ইউরোপের সুন্দরতম নগরী খ্যাত প্রাগ থেকে শেষবার বিদায় নেবার সময় সেখানকার পুরনো বন্ধু মারিস্যা ক্রাউসোভা ( মহিলা ২ বছর ঢাকাতে জাতিসংঘের ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ) এক পোলিশ সাংবাদিকের বই উপহার দিলেন, অদ্ভুত নামের বই ট্র্যাভেলস উইথ হেরোডটাস, লেখকের নাম রুশজার্দ কাপুসচিনস্কি ( Ryszard Kapuściński )। বললেন তোমার রুচির সাথে খুব মিলবে, পড়েই দেখ।
পড়লাম, খানিকটা এক বসাতেই এবং জীবনে যে বইগুলো বাংলা করবার মহান ব্রত নিয়ে আর কিছুই না করে কেবল সেই তালিকাটাই লম্বা করতে আছি তার একেবারে শীর্ষে একদম হুড়মুড় করে উঠে গেল ভ্রমণ সঙ্গী হেরোডটাস। অভিভুত, মুগ্ধ, হতবাক- আরও শখানেক বিশেষণ লাগবে প্রথমবার পড়ার পর সেই সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে। চলুন না, আশেপাশের পরিচিত পৃথিবীতে কিছুক্ষণের জন্য বিদায় দিয়ে কাপুসচিনস্কির হাত ধরে হেরোডটাসের সঙ্গে।
বইটি এগিয়েছে দুটি ঘটনা প্রবাহকে সমান্তরালে সাথী করে, একটি লেখকের জীবন অন্যটি ইতিহাসের জনক খ্যাত গ্রীক দার্শনিক হেরোডটাসের জীবন, কিন্তু তার শব্দচয়নে, বাক্য বুননে, সর্বোপরি মজলিসী আমেজে গল্প বলার ভঙ্গীতে এক বিচিত্র সেতুবন্ধন ঘটে বহু হাজার বছরের ব্যবধানে সংঘটিত নানা ঘটনার যার আবেশে মুগ্ধ চিত্তে এগিয়ে চলা ছাড়া পাঠকের কোন পথ খোলা থাকে না।
বইয়ের প্রথমেই লেখক নিঃস্পৃহ ভঙ্গীতে বলে যান স্ট্যালিন শাসিত শৈশবের কথা, যেখানে পান থেকে চুন খসলেই নির্বাসনে মৃত্যুর ভয়ে থরহরি কম্পমান একটি প্রজন্ম মুখ বুজে সয়ে যায় নিরাসক্ত ভাবে। শিক্ষাজীবন শেষ করে সাংবাদিকতার জীবনে প্রবেশ করেন তিনি, কাজের সুবাদে মাঝে মাঝে পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তচৌকির কাছের গ্রামে যেতে হয় তাকে, সীমান্তের অপর পাড় আকৃষ্ট করে তাকে অজানা কারণেই, মোহময়ী কুহকভরা চিন্তা খেলে যায় তরুণ সাংবাদিকের মাথায়,ভাবেন ওদিকের কিছু একটা আলাদা- মানুষ, প্রাণী, গাছ, ভূখণ্ড, সংস্কৃতি, কিছু একটা আলাদা, ভিন্ন আমার চেনা পরিবেশের চেয়ে।
আর সেই ভিন্নতাকে জানতে চান তিনি, ছুয়ে দেখতে চান অন্য দেশের মাটিকেও। প্রবল জ্ঞানতৃষ্ণায় আক্রান্ত তরুণ উপরওয়ালার কাছে ইচ্ছে পোষণ করেন সম্ভব হলে বিদেশে বদলীর। কোন দেশে? অনেক কষ্টে তরুণ বলেন সীমান্তের দেশ চেকোস্লোভাকিয়ার কথা, প্যারিস বা লন্ডন তার মনে থাকলেও এতদূরে তাকে পাঠানো হবে না জেনেই কাছের দেশ বেছে নেন তিনি, তখনো পোল্যান্ডে বিদেশ গমনের ব্যাপারে চরম কড়াকড়ি।
বছর খানেক পর উত্তর আসে, মিলে নতুন কর্মস্থল—ভারতবর্ষ!
চরম অবাক হয়ে, অজানাকে জানার সংকল্পকে সাথী করে দুরু দুরু বুকে তিনি হাজির হন নয়া দিল্লী, সাথে সঙ্গী সহকর্মীর দেওয়া উপহার হেরোডটাসের ইতিহাস, অখণ্ড ( Histories) । নিজেকেই অবিরত প্রশ্ন করে চলেন সাংবাদিক, কেমন মানুষ ছিল এই হেরোডটাস! যে ইতিহাস আমাদের ঠিকানা, আমাদের শিকড়ের সন্ধান, সেই ইতিহাসের জনক বলা হয় তাকেই! কিভাবে এমন অসাধারণ ধারণা জন্ম নিল এই অমর গ্রীকের মননে- যে চলমান ঘটনা লিপিবদ্ধ রাখতে হবে, কেবল রাজারাজড়ার নয়, আমজনতার, সেই সাথে প্রকৃতির, পশুপাখির! ইতিহাসের জন্মের সন্ধিক্ষণের সেই আলোকময় প্রভাতের কথা আমাদের জানা নেয়, কিন্তু আমরা লেখকের মুগ্ধতাময় নৈবদ্যে খানিকটা আঁচ করতে পারি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সেই অধ্যায়।
নতুন গ্রহে পদার্পণের তীব্র উত্তেজনা আর বিহ্বলতা নিয়ে লেখক হাবুডুবু খেতে থাকেন ভারতের জীবনে, ইংরেজিতে পোক্ত না হবার কারণে পদে পদে হতে হয় সমস্যার সম্মুখীন। কিন্তু জীবনের নেশায় মাতাল তরুণ ঠিকই এগোতে থাকেন তার কাজ নিয়ে, একে একে ঘোরা হয় তার দিল্লী, কোলকাতা, বোম্বে, মাদ্রাজ, কেরালা্ কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ এমনকি গঙ্গার তীর পর্যন্ত! মহারাজার প্রাসাদ থেকে ছিন্নমূলদের বস্তির আলো আধারির জীবন দেখার সুযোগ হয় তার, আর এক অপূর্ব ভাষা জ্ঞান প্রয়োগ করে, কোন পক্ষ অবলম্বন না করে কেবল ধারাবিবরণীর মত বলে যান সেই সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে তার ভাষ্য, যেমনটি বলেছিলেন আড়াই হাজার বছর আগের হেরোডটাস !
সেই সাথে স্মৃতিচারণ চলতে থাকে এক বাঙালি কবি, লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রকর নিয়ে যার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার মনে পড়ে যায় শিশু রবির প্রতিদিন বাবার সাথে সূর্যোদয়ের আগেই ঘুম থেকে উঠে উপনিষদ পড়বার কথা এবং লেখক আত্ননিমগ্ন হয়ে ভাবতে থাকেন কেমন ধরনের শিশু ছিলেন হেরোডটাস¬? সে কি সকল পথিকের প্রতি উচ্ছল হাসি দেয়া বালক ছিল, নাকি মায়ের আঁচলে মুখ লুকানো লাজুক বালক ছিল। সে কি শান্ত লক্ষ্মী ছেলে ছিল নাকি এক ব্যাদড়া বালক ছিল। তার শিক্ষাজীবন শুরু হল কি করে, তার খেলনাই বা কি ছিল?
শিশু রবীন্দ্রনাথের কাছে জীবনের উজ্জলতম স্মৃতি ছিল বাবার সাথে প্রত্যুষের সেই প্রার্থনা, মার্সেলের কাছে আঁধার ঘরে তার মায়ের শুভরাত্রি বলে যাওয়া। কিন্তু হেরোডটাসের কি ছিল? এর উত্তর কি নিহিত আছে তার বিপুল রচনার মাঝে?
এমন ভাবে শত শত প্রশ্নবাণ পাঠকদের দিকে তাক করে পথ চলতে থাকেন লেখক, এবং এই অজ্ঞানতা আমাদের ক্রোধোমত্ত করে না, অভিমান ভারাক্রান্ত করে না, করে না অসহায় বরং কেবল করে তোলে কৌতূহলী। বর্তমান সময়ের ঘটনা প্রবাহ দিয়ে আমরা বুঝতে চেষ্টা করি ইতিহাসের জনকের জীবন দর্শন।
১৯৫৭ সালে সাংবাদিক আবারো কাজের তাগিদে চীন গমন করেন, উম্মোচিত হয় আরেক মহাবিশ্ব তার অনুসন্ধিৎসু মনের কাছে। হংকং থেকে বেইজিং হয়ে সেই সময়ের কমরেডদের সাথে চীন যাত্রা চলতে থাকে তার, সেই সাথে মহা প্রাচীর ভ্রমণও।
চীনের মহাপ্রাচীর নিয়ে নিজস্ব মতবাদ বলিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরেন আমাদের সাংবাদিক, তার মতে এই প্রাচীর যত না জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে তারচেয়ে অনেক বেশী রাজশক্তির অহং প্রদর্শনের জন্য। বিশ্বের বিস্ময় বলে পরিচিত এই প্রাচীর কিন্তু কখনোই এই দেশের জনগণকে লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে নি বরং জনগণের রক্ত শোষণ করে বানানো এই স্থাপত্য শেষমেশ পরিণত হয়েছে জাতির বোঝাতে।
সেই সাথে কনফুসিয়াস এবং লাওসের শান্তিপূর্ণ দর্শনের আলোচনার সাথে সাথে চীনাদের সব কিছুতেই চেয়ারম্যান মাওকে টেনে আনার ব্যাপারে আলোকপাত করেন তিনি।
বইটিকে একই সাথে স্বাদু এবং চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে পাতার পর পাতা হেরোডটাসের নিজের লেখা ( Histories এর পাতা থেকে)। সেখানে তার নিজস্ব ভ্রমণ বর্ণনা, চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে চমৎকার ভাবে। কি এক অজানা কারণে মিশর যেয়ে অন্য সবার মত নীল নদ দর্শনে ও এর রহস্যানুসন্ধানে নিজেকে ন্যস্ত না রেখে শিশুর কৌতূহলী চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন সাধারন মিশরীয়দের জীবন, কামার- কুমোর- তাতির প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ড।
খেয়াল করে দেখেন তার পিতৃভূমি গ্রীসে যেমন মানুষ ও গবাদি পশু আলাদা আলাদা স্থানে বসবাস করে, মিশরে এর সম্পূর্ণ উল্টো ব্যাপার- মানুষ ও পশুর সহাবস্থান তার চিত্তকে জোগায় নতুন ধারণা।
জীবনে যেখানেই যখন গিয়েছেন সেই গ্রীক দার্শনিক, সবসময়ই লিপিবদ্ধ করেছেন সেখানে বসবাসরত সবগুলো নৃ-গোষ্ঠীর ঠিকুজী, সেই সাথে তাদের প্রতিবেশীদের নাম-ধাম ও পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্ক।
কেবল মানুষই নয়, একজন খাঁটি পর্যবেক্ষণকারীর মত উদ্ভিদ, প্রাণী কিছুই নজর এড়িয়ে যায় নি হেরোডটাসের! নীল নদের বিশাল কুমির যে হাঁ করে নদীর পাড়ে রোদ পোয়ায় আর ক্ষুদের পাখির দল যে বিন্দুমাত্র ভয় না করে সেই ভয়াল কুম্ভীরের ঝকঝকে দাঁতগুলোর ফাক থেকে পোকা খুঁটে খুঁটে খায় এমন দৃশ্যও তিনি আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন কবির কলমে।
আমাদের পোলিশ সাংবাদিক ইরান, মিশর, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, তুরস্ক, লিবিয়া গ্রীস যেখানেই কলম হাতে নেন, টের পান হেরোডটাসের প্রবল অশরীরী অস্তিত্ব। অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেন তিনি যাত্রাপথে যে কোন বিপদে তিনি সবার আগে চিন্তা করেন- এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইতিহাসের জনক কি করতেন। সেই সাথে হেরোডটাসের রচনার মাঝ নিমজ্জ থেকেই তিনি খুঁজে যান আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও সেই গ্রীক দর্শনের প্রতিফলন।
পরিশেষে বলি, ট্রাভেলস উইথ হেরোডটাস অবশ্য পাঠ্য একটি বই, ইতিহাসের জীর্ণ ক্ষয়ে যাওয়া মলিন অধ্যায় নয়, তা জীবনের আলোকে উদ্ভাসিত। এর ব্যাপকতা অনেক, এবং তার চেয়েও গভীর এটি নিবিড় ভাবে পাঠের সুখানুভূতি।
মন্তব্য
খুব ভাল্লাগলো অনু ভাই
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
মূল বইটি পড়ে জানিয়েন ! কোন এক সময়ে প্রিয় কবিদের নিয়ে লেখা শুরু করতে হবে।
facebook
পড়ার এত কিছু জমে গেছে, কিন্তু সারাদিন কনফারেন্স, জার্নাল আর থিসিস পেপার পড়তে হয়। আমার সমস্যা হল একটা বই শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারি না। যেটুক সময় পাই সেটুক সচলের টুকিটাকি লেখা পড়ে, টুকিটাকি লেখালেখি, একটু ফটোগ্রাফি নিয়ে গুঁতাগুঁতিতে চলে যায়। কিন্ডলে প্রায় ত্রিশটার মত বই নামানো, পড়া হচ্ছে না। আর আপনারা কয়েকদিন পর পর এক একটা পোস্ট দেন নত্ন নতুন বই নিয়ে। কই যাই বলেন তো!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বইলেন না,বই কিনতে কিনতে আসলেই হিমালয় বানিয়ে ফেলেছি, কবে যে পড়তে পারব কে জানে! তার উপর সারাদিন নতুন নতুন বই সম্পর্কে জানতে পারি, হা সময়, হা মহাকাল।
facebook
facebook
অবশ্যই পড়ব
আপনি একটা করে বইয়ের কথা লেখেন , আমি ভাবি পড়তেই হবে,লিস্ট বড় হচ্ছে, পড়ব নিশ্চয়ই । পড়তে আমার সমস্যা নেই।
কিন্তু একটা করে জায়গায় ভ্রমন করেন , আমি ভাবি আমারও যেতেই হবে, লিস্ট বড় হচ্ছে, কিন্তু কিভাবে যাব?
অসহ্য লাগছে আপনাকে ইদানীং
হুমম,
আমাকে সহ্য করার একটা সহজ উপায়-- দলে আসা !
facebook
হেরোডোটাস এর কথা শুনলেই দ্য ইংলিশ পেশেন্ট সিনেমাটার কথা মনে হয়।
আচ্ছা , আবার পপ্পন কেন !
facebook
দারুন! রুশজার্দ কাপুসচিনস্কির বইটা পড়তেই হবে। কিন্তু বাংলাদেশে কই পাব এই বই তাই ভাবছি।
একটা মজার ব্যাপার হলো হেরোডোটাসকে 'ইতিহাসের জনক' বলে আখ্যায়িত করার পাশাপাশি, তার অসাধারনত্বকে অস্বীকার না করেই - 'মিথ্যার জনক' বা ফাদার অফ লাইজ বলেও ডাকা হয়! অনেক চাঁপাবাজি আর কল্পকাহিনি আছে তাঁর বইয়ে। এই যেমন ধরেন - কালো ভারতীয় পুরুষরা এতই কালো যে তাদের সোনাধন থেকে বেরুনো সোমরসটা পর্যন্ত নাকি ঘুটঘুটে 'কালো' হয়! এমন কথাও 'হিস্টরিজে' আছে! 'ইতিহাসের জনক'-এর পুত্রের এই চেহারা দেখে আমি তো হাসতে হাসতেই খুন হয়ে গেছিলাম। আমার কৌতুহল জাগছে কাপুসচিনস্কি ভারতে এসে এমন তাক লাগানো ঐতিহাসিক সত্যটা ভেরিফাই করে দেখেছিলেন কিনা, নইলে ট্রাভেলস উইথ হেরোডটাস তো ঠিক সম্পূর্ণ হয় না - কি বলেন? হা হা..
****************************************
সত্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বোঝা যায়- এই গুলো শোনা কথা, মানুষের মুখে চর্বিত হতে হতে অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছে ! মার্কো পোলোর বইতে তো অনেক জায়গায় শতভাগ রূপকথা ( যদিও সম্পূর্ণ তার লেখা ছিল না)
হেরোডটাসের ইউনিকর্ন নিয়ে জানতে খুব ইচ্ছে করে।
facebook
হেরোডোটাস ইউনিকর্ন শব্দটি ব্যবহার করেননি - তার ভাষায় এটা ছিল 'শিঙওয়ালা গাধা' বা 'হর্ন্ড এ্যাস'। 'হিস্টরিজ'-এর জর্জ ক্যাম্পবেল ম্যাক্যলের করা ১৯০৪ সালের (ফলে একটু পুরনো ইংরেজি) অনুবাদ থেকে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতিটা দিচ্ছি -
এবার বুঝেন ঠ্যালা - শুধু ইউনিকর্নই নয়, তার উপর আবার 'কুকুরমাথা মানব' আর 'বুকের উপর চোখ লাগানো স্কন্ধকাটা'ও (মানুষ) আছে!
লিখিত ইতিহাসে হেরোডোটাসই বোধহয় প্রথম ইউনিকর্নের কথা উল্লেখ করেছেন - এবং এই একবারই সম্ভবত। তার আরেকটা বিখ্যাত কাহিনি আছে - ভারতের কোন মরুভূমিতে আকারে প্রায় একটা শিয়ালের সমান এক ধরনের দৈত্যাকৃতির পিপড়ার কথা, যারা নাকি মরুভূমির বালু খুড়ে সোনার গুঁড়ো তুলে নিয়ে এসে জমাত। এই পিঁপড়ারা নাকি ধাওয়া দিয়ে একটা আস্ত পূর্ণ-বয়ষ্ক উট পর্যন্ত ধরে গিলে ফেলতে পারত! এমনই সে পিঁপড়ার জজবা!
মজার ব্যাপার হলো, বহুকাল যাবৎ আধুনিক ইতিহাসবিদরা এটাকে তার আরেকটা টিপিকাল গাঁজাখুরি গল্প হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ইদানীং বিশেষজ্ঞরা এমন একটা আপাত গাঁজাখুরি গল্প নিয়েও আবার চিন্তা করছেন। এই অসম্ভব গল্পেরও একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেখুন তার উপর উইকির ভূক্তির "Analysis and recent discoveries"-শীর্ষক শেষ অনুচ্ছেদটায়।
আসলে যে যুগে সমকালীণ বিশ্বকে সিস্টেমেটিকালি রেকর্ড করার মত খুব বেশি লোক ছিল না, সেই যুগে তিনি যা দেখেছেন ও যা শুনেছেন তার অনেককিছুই সিস্টেমেটিকালি লিপিবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করেছেন। হিস্টরিজের মূল বিষয় যদিও খৃষ্ট-পূর্ব ৫ম শতাব্দীর পারস্যের আকিমিনিড সাম্রাজ্যের সাথে তৎকালীণ গ্রিকদের দ্বন্দ্বের কথা, কিন্তু হেরোডোটাস আরো বহু কিছু নিয়ে এসেছেন এর মধ্যে। তিনি এই কাজটা করেছেন বলেই আমরা প্রাচীণ বিশ্বের অনেক কিছুই জানতে পারছি, না করলে পারতাম না। রূপকথা, লোককথা, কেচ্ছাকাহিনি থেকে সত্য ও বাস্তবকে আলাদা করে নেয়ার দায়িত্বটা আমাদেরই। তিনি না লিখলে আমরা সেই সুযোগটাও পেতাম না, কাপুসচিনস্কিরও আর তার সাথে ভ্রমণ করা সুযোগ হত না। হেরোডোটাসের হিস্টরিজ তাই আমার অন্যতম একটা প্রিয় বই - এবং বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে এজন্যে ধন্যবাদ। ভাবছি আবার পড়ব বইটা। চাইলে আপনিও পড়তে পারেন, একটা নতুন অনুবাদ পাবেন - এখানে (এখানে টাইটেলটার অনুবাদ করা হয়েছে - 'ইঙ্কোয়ায়রিজ')।
****************************************
অনেক ধন্যবাদ! আসলে ইউনিকর্নের ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত, কারণ মহেঞ্জেদারোতে এমন প্রাণীর ছাপ যুক্ত সিল পাওয়া গেছে।
কুকুরমাথা মানবের ব্যাপার আরও কয়েকজন বলেছেন, হতে পারে শিয়ালের মাথা দিয়ে তৈরি মুখোশ পরিহিত মানুষদের কথা বলা হয়েছে।
facebook
দারুণ লাগলো। নামটা যতদুর জানি, 'লাও-ৎসু' , কোথাও কোথাও 'লাওচে'ও বলা হয়েছ।
ঠিকই বলেছেন। আমার চীনে বন্ধুরা আবার বলে লাউৎ---- সুউউ ! অনেকেই বলে লাও সে।
facebook
বইটা অবশ্য অবশ্যই পড়তে এবং সংগ্রহে রাখতে হবে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে গেলেই হয়ত বইটা পড়তে পারবো। কিন্তু নীলক্ষেতে এসব বই খুঁজে পাওয়া যায় না সহজে। ধন্যবাদ ভাল একটি বইয়ের সন্ধান দেবার জন্য।
পড়ে জানাবেন কিন্তু--
facebook
চমৎকার একটা লেখা।
শুভেচ্ছা।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন