একটি পরিকল্পিত হত্যা

তাপস শর্মা এর ছবি
লিখেছেন তাপস শর্মা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০১/২০১২ - ১০:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মেয়েটি মরেছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি মরেছে। হয়তো তার মরার কথাই ছিল। এই লেখাটা কিভাবে লিখব ভাবছিলাম। কোথায় থেকে শুরু করব তাই ভাবছিলাম। কিন্তু পারছি না। কিছুতেই কোন কিছু মিলিয়ে উঠতে পারছি না । কারণ ঘটনাটি ঘটেছে আমার থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে। আমি শুধু শুনেছি। ওই মেয়েটিকে আমি দেখিনি কখনো। কিন্তু প্রশ্ন হল তার মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? সুসাইড নোট জাতীয় কিছু লিখে যায়নি সে... ঘটনাটা আমি সত্যিই বলার মতো পজিশনে ছিলাম না, আমার কিই বা বলার আছে। কিন্তু গতকাল অপর একটি মেয়ের কিছু কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। বাংলাদেশে মেয়েদের প্রকৃত অবস্থানটা কোন জায়গায় ?

ওই বন্ধুটিকে প্রশ্ন করেছিলামঃ আপনারা সত্যিই ভালো আছেন। এই যে এত ব্যাভিচার এবং চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা মিথ্যাচার, ধর্মের মোড়ক। তারপরও আপনারা চুপ কেন?

উত্তরঃ জানিনা। তবে অনেক কিছুই না বলা থেকে যায়।

আমিঃ দেয়ালটা ভেঙে দিন, প্রাচীরটা ভেঙে দিন........................ সব, সব ...

উত্তরঃ ভেঙ্গে দিলেই সব সমাধান নয়, গড়ার জন্য যে ভালোবাসা আর বড় মানসিকতার দরকার তা আমাদের অনেকেরই নেই।

আমিঃ ইংরেজীতে একটা কথা আছে - প্রিভেনশ্যন ইজ বেটার দেন কিওর। আপনারা বসে বসে নিরাময়ের চিন্তা করেন, প্রতিরোধ করেন না। ৫২ সময় যে মেয়েরা রাস্তায় নেমেছিল কিংবা ৭১ এর যে মেয়েরা নিজের অস্তিত্বকে লুটিয়ে দিয়েছিল। তাদের রক্ত যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে আপনি এই কথা বলতে পারেন না?

আপনাদের এই পিছুটান এবং ভীরুতাই অসৎদের হাতিয়ার হয়ে উঠে। তাহলে ঘাতক কে ? আপনিই সেই ঘাতককে সহায়তা করছেন না তো ?

আর কবে ভাববেন ? ভেবে দেখার সময় আর কবে হবে? আর কতদিন...

এবার বন্ধুর উত্তর এলো প্রায় ধমকের সুরে। খুবই ভালো লাগল সেই উত্তরঃ এখনও বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিবাদ করে, জেনে রাখবেন।

এবার একটু অন্যভাবে আমি বললামঃ তাই যেন হয়। তাই হোক। কিন্তু উদাহারণ পাইনা।

বন্ধুর উত্তরঃ আপনি যদি ৫২,৭১ দিয়ে কমপেয়ার করেন তাহলে হবে না।

আমি অবাক হলাম। একটু আগে যে মেয়ে প্রতিবাদের কথা বলল, সে এখন কি বলছে। আমি বললামঃ আলবাত করব । কেন করব না ? ঐ দিন যদি হয়, আজ হবেনা কেন ? ওরা তো একটা বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে করেছিল । আর আপনারা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারেন না । নিজের ভেতর আগে প্রতিবাদ শুরু করুন । আগে নিজেদের বদলান । দেশের মেয়েদের অবস্থান জানেন নিশ্চয়ই? এর জন্য দায়ী কে? জাফর ইকবাল স্যারকে পর্যন্ত বলতে হয়ঃ ৫২ এর কোন ছবিতে কোন মেয়েকে হিজাব বা বোরকা পড়তে দেখিনি । আজ যখন একজন ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েকে এগুলি করতে দেখি..., তখন ইকবাল স্যারের মতো মানুষও বাকরুদ্ধ হন । তাই তিনি বলেন - এদের নিয়ে কি করে স্বপ্ন দেখব ।

আর পরিবর্তন কোথায় থেকে শুরু করতে হবে তা একবার ভাবুন। ৫২ কিংবা ৭১ এর মেয়েদের মধ্যে কোন অতিমানবীয় কিংবা কোনো অলৌকিক শক্তি ছিলনা নিশ্চয়ই ...

উত্তর এলোঃ আমি তর্ক করতে চাই না। হিজাব না পরলেই দেশের পরিবর্তন হবে আপনি কিভাবে বুঝলেন? আর মেয়েরা নিজ নিজ জায়গা থেকে অনেক প্রতিবাদী। দয়া করে তথ্য যেনে রাখবেন। আজ মাফ চাচ্ছি। ধারনা করা কথার পিঠে আমার কোনো যুক্তি নেই। মাঝে মাঝে বাংলাদেশের পত্রিকা গুলো পড়বেন। দূর থেকে আপনি সবটা দেখছেন না।

এতটাই খারাপ লাগল যে বলার মতো ভাষা পাচ্ছিলাম না। আমি বললাম কি আর ও বলে কি? মেজাজটা খুব বিগরে গেল। একটু কড়া ভাবেই বললামঃ জানতাম এটাই বলবেন। একটা উদাহারণ দিয়েছিলাম মাত্র। আর প্লিজ আমাকে পত্রিকার ব্যাপারে কিছু বলবেন না । কারণটা আপনি হয়তো জানেন । ওটা গুলিয়েই আমি ভাত খাই(বলতে হচ্ছে )।

হিজাব নিয়ে আমি শুধু একটা উদাহারণ দিয়েছিলাম । 'দয়া' করব কেন? নিজেদের দয়ার পাত্র ভাবা আগে বন্ধ করেন। তর্কের জন্য নয়, নিজের জন্য বদলান । আর কে কি প্রতিবাদ করে আমার জানা আছে বুঝলেন। জড়তা আগে কাটান। ইউনিভার্সাল ভাবে ভাবতে শুরু করুন ।

আর আমার কথায় কি মনে হচ্ছে আমি নোংরা কথা বলছি । ধারণা নয় ম্যাডাম - আমার বস্তব থেকে বলা সব কথা । দেশের মধ্যে মেয়েদের অবস্থানটা আপনি ভালো করেই জানেন নিশ্চয়ই । আমার চেয়ে আরও ভালো জানার কথা । তারপরও যদি চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকেন তাহলে আমার আর কিছুই বলার নাই । আমার সাথে তর্ক করতে হবেনা । আগে নিজেদের নিয়ে ভাবুন। আমার লাভ কিংবা ক্ষতি কিছুই নেই। জীবনটা আপনাদের ।

এরপরের উত্তর শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সত্যি জাফর স্যার, আপনি কি করে এদের নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন ? উত্তরটা এই রকমঃ হ্যালো প্রব্লেম কী আপনার। এতো আগ্রাসী কেন? ভালোতো আপনি সব জানেন। দিয়ে যান না এসে পরিবর্তন করে। বড় বড় কথা খুব বলা যায়। আমার বদলাতে হলে বদলাব। আপনি একটু বেশি অবাঞ্ছিত কথা বলেন। কীসের মধ্যে কী নিয়ে এসেছেন। উফ। আমার কোথায় জড়তা আপনি কী জানেন নাকি ???

আর বলার মতো আমার কাছে কোন কথাই অবশিষ্ট ছিলনা। প্রথমে বলছিল নিজেদের ‘মানসিকতা’র অভাবের কথা, শেষে এসে আমাকেই ভিলেন বানিয়ে দিল। তাই বিদায় নিলাম। জানালাম একটা ধন্যবাদ। ইচ্ছে হচ্ছিল এই মেয়েটিকে দশ তলার ফ্ল্যাট থেকে টেনে নিয়ে দেখাই, হোয়াট ইজ রিয়েলিটি। কিন্তু আমি অসহায়, কি করব। তাই আজ বলব সেই মেয়েটির কথা। যে এক সপ্তাহ আগে ফাঁসির দড়িতে নিশ্চিত করেছে নিজের ভবিষ্যৎ। কি বলব। কাকেই বলব। এই দেশ গত চল্লিশ বছর ধরে আমার নয়। আমার পূর্বপুরুষরা এখান থেকে বিতারিত। তবুও এমন কিছু দেখলে মনটা প্রচণ্ড বিচলিত হয়, বারবার......

মেয়েটির ভালো নাম আমি জানিনা। ডাক নাম বোধ হয় মুন্নি। মুন্নির জন্ম বাংলাদেশের এক অখ্যাত গ্রামে। বাবা হাঁড়ি-পাতিল বানায়। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মুন্নি। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সাথে লড়াই করাটা ওর সহজাত হয়ে গেছিল। মনের মধ্যে যদি অদম্য বিশ্বাস থাকে আর মনে যদি পরিশ্রম করার মতো মানসিকতা থাকে তাহলে সব কিছু একদিন সহজ হয়ে আসে। মুন্নির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং মেহনতের দ্বারা ও নিজেকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছিল। স্কুলে পড়ার সময় থেকে শুরু করে টিউশনের টাকায় নিজের পড়ার খরচ চালানো শুরু এবং পরিপূর্ণতা পায় ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রী নিয়ে। কিন্তু মুন্নির জীবনে সবটা ভালো হয়নি। অন্য পাঁচটা মানুষের মত ওরও মন আছে। সেই মন চঞ্চল হয়, ভালোবাসে। সে ভালোবেসে ফেলেছিল একটি ছেলেকে। ছেলেটি মুসলিম আর মুন্নি হিন্দু। কিন্তু সিনেমার প্রাণবন্ত এক্সপ্রেশনের মতোই ওদের ভালোবাসা সব স্রোত ভেঙে দেয়। ওরা বিয়ে করে ফেলে। নিয়তির যা বিধান তাই হয়েছে। মুন্নির পরিবার এই বিয়ে কখনো মেনে নেয়নি। বাবা মুন্নির শ্রাদ্ধ করল হিন্দু মতে, মানে মুন্নি ওদের কাছে মৃত। যে মেয়ে তার চোখের সামনে এত বড় হল সেই মেয়েকেই এক মুহূর্তে মৃত বলে ঘোষণা করল তার বাপ। জাত গেছে মেয়ের। কোন দিক দিয়ে গেছে তা অবশ্য উনি বলেন নি।

তারপর ওরা সুখে সংসার করতে লাগল। এখানে এসে হয়তো কাহিনীটা থেমে যেতে পারত। আর আমার এই ব্লগও লিখতে হতো না। কিন্তু তা হয়নি। বিয়ের এক বছর পর ছেলেটি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড চলে গেলো। তারপর আর দুই বছর মুন্নি তার কোন খবর পায়নি। এভাবেও মানুষ প্রতারক হয়। ছেলের পরিবার থেকে শুরু হয় মুন্নির উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। তাকে বারবার শুনতে হয় – সে একটা পিশাচ, অসভ্য মেয়ে। কারণ একটাই সে একজন হিন্দু মেয়ে। তার অপরাধ সে বিয়ে করেছে ভালোবাসা দিয়ে, মন দিয়ে ‘ধর্ম’ দিয়ে নয়। সে তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, কিন্তু সে কোন উত্তর দেয়না। এদিকে অত্যাচারের মাত্রা বাড়তেই থাকে। মুন্নি তবুও আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়, কিন্তু পারেনা। সব অপমান, গঞ্জনা মাথায় নিয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ দুই বছরের মাথায় ও শ্বশুর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে শূন্য হাতে।

এখানে এসেও কাহিনীটি শেষ হয়ে যেতে পারত। কেননা মেয়েটির উপযুক্ত পড়াশুনা আছে, মানসিকতা আছে। সে একা লড়াই করেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। শ্বশুর বাড়ি ছাড়ার পর ও মেয়েদের একটি নিবাসে আশ্রয় নেয়। তারপর কাজের সন্ধান করতে শুরু করে। সে সংকল্প নেয় যে করেই হোক তাকে বাঁচতেই হবে। সংসারে মায়া মমতা বলে কিছু কথা হয়তো এখনো আছে। তাই ওর মা ওর সাথে দেখা করতে শুরু করে বাবার অগোচরে। মা নাকি তার সন্তানকে কখনো ভুলতে পারেনা। মা নিয়মিত তার সাথে দেখা করত। ততদিনে মুন্নি নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছে। চাকরির জন্য ট্রাই করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু হচ্ছেনা। এদিকে ওর সাথে দেখা করতে এসে ওর মা কি করছে? ওকে মানসিক শান্তি দেওয়ার বদলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আরও চরম অশান্তির বীজ। বারবার উনি তাকে এটা বলে যান যে ও একটা অধার্মিকের মতো কাজ করেছে। ওর বেঁচে থাকার ফলে সমাজে ওরা এখনো মুখ দেখাতে পারছেনা। ওর জন্য ওদের চরম ক্ষতি হয়েছে। মুন্নি শুনে কোন উত্তর দেয়না, নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনা। মা আবার আসে, আবার রোজ রোজ একই কথা শুনিয়ে যায়, সাথে বুক চাপরে কাঁদে। মুন্নি তবুও নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেনা। অনেক চাকরির সন্ধান করেও সে একটা চাকরি জুটাতে পারেনা। জানিনা গত সাত দিন আগে এক রাতে ও যখন পাখার সাথে ওর শাড়িটা জড়িয়ে লটকে যাচ্ছিল, তখন ওর মনে কি জিনিষ কাজ করছিল। কি ভেবেছিল সে তখন। কিন্তু ও মরে গেলো, নিজেকে মেরে ফেলতে ওর বোধ হয় একটুও কষ্ট হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। কেননা এটি আত্মহত্যা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা।

কে দায়ী? কারা দায়ী? এই প্রশ্ন আমি তুলবো না। এটা নিয়ে জল ঘোলা করে আবজাব কিংবা গুরুগম্ভীর আলোচনার ইচ্ছেও আমার নাই। আমার মনে হয়েছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। যে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হলেন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। আর প্রধান হোতা হলেন বাংলাদেশের পর্দানশীন মেয়েরা, যারা এখনও প্রতিবাদ করতে শুরু করলনা। আমাকে প্রশ্ন করা হতে পারে আমি এই দেশের সামাজিক বুনিয়াদ কতটা জানি। উত্তর আমার সম্পূর্ণ বই এবং পত্রিকা এবং অবশ্যই আমার পরিচিত কিছু মানুষের সাথে কথা বলার মধ্যেই সীমিত।

কিন্তু আমি জানি এটা বলা সম্পূর্ণই বৃথা। কেননা টোয়েণ্টি ফাস্ট সেঞ্চুয়ারির এক দশক পেরিয়ে যদি আমরা নিজেদের এই বোধটুকুর মধ্যে আনতে না পারি যে ধর্ম যদি হয় তাহলে তা হওয়া উচিৎ ধারণ করার জন্য, নাকি চাপিয়ে উন্মত্ত ধর্মাচার করার জন্য – তাহলে আমার আর কিছুই বলার নেই। প্লিজ সমাজকে, সভ্যতাকে কেউ দোষারোপ করবেন না। সমাজ কিংবা সভ্যতার দোহাই বহুত হয়েছে। আর সমাজ কিংবা সভ্যতা জল-হাওয়া আর মাটি দিয়ে তৈরি হয়না। উপরের আমার সাথে কথা বলা মেয়েটি কিন্তু উচ্চ শিক্ষিতা, তার কথা এবং মানসিকতাও আমি দেখলাম। হয়তো সবাইকে এক কাঠগড়ায় দাঁর করানোটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্নটা সকলের কাছে। এই মৃত্যুর জন্য নিশ্চয়ই কোন ধর্মীয় মৌলবাদী সংস্থা দায়ী নয়। কিন্তু এই মৃত্যুর জন্য দায়ী মৌলবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ। আর এখানে কারা মৌলবাদী? মৌলবাদের উৎসটা কোথায়? পরিবর্তন কার দরকার, কোথায় দরকার? মুন্নির মতো এমন হাজার মুন্নি কিংবা অপর পৃষ্ঠায় সালমা খাতুন’রা রোজ মরছে। সেই খবর কেউ রাখেনা। আমরা রাখার প্রয়োজনও বোধ করিনা। কখনো কখনো একটু সহানুভূতি প্রকাশ করি ব্যস। সিনেমার ক্লাইম্যাক্সের মতো মুন্নির জীবনের ক্লাইম্যাক্সটায় হিরো কিংবা কোন ফেরেস্তা এসে ওকে উদ্ধার করেনি। কিন্তু পরেরদিন দুপুরে একটি কাগজ এসেছিল। কাগজটি বাংলাদেশ সরকারের কোন এক দপ্তর থেকে এসেছিল। কাগজটিতে লেখা ছিল, মুন্নি চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছে।

================================

আমার শহর

জানুয়ারি । ১০ । ২০১২


মন্তব্য

বন্দনা এর ছবি

বেশ গুরুত্তপূর্ণ একটা টপিক, তাই আর ও একটু বিশ্লেষনধর্মী এবং গোছানো লিখা হলে ভালো হোত তাপসদা। বেশ আবেগী হওয়াতে একটু যেন এলোমেলো লাগলো এমনটা মনে হোল।

তাপস শর্মা এর ছবি

আমি ঘটনাটা জানতাম তাই তুলে দিয়ে গেলাম। জানিনা কতটা গুছাতে পেরেছি। আর কিই বা বিশ্লেষণ করব ভেবে পাচ্ছিনা। বাস্তবটা আমি আপনি সবাই জানি। কিন্তু চোখ বুঝে থেকে দায় সারা হওয়াটাই যেন সবাই ভালোবাসি। আমি শুরু করলাম , আপনারা এগিয়ে নিয়ে যান, কিছু বলার থাকলে যুক্ত করুন এর সাথে ...

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তাপস শর্মা এর ছবি
শশী এর ছবি

ধুর !! ফ্যাংকলি, আপনার লেখা সচলায়তন এর মানের সাথে যায় না । ঠিকমত না লিখতে পারলে না লেখাই ভাল। অন্তত আমাদের সময় অপচয় হয় না ।

তাপস শর্মা এর ছবি

কোলাকুলি ..... ভাই/আপু শশী - আপনিই ধরতে পেরেছেন, সত্যিই পেরেছেন। কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেই তা ভেবে পাচ্ছিনা।
তয় জানেন যখন তখন এই না "মানের" যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষের ব্লগ এ কেন যে আসেন এটাই বুঝিনা। যাই হোক এত্ত কষ্ট করে এসেছেন তো চা মুড়ি খাইয়া যাইয়েন। এন্ড হোপ করছি আপনি... হে হে কোলাকুলি

চরম উদাস এর ছবি

অ্যাঁ
এটা কেন বল্লেন? তাপসদার বেশ কিছু চমৎকার লেখা তো দেখেছি এখানে।

ছায়াবীথি  এর ছবি

অ্যাঁ

প্রতিচ্ছবি (শূন্য) এর ছবি

লেখাটায় বিশ্লেষণের চেয়ে আবেগ বেশী প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে হয়েছে।
মেয়েদের প্রতিবাদের বিষয়ে যে তাগিদ দিয়েছেন সেটার সাথে পুরোপুরি একমত, কিন্তু আপনি প্রতিবাদের সাথে পোশাকের বিষয় যেভাবে নিয়ে এসেছেন সেইটা মানতে পারছি না।

যে হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত হলেন ১৬ কোটি বাংলাদেশী। আর এর হোতা হলেন বাংলাদেশের পর্দানশীল মেয়েরা

আরও কয়েকবার আপনি হিজাব-বোরখা এর বিষয় নিয়ে এসেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি হিজাবের পক্ষে - বিপক্ষে কোনটাতেই নেই। আমার কাছে মনে হয় এটা এক এক জনের ব্যক্তিগত বিষয়। যে কেউ স্বেচ্ছায় হিজাব পরতে বা না পরতে পারে। হিজাব পরার সাথে প্রতিবাদের সম্পর্ক নেই।

আপনার সেই বন্ধুর জন্যে দোয়া রইল।
প্রার্থনা করব যেন

দেয়ালটা

আমরা সবাই মিলে ভেঙ্গে ফেলতে পারি এবং এ ধরনের খবর যেন আর না পড়তে হয়।

ভালো থাকবেন।

তাপস শর্মা এর ছবি

পোশাকের ব্যাপারটা স্রেফ একটা উদাহারণ হিসেবে এসেছে।

" পর্দানশীল " ব্যাপারটা শুধু আমি হিজাব কিংবা বোরকায় সীমাবদ্ধ রাখিনি, আসলে এই শব্দটার দ্বারা মেয়েদের জড়তাকেও বোঝাতে চেয়েছি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। দেয়ালটা ভাংতে পারলেই বোধ হয় ভালো হয় ।

শামীমা রিমা এর ছবি

@প্রতিচ্ছবি ,এ ধরনের লেখায় আবেগের প্রাধান্য থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয় । ব্যক্তিগত ভাবে আমি তা মনে করি।

শামীমা রিমা এর ছবি

এই বিষয়টা নিয়ে লিখার জন্য ধন্যবাদ তাপস দা ।

মানুষের জন্যই তো ধর্ম আর সেই ধর্মের দোহাই দিয়ে আমরা মানুষেরা এসব কি করছি । ভাবলে কষ্ট লাগে । সবকিছুর উর্ধ্বে মানবিকতা এই সহজ সত্যিটা আমরা মানতে নারাজ ।
মুখে আমরা বলি বদলে দাও বদলে যাও আর কাজে কর্মে প্রমাণ করি এগুলো সবই ফাঁকা বুলি ।

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ রিমা। আসলে পরিবর্তনটা নিজের ভেতর আনা দরকার। এই মূল কথাটাই আমি বলতে চেয়েছি।

ফাহিম হাসান এর ছবি

বেশ লেখার জোয়ারে আছেন দেখি,
চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ।

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

ধন্যবাদ তাপসদা, এত দূরে বসেও আমাদের কষ্টগুলো শেয়ার করার জন্য। আসলে আপনি যে ঘটনা এখানে বললেন সেটা খুবই "অহরহ" একটা ঘটনা আমাদের দেশে। আর এখানে আত্মহত্যার দায়ভার ৭০% সেই মেয়ের নিজের আর ৫% তার মা, ১০% বর ও ১৫% সমাজের।
কারণ আমাদের সামাজিক ব্যাবস্থায় দুটি ভিন্ন ধর্মের বিয়ে মেনে নেয়া হয় না, এটা একদিনে যেমন তৈরী হয়নি-তেমন একদিনে সারবেও না। এটা জেনেবুঝেই সে বিয়েটা যেহেতু করেছিল তার মানসিক শক্তি "আসীম" এর কাছাকাছি হওয়া উচিত ছিল। আমরা স্বাভাবিক ভাবেই শ্বশুর বাড়ীর আচরণ ঋনাত্বক হবে সেটা ধরেই নিই(চারপাশ দেখে, এক্সেপসন যে নেই তা বলছি না), আর তার কি ভাবা উচিত ছিল বুঝতেই পারছেন !!!!
ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রতারনা আসহনীয় কষ্টদায়ক, সেটা সে কাটিয়েও উঠেছিল। আর আমাদের চারপাশ(সমাজ !)- তারা তো আছেই আমাদের পায়ে পায়ে বিপ্রতীপ আচরণ করার জন্য!!! মা-বাবার আজীবনের লালন করা সেই সমাজ ব্যাবস্থা/রীতিনীতি, সন্তানের প্রতি ভালবাসা ছাপিয়ে উঠতে পারে না।
মেয়েটার ভাগ্য ভাল ছিল যে সে একটা থাকার/ আশ্রয়ের ব্যাবস্থা করতে পেরেছিল, আরেকটু ধৈর্যশীল হলেই সে এই যুদ্ধে জিতে যেত।

তাপস শর্মা এর ছবি

আসলে বুঝতেই পারছেন একটা মানুষ কোন পরিস্থিতিতে গেলে আত্মহত্যা করার মতো মানসিক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায়। প্রচন্ড মানসিক দৃরতা নিয়েই মেয়েটি ছেলেবেলা থেকেই লড়াই এর মধ্যে দিয়ে নিজেকে গড়েছিল। শেষে নিজের কাছে নিজেই হেরে যায়। আসলে আমরা যতই মানসিক অবস্থানের কথা বলিনা কেন, আসলে যে সহ্য করে সেই বলতে পারে......

আর একটা মানুষ কাঁহাতক বরদাস্ত করতে পারে বলুন। আর আমরা দূরে থেকে একটা মানুষের মানসিক বিবর্তনটা অনুভবই করতে পারি, কিন্তু যার সাথে ঘটে সে বুঝতে পারে......

আর বলুনতো পরিবর্তন কার দরকার? সমাজের নাকি আমাদের নিজের। সিস্টেম কাকে দিয়ে তৈরী হয়। আর এই অবস্থানটা তৈরী করে কারা?

কবে পরিবর্তন হবে? কবে মানুষ মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে দেখবে?

ছায়াবীথি  এর ছবি

আসলে যে সহ্য করে সেই বলতে পারে......

.......১০০% সত্যি একটা কথা।

লাবণ্যাপ্রভা এর ছবি

দুনিয়াতে সত্যি কিন্তু আপন মানুষ বলে কিছু নাই... তাই যে যুদ্ধে নামে তার কিন্তু এটা খুব ভাল করে জানা হয়েই যায়। যার সাথে ঘটে সে সত্যি অন্যদের চেয়ে ভাল জানে, তাই আমি তাকে বলি - এই দুনিয়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এগিয়ে যাও কারণ "জীবন কোন কিছুর জন্যই যথেষ্ট না"।
আর পরিবর্তন আমরা করব, তার আগে সেই অবস্থানে আমাদের পৌঁছাতে হবে - যেখানে পৌঁছালে/ যে উচ্চতায় পৌঁছালে আমাদের কথা সবাই শুনতে পাবে।

তাপস শর্মা এর ছবি

যার সাথে ঘটে সে সত্যি অন্যদের চেয়ে ভাল জানে, তাই আমি তাকে বলি - এই দুনিয়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এগিয়ে যাও কারণ "জীবন কোন কিছুর জন্যই যথেষ্ট না"।

এটাই যেন হয়। এটাই শুরু করুন। কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হবে...

সমীরণ রায়, কোলকাতা এর ছবি

তাপস, তোমার ব্যতিক্রমী ভাবনা পাঠকে ভাবতে শেখায়, তোমার জোরালো যুক্তি ও বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর পাঠকের চিন্তন ও মননে সঠিক দিশা ও প্রয়োজনীয় শক্তির সঞ্চার করে।।
পুরুষ-শাষিত সমাজের সুবিধাবাদি দেহসর্বস্ব সঙ্কীর্ণ চিন্তাধারাকে যতদিন না সমবেত মহিলার বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে, এই নিপীড়ন থেকে তাদের রেহাই নেই।। একমাত্র মহিলারাই পারেন, একত্রিত হয়ে, সংযত ও দৃঢ় সঙ্কল্পিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের এই শৃঙ্খল মুক্তির উপায় নির্ধারন করতে।। বলাবাহুল্য, এ কিন্তু কোনো এককালীন প্রচেষ্টার ফল নয়।। এই বন্ধন মুক্তির জন্য প্রয়োজন অবিরত, নিরলস, আন্তরিক যুগ-যুগান্তর-ব্যাপী সাধনা।।

তাপস শর্মা এর ছবি

(Y চলুক ... অনেক ধন্যবাদ সমীরণ দা।

আমি শিপলু এর ছবি

ধন্যবাদ লেখার জন্য। চলুক । তবে ব্যক্তিগত আবেগের প্রাধান্য থাকয় ধার কমে গেছে। প্রতিবাদ জাড়ী থাকুক।

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ। প্রতিবাদ আমার একার নয়, এটা আপনাদেরও...

ফারাবী এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে ভাইয়া। আর আবেগের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই, আমার কাছে মনে হয় ওটা আপনার লেখার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। তত্ত্বীয় আলোচনায় যেতে চাচ্ছেন না, সমাজ-সভ্যতার নামেও কিছু শুনতে চাইছেন না- বেশি কিছু বলব না, শুধু একটা কথা বলি- আমার বিশ্বাস, নারীর অধঃস্তনতার উপরই এই গোটা সমাজ (সাধারণ অর্থে, বাঙালী সমাজ শুধু নয়) দাঁড়িয়ে আছে। নারীর মুক্তি তাই বলতে সহজ হলেও ব্যাপারটা অনেক গভীরের বলে মনে হয় আমার কাছে। যদি নিজে কখনো গুছিয়ে উঠতে পারি এ নিয়ে বিষদ বলার ইচ্ছে রাখি।

সবসময় ভাল থাকুন আর এরকম চিন্তাজাগানিয়া লেখায় আমাদের মনন উদ্দীপিত রাখুন এই কামনা করি।

----------
ফারাবী

তাপস শর্মা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

লিখুন, সবার আগে আপনাদের এগিয়ে আসা দরকার...

ছায়াবীথি  এর ছবি

ভাল লাগলো ।

মানুষের একটু সুন্দর করে কথা বলাও যে মাঝে মাঝে অনেক বড় একটা বিষয় হয়ে উঠতে পারে আবারও তার প্রমান হল। আমার মনে হয় মুন্নি তার মানসিক শক্তি দিয়ে অনেক দূর পর্যন্তই যেতে পেরেছিল। এরপর তার একটু পিছন থেকে ঠেলে দেয়ার খুব সামান্য শক্তির দরকার ছিল যা তাকে নতুন করে যুদ্ধময় একটা দিন শুরু করতে সাহায্য করতো।যা তার মা করতে পারতো আমার মনে হয়। কিন্তু এই ছোট শক্তিটার বিপরীত অপশক্তিটাই সে প্রতিনিয়ত পেয়েছে তার মায়ের কাছে নেগেটিভ কথা শুনে। আমার নিজের একান্ত একটা বড় প্রশ্ন হল এই যে আমরা মেয়েরা এই কঠিন পৃথিবীতে ছোটবেলা থেকে ঘরের চারদেয়ালের মাঝে যে সকল পরিচিত মুখ দেখে বা যাদের ভালোবাসায় বড় হয়ে উঠি,জীবনের কঠিনতম সময়গুলোতে কেন তাদের কাছ থেকেই সব চেয়ে বড় আঘাতটা পাই ? বিয়ের আগে শুনতে হয় "বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ে পর হয়ে যাবে " আবার বিয়ের পর পরের বাড়িতে গিয়ে শুনতে হয় "পরের মেয়ে কি আর আপন হয়" এই টাইপের কথাবার্তা।আর আমরা মেয়েদের ভূমিকা যেন সব সময় " আপন করিতে কাদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর" ...... মাঝে মাঝে মনে হয় আপন মানুষ বলে কিছু নাই...সবই ওই সমাজ...হায় রে সমাজ!!!

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ ছায়াবীথি... পরিবর্তন নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে... সমাজ কে দোষ দিয়ে লাভ নাই। অবশ্যই সমাজ একটা ফ্যাক্টর। আর সমাজ আমাদের ঘাড়ে চাপে কেননা আমরা প্রতিবাদী হইনা। মাথা নত করে সব মেনে নেই, চুপ থাকি ... সেই মৌনতা ভাঙতেই হবে...

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

তাপস শর্মা এর ছবি

হুম। অনেক দিন পর তোমাকে দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে...

ঐ দিকের অবস্থা এখন কেমন?

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

তাই বুঝি দাদা, আমাকেও মনে রাখে কেউ কেউ.............

ঈশান আশাকরি সামনের যেই টার্ম ফাইনাল রয়েছে তাতে অংশ নিতে পারবে কোন মতে।


_____________________
Give Her Freedom!

তাপস শর্মা এর ছবি

মনে রাখবো না মানে......... হাসি

ঈশান এর জন্য অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইল। ওকে বলো যে - ও সত্যিই একজন ব্রেভ বয়... খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে, সচলে এসে আমাদের জন্য একটা পোস্ট দিতে, গপ্পো করা যাবে...

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

জেনে ভালো লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।