কি দিয়ে পরিচয়টা শুরু করব। গায়ক, গীতিকার, নাকি অভিনেতা, নাকি বেতার সাংবাদিক, নাকি গদ্যকার, নাকি একজন সাংসদ? মনে হয় প্রথম দুটি বাদ দিয়ে তিনি নিজেকে আর কিছুই বলতে পছন্দ করেন না। আর এই দুটি মিলে নিজেকে তিনি গানের কারিগর বলতে পছন্দ করেন কিংবা বলেন-‘আমি গান বাজনার লোক’ কিংবা ‘নাগরিক কবিয়াল’ কিংবা ‘সঙ্গীতের গোলাম’ যিনি শুধু ‘গানের ধর্ম’ পালন করেন।
আর সাংসদ চরিত্রের কথা সেই গানেই বলতে শুনি-‘মিলাতে পারিনা রাজনীতি নেই ধাঁতে, পলিটিক্স করা আমার কম্ম নয়’। তিনি সব সময় ‘বিরুদ্ধ স্রোতেই’ সবসময় ‘সময়ের কথা’ বলে এসেছেন। বলেছেন মুক্তির কথা। পাল্টাতে চান ‘জানলার কাছের হাওয়া’। কোন কফৈয়তের পরোয়া করেননি। কারণ তিনি বলেন- ‘করবে না গান কোন অন্যায় সন্ধি। তাঁর ‘গীটার মুক্তির কথা বলে...’ আর ‘হৃদয় লড়াই স্বাধীনতা স্বাধীনতা।’
১৯৪৯ সালের ১৬ মার্চ ওড়িশার কটক শহরে জন্ম। আজ ২০১২ এর ১৬ মার্চ, চৌষট্টি বছরে পা দিলেন গানওলা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার্স। কোলকাতা আকাশবাণীতে চাকরি, তারপর ব্যাঙ্কে কেরানির চাকরি। ১৯৭৫ সালে চলে যান তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে। সেই দেশে বহুদিন তার বেতার-সাংবাদিক জীবন। বেতার-সাংবাদিক হিসেবে চাকরি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮৯ সালে ফিরে আসেন তাঁর পোড়া শহর কোলকাতায়। একবুক আশা নিয়ে। কবীর সুমন এর ভাষায়-“১৯৮৯-এর শেষে আমি চাকরির পাট চুকিয়ে কলকাতায় ফিরে আসি। আধুনিক বাঙলা গান বেঁধে গেয়ে পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বাঁচতে চেষ্টা করব বলে।”
২.
বাংলা গানের ভাষা/টেকচার পাল্টে দিয়েছেন তিনি। তাঁকে যদি খুঁজতে হয় তাহলে কোত্থাও যাবার দরকার নেই। ‘আমাকে পড়লে মনে খোঁজো এইখানে, এখানেই খুঁজছি আমি জীবনের মানে’- মানে?... মানে হল গানে। আশির দশকের সেই শেষের সময়। যখন বাঙলা গান ধুঁকছে। সস্তা তাল পাতার ললাট লিখন শেষ করে গানের সাম্রাজ্যে হানা দিলো ‘তোমাকে চাই’। একটা বিস্ফোরনে বাংলা গানের ভোল পাল্টে গেলো। খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলো একটা মুখ। তৈরি হল একটা নতুন কোলাজ। শুধুমাত্র একটা গীটার হাতে নিয়ে যে শুধু গান করা যায় তা বাঙালি জাতিকে শিখিয়ে দিলেন কবীর সুমন। গড়ে উঠল একটা নতুন অবয়ব। এই শুরু তারপর থেকে আজ অবধি চলছে তো চলছেই...
অনেক বুদ্ধিজীবি মানুষকে তাঁর গয়ান সম্পর্কে বলতে শুনেছি- এইসব ছাইপাঁশ বেশী না শোনাই ভালো। হায় গান? – আর কিই বা বলার আছে। এমন ঘটনাবহুল জীবন বোধ হয় খুব কম মানুষেরই আছে। সারাটা জীবন বিরুদ্ধ স্রোতে লড়ে গেলেন। এখনো লড়ছেন। আগাগোড়া দলহীন, একা এবং সংখ্যালঘু এই মানুষটি জীবনে কত যে ধাক্কা খেয়েছেন তাঁর ইয়েত্তা নেই। তবুও তিনি বলে উঠেন- ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে।’ সেই ১৯৯২ সাল থেকে শুরু তারপর থেকেই তাঁকে পদে পদে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে একমাত্র তাঁর গানের জন্য। এমনকি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হবার পর বহু অপমান সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তাঁকে দেখেই এক সময় গানে আশা মানুষগুলি পর্যন্ত সুমনের নামে কুৎসা রটাতে শুরু করে। এমনি একজন হলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। যেন নচিকেতা চক্রবর্তনকে একদিন উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য পাবলিক গণপিটুনি পর্যন্ত দিয়েছিল। বর্ধমানে এক সঙ্গীত সভায় কিশোর কুমারকে উল্টাপাল্টা কথা বলে চরম ধোলাই খায় নচিকেতা। সেই নচিকেতা চক্রবর্তী কোন কারণ ছাড়াই জাতীয় পত্রিকায় ‘গানওলার অধঃপতন’ নামে চরম অশ্লীল একটা লেখা লেখে। হায় জাতি, হায় গানের সেবক! দিনের পর দিন সুমনের ব্যাক্তিগত জীবনকে তাঁর গানের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ক’টা বিয়ে করলেন ইত্যাদি... ২০০০ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি তাঁর পুরনো নাম পরিত্যাগ করেন। আর এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় সিমাহীন কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি। এর জবাবও এলো গানে গানে...
"শোন গ্রাহাম স্টুয়াটস্টাইনস আমি সংখ্যালঘুর দলে
আমি কবীরের সন্তান যাকে কবীর সুমন বলে।
-----
শোন দারুন উদারমনা তুমি রাগতে রাগতে বল
ঐ সুমন চাটুজ্জেটা শেষমেশ মুসলিম হল।
-----
শোন তালিবান তালিবান
আমি তোমাদের দলে নেই
আমি ধর্মে মুসলমান
আছি লালনের সঙ্গেই।”
৩.
“লাঙল যাদের জমিও তাদের ওরাই বলত আগে
এখন ওদের তেষ্টা মিটাতে চাষির রক্ত লাগে
জাগো বিদ্রোহ ছোটো প্রতিরোধ-কামনার খ্যাপা ঘোড়া
ল্যাজে যদি তোর লেগেছে আগুন স্বর্ণলংকা পোড়া।
শালবল্লার বেড়ায় আগুন বিরোধী নিশান ওড়া।”
যে গান মানুষকে ভাবতে শেখায়, বাঁচতে শেখায় কবীর সুমন সেই গানকেই কণ্ঠে ধারণ করে গেছেন। সমাজের প্রতিটি কুৎসিত রূপরেখা তাঁর গানে বিস্ফোরক হয়ে উঠে এসেছে। নব্বই এর দশক থেকেই বহু গণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এই আবেগওলা মানুষটি। সমাজের দুঃখ তাঁকে কাঁদায়। গান করে প্রতিবাদ। এমনই করে তিনি জড়িয়ে পড়েন ২০০৬-২০০৭ এর সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম এর আন্দোলনে। ভুমিপুত্রদের সাথে সর্বহারা দরদীদের লড়াই। সেই লড়াই ছেয়ে থাকবে তার আজীবন গানের স্রোত এর সাথে।
৪.
"আমার জিভটা এখনো আমারই জিভ, আমার গলটা এখনো আমারই গলা"
সপ্তাহ খানেক আগে পড়তে শুরু করেছিলাম কবীর সুমন এর ‘নিশানের নাম তাপসী মালিক’। শেষ হবার পরের অনুভূতি যদি বলি তাহলে বলব, এখন মনে হচ্ছে কেন শেষ হয়ে গেলো। আরেকটু চললে কি ক্ষতি হতো? আসলে প্রায় তিনশতাধিক পাতার এই বইটার প্রায় প্রতিটি লাইন আমার কাছে একটা দলিল হয়ে গেলো। একবারের জন্যও এটি কোন বই বলে মনে হয়নি, মনে হয়নি কোন গম্ভীর প্রলাপ। যেন সামনে বসে হাসি মুখে কথা বলে যাচ্ছেন আমার প্রিয় গানওলা। পশ্চিমবঙ্গের বাম রাজনীতির এবং এর পরের পরিবর্তনের হাচর-পাঁচর শেষে এখন যে সময় সেই সময়ের কথা এই মানুষটি আরও পাঁচ বছর আগেই ভেবে রেখেছিলেন। এই বইটার কোন কথাটা বলব কোনটা বলব না ভেবে পাচ্ছিনা। কেননা প্রতিটি লাইন আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ ঠেকেছে। মনে হয়েছে এর চেয়ে আর ভালো ভাবে পশ্চিম বাঙলাকে দেখা যায়না। এই মানুষটি দেখিয়েছেন। সেই লড়াই এর কথা যেখানে একজন বৃদ্ধ কৃষক বলেন- “আমি বাঁচলে আপনি ভাত পাবেন, তাই চালডাল পাঠাবেন না আমাদের। একখানা এস এল আর দিন। ম্যাগাজিনওলা বন্দুক... ওয়ান শটার টু শটার দিয়ে সিপিএম এর সাথে লড়াই করা যায়না।”
যার গানের গলা কেড়ে নিতে চেয়েছিল সিপিএম। তাদের বিরুদ্ধে সমানে লড়াই করে গেছেন সেই নব্বই এর দশক থেকেই। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন তাঁকে ভোটে দাড় করানোর জন্য মরাকান্না জুড়েছিলেন, এক বছর ধরে সুমনের শত না সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন – “তোমার চেয়ে ভালো ভাবে বাঙলার সাধারণের কথা কে বলতে পারবে কবীর দাদা।’’ ভোটে দাঁড়ানোর জন্য সুমনকে ‘গ্রেট ফ্রেন্ড’ আখ্যা দিয়ে বলতেন- “গ্রেট ফ্রেন্ড, তোমায় ভোটে দাঁড়াতেই হবে। তুমি জিতবেই যাদবপুরে। প্লীজ দাঁড়াও।” সেই মমতা সুমনকে সংসদে সেই সংখ্যালঘুদের জন্য প্রতিবাদ করতে বারণ করেন সুমনকে?
এখন ভাবতেও হাসি পায় এই মহিলা সুমনের মুখ দর্শন করতে চাননা, যিনি কিনা বলতেন – “কবীর সুমন নিজেই একটি আন্দোলন, তিনি যা বলেন তা থেকে আমি শিখি।” এখন মমতার স্নেহধন্য সব বাঘা বাঘা বুদ্ধিজীবীরা এসে সুমনের নিজের বাড়িতে ওকেই শাসিয়ে যায়। হায় রাজনীতি! কেন? না সুমন কোন পন্থী নন এই জন্য! তিনি সেদিনও বলেছিলেনঃ মমতা তোমার দল যদি ক্ষমতায় এসে জন বিরোধী কাজ করে তাহলে আমি তোমার দলের বিরুদ্ধেও মাঠে নামব। কত মিষ্টি মুখে সব কথা নিয়েছিলেন মমতা! হায় রাজনীতি! একজনের সৎ স্বচ্ছ আবেগকে পলিথিনের পোটলা বানিয়ে ছাড়লে? সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, লালগড়ে শহিদ সব জনজাতি, ঘায়েল অজস্র মানুষের জীবন যুদ্ধের খতিয়ান লিপিবদ্ধ হয়েছে এই বইটির পাতায় পাতায়। সর্বহারা সেই নর্মদা শীট এর কথা কি ভুলা যায়- “আমার ছেলের বয়সী সি পি আই এম এর অনেকগুলো ছেলে এসে আমায় রেপ করল।... আমি আবার রেপ হবো কিন্তু জমি দেব না।” গণ ধর্ষিত সেই মেয়েদের আর্ত চিৎকার যেন বই এর পৃষ্ঠাতেই শোনা যায়।
সেই সর্বহারা সেই বিদ্রোহ আর গণ জাগরণের হিসেব কি করে মিশে গেলো মমতার আঁচল তলে? এখানে কোথায় গণ ধর্ষিতা তাপসী মালিক-রা, কোথায় ছত্রধর মাহাতো-রা?
হায় রাজনীতি! এই বইটার প্রায় কয়েক পাতা পর পরই সুমন বলে গেছেন যা তিনি সেই নব্বই এর দশক থেকেই বলে আসতেন- আমি গান বাজনার মানুষ, রাজনীতি আমার কম্ম নয়! কত গান গেয়েছেন তিনি? কাদের জন্য? তিনি সবসময় একটা কথাই বলেন – আমার কোন দল নেই। এমনকি তৃনমূলের ‘প্রতিকী চিহ্ন’ নিয়ে ভোটে দাঁড়ানোর ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে মাত্র তিনি তৃণমূলের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন, তাও নাম কে ওয়াস্তে। তিনি সব সময় সংখ্যালঘুদের দলে। একটা লাইন বারবার মাথায় ঘুরছে। যাদের বিরুদ্ধে মূল লড়াই ছিল, ওরা কারা? আসলেই কারা। লড়াই কাদের বিরুদ্ধে? লাইনটা ছিল – “সিপিআইএম কোন দল নয়, ওটা একটা স্বভাব।” আর সেই স্বভাব প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই রয়ে গেছে। আর হেরে গেছেন কবীর সুমন। কেননা তিনি উদ্দাম, বেপোরোয়া। যিনি সেই মানুষদের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন কোন উদ্দেশ্য না নিয়ে। গেছিলেন একা, এখনো তিনি একা। শুধু তিনি বলে যায়- “আমার জিভটা এখনো আমার জিভ, আমার গলাটা এখনো আমার গলা। কেটে উপহার দেইনি কাউকে আমি, অভ্যেস আজও সময়ের কথা বলা।” আর যাই হোক জ্বী হুজুর-জ্বী হুজুর করে সব কিছু বাগিয়ে নেওয়ার কৌশলের বিদ্যাটা করায়ত্ত করতে পারলেন না এই দলছুট গানওলা......
৫.
“তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন... বনস্পতির ছায়া দিলেন।”
আজ এই চৌষট্টি বছরে পা দেওয়া মানুষটির সংগ্রামকে কুর্ণিশ জানিয়ে গেলাম। যিনি এই সমাজ ব্যাবস্থার গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে গেছেন সবসময়। সালাম করে গেলাম। সুমন সুমনের মতো। কখনো কখনো আব্রাহাম লিঙ্কন এর একটা উক্তিকে কোট করতে শুনি – “কিছু ব্যাখ্যা করত যেও না তোমার শত্রুরা তা বিশ্বাস করবে না, আর তোমার বন্ধুদের তা দরকার হবে না।’’ কখনো আক্ষেপ করতে দেখি- “বেচারা সি পি আই এম আর তাদের বংশবদরা। কত চেষ্টাই না করে গেল তারা এতগুলো বছর শুধু আমার গলাটা বন্ধ করতে। বেচারা এই রাজ্যের বড় বড় প্রতিষ্ঠান আর পত্রিকা হাউস। কত কেচ্ছাই না করল আমাকে আর আমার সৃষ্টিগুলোকে অপমান করতে। বেচারা অসংখ্য বাঙালি, যারা শুধু আমার গানগুলোকে লাথি মেরে কেটিয়ে দিল প্রায় কুড়িটা বছর। আরও কয়েক শো বছর কাটিয়ে দেবে তারা লাথি মেরে আর অপমান, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।” প্রিয় গানওলা আমি যেমন আছেন তেমন থাকুন, জানি আপনি বদলাবেন না...... এখনো মনে পড়ে গত বছর এক সন্ধ্যার কথা। একের পর এক গান বুনে যাচ্ছেন গানওলা। হঠাত থমকে একটা কথা বললেন যে কথা আমি কোন দিনই ভুলতে পারবো না। সবাই চুপ, গাইছিলেন ছত্রধরের গান, হঠাত দর্শকের দিকে জোর হাত করে বললেন- সংখ্যালঘু কারা? কাদের আপনারা আমরা উপজাতি বলেন। এরপর হাত জোর করে দর্শকের উদ্দেশে বললেন- প্লীজ দোহাই লাগে আপনাদের, ওদের উপজাতি বলবেন না, ওরা জনজাতি। ভুলিনি সুমন, এই কথা ভুলা যায়না। আর একদিন একটি বারের জন্য হলেও আপনাকে কাছে থেকে দেখার ইচ্ছে পুষে রেখেছি এই মনে...
---------------
স্বগতোক্তি
বিপ্লবে বিশ্বাস করতাম। এখনো হয়তো করি। কিন্তু প্রকৃত বিপ্লবীসত্ত্বার সঙ্গে কেন জানি একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে। বিপ্লব মানেই নিছক নোংরা এবং স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতির নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর গণতন্ত্র?গণ ধর্ষণ, গণ খুন, গণ পিটুনি-সব গণতন্ত্রে সম্ভব। শুধু সম্ভব নয় গণতন্ত্রের মান, ইজ্জত থেকে আলোড়ন কিংবাএক প্রহরের প্রহসন। ব্যাস, ওটুকুই খেলা। গণ অভ্যুত্থান শুরু হয় নির্যাতিত কিছু মানুষকে দিয়ে, শেষ হয় ফায়দাখোর রাজনীতির দালালদের উদাত্ত ভাষণে। ধর্ষিতা ভূমিসন্তানটিকে পর্যন্ত ঢাল বানানো হয়। সব শালারাই ফায়দা লুটে নেয়। আর আমরা পেছন থেকে মাথা নুয়ে সরে পড়ি। খেল খতম। এই শ্রেণীহীন সমাজের দেশে সর্বহারাদের সংগ্রামের শেষে সর্বহারারাই সব হারা! এই তো। আর সুমনের মতো মানুষ যতই আসুক না কেন সব সময় সংখ্যালঘুই হয়ে থাকবে। বিপ্লব ফায়দাখোরদের ব্যারিকেড হয়ে গেছে, ব্যাস। একদিন সুমনও চলে যাবেন। তারপর আমরা উনার জন্য শোক পালন করব। উনার নামে রাস্তা বানাব, বড় বড় বক্তৃতা ঝাড়ব। কিন্তু এই মানুষটার কথায় সুরে জীবনে দর্শনে ছেয়ে থাকব না। হায় তাই হয়তো গানওলা বলেন – “একটুর জন্য কত কিছু হয় নি, ক্ষয়ে যাওয়া আশা তবু পুরুটা ফুরায় নি।”
------------------------------
পরিশিষ্ট
কবীর সুমনের গানের ডালি...
• ১৯৯২: তোমাকে চাই১৯৯৩: বসে আঁকো
• ১৯৯৩: ইচ্ছে হলো
• ১৯৯৪: গানওলা
• ১৯৯৫: ঘুমাও বাউণ্ডুলে
• ১৯৯৬: চাইছি তোমার বন্ধুতা
• ১৯৯৭: জাতিস্মর
• ১৯৯৮: নিষিদ্ধ ইস্তেহার
• ১৯৯৯: পাগলা সানাই
• ২০০০: যাবো অচেনায়
• ২০০০: নাগরিক কবিয়াল
• ২০০২: আদাব
• ২০০৩: রিচিং আউট
• ২০০৫: দেখছি তোকে
• ২০০৬: তেরো - (সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে গাওয়া)
• ২০০৭: নন্দীগ্রাম
• ২০০৮: রিজওয়ানুরের বৃত্ত
• ২০০৮: প্রতিরোধ
• ২০১০: ছত্রধরের গান
• ২০১০: লালমোহনের লাশ
প্রাণের তাগিদ
“বাংলার ধনুকের ছিলায় ছিলায় যত টান
তীরের ফলায় তবু বিষ নয় লালনের গান
সে-গানে বিদ্ধ বুক রক্তে অশ্রু ছলোছলো
এ যদি আমার দেশ না-হয় তো কার দেশ বলো?
শ্যামলে শ্যামলে তুমি নীলিমায় নীল রবিগানে
যে-নদীর কূল নেই সে স্রোতে বৈঠা যারা টানে,
আব্বাসউদ্দিন দরিয়ায় ধরেছেন সুম
শাশ্বত বেহুলার ভালোবাসা সিঁথির সিঁদুর,
ভাষা-শহীদের খুনে সে সিঁদুর আরও লাল হলো
এ যদি আমার দেশ না-হয় তো কার দেশ বলো।?
স্মৃতিতে এখনও শুনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান
পূবের আকাশ ছোঁয় শান্তিতে ভোরের আজান,
একুশের হাত ধরে চেতনায় হাতে খড়ি
বাংলা দেখলে আমি এখনও বাংলাদেশ পড়ি,
মুক্তিযুদ্ধ ডাকে আগামীর দিকে হেঁটে চলো
এ যদি আমার দেশ না হয় তো কার দেশ বলো?”
----------------------------
গানের খেয়ায়...
==============================
আমার শহর
মার্চ। ১৬। ২০১২
মন্তব্য
সুমনের লাইভ দেখেছিলাম, ঢাকায়, শেরাটনে। ভালো লেগেছিলো।
...........................
Every Picture Tells a Story
সুমন তো অনেকবার শো করেছেন বাংলাদেশে মনে হয়। কয়েকটা চ্যারেটি শো-ও করেছিলেন। উনার লাইভ শো না দেখলে মনে হয়না কবীর সুমনকে পুরোটা জানা যায়।
আমার কাছে উনি গানের জায়েন্ট।
ডাকঘর | ছবিঘর
সাল মনে নেই, তখনও সুমন নামের সাথে কবীর যোগ করেন নি। ঐটা ছিলো ঢাকায় উনার প্রথম শো।
...........................
Every Picture Tells a Story
তাহলে ২০০০ সালের আগে হবে। কেননা কবীর যোগ হয়েছে টুয়েন্টি জিরো জিরোতে এসে। আমিও ঠিক সালটা বলতে পারছি না। সম্ভবত নয়ের দশকের মাঝামাঝি হবে।
ডাকঘর | ছবিঘর
সুমনকে নিয়ে এই রকম একটা লেখার প্ল্যান ছিল আমার শতবর্ষব্যপী।
সেই হিসেবে আমার শতবর্ষী প্ল্যানটা ভেঙ্গেচুরে দিলেন তাপস'দা।
কিন্তু ক্ষোভের বদলে আমার ভীষন আনন্দ হচ্ছে--কারণ এত ভাল করে সুমনকে নিয়ে আমি লিখতে পারতাম না।
সুমনের সকল সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে তার ভেতরের শিল্পী মন আর লড়াকু মনটার কাছে আমি আজীবন ঋণী হয়ে রইব। আমি আজীবন তাঁর কাছে ঋণী রইব এই ক'টি বাক্যবন্ধের জন্যঃ
"গানের জন্যে গান হয়ো না, বাঁচার নিশান হয়ে
যুগান্তরের খবরটাকে তুমিই এনো বয়ে---
গান তুমি হও আমার মেয়ের ঘুমিয়ে পড়া মুখ
তাকিয়ে থাকি, সেটাও আমার বেঁচে থাকার সুখ"
স্যালুট গানওলা, স্যালুট তাপস'দা!
অনেক ধন্যবাদ অনিকেত'দা। সুমন আমার কাছে আশ্রয়ের মতো।
আপনাকে অনুরুধ করব একটা লেখা লিখবেন উনাকে নিয়ে। আর একটা গান আমার হয়ে গাইবেন প্লীজ যেটা আপনি কোট করলেন………
কিংবা
বাসুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়………………
ডাকঘর | ছবিঘর
বাসুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়………………গানটা ভীষণ ভালো লাগে আমার। গানওয়ালাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
লেখার জন্যে
আপনাকেও ধন্যবাদ সৌরভ কবীর।
ডাকঘর | ছবিঘর
গানওয়ালাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
ঢাকায় সুমনের কনসার্ট দেখছি, সাথে সাবিনাও গান ছিলেন। চমৎকার অভিজ্ঞতা।
কিন্তু ১৯৯২ এর গানওয়ালাকে ২০১২ সালে আর খুঁজে পাই না। পুরানো গানগুলোই নতুন করে শুনি, অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওগুলোর সাথে।
এই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ তাপস।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
উনি নিজেও এখন আর এতটা গাইতে পারেন না। বয়েস হল তো এখন তাই।
একটা সাক্ষাৎকারে কিছু দিন আগে উনি বলছিলেন - আমি নিজেই আমার পুরোনো গানগুলি গুনগুনাই।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ দাদা।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ, কবীর সুমনকে নিয়ে এমন একটা লেখার জন্য। নতুন অনেক কিছুই জানলাম যা জানতামনা।
আপনাকেও ধন্যবাদ দাদা।
'নিশানের নাম তাপসী মালিক' কিংবা 'হয়ে উঠা গান' - এই বইগুলিও পড়ে দেখতে পারেন।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ বস।
ডাকঘর | ছবিঘর
শুভ জন্মদিন প্রিয় গায়ক।
facebook
ডাকঘর | ছবিঘর
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আপনাকে ধন্যবাদ রাজা।
ডাকঘর | ছবিঘর
জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল সুমন। আমার কত-শত বেদনার্ত দিনে শক্তি দিয়ে গেছে, প্রেরনা দিয়ে গেছে, ভালবাসা দিয়ে গেছে তোমার গান তুমি তা জানবেনা। ব্যক্তি সুমনের ত্রুটি থাকবেই সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু গানের সুমন, সে যে প্রায় নিখুঁত, বাংলা গানের এক অবিসংবাদিত কিংবদন্তি সে সুমন, তাকে উপেক্ষা করে বাংলা গান শোনা কি যায়? সে সুমনকে শ্রদ্ধা-সালাম যে গেয়ে গেছে গান,
" আমি আছি পশ্চিমে তুমি আছো পূবে
একুশের টানে আছি একুশেই ডুবে
ভাষাই আমার আমি তোমার তুমিও
মাতৃভাষা আমার জন্মভূমিও।"
এমন আবেগ-মথিত একটি সুন্দর লেখার জন্য তাপস'দাকেও ধন্যবাদ না দিয়ে পারছিনা।
ঠিকই বলেছেন। না। সুমনকে উপেক্ষা করে বাংলা গান --- ভাবা যায় না!! উনি আজকের কণ্ঠ। তবে প্রিয় গানওলাও বলেন- আমার গান সবার জন্য নয়, কিছু সংখ্যালঘু মানুষের জন্য। সত্যিই তাই, কেননা বাকিরাতো উনার গানকে ছাইপাঁশ বলেই কাটিয়ে দিল।
"বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই
ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই।"
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
ডাকঘর | ছবিঘর
লেখায়
সুমন অনেক পছন্দের একজন গায়ক। শুভ জন্মদিন প্রিয় গায়ককে।
ধন্যবাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
দারুন লাগল তাপসদা ।
বহুদিন পর সুমন কে নিয়ে এত ভাল একটা লেখা পড়লাম ।
গানওয়ালার প্রতি রইল জন্মদিনের শুভেচ্ছা ।
আপনাকে ধন্যবাদ প্রদীপ্ত।
ডাকঘর | ছবিঘর
সুমনের চাটুজ্যের প্রথম গান শুনেছিলাম 'চালশে'। ভয়াবহ ভালো লেগেছিলো (নেটে খুঁজলাম, পেলাম না)। প্রিয় গায়ককে জন্মদিনের শুভেচ্ছে জানাই। আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর একটা লেখা দেওয়ার জন্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। নিন সেই গান আপনার জন্য -- ।
ডাকঘর | ছবিঘর
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম, তাপস।। সুমন কে চেনাতে গিয়ে, তুমি তোমার নির্ভীক, বিদ্রোহী, পবিত্র সত্ত্বার, তোমার অনুভব ও তোমার চেতনাকে সার্বজনীন আঙ্গিনায় উন্মুক্ত করেছ।।
তাপস, আমিও সুমন এবং তোমার মতোই গভীর ভাবে বিশ্বাস করি যে ''সি.পিএম'' একটা প্রতীকি চরিত্র, একটা বদ্ধমূল স্বভাব, একটি তথাকথিত রাবনের সিংহাসন।। যেই যায় লঙ্কায়, সেই হয় ''০০০০''।।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দাদা।
এইবার একটা কথা বলি। যদিও ব্যাপারটা আলাদা।
সমীরণ'দা সবটাই থিক আছে। কিন্তু লঙ্কা এবং রাবণের কনসেপ্টটা আমার কাছে ভিন্ন। আমি অনেককেই দেখি যে এই প্রসঙ্গে এই কথাটি বলতে। আমি বুঝতে পারছি আপনি মমতাকে বলতে গিয়েই একথা বলছেন। কিন্তু রাবণকে বীর হিসেবেই দেখি। আমার চোখে রামায়ণের শ্রেষ্ঠ বীর রাবণ। অতএব মমতাকে লঙ্কার সম্রাট ভেবে নিতে আমার আপত্তি আছে।
ডাকঘর | ছবিঘর
গানওয়ালার অনেকগুলো গানই ভয়াবহরকম ভালো লাগে। তারমধ্যে "জাতিস্মর" একটা।
জন্মদিন শুভ হোক।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
'কত জম্নের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষর'-- জাতিস্মর গানটা সত্যিই এতো অসাধারণ।
ডাকঘর | ছবিঘর
চমৎকার লাগল।
অঞ্জন- সুমন- নচিকেতা-- শোনা হয় প্রায় সারাদিন জুড়েই...
গানওয়ালার জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথী
আমিও শুনি। তবে নচিকেতাকে আজকাল সহ্য হয় না আর ওর ভন্ডামির জন্য।
ডাকঘর | ছবিঘর
দুর্দান্ত পোস্ট !
গানওয়ালার জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা।।।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অনেক ধন্যবাদ রণ'দা।
ডাকঘর | ছবিঘর
শুভ জন্মদিন, প্রিয় গান ওয়ালা।
ধন্যবাদ, তাপস।
"ও গানওলা, আরেকটা গান গাও...আমার আর কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।"
আপনাকেও ধন্যবাদ সুমিমা।
ডাকঘর | ছবিঘর
খুব ভাল্লাগলো লেখাটা।
"গানওলা ও গানওলা, গান থামিও না!"
আপনাকে ধন্যবাদ পরিবর্তনশীল।
ডাকঘর | ছবিঘর
সবাই ভাল ভাল বলছে ----- আমি কিন্তু বেসুরেই গাইব|
গানওলা সুমনকে দারুণ পছন্দ করতাম, এখনও করি অনেকটাই| 'তোমাকে চাই' যখন প্রকাশিত হয়, ততদিনে আমাদের কলেজবেলা শেষ| আর পাঁচজনের মত আমিও সেইসময় আমূল আলোড়িত হয়েছিলাম, নতজানু হয়েছিলাম 'শেষপর্যন্ত তোমাকে চাই' এই অমোঘ উচ্চারণের সামনে| এরপর পরপর বেশ কয়েকটা দুর্ধর্ষ অ্যালবাম| 'পাগলা সানাই'এর পরে আর কোনও অ্যালবাম অন্তত গান হিসাবে আমার মনে তেমনভাবে দাগ কাটে নি| এইবার সলিল চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে ২৪ ঘন্টায় তাঁর গান নিয়ে সুমনের একটা অসাধারণ আলোচনা আছে| ইউটিউবে পাওয়া যায়|
ওনার শঙ্করলাল ভট্টাচার্য্যকে (শঙ্করলালকেই তো? ) পশ্চাদ্দেশ দেখানো আমি সমর্থন করি| ঐটা একদম মাস্টারস্ট্রোক ছিল| ওনার ছত্রধরকে নিয়ে গান, জাগরী বাস্কেকে নিয়ে গান, 'দাস স্পেক মকবুল' সিরিজের বেশীরভাগ লেখাগুলো পছন্দ করি|
প্রথমদিকের স্টেজ শো গুলো মোটামুটি দেখার চেষ্টা করতাম, কিন্তু ঐ স্টেজে দাঁড়িয়ে অকথ্য গালিগালাজ আর 'আমিই শ্রেষ্ঠ' বক্তব্য কদর্য্য লাগায় লাইভ শো দেখা বাদ দিয়ে দিই| মনে আছে আমাদের ছোট্ট মফস্বলে একবার সুমন এলেন, মহাদেশ পরিষদের মাঠে তিল ফেলবারও জায়গা নেই| সেখানে হঠাৎ একটি বাচ্চা উসখুস করায় তার মা তাকে তাকে চুপ করাবার জন্য দুধ খাওয়াতে শুরু করলে উনি স্টেজ থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করে ওদের বেরিয়ে যেতে বলেন| অথচ বাচ্চাটি কাঁদেও নি যে তেনার গাইতে অসুবিধে হবে|
এরপরে ওনার ঐ 'সংখ্যালঘু' বলে সহানুভুতি কুড়োবার মরীয়া চেষ্টা| উনি যদি বলতেন উনি সাবিনা ইয়াসমিনের প্রেমে পড়েছেন, তাই বিয়ে করেছেন, স্বাভাবিক ভাবতাম| কিন্তু উনি তখন প্রোগ্রামে প্রোগ্রামে বলে বেড়াতেন যে ভারতে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি সাবিনা কে বিয়ে করেছেন এবং ধর্মান্ত্রিত হয়েছেন| এইটা আমার কাছে আউট অ্যান্ড আউট ভন্ডামি ছাড়া কিচ্ছু মনে হয় না| দিব্বি বাংলাদেশে যাতে একটি কেরিয়ার বানানো যায় সেই ছক কষেই এগিয়েছেন বলে বরং মনে হয়|
এই লোকটি নন্দীগ্রাম গণহত্যার পর বলেছিলেন প্রতিদিন ৫টা করে সি পি এম মারতে!!! এটা কোনও সভ্য মানুষের ভাষা? লক্ষণ শেঠদের সাথে এনার ফারাক কোথায়?
জ্ঞানেশ্বরী বিস্ফোরণের পরে মমতা যখন বললেন 'মাওফাও কিছু নেই' ওটা সিপিএমের কাজ, এই সুমন তখন একটিও কথা বলেন নি| এখন যখন মমতা পাল্টি খেয়ে ওটা মাওবাদীদের কাজ বলায় উনি নড়েচড়ে বসেছেন| যে মাওবাদীদের রাজনীতিকে উনি সমর্থন করেন, সেই মাওবাদীরা যখন একটা সাত বছরের বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে পোস্টার লেখায় 'আমার বাবা আর সিপিএম করে না' তখন উনি চুপ করে থাকেন| সেই মাওবাদীরা যখন এক্জন লোককে মেরে মৃতদেহটি প্রকাশ্য রাস্তায় তিনদিন ফেলে রাখে, কাউকে সৎকারের জন্য এগোতে দেয় না ----- তখন ওনার 'মানবিকতা' বসে গীটার বাজায়|
মমতা তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না বলে লোকসভা থেকে এই ইস্তফা দিচ্ছি --- এই দিয়ে দিলাম ---- করছিলেন, শেষে বললেন 'মহাশ্বেতা দেবীকে আমি আমার মা বলে মনে করি, তাঁর কথায় ইস্তফা দিলাম না' (প্যারাফ্রেজ করলাম)| এদিকে দুমাস আগে দেখলাম ব্লগে লিখেছেন 'আমি চট করে কাউকে মা, বাবা, ভাই এইসব বলতে পারি না, বলিও না' (আবারও প্যারাফ্রেজ)| যখন যেভাবে লিখলে 'আমি কি মহান' এই ভাবটা প্রকাশ করা যায়, উনি সেটাই করেন| উনি তৃণমূলকে অতি অপদার্থ মনে করেন, কিন্তু তৃণমূল দলের সাংসদ পদটি দিব্বি ধরে রেখেছেন| 'নিশানের নাম তাপসী মালিক'এর লেখকের আজ আর অনিন্দিতা সর্বাধিকারীর সাথে এক মঞ্চে যেতে কোনও অসুবিধে নেই|
অসম্ভব সেল্ফ অবসেসড, অ্যাটেনশান সিকার একটা লোক| দোষেগুণে মেশানো একজন লোক, গদগদ হওয়ার মত কিছু নয় আমার মতে|
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আপনার কথাগুলিকে সালাম জানাই দিদি । আমি বেশী কিছু বলব না। কিছু বেসিক জিনিষ বলব।
১। গান ভালো লাগা এবং উনার গানের প্রতি আপনার মনোভাব নিয়ে আমার কিছুই বলার নাই, আপনি একজন শ্রোতা এবং এই মতামত আপনি দিতেই পারেন।
২। আমি খুব বেশী স্টেজ শো দেখতে পারিনি। আপনি যেটা বলেছেন সেটা আমার কাছেও ভালো লাগেনি। কিন্তু কি করি বলুন গানওলা যে অন্য অভিজ্ঞতাও দিয়ে রেখেছে। একবার এক স্টেজ শো আমাদের শহরে। অনুষ্ঠান চলছে। হঠাত একটি বাচ্চা কেঁদে উঠলো। তিনি স্টেজ থেকে বাচ্চাটিকে বললেন- কেন কাঁদছ। সে আরও জোরে চিৎকার দেয়। তারপর সুমন বলে - প্লীজ চিৎকার দিও না সোনা। ছেলেটি ফুঁপিয়ে বলে উঠে - তোমার নাম কী। সুমন বলে - আমার নাম কবীর সুমন ভাই, এখন একটু চুপ করে থাকো, আমি একটু গান গাই এরপর আমি তোমাকে চকলেট দেব এবং চুমো খাবো। তারপর আবার গীটারে ধুন তুললেন।
৩।
- ব্যাক্তি হিসেবে আপনি এই নজরে দেখতেই পারেন। তবে আমার তা মনে হয়না। যদি এমন হতো এটা উপার্জনের ধান্দা হতো তাহলে উনাকে সংখ্যালঘুদের কাছে কেন যাবেন? সিপিএম এর সামনে জ্বী-হুজুর করলেই এই যাবত বহুত কামাতে পারতেন। । সাবিনা কে বিয়ে করেছেন তিনি প্রায় বাহান্ন বছর বয়েসে, তারপর তিনি কতবার বাংলাদেশে গেছেন দিদি। আর এই বয়েসে আর কি কেরিয়ার গড়বেন তিনি? যা হবার তা তো তিনি হয়ে গেছেন তাইনা।
৪।
- ইয়েস। আমি যদি বলি ঠিক বলেছেন। কারণ লক্ষণ শেঠদের মারতে হবে ওদের মতো করেই। নইলে বাঁচা যায়না। ঐ প্রান্তিক কৃষকদের কোট করেই বলছি - " ওয়ান শটার টু শটার দিয়ে সিপিএম এর সাথে লড়াই করা যায়না।" দিদি সুমন তো আগ বাড়িয়ে বলতে যাননি, কিংবা গণ আন্দোলন থেকে ফায়দা লুটেন নি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে লক্ষণ শেঠরা যা করেছে তার জন্য তাদের এই কথাটা প্রাপ্যর খাতায় সামান্যই বটে।
৫।
- মমতার কথা মুখে একটা আর অন্য অংশে একটা। মুড়ি আর সস্তা জুতার তলে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে তা এখন হারে হারে টের পাওয়া যাচ্ছে।
দিদি আপনি জানেন হয়তো সুমন কিন্তু কোন দিন মমতার তল চাটা পোষা লোক ছিল না। কত বলবেন উনি? কোথায় কোথায় আর বলবেন? তারা চ্যানেলের উপর সুমন দিনের পর দিন যা বলে গেছেন এর পরও কি লোকটার প্রতি আপনি এই কথা বলবেন? একটা মানুষ কার কার সাথে একা লড়াই করবেন।
মাওবাদীদের আমিও এক অংশে সমর্থন করি। আচ্ছা আপনি তো জানেন কাদের মেরেছিল ওরা? যে সিপিএম নেতা খুন হল এরা কারা? জোতদার, ক্ষমতাখোর, ধর্ষক, আদিবাসী নিপিড়নকারী নয় কী? ওরা অনেক ফালতু এবং অসভ্য কাজও করেছে। সেটা সমর্থন করা যায়না। সুমন কিন্তু সেটা বলেছে। আমিও বলছি যে ওদের লড়াইটা শুরু হয়েছিল শ্রেণী শোষণ দিয়ে শেষ হচ্ছে উৎকট ক্ষমতার দম্ভ এবং রাজনীতির ফায়দা লুটে। আর বঞ্চিতরা গেলো কোথায়। কতটা সবুজ ঘাস গড়ে উঠেছে সিঙ্গুরে, মমতাতো ফুল-বাতি জ্বেলে নিল নন্দীগ্রামে কোথায় সূর্য উঠল। আর কবীর সুমনরা কি এমন অর্জন করে নিল?
৬।
আপনার শেষ প্যারাটায় আমার কিছুই বলার নাই। এটাও যেহেতু আপনার ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী তাই আমি আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গীকে শ্রদ্ধা জানাই। এই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আপনার আছে, একশোবার।
৭।
''অসম্ভব সেল্ফ অবসেসড, অ্যাটেনশান সিকার একটা লোক|'' - এই জায়গাটাতে ধাক্কা খেয়েছি দিদি। মাফ করবেন এটা বিদ্বেষ হয়ে গেছে। আমার তা কোন ভাবেই মনে হয়নি। এটা হতে পারেনা। এই কথাটার বিরোধীতা করব দিদি।
দোষ আছে সুমনের অনেক, অনেক। আর সবচেয়ে বড় দোষ উনি খুব বেশী কথা বলে ফেলেন, যেখানে দরকার সেখানেও, যেখানে দরকার নেই সেখানেও।
দিদি যা লেখার উনার সম্পর্কে আমি এই লেখাতেই বলে দিয়েছি আমি কি ভাবি উনার সম্পর্কে।
ডাকঘর | ছবিঘর
দমু'দি, আপনার বলা অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। সুমনের নিঃসন্দেহে খামতি রয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমানেই হয়ত রয়েছে। তাকে আমার পছন্দ--- নব্বই এর শতকে বাংলা গানের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য। অসম্ভব পুতুপুতু টাইপ লিরিক্সের হাত থেকে আমাদের রেহাই দেবার জন্য। আমার এক কলকাতার বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম---কোন এক কন্সার্টে নাকি উনি বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা গানে উনিই নাকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সেইটা চাপা ধরে নিয়ে বেশ হো হো করে হেসেছিলাম। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে---এমনটা বলা হয়ত তার পক্ষে তেমন অসম্ভব কিছু নয়।
সবকিছুর পরও তার জন্যে আমার আলাদা একটা স্থান রইবে----স্মরণীয় একটা শতক উপহার দেবার জন্য, নাগরিক কিছু পদাবলী উপহার দেবার জন্য। গায়ক সুমন এইখানেই ব্যক্তি সুমনকে ছাপিয়ে যায়--অন্তত আমার কাছে।
- । অনিকেত'দা ঠিক আমার কাছেও তাই।
ডাকঘর | ছবিঘর
দমু'দিকে উত্তর দিতে গিয়ে শেষ জায়গাটায়
'আমি কিন্তু'চলে এসেছে। ওটা হবেনা। মন্তব্য লিখে কপি জনিত বিভ্রাটে এটা হয়েছে।ডাকঘর | ছবিঘর
এই লেখার লেখককে প্র্শ্ন : নিশানের নাম তাপসী মালিক - বই টা বাংলাদেশ এ কোথায় পাওয়া যাবে? আর যদি না পাওয়া যায়, তবে, কলকাতার কারা বের করেছে, মূল্য, প্রকাশনী .. এই সব আনুষাঙ্গিক বিষয় জানালে খুব বাধিত থাকিব; ধন্যবাদ জানবেন।
তাপস শর্মা ভাই ; আপনার "লাইভ শো না দেখিলে পুরোটা জানা যাবে না" কথাটার সাথে দ্বি-মত পোষন করছি; উইথ ডিউ রেসপেক্ট ।
বইটা ঢাকায় নিশ্চয়ই পাওয়া যাবার কথা। আমি আপনাকে ডিটেলস দিচ্ছি।
নিশানের নাম তাপসী মালিক
-কবীর সুমন
পাবলিশার্স - মিত্র ও ঘোষ।
মূল্য - একশ আশি টাকা ( রুপি)
আপনার কথার প্রতিও সম্মান জানিয়ে বলছি, এটা আমার ব্যাক্তিগত অভিমত ছিল। আমি নিজে সুমনের খুব কম গানই আছে যে শুনিনি। লাইভ শো দেখলে ষোল কলা পূর্ণ হয় আরকী। গানওলাকে কাছে থেকে শোনার আনন্দই আলাদা। , ধন্যবাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
মনে পড়ে-- ২০০০ সাল অব্দি সুমনের প্রায় সব গান মুখস্ত ছিল। কি ভীষণ আপন ভেবে তার সুর আর শব্দ মুখে নিয়ে ফিরতাম ভার্সিটির দিনগুলোতে!
বছর কয়েক আগে কোন একটা টিভি চ্যানেলে বর্ষপূর্তিতে সুমনের একটা সাক্ষাৎকার দেখাচ্ছিল। সুমন তার নিজের মতো করে বলেছিলেন শব্দ- উচ্চারণ- ছন্দ- গীতির মতো মৌলিক বিষয়গুলোর আবির্ভাব, পরিবর্তন নিয়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টার ঐ অনুষ্ঠানে যেন আমি বাংলা ভাষার সঙ্গীতের শত বছরের বিবর্তনকে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। বিনোদিনী বালা, পঙ্কজ মল্লিক, কমল কুমার মজুমদার, হিমাংশু দত্ত থেকে শচিন কত্তা হয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত সে আলোচনা ছড়ানো ছিল।
বয়েস আমার মুখের রেখায়/ সেথায় আজব ত্রিকোনমিতি-- আজব ত্রিকোণমিতি নিয়ে বনস্পতির ছায়া দিয়ে বৃদ্ধ হতে যাওয়া মানুষটির জন্য শুভ কামনা---
-------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
সাক্ষাৎকার আমিও দেখেছিলাম ।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ডাকঘর | ছবিঘর
অনেক কষ্টকরে একটা পোষ্ট লিখে কিভাবে যেন হারিয়ে গেল। এনিওয়ে, ধন্যবাদ জানবেন ডিটেইলস্ এর জন্য।
বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, পোষ্টটি ভালো লেগেছে। যদিও না বলিলেও বুঝিতে আপনার কষ্ট হবে না ভালো লাগা ব্যপারটি অনুভব করতে। আবেগীর আবেগ আর একজন আবেগী অবশ্যই ধরতে পারবে।
ভালো থাকা হোক।
cresida
পোস্ট লিখলেন হারিয়ে গেলো? সেকি? সেভ করেন নি?
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন