অনেক দূর হেঁটে এসেছি বলে তো মনে হয়না। তবুও পেছনে তাকালেই দেখি মাইলের পর মাইল পথ। কত কথা বলার তো বাকি ছিল। কিন্তু ফুরিয়ে যাচ্ছে কেনো? কেনো 'কেউ কথা রাখেনি'? কেন সব পরবাস্তব আমার আস্তিনেই এসে ভিড় করে? কেন সব যায়গায় গিয়ে আমিই হেরে যাই? মানুষ হিসেবে বোধ আর প্রত্যয় নিয়ে শুধু 'মানুষ' হবার রাস্তাটা মসৃণ নয় সেটা অনেক আগেই জেনেছিলাম। কিন্তু কখনো কখনো এত ক্লান্ত লাগে কেনো? একটু আশ্রয় আমার জন্যে জুটেনা কেন? একটু খুশি তৈরি হতেই মন খারাপের সহস্র পরিযায়ী পরিন্দা বোকা কালো হয়ে ছুটে আসে কেন? আপনি তো লিখেই গেলেন নাদের আলীকে; কিন্তু আমি কাকে প্রশ্ন করব একবার বলবেন? একবার বলবেন কোন পথে হেঁটে গেলে আমি সুপ্ত দৃশ্যগুলিকে বন্দী করতে পারবো? ... সব একদিন মুছে যাবে। মিটে যাবে সময়ের সব ব্যাবধান। আমরা যেহেতু আমাদের ছায়ায় কাছেও একা তাই সময় আমাদের কখনো রাস্তা দেখিয়েও পেছনে ঠেলে নিয়ে যায়। আসলে আপনিই ঠিক সুনীল - 'কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখেনা।'..
প্রতিনিয়ত সংশয় আর দোলাচল ঘিরে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা নিয়ে ভয় প্রসব করে যায় যে ব্যাক্তি তাকে জীবিত বলা যায় নাকি মৃত? যদি আক্ষরিক অর্থে শ্বাস নেওয়াটাকেই কেউ বেঁচে থাকা মনে করে তাহলে আমি বলব - বোধ হয় নয়, সত্যি আপনি মৃত। আর যদি সেই ব্যক্তিই জীবনের রঙ দেখতে চায় অথচ সাহস করে একটা পদক্ষেপ নিতে পারেনা ? তাহলে ? ... ভ্রম, সংশয়, ভয়, বাঁচার তাগিদা এগুলি পরস্পর সংশ্লিষ্ট মনে হলেও মোটেও এক নয়, প্রত্যেকটি আলাদা 'প্রজেক্ট' ... আর এই নিয়ে ভালোবাসার সাতকাহন গায় যে ব্যক্তি সে কি তার বিপরীতে থাকা ব্যক্তি'টিকে প্রতারণা করছে, নাকি নিজেকে ?
বাঁচতে গেলে ঝুঁকি নিতেই হবে। যে নিতে জানেনা সে যতই 'বাহানা' বানাক না কেন প্রকৃতপক্ষে সে নিজেই একটা জড় বস্তু ভিন্ন আর কিছুই নয়
আসলেই কি মনের মানুষ বলে কিছু হয়? মনের মিল কি আদৌ হয়ে উঠে? কিছুটা হয়ত মিলে যায়, কিন্তু যাহা বাকি থাকে সেখানেই দাঁড়িপাল্লা ঝুঁকে যায়। এবং একতরফা হলে তো কথাই নেই। আর চলতেই থাকে অবিরাম নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্ব। লালন হয়তো বলেছিলেন - মনের মানুষকে খোঁজা মানেই নিজের মাঝে নিজেকে খোঁজা। কিন্তু আমরা কি তা নিতে পারি? জাগতিক সত্যের কাছে আমরা মনের মানুষ মানেই কাছের কাউকে খুঁজি। গৌতম ঘোষের 'মনের মানুষ' চলচ্চিত্রটায় যখন লালন এর ছন্দে 'মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে' গাইতে গাইতে শেষ হয় এবং আমি হল থেকে বের হব হব করছি তখনই আমার পাশের সিটে বসে থাকা এক ব্যক্তির বক্তব্য - 'আরে সিনেমা অখনো শেষ হয় নাই, অখন তো মনের মানুষ আইব' ( আমি সেটা শুনিনি, আমার পাশে বসা এক বন্ধু সেটা আমাকে পরে বলে )। চলচ্চিত্রটির উদাহারণ দেয়ার একমাত্র কারণ, আসলেই একটা মানুষ সেই চলচ্চিত্রটির ঐ দর্শকের মতই হ্যাপিজ এন্ডিংস এর খোঁজ করে। 'মনের মানুষ' এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ মাপতে মাপতেই জীবনটা ফুরিয়ে যায়। আর মাঝখানে 'এডজাস্ট' করতে করতে চলতে থাকে নিজের সাথে প্রতারণা করার সুনিপুণ অভিনয় এবং তার যথাযথ মঞ্চায়ন। মনের মানুষ আর মিলে না। কারণ এই পৃথিবীতে 'মনের মানুষ' এর খোঁজ করাটাই একটা ভ্রম
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বড় হয়েছি বলে পাহাড় আর পাহাড়ি নদীর সাথে সখ্যতা সেই অনেক দিনের। আপাত দৃষ্টিতে একটা 'শান্তি' বলে যদি কোন কিছু থেকেই থাকে তাহলে সেই শান্তি লুকিয়ে আছে পাহাড়ের প্রতিটি স্পর্ধায়। আমি ত্রিপুরার মানুষ। এখানে পাহাড় বেয়ে গর্জন করা স্রোতের সাথে আমার পরিচিতি সেই শৈশব থেকেই। আমাদের একটা নদী আছে। আমাদের গোমতী আছে। গোমতী নদীর স্পর্শে বড় হয়ে উঠা। এই নদীর সাথে অনেক কথা বলা। এই নদীর বুকে কান্না ঢেলে দেওয়া। ক্যামেরা হাতে নিয়ে কখনো কখনো গেলে এক এক সময় এক একটি চিত্রকল্প ভেসে উঠে। সবুজের বুকে, জলের অতলে মিশে থাকা কিছু সাদামাটা মানুষ...
০২
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি | flickr
যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো... | flickr
চলে যাই ওপারে... অনেক দূরে | flickr
যেখানে নিস্তরঙ্গ সময় সেজে থাকে | flickr
১২. ০১. ১৩.
মন্তব্য
চমৎকার লাগলো নদী প্রেম, নদী কথন।
নদীর সাথে আপনার মতন আমাদেরও নিত্য সহবাস। নদী জুড়ে আছে আমাদের গোটা অস্তিত্বের সাথে। পদ্মার সাথে আমাদের বেড়ে ওঠা আছে, পদ্মার সাথে আছে বিস্তর কথপোকথন। নদীর সাথে আছে মান অভিমান, নদীর সাথে আছে খ্যাপাটে পাগলামি। আমাদের শিরা উপশিরার সাথে পদ্মার জলের মিশেল আছে, আমাদের রক্তের সাথে ধমনির সাথে পদ্মার দিগন্ত বিস্তৃত সম্পর্ক আছে।
তাই গোমতীর মানুষের সাথে আছে আমাদের আত্মার যোগ। সব নদীকুলের মানুষরাই আমাদের পরম আত্মীয়।
-মনি শামিম
অনুভূতিগুলি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে...
ঠিক। গোমতীর সাথে পদ্মা এবং আপনার সাথে আমার এবং এইভাবেই আমাদের আত্মিক যোগ আছে
ডাকঘর | ছবিঘর
জীবন ধারণটাই আসলেই বোধহয় এক ধরনের "প্রজেক্ট", যার মধ্যে আলাদা করে ভ্রম, সংশয়, ভয়, বাঁচার তাগিদা।
লেখা মন ছুঁয়ে গেল।
ছবির কথা নতুন করে কি বলব। সাদাকালো ছবির আবেদন আমার কাছে সবসময়ই কিছুটা আলাদা হলেও আজ কেন জানি রঙ্গিনটা বেশি ভাল লাগল, "লিখে রাখি সময়ের ছবি"।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
জীবনকে জীবনের মতো ছেড়ে দিলেই ভালো এটা বুঝে গেছি
০২
আপনি এভাবে ডুবে থাকাটা কমিয়ে ফেলেন স্যার
ডাকঘর | ছবিঘর
প্রতিটি ছবিই অনবদ্য। তার মধ্যে দ্বিতীয়টি সবচেয়ে ভালো লাগল।
আমি সৌভাগ্যবান। ব্রহ্মপুত্রের তীরে জন্ম। বুড়িগঙ্গা মৃত, সেটা পুষিয়ে দিয়েছিল সদ্য যৌবনের পদ্মা আর যমুনা। তিস্তার খরস্রোত থেকে নাফের নীল জলের অতল আহ্বান। সমস্ত দিনের শেষে আবার ব্রহ্মপুত্র।
নির্ঝর অলয়
সত্যি আপনি সৌভাগ্যবানই বটে
লিখে ফেলুন না সমস্ত নদীদের নিয়ে আপনার গাঁথাগুলি। আমরাও পড়ি......
০২
ধন্যবাদ আপনাকে নির্ঝর অলয়
ডাকঘর | ছবিঘর
চমৎকার লাগলো, তাপস। নদী আমার নিজের আত্মার মতন প্রিয়--কোথায় যেন নিয়ে গেল ছবিগুলো। লেখাও বরাবরের মতন ভালো লেগেছে!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
নদীর কাছে গিয়ে আমিও থামি...
থ্যাঙ্কস দিদিভাই
ডাকঘর | ছবিঘর
নদী , মানুষ আর প্রেম যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল গোমতীর সাথে। মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা আর ছবি। ভাল লাগল তাপস দা।
অনেক ধন্যবাদ
ডাকঘর | ছবিঘর
মাথা খারাপ করা সব ছবি...সাদাকালোতে গুম্তি নদীর ছবি...লাইফ ইজ বিউটিফুল
লেখা পড়ি নাই...শুধু ছবি দেখেই তারায় তারাময়...
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ইয়েস ইয়েস লাইফ ইজ বিউটিফুল
ডাকঘর | ছবিঘর
আহ! কতদিন পর !
হুম। অনেকদিন পর
ডাকঘর | ছবিঘর
ডুপ্লিডাকঘর | ছবিঘর
ছবি ও বর্ণন, মন ছুঁয়ে গেল।
থ্যাঙ্কস দাদা
ডাকঘর | ছবিঘর
নদী আমাকে ভীষণ টানে তাপসদা। বড় হয়েছি পদ্মায় জলে ,হাওয়াই মাটিতে মিশে।নদীর কি মায়া, কি ভয়ংকর টান টের পায় হৃদয় দিয়ে। আপনার লেখা ছবিগুলো মন ছুঁয়ে গেছে ভীষণ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আসলেই নদীর মধ্যে কেমন জানি একটা আকুলতা আছে। সেই আকুলতা প্রত্যেকের কাছে প্রায় একই রকম...
ডাকঘর | ছবিঘর
মন কেমন করা লেখা ছবিগুলো আর শিরোনাম
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে যুমার
ডাকঘর | ছবিঘর
থেঙ্কু ডিয়ার স্যাম ম্যান
ডাকঘর | ছবিঘর
ঠিক বলেছিস।
এই নে পাঁচশ তারা।
এহ। বলছিস ? হে হে
এত তারা দিয়ে কি করব। যাকগে থেঙ্কু
ডাকঘর | ছবিঘর
অসাধারণ লাগলো দাদা!!
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ অলি।
ডাকঘর | ছবিঘর
বাংলার মানুষ নদীর সাথে যে কিভাবে জুড়ে আছে তা অন্যদেশের মানুষের বোঝার কথা না দাদা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
হুম। নদী কেন্দ্রিক প্রতিটি মানুষের জীবন গাঁথা মনে হয় একই রকমের হয়...
ডাকঘর | ছবিঘর
যদিও নদীর পাড়ে বেড়ে উঠিনি, ঢাকা শহরে নদী কোথায়? কিন্তু ময়মনসিং এ পড়তে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রের সাথে পরিচয়। নদীর সাথে যে আমাদের অস্তিত্বের সংযোগ তখন বুঝেছি। আমার মন যেমনই থাকুক নদীর পাড়ে গেলে সবসময়ই তা শান্ত হয়ে যায়। আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারি। আমার খুব ইচ্ছে একদিন সারারাত নদীর উপর ভাসবো। নাহ, ইচ্ছেগুলো সব অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। ছবিগুলো অসাধারণ।
ইচ্ছেগুলি লুকিয়ে রেখে কি খুব ভালো হয়? ইচ্ছে তো নিজের কাছেই। চলে যান না একদিন... নিজের ইচ্ছেগুলি বন্দী করার দরকার কি
আমি রাতের নদীকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। তবে সারারাত নদীতে ভাসার সুযোগ হয়নি। আপনি এখানে মনে করিয়ে দিয়ে ভালোই করলেন। দেখি পারলে আসছে বর্ষাতেই...
ডাকঘর | ছবিঘর
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ
ডাকঘর | ছবিঘর
বেশ ছবি।
ওকে
ডাকঘর | ছবিঘর
নদী আমার শৈশবের পুরোটা জুড়ে ছিলো, ছিলো কৈশোরে। পদ্মার কোন প্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে আমি দেখেছিলাম সূর্যটা কেমন করে একবুক বিষন্নতা নিয়ে ডুবে যায় দূর কোন প্রান্তে। পদ্মার জলে সাঁতার কেটে কতদিন ভেসে গেছি নিজের অজান্তে।
তাপস দা লেখা বরাবরি দুর্দান্ত আর ভীষন আবেগী।
মাসুদ সজীব
আমার জীবনটা ঠিক নদীমাতৃক না। তবুও নদীর কাছে ফিরে ফিরে যেতে হয় বার বার
ধন্যবাদ
ডাকঘর | ছবিঘর
লেখার কত মজা তাই না, চোখের সামনে যখন নিরেট সাদা দেয়াল- বুকের মধ্যে নদী।
হুম। তবে জীবন থামিয়ে দেয়। লিখতে আর দেয় কোথায়...
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন