(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ—এখানে প্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের গল্প বলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছি মাত্র, এটা কোন মুভি রিভিউ নয়, কারণ এমন চলচ্চিত্র নিয়ে রিভিউ লেখার জ্ঞান বা প্রজ্ঞা কোনটাই আমার নেই, এটি স্রেফ ধারা বিবরণী। কাজেই যাদের চলচ্চিত্রটি এখনো দেখা হয় নি, তারা আগে দেখে ফেললেই ভাল হয়, নতুবা সব ঘটনা জানলে হয়ত আগ্রহ কিছুটা কমে যাবে। এমন লেখার ব্যাপারে সকল ধরনের পরামর্শ স্বাগতম। লেখায় ব্যবহৃত আলোকচিত্রগুলো নেট থেকে সংগৃহীত )
বিশ্ব সাহিত্যের সবচেয়ে সার্থক উপন্যাস হিসেবে জনগণমনে আসন করে নিয়েছে ওয়ার অ্যান্ড পিস, সেই সাথে জনপ্রিয়তম লেখক হিসেবে পৃথিবীর কোটি কোটি সাহিত্যপ্রেমীর মনে চিরস্থায়ী সাহিত্যদেবতার আসন অলংকরণ করে নিয়েছেন লিও তলস্তয়, যার পোশাকি নাম ছিল কাউন্ট লিয়েফ নিকোলিয়েভিচ তলস্তয়। যদিও সেই নীল রক্তের রাজকীয় উপাধি তিনি মনে প্রাণে ত্যাগ করতেই চেয়েছেন সর্বদাই, কাউন্ট নন, সমাজের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই খুঁজতে-বুঝতে চেয়েছেন অন্যদের এই নশ্বর জীবনের ক্ষুদে ক্ষুদে আনন্দ-বেদনার কাব্য, অমর করে রেখেছেন তার পর্বতপ্রমাণ লেখনী শক্তি দিয়ে, যার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তার মহাবিশ্বসম উপন্যাসগুলোতে, অমর ছোট গল্পগুলোয়, নাটক-প্রহসনে, দার্শনিক তত্ত্বে আর সাহিত্যজগতের সবচেয়ে রোমান্টিক উপন্যাস আন্না কারেনিনায়।
এমন সুবিশাল নাক্ষত্রিক জীবনকে কি রূপোলী ফিতের ফ্রেমে পুরোটা বাঁধা যায় না বোঝা যায়! তাই তো পরিচালক মাইকেল হফম্যান সেই বৃথা চেষ্টায় না যেয়ে তলস্তয়ের সুদীর্ঘ ঘটনাবহুল জীবনের শেষকটি দিন তিনি বেছে নিয়েছেন তার দ্য লাস্ট স্টেশন চলচ্চিত্রের জন্য, যা মহান লেখক অতিবাহিত করেছেন তার জন্মস্থান, পারিবারিক সম্পত্তি ইয়াসনায়া পলিয়ানায়।
সাহিত্য জীবন শুরুর পর থেকেই শান্তিবাদী জীবনের দিকে আকৃষ্ট হওয়া তলস্তয় চেষ্টা করেছেন কি করে গণমানুষের কল্যাণ সাধন করা যায়। সমগ্র বিশ্বের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে কুক্ষিগত সমস্ত সম্পদ আর অন্যদিকে বিকট দারিদ্রের করাল রূপ তাকে করে বিহ্বল তুলত সর্বদাই, যার পরিণতিতে এক শান্তিবাদী নবদর্শনের জন্ম দেন তিনি, যার অনুসারীরা পরিচিত ছিলেন তলস্তয়ান নামে, যাদের অন্যতম নেতা ছিল তলস্তয়ে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ভ্লাদিমির চের্তকভ।
এই নিয়েই সিনেমার ঘটনা পরিক্রমা শুরু- চের্তকভের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এক তরুণ তলস্তয়ান ভ্যালেন্তিন বুলগাকভ আসেন ইয়াসানা পলিয়ানায় তলস্তয়ের সেক্রেটারি হিসেবে হিসেবে, মহান সাহিত্যিকের মহানতর হৃদয়ের সত্যিকারের পরিচয় পেয়ে অভিভূত তরুণ চেষ্টা করে তার কাজে মন প্রাণ ঢেলে দিতে সহযোগিতার। সেই খামার বাড়ীরই এক প্রান্তে অন্যান্য অনুসারীদের সাথে থাকার নির্দেশ জোটে তার, সেই সাথে তলস্তয়ের জীবনের খুঁটিনাটি লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব বর্তায় নতুন কাজের অংশ হিসেবে।
আর তার জীবনের ঝড়ের মত প্রবল বেগে আসে প্রথম প্রেম, তলস্তয়ান দর্শনের এক অনুসারিণী মাশা (মারিয়া নামের রাশান সংস্করণ)।
এদিকে ঘটতে শুরু করে ঘটনা, ভ্যালেন্তিন বুলগাকভ অতি সহসাই বুঝতে পারেন মহামতি তলস্তয়ের দীর্ঘ জীবনের সহধর্মিণী কাউন্টেস সোফিয়া আন্দ্রেয়েভনা ( তাদের দীর্ঘ ৪৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে ১৩ সন্তানের জননী হন সোফিয়া, যদিও তাদের পাঁচজন শিশুকালেই মৃত্যুবরণ করে) তার স্বামীর এই সর্বমানুষের কল্যাণময় চিন্তাধারা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদে প্রয়োগের ক্ষেত্রে চরম বিরোধী ছিলেন।
তলস্তয়ের মতধারা ছিল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ মানুষের জন্য মন্দভাগ্যই ডেকে আনে, সমস্ত সম্পদই গরীব মানুষের সাথে সুষম বন্টন হওয়া উচিত। তার এই সাম্যবাদী চিন্তাধারা অনুপ্রানিত করেছিল বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানবতাবাদীদের, যাদের অন্যতম ছিলেন সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত এক তরুণ আইনজীবী মোহন দাস গান্ধী। তলস্তয়ের সাথে তার ছিল পত্রযোগাযোগ, হয়ত সেই অনুপ্রেরণায়ই ঐ আইনজীবী পরিণত হত শান্তিবাদী আন্দোলনের প্রতীকে, পরিণত হন মহাত্মা গান্ধীতে( উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীজীর আশ্রমের নাম ছিল তলস্তয় ফার্ম।)
যদি দার্শনিক স্বামী তাদের বিপুল সম্পত্তি, বিশেষ করে তার পাণ্ডুলিপিগুলোর সত্ত্ব অন্যদের দান করে দেন এই দুশ্চিন্তায় বৃদ্ধা সোফিয়া উদভ্রান্ত হয়ে যান, এই দুঃসহ চিন্তা কুরে কুরে খেতে থাকে তার সমগ্র অস্তিত্বকে। পরিণতিতে প্রায়শই ঋষিপ্রতিম জীবনসঙ্গীর সাথে অবতারণা ঘটে সংঘর্ষময় পরিস্থিতির।
সেলুলয়েডের পর্দায় বিশ্ব সেরা সাহিত্যিকের এই অশান্তিময় শেষ জীবনের গৃহদাহ পর্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার সাথে, বিশেষ করে যেখানে তিক্ত-বিরক্ত, হতক্লান্ত তলস্তয় প্রায়ই স্ত্রীকে বলছেন- আমি কিন্তু তোমার এই সমস্ত কথার জ্বালায় আসল কাজ করতে পারছি না কিছুই! যদিও তলস্তয় বারংবার বলেছেন তার জীবনে প্রেমময়ী স্ত্রীর অনস্বীকার্য ভূমিকার কথা, জানিয়েছেন তাদের অসম্ভব সুখী যৌবনকালের কথা।
ভ্লাদিমির চের্তকভের আবির্ভাবে ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। নতুন উইল করে মহান জনসেবী লেখক তার সমস্ত সম্পত্তি দান করে দেন জনগণের কল্যাণের নিমিত্তে, কিন্তু কাউন্টেস সোফিয়া গোপনে স্বামীর রোজনামচা পাঠ করে জেনে যান এই গোপন ঘটনা! মুহূর্তে যেন বারুদের স্তূপে পড়ল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, কদর্য ভাষায় তলস্তয়কে আক্রমণ করেন সোফিয়া।
অবশেষে জীবনের শেষ দিনগুলোয় নিরিবিলিতে লেখালেখি ও অন্যান্য কাজের জন্য এক নীরব শেষ রাতে নিজের জন্মস্থান ছেড়ে অজ্ঞাত গন্তব্যে রওনা দেন আমাদের গ্রহের সেরা লেখক, সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধু তার ডাক্তার।
পরদিন প্রত্যুষে এই খবর পেয়েই জলে ডুবে আত্নহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালান কাউন্টেস, সেখান থেকে শেষ মুহূর্তে উদ্ধার পেলেও তার ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাড়ায় স্বামীকে যে কোন মতে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে আনা। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কন্যা আনাও চুপিসারে বাড়ী ছেড়ে যোগ দেন বাবার সাথে। কাউন্টেস সোফিয়ার সাথে কেবলমাত্র রয়ে যান কেবল ভ্যালেন্তিন।
কিন্তু পরিকল্পনা মোতাবেক শেষ দিনগুলো আর অতিবাহিত হল না লেখকের, হয়ত যাত্রাপথের ধকলে , হয়ত মানসিক চাঞ্চল্য নানা কারণে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি, আশ্রয় নিতে বাধ্য হতেন আস্তাপোভা নামের এক নাম না জানা অতি ক্ষুদে রেলস্টেশনে। খবর ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যুৎগতিতে, নির্জন স্টেশন হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ আর সাংবাদিকদের ভিড়ে লোকারণ্য।
শেষ মুহূর্তে প্রেক্ষাপটে উপস্থিতি দেখা দেয় তার স্ত্রী সোফিয়াও, সাথে এক ধর্মের লেবাসধারী দামি জোব্বায়ালা ধর্মযাজক ( প্রথাগত ধর্মের সাথে বিরোধ ছিল তলস্তয়ের মহান মানবতাবাদী দর্শনের, যে কারণে যাজকদের চক্ষুশূল ছিলেন তিনি। আবার ১৯০১ সালে দেওয়া প্রথম নোবেল সাহিত্য পুরস্কারটি তিনিই পাচ্ছেন এমনটি সমগ্র সাহিত্যজগৎ ধারণা করলেও তার লেখনী খ্রিষ্টীয় ধারনার পরিপন্থী এই হাস্যকর কারণে যোগ্যতম লেখককে বঞ্চিত করা হয়। যদিও তলস্তয় বলেছিলেন এই পুরস্কারের অর্থ হয়ত তাকে কেবল অপব্যয়ী হতেই ইন্ধন যোগাত !)
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সম্ভবত স্বামী-স্ত্রীর সম্ভব হল না মৃত্যুর শীতল স্পর্শে। তলস্তয়ের মৃত্যুর সাথে সাথে যবনিকা ঘটে সম্ভবত শেষ লিটারেচার জায়ান্টের, তার শেষ নিঃশ্বাস স্থান হিসেবে আস্তাপোভা হয়ে পড়ে বিশ্বখ্যাত, ঠিক তলস্তয়ের মহাপ্রস্থানের মুহূর্তটিতে সেই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ঘড়িটি বন্ধ করে দেওয়া হয় পরবর্তীতে, আজ পর্যন্ত সেটি সেই সময়ই দেখাচ্ছে। এই কারণে চলচ্চিত্রটির নাম দ্য লাস্ট স্টেশন যেমন জীবনের শেষ দিনগুলির রূপকার্থে সার্থক তেমনি সার্থক বাস্তবিক অর্থে।
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এও চলচ্চিত্রের মূল আকর্ষণ তলস্তয়ের ভূমিকায় ক্রিস্টোফার প্লামার এবং তার স্ত্রী সোফিয়ার ভূমিকায় রূপদানকারী অস্কারজয়ী হেলেন মিরেনের অনবদ্য অভিনয়, দুজনেই সেরা অভিনয়ের অস্কার মনোনয়ন লাভ করেন সেবার।
সেই সাথে রুশ দেশের অবারিত প্রকৃতির খানিকতে ছোঁয়া, মুক্ত বনভূমি আর দিগন্ত ছোঁয়া শস্যক্ষেত্রের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে আবেগ মোড়া দক্ষতার সাথে। সেই সাথে দর্শকের চোখ ও মন আটকে রাখে অসংখ্য তীক্ষ সংলাপ, যখন তলস্তয় নিজেই বলেন তিনি স্বয়ং একজন সঠিক তলস্তয়ান না, যখন তার স্ত্রী লেখকের যৌবনের উশৃঙ্খল দিনগুলির কথা বলেন আলতো অভিমানে, বৃদ্ধ দম্পতি শিশুতোষ আবেগ নিয়ে খুনসুটিতে মেতে ওঠেন।
আবেগ, ক্ষোভ, রাগ, শোক, ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ, সবকিছুর সন্নিবেশনেই দ্য লাস্ট স্টেশন হয়ে উঠেছে সাহিত্যপ্রেমীদের জন্যও এক অবশ্য দর্শনীয় চলচ্চিত্রে।।
মন্তব্য
সতর্কীকরণ পড়ার পর আর পড়লাম না, শুধু ছবিগুলো দেখলাম।
দেখে ফেলেন জলদি!
facebook
. অসাধারণ একটা সিমেনা।
কাহিনীটা কি অদ্ভুত। তলস্তয়ের জন্য
facebook
যে যন্ত্রণা জীবনকে দিয়েছিল কর্কশ লবন
ঘটনার ঘোলাজলে আমি তার স্বাদে দ্বিধান্বিত সত্ত্বাকে
তাড়িয়ে নিয়ে ছুটে গেছি......
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
তাড়িয়ে নিয়ে ছুটে গেছি......
facebook
এই মুভিটা দেখা ফরয হয়ে গেল
ধন্যবাদ লেখক (অণু শয়তান)-কে এত চমৎকারভাবে সবকিছু বর্ণনা করার জন্য।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ফরযে কিফায়া!
facebook
এটা তো দেখা হয় নাই।
পুরোটাই পড়েছি কিন্তু তাতে তো মনে হল দেখার আগ্রহ আরো প্রবল হল!! কেম্নে কি?!
অণু'দাদার হাতের লেখা কিন্তু দিন দিন আরো চমতকার হচ্ছে
দেখে ফেলেন আপা, জানিয়েন তারপরে কেমন লাগল।
facebook
আপনার ডিসক্লেইমারে লাভ হোল না। মুভিটা না দেখা হবার পরেও সুস্বাদু লেখাটা পড়ে ফেলার লোভ সামলাতে পারি নাই। যথারীতি দারুণ জম্পেশ! দেখে ফেলবো সময় করে।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
হে হে, তয় লে, আমার কুন দুষ নাই।
facebook
তুমিতো মিয়া সবার কাজ কাম লাটে তোলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছ দেখি। এম্নিতেই সব সচল খুলে বসে থাকে, তার উপর যদি এইভাবে এখন স্ক্রীণের সামনে হুমড়ি খায় তাহলে ল্যাবে যেয়ে ঘুমায় পড়বেতো সব যন্ত্র মন্ত্র হাতে। আমিও খালি ছবি দেখে কেটে পড়লাম আপাতত।
ছিঃ ছিঃ, আমি অন্য কারো কামজনিত কাজ বা মমিন দমন নিয়ে মাথা ঘামাব কেন ! দাদা, কি যে হয়েছে আপনার আজ কাল !
facebook
এই পোস্টটা পড়ছিলাম। পিছনে ইতালীয় এক পোস্টডক এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো এটা আমার মাতৃভাষায় লেখা কিনা। অক্ষরগুলো পিকটোরিয়াল কিনা জানতে চাইল। সে রীতিমতো মুগ্ধ সৌন্দর্যে। বাংলায় নিজের এবং বউয়ের নাম লিখিয়ে নিলো। এরকম অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম না।
ভালো লাগল শুনে।
facebook
দারুন লিখেছেন অণু! তলস্তয় পড়ার অনেক ভুলে যাওয়া পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
ছবিটি না দেখলেও এবং স্পয়লার এলার্ট সত্বেও, আপনার লেখাটা পুরোটাই এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। কারন প্রথমত আপনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চমৎকার ভাবে লিখেছেন, এবং দ্বিতীয়ত - ঘটনা আমার ভাল করেই জানা। তলস্তয় আমার কলেজ জীবনের প্রথম ফ্যাসিনেশন। তখন তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, তুর্গেনিভ, গোর্কি, গোগোল, পুশকিন এবং অন্যান্য রাশান লেখকদের বইপত্তর যা হাতে পেতাম তাই গোগ্রাসে গিলতাম। রূশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের লাইব্রেরিতে না পেলে ঢাকার বইয়ের দোকানগুলি তন্ন তন্ন করে উলট-পালট করতাম। বলাকা, নিউ মার্কেট, পিজি, স্টেডিয়াম, পল্টন। প্রথমে প্রগতি বা রাদুগার বাংলা অনুবাদে, পরে ইংরেজিতে। তলস্তয়ের ওয়ার এন্ড পীস, আন্না কারেনিনা, রেজারেকশন থেকে শুরু করে অনেক ছোট-বড় লেখাই পড়েছি। কোন কোন ক্ষেত্রে একাধিকবার। মণীন্দ্র দত্তের (?) অনূদিত পুরো তলস্তয় রচনাবলীটাই কিনে ফেলেছিলাম একসময় - যদিও শেষ পর্যন্ত এই জঘন্য অনুবাদের একটা পাতাও আর পড়া হয়নি - নতুন করে কিনতে বা সংগ্রহ করতে হয়েছে।
তবে একটা কথা ঠিক, তলস্তয়ের নিজের বাস্তব জীবন তার উপন্যাসের চরিত্রগুলি থেকে কোন অংশে কম বর্ণিল নয় - পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আদর্শিক আর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন আর ঝঞ্ঝাসঙ্কুলতায়। বহু ক্ষেত্রে তার উপন্যাসে তার নিজের জীবনেরই ছায়াপাত ঘটেছে খুব ঘনিষ্ট ভাবে। ফরাসী লেখক হেনরি ট্রয়াট (ছদ্মনাম, এবং আসলে বোধহয় রুশ বংশোদ্ভূত) তলস্তয়ের একটা অতুলনীয়, প্রায় মহাকাব্যিক, জীবনীগ্রন্থ লিখেছিলেন। পেঙুইনের অনুবাদে অনেক আগে পড়লেও, এটা এখনো আমার পড়া সাহিত্যিকদের জীবনীগুলির মধ্যে সবচেয়ে অসাধারন, প্রিয় আর উপভোগ্য একটি হিসেবে রয়ে গেছে। এই বইয়ে তার জীবনের ঐ শেষ মুহূর্তগুলির ভীষণ জীবন্ত বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে (পুরো জীবন কাহিনিই অবশ্য আছে) । দ্য লাস্ট স্টেশন দেখার সাথে সাথে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে এটা পড়ে দেখতে পারেন। ঠকবেন না নিশ্চিত। আর আমিও দেখব ছবিটা
****************************************
অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান ও তথ্যসমৃদ্ধ মন্তব্যের জন্য, বইটি অবশ্যই পড়ার চেষ্টা করব।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সারা বিশ্বে নিয়ে করা এক ঢাউস ফটোগ্রাফির বইতে মুখ বন্ধে দেখি সাধারণ একখানা ছবি, সবুজ প্রকৃতির মাঝে একটা অ্যান্টিক ধরনের কাঠের বেঞ্চি! কি ব্যাপার, এত কোটি কোটি ছবির মাঝে এটি কেন পেল এই রাজ সম্মান? পড়ে দেখি, এটিই ইয়াসনায়া পলিয়ানার সেই বেঞ্চ যেখানে বসে আন্না কারেনিনার অধিকাংশ চিন্তা ও রচনা করেছিলেন তলস্তয়।
facebook
হেনরি ট্রয়াটের বইটা হাতে পেলাম, পড়ে দেখব আশা রাখি।
facebook
এই মুভিটা আমার লিষ্ট থেকে বাদ ছিল কেমনে? আজকেই খোঁজ লাগালাম। মুভিটার খোজ দেবার জন্য একরাশ
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
খোঁজ লাগানোর জন্য আপনাকেও
facebook
facebook
অনু ভাই কি বলব ব্যস আপনার চোখে দেখেছি বিশ্ব,
facebook
আমার উঠতি যৌবনে অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই আমি সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হই আর তখনই পাই তলস্তয়কে। তাঁর দু-একটি লেখা পড়বার পর যথেষ্ট প্রভাবান্বিত হই। তখনকার দিনে যুব শ্রেণীর মধ্যে প্রগতিশীলতার একটা ভাবের উদয় হয়। তা থেকে অনেকেই তখন রাশিয়ার সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
ধন্যবাদ, লেখাটি খুবই ভাল লাগলো আর পড়তে পড়তে আমি স্মৃতুমেদুরতায় আচ্ছন্ন হলাম।
আসলেই, সেই সময়ের কিছু লেখক- তলস্তয়, চেখভ, দস্তয়েভস্কি, গোগোল, গোর্কি-- খুব কাছের মনে হয় এদের।
facebook
দেখতে হবে। ধন্যবাদ।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন