যে জিনিসটি সর্বগ্রাসী কৌতূহলে আমার শৈশবকে মাতিয়ে তুলেছিল তা মায়ের অফিসে পাওয়া একটা লাল-হলুদ রঙা বই, উপরে লেখা ডাইনোসর! লেখকের নাম মনে পড়ে না কিন্তু মনে আছে ধবধবে সাদা পৃষ্ঠার উপরে নীল কালিতে আঁকা নানা প্রজাতির অদ্ভুত সব ডাইনোসর। জলে, স্থলে, শূন্যে চরে বেড়ানো বিশাল সব সরীসৃপ, প্রায় সবই ভয়াল দর্শন। আজ জানি, সেই বইয়ের অনেক ডাইনোসর প্রজাতিই ছিল মন গড়া, সঠিক তথ্যের অভাব ছিল প্রকট, তারপরও এক শিশুর মনোজগতে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিল সেই সব সরীসৃপেরা। সেই সাথে বইটির শেষ পর্যায়ে লেখা ছিল- এক বিশাল উল্কার পতনের ফলে ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে যায়, উল্কাপিণ্ডটি পতনের ফলে সেই জায়গায় এক বিশাল গর্তের তৈরি হয় যা বর্তমানের মেক্সিকো উপসাগর। ব্যস, মাথার ভিতরে গেঁথে গেল নামটি! পণ করে ফেললাম, আমার প্রিয় ডাইনোসরদের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই গর্ত একদিন দেখতে যেতেই হবে!
এরপর সেই সরীসৃপদের নিয়ে সুযোগ পেলেই নানা বই পড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, দেখেছি অনেক তথ্যচিত্র, তাদের বিলুপ্তির কারণ আজও অজানাই থেকে গেছে, এমনকি সেই উল্কাপিণ্ড নিয়ে বলা হচ্ছে সেখানে একাধিক উল্কা ছিল! জানা গেছে তাদের বিলুপ্তির পিছনে আরো অনেক অনেক কারণ, কিন্তু কিছুই আমার বাচ্চাবেলার প্রতিজ্ঞাকে টলাতে পারে না, মন চায় একবারের জন্য হলেও মেক্সিকো উপসাগরের সেই গর্তে একবার পা ডোবাতে!
গত মাসে বিশাল মেক্সিকোর নানা প্রান্তে অবিরাম ছুটে চলার মাঝেও থেকে থেকেই মনের গহনে ঝিকিয়ে উঠছিল সেই ভাবনা, বন্ধুদের বলতে তারাও রাজি হয়ে গেল, কদিন ধরেই নানা পুরাকীর্তি, স্থাপত্য, বন- জঙ্গল দাপানো হয়েছে, এখন চলুক সাগরের লোনা হাওয়ার সাথে দোস্তি।
প্রথমেই মেক্সিকোর বিখ্যাত সৈকত এলাকা ক্যেন-তা-নারোর তুলুমের দিকে যাওয়া হল, সেখান থেকে ৩০ মাইল এবড়ো থেবড়ো পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো হবে পুনতা অ্যালেন নামের এক জেলে গ্রামে, এটিই এই অন্তরীপের শেষ সীমানা, আর পরপরই নীল-সবুজ সাগরের রাজত্ব।
পুরো এলাকাটিই সিয়াম- কান নামে সংরক্ষিত রামসার সাইটের অন্তর্গত। আছে ঘন ম্যানগ্রোভ বন, সেখানে বাস করে নানা বিরল প্রাণী , কুমির থেকে শুরু করে ম্যানাটি!
এক জায়গায় এমন বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়তেই সদল বলে চড়াও হলাম সেই জলচর স্তন্যপায়ী আত্মীয়দের দেখার আশায়, যদিও সেখানে উপস্থিত বনরক্ষক আমাদের উত্তেজনা দেখে কেবল মৃদু হেসে জানালেন এই ভর দুপুরে ম্যানাটিরাও বিশ্রাম নেয়, বরং সন্ধ্যার আগে বিশেষ জাহাজে চেপে সমুদ্র বিহারে গেলে জলমগ্ন মায়া সভ্যতার স্থাপত্য দর্শনের সাথে সাথে ম্যানাটিদের সাথে মোলাকাত হতেও পারে! অধিক উৎসাহে আগ বাড়িয়ে সেই বিহারের দর্শনী জানতে চেয়েই বুঝলাম কি বিশাল ভুল তা হয়েছে! সাধারণের চেয়ে ৩গুণ ভাড়া হেকে বসল সমব্রেরো মাথায় আয়েশ করতে থাকা পোড় খাওয়া বনরক্ষী।
আড়ালে নিয়ে বাকী তিনজন আমাকে ধুয়ে ফেলে বলল- ব্যাটা, যখন তখন পাবলো নেরুদা না হয় গার্সিয়া লোরকার প্রেমের কবিতার কয়েক ছত্র ভাঙা স্প্যানিশে বলে আমাদের তরুণী সমাজে তো ভালই আসন করেছ, কিন্তু এইখানে খবরদার আমাদের আগে কথা বলতে যেয়েও না, তোমার বদনখানি দেখলে সমস্যা নেই, কিন্তু সে-খানা খুললেই সবকিছুর মূল্য ঝপ করে আকাশচুম্বী হবে।
আর কি, সে যাত্রা পা হেঁটেই বাদাবনের খানিকটা অংশ পেরিয়ে সবুজ সমুদ্রের তীরে পৌঁছালাম সেখানের প্রকৃতি উপভোগের সাথে সাথে ম্যানাটির খোঁজে। এখন বলি কেন ম্যানাটি নিয়ে এত মাথা ব্যাথা আমার! ছোট্ট বেলায় জানা যে রহস্যগুলো মাঝে মাঝেই স্বপ্নের মাঝে এসে দুষ্টুমি ভরা উঁকি দিয়ে যায়, তার মধ্যে একটা মৎস্যকন্যা, অর্ধেক মাছ, অর্ধেক মানুষ এই কল্পনার জীবটির অবস্থান কিন্তু সারা বিশ্বের প্রায় সকল জনপদে, আর জলসংলগ্ন এলাকা হলে তো কিছুই বলার নেই- সেখানের লোকগীতি থেকে শুরু করে জেলেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা সব কিছুতেই পাবেন এই রহস্যময় আধাখেঁচড়া জীবের উপস্থিতি। কেন? এক সময়ে মনে হত, সারা জীবন এই এক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিলে মন্দ হয় না, উপরি হিসেবে অনেকগুলো দেশ ঘোরা হয়ে যেত, বিশেষ করে দ্য লিটল মারমেইডের জনক হ্যান্স অ্যান্ডারসনের দেশ ডেনমার্ক থেকেই শুরু করার ইচ্ছে ছিল সেই অনুসন্ধান।
এখনো ইচ্ছেটাতে খুব যে মরচে পড়েছে তা নয়, কিন্তু জেনে গেছি অনেক মানুষ রহস্য সৃষ্টির জন্য, অপরের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, এমনকি স্রেফ দুটো পয়সা উপার্জনের জন্য অবলীলায় মিথ্যা বলতে পারে। মাসের পর মাস দুরন্ত সমুদ্রে কাটিয়ে বন্দরে ফেরা নাবিকেরা শুঁড়িখানার আড্ডায় স্রেফ কথার খাতিরেই হয়ত হলফ করে বলত- মৎস্যকন্যা দেখেছি। কিন্তু সব কিংবদন্তীর পেছনেই যেমন একটা সরল ক্ষুদে ভিত্তি থাকে, হয়ত সাত সাগরের এই মৎস্যকন্যাদের পিছনেও ছিল এমন এক সত্য যা সেই নাবিকদের চোখ এড়িয়ে যেত।
সেই সত্য হচ্ছে ম্যানাটি। জলজ স্তন্যপায়ী এই গোত্রের প্রাণীদের ( ডুগং, সাগর গাভী) বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে দেখলেই হয়ত মাসের পর মাস নারী সংসর্গ বিচ্ছিন্ন মাতাল নাবিক কল্পনার চোখে এক ঝলক নারীর আদল দেখতে পেত, কিন্তু জাহাজ কাছে যাওয়া মাত্রই যখন শক্তিশালী লেজের ঝাঁপটা মেরে ম্যানাটি জলের গহনে আশ্রয় নিত, তখন বিমূঢ় নাবিক দেখত কেবল সেই অপরূপা তরুণীর ছিল মাছের মত লেজ ! সেইখান থেকেই শুরু, আজো চলছে মৎস্যকন্যার খোঁজে আমাদের সমুদ্র মন্থন।
যাই হোক, মানগ্রোভ বনের কিছুটা পাড়ি দিতেই চোখে পড়ল স্নিগ্ধ সবুজ সাগর, ঢেউ নেই, আলোড়ন নেই, চলে গেছে সে দূরের বাদাবন পর্যন্ত। যেন মখমলের কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে কেউ সারা ভুবন জুড়ে,
এর ফাঁকে কাছের গাছটাতে দেখি দুটি বাদামী গগনবেড় মনের সুখে দিবানিদ্রা দিচ্ছে, বা বলা চলে আয়েশ করে মৃদুমন্দ সমীর উপভোগের সাথে সাথে মেক্সিকোর সূর্যের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে গাছের ডালে দুলে দুলে।
তাদের শান্তিতে থাকতে দিয়ে ফেরার পথেই দেখা হল দুই খেচরের সাথে, প্রথম জন ট্রপিক্যাল কিং বার্ড ( বাংলা নামকরণ এখনো হয় নি বলে ইংরেজিটাই ব্যবহার করতে হল)
পরের জন অতি বিখ্যাত মকিং বার্ড, ( হারপার লির উপন্যাস টু কিল এ মকিং বার্ডের জন্য নয়, এদের মূল খ্যাতি গ্যালোপাগোস দ্বীপপুঞ্জে এই পাখি দেখেই বিবর্তনের চিন্তা ডারউইনের মনে বিষদ ভাবে দোলা দেয়, যদিও জনপ্রিয় বিশ্বাস, নানা প্রজাতির ফিঞ্চ পাখিদের দেখেই ডারউইন বিবর্তন তত্ত্বের চর্চায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন)।
এবার মহা সাবধানে এগোবার পালা, কেবল যে এবড়ো থেবড়ো মাটির রাস্তা তা নয়, তীক্ষ বাক একে করে তুলেছে মহা ঝুঁকিপূর্ণ। অল্পখানি রাস্তা বেশ সময় লাগিয়ে পার হয়ে সেই জেলেপল্লীতে পৌঁছালো আমাদের চারমূর্তি। এর পরপরই দরাদরিতে সিদ্ধ হস্ত চিকো স্থানীয় এক মাঝির সাথে নৌকায় করে ম্যানগ্রোভ বন, খোলা সাগরে ঘুরতে যাবার সাথে সাথে সাগরের স্নরকেলিং-এর মহা সুব্যবস্থা করে ফেলল।
বেশ চমৎকার গ্রামটি, উপকূলের সব বসতির মতো নারকেল গাছে ঘেরা, বিচ্ছিন্ন কিছু পানশালা, রঙচটা গির্জা আর অগুনতি মাছ ধরার নৌকার সমাহার।
সেখানে আবার পানকৌড়ি, পানচিল, গাঙচিল নানা সামুদ্রিক পাখির সমাহার।
থেকে থেকেই দেখা মিলল অপূর্ব ফ্রিগেট পাখি, প্রাপ্তবয়স্ক এবং তরুণ উভয়েরই।
অবশেষে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চেপে সিনর মিগুয়েল হারনান্দেজের সাথে আমাদের যাত্রা শুরু, ঘন ম্যানগ্রোভের সবুজ বেষ্টিত খালগুলো পার হয়ে অবশেষে দেখা মিলল স্বপ্নের মেক্সিকো উপসাগরের, হায়, এই উপসাগরের অস্তিত্বের জন্যই হয়ত প্রাণ দিতে হয়েছে কোটি কোটি ডাইনোসরদের !
যদিও ইসাইয়াস ফোঁড়ন কাটার চেষ্টা করল এই বলে যে, আমাদের সামনের বিপুল জলসীমাকে মেক্সিকো উপসাগর না বলে বরং ক্যারিবীয় সাগর বলা যেতে পারে! এক ধমকে থামিয়ে দিয়ে ব্যাটাকে বললাম, একই তো জিনিস প্রায়ই, এত কচলানোর আছে তা কি ! বিশ্বে কি আসলেই সাত মহাদেশ, পাঁচ মহাসাগর! এতো মানুষের হিসেবের সুবিধের জন্য নামকরণ করা হয়েছে, আসলে সাগর তো মাত্র একটা, বিশ্বসাগর!
এইসময় কাপ্তান হারনান্দেজ জানালেন আমরা বিশেষ কিছু এলাকায় সাগরের বিশালাকার কচ্ছপের খোঁজে তল্লাশি চালাব! কি চমক লাগানো প্রস্তাব! কোটি কোটি বছর আমাদের গ্রহতে টিকে থাকা এই অসাধারণ উভচর প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব আর হুমকির মুখে কেবলমাত্র মানবজাতির মাত্রাতিরিক্ত লোভের কারণে ( তাদের মেরে তো খাচ্ছেই মানুষ, আবার মাছ ধরার জালে আঁটকে মারা যাচ্ছে অসহায় কচ্ছপেরা), তাদের শেষ বংশধরদের সাথে নিজ আবাসে দেখা করতে পারাও চরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।
কাপ্তান কিছু কিছু জায়গায় যেয়ে ইঞ্জিন বন্ধে করে ভেসে বাতাসের টানে ভেসে যাবার সাথে সাথে টরটুগা, টরটুগা ( স্প্যানিশে কচ্ছপ) বলে গান ধরল, মনে পড়ল নিউজিল্যান্ডের মাওরিরা নাকি এভাবেই তিমি দেবতার উদ্দেশ্যে উদাত্ত কণ্ঠে গান ধরে। সাগরের ঈষৎ সবুজ বর্ণ জল বেশ স্বচ্ছ, তলদেশ পর্যন্ত সহজেই দেখা যায়, সেখানে প্রবালের রাজ্য, মাছেদেরও দেখা মিলল, কিন্তু কচ্ছপ বাবাজীরা দূর অস্ত।
আর তখনই দিগন্ত থেকে ভীম গতিতে কাপ্তানের গানের টানেই সাগর ফুঁড়ে উঠে এল কালো চকচকে টর্পেডোর মত এক লম্বাটে শরীর, বুঝে ওঠার আগেই সাগরে মিলিয়ে গেল, কেবল চোখে পড়ল তিন কোণা পাখনা!
খানিক দূরে যেয়ে সাবলীল বাঁক নিয়ে আবার ফিরে এল আমাদের কাছে, বন্ধুত্বের প্রত্যাশা নিয়ে। না যার কথা ভাবছেন সেই হাঙর না, সে ছিল আমাদের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু ডলফিন। খুব খোশ মেজাজে ছিল সে, কত যে কৌতুককর ভঙ্গীতে আসা-যাওয়া করল নৌকার কাছ দিয়ে, গড়ান দিয়ে ডিগবাজি দিল খামোখায় আমাদের নির্মল আনন্দ দেবার জন্য! তার লেজের সৌন্দর্য দেখে মনে পড়ল হারম্যান মেলভিলের বিশ্বখ্যাত উপন্যাস মবি ডিকের এক জায়গায় লেখকের তিমির লেজের বর্ণনার কথা, যেখানে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জাদুময় দৃশ্যগুলোর একটি।
এক পর্যায়ে বিদায় নিল মায়ার বাঁধনে জড়ানো নতুন বন্ধুটি, তখন আবার কচ্ছপের খোঁজে উপসাগরের অন্যপ্রান্তে রওনা হল আমাদের নৌকা। মাঝেই মাঝেই পথে পড়ছে ম্যানগ্রোভ বনের শাখাপ্রশাখা, তার মাঝেই প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট খালে এঁকে বেঁকে ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছি আমরা অপর পাশে মাঝির মুন্সিয়ানার জন্য।
এক জায়গায় দেখা হল বিশ্বের সেরা মাছশিকারি পাখি মাছমুরাল( অসপ্রে)- এর সাথে, সে দেখি বিশাল বাসাতে সতর্ক ভঙ্গীতে বসে আগুনঝরা দৃষ্টি নিয়ে চেয়েই রয়ল আমাদের দিকে।
আরামে নিজের পালকে ঠোঁট ঢেকে ঘাড়টা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে বেশ একটা জম্পেশ ঘুমানোর প্রস্তুতিতে ছিল বাদামী গগনবেড়,
কিন্তু বেশী নৈকট্যের ফলে মানবজাতির বিদঘুটে গন্ধপছন্দ না হওয়ায় ডানা মেলে চলে গেল দৃষ্টিসীমার আড়ালে।
ঘণ্টাখানেক এই নয়নাভিরাম স্থানটিতে নৌকা চালানোর পর এক জায়গায় নোঙর ফেলে কাপ্তান জানালেন সময় হয়েছে সাগরে অবগাহনের! এবার আর উপর থেকে নয়, একবারে জলে ডুব দিয়ে ভাব করার চেষ্টা করব জলজ প্রাণীদের সঙ্গে। পায়ে ফ্লিপার আর চোখে স্নরকেলিং-এর গ্লাস এটে ঝাপিয়ে পড়লাম সবাই মেক্সিকো উপসাগরে,
তবে সমুদ্র তখন উথাল পাথাল,
জলও খুব স্বচ্ছ মনে হল না, তাই কিউবায় যে রঙ ঝলমলে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার তুলনায় এখানের সমুদ্রের নিচের জগৎ বেশ ফিকে মনে হল। এর মাঝেই চিকো সাগরের তলদেশ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এল বেশ বড় আকারের এক জীবন্ত শঙ্খ।
খানিকক্ষণ সাগর দাপিয়ে আবার নৌকার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে খেয়াল করলাম সূর্যদেব পশ্চিম দিগন্তে রাতের যাত্রার তোড়জোড় শুরু করেছেন,
খানিকপরেই তার বদলে দেখা গেল কেবল রেখে যাওয়া স্মৃতির সোনালি চিহ্নগুলো।
আমাদেরও সময় হয়েছে তীরে ফেরবার, ভেজা শরীর নিয়ে নৌকার সামনে বসে আরামে গান গেয়ে গরম থাকার প্রয়াস চলতে থাকল ।
শেষ চেষ্টা হিসেবে অগভীর এক খাড়ির ভিতরে দিয়ে যাবার সময় আমাদের চোখে পড়ল এক ভুতুড়ে চলমান আবছা অবয়ব, জল কেটে অদ্ভুত ভঙ্গীতে সাঁতরে চলেছে বিপুল আত্নবিশ্বাস নিয়ে। হুররে, টরটুগা! অবশেষে এক সাগর কচ্ছপের দেখা মিলল, কি প্রজাতি বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু অভিজ্ঞ কাপ্তান জানালেন আর কয়েক মিনিটের মাঝে নিঃশ্বাস নিতে উভচর মহাশয় মুখ দেখাবেন, আমরা যেন প্রস্তুত থাকি।
শুরু হল অপেক্ষার প্রহর গোণা, সেই সাথে সহযাত্রীরা কাউন্ট ডাউনের সাথে সাথে বলতে থাকল মজার মজার সব গল্প, শুনলাম জনাকয়েক মার্কিনী এইখানেই কচ্ছপের ভেসে ওঠায় দেরী হওয়ায় অধৈর্য হয়ে বলেছিল, তারা ডুব দিয়ে কচ্ছপটিকে উপরে তুলে কেবল ছবিতুলেই ছেড়ে দিতে পারবে কিনা, কোনরকম ক্ষতি না করে !
কি আব্দার! কাপ্তান কড়া গলায় জানিয়েছিল- এই গোটা এলাকা অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচিত, কেউ কোন কচ্ছপের সাথে এমন আচরণ করলে তারা এর এই অঞ্চলে আসবে না, ফলে হাজার মাথা কুটলেও আর তাদের দর্শন মিলবে না।
মিনিট পনের পরে সারাদিনের সমস্ত অপেক্ষার কষ্টকর মুহূর্তগুলো মুছে দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর ঝলমল করে উঠল এক কচ্ছপের রূপে।
আকাশের পানে চেয়ে দেখি বিশাল এক ক্যানভাসে আমাদের সন্মানেই যেন আঁকা হয়েছে বর্ণনার অতীত এক অপরূপ শিল্পকর্ম।
মন্তব্য
খুব ভাল লাগল অণু দা, সকালবেলা উঠেই এই নীলাভ সবুজ জল দেখে মন প্রশান্তি পেল ।
তবে আপনার ছবি আর লেখার 'সাইডেফেক্ট' এড়ানো গেল না ।
তাই প্রশান্তির সাথে আক্ষেপ ফাউ হিসেবে পেলাম ।
যাই হোক, চালিয়ে যান ।
খুব ভাল থাকুন ।
ধন্যবাদ।
আরে আক্ষেপ মানেই সময় নষ্ট, বেটা খুব পাজি জিনিস।
facebook
এতবার ধরা খাওয়ার পরেও আপনার ইট রাখার অভ্যেস গেল না!
এতবার করে বললাম তাও লোকে বুঝে না। ইটা কি কমেন্ট করার জন্য রাখছি নাকি? মাথায় মারার জন্য ইটা দেই।
বললাম তো ইটার বদলে পাঁথর মারেন, একটা দুর্গ গড়ি!
facebook
facebook
আরও বেশি করে ইটা রাখেন। উষ্টা খাইয়া বেটা ঠ্যাং ভাইঙ্গা পরে থাকুক কয়দিন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এমনিতেই পড়ে আছি
facebook
facebook
যাক এইবার একটু কমন পড়ল। এর একটা অংশ আমাদের পাড়াতেও আছে, অনেকবার দেখেছি। আপনি অবশ্য অন্য সাইডে ছিলেন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মাঝে মাঝে মনে হয় দুনিয়াটা আসলেই ছোট।
facebook
বস লেন্স আর ক্যামেরার মডেল কি?
---------------------
আমার ফ্লিকার
ক্যানন ৭ ডি, লেন্স ভাই পাখিরগুলা ৩০০ এমএম এ তলা,অন্যগুলি ১৮-২০০ এম এম
facebook
(গুড়)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সবুজ সাগরের রাজা, নিক টা কেমুন অয়!
facebook
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
facebook
তারেক অণুর ইমো চাই।
ইবনে বতুতার মত তারেক অণুর নামও পাঠ্যপুস্তকে চাই।
facebook
বিকালের মিড টার্ম পরীক্ষা খারাপ হইলে আপ্নের দোষ। আমি কিস্যু জানি না।
আরে না, ভাল মত দিয়েন!
facebook
ঐ ঐ।
সরীসৃপ দিলাম না, তারপরও ঐ!
facebook
facebook
অঅঅঅঅচাম্মম্মম্মম্মম্ম!!!!!!!!!
অতীত
শুভেচ্ছা
facebook
এই পোস্টের অপেক্ষাতেই ছিলাম ... আইতাছি খ্রান
গত ইন হিম্মেল!
খাঁড়ায়েই তো আছি !
facebook
ডাইনোসর'অলা বইটা কি বিশ্বকোষ ছিলো ?? আমার মনে হচ্ছে ছোটবেলায় ওটা আমিও পড়েছি- নাম মনে পড়ছে না।
মেক্সিকোর বর্ণনা তাইলে মুভিতে যা দেখি ঠিকই আছে মনয়- বনরক্ষীর যে বর্ণোনা দিলেন
আর ঘণুদা শার্টটা তো সেইরাম লাগাইসেন, পুরাই হাওয়াই বন্ড- হেহে।
না না, মুভিতে মেক্সিকোকে খুবই বাজে ভাবে দেখায়, ওখানকার মানুষগুলো যে কি বন্ধুবৎসল আর অমায়িক! রক্ষী ব্যাটা তো ট্যুরিস্ট এলাকার লোক তাই।
বিশ্বকোষ না মনে হয়, একটা আলাদা বই-ই ছিল।
শার্ট , হে হে , রাজশাহী সিল্ক যে !
facebook
চালিয়ে যান ।
চেষ্টা করছি-
facebook
facebook
আপনাকে ভাই হিংসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম ! গরিব মানুষদের পৃথিবী ভ্রমণের কোনো উপায় নাই? রাজশাহীর আনাচেকানাচে চষে বেড়ানোর কাহিনী কবে দেখাবেন? নেন
অর্থনৈতিক ভাবে গরীবরাই কিন্তু বিশ্ব ভ্রমণ করে যুগে যুগে, এটা প্রমাণিত সত্য, কারণ তারা অর্থের মায়ায় আটকায় না।
রাজশাহীর পদ্মার চরের কাহিনী আসিতেছে।
facebook
facebook
২য় ছবিটা এত বেশি ভাললাগতাছে কেন ??????????
অন্যরকম মিল...
আকাশ যে শার্ট হয়ে আছে, তাই হয়ত !
facebook
facebook
খুব সুন্দর।
P.S. পৃথিবীর সব রূপ দেখার সৌভাগ্য যার এত ঘন ঘন হয়, তাকে 'গুপ্তহত্যা' করার কন্ট্রাক্ট এখনও কেউ নেয়নি?!
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
করে তো!
কিন্তু আমি বুলেটপ্রফ যে
facebook
facebook
ভূপেন হাজারিকা বেঁচে থাকলে নিঃশ্চিত নিজের গান এর কথা বদলে লিখতেন "তারেক অনু এক যাযাবর, পৃথিবী তাকে করেছে আপন, সে ভুলেছে নিজের ঘর, তারেক অনু এক যাযাবর"
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
যাযাবর হইতে মুঞ্চায়, পারতাছি না
facebook
সত্য কথা বললাম, আর আরেকজন হাসে
facebook
নীল আকাশ, সবুজ জল! কি অদ্ভুত কম্বিনেশন!
লেখা পড়িনি। ছবিগুলোতেই আটকে গেলাম।
অনেকদিন পর ছবির মতো কিছু ছবি দেখলাম। পাখিদের ছবিগুলো অসাধারণ!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ। আসলেই মেক্সিকো এক জাদুরাজ্য
facebook
পুনর্জন্ম সত্যি হলে বিলস গেটস বা বারাক ওবামা নয়, বরং তারেক অনু হয়ে জন্মাতে চাইতাম
ঠিক আমার মনের কথাটাই বলেছেন
হ আর কাজ নাই তো।
facebook
আম্মো তাই চাই ।
_____________________
Give Her Freedom!
facebook
facebook
খুব ভাল লাগলো। ছবিগুলো খুবই সুন্দর।
ধন্যবাদ।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন