সিভিল রাইটস কথাটির অর্থ আমার কাছে এখনো ধোঁয়াশার মত। আসলে আমাদের জন্যে আদৌ কি কোন রাইটস আছে? আমরা একবার ভেবে দেখি, একবার আওয়াজ উঠাই, একবার নিরুদ্দেশভাবে কোন উদ্দেশ্যকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতজানু হই। আর যাবতীয় প্রক্রিয়া চলতেই থাকে...
- আমরা আসলে কোন পুরাতন হাসপাতাল এর খসে যাওয়া লৌহ স্তম্ভ। আমাদের উপর দীর্ঘ পয়ষট্টি বছর ধরেই চলছে টানাহ্যাঁচড়া। একদল আসে লাথি মেরে যায়, আরেকদল এসে তাদের যাবতীয় শ্লেষ ঝেড়ে যায়, আরেকদল এসে মুতে দিয়ে যায় তো অন্যদল এসে মল মেখে দিয়ে যায় আমাদের শরীরে, আবার আরেকদল এসে সেই মল ধুয়ে দেওয়ার জন্যে, কিন্তু সুযোগে আমাদের দেহে হাত লাগায়। আমরা তবুও সেই ক্ষয়ে যাওয়া স্তম্ভটির মতো সমাজের সমস্ত মুমূর্ষু রোগীদের যন্ত্রণা নিজের কাঁধে নিয়ে নেই। আমরা তবুও বেঁচে আছি। আমরা টিকে আছি আত্মবিশ্বাসের জোরে ...
টানা কথাগুলি বলে আমার দিকে তাকায় অনামিকা। আমিও তার দিকে তাকাই। চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা। আমি উপলব্ধি করতে গিয়েও থমকে যাই। খসে যায় আমার দীর্ঘদিনের লালিত ইগো, অহংবোধ, জাত্যাভিমান ... ইত্যাদি ...
দুই দিন ধরে 'মালুম' শহরটাকে দেখছি। স্নিগ্ধ, কখনো ধুলোমাখা কখনো ধুলো বর্জিত ধূসর প্রান্তর, কাঠের সারি সারি বাড়ি, গ্রাম্য মাদকতা, পাহাড়ি গন্ধ, বিবাদহীন, একেবারে মাটির কাছে থাকা মানুষগুলি। কেমন যেন একটা অদ্ভুত সরলতা আছে মানুষগুলির মধ্যে, পোলাইট; চোখে মায়াবী প্রত্যয় – ঠিক অনামিকার চোখেও আমি তাই দেখে আসছি বহুকাল। ক্রোধ বর্জিত অথচ এত দৃঢ়, সহনশীল ও অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষ। আমার ভ্রম হয়। নিজের মধ্যেই নিজে এক অজানা জিজ্ঞাসাবোধ নিয়ে ডুবে যেতে থাকি অতলে। পরক্ষণেই অনামিকার চোখগুলির দিকে তাকিয়ে আবিষ্কার করি – এই শহর লৌহ মানবীর শহর, এই শহর প্রতিবাদের শহর, এই শহর ঠকে গিয়ে দেয়ালে পিঠ না ঠেকানোর শহর, এই মাটি প্রতিবাদের মাটি, এই মাটির রঙ বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন ইরম শর্মিলা চানু
চায়ে চুমুক দিয়ে একটু বাইরের দিকে তাকাই। আজ আকাশটা মেঘলা। দুপুরে মৃদুমন্দ বৃষ্টি হয়ে গেছে। মেঘের রঙে রাঙিয়ে আছে মালুম শহর। কিন্তু রংধনু তার প্রলেপ এঁকে দিয়ে যায় নি। মেঘের মধ্যেও কেমন জানি প্রত্যয় রেখা দেখতে পাই, চুপচাপ, ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে মালুম শহরটাকে। কিন্তু শুধু কি মালুম শহর; নাকি মণিপুর? নাকি সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল? অনামিকার কথাগুলি ইথার তরঙ্গে ভেসে যায় মালুমের পার্বত্য উপত্যকা জুড়ে। আমি অনুরণন শুনতে পাই – আমরাও মানুষ, আমরাও বাঁচতে চাই; আমরা আমাদের অধিকার চাই। দীর্ঘ পয়ষট্টি বছর ধরে প্রতিরোধ চলছে অবিরাম ধারায়, চুপচাপ, নীরব অঙ্গীকার নিয়ে ... শান্তির জন্য, ভালোবাসার জন্য
- তোমার মনে আছে দুই বছর আগের কথা। আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলতে শুরু করে অনামিকা। - তখন পশ্চিমবাংলা উত্তাল, রাষ্ট্রীয় মদদে আদিবাসীদের উপর চলছিল আড়ম্বরপূর্ণ নির্মম অত্যাচার... যারা অত্যাচারিত এদের একজন প্রতিনিধি আগরতলায় এসেছিলেন গীটার হাতে
আমি আবিষ্কার করি দুই বছর আগের এক সন্ধ্যা। একটা এক্সট্রা টিকিট ছিলো বলে আমি অনামিকাকে বলেছিলাম শো দেখতে যাবে কিনা। প্রথমে মানা করেও হঠাৎ গায়কের নাম শুনে যেতে রাজি হয়েছিল সে। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে অনামিকা বলেছিল – লোকটি ভীষণ আবেগী, ওঁর গানে কি যেন একটা আছে, কিছু একটা আছে ওঁর গানে। বিস্ফোরণ, জাগতিক বাস্তবতা, ... যেন নিজেকেই খুঁজে পেলাম
... আধা বাংলা জানা মনিপুরী এই মেয়েটি; যে কোনদিন কবীর সুমন নামক গায়কের নামও শুনেনি, সেই মেয়ে যখন তিন ঘণ্টায় তাঁকে আবিষ্কার করে ফেলে নিখুঁতভাবে তখন আমার অহংবোধ ভেঙে চুর হয়ে যায় ...
- মনে আছে তোমার, উনি বলেছিলেন – প্লীজ ওঁদের উপজাতি বলবেন না, ওঁরা জনজাতি। ... আমি মাথা নেড়ে সায় দেই
- এরপর থেকে আমি উনার গান নিয়মিত শুনতে শুরু করি। প্রায় প্রতিটি এ্যালবাম আমি কালেক্ট করে ফেলেছি। উনার গান রুক্ষ মাটির দুঃখের গাঁথা বুনে যায়। ঐ তো শেষ কিছুদিন আগে উনার অনলাইন সাইটে গিয়ে দেখি আমাদের উত্তর পূর্বাঞ্চল মূলত শর্মিলার প্রতিরোধ নিয়ে গান বেধেছেন তিনি। তুমি শুনেছ? ...আমি আবারও মাথা নেড়ে সায় দেই
অনামিকা বলে - শেষে প্যারাটা তোমাকে গেয়ে শোনাচ্ছি, ওকে ...
“মণিপুরী মেয়ে যায় হিন্দ টুইটারে/ হিন্দ হল বড় ব্রোঞ্জের কারবারে/ জিতল ভারত মরে গেলো মনোরমা/ কোন অপরাধ কারা যে করবে ক্ষমা/ ... ভারতীয় গণতন্ত্র ... ভারতীয় গণতন্ত্র ...’’ গাওয়া শেষ করে উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে অনামিকা। আমিও চুপ থাকি। কিছু বলি না। নীরবতারও অনেক ভাষা থাকে। এমন অনেক হয়েছে আমরা একসাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নীরবে বসে কাটিয়ে দিয়েছি। এই বোঝাপড়া আমাদের বহুদিনের; যখন সে জানতো না বাংলা ভাষা আর আমি বুঝতাম না মণিপুরী। ... গানটা এখনো আমার কানে লেপ্টে আছে। শত শত বার শোনা এই গানটা বার বার আমার কাছে নূতন লাগে। সুমন ছেয়ে থাকেন আমার প্রতি দিনের রুটিনে, সুমন আমার অভ্যেস। আজ প্রথমবার কোন মেয়ের কন্ঠে সুমনকে শুনলাম। জানিনা কবীর সুমন তাঁর এই গানটি কোন মনিপুরী মেয়ের কন্ঠে শুনেছেন কিনা। যাদের জন্য এই গান বেধেছেন তিনি তাদের একজনের কন্ঠে এই গান শুনে উনার কি অনুভূতি হতো; জানিনা। অনামিকার বাংলা ভাষাটা খুব সুন্দরভাবে রপ্ত করে নিয়েছে। যখন ও বাংলাটা ভালো করে জানতো না, আমি ওকে প্রায়ই বলতাম – আমার ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা। একটা প্রচ্ছন্ন অহংকার নিয়ে আমি কথাটা বলতাম। এখন সেই চোয়ান লুমেটুর অনামিকা নামক মেয়েটাকে সেই কথা বলার সাহস আমার হয়না। আমার অহংকার যে কিভাবে মুখ লুকায় তা আমি টের পাইনা। কেননা এই লোহায় গড়া লড়াকু মেয়েটির মুখে আমার ভাষা এক অন্য উচ্ছ্বাস নিয়ে গুঞ্জন করে মণিপুরের আকাশে ... আমি হাওয়ার ভেসে যাই
অর্জিত সুখ আর বর্জিত ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করাটাই একটা বিশাল বিড়ম্বনা। দুই হাজার সাল। আমরা যারা নিজেদের জাতি বলে দাবি করি আর নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে অন্যদের বানাই উপ-জাতি তাদের নির্লজ্জ আস্ফালনে রক্তাক্ত হয়েছিল মালুম এর মাটি। মানুষ আর টেরিরিস্ট এর মধ্যে কোন ফারাক করেনা ভারতীয় রাস্ট্র যন্ত্রের ক্ষমতার দোসর ভারতীয় সেনাবাহিনী; বিশেষ করে এই উত্তর-পূর্ব ভারতে। কতিপয় ইনসারজেন্টস-এর হামলার বদলা নিতে ভারতীয় সেনা বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের উপর। লাল হয়ে উঠেছিল মালুমের মাটি। মারল ষাট বছরের বৃদ্ধা সহ দশজন আম আদমিকে। যার মধ্যে ছিল এক ফুটফুটে তরুণ – যে কিনা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর দ্বারা সাহসিকতার পুরষ্কার পেয়েছিলেন; এদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে সাহসিকতার পরিচয় দিল ভারতীয় সেনা বাহিনী। এটা নিছক কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১৯৮৪. হেইরানগইথং এর গণহত্যা, ১৯৮৭. ওইনাম-এ সেনাবাহিনীর অপারেশন ব্লু বার্ড, ১৯৯৩. টেরা বাজার, ১৯৯৭. নুংলেইবান এর গণহত্যা, ১৯৯৫. আরএমসি-তে গণহত্যা, ১৯৯৯ এ চোরাচান্দপুর এর গণহত্যা, ...... এমন আরও অসংখ্য ... এমনইভাবে অপরাধ দমনের নামে, সন্ত্রাস দমনের নামে হাজার হাজার সাধারণ মনিপুরী মানুষকে হত্যা করেছে ভারতীয় সেনা বাহিনী। স্বাধীনতার পয়ষট্টি বছরের ইতিহাসে ভারতীয় রাষ্ট্রদন্ড তার বন্দুকের দন্ড দিয়ে প্রায় পচিশ হাজারেরও বেশী সাধারণ মনিপুরীকে হত্যা করেছে। এর প্রতিবাদ হয়েছে বারবার, গড়ে উঠেছে প্রতিরোধের দুর্গ। জবাবে রাষ্ট্রদন্ড দিয়েছে অত্যাচারের অন্যতম হাতিয়ার, এর নাম ধর্ষণ। হাজারো মণিপুরী মেয়ের শরীর খাবলে খেয়েছে ভারতীয় সেনা বাহিনীর জওয়ানেরা, যারা এই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কিংবা ইজ্জত রক্ষার জন্যে ভারতীয় সংবিধান এর কাছে দায়বদ্ধ। আর তাদের ব্রহ্মাস্ত্র হল রাষ্ট্রের দেওয়া আরেক আনমোল তোফা – সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন. এএফএফপিএ ( Armed Forces (Special Powers) Act, 1958. AFSPA )। এখনো কান পাতলে মণিপুরের আকশে মনোরমাদের রক্তে ভেজা চিৎকার শোনা যায়
- ও খুব একটা ভালো নেই - বাইরে থেকে মুখ ফিরিয়ে বলে অনামিকা। ...জবাবে আমি চুপ থাকি
এখন মালুম-এ দুই হাজার সালের ০২ নভেম্বর এর গণ হত্যার বারোটি বছর কেটে গেছে। সময় ভুলে গেছে অত্যাচারের নির্মম রেখাচিত্র। শুধু একটা প্রতিবাদ জীবন্ত হয়ে আছে, দীপাবলির প্রদীপের মতো টিমটিম করে জ্বলছে ইরম শর্মিলা চানু। আমি চানুকে দেখতে এসেছিলাম। গতকাল তাকে আবারো জোর করে হাসপাতালে ধরে নিয়ে গেছে রাষ্ট্র। এই নিয়ে কতবার তার ইয়েত্তা নেই। দুই হাজার সালের সেই ০৪ নভেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছিল ২৮ বছর বয়সী এই মণিপুরী তনয়া। এখন বারো বছর কেটে গেছে। এই বারো বছরে সে কোন খাবার কিংবা জল স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেনি। এই বারো বছরে বারবার তাঁকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে। তাঁকে কখনো গ্রেফতার করা হয়েছে ‘আত্মহত্যার প্রচেষ্টা’র নামে। কখনো কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম হাঙ্গার স্ট্রাইক করা এই লৌহ মানবীকে। বছরের পর বছর তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় আস্তাকুড়ে। কিন্তু যে মেয়ে নিজেকে জাতির জন্যে, মানুষের জন্যে, অধিকারের জন্যে কুরবান করে দিয়েছে তাঁকে নতজানু করতে পারেনি ভারতীয় শাসনতন্ত্র। তাঁর একটাই দাবী সেদিনও ছিল আজও আছেঃ সেনা বাহিনীর জন্য বলবৎ কুখ্যাত আইন ‘এএফএসপিএ’ মণিপুর তথা গোটা ভারত থেকে তুলে দেওয়া হোক। সংবিধান থেকে মুছে দেওয়া হোক এই অর্বাচীন অত্যাচারের নির্মম নির্বাচিত হাতিয়ার
- মুম্বাই এ বিস্ফোরণ হলে গোটা ভারতের সাথে আমরাও প্রতিবাদ করি। কার্গিলে ভারতীয় সোলজার'দের দেশের জন্যে আত্মহুতি আমাদের কান্নায় ভাসায়, গর্ব হয় ওঁদের জন্য। কিংবা এক অন্না হাজারে তিন সকাল অনশন করে গোটা ভারতকে হেলায় নাড়িয়ে দেয়। অথচ আমাদের করুণ আর্তি, নীরব প্রতিবাদ কেউ শুনেনা। এমন ভেদভাব কেন তাপস ? – আমি অনামিকার দিকে তাকাতে পারিনা। কি ভাষায় ওর চোখে আমি তাকাব তা খুঁজে পাইনা। আমি আবারাও নীরব থাকি
বছর পনেরো আগের কথা। আমি তখন গ্রামের বাড়িতে। এক রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখব বলে দুই বন্ধু মাঠে নেমে আসি, তখন রাত আটটা। হঠাত একটা চোখ ঝলসানো আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। ঝিঁঝিঁর শব্দকে ছাপিয়ে উঠে আসে ভারি বুটের আওয়াজ, ঠকঠক শব্দ
- এহা ক্যায়া কর রাহা হে ? ভারী আওয়াজ গর্জন করে উঠে
- জ্বী, য়্যাসে হি খাড়ে হে। ক্যায়া হোয়া, কুছ প্রবলেন হে? জবাব দেই আমি
- রাত কো অ্যাইসে ক্যায়া করতে হো তুম? ঘর কাঁহা হে তুমলোগো কা?
- ইধার পাস মে হি হে, হাম এহা কে লোক্যাল বাসিন্দে হে। হাত উঁচিয়ে বাড়ির দিকে দেখাই আমি
- রাত কো এহা ঘুমনা এলাউড নেহি হে। গোওলি মার দুঙ্গা তুমহে পাতা ভি নেহি চলেগা
- কিউ? – কেন? কেন গুলি মারবে শুধু শুধু? - এই নির্দোষ প্রশ্নটা বারো বছরের দুই নির্বোধ কিশোরের মনে বিস্ময় চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল। আমরা ভারত নামক স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমি আমার বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে পারবো না? এই স্বাধীনতা তো আমার আছে? আমি কি বন্দুক হাতে সামরিক বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে ধাবা করেছি যে ওরা আমাকে গুলি করে দেবে? প্রচন্ড আক্রশে হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। আমরাও প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলাম সেদিন। কিন্তু আমরা জানতাম না আমাদের স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার, চাঁদ দেখার পাসওয়ার্ড ভারতীয় সংবিধান দিলেও, সেই সংবিধানই আমাদের রক্ষকের হাতে তুলে দিয়েছে আমাদের নিধন করার হাতিয়ার এ.এফ.এস.পি.এ। এই অধিকারে ওরা আমাদের বুকে বুলেটরেখা এঁকে দিলেও এর জন্য তাদের কোন জবাবদিহি করতে হবেনা। আমরা ‘হতে পারি’ টেরিরিস্ট
- তুম লোগো কো আভি য়্যাহা মারকে লাশ বানা সাকতা হু। কাল সুবহ তক তুমহারি মা বাপ কো পাতা ভি ন্যাহি চলেগা কি উসকা বেটা হে কাঁহা... এভাবেই সেদিন আরও হুশিয়ারি দেয় সামরিক রক্ষক ...
আমরা প্রতিবাদ করি। কিন্তু ওরা আরও ভয় দেখায়। শেষে আমরা দমে যাই, ভীষণ ভয় হয়। সামনে রক্ষক নয় ভক্ষক দাঁড়িয়ে। নিরুপায় হয়ে আমরা নতজানু হই, ভুল স্বীকার করে সরে যাওয়ার রাস্তা খুঁজি
- শান্তি জিনিষটা ঠিক কি রকম? আমাদের হত্যা করে, আমাদের ধর্ষণ করে কি শান্তি কায়েম করছে ভারতীয় সেনা বাহিনী? অন্যায় করছে গুটি কতেক উগ্রবাদী। এদের অত্যাচারের স্বীকার তো খোদ আমরা। আর এদের বিনাশ করে আমাদের রক্ষা করতে এসে আমাদের উপরই পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠে ওরা। কেন? – সন্ধ্যার আলোছায়ায় খেলায় আমার সামনে বসা এক সাদাসিদা যুবতীর প্রশ্ন। কেন? – এর উত্তর আমি পনেরো বছর ধরে খুঁজছি। কেউ উত্তর দিতে পারেনি। আমি নিজের কাছেই বারবার হেরে গেছি উত্তর চেয়ে, আমি ক্লান্ত ...
একশ পচিশ কোটি মানুষের নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান। ইনক্রেডিবল আর শাইনিং ইন্ডিয়ার জোয়ারে গা ভাসিয়ে গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আমি দেশ মানেই মহান ঐতিহ্যকেই বুঝতাম। সেই ছেলেবেলা থেকেই পরিবার ও আশেপাশের অন্যদের দেখাদেখি একটা তীব্র ইচ্ছা, আমিও ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন হব। কিন্তু বর্ধিত শৈশবেই প্রকৃতির নির্মম পরিহাসে শরীরের এক বিকল অঙ্গ নিয়ে আমি নিজেই মানুষের হাস্য সম্পদে রূপান্তরিত হয়ে যাই। আর ভেঙে চুর হয়ে যায় আমার লালিত স্বপ্ন। যাপিত বোধ আমাকে একমুখী করে দেয়। গ্রাম্য জীবনের চৌকাঠ পেরিয়ে আমার জানা হয়না অযাচিত সত্যগুলো। নির্বোধের মতো আমি কিছু না জেনেই কখনো কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা কক্তৃক বুটের রাজনীতিতে সায় দেই, আবার কখনো ভারতীয় সেনাদের দ্বারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শত শত নিরীহ বাংলাদেশী নিধনের স্বপক্ষে সওয়াল করি। কখনো অন্ধের মতো অরুণাচলকে নিয়ে আস্ফালন দেখাই, আবার কখনো ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে দামামা বাজাই। আমার চোখে দেখেনা ভারতীয় ঔপনৈবেশিক আগ্রাসন কিন্তু আমেরিকার বিপক্ষে কন্ঠ মিলাই। এমনকি সমগ্র ভারত তো দূরের কথা, আমার উত্তর পূর্বাঞ্চলে ঘটে যাওয়া সমস্ত পৈশাচিক খতিয়ান এই দুই বছর আগেও আমার কাছে অজানাই ছিল। আমি কত উচ্চ মানের খচ্চর তা নিজের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। যখন চোখের পর্দা সরে নূতন রঙ্গমঞ্চ আমার সম্মুখে উত্থিত হয়। ততদিনে কালো ঠুলি উড়ে গেছে বৈনারি বনে; এখন সব ধূসর। বর্ণমালার খুঁড়ে খুঁড়ে নিজেকে ছুঁড়ে মারার অক্ষর আমি খুঁজে পাইনা। আমি মনে মনে বলে উঠি, আমি একটা – আকাট মূর্খ। ইরম শর্মিলা চানুর নামটা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে গিয়ে আমি কেঁপে উঠি। কতটুকু জানি আমিও এই দেশটার, দাবিয়ে রাখার শেষ নেই চেষ্টার। ভারতীয় গণতন্ত্র, পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধান আমাকে লজ্জার আস্তাকুড়ে ঠেলে দেয়। অন্ধকারে আমি আর্ত চিৎকার করি ... চিৎকার ...
এখন রাত। এ যাত্রায় মণিপুরের আম আদমির লৌহ মানবীকে দেখার সৌভাগ্য আমার হবে না। কাল আমি ফিরে যাবো। গিয়ে আবারো ডুবে যাবো আমার আরোপিত জীবন চর্যায়। অনামিকা আমাকে কিছু একটা দেবে বলে ভেতরের ঘরে গেছে। আজ পূর্ণিমার রাত। বাইরের আকাশে মেঘ কিছুটা কেটে গেছে; পূর্ণ চাঁদ এখন মালুম শহরের আকাশে মেঘের সাথে এক্কা দোক্কা খেলছে। ‘কেউ কথা রাখেনি’। তবে আজও ভাবি – এমন হতে পারেনা যে কেউ কথা রাখবে না। কেউ না কেউ রাখবেই... এই বিশ্বাস কেন জানি উপড়ে ফেলতে পারিনা। তাই একটা ভরসা হয়। এই ভরসা গেয়ে শুনায় আমার দৈনন্দিন জীবনে ছেয়ে থাকা একটা মানুষ। বহু বছর ধরে তিনি আমার নিত্য সহচর হয়ে গেছেন। ‘ফিঙে’ পাখিটাকে এখনো দেখা হয়নি। তবে যখন গেয়ে উঠেন সুমন – “ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের লেজে...” তখন ভরসার গান বাধতে ইচ্ছে করে
কিন্তু হয়না। নির্মম বাস্তব শেখায় আসলেই 'কেউ কথা রাখেনা’ ... ইরম শর্মিলা চানু তো ভারতীয় রাষ্ট্রের কাছে কিছু চায় নি? নিজের বেঁচে থাকার অধিকার টুকুন চেয়ে গত বারো বছর ধরে জুঝে যাচ্ছে। চেয়েছে একটাই জিনিষ – শান্তি। সারা বিশ্ব দূরে থাক, কটা ভারতীয় তাঁকে চেনে? মহাত্মা গান্ধীর দেশের মেয়ে জাতির পিতার নির্দেশিত পথেই নিজেকে সমর্পিত করেছে। লজ্জার অতলে তলিয়ে যেতে যেতে আমি ভাবি - কোথায় থেকে এই শক্তি পায় বছর চল্লিশের এই মেয়েটা? আমি ভাবতে বসলেই অসহায় বোধ করি আর চোখের পাতা বেয়ে নীরবে জল ঝড়ে, অবিরাম...
অনামিকা ফিরে এলে আমি তাকে আমার ডাইরি থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর ‘কেউ কথা রাখেনি’ পড়ে শুনাই। সুনীল আমার প্রিয় সাবজেক্ট কোন কালেই ছিল না। কিন্তু তাঁর কিছু কবিতা আমাকে ভয়ানক নাড়া দেয় ইদানিং। হয়তো লোকটা ক’দিন আগে মরে গেছে বলেই আমরা ওঁকে নূতনভাবে জানার জন্য উদ্দমি হয়ে উঠি। এমনই করে ইরম শর্মিলা নামক মেয়েটাও একদিন মণিপুরের বুক থেকে চলে যাবে, হয়তো খুব শীঘ্রই; থেকে যাবে তাঁর দীর্ঘ যাত্রা পথ। সেই পথ একদিন বেছে নেবে অনামিকার মতো কোন এক অনামি মেয়ে। হঠাত মনে পরে যায় আমরণ অনশনে যাওয়ার সময় চানুর বলা কথাগুলি - “I was shocked to see the dead bodies. There was no means to stop further violations by the armed forces…. It (fast) is the most effective way because it is based on a spiritual fight… My fast is on behalf of the people of Manipur. This is not a personal battle, it is symbolic. It is a symbol of truth, love and peace.”
এখন অনামিকা আর আমি মুখোমুখি বসে। বাইরে হাওয়া দিচ্ছে ভীষণ। শীতের আগের শেষ বৃষ্টিপাতের আভাস আছে। গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল এখন নিম্নচাপে ডুবে। একটা রোল টানা কাগজ আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় অনামিকা
“When life comes to its end
You, please transport
My lifeless body
Place it on the soil of Father Koubru
To reduce my dead body
To cinders amidst the flames
Chopping it with axe and spade
Fills my mind with revulsion
The outer cover is sure to dry out
Let it rot under the ground
Let it be of some use to future generations
Let it transform into ore in the mine
I’ll spread the fragrance of peace
From Kanglei, my birthplace
In the ages to come
It will spread all over the world.”
- Irom sharmila chanu
আমি কাজগটির পাতা থেকে চোখ সরাই। অনামিকা আমাকে বলে দেয় নি। কিন্তু আজ নূতনভাবে চানুকে আবিষ্কার করলাম, ও কবিতাও লেখে। যাবতীয় বিবর্ণতা শব্দের পাতা বেয়ে নীরব প্রতিবাদ করে যায়; কথা বলে অক্ষরমালা...
আমি ডায়রিটা খুলে বসি। দ্রুত কলম চালাই। নিষ্ফল আবেদন ঢাকতে ঢাকতে একসময় আমার কলম থামে। অনামিকা স্থির চিত্তে আমার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠায় বসে আছে। আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকাই। ডায়েরির পৃষ্ঠাটা ছিঁড়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দেই। সে হাতে নেয়; পৃষ্ঠার ভেতর কালো বোবা অক্ষরের দিকে মনযোগ দেয়। এবং আমি বাইরে চাঁদের আসা যাওয়া গান শুনতে জানলার দিকে পা বাড়াই...
অতএব আমরা গণ-দোহারে শ্মশান সঙ্গীত গাইতে শুরু করলাম। যেভাবে জাতির একটা একটা করে স্পর্ধা খসে পড়েছিল অন্তরালে। এইবার আর অশনি সংকেত নয়; জাতীয় সঙ্গীতের বুকেই খসে পড়বে কালো রক্ত
অর্জিত সুখ আর দৃশ্যগুলি খোলা পায়ে হেঁটে যায়
নগ্নতা বিরহ-বই এর মাঝে দিনান্তে আশ্রয় নেয়; অনেক কথা ঘোমটা টেনে
নাজুক উপলব্ধিকে চেপে যেতে চায়...
আউল বাউলের পৌষ, কানামাছি ভৌ ভৌ
কন্ঠ রুদ্ধ
বদ্ধ সমাজ
চুপ থাকার ইশারা
নষ্ট স্বাধীনতা তিনটি রঙের ফাঁকে নিজের ইজ্জতকে ঢাকে
একবার নয়, উৎসাহে প্রতি মুহূর্তে মজে যায় সব বিভ্রম
অভেসের বশে চিৎ হয়ে নাচে রঙিন আম আদমির ছায়ারা
আমিও তাদেরই একজন
আমিও সেই অভ্যেসের অলস বাউল
সবুজ বেচে মদ খাই
পরস্ত্রীর লুটতরাজে দাঁত কেলাই
হুজুগে দেশপ্রেমিক সাজি
বাল ছিঁড়তে ছিঁড়তে গেয়ে উঠি ভারতভাগ্যবিধাতার গান
তথ্যপঞ্জি
সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন AFSPA
AFSPA and Unsolved massacres in Manipur
----------------
লেখকের কথাঃ ইরম শর্মিলা চানু বারো বছর হয়ে গেলো আমরণ অনশন করছেন। ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন AFSPA এর বিরোধিতা করে এই লৌহ মানবী নিজেকে জাতির উদ্দেশ্যে অর্পণ করে দিয়েছেন। এই সাধারণ একটি গল্প লেখার চেষ্টা তাঁকে উৎসর্গ করলাম। যারা এই লেখাটি পড়বেন তাঁরা যদি সম্ভব হয় Iarom sharmila chanu নাম দিয়ে একটু খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করবেন। আসুন, আমরা ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন AFSPA এর বিরোধিতা করি। জেগে থাকুন। বিরোধীতা করুন
০৩.১১.১২.
মন্তব্য
একটা সহজ কথা আমি বুঝতে পারি না 'জাতি'কে 'জাতি' বলতে অসুবিধাটা কোথায়। 'উপজাতি', 'জনজাতি' বা 'আদিবাসী' তকমা লাগানো মানে তার জাতিসত্ত্বাকে খাটো করা, তাকে চিড়িয়াখানার জীব বানানো। সারা পৃথিবীতে কোন একটি বিশেষ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর যদি একজন মাত্র জীবিত থাকেন তাহলে তাহলেও তার পরিচয় তার 'জাতি'তেই। সংখ্যায় কম হলে, শিক্ষায় বা উন্নয়নে পিছিয়ে থাকলে তাকে আরেকটা বিশেষ পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে এই ব্যাপারটাই আপত্তিকর।
সরাসরি সামরিক শাসন থাকলে তার বিরোধীতা করা সহজ। গণতন্ত্রের আড়ালে সামরিক শাসনের বিরোধীতা করা কতোটা কঠিন সেটা সারা বাংলাদেশের মানুষ ২০০৬-২০০৮ সালে দেখেছে আর পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ কয়েক দশক ধরে দেখছে।
ভারতীয় গণতন্ত্রের চেহারাটা উত্তর-পূর্ব ভারত বা কাশ্মীরে একেবারেই ভিন্ন রকমের। তবে ষাট বছরের বেশি সময় ধরে এই চেহারাটা কীভাবে ধরে রেখেছে সেটা একটা গবেষণার বিষয়। এই ব্যাপারে বাকি খানবিশেক রাজ্যের গণতন্ত্রপন্থী, সচেতন, সভ্য, মানবিক নাগরিকদের দল-মত নির্বিশেষে নির্লজ্জ নীরবতাও আরেকটি গবেষণার বিষয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইরম শর্মিলা চানুর কথা অনেক দিন ধরেই জানি।
ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে যে বৈষম্যপূর্ণ আচরণ, সেটা গণতন্ত্রের অন্তরায়।
আপনার সাথে আমিও ইরম শর্মিলা চানুর প্রতি জানাই।
অসাধারণ লিখেছেন। আমি ওঁর কথা জানতাম আগে থেকেই। কোথায় যেন পড়েছি-ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে মনিপুরের বা পূর্বান্চলের এই অত্যাচার তো বহু পুরানো। প্রতিবাদ চলতে থাকুক, লড়াই জারি থাকুক, স্বপ্ন দেখি কোন একদিন কিছু একটা হবে।
প্রথম দিকের এই লেখাটা থাকতে পারে-
ইরম চানু শর্মিলা : এক লৌহমানবীর গল্প
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এই লৌহ মানবীর জন্য
লেখা খুব ভাল লাগল
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
লেখা মন ছুঁয়ে গেছে তাপস দা।
ইরম শর্মিলা চানুর প্রতি স্যালুট।
অমি_বন্যা
মর্মান্তিক লাগলো .. আমার মনে হয় না এই ঘটনাগুলো ঘটে কোনো নীতির দোষে .. দোষ যদি থাকে তা মানুষের উগ্র রাজনীতিতে(যারা ওই নীতিগুলো তৈরী করে) ..
আমি বিশ্বাস করি মানুষ হিসেবে প্রতিজনের সহানুভুতি আছে ওদের প্রতি .. কিন্তু সেনাবাহিনীতে কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যা আমি-তুমি বিভেদ কৃত্তিমভাবে তৈরী করে, এবং তাদেরকে ঘৃনা করতে শেখায়, নাহলে এইরকম বন্দুক উচু করে মানুষ মানুষকে খুন করতে পারে না ..
ব্যক্তি মুক্তি
ধর্ম-জাতিসত্তা ক্ষমতা-লোভী দলীয় রাজনীতি,
সমষ্টি সে তো মুষ্ঠি তোলে ব্যক্তির প্রতি ..
ইরম শর্মিলা চানু'কে নিয়ে সচলায়তনে লেখা পুরোনো দুইটি লেখা আর্কাইভ করে রাখলাম
[এক] বাপুজী,শর্মিলা তোমার কেউ নয় বুঝি?
[দুই] চিত্রাঙ্গদার দেশে সে এক আশ্চর্য মেয়ে!
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন