নেপোলিয়ন একবার লাপ্লাস'কে হঠাত জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, কী কারণে তিনি তাঁর সিলেস্টিয়াল মেকানিক্স-এর কোথায়ও একবারের জন্যেও সৃষ্টিকর্তা কিংবা ঈশ্বরের অস্তিত্বের সংযোজন করেন নি। জবাবে লাপ্লাস বলেছিলেন, তাঁর আকাশ-সংক্রান্ত বলবিদ্যার জন্যে কোথায়ও ঈশ্বরীয় হাইপথিসিস এর প্রয়োজন হয়নি। ...যেখানে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয় অবাঞ্ছিত ঘূর্ণাবর্তের তরল সমীকরণে সেখানে আর যাই থাকুক শ্বাস থাকেনা। আমি যদি প্রকৃতিকে মানি তার মানে এই না যে আমি কোন অশরীরী স্বয়ম্ভু ধারণার উদ্ভট চিন্তার-সংকলনে দাঁড়িয়ে নিরাকারকে স্বীকার করি। বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস এর দ্বৈত সেতু বোধ হয় সাধারণের দিকচিহ্ন এঁকে দেয়। সত্যিই কী এই দুই এর বাইরে কিছু নেই? বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস... নিরাকার নয়, কিন্তু এই দুই তত্বের যোগান কেউ দিয়ে গিয়েছিল এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সেই যৌথ-কারফিও অব্যাহত...
গতকাল রাতের পর অবশিষ্ট কথাসায়রের অপূর্ণতা আমাকে সেই দুই চিরপ্রবহমান ধারার বাইরে ঠেলে নিয়ে গেল। আমি ভুল ছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমার ইনটেনশান মোটেও তেমন ছিল না। সেখানে না ছিল বিশ্বাস না ছিল অবিশ্বাস। কল্পনায় টানিনি ছাই রঙ কিংবা কর্পূর-বিবর্ণতা। কবিতার মাহবুব লীলেন বলেন - ''নতজানু হও জীবনে করে আসা স্বপ্নীল ভুলগুলো এই জীবনে আর করা যাবে না বলে''... মনে আছে লাইনগুলি? এক রাত আগে তোকে শুনিয়েছি কথাগুলো। ... তোর কাছে করা আমার সমস্ত ভুলগুলি স্বপ্নিল। সেখানে নেই কোন বিশ্বাস, নেই কোন অবিশ্বাস। শুধু শাশ্বত। তোকে ব্যাখ্যা করতে তাই আমার কোনো হাইপথিসিস-এর প্রয়োজন হয়না। হয় শুধু আত্মদংশন। রক্তপাত হয় শিলালিপির ভাঁজে ভাঁজে, ক্রুসবিদ্ধ করে রাখে যাবতীয় জরাজীর্ণ অব্যর্থতা। আমি বারবার নতজানু হই...
মাহবুব লীলেন । কবিতা : কৃষ্ণ উল্লাস । কাব্যগ্রন্থ : কবন্ধ জিরাফ । সাউন্ডক্লাউড
০২
বহুদিন বাদে কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হলেই বুঝতে হবে সে এসে গেছে। পড়ন্ত দুপুরে হুট করে মন উড়নচণ্ডী হয়ে উঠলে আবার হঠাত বিমর্ষ হয়ে গেলে, কিংবা আদুরে হয়ে উঠলে, চিবুক বেয়ে নেমে আসলে শ্যামলিমা...বুঝতে হবে সে এসে গেছে। চানঘর থেকে জল মুছে কক্ষে ফিরেই যদি দেখা যায় ভিজে গামছাটা শুকিয়ে গেছে, বুঝতে হবে সে এসে গেছে। ...হুমম, বসন্ত এসে গেছে
মাঝে মাঝে কবিতার মত রাত জাগে, পাশাপাশি আমি জাগি তোর শিয়রে... আমি কবিতা বুঝিনা। কিন্তু তুই বুঝিস। তোর মধ্যে আমি বুঝে নেয়ার চেষ্টা করি... মাঝেমাঝে কবিতা আমাকে পোড়ায় তোর শোনার স্পৃহা হয়ে। আমি গোঁয়ারের খোঁয়াড়, সেখানে আজ অবধি যৌথ খামার গড়ে উঠেনি... তার মাঝে তুই এলি, ঝড় এলো। এখন আমাদের যৌথ-খামারের রোজনামচা। সামান্য বিচ্যুতিতেই মেঘ-মল্লার রাগ বয়... ফাগুণের উত্তপ্ততা আজ সারাটা দিন বসন্তকে দিয়ে গেল পোড়া হাওয়া, উড়ছে পাতা, ঝরছে বিবর্ণতা। বিপন্ন কোনো এক অনামি বিপ্লব আমাকে টেনে ফেলে দিয়ে যায় অনুশোচনার চিরহরিৎ কায়ানাদে, তুই শুধু বর্ণহীন দীর্ঘশ্বাসে নিজেকে আড়াল করে নিস। কবিতা আমাকে মাফ করে দিস, কবিতা আমি বুঝিনি, কবিতা ক্লান্ত পাহাড়ে গোমতী হয়ে থাক, কবিতা আমি অবোধ। একরোখা, অদম্য, ক্লিষ্ট যাপিত সংশোধনে এখন স্রোতহীন আর্তনাদ, নীরবে...
এবং চিরঅভ্যাস মাহবুব লীলেন সকল দীর্ণতার কবিতায় ক্লান্ত অথচ রঙবেদনার গাঁথা শোনায় :
'' আমার জন্য কি ফাল্গুন আছে? আছে বাসন্তী রং?
শাড়িতে চমৎকার সেজে তুই
মুহূর্তেই হয়ে গেলি ফুটন্ত ফুল
আমি? আমি কোথায় যাব বল?
আমারতো সারাটা জীবনই এক চৈত্র ফাঁটল
দে না মেয়ে
আমার চৈতী ঋতুর জন্য একটা রং ঠিক করে দে
দে
আমাকে চৈত্র মাসের ধুলোবালির মতো একটা
উজ্জ্বল কষ্টের রং এঁকে দে ''...
মাহবুব লীলেন । কবিতা : মনোগ্রাম । কাব্যগ্রন্থ : কবন্ধ জিরাফ । সাউন্ডক্লাউড
---------------------
[ এই দুনিয়ার অন্যতম কর্কশ কন্ঠের গর্বিত মালিক আমি। তবুও মাঝেমাঝে পাবলিক্যালি চেঁচাই। আবৃত্তি আসেনা আমার, হয় না, আমি জানিও না কীভাবে করতে হয়। তবে মাঝেমাঝে কবিতা পড়ি। কবিতা বলি। বলতে ভাল লাগে ]
২০১৪. ০২. ২৭.
মন্তব্য
দাদা, আবৃত্তির লিঙ্ক কাজ করছে না!
অলয় ভাই, আপনি কি সাউন্ডক্লাউডে কিছুই প্লে করতে পারেন না? মানে সাউন্ডক্লাউড এর কিছুই শো করেনা আপনার পিসিতে? আপনি আগেই বলেছিলেন যে প্লে হয় না বা লিঙ্ক দেখতে পারেন না। তাহলে সেটার সম্ভাব্য কিছু কারণ থাকতে পারে। প্রথমত একটা সিম্পল উপায় বলি - পেইজে গিয়ে ( সচলের কিংবা সাউন্ডক্লাউড লিঙ্ক এর ) সেটা ওপেন না হলে তিন চার বার কন্ট্রোল প্লাস এফ-ফাইভ চিবি দ্যান, দেখুন বার কতেক ট্রাই করে। এইবার সেইটা দিয়ে কাজ না হলে বুঝতে হবে আপনার ব্রাউজারে সমস্যা আছে, কারণ যদি ফায়ারফক্স কিংবা ক্রোম ইউজ করেন এবং সেটা ব্যাক-ডেটেড হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সাউন্ডক্লাউড লোড হবেনা। সেই ক্ষেত্রে এখান থেকে ফায়ারফক্স এর এই ভার্সনটা ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন। এইবার যদি আপনার ফায়ারফক্স কিংবা ক্রোম এর লেটেস্ট ভার্সন থেকেই থাকে এবং তবুও আসছে না তাহলে সমস্যা হতে পারে আপনার ফ্ল্যাশ-প্লেয়ারের। এই ক্ষেত্রে এখান থেকে আপডেট করে নিন
এরপরেও যদি না হয় তাহলে আমারে একটা ফেইসবুকে টোকা দিয়েন ভাইডি। ফাইলগুলি পাঠায়া দেমু
ডাকঘর | ছবিঘর
কী জানি দাদা! তবে অনিকেতদা বা হিমু ভাইয়ের গুলো চলেছে। আপনার লিঙ্কগুলোর ক্ষেত্রে বেঈমানী করে! ডাইরেক্ট লিঙ্ক দেন।
এই নেন লিঙ্ক
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপসদা, লা-জবাব! আবহসঙ্গীত আর আপনার গলা অসাধারণ। ষ এর উচ্চারণে যত্নবান হন। আমার খুবই ভালো লেগেছে।
লেখা-আবৃত্তি সব মিলিয়ে দারুণ লাগল --
দুই কবিতার নেপথ্য সঙ্গীতগুলো খুব ভাল লেগেছে---
শুভেচ্ছা নিরন্তর!
থিঙ্কু বদ্দা...
ম্যালাদিন গান দেন না, শিগগির গান দেন। আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা
ডাকঘর | ছবিঘর
আবৃত্তির পেছনের বাজনা চমৎকার লাগল। আবৃত্তির বেশ কিছু জায়গায় উচ্চারণ অন্যরকম লাগল। আবৃত্তিতে উচ্চারণ তথাকথিত প্রমিত হওয়াই দরকারী মনে করি। আমি অবশ্য জানি না আপনাদের ওখানে আপনারা বাংলা একাডেমীর বা বাংলাদেশের প্রমিত উচ্চারণ অনুসরণ করেন কিনা। এমনিতে সেটা বাদ দিলে আবৃত্তি ভালোই লেগেছে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কবি ভাই, উচ্চারণের-রীতি বলতে যা বোঝায় সেই ক্ষেত্রে এখানে প্রচলিত কিছু নিয়মবিধি অবশ্যই আছে। এখানেও সাহিত্য আকাদেমি কিংবা সংসদ আছে। এদের উচ্চারণ-রীতির একটা ধরণ আছে। এদিকের কলকাতাকেন্দ্রিক প্রমিত উচ্চারণ এর কথা যদি বলেন তাহলে বলি এক্ষেত্রেও প্রচুর ধারা বা উপধারা আছে, ভিন্নতা আছে অনেক অঞ্চলভেদে। এইবার কথা হল আমি কোনটাকে ধরে এগুবো। প্রাদেশিকতার ক্ষেত্রে উচ্চারণরীতিও বদলে যায়। সামগ্রিক একটা কাঠামো হয়তো আছে কিন্তু অঞ্চলভেদে সেটা ভিন্ন হয়ে যায়। এইবার আমি হলাম বরাক উপত্যকার বাঙাল, ত্রিপুরার মানুষ, বোমা মারলেও কলকাতার কেতাবি বাংলা উচ্চারণে সড়গড় হতে পারব না। এই আবৃত্তিতে ( মতান্তরে কবিতা বলা ) যেভাবে আমি উচ্চারণ করেছি টেনেটুনে আমি ঐভাবেই করি, এতেই আমি অভ্যস্ত। যদিও উপরের কবিতাগুলিতে দু'একটা জায়গায় 'র' এবং 'ড়'-এর উচ্চারণে আমি ভ্যাজাল করে ফেলছি সামান্য। খুব দ্রুত একবার রেকর্ড-অপশান ওপেন করেই রেকর্ড করে ফেলেছি এবং দ্বিতীয়বার আর সেটা ঠিক করিনি, ঠিক করলে আরেকটু ঠিক করা যেত সেটা এখন বুঝতে পারছি
যাই হোক পরবর্তী একটা কাজ করব ভাবছি, একটা দীর্ঘ কবিতা। তখন আরেকটু নজর রাখতে হবে।
ধন্যবাদ নিয়েন
ডাকঘর | ছবিঘর
লেখা ভাল লেগেছে। আবৃত্তিও ভালো লেগেছে, কয়েকটি জায়গার উচ্চারণ-ভিন্নতা অনভ্যস্ত কানে বেজেছে।
আর, লীলেন-এর কবিতা এবং তার চয়ন নিয়েতো কোন কথাই হবে না!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
উচ্চারণ এর ব্যাপারে উপরের কমেন্টে বলেছি, এইটা আর রিপিট করলাম না, সমস্যা ছিল কয়েকটা জায়গায় নিজেই বুঝছি এখন
ধন্যবাদ জানবেন
ডাকঘর | ছবিঘর
বেশ লাগল শুনতে তো, নেপথ্য সঙ্গীতগুলো খুবই চমৎকার।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ ম্যাডাম
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনার লেখাগুলো কাব্যিক হয় সাধারণত, কিন্তু আপনার যে একখানি কাব্যিক কণ্ঠও রয়েছে, তা জানা ছিল না।
আবৃত্তি, নেপথ্য সংগীত, কাব্যিক লাইন- সবটাই উপভোগ্য ছিল, তাপসদা!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
ডাকঘর | ছবিঘর
খুব ভাল লাগলো। কবিতার আবৃত্তি জারী থাকুক।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
থ্যাংকস। এবং বলব খুব ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা নিয়েন
ডাকঘর | ছবিঘর
লেখা-আবৃত্তি সব মিলিয়ে দারুণ লাগল ।
তাহসিন রেজা
ধন্যবাদ আপনাকে...
ডাকঘর | ছবিঘর
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন