এখন আমার সময় হল, যখন সবাই চলে গেলো.........
আজকাল আমি মুখবই এর বুকে সময় মতো আসতে পারিনা। কারণটা হল আমার কর্মক্ষেত্র। আমার সাধারণ অকেজো কাজে হালকা পাতলা পদোন্নতি হওয়াতে আমার তেরোটা বেজেছে। বলতে গেলে দৌড়ের উপর আছি। কথা বলতে পারিনা তোমার সাথেও। কখনো কখনো আমার আকাঙ্খা ছাপিয়ে যেতে চায় সমস্ত সীমাহীন প্রান্তর। কিন্তু মন একটা জায়গায় এসে থেমে যায় বারবার।
আমার বন্ধুরা, যারা আমার পরিবার হয়ে গেছে তাদের থেকে আমি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। ভীষণ খারাপ লাগছে। কি জানি আমার মনটা আজ বড় চঞ্চল। একটু পাগলামি করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু পাশে কেউ নেই। আমার আবিজাবি চেতনা আরও পাগল পাগল করছে আমায়। তাই এখন রাত্রি ২টার উপর, আমি অঞ্জন দত্তের গান চালিয়ে বসে আছি। বাইরে অঝোর শ্রাবণ। তিলোত্তমা এই শহর আজ যেন কৃষ্ণকলির গান গাইছে। মন পাখি হাতে হাত রেখে পালিয়ে যেতে চায় বারেবারে। আব্বু বকবক করছে। করুক। আজ রাত্রিটা অন্তত আমি তোমার খেয়ালে কাটিয়ে দিতে চাই। তোমাকে বারবার মিথ্যে কথা বলি। বারবার ভালোবাসার সবুজ বনে তুমি বন্যা হয়ে নেমে আসো। আজ এই বৃষ্টির স্রোতে তোমাকে একটু কাছে পেতে চাই খেয়ালে খেয়ালে। এক অভিমানী চপল বালিকা অমলকান্তির প্রেমে পরেছিল আকাশে লেপ্টে থাকা রোদ দেখে। তার অমলকান্তি হতে ইচ্ছে করেছিল। সেই অমলকান্তি... যে এক সময় রদ্দুর হতে চেয়েছিল। সময়ের সাধনায় বালিকাটি অভিমানী তরুনী। এখনও সে রদ্দুর ভালোবাসে ভালোবাসে অমলকান্তিকে। আমি রদ্দুর ভালোবাসিনা, বৃষ্টি ভালোবাসি। তাই অমলকান্তির প্রেমে না পরে তোমার প্রেমে পরে গেলাম। তুমি বৃষ্টি ভালোবাস। আর সেই বৃষ্টি আমারও প্রাণ। আজ বড্ড কাঁদতে ইচ্ছে করছে। অঞ্জন এখনো গাইছেন “আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি এঁকেছি...।” আজ সারারাত গাইবেন উনি আমার হয়ে।
জানো একসময় আমি খুব বেশী বাংলা গান শুনতাম না। কি গাধা ছিলাম আমি, ইশ! তোমাকে বলার পর তুমি হাসছিলে। বিশ্বাস কর লালন শুনার পর আমার মনে হয়েছিল এরপর আর কিছু না শুনলেও চলবে। আমার বাঙ্গলায় যে এত হৃদয় চোরা কলতান লুকিয়ে আছে তা আমার সত্যিই জানা ছিলনা। তুমি আমায় প্রাণ এনে দিয়েছিলে। এখন আমিও বাঙলায় গান গাই। কার জন্য গাই আমি জানিনা। আমিও আজকাল বেশ 'জানিনা' বলতে শিখে গেছি। আমার কে আছে জানিনা। তবে অভিমান থেকে নয়, হিসেব থেকেও নয়, বলছি আমি নিজে..... কেন জানি বারবার নিজেকে খুব খালি খালি লাগে। নিজের উপর একটা বিশ্বাসের অভাব। তোমার অনেক কথাতেই তাই সারা দেই না। কোন কোন সময় পাশ কাটিয়ে চলে যাই। কিন্তু বিশ্বাস কর তোমায় আমি ভীষণ ভালোবাসি। তোমার সাথে অভিমান করি, কারণ তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে ঝগড়া করি, কারণ তোমাকে ভালোবাসি।তুমি জানতে চাও ভালোবাসি কিনা, আমি 'না' বলি। কারণ তোমাকে ভালোবাসি। কমপক্ষে পাঁচশ বছর তোমার সাথে অভিমান করে, ঝগড়া করে কাটাতে চাই!! এর কারণ কী জানো। তোমাকে ভালোবাসি...
প্রতিটি বৃষ্টির দিনই আমার কাছে অন্যরকম। সময়ের পালাবদলে বদলেছে জীবনের পছন্দ অপছন্দের রূপ। বদলায়নি বৃষ্টির প্রতি আমার পক্ষপাত। জীবনের শ্রেষ্ঠ বৃষ্টিগুলো চন্দ্রদ্বীপে ফেলে এসেছি। কংক্রিটের শহরে বৃষ্টির সত্যিকারের আবেগ হয়ত দেখা যায় না। কিন্তু কিছুটা হলেও অনুভব করা যায়। একসময় বৃষ্টি মানেই ছিল টিনের চালে ঝমঝম শব্দ, সবুজ গাছপালা, আর শাপলা বিলাস। সময়ে অসময়ে বৃষ্টির নানা স্মৃতি মনে আসে।
একবার খুব বন্যা হল, সমস্ত পথঘাট জলে ডুবে গেছে। ছোট কাকা নৌকায় করে স্কুলে দিয়ে আসতেন, নিয়ে আসতেন। কোন এক কারনে সেদিন স্কুলে আনতে গেলেন না। কী করে বাড়ি ফিরব ভাবছি, এমন সময় ক্লাশের সবচেয়ে লাজুক ছেলেটির বাড়ি থেকে নৌকা এসেছে। দেখলাম সে চলেও গেছে। আমি অন্য কয়েকজনের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষন পরেই আবার সে ফিরে আসলো। আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
- আমার সাথে নৌকায় যাবি? বাড়ির সামনে নামিয়ে দেবো।
এত কষ্ট করে কাদায় মাখামাখি হয়ে নিতে এসেছে দেখে আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম।
সে কিছু না বলেই ফিরে যাচ্ছিল, আমি উঁচু স্বরে বললাম
- আমাকে না নিয়েই ফিরে যাচ্ছি। তবে এত কষ্ট করে আবার নিতে আসলি কেন?
- যাবি আমার সাথে?
-যাব।
তারপর নৌকায় পা ছড়িয়ে বসে কমপক্ষে তিন ডজন শাপলা তুলে বাড়ি ফিরেছি। সেই সামান্য স্মৃতি। কিন্তু প্রায়ই মনে পরে। আমার বৃষ্টি ভেজার এই কথাগুলি কতবার যে তোমাকে বলেছি। আর তুমি হাপুস নয়নে তা গিলেছ। আর একটা বিষয় খুব মনে পরে। সেটা মনে পড়লেই আমি একা একা হাসি। গত বছর ছুটির সময় গ্রামে গিয়ে তার সাথে দেখা হয়েছিল। আমার বর্ষা সফরের সঙ্গী। এখন ক্ষেতে ধান ফলায়। বিয়ে করেছে, ঘরে রাঙা টুকটুকে বউ। আমাকে দেখে মুখটা নামিয়ে হেসেছিল। সেই লাজুক ছেলেটি এখনও খুব লাজুক। আর আমি আগের মতই মুখরা।
আজ মনটা ভালো নেই। সত্যিই তোমাকে ভীষণ মিস করছি। সেই যে গত পরশু তোমার সাথে শেষ কথা হল, সেগুলি এখনো গেঁথে আছে মনে। আমি শুধু শুনতে পাই পদ্মার ঢেউ আর মনফকিরার হৃদয়সংগম। কেমন জানি একটা ভয় হয়। প্রিয় কবির দুটো লাইন মাথায় আকছার দাপাদাপি করে – “হঠাত কোন একদিন তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারো, যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া কোনো উপন্যাস।”
তোমার সাথে কথা বলার সময় আমি বারবার হেরে যাই। তোমার কাছে হারতে আমার ভালো লাগে। একটা বিদ্রোহ আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আর জানতে চায় কথামানবীর সুরে। বলতো আমার নামের পাশে বৃন্তকুসুম আর পরাগাছার অবনত চিৎকার কেন শোনা যায়। আমি চুপ করে থাকি আর তোমার খেয়ালে হারিয়ে যাই... আয় বৃষ্টি ঝেঁপে... বৃষ্টির এই ক্যানভাস আমার তুলি আর তোমার রঙ এর মাঝে আঁকিবুঁকি খেলে...
- এই শোন।
- হুম।
- চল না একটু বাঙাল বলি।
- কি বলব।
- কিছু একটা।
- ঠিক মনে পড়ছে না।
- থাক কষ্ট করতে লাগবে না তোমার।
- আচ্ছা। হি হি হি হি হি হি।
- কি।
- না। কিছু না।
- তুমি খুব বৃষ্টি ভালোবাস তাইনা?
- ওমমম... ভীষণ।
- তাই।
- হুম।
- সফরে যাইবা।
- কই।
- আমার সাথে।
- জানিনা।
- কি?
- জানিনা।
- ক্যান?
- হি হি হি... লজ্জা করে।
- কারে?
- তোমারে।
- ক্যান?
- জানিনা।
- তারপর।
- কি তারপর।
- আরে তারপর।
- জানি না।
- হুম, বুঝলাম।
- কি বুঝলা?
- কিছুনা।
এরপর দুদণ্ড নিরব কাল। তুমিও চুপচাপ, আমিও চুপচাপ...
- তুমি আছ ।
- হ, আছি।
- যাইবা না।
- কই?
- সফরে।
- একলা যাইতে ভাল্লাগেনা।
- তুমি একলা যাইবা ক্যান।
- আরেকজন পামু কই ?
- ক্যান। আমারে নিবানা
- পাগল
- জানি
- হুম
- তুমিও...............
আজ এই গভীর রাতে শুধু বৃষ্টির মন মাতানো খেলায় তুমি বারবার দোলা দিয়ে যাচ্ছ। তোমার সব অভিমানই যত্ন করে রাখি। ভুলে যাই তোমার সব ভুলগুলি। ভুলে যাই তোমার অযৌক্তিক অভিযোগ। জানতে চেয়ো না কেনো। সব কিছুর কারণ বলতে ভালোলাগে না। তুমি শুধু দেখো কত ভালোবেসে তোমার সমস্ত অভিমান, ভুল, অভিযোগ আগলে রাখি। প্লিজ কখনো জানতে চেয়ো না। অঞ্জন এখনো গেয়েই যাচ্ছে...
=========================================
আমার শহর
ফেব্রুয়ারি। ০১। ২০১২
মন্তব্য
বাহ্ কী মিষ্টি
পাগল দুইটার জন্য 'বৃষ্টি শেষে রূপালী আকাশ' -
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
। থ্যাঙ্কু ম্যাডামজী। গুড় দেইনিতো মিষ্টি লাগলো কেনু
ডাকঘর | ছবিঘর
ভাল লাগলো
আপনাকে ধন্যবাদ মাসুম।
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
ভালোবাসা, গান আর একাকীত্বের জলে ভিজে গেলাম বহুদিন পর ।
লেখার ধরণটা খুব ভালো লাগলো ।
ধন্যবাদ প্রদীপ্ত।
ডাকঘর | ছবিঘর
ঊচ্ছলার মত আমারও বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, খুবই সুইট!
আপনাকে ধন্যবাদ শাব্দিক। অনেকদিন পর দেখলাম। । আর সুইট কি কইরা লাগলো, চিনি কিংবা গুড় কোনটাইতো দিলাম না
ডাকঘর | ছবিঘর
ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ দাদা।
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন