonimbus বা বৃষ্টিস্তুপ মেঘে পরিণত হয় (ছবি- http://tiny.cc/k5rbvz)
৩) সিরাস বা অলক মেঘঃ সিরাস অর্থ ল্যাটিনে কোঁকড়ানো চুল (curl of hair)। আকাশের একদম উঁচুতে (৫-১৩ কিমি) এই মেঘ থাকে- সরু, কোঁকড়ানো চুলের গোছার মতো। বাংলায় কোঁকড়ানো চুলের গোছার একটা সুন্দর নাম আছে- 'অলক'। সাধারণত পরিস্কার আকাশে এই অলক মেঘ দেখা যায়। অনেক উঁচুতে থাকে বলে সিরাস বা অলক মেঘের জলকণাগুলো ক্রিস্টালাইজড হয়ে যায়।
এই তিন রকম মেঘের সমন্বয়ে আরো কিছু মেঘ ভিন্ন নামে এবং ভিন্নভাবে দেখা যায়। যেমন- মধ্য আকাশে (২-৭ কিমি) যে মেঘগুলো থাকে সেগুলোর নামের আগে alto-এই প্রিফিক্স যুক্ত হয়। আলটো মানে হলো 'উচুঁ' মানে নিচের আকাশের চেয়ে উপরে, কিন্তু আসলে যেটা মধ্য আকাশের মেঘ। ল্যাটিনের সাথে মিলিয়ে মধ্য আকাশ বা alto-মেঘের বাংলা প্রিফিক্স রাখা যেতে পারে 'আলতো'। মধ্য আকাশে স্ট্র্যাটাস বা ছড়ানো মেঘের নাম তাই বলা যেতে পারে 'আলতোছড়ানো' (altostratus) মেঘ এবং কিউমুলাস বা স্তুপ মেঘের নাম 'আলতোস্তুপ' (altocumulus) মেঘ। মাঝ আকাশের আলতোছড়ানো মেঘ আর নিচের আকাশের ছড়ানো মেঘের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য না থাকলও (দু'টোই কুয়াশার চাদরের মতো ছড়ানো); আলতোস্তুপ মেঘ নিচের আকাশের স্তুপ মেঘের চেয়ে সাইজে একটু ছোট হয় (ছবি- http://tiny.cc/osqbvz)
তেমনিভাবে, উপরের আকাশে সিরাস বা অলক মেঘ কিউমুলাস বা স্তুপ মেঘের সাথে যুক্ত হয়ে Cirrocumulus বা অলকস্তুপ মেঘ (ছবি- http://tiny.cc/itqbvz) এবং স্ট্র্যাটাস বা ছড়ানো মেঘের সাথে যুক্ত হয়ে Cirrostratus বা অলকছড়ানো মেঘের (ছবি- http://tiny.cc/fvqbvz) সৃষ্টি করে। এছাড়া নিচের আকাশেও দিগন্তের কাছে স্ট্র্যাটাস এবং কিউমুলাস মেঘ যুক্ত হয়ে Stratocumulus বা ছড়ানোস্তুপ মেঘের সৃষ্টি করে (ছবি- http://tiny.cc/mwqbvz)। অন্য আরেকটা যেটা কম্বিনেশন হয় সেটা হলো বৃষ্টি মেঘ বা rain clouds এর সাথে, উপরে cumulonimbus যার একটা উদাহরণ, অন্যটা হলো nimbostraus বা ছড়ানো বৃষ্টি মেঘ (ছবি- http://tiny.cc/ezqbvz)। এখন হয়তো কিছুটা বোঝা গেছে কুদ্দুস নামের মেঘ বিভিন্ন উচ্চতায় গিয়ে কীভাবে অন্য নাম নেয় বা অন্য মেঘের সাথে যুক্ত হয়ে আব্দুল কুদ্দুসে পরিণত হয়। তবে এত কিছু মনে না রেখে শুধু এটুকু মনে রাখাই যথেষ্ট- আমরা আকাশে যেসব মেঘ দেখি তা মোটা দাগে বিভিন্ন কিউমুলাস বা স্তুপ মেঘেরই নানা রূপান্তর।
দুর্লভ মেঘঃ
ঢাকার আকাশে যে দুর্লভ রংধনু মেঘ দেখা গেছে, সেটা যে একমাত্র দুর্লভ মেঘ তা নয়। আরো কিছু মেঘ এরকম কদাচিৎ দেখা যায়। যেমন- Mammatus cloud যা রাখা হয়েছে ল্যাটিন শব্দ 'mamma' থেকে যার অর্থ স্তন, দেখতে তেমন দেখায় বলে। এর বাংলা নাম দেয়া যায় 'মাতৃমেঘ'। এই মাতৃমেঘগুলো অন্য আরেক মেঘকে কেন্দ্র করে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে (সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ, যা ঝড়বৃষ্টির সময় দেখা যায়)।
এছাড়া আছে, 'তরঙ্গ' বা 'ঢেউ খেলানো মেঘ' যার নাম Kelvin-Helmholtz clouds (লর্ড কেলভিন ও Hermann von Helmholtz এর নামে যারা এই মেঘ গঠনের বৈশিষ্ট্য আমাদের জানিয়েছিলেন)। আরো আছে লেন্টিকুলার বা লেন্সসদৃশ মেঘ (ছবি- http://tiny.cc/g5rbvz)। অনেকটা মাথায় দেয়া ক্যাপের মতো দেখতে বলে একে cap cloud বা টুপি মেঘও বলা হয়। এই মেঘও ঝড়ো আবহাওয়ার ইঙ্গিত করে। পাইলটরা আকাশে এই টুপি মেঘ দেখলে এড়িয়ে যান।
রংধনু মেঘঃ
ঢাকার আকাশে যে রংধনু মেঘ দেখা গেছে তার খটোমটো ল্যাটিন নাম হচ্ছে iridescent pileus cloud. ইরিডিসেন্ট মানে হচ্ছে ঝকঝকে উজ্জ্বল বর্ণের সমাহার, সোজা বাংলায় রংধনু; pileus হলো এক ধরনের টুপি, যা প্রাচীন গ্রিস বা রোমে লোকে পরতো (https://en.wikipedia.org/wiki/Pileus_(hat)) আসলে এই মেঘ এক ধরনের লেন্টিকুলার বা টুপি মেঘ, কিন্তু এর জলকণার ওপর সূর্যের আলো পড়ে মেঘে এই রংধনুর সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু লেন্টিকুলার মেঘ, কাজেই ধারণা করছি ঢাকায় এই মেঘ দেখা যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে ঝড়বৃষ্টি হয়েছিলো। আসল রংধনুর সাথে এই রংধনু মেঘের পার্থক্য হলো রংধনুতে জলকণাগুলো বিভিন্ন আকৃতির হয়, কিন্তু রংধনু মেঘে একই আকৃতির জলকণা থাকা লাগে, যা খুবই ক্ষুদ্র। এই কারণে রংধনুর চেয়ে রংধনু মেঘ অনেক উজ্জ্বল ও দুর্লভ।
পুনশ্চঃ
ক) 'আকাশ' শব্দটি এখানে প্রচলত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, আসলে হবে বায়ুমণ্ডল। বাস্তবে আকাশ বলে কিছু নেই, আমাদের মাথার ওপরে আছে শুধু মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে চাদরের মতো লেপ্টে থাকা বায়ুমুন্ডল ও নিঃসীম মহাশূন্য। দিনের বেলায় এ মহাশূন্য নীল রঙের দেখায় কারণ সূর্যের আলো বায়ুমুন্ডলে প্রবেশের পর 'প্রিজম এফেক্টের' ফলে নীল রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অন্য রশ্মিগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট হওয়ার কারণে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। আবার লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় দিগন্তের কাছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় লালচে দেখি। রাতে সূর্য পৃথিবীর অন্যপাশে থাকে, সূর্যের আলোর অভাবে আমরা কালো মহাশূন্যে চাঁদ এবং নানা গ্রহ-নক্ষত্র দেখি যা পৃথিবীর অন্য পাশের সূর্যের আলোই প্রতিফলন করে।
খ) 'মেঘের অনেক রং' শিরোনামটি নেয়া হয়েছে এই নামে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে নির্মিত, হারুনর রশীদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র থেকে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রঙীন চলচ্চিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র।
মন্তব্য
১। মেঘের নামগুলোর বাংলা রূপ ভালো লেগেছে। বর্ণনা যথারীতি প্রাঞ্জল ও মনোগ্রাহী হয়েছে।
২। মেঘের ছবিগুলোর লিঙ্ক দেবার পাশাপাশি ছবিগুলো লেখায় জুড়ে দিলে (এমবেড) পাঠকের সুবিধা হতো। এখন এক ট্যাবে লেখা খুলে রেখে আরেক ট্যাবে মেঘের ছবি দেখতে হচ্ছে।
৩। 'মেঘের অনেক রঙ' সিনেমাটি নিয়েই একটি আলাদা পোস্ট দেয়া সম্ভব। হয়তো কখনো কেউ সেটা করবেন।
অফটপিকঃ
বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে শার্ল বোদলেয়ারের (নামটি কি ঠিক লিখলাম?) কবিতার অনুবাদ পড়তে সলিমুল্লাহ খানকৃত একই কবিতার অনুবাদটির কথা মনে পড়লো। আগ্রহী পাঠকের জন্য সেটি এখানে উদ্ধৃত করা হলো।
বিদেশি
- বল দেখি, অবাক আদম, কাহাকে তুমি ভালবাস সবচেয়ে বেশি?
তোমার বাপ, তোমার মা, তোমার বোন, না তোমার ভাই?
- আমার বাপ, মা, বোন, বা ভাই কেহ নাই।
- তোমার ইয়ারদোস্ত?
- কথা যাহা বলিলেন তাহার যে কি অর্থ আজও বুঝি নাই।
- তোমার দেশ?
- ও যে কোথায় কোন অক্ষরেখায় আমার ধারণা নাই।
- রূপ?
- সানন্দে ভালোবাসিব তাহাকে, সে দেবী আর চিরজীবী।
- সোনা?
- নিকুচি করি তার, যেমন আপনারা করেন খোদার।
- তো কি তুমি ভালবাস, হে অসামান্য পরদেশি?
- আমি ভালবাসি মেঘমালা … ঐ উড়ন্ত মেঘমালা … ঐ তো ঐখানে … আশ্চর্য মেঘমালা!
(সলিমুল্লাহ খান; পারির পিত্ত; ১৬ মার্চ ২০২২)
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। মেঘের বাংলা নামগুলো ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত হলাম। এটা ব্লগপোস্ট হলেও এই নামগুলো সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা আসলে বহু বছরের। বাংলার আকাশে 'রঙধনু' মেঘ দৃশ্যমান হওয়া এগুলো নিয়ে লেখার একটা সুযোগ করে দিলো। সচলায়তন ছাড়া এমন লেখাও অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে কিনা আমার জানা নেই। তবে আশা রাখি একদিন হয়তো এই নামগুলো বাংলা ভাষায় প্রচলিত হবে।
- পোস্ট লম্বা হয়ে যাবে ভেবে এমবেড করতে ভয় পাচ্ছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ মেঘের ছবিগুলো এমবেড করে দিলাম।
- 'মেঘের অনেক রঙ' এই নামে রং/রঙ বানান নিয়ে কিছুটা কনফিউশন ছিলো। উইকিতে দেখলাম 'রং' লেখা আছে। এছাড়া ব্যাকরণের নিয়ম পড়ে দেখলাম- কোন শব্দের সাথে যুক্ত হলে রঙ বানান ঠিক আছে (যেমন, রঙের)। আলাদা শব্দের ক্ষেত্রে 'রং'। দু'টোই সঠিক।
নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা রইলো। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন।
মেঘগুলোর নাম যে হুট করে দেয়া না সেটা আঁচ করা যায়। আশা করি এই নামগুলো একসময় প্রচলিত হয়ে যাবে।
Cirrus = অলক মেঘ, Cumulonimbus = বর্ষণ মেঘ - এগুলো স্কুলের পাঠ্যবইয়ে পড়েছি।
ছবিগুলো এমবেড করে দেবার জন্য ধন্যবাদ। ছবির ওপরে দেয়া নামগুলো একটু নিচে দিতে পারলে মেঘগুলো আরও পরিষ্কার দেখা যেতো।
আমি ইউটিউবে চলচ্চিত্রটার শুরুটা চেক করলাম। সেখানে 'মেঘের অনেক রং' - এভাবে লেখা আছে। তোমার লেখা সঠিক। বিভক্তিবিহীন স্বাধীন শব্দ হিসাবে 'রঙ' লেখা যাবে তবে সেক্ষেত্রে শেষে হস্-চিহ্ন দিতে হবে। অর্থাৎ, 'রঙ্' - এভাবে লিখতে হবে। তোমার সুবাদে রঙের বানানের সঠিক ব্যবহার শেখা হয়ে গেলো।
তোমাদেরকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা। সুস্থ থেকো, ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মেঘের রকমফের নিয়ে প্রাঞ্জল বাংলায় লেখার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। তবে কয়েক বাক্য পর পর লেখক এমন সব ইংরেজি শব্দ বাংলা হরফে ব্যবহার করেছেন, যেসবের বাংলা সুলভ এবং বহুলপ্রচলিত।
মেঘ নিয়ে ১৮৭৯ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে ১৪৪ বছর আগে, রজনীকান্ত গুপ্ত বেশ ঝরঝরে সুপাঠ্য বাংলায় লিখেছেন, আর তাঁর প্রণীত বাংলা শব্দগুলি পরবর্তী লেখকরা ব্যবহারও করেছেন। অলক (সিরাস), স্তর (স্ট্রাটাস), স্তূপ (কিউমুলাস) শব্দগুলো বাংলাদেশের পাঠ্যবইতেও ছিল (এখন আছে কিনা জানি না)। নিম্বাসের বাংলা করতে গিয়ে গুপ্ত মশাই একটু খটমটে শব্দ ব্যবহার করেছেন - বৃষ্টিপ্রদ, যার বিকল্পে পরবর্তী সময়ে 'বর্ষী' চোখে পড়েছে। মিশ্রিত মেঘের নাম অলক-স্তর, অলক-স্তূপ, স্তর-স্তূপ, এমন।
Alto- কেন 'আলতো' হবে, সে যুক্তি এ লেখাটিতে পাইনি, উচ্চারণের নৈকট্য ছাড়া। কোন একটি লেখায় এর বিকল্প উপসর্গ মধ্য- পড়েছি বলে আবছা মনে পড়ছে (মধ্য-অলক, মধ্য-স্তূপ ইত্যাদি)।
কেলভিন-হেল্মহল্টজ মেঘের বাংলা এক শব্দে হতে পারে 'তরঙ্গ' মেঘ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ইংরেজি শব্দের সুলভ ও বহুলপ্রচলিত বাংলা শব্দগুলি এখানে জানিয়ে দিন, লেখায় যোগ করে দেবো।
গুগলে খুঁজে রজনীকান্ত গুপ্তের মেঘ নিয়ে লেখার কোন রেফারেন্স পাইনি। আপনি নিশ্চয়ই ১৮৭৯ সালের লেখা সম্পর্কে স্মৃতি থেকে লেখেননি। আপনার তথ্যের উৎসের কোন লিংক বা ডকুমেন্ট এখানে যুক্ত করলে উপকৃত হবো।
'তরঙ্গ' মেঘ নামটা পছন্দ হয়েছে। পোস্টে যোগ করে দিলাম।
রজনীকান্ত গুপ্তের 'প্রবন্ধ-কুসুম' বইটি থেকে দুইটি পাতার ছবি তথ্যসূত্র হিসাবে যোগ করছি (প্রথম মন্তব্যেই করা উচিত ছিল)।
পাতা ১, পাতা ২
আপনার লেখায় ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দগুলোর বাংলা যদি আমি জানাই, আপনি সে খাতে অনুসন্ধানের ন্যায্য আনন্দ/তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। The process itself holds some edificatory values.
বাহ, দারুণ! অনেক ধন্যবাদ তথ্যসূত্র যোগ করার জন্য।
শেষমেষ ইংরেজিতে লিখেই উপদেশ দিলেন বাংলায় লেখার জন্য!
বাংলাদেশের আকাশে ছড়ানো মেঘ, অলক মেঘ এবং স্তুপ মেঘ বাদে বাকী মেঘের চেহারা দেখা যায় না বোধহয়। মেঘ নিয়ে এমন রঙিন একটা লেখার জন্য ধন্যবাদ। নতুন কয়েকটি বিষয়ে আলোকিত হলাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মেঘের প্রকার প্রধানত ঐ তিনরকম বলে সচরাচর আকাশে আমরা তাই দেখি। অন্যগুলোও কদাচিৎ দেখা যায়, যেমন গত সেপ্টেম্বরে 'রঙধনু' মেঘ দেখা গেছে। মাতৃমেঘও অনেকে দেখেছে বলে শুনেছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন