ঠেলাকাকা ও একজন বালের মৃত্যু

তাপস শর্মা এর ছবি
লিখেছেন তাপস শর্মা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২০/১১/২০১২ - ১০:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিনি মরিয়াছেন। তিনি মরিয়া বহু মানুষের উপকার করিয়া গেছেন আপাতত। জীবিত অবস্থায় উনার আস্ফালনে মহারাষ্ট্র রাজ্যটির রাজপাঠ এর স্বঘোষিত দন্ড উনার হস্তেই ছিল। নামকরণের মাহাত্ম মাথায় নিয়া তিনি বালের প্রতীক হইয়া উঠিয়াছিলেন

শীতের বৈকালের মনোহর সময়টা আজ সিনেমা হলে কাটাইব বলিয়া মনস্থির করিয়াছিলাম। শারুক্ষান এর নূতন লাভ-গ্রাউন্ড মার্কা ছবি আসিয়াছে। কিন্তু হঠাত বালের মৃত্যুর খবরে অনেক কিছু বদলাইয়া গেলো। ফোনে টুবলা জানাইয়া দিল – সে আসিতে পারিবে না, তার বাবা নাকি বালের মৃত্যুর খবর শুনিয়া ভয়ানক শোক-বিহ্বল হইয়া পড়িয়াছেন। এবং হায় বাল চলিয়া গেলো, হায় বাল চলিয়া গেলো বলিয়া মুহুর্মুহু মূর্ছা যাইতেছেন। বালের এই অল্প বয়েসে শরীরের মোহ ত্যাগ করাকে টুবলা নিজেও মানিয়া লইতে পারিতেছে না। কত মাত্র বয়স হইয়াছিল? মাত্র ৮৬। তার নাকি আরও অনেক দিন বাঁচার দরকার ছিল। দেশকে উনি আরও কিছু দিতে পারিতেন...

বাল মরিয়াছে তো আমার কি? আমি ভাবিলাম – কত হালারপুত এদিক সেদিক টসকে যায়, তাই বলিয়া সিনেমা দেখা বন্ধ করিতে হইবে? সিনেমা না দেখিতে পারিবার জন্যে আমার ভয়ানক রাগ হইতে লাগিল। টুবলাকে ‘ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কিছুর ছাও’ গালি পাড়িতে পাড়িতে টেলিভিশন খুলিয়া বসিলাম। এবং আবিষ্কার করিলাম একমাত্র টুবলা ও তার বাপ নয় গোটা ভারত শোকে বিহ্বল। প্রত্যেক চ্যানেলের উপর বালের স্মাইল মার্কা পিকচার, আর সংবাদ চ্যানেলগুলি বালের গুণ কীর্তন করিতে করিতে কান্নার সাগর নামাইতেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন উঁচু, নিচু – মহলের নানা গোত্রের প্রাণীরা বিবৃতি দিয়া বালের প্রতি উহাদের অন্তিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করিতেছেন। মেজাজটা আরও বিগড়াইয়া গেলো, টেলিভিশন যন্ত্রটাকে বন্ধ করিয়া ফেইসবুকিং করিতে নেটে বসিয়া দেখিলাম – ফেইসবুকও শোক স্তব্ধ; ইয়ে মিয়ে তিয়ে – ইত্যাদি নানা পেইজগুলি এবং উহাদের দোসরেরা কান্না ভরা স্টাট্যাস ও ছবি শেয়ার করিয়া ফেইসবুকের আকাশ বাতাস ভারি করিয়া তুলিতেছেন। এইবার আমি সত্যি ভাবিতে বসিলাম – আসলেই কি ক্ষতি হইয়া গেলো?

মোবাইল ফোনের তীব্র আর্ত চিৎকারে আমার ভাবনায় ছেদ পড়িল। স্ক্রিনে ভারিয়া উঠিল ঠেলাকাকার নাম। এই সময়ে ঠেলাকাকা? তাজ্জব! বিকেল পাচটার আগে তো ঠেলাকাকার আপিস ছুটি হয় না। ইত্যাদি ভাবিতে ভাবিতে আমি কল রিসিভ করিলাম

- তুরা এত খাইস্ট্যা ক্যা? বলদের বলদ, নিজে তো ফুন করছ না-ঐ, হেতার উপ্রে কেউ ফুন করলে ঐডা রিসিভ করছ নমুনা পুন-মাইরা। - টানা এইভাবেই আমাকে ঝাড়িল ঠেলাকাকা

- ইয়ে মানে, আমি ইট্টু ভাবতাছিলাম কাকা

- কবে থেইক্কা?

- আজকের থেইক্ক্যাই। বাল মরছে

- কান্নাকাটি করতাছত নাকি ?

- বাল

- কাল তো ছুটি পামু রে মনে লয়, আইজ রাইতে পুষায়া লামু। যাক এমন বাল কটা মাঝেমধ্যে মরলে উইক ডেজ-এ ছুটি পাওয়া যায়; কিন্তু হালার হালায় মরছে এমন দিনে যে পরের দিন রবিবার, এইডাই ভাল্লাগেনা

আমি টুবলা এবং উহার পিতার বেত্তান্ত কাকাকে শুনাইলাম। সব শুনিয়া কাকা ভালো মন্দ কিছুই বলিল না। সন্ধ্যার সময় ঠেকে উপস্থিত হইবার জন্য বলিয়া ফোন কাটিয়া দিল

দুই ঘণ্টা পর ঠেকে পৌঁছাইয়া খানিকটা অবাক হইলাম। ঘণ্টা, টুবলা সহ ঠেলাকাকা সবাই উপস্থিত। এবং দুই রাউন্ড চোলাই অলরেডি ঢালা হইয়া গেছে। বাল ছাবের মৃত্যুতে এই মাতম কিনা তাহা ভাবিয়া উঠিতে পারিলাম না

আমি চারমিনার ধরাইয়া মোড়া লইয়া বসিলাম। সবাই কেমন জানি গম্ভীর হইয়া সুরা পানে ব্যস্ত। আমার দিকে আড় চোখে তাকাইয়া কাকা বোতল খালি করিল। এবং আমার দিকে গেলাস বাড়াইয়া দিল। আমি কাউকে না ঘাটাইয়া চুপচাপ গেলাসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করিলাম

দুই মিনিটও গত হইল না হঠাত ঠেলাকাকা টুবলার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিয়া উঠিলেন – ইউ ... ( ইউ অক্ষরটি ঠেকের চালা ঘরে গর্জন করিয়া উঠিল। ) ইউ, টুবলা। তুই কইতে চাইতাছত বাল সাহেব ঠাকরে দেশের জন্য অনেক ভালা কাম কইরা গ্যাছে। হাউ ? ... বুঝিলাম এর আগে এদের মাঝে বাল ছাহেব’রে নিয়া অনেক বাদানুবাদ হইয়া গেছে

- দ্যাখ, কাকা, উনি হিন্দু ধর্মের লাইগ্যা, মারাঠি জাতির লাইগ্যা নিজের জীবনডা উৎসর্গ করছিল। ... টুবলা বলে

- তুই হিন্দু ? – ঠেলাকাকা শোধায়

- না, মানে। আমি ‘সর্ব ধর্ম’ ধারনায় বিশ্বাস করি ... কিন্তু ...

- কিন্তুডা কিতা ?

- না, মানে, পারিবারিক, সামাজিকতা ইত্যাদি অনেক জিনিষ তো মাইন্যা চলতেই হয়; তাই না ?

হরিমোহন বিড়িতে লম্বা একটা টান মারিয়া কাকা কহিল – পরিবারের তাস খেলিস না টুবলা, নিজের কথা ক, তুই নিজেই ভিত্রে ভিত্রে একটা রাম ছাগল; এইডা কি তুই নিজে বুঝতে পারতাছত?

ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া টুবলা আমতা আমতা করে বলিয়া উঠে – মানে ?

- মানে আবার কিতা। বাল ছাহেব এর জীবন চরিত তুরে নূতন কইরা শোনাইতে অইব না কিতা? হালার ঘরের হালা তুই নিজেরে এথিস্ট, আর সেকুলার ধারণার বিশ্বাসী বইল্যা চালাছ, কিন্তু হিন্দু ধর্মের লাইগ্যা তোর পরাণ কান্দে

আমি বলিলাম – কাকা দেশটাতে যেহেতু হিন্দুদের আধিক্য বেশী তাই মানুষ একটু হিন্দু ধর্মভাবাপন্ন অইবই

বিড়ি ফেলিয়া কাকা আরেক গেলাস মদ ঢালিতে গেল। অন্যদিকে টুবলা গোমড়া মুখ করিয়াছে, ঘন্টা আজ মদ খাচ্ছে না, এমন কি তাহার গঞ্জিকার বাতিক আজ কোথায় যে লোপ পাইয়াছে তাহা ঠাহর করিতে পারিলাম না। তবে উহাকে দেখিয়া মনে হইল আমার আসিবার পূর্বেই কয়েক ছিলিম টানিয়া লইয়াছে। একমাত্র ঠেলাকাকাই একের পর এক গেলাস শেষ করিতেছে

এক টানে আরেকটা পেগ শেষ করিয়া কাকা কহিলেন – হিন্দুয়ানীর চোডে যে দেশটা রসাতলে যাইতাছে ঐডা তোগো চোখে পড়ে না। আমি না হয় দড়ি টাইন্যা বিএ পাশ করা মাল, কিন্তু তোরা সভ্য, সুশিক্ষিত হইয়াও যখন অব্ধের মতো বালছাল কথা কস, তখন সত্যি ভাবি দেশটা আজ কোন যায়গায়

ঘণ্টা বলিল – কোন যায়গায়?

- তোর বাপের মাথায়। হারামজাদা গাঞ্জারি...

আমি বলিলাম – কাকা একলা টুবলাকেই দোষ দিলে তো হবে না। আসলে আমরা বড় হয়েছি এমন একটা পরিবেশে যেখানে আমাদের ছোট থেকে ধর্ম এবং জাতকে মানতে শেখানো হইছে। পরিবারতন্ত্রের দ্বারা এই জিনিষগুলি আমাদের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হইছে

- তাই বইল্যাই তো আজ এই হাল। মানুষের জাত্যাভিমান এখন তার বোধ, ত্যাগ, তিতিক্ষা, সংযম, আত্ম সমালোচনা, মানবিকতা ইত্যাদির চাইতে অনেক বেশী হইয়া গেছে। ধর্মপ্রাণ ভারতীয়রা অহন একবিংশ শতাব্দীর শেষে ঈশ্বরকে কুর্নিশ জানাইতে ব্যস্ত

ঘণ্টা আবারও বলিয়া উঠিল – কুর্নিশ কোন যায়গায় ?

ঠেলাকাকা চিৎকার করিয়া উঠিল – তোর বাপের বারিন্দায়, হারামি

কাকার মনোযোগ ফিরাইতে আমি বলিলাম – কাকা, ধর্ম আর ধার্মিক এর মিল যেখানে, সেখানে তো মৌলবাদ নাও সৃষ্টি হইতে পারে?

কাকা আমার মুখের কথা কাড়িয়া নিয়া কইল – হ, সৃষ্টি নাও হইতে পারে। তবে সৃষ্টি হয় বাল সাহেবের মতো ছাগল নেতা আর টুবলা ও তার বাপের মতো আকাট মূর্খ। মহারাষ্ট্রে বালের বাল ছিঁড়তে পারব এমন কোন লোক আছিল না। পুলিশ, সরকার, যখন সংবিধানকে ছাইড়া একজন অতিমাত্রায় ধর্মান্ধ আস্তিক এর পা চাটতে শুরু করে এবং দশকের পর দশক সেই আবাল সেই ক্ষমতার ডাণ্ডা হাতে লইয়া যা খুশি তা করে তখন বুঝন দরকার --- আমরা কোন যায়গায় পৌঁছাইয়া গেছি। আর বেশী দেরি নাই, ইট্টু সবুর কর। বাল তো গেলো কোন চাপ নাই, দেশের বৃহৎ মৌলবাদীদের সর্দার, খুনি - নারু মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হইল বইল্যা

প্রায় নিভিয়া যাওয়া টুবলা শিব রাত্তিরের সলতের মতো জ্বলিয়া উঠিল – কিন্তু আপনে তো উনার হগল কিছু খারাপ কইতেছেন। পাকিস্তানিদের উনি ঘৃণা করতেন। তাছাড়া মহারাষ্ট্রের মানুষের লাইগ্যা তিনি অনেক কিছু করছেন

- বাল করছেন। আর পাকিস্তানরে গালি দেওয়া তো ধর্মীয় প্রোপ্যাগান্ডা লাভের একটা কৌশল। মহারাষ্ট্রে ওর অন্ধভক্তির কারণ একটাই। বাল সাহেব এইডা ধরতে পারছিল মানুষ নিজের জাতরে নিয়া বড় পিছলা হয়। ঐ পিছলা যায়গাটাতেই তিনি কোমলভাবে কুড়াল এর কোপ মারেন। আর মানুষ পাইছি পাইছি কইয়া তারে বানায়া দেয় ঈশ্বর। আর ঈশ্বর তাদের হইয়া তালেবানি স্টাইলে নোটিশ লাগায় – মহারাষ্ট্রে থাকতে গেলে, কাজ পাইতে হইলে মারাঠি জানতে হইব। বোকাচোদা পাবলিক মনে করে এইডা দিয়া মারাঠির উন্নয়ন। কিন্তু যেই জাতি অন্ধ ভ্রমে মজে গিয়া চোখে ঠুলি পইড়া ঠিক-বেঠিক এর হিসাব করতে ভুইল্যা যায় – তাদের ঠকানো অনেক সহজ এইডা বাল সাহেব বুইঝ্যা গেছিল। শালা আম আদমির হয়ে ঐ শালা কি করছে? মিডিয়ার লাইম লাইটে আসার লাইগ্যা ওরা কখনো বলিউডরে নিয়া ফালায়, আবার কখনো পাকিদের আশ্রয় নেয়, আবার কখনো বড় কোন শিল্পপতির অন্দরমহল নিয়া আপত্তি তোলে। এই সবের মাঝখানে আম আদমির যায়গা কই? মাফিয়াগিরির বাপ আছিল তোর ঐ বালাসাহেব

আমি আর কিছুই বলিতে পারিলাম না। চুপ করিয়া গেলাম। টুবলা চুপ, ঘণ্টা এদিক সেদিক বেকুবের মতো কি জানি নিরীক্ষণ করিতেছে। কাকা বিড়ি ধরাইয়া আবার কয়েক পেগ গলার নিচে ঢালিয়া দিলেন। চোখগুলি উনার আগুনের মতো জ্বলিতেছে। আমাদের আড্ডায় এমন নিস্তব্ধতা থাকেনা কখনই

অবশেষে নীরবতা ভাঙিয়া ঠেলাকাকা বলিয়া উঠিলেন -
এক আবাল মৌলবাদীর মৃত্যুতে দেশের মানুষের বুক চাপড়াইয়া কান্নায় ভাইঙা পড়তে দেইখ্যা মনে হয় – হালায় গোটা দেশের মইধ্যেই তো ছাগলে ভরা। মৌলবাদীরে শ্রদ্ধা করলে নিজের ভেতরের সজীবতার শ্রাদ্ধই করা হয়। এক বাল মরলে কি হইছে আরও হাজার হাজার বাল শিবের লিঙ্গ উঁচাইয়া দাপাইতাছে অবিরাম। ...

২০.১১.১২.


মন্তব্য

স্বপ্নহারা এর ছবি

এক আবাল মৌলবাদীর মৃত্যুতে দেশের মানুষের বুক চাপড়াইয়া কান্নায় ভাইঙা পড়তে দেইখ্যা মনে হয় – হালায় গোটা দেশের মইধ্যেই তো ছাগলে ভরা। মৌলবাদীরে শ্রদ্ধা করলে নিজের ভেতরের সজীবতার শ্রাদ্ধই করা হয়। এক বাল মরলে কি হইছে আরও হাজার হাজার বাল শিবের লিঙ্গ উঁচাইয়া দাপাইতাছে অবিরাম। ..

চলুক

সহমত!

আমি হিন্দি বাল ভাল পাই কিন্তু হিন্দু বালের উপর একদলা থুতু দেই।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

তাপস শর্মা এর ছবি

আমি হিন্দি বাল ভাল পাই কিন্তু হিন্দু বালের উপর একদলা থুতু দেই।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
কেউ কিছু লেখে না দেখে বাল কাকাকে নিয়া শেষ পর্যন্ত আমি লেখা শুরু করছিলাম। আপনি লিখে আমার কষ্ট কমায়ে দিলেন।

তাপস শর্মা এর ছবি

আমারটা হঠাত করেই লেখা। মাথায় ছিল, নামালাম। আপনি লেখেন প্লীজ ...

অরফিয়াস এর ছবি

বৃহত্তর জামায়েতে ইসলামীর ক্ষুদ্রতর বিএনপি শাখার ভারপ্রাপ্ত মহিলা আমীর, বড় এবং ছোট উভয় গণতন্ত্রের আম্মিজান, দেশের দুঃসময়ের কান্ডারী বেগম জিয়া ঘোষণা করেছেন আরেকবার তাকে ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিলে তিনি দেশের চেহারা পাল্টে দিবেন। আমি শঙ্কিত এই ঠেলায় দেশটাই বদলে যায় কিনা !! তাকে নিয়েও কিছু লিখুন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তাপস শর্মা এর ছবি

চলুক

পাল্টে দেবার স্বপ্ন দেখিয়ে আমাদের মমতা দিদি যে দিদিগিরি দেখাচ্ছেন সেটাও স্মরণীয়

সাইদ এর ছবি

এনশাল্লাহ্‌ বলেন চোখ টিপি

তাপস শর্মা এর ছবি

শুকরিয়া খাইছে

অরফিয়াস এর ছবি

মহাবালেশ্বর এর মৃত্যুতে বৃহৎ গণতন্ত্রের এহেন মাতমে আসলেই অবাক লাগে !! একজন উগ্রপন্থী মৌলবাদী সন্ত্রাসীর কাছে নতজানু হয়ে থাকাটা কি করে উন্নয়নের বাহক হয় আমার বোধগম্য হয়না, বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ভালো বলতে পারবেন।

নরেন্দ্র মোদীর জন্য আমার অনেক পরিচিতই দেখলাম প্রচারণা করে চলেছেন। উনি নাকি ভারতকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন যেখানে তাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবেনা। ভারতের তরুণ প্রজন্মের এমন মানসিক উন্নতি আমাকে যারপরনাই তাজ্জব করে দিয়েছে !!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তাপস শর্মা এর ছবি

অবাক হবার কিছুই না। জাত্যাভিমানী আকাট মূর্খদের কাছে এরা হিরো। এটা বুঝতেই পারছ। তুমি তো ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অংশটা দেখেছ। সেখানে মানুষদের মানসিকতা তো দেখেছ কি আর বলব। ঠাকরে শুরু করেছিল ( ষাটের দশকে ) গরিবের মসিহা টাইপের রাজনীতি দিয়ে, এবং ধীরে ধীরে সেটা পূর্ণতা পায় ধর্মীয় এবং রেসিস্ট আস্ফালনে। লোকটার দূরদর্শিতা ভয়ানক। মারাঠা জাতির জাত্যাভিমানকে উস্কে দিয়ে ফায়দা লুটে গেছেন অনায়াসে। এমনকি মরার আগেও ছেলে উদ্ভব ও ভাতিজা রাজ ঠাকরে'কে মিলাতে চেষ্টা করে গেছেন। আর মিডিয়া এবং বিজ্ঞ ব্যাক্তিদের কাছে বালের মতো নেতারা হলেন যথাক্রমে ধান্দা ও আনুগত্য

০২

মোদি হলেন একটা অন্য কিসিমের ক্রিমিন্যাল । গুজরাট এর বাঞ্জর জমিতে সোনা ফলিয়ে উন্নয়নের ঝান্ডাটা নিজের কুক্ষিগত করেছেন। এরপর একটা 'ব্যাক্তিত্ব' ( কথিত আছে ) ফুটিয়ে তুলেছেন আম আদমির মনে। বিজেপির অভ্যন্তরে ভয়ানক প্রভাব ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কোলের সন্তান। কিন্তু একটা জিনিষ আসলেই আমার বোধগম্য হয়না, আসলেই ভারতের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিনাঞ্চল এর মানুষদের মানসিকতাকে এখনো আমি বুঝে উঠতে পারি না। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম গণহত্যার মাস্টারপ্লেনকারী এই মৌলবাদীটাকে মানুষ পছন্দ করে কি করে ??

মণিকা রশিদ এর ছবি

এইগুলান নিয়া ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেও ভায়া, পুলিশ আইস্যা ধইর‍্যা লয়া যাইবেনে!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

তাপস শর্মা এর ছবি

সবে তো শুরু... গণতন্ত্র আরও কি দেখায় কে জানে। আমি দিয়েছি তো এই লেখাটা দেয়ালে

দিদি, এখনো একটা ঘটনা বলিনি। আমি নিজেই ধন্দে আছি এই নিয়ে । কয়েকদিন আগের ঘটনা। ইরম শর্মিলা চানুকে নিয়ে লেখার পর এবং আমার ফেসবুকের টাইম লাইনে - SAY NO TO AFSPA ব্যানার লাগানোর পর দেখি আমার টাইম লাইন ছবি চেইঞ্জ হয়ে যায়, মানে ওটা থাকেনা এবং এরপর দেখি গায়েব হয়ে যায়, আবার অনেক সময় ধরে আমার একাউন্ট থেকে ফেসবুক এক্সেস করতে পারি না। এখন আজ আবার চেক করে দেখলাম ফেসবুকে আমার লগইন না করে কেউ আমার ফেসবুক আইডি দেখতে পারেনা, আমি নিজেই চেক করে দেখলাম দেখতে পারি না। কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। তবে যতটুকু বুঝলাম তৃতীয় হাত পড়ছে আমার ফেবু আইডির উপর

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মণিকার ভয় দেখানি ঠিকাছে
Two girls arrested for Facebook post questioning 'Bal Thackeray shutdown' of Mumbai

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তাপস শর্মা এর ছবি

আমি সেটা দেখেছি দাদা। খবরটা প্রচারিত হবার সাথে সাথেই দেখেছি। এই নিয়ে সতিশ আচারিয়া র করা কার্টুন নিয়েও বেশ হৈ চৈ হচ্ছে

এমনই একটা কার্টুন শেয়ার করলাম

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এই একটা ঘটনায় ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিক্রিয়া দেইখা বামফ্রন্টের সাথে বাকিদের পার্থক্য বুঝা যায়।

তাপস শর্মা এর ছবি

বেশী পার্থক্য নাই দাদা। বামবাদীরাও ক্ষমতার প্রয়োজনে মৌলবাদীদের সাথে ( বিজেপির সাথে মাঝেমাঝে সখ্যতা ) একই মঞ্চে বসে পড়েন। খুব খিয়াল কৈরা। চোখ টিপি তবে হ্যাঁ, আদর্শের দিক থেকে আলাদা সেটা অবশ্যই বলা যায়

দিগন্ত এর ছবি

আপনার সাথে সহমত। কেন দেশে শক্ত বামপন্থী হাত দরকার সেটা এতেই পরিষ্কার।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তাপস শর্মা এর ছবি

বাম শাসনের পক্ষে আমিও। কিন্তু বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বামেদের তাদের আদর্শ খানিকটা চেইঞ্জ না করলে মানুষের আনুগত্য লাভ করাটা মুশকিল হবে। ভারতের মতো বহু জাত, বহু ধর্ম, বহু বিশ্বাস এর দেশে সমাজতন্ত্র একটা অলীক কল্পনা মাত্র। বাস্তবটা বুঝতে হবে, সমাজতন্ত্রের কেনেস্ত্রা পিটিয়ে এখন আর লাভ নেই, তাই সমাজতন্ত্রের ঢোল না পিটিয়ে গণতন্ত্র এর পক্ষে জোড় আওয়াজ তোলাটাই সঙ্গত। একদিকে চিন ডুবে যাচ্ছে। মানুষের সমাজতন্ত্রের উপর থেকে বিশ্বাস সরছে, সেই অবস্থায় সমাজতন্ত্রের গোঁ ধরে বসে থাকলে কোন লাভ হবেনা। তাই বামপন্থার শ্লোগানেঃ স্বাধীনতা - গণতন্ত্র - সমাজতন্ত্র ... থেকে সমাজতন্ত্রটা সরিয়ে দেওয়াটয়াই ভালো হবে। তাছড়া বামেরা যেহেতু পুঁজিবাদ এর স্বঘোষিত বিরোধী, সেই ক্ষেত্রে গণ বন্টন এর একটা নূতন রূপরেখা এঁদের হাত ধরেই তৈরি হতে পারে

সাইদ এর ছবি

এক বাল লোকান্তরে
লক্ষ বাল ঘরে ঘরে

তাপস শর্মা এর ছবি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি আবার জিগায়

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তারেক অণু এর ছবি

মৌলবাদীরে শ্রদ্ধা করলে নিজের ভেতরের সজীবতার শ্রাদ্ধই করা হয় উত্তম জাঝা! গুল্লি

তাপস শর্মা এর ছবি
সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

উত্তম জাঝা!

চলুক ঠেলাকাকা...

তাপস শর্মা এর ছবি

থেঙ্কু হাসি

চালাবার ইচ্ছে আছে

দিগন্ত এর ছবি

বাল থ্যাকারের পাশাপাশি আমি মারাঠাদের মৌলবাদের চর্চা নিয়েও কিছু আলোকপাত করতে চাই। ইংরেজরা আসার আগে উপমহাদেশে শেষ সর্বভারতীয় শক্তি ছিল মারাঠারা। তার আগে ছিল মুঘলরা। "আমরা এককালে বাকিদের শাসন করেছি, অতএব আমরা অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর" - এই ইগোটা মারাঠা ও মুঘলদের উত্তরসূরীদের মধ্যে দেখা যায়। মারাঠাদের ক্ষেত্রে এই ইগোর বহিঃপ্রকাশ রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে শিবসেনা ও তার নেতা বাল থ্যাকারে। মুঘলদের উত্তরসূরী বর্তমান পাকিস্তান। ইগোকে চাষ করে তার থেকে মৌলবাদের জন্ম দেবার কাজটা বাল থ্যাকারে সুচারুরূপেই করে গেছেন। এখন তার ফেলে যাওয়া গারবেজ কে পরিষ্কার করে সেটাই দেখার বিষয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তাপস শর্মা এর ছবি

চলুক চলুক

"আমরা এককালে বাকিদের শাসন করেছি, অতএব আমরা অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর" - এই ইগোটা মারাঠা ও মুঘলদের উত্তরসূরীদের মধ্যে দেখা যায়। মারাঠাদের ক্ষেত্রে এই ইগোর বহিঃপ্রকাশ রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে শিবসেনা ও তার নেতা বাল থ্যাকারে।

একেবারেই। মারাঠিদের ভেতর এর জাত্যাভিমানটাকেই নিংড়ে নিজের রাজনীতির ময়দান সাজিয়েছিলেন বালাসাহেব ঠাকরে

০২

পরিষ্কার করার তো প্রশ্নই উঠেনা। বরং দুয়ে দুয়ে চার হবে কিনা সেটাই দেখার। ঠাকরের উত্তরাধিকার এখন কার হাতে যাবে সেটাই দেখার। উদ্ভব ঠাকরের সাথে মত বিরোধ এর কারণে রাজ ঠাকরে শিবসেনা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে গঠন করল মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা। এর ফলে ক্ষতি উভয় পক্ষের হচ্ছে। ভোটে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। প্রত্যেকের নিজস্ব গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেছে এবং স্ব স্ব গোষ্ঠীর আলাদা ভোট ব্যাঙ্ক দুইভাগে বিভক্ত। ফলে কিছুটা রাজনৈতিক সংকট দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই রয়েছে। তবে ইগোর লড়াই শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন বালাসাহেব; কিন্তু পারেন নি। যদি বালাসাহেবের 'টাইপ' কেউ বলা হয় তাহলে রাজ ঠাকরে তার কাকার মতোই সেই রকম পাবলিক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিরস বদনে তাপস শর্মা কয়
জগত ভরমিয়া দেখি সবই বালময়...

তাপস শর্মা এর ছবি

দেঁতো হাসি

লীলেন্দা রক্স

নিলয় নন্দী এর ছবি

হালার ঘরের হালা তুই নিজেরে এথিস্ট, আর সেকুলার ধারণার বিশ্বাসী বইল্যা চালাছ, কিন্তু হিন্দু ধর্মের লাইগ্যা তোর পরাণ কান্দে

হাততালি হাততালি হাততালি

বাংলাদেশে ফেসবুকে আমি হিন্দু আর কি কি সব পেজ যেন আছে।
এদের বাল খাইছে বিষয়ক দাপাদাপি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।

তাপস শর্মা এর ছবি

হুম। এই পেইজগুলি কয়েকটা আমি দেখেছি অনেক আগেই। তাছাড়া ব্লগস্পটে তাদের সাইটও দেখেছিয়াম। বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থান ও তাদের পরিস্থিতি নিয়ে সওয়াল করতে দেখেছি ওদের, পাশাপাশি হিন্দু ধর্মের প্রচার ও প্রসার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাল ঠাকরে যা বিশ্বাস করতো বা মনে মনে চাইতো মোটামুটি সেটা সে প্রকাশ করায় তাকে কনফ্রন্ট করাটা অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুতে যেসব মানুষদেরকে মাতম করতে দেখা যাচ্ছে এতদিন ধরে তাদের এই চেহারাটা লুকানো ছিল - এদের কনফ্রন্ট করা কঠিন। ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা, উদারমানসের সব মুখোশ খসে পড়ে যখন একটা দিল্লীকাণ্ড (১৯৮৪) আসে, একটা অযোধ্যাকাণ্ড আসে, একটা গোধরাকাণ্ড আসে।

এক গুজরাতী যুবক আমাকে অনেক কিছু বলে, বুঝিয়ে মানাতে না পেরে শেষে বলে, "তুমি একবার গুজরাতে আসো। আমি তোমাকে ঘুরিয়ে দেখাবো। তাহলে তুমি বিশ্বাস করবে নরেন্দ্র মোদী'র আমালে গুজরাতের কত উন্নয়ন হয়েছে - আমরা কতো ভালো আছি। তোমরা কিছু না দেখেই কেবল অভিযোগ করো। আমাদের কোন অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে"। যুবকটি বিজেপি/শিবসেনা/হিন্দু মহাসভা জাতীয় কোন সংঘের সমর্থক নয়, আচার-আচরণে গোঁড়ামী নেই, এমনকি সে হিন্দুও নয়। আমি হতবাক - শিক্ষিত মানুষও কতোটা অন্ধ হতে পারে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

দিগন্ত এর ছবি

ওনাকে হিটলারের আমলে জার্মানীর উন্নতি দেখাতে নিয়ে গেলে ভাল হত। অবশ্য বাল থ্যাকারে হিটলারের স্বঘোষিত ফলোয়ার ছিলেন, সুতরাং সে তাতে আরও গর্ববোধ করতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তাপস শর্মা এর ছবি

ওনাকে হিটলারের আমলে জার্মানীর উন্নতি দেখাতে নিয়ে গেলে ভাল হত। অবশ্য বাল থ্যাকারে হিটলারের স্বঘোষিত ফলোয়ার ছিলেন, সুতরাং সে তাতে আরও গর্ববোধ করতে পারে।

ঠিক। এই গর্ববোধটা কোত্থেকে আসে সেটা মনে হয় গবেষণার বিষয়। কারণ অসাম্প্রদায়িক মানসিকতায় বিশ্বাসী একটা মানুষ যখন কোন যুক্তির তোয়াক্কা না করে একটা সাম্প্রদায়িক শক্তি কিংবা ব্যাক্তিকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে ও সমর্থন দেয় তখন সত্যি হিসেব মেলাতে পারিনা। না জেনে করে থাকলে ঐ ব্যাক্তিকে জানানো যায়; কিন্তু সব যুক্তিকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে গোঁ ধরে সমর্থনটা ঠিক কি করে আসে তাই বুঝি না। আসলেই বুঝি না

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

বাল ঠাকরে যা বিশ্বাস করতো বা মনে মনে চাইতো মোটামুটি সেটা সে প্রকাশ করায় তাকে কনফ্রন্ট করাটা অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুতে যেসব মানুষদেরকে মাতম করতে দেখা যাচ্ছে এতদিন ধরে তাদের এই চেহারাটা লুকানো ছিল - এদের কনফ্রন্ট করা কঠিন। ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা, উদারমানসের সব মুখোশ খসে পড়ে যখন একটা দিল্লীকাণ্ড (১৯৮৪) আসে, একটা অযোধ্যাকাণ্ড আসে, একটা গোধরাকাণ্ড আসে।

চলুক

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তাপস শর্মা এর ছবি

মাতমটা হচ্ছে বিভিন্ন কিসিমের। এরও প্রকারভেদ আছে

এক - ভয় থেকে। বালাসাহেব এর প্রভাব এতটাই বিস্তৃত ছিল যে এক সময় এটা বলা হতো মুম্বাই এর মানুষ শ্বাস নেয়, মুম্বাই এ সূর্য উঠে বালাসাহেবের ইশারায়। সেই ভয় মানুষকে শ্রদ্ধা করতে মাতম করতে বাধ্য করাচ্ছে

শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস - বালাসাহেবকে অন্ধভাবে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করার লোক প্রচুর। এরা সাদা কালো কিছুই বুঝে না বুঝে শুধু বালাসাহেবের হুকুম

তিন - লোক দেখানো মাতম। এই শ্রেণীর লোকেরা বেশীর ভাগই পলিটিক্যাল ও কর্পোরেট সেক্টারের লোক। মাতম এর উদেশ্য রাস্তা ক্লিয়ার রাখা

চার - বলিউডি মাতম। মুম্বাই মানেই বলিউড ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানকারও একটা বিরাট অংশের সর্দার ছিলেন বালাসাহেব। কতটা ক্ষমতা থাকলে সারা বিশ্বে চলা একটি চলচ্চিত্রকে এক লহমায় মুম্বাইতে বন্ধ করে দিতে পারেন বালা সাহেব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ( আমি 'মাই নেম ইজ খান' এর কথা বলছি )। পরে ছবির পরিচালক করণ জোহরকে বালা সাহেব এর দরবারে হাজিরা দিতে হয়

বালাসাহেব মরে গেলেও তার গড়ে দেওয়া সাম্রাজ্য অক্ষুণ্ণ আছে; এবং ভবিষ্যতে তা বহাল তবিয়তেই থাকবে। তাই মাতম করা লোকেরাও নিজেদের আখের বুঝে নিতেই মাতম করে যাচ্ছে।

একটা কথা মনে হয় আমরা ক্ষমতাবানকে ক্ষমতা দেই, এবং তারপর সেই ক্ষমতাধর এর কাছে ঝুঁকে থাকতে পছন্দ করি। আর যারা ঝুঁকতে চায়না তাদের জীবনটা আস্তাকুড়ে পরিণত হয়

০২

মোদিকে নিয়ে আমারও বন্ধু মহলে অনেক মত পার্থক্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই নিয়ে ঐ অঞ্চলের অনেক ছেলেমেয়ের সাথে আমার কথা হত। আশ্চর্য ওরাও মোদীকে সমর্থন করে; অথচ এরা ঠিক '' বিজেপি/শিবসেনা/হিন্দু মহাসভা জাতীয় কোন সংঘের সমর্থক নয়, আচার-আচরণে গোঁড়ামী নেই, এমনকি সে হিন্দুও নয়।'' তাছাড়া শিক্ষিত ও সেকুলার ধারনায় বিশ্বাসী যুবক/যুবতীদের আমি দেখেছি জোর গলায় মোদীকে সমর্থন দিতে। অদ্ভুত লাগে। এদের যুক্তি দিয়ে বুঝালেও কোন লাভ হয় না, সব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। শুধু মোদী ইস্যু নয়, এমন অনেক বিশ্বাসের জায়গাতেই দেখি মানুষ বড্ড রেসিস্ট, অথচ এরা আবার জীবন ধারায় সেইভাবে রেসিস্ট নয়। কি অদ্ভুত দ্বিচারিতা। সব কিছুর বাইরে গিয়ে আমার একটাই প্রশ্ন - দেশের ইতিহাসের পাতায় রক্তে ঢেকে যাওয়া গণহত্যার মাস্টারপ্লেনকারী মৌলবাদীকে সমর্থনটা আসে কোথায় থেকে? নিশ্চয়ই হৃদয় থেকে নয় ... কারণ যদি সেটা মন থেকে আসে তাহলে সেটা কলুষিত হয়ে গেছে

অতিথি লেখক এর ছবি

সব ধর্মীয় বালদের উপরে একদলা থুতু।

-অয়ন

তাপস শর্মা এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

একজন টুবলাকে দোষ কিভাবে দেই? যেখানে একজন অমিতাভ, লতা মুঙ্গেশকরকে যখন বালের শোকে মাতম করতে দেখি তখন নিজের শিক্ষা, বিবেক বুদ্ধির উপরই সন্দেহ দেখা দেয়। এরাই আবার নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনা হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় থাকেন আর আমরা সেটা মেনেও নেই।

লেখাটা ভালো লাগলো। আশা রাকি এর কারণে আপনাকে খুব একটা বিপদে পড়তে হবেনা।

ফারাসাত

তাপস শর্মা এর ছবি

সবটাই দেয়া-নেয়ার খেলা আর কিছুই নয়। অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা এদের ক্ষেত্রে লাভ ও লোকসানের হিসেব আর বিশেষ কিছুই নয়

আপনাকে ধন্যবাদ ফারাসাত

দময়ন্তী এর ছবি

১) এমন সার্থকনামা ফার্স্টনেম সহসা দেখা যায় না। গালি দিতেও হয় না, নামটা ধীরেসুস্থে উচ্চারণ করলেই চলে হাসি

২) পুণেতে থাকাকালীন রাজ থ্যাকারের বিহারী খ্যাদানো একদম স্বচক্ষে দেখেছি। আমাদের অফিস এবং আরও বেশ কিছু অফিস হিঞ্জেওয়াড়ি মুভ করতে পারে নি, ১০-১১ মাস পিছিয়ে গেছিল সমস্ত নির্মাণশ্রমিক পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ায়।

৩) এমনিতে মারাঠীরা কুঁড়ের হদ্দ। অটোওলা ঠ্যাঙের ওপরে ঠ্যাঙ তুলে বসে থাকবে -- 'মি নাহি যাউইয়া' বলে ওদিকে কোনও উৎসাহী জাঠ অটোওলাকে এগোতে দেখলেই তেড়েফুঁড়ে উঠে ওকে তাড়াবার চেষ্টা করবে। যাত্রীরা মরুক এবারে।

৪) আর এই এক 'মারাঠী অস্মিতা'র নামে সব নালেঝোলে একাক্কার। ওদিকে বাড়ীতে দেখুন গে ছানাপোনারা মারাঠী বলতেও পারে না, লেখা তো দূর অস্ত্‌ নিজেরাও খুব একটা মারাঠীতে কথা বলেটলে না, ইংরিজিই বলে। তো, এই মাতৃভাষা বাদ দিয়ে অস্মিতাটি আসে কোত্থেকে আর থাকেই বা কিসে?

৫) প্রীতিশ নন্দী একবার দেখিয়েছিল এই যে মারাঠী মন্নুরা এত চেল্লায় বাইরে থেকে এসে সবাই সব কাজ নিয়ে নিচ্ছে বলে, তা মহারাষ্ট্রে বাইরের লোকের নিয়ে নেওয়া কাজ শতাংশের হিসেবে খুব খুবই কম। তারপর প্রীতিশ নন্দীকে শিবসেনার টিকিটে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে বালাসাহেব মাস্টার স্ট্রোকটি দেন।

৬) আজ সকাল সাড়ে সাতটায় পুণের জেলে আজমল কাসভের ফাঁসি হয়ে গেল। কি মজা দেখুন--- দুজনেই গণহত্যাকারী। একজনের শেষকৃত্য হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আরেকজনকে ঝোলানো ফাঁসিতে --- এর নাম ন্যায়বিচার। আর তাই নিয়ে ফেসবুকে মৃদু অসন্তোষ প্রকাশ করলে জেলে যেতে হয় -- তার নাম হল গণতন্ত্র।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

তাপস শর্মা এর ছবি

সহমত চলুক চলুক

বালের নামটাই সেই রকম দেঁতো হাসি

০২

বিহারী খেদানো থেকে শুরু করে অ-মারাঠীদের প্রতি অত্যাচার, চাকুরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ও ভয়ানক কট্টর জঙ্গি মানসিকতা, শ্রেণী বৈষম্য, - এগুলি শিবসেনার মূল হাতিয়ার

০৩

জাতীয়রতাবাদী হয়ে ভাষার জন্য রাজনীতি এটা যেন একটা ধান্দা আর কিছুই না

০৪

প্রিতীশ নন্দী থেকে শুরু করে 'সরকার' ও 'সরকার রাজ'খ্যাত রামগোপাল ভার্মা এরা একই পথের পথিক

০৫

সত্যি এরই নাম গণতন্ত্র। আমাদের সংবিধান একদিকে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার কথা বলে, অন্যদিকে ধর্মের নামে জাতের নামে গণহত্যা ও দাঙ্গা করা লোকদের বুক ফুলিয়ে চলার ছাড়পত্র দেয়, চাপাবাজি করার পথ ক্লিয়ার করে দেয়, সম্মান ও ক্ষমতা দেয়। অন্যদিকে বাক স্বাধীনতার অধিকার নামক একটা টার্ম যে কতটা ঠুনকো তা জীবনে চলার পথে কদমে কদমে দেখতে পাই ও অনুভব করি। এখন ফেসবুকেও আমাদের বন্দী করা হয় বাক স্বাধীনতা প্রকাশ করার দৌলতে ...... এটাই গণতন্ত্র; যেখানে 'গণ' (জনগণ, আম আদমির কন্ঠ ) নেই শুধু 'তন্ত্র' ( শাসক, ক্ষমতা ) আছে

মন মাঝি এর ছবি

৬) আর তাই নিয়ে ফেসবুকে মৃদু অসন্তোষ প্রকাশ করলে জেলে যেতে হয় -- তার নাম হল গণতন্ত্র।

মজার ব্যাপার হল খোদ মহাত্না গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নৈতিক বা মানসিক সমর্থন যোগালেও বোধহয় এরকম কোন শাস্তি হয় না, তাই না? হিন্দু মহাসভা বা অন্যান্য অতি ডানপন্থী/হিন্দ্বুত্ববাদীদের অনেকেই তো এখনও ওটাকে ঠিক কাজ ছিল বলেই মনে করেন ও বলেন। নাথুরাম এখনও এদের অনেকের কাছেই হিরো। নেটে (প্রিন্টেও) এরকম অনেক কিছুই পড়েছি বলে মনে হয়। কিন্তু কাউকে তো গ্রেপ্তার-টেপ্তার হতে শুনিনি আমার জীবদ্দশায়। অন্যভাবে বললে, গান্ধীর মৃত্যুকে (হত্যাকাণ্ড) জাস্টিফাই করা যাবে, অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করা যাবে, 'জাতির পিতা' (?) গান্ধীকে এক মুসলিম-তোষনকারী স্বজাতিদ্রোহী ভিলেন বানানো যাবে - এবং তাতে কোন অপরাধ হবে না, কিন্তু এই কোথাকার বাল ঠাঙাড়ের ব্যাপারে মৃদুতম অসন্তোষ প্রকাশ করলেও জেলে যেতে হবে??!!!

****************************************

তাপস শর্মা এর ছবি

এটাই সাদা রাজনীতি। এর বাইরে আর কিছুই নেই। এটাই সত্য। গণতন্ত্রকে নিজের মতো করে সাজায় ক্ষমতাসীন মানুষেরা। সংবিধান বাক স্বাধীনতার অধিকার দেয় কিন্তু বাক স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করার পর সেই স্বাধীনতার ফসল দেখাই যায়...

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ বদ্দা

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

উত্তম জাঝা!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ কবি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ঠেলাকাকা ঠেলাটা মারছেন ভালই ! চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

সব ঠেলাকাকার ইচ্ছে দেঁতো হাসি

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ কড়িকাঠুরে। লেখা আসছে না কেনো আজকাল আপনার?

সত্যপীর এর ছবি

আজকের থেইক্ক্যাই। বাল মরছে

- কান্নাকাটি করতাছত নাকি ?

- বাল

হো হো হো

চমৎকার চলুক

..................................................................
#Banshibir.

তাপস শর্মা এর ছবি

খাইছে

থেঙ্কু

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখায় গুরু গুরু সহ অজস্র তারকা। ঠেলা কাকা ভালো লাগছে তাপস দা ।

অমি_বন্যা

তাপস শর্মা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

আয়নামতি এর ছবি

এই লোকের জন্য শোক করা আর ঘোড়ার ডিম সমার্থক ব্যাপার!

তাপস শর্মা এর ছবি

ঘোড়াকে অপমান করা হচ্ছে না তো ? চোখ টিপি

স্যাম এর ছবি

আমার মনেই ছিলনা এই বাল বেচে আছে - মারা যাওয়ার পর মনে পড়ল!

তাপস শর্মা এর ছবি

খাইছে ...

নূতন ব্যানার কই স্যাম ম্যান ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।