প্রতিবাদ হবে রক্তপলাশে রক্ত জবায়

তাপস শর্মা এর ছবি
লিখেছেন তাপস শর্মা [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০১/২০১২ - ১০:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি উনাকে বলছি যিনি বদলে যাওয়ার কথা বলছেন। আমি উনাদের বলছি যারা রাজদণ্ড হাতে নিয়ে বসে আছেন। আমি উনাকে বলছি যিনি শুধুমাত্র বুদ্ধি দিয়ে কথা বলেন। আমি উনাদের বলছি যারা ভাষাকে কন্ঠরুধ করেন। বলছি নিজের ভেতর পরিবর্তন না করে কি করে বদলে দেওয়ার কথা বলছেন? নিজের ঘরের মধ্যে দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিয়ে কি করে বদলে দেওয়া সম্ভব? এর উত্তর কি আপনার কাছে আছে। পৃথিবীর সব আদিম প্রবৃত্তিকে একত্রিত করে কি করে সময়ের বুকে বিবর্তন আনা সম্ভব? আপনি উত্তর দেবেন কী? মানুষের হয়ে কথা না বলে আপনি রাজার দণ্ড হাতে ওদের উপরই ছড়ি ঘোরান, আপনি কোন ধরনের শাসক? আপনার অর্জিত বুদ্ধি যদি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে কথা বলে তখন আপনি কি করে দাবি করেন আপনি সততার পক্ষে? প্লিজ বলবেন না সততা একটা আপেক্ষিক বিষয়...

আমি প্রশ্ন করতে চাই একজন অতি সাধারণের বুক চিরে। যার বুকে আবেগ বয়ে যায়। সেই কন্ঠে ছুরি বসিয়ে আপনি কি করে বদলানোর ভাষা বলেন। সর্বহারার বুকের হাহাকার শুনেও চুপ করে থেকে আপনি কি করে দেশের কন্ঠ হলেন? আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ। চেয়ে দেখি টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে একটা দেশের স্বার্থ কতটা বিপন্ন হতে পারে। নিজের ক্ষতি করে অন্যের গলায় মালা পরানোটা কোন মহানুভবতার নিদর্শন একবার বলবেন আপনি? আমার রাজনীতির জ্ঞান সীমিত, কেননা আমি এর প্যাঁচাল বুঝিনা, বুঝেনা আমার মত লক্ষ কোটি আম আদমি। বিরুদ্ধ স্রোতে গান গাইলেই একজন হয়ে যায় দেশের শত্রু – এর পর আপনি কি করে বদলানোর কথা বলেন। এটা কোন ধরণের বদলে দেওয়ার নীতি। আপনি উত্তর দেবেন কী?

নিজেদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে আপনি দেশের ভাগ্য নিয়ে কথা বলেন। নীতি নির্ধারণ করেন। আপনারা জ্ঞানি মানুষ, আপনারা বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধির ব্যাবসা করেন। সুদূর পার্বত্য প্রদেশের একটা চাষির কথা আপনি ভাবেন? আপনি ভাবেন হাওরে সাঁতার কাটা সেই বাচ্চাটির কথা যে তার মায়ের সাথে রোজ ওখানে সাঁতার কাটতে যায়? আপনার ব্যাবসায়ী কন্ঠ কি সত্যিই ভাবে, সেই পরিবর্তনের কথা যখন একটা হটকারী সিদ্ধান্তে জীব-বৈচিত্র নষ্ট হয়ে সব ধূসর অমলিন হয়ে যাবে। তখন সেই বাচ্চাটির মুখটার কথা আপনি একবারের জন্যও ভেবে দেখেছেন? একটা দেশের কথা নয় এখানে। দুই দেশের প্রাচীর এর কথা! সৃষ্টির সুখ নষ্ট করে আপনারা কি করে বদলে দেওয়ার কথা বলেন?

আপনি আমলাতন্ত্র লালন করে নিজের ঘরের শোভা বাড়ান, আপনি কেন একবারের জন্যও বলেন না ওদের কথা যারা দেশের হয়ে কথা বলার কন্ঠ ধারণ করে। তাদের কথাই শুনেন এবং বলেন যারা আপনার তাঁবেদারি করে কিংবা যারা আপনার ভাণ্ডার স্ফিত করতে সাহায্য করে। সেই স্ফিত অর্থ কি লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের প্রতিদানে আপনাকে দিয়ে গেছে ওরা?

আমি একজন অতিসাধারণ মানুষের কথা বলছি। সেই মানুষ যার বুদ্ধি মোটা, মোটা ভাত আর মোটা কাপড়ে যার জীবন চলে। কারণ আপনি জানেন এখানে সরকারী চাকুরেদেরও যে খুব বেশি একটা মাইনে দেওয়া হয় তা কিন্তু নয়। গড়ে একটা টাকা পায় ঠিকই কিন্তু তা দিয়ে ভালো ভাবে জীবন ধারণ কখনোই করা যায়না। শ্রেণী বিভাগের নিরিখে এই কথা বলছি। সবাই তো আর ১ম বা ২য় গ্রেডের তালিকা ভুক্ত কর্মচারী নন। তাই যারা এই বিশেষ শ্রেণীর বাইরে তারাও খানিকটা স্ট্যাটাস মেন্টেইন করে চলতে চান। কিন্তু তা সম্ভব হয়না। কারণ রাস্ত্রশক্তি তার কাছ থেকে কেড়ে নেয় মুল্যবান সময়। একটা উদাহারণ দিচ্ছি। ঐ পাড়ার কমল হালদার। সাধারণ গ্র্যাজুয়েট ছেলে। তিন বছর হল সড়ক পরিবহণ দপ্তরে চাকরি পেয়েছে। বাড়িতে মা, বাবা, ছোট ভাই ও বোন। সিম্পল ফ্যামেলি। বাবা চাকরি করতেন, স্কুল শিক্ষক, রিটায়ার করেছেন। এখন কমল যে চাকরি করে তা দিয়েই সংসার চলে। কমল ভালো ফুটবল খেলতো। এখন খেলেনা। যাই হোক কমল সকাল ন’টায় অফিসে যায়, তারপর আবার ফিরে আসে বিকেল পাঁচটার পর, কোনো কোনো সময় ছ’টাও হয়। এইভাবে মাস কাটিয়ে সে মাসে শেষে বেতন পায় ৭০০০ টাকা। এই টাকায় কি চার-পাঁচ জনের একটা পরিবারের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব ? এইবার কথা হল আপনাদের মতো প্রগতিশীলরা বলেন, আরে ভাই একটা কাজ তো রাষ্ট্র তোমাকে দিয়েছে এইবার তুমি অন্য ব্যবস্থা কর। ঠিক আছে মেনে নিলাম! কিন্তু আমাকে একবার সেই সময়টা দেখান ? আপনি তো বুদ্ধি দিয়ে কথা বলেন, প্লিজ একবার বলুন আপনি কি সেই টাকায় জীবন নির্ধারণ করতে পারবেন। যদি না পারেন তাহলে আপনার সেই কলম কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, তার দ্বিচারিতার বুরুদ্ধে গর্জে উঠেনা? তারপর আপনি কোন মুখে বদলে দেওয়ার কথা বলেন?

আপনারা সামাজিক বোধ, রীতিনীতি সমাজ গঠন, পরম্পরার কথা বলেন। তাই একটা মেয়েকে বস্তার মধ্যে পুরে ফেলতে আপনাদের সঙ্কোচ হয়না। এটাই আপনাদের কাছে সংস্কার, পরম্পরা। আপনারা বিদেশ ভ্রমণ করেন, লুলু চোখে বিদেশী লাস্যময়ী দেখেন, ওদের সংস্কৃতির প্রশংসা করেন। আবার দেশে ফিরে এসে মৌলবাদির রঙে রাঙিয়ে ফেলেন নিজেকে। তার পরও জোর গলায় সমাজ বিবর্তনের কথা বলেন। আপনার পাশের বাড়ির মেয়েটি একটু স্বাধীন ভাবে চলতে চাইলে আপনি তার জীবনে হস্তক্ষেপ করেন। এমন কাজ শুরু করেন যাতে করে তার লাইফ হেল এ পরিণত হয়ে যায়। আর তাই দেখে আপনার নিজের বাড়ির নিস্পাপটি আপনাকে ভয় পেতে শুরু করে। আর আপনি ভাবেন আপনাকে সম্ভ্রম করছে। এভাবেই দেশের সমাজ ব্যবস্থায় আঁধার কায়েম করে আপনারা পরিবর্তনের জিগির তুলেন। আর বদলানোর কথা বলেন। এই বদল কিসের? কাদের ?

ভাষাকে ঘিরে এখনও চলে খেঙরার নোংরামি। আমি সত্যি অবাক চোখে দেখি, যে ভাষার জন্য প্রাণ দিতে পারে একটা জাতি সেই জাতি কি করে অস্ত্র হাতে ভাতৃঘাতি হয়। আচ্ছা বাহান্নোর সেই রক্তিম দিনে সালাম কিংবা বরকত কি একবার পেছনে ফিরে দেখেছিল যে পেছনে যারা উত্তাল হয়ে ছুটছেন তারা কোন শ্রেনীর বাঙালি; হিন্দু বাঙালি না মুসলিম বাঙালি? সেই অভিন্ন আবেগের বুকে ছুরি বসিয়ে গণতন্ত্রের নামে একটা ‘সিলেক্টিভ’ ধর্মের তকমা লাগিয়ে কি করে জাতির একতার কথা বলতে পারেন? আপনি বলেন – করি বাঙলায় চিৎকার। কিন্তু আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি যখন সেই একই ভাষায় চিৎকার করে তখন ভিন্ন ঘরের বলে আপনি কেন তাকে তাড়িয়ে দেন? কেন তাকে গলায় জড়িয়ে ধরে সমন্বয়ে বাঙলায় চিৎকার দিতে পারেন না? নিজের ভেতর ব্যাভিচারকে না বদলে আপনি কাদের বদলানোর কথা বলেন?

আপনি সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রনের জিগির তুলেন। জাতির পক্ষে সওয়াল করেন। আপনি মানুষের জননেতা। মানুষের কন্ঠ। আর আপনিই আম আদমিকে শেখান বাক স্বাধীনতার অধিকারের কথা। কিন্তু আপনার আঁতে ঘা লাগে এমন কথা শুনতেই আপনার চোখের পরিভাষা পাল্টে যায়, কেন? আপনাকে আমরা ভরসা করি। কিন্তু তার বদলে আপনি আমাদের কি তোফা দেন। ঠিক হিরক রাজার দেশের রাজা হিরকের মতো আচরণ শুরু করেন। কেন? কেন আপনারা খারাপ কাজ করলে সেই আম আদমি তার প্রতিবাদ করতে পারবো না? এই অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি কে? নিজেকে ঈশ্বর ভাবছেন না কি ? তাহলে বলি আমি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করি। কাদের আটকে দিতে চাইছেন আপনি? যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, যারা সৎকে মর্যাদা দেয় আর অসৎকে ঘৃনা করে। তাহলে আপনি কোনটা? আগে তাদের আটকান যারা দেশের ভিভেদের জন্য দায়ী। তাদের কেন আটকাচ্ছেন না। ওরা কারা আপনি তা জানেন না? সেই পলাশীর প্রান্তর থেকে শুরু করে, আগস্ট ৪৭ এবং ৭১ বেয়ে ওরাই তো বারবার নানা রূপে বারবার ফিরে আসছে ঘাতক হয়ে। লক্ষ লক্ষ প্রাণের ঘাতকদের আপনি কেন কিছু বলেন না? ওদের শাসন করার সময় আপনার চোখ কেন বিস্ফারিত হয়না। আপনি একটু বলবেন কি? তা না করে আপনি শাসন চাপাচ্ছেন দুর্বলদের উপর। এরপর মুখে বদলে যাওয়ার কথা বলছেন। কেন একবার বলবেন কি...

রবির শেষ কিরণে শ্রেষ্ঠতার সীমানার দর্পচূর্ণ হয়ে যায়। নিরব পদচারনার ভিড়ে শাশ্বত চেতনা হারিয়ে হারিয়ে কোলাহল তোলে। নিঃশব্দ বন্ধনচেতনা মুক্তির আশায় ছটফট করে, কোপেনহাগেনে আর্তনাদ করে ঘুমন্ত পশুর দল। স্বেচ্ছাচারের নীল সীমানায় কালের প্রতিনীধিরা হৈচৈ করে। ঘন আস্তরণের ফাঁসে স্বপ্নের দক্ষিণ জানালা, স্পৃষ্ট বর্তিকা আজ আত্মজিজ্ঞাসায় বিকল্পের খোঁজে, মরণ ঝাঁপি খুলে দেয় বিবর্ণ মানবতা। গণতন্ত্র নিরবতা পালন করে। কোলাহলের সাইরেন বাজায় ব্যস্ত শকুন। প্লিজ একবার আয়নার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেন আপনারা। চেহারাটা শকুনের মতো লাগছেনা তো? আমি কিন্তু স্পষ্ট তাই দেখতে পাচ্ছি সেই ভয়ংকর চেহারাটা। আপনারা প্রত্যেকেই একেকজন ঘাতক। হাতটা ভালো করে দেখুন রক্ত দেখা যাচ্ছে কী। এরপরও আপনারা মেকী সেজে বলেন সমাজ এবং দেশকে বদলানোর কথা? এটা কিসের বদলে যাওয়া। আর আপনারা আপনাদের পরিকল্পনা অনুসারে আমাদের বদলে দিতে চান।

স্যরি। আপনাদের এই উদ্যোগের মুখে সপাটে একটা থাপ্পড় কষিয়ে গেলাম। তবু আমি আপনাদের মতো হিপোক্রেট হতে পারিনা। শুধু এটুকু বলে যাই এরপর থেকে প্লিজ, আর বদলে দেওয়ার কথা বলবেন না। আমরা আমাদের মানসিকতা বদলাতে চাইনা। আমরা আমাদের মতো করে বদলাতে চাই। একটা দিশা নিয়ে। তারপরেও যদি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে প্রতিবাদ হবে রক্তপলাশে রক্ত জবায়।

====================
আমার শহর
ডিসেম্বর। ৩১। ২০১১


মন্তব্য

আউটসাইডার এর ছবি

ভালো লাগলো ভাই। ভাল থাকবেন।

আউটসাইডার এর ছবি

চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তাপস শর্মা এর ছবি

লেখাটা পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।