কী বলতে চেয়েছিলেন রবার্ট ফ্রস্ট? ( অথবা আমার ফেরৎ না দেয়া বইয়ের গল্প)

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বুধ, ১৪/০৩/২০১২ - ৬:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল বিকেলে বেশ কদিন পরে হাঁটাহাঁটির জন্য তুষারস্নাত বনে হারিয়ে গিয়েছিলাম খানিকের জন্য, এখন অবশ্য বসন্তের আগমন ধ্বনি সোৎসাহে ঘোষণা করছে ক্ষুদে পাখির দল তাদের মনমাতানো কলরবে, কিন্তু শীতের বিদায়বার্তা আসলেও তার নীরব শ্বেত জমাট অস্তিত্ব এখনো চারিধারেই বিপুল বিক্রমে প্রকাশিত, যে কারণে বন-প্রান্তর আসলে তুষার নয় শক্ত বরফাচ্ছাদিত। পাখি ছাড়াও অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে বুনো খরগোশের দল, চঞ্চল কাঠবেড়ালি, অদৃশ্য প্রায় লাল শেয়াল। সজারুর দল ঘুমে কাদা এখনো।

কিন্তু এই অপরূপ নিস্তব্ধ নির্জন নিসর্গ একাকী উপভোগ করতে পারি না আমি, মস্তিস্কের ধূসর কোষে কোষে আরেকজন আমার হয়ে বহু চেনা কিছু শব্দাবলী বলে যায় অবলীলায় বাঁধ ভাঙা নদীর মত। আমার যা কিছু বলার আছে এই গাছের কাছে, পাখির কাছে, গলন্ত তুষারের কাছে, জমাট নীল আকাশের কাছে, উত্তুরে হাওয়ার কাছে অত্যন্ত একতরফা ভাবে, অতি নির্লজ্জ হয়ে অনেক অনেক দশক আগে আমার মনের সমস্ত কথা বলে গিয়েছেন মার্কিন দেশে জন্ম নেওয়া এক কবি, আমার আত্মার আত্মীয়, নাম তার রবার্ট ফ্রস্ট।

Jb_modern_frost_2_e

পাইনের ডাল থেকে তীক্ষ সবুজ সুইয়ের মত অংশ যখন বনের বরফঢাকা তলদেশ জুড়ে থাকে, দমকা বাতাসে বার্চের পাতাহীন ডাল থেকে খসে পড়ে এক দলা দুর্বল বরফ, ফ্রস্টের অশরীরী শব্দগুচ্ছ অমৃতের নদীর মত মনের তলদেশে ঘুরপাক খেতে থাকে।

শরতের পাতা ঝরার রঙ ঝলমলে দিনে ফ্রস্ট মনের কন্দরে রাজত্ব করেন বিপুল বিক্রমে, যেমনটি করেন গ্রীষ্মের আলোকময় লম্বা দিনগুলোতে আর বসন্তের সন্ধিক্ষণে পরিযায়ী পাখিদের ফিরে আসার সাথে সাথে প্রকৃতি যখন জড় থেকে সবুজ জীবে পরিণত হয়। আমাদের আহ্বান জানিয়ে চিরতরুণ কবি বলে যান,
I'm going out to clean the pasture spring;
I'll only stop to rake the leaves away
(And wait to watch the water clear, I may):
I shan't be gone long. -- You come too.

এ যেন কুহকময় ডাক নিসর্গে অবগাহনের জন্য, যেখানে কবি একাই হয়ে উঠেছেন পরিপূর্ণ অন্য ভুবনের প্রতীক। কবি কি এখানে আসলেই অন্যদের ডেকেছেন তার সঙ্গী হতে, না নিজের প্রতিই তার এই আকুল আহ্বান। চলে এসো আমার সাথে, এসো।

কি বলতে চেয়েছেন কবি তার অমর কবিতাগুলোর মাধ্যমে? তিনি কি নিসর্গকে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মত শব্দে আঁকতে চেয়েছিলেন অন্যদের জন্য, নাকি এ ছিল তার একান্ত ব্যাক্তিগত উপলব্ধি, নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন। এর উত্তর পাওয়া হয় না দিশেহারা পাঠকের, কেবল ছন্দময় শব্দের ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে তারা এগিয়ে চলে রবার্ট ফ্রস্ট নামের বিস্তীর্ণ আদিগন্তহীন প্রান্তরে।

460px-Robert_Frost_NYWTS

ফ্রস্টের কবিতার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে হাইস্কুলে, Tree at My wIndow নামে অদ্ভুত কবিতা ছিল পাঠ্য পুস্তকে, যেখানে কবির মানসিক অবস্থার সাথে রূপক হিসেবে তার জানালার বাহিরে অবস্থিত ঝাঁকড়া গাছটির অদ্ভুত মিল দেখানো হয়। নানা বাজে গাইড বই পড়ে হাস্যকর সব ব্যাখ্যা লিখে ইংরেজিতে উতরে গিয়েছিলাম বটে কিন্তু কবির মনের কথা বুঝতে বিন্দুমাত্র সহায়ক হয় নি সেই সময়ের পারিপার্শ্বিকতা।

এর পরে হুমায়ূন আহমেদের কিছু বইতে কবির কিছু বাছা বাছা পঙক্তি পড়েছি বুভুক্ষুর মত, জেনেছি জওহরলাল নেহেরুর প্রিয় কবি ছিলেন তিনি, বিশেষ করে নেহরু Stopping by the wood on a snowy evening নামের অমর কবিতাটির প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ফ্রস্টের কবিতার সাথে সত্যিকারের নিবিড় যোগাযোগ ঘটল ভারকাউসে এসে, এখানেই আমার প্রবাস শিক্ষা জীবনের শুরু। বন আর হ্রদ ঘেরা একরত্তি শহর ভারকাউস, জনসংখ্যা মাত্র হাজার বিশেক। ফিনল্যান্ড হিসেবে তাও নেহাৎ মন্দ নয়। সেখানের গ্রন্থাগারটি ছিল অজানা দেশের মরুভূমিময় প্রথম দিনগুলোতে মরূদ্যানের মত। যদিও ইংরেজি এখানের ৩য় ভাষা হিসেবে ( ফিনিশের পরে ২য় ভাষা সুইডিশ) খুব একটা জনপ্রিয় না হওয়ায় বইপত্র খুব বেশী ছিল না। কিন্তু গ্রন্থাগারের বিশেষ কক্ষ থেকে মিলল ফ্রস্টের বাছাই করা কিছু কবিতা নিয়ে অপূর্ব এক সংকলন You Come Too.

কবিতাগুলোর সাথে সাথে বইটির অঙ্গসজ্জায় ব্যবহৃত মন ছুয়ে যাওয়া স্কেচগুলো দেখতাম প্রায় প্রতিদিনই, সাধারণ আটপৌরে দৃশ্যসব, ফসলের মাঠের বেড়ার গায়ে ঠেস দিয়ে আছে একটি নিড়ানি, পত্রহীন গাছের ডালে সদম্ভে অস্তিত্ব জাহির করছে ছোট্ট পাখি, উড়তে শেখা প্রজাপতির দল, পাখির বাসায় ছানাদের কোলাহল, নির্জন ফার্ম হাউস, ঘাস ফড়িঙের লাফ, বরফের নিচে চাপা পড়া আকাশ ছোঁয়া গাছগুলো- এমন সব সাধারণ চিত্র কবিতাগুলোর সাথে যথাযথ ব্যবহারে কি যে আবেগের জোয়ার এনেছিল মনের মাঝারে।

যে কারণে বইটি প্রতি ছয় মাস পরপর যেয়ে আবার ইস্যু করে নিয়ে আসতাম ( কোন বই অন্য কেউ রিজার্ভ না করলে প্রতি মাসে একবার করে তখন টানা ৬ মাস রিনিউ করা যেত, আর ৬ মাস পরে আবার ইস্যু করতে চাইলে দেখিয়ে নিয়ে আসতে হত যে বইটি অক্ষত আছে! এই ভাবে প্রায় ৩-৪ বছর বইটি আমার কুক্ষিগত হয়ে থাকে।

সুযোগ পেলেই গ্রীষ্মে পাইন, বার্চ, স্প্রুসের বনে যেয়ে কবিতাগুলো আত্মস্থ করার চেষ্টা চালাতাম, মানে বোঝার চেষ্টা করতাম। শীতের কত হিম শীতল দিন যে কেটে গেছে ডর্মের বিছানার শুয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে এক মাথা বরফ নিয়ে দাড়িয়ে থাকা গাছের সারির দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে Birches কবিতাটি পড়ে, সুদীর্ঘ সেই কবিতার শেষ লাইনটি মাথায় গেছে গিয়েছিল সারা জীবনের জন্য-

One could do worse than be a swinger of birches.

এর মাঝে হাতে আসল তার এক জীবনীগ্রন্থ, এক রত্নভাণ্ডারের সমস্ত ঐশ্বর্যময় তথ্যে ঠাসা। জানলাম প্রিয় কবি প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও একাকী নিসর্গে হাঁটতে যেতেন, হয়তবা নিজের নব সৃষ্টি শোনাতেন গাছ, পাখি, ফুলদের। যে কোন ধরনের আবহাওয়াতেই এর ব্যতয় ঘটত না।

কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজেও কৃষক হয়েছিলেন তিনি, যদিও অর্থনৈতিক ভাবে ব্যর্থ কৃষক বলা যায় তাকে, কারণ তার ফার্ম কখনোই জাগতিক লাভের মুখ দেখত না, কিন্তু নিজের এই ফার্মই তাকে জুগিয়েছিল একের পর এক নিরন্তর উৎসাহ, নব কাব্য সৃষ্টির প্রেরণা।

800px-Robertfrostfarm

২০ বছর বয়সে যখন তার অভিভাবক ঠাকুরদাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি জানান তিনি- কবিতা লেখায় হবে তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান, উপহাসের সাথে সাথে প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হন অভিভাবক মহলে।

হয়ত সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই একটি নীল পাখির সাথে নিজের সাধের তুলনা করে লিখেছিলেন --

I have wished a bird would fly away,
And not sing by my house all day;

Have clapped my hands at him from the door
When it seemed as if I could bear no more.

The fault must partly have been in me.
The bird was not to blame for his key.

And of course there must be something wrong
In wanting to silence any song

বুক চিতিয়ে বলেছিলেন, যদি একটি কবিতার বই প্রকাশ করতে কুড়ি বছরও অপেক্ষা করতে হয়, তবে তাই সই! অত্যন্ত কাকতালীয় ভাবে কুড়ি বছর পরেই ঠিক চল্লিশ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই A Boy's Will প্রকাশিত হয়। এর মাঝে কবি ইংল্যান্ডে কাটান বেশ কিছু বছর।
বাকিটুকু আজ ইতিহাস, হয়ত নিজের জীবন নিয়েই ফ্রস্ট বলে গেছেন,

Two roads diverged in a wood, and I,
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.

মূর্ত করেছেন নিজের কবিতা লেখার নেশার জন্য নিশ্চিত স্বচ্ছল জীবনের হাতছানি ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়ানো, যা সৃষ্টিশীল মানুষের একমাত্র পথ।

বুক ভরা অতৃপ্তি নিয়ে পথ চলা কবি অমৃত কুম্ভের সন্ধানে যাত্রাপানেই হয়ত অবিরাম মন্ত্র জপে চলতেন-

The woods are lovely, dark and deep.
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep

আজীবন নিসর্গ পূজারী কবি বারংবার প্রকৃতির কাছেই হাত বাড়িয়েছেন লেখার বিষয় নির্বাচনের জন্য, উপযুক্ত নৈবদ্য দিয়ে তবেই রচনা করেছেন উঠানের এক কোণে পড়ে থাকা প্যাচপ্যাচে তুষার, ভরত পাখির ঝাঁক, জোনাকি, গরুর পাল, পাথরের প্রাচীর, হেমলকের ডাল থেকে খসে পড়া বরফ নিয়ে অভূতপূর্ব সব কাব্য।

ফ্রস্ট সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র কবি যিনি নিজের কবিতায় রচনা করেছেন আপন এপিটাফ, যাতে লিখে যেতে চেয়েছেন পৃথিবীর সাথে তার সম্পর্ক একজন প্রেমিকার মত- আনন্দ, সোহাগ, বেদনা, খুনসুটিতে ভরা।

I would have written of me on my stone:
I had a lover’s quarrel with the world.

কিন্তু সেই সাথে মানব জাতিও বার বার এসেছে তার কাব্যে নব নব রূপে, Death of a hired man নামের অনন্য সাধারণ কবিতাটি মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত কৃষিজীবী মানুষের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেই সাথে দ্ব্যর্থহীন ভাবে উচ্চারণ করেছেন,

Men work together,' I told him from the heart,
`Whether they work together or apart.'

এই ভাবেই জীবনের অন্তহীন পথে চলার সাথে সাথেই প্রতিদিন একজন রবার্ট ফ্রস্ট নামের কবি , যাত্রাপথে চলন্ত বাহন থেকে পথের দুধারে তাকালে সবার আগে তার পংক্তিই মাথায় ঘুরপাক করে ওঠে,

Heaven gives its glimpses only to those
Not in position to look too close.

এমন ভাবেই সময় বয়ে যায়, একসময় ছেড়ে আসতে হয় প্রিয় ভারকাউস, সেখানের আশ্রয়দাতা গ্রন্থাগার, অবারিত বন, অতল হ্রদ, কিন্তু ফেলে আসতে পারি না কবির কবিতা সংকলনটা। নিজের মুখে বলতে সঙ্কোচ হয়, তাই বন্ধুকে দিয়ে সেখানে বলে পাঠালাম- বইটি হারিয়ে ফেলেছি, এখন গ্রন্থাগারের নিয়ম অনুযায়ী জরিমানাসহ উপযুক্তমূল্য পরিশোধ করতে চাই। বইটি আমার সম্পত্তি নয়, সম্পদ হয়ে থাকে সবসময়ের জন্য।

আজ ১৪ মার্চ রাত দুইটার সময় যখন আমি প্রিয় কবি নিয়ে লিখার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হলুদ মলাটের বইটি আমার বিছানার পাশের বইয়ের তাক থেকে সলজ্জ উপস্থিতি জানাচ্ছে, টেনে নিয়ে বুক মার্ক উল্টাতেই Hyla Brook নামের কবিতাটি বের হয়ে পড়ে, যার শেষ লাইনটিকে আমার মনে হয় পৃথিবীর সব কথার শেষ কথা-

We love the things we love for what they are.

RobertFrost

( আসছে ২৬ মার্চ অমর কবি রবার্ট ফ্রস্টের জন্মদিন। বেঁচে থাকবেন কবি আমাদের সকলের হৃদয়ে, প্রতি দিন , প্রতি মুহূর্ত।

এই লেখাটি রিফাত সানজিদা তিথী মানে ব্লগার তিথীডোরের জন্য ( তিথীর বদলে তিথি বললে কিন্তু খবর আছে!)। আমি নিজে কবিতা পড়েছি খুব কম, লিখেছি আরো অনেক অনেক কম, কিন্তু কবিতার জন্য এক মিলকিওয়ে পরিমাণ ভালবাসা নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছি সবসময়। তাই কবিতাখোর মানুষ দেখলে আমার ভীষণ আনন্দ হয়, আপন বলে মনে হয়। এমন এক কবিতাখোর মানুষকেই উৎসর্গ করলাম প্রিয় কবির প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে নেহাতই আবেগতাড়িত কাঁচা লেখাটি।

ব্যবহৃত ছবি গুলো উইকি থেকে নেওয়া। )


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

মাবুদে ইলাহী! এজন্যেই তাহলে আমার পুরো নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। দেঁতো হাসি
কবিতাখোর বেশ ভারি শব্দ! আমি রোগাপটকা মানুষ, পড়াশোনাও তো অতি সীমিত।
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তারেক অণু এর ছবি

এর বাংলা কি হবে ঠিক জানি না, তাই আংরেজি ঝাড়লাম- The Pleasure is Mine.

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

লিখাটা চমৎকার হয়েছে চলুক । ইয়ে, কবিতাখোর/ কবিতাখেকো লোকজন নাকি চরম রোম্যান্টিক হয় চোখ টিপি

তারেক অণু এর ছবি

হা হা, হবারই কথা। তবে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিকতায় আক্রান্ত থাকে।

মাহমুদ.জেনেভা এর ছবি

কলেজ জীবনে এক সময় নেশা করতাম সিগারেট গাঞ্জা পেরিয়ে হেরইনে আসব এমন সময় বড় আপা টের পেয়ে গেলেল। তারপর বেশ কটা গল্পের বই আর নিচের কবিতার চারটা লাইন লিখে একটা ডাইরি দিলেন। এটাও বললেন নেশা বিহীন পৃথিবীর কোন মানুষ নাই চেষ্টা করে নেশাটা কে অয়ত্তে নিয়ে আসতে আর পরিবর্তন করে গল্পের বই পড়ার মাঝে নিয়ে আসতে। কবিতার এই চারটা লাইন আমার মস্তিষ্কে গেথে গেছে!
The woods are lovely, dark and deep.
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep

তারপর হাটি হাটি পা পা করে অনেকটা দূরে চলে এসেছি! রবার্ট ফ্রস্টের মতো ঘুমাতে জাবার আগে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে চাই
আপনার প্রত্যেকটা পোস্ট খুব ভাল লাগে। কমেন্ট করা না হলেও মনে রাখবেন আমি আপনার নিয়মিত পাঠক! আমি এই পোস্ট টা প্রিয় পোস্টের তালিকায় নিতে চাই। হাচলদের কি এই সুবিধাটা আছে? কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম পারিনাই

তারেক অণু এর ছবি

খুব ভাল লাগল আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা লব্ধ মন্তব্য। ফ্রস্টের আত্মজীবনী নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে, এটি কেবল তাড়াহুড়োয় লেখে ফেললাম।

তালিকায় নেবার ব্যাপারটা আমার ঠিক জানা নেই, কিন্তু সহজেই হবার কথা।

অতিথি এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি
মুহিত হাসান এর ছবি

দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি
deepalok এর ছবি

ভালো, ভীষন ভালো।

তারেক অণু এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

The woods are lovely, dark and deep.
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep

রবার্ট ফ্রস্ট নামটা উচ্চারণের সাথে সাথে আমার এই চারটা লাইনই মনে আসে। কারণ বহুকাল আগে প্রয়াত শামসুর রাহমানকৃত মূল ইংরেজিসহ বাংলায় ভাষান্তরিত রবার্ট ফ্রস্টের নির্বাচিত কবিতার একটা বই হঠাৎ করে চোখে পড়ায় সাথে সাথে কিনে নিয়েছিলাম। পড়তে পড়তে এই কবিতাটায় এসে থমকে গিয়েছিলাম ! বুকের ভেতরের গুনগুন করা সেই অবোধ্য আধো চেনা অনুভবটাই তো এটা ! বীজমন্ত্রের মতো বলে দিলেন রবার্ট ফ্রস্ট ! বইটা কে যেন মেরে দিয়েছে ! সেই চোরটিকে এখনো গালাগালি করি বইটা চুরি করার মতো তার অনাকাঙ্ক্ষিত এতো উন্নত রুচিবোধের জন্য।

আজো আমার জীবনের যেটুকু কিয়ৎফোটা সৃজনশীল অংশকে ধারণ করতে চাই আমৃত্যু, সেটুকু নিয়ন্ত্রণ করে দুটো উক্তি/পঙক্তি। একটি হলো প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিসের সেই বিখ্যাত আপ্তবাক্য- 'চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।।।।' আর অন্যটি রবার্ট ফ্রস্টের উপরের পক্তিটি- হয়নি তো সময় ঘুমোবার, এখনো যে অনেক পথ বাকি !।।।।।।।।

ধন্যবাদ অণু।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা দাদা।
শামসুর রাহমানের অনুবাদিত কবিতার বইটি কেন যেন টানে নি, কারণ হয়ত ফ্রস্ট নিজেই বলে গিয়েছেন-- কবিতা অনুবাদের ফলে যা পাওয়া যায়, তা সবকিছুই, কিন্তু কবিতাটি ছাড়া!

রণদীপম বসু এর ছবি

সম্পূর্ণ সহমত। তবে আমার মতো যাদের ইংরেজি জ্ঞান ইয়েস নট ভেরিগুড-এর সীমারেখা অতিক্রম করতে পারে নি, তাদের জন্য অনুবাদ গ্রন্থটা প্রাথমিকভাবে 'আদর্শলিপি'র কাজ করে। এরপর মূল রচনাটা আয়ত্ত করার শক্তি তৈরি হয়, এই আর কী !

তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে সেই বিখ্যাত উক্তিটি কঠিনভাবে সত্যি যে- অনুবাদে যেটুকু বাদ পড়ে যায়, সেটুকুই কবিতা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি

হা, এই কারণে আফসোস লাগে, কোনদিনই নেরুদা, পুসকিন, রুমি, হাফেজ, অ্যাপোলোনিয়ার অনুভব করতে পারলাম না যথার্থ ভাবে। তাও মন্দের ভাল যে ফ্রস্ট, হুইটম্যান ইংরেজিতে লিখেছিলেন।

তাপস শর্মা এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি
সুমাদ্রী এর ছবি

আমার ঘরের দেয়ালে জ্বলজ্বল করে কতগুলো শব্দ
যাবার আছে অনেকদূর
ঘুম এসে গ্রাস করে নেবার আগেই
পাড়ি দিতে হবে আমাকে বহুদূর।

খুব ভাল একটা লেখা পড়লাম। অশেষ ধন্যবাদ।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

তারেক অণু এর ছবি

যাবার আছে অনেকদূর
ঘুম এসে গ্রাস করে নেবার আগেই
পাড়ি দিতে হবে আমাকে বহুদূর। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দারুণ!

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তারেক অণু এর ছবি
ওডিন এর ছবি

কিন্তু আমি তো আর হাঁটতে চাই না। 'গাঢ়' 'মায়াবী' 'অন্ধকার' 'অরণ্যে' ঝরাপাতায় শরীর ডুবিয়ে অনন্তকাল ঘুমিয়ে থাকতে চাই। হাসি

কবিতা তেমন একটা না বুঝলেও লেখা খুব ভাল্লাগলো। হাসি

তারেক অণু এর ছবি

ঝরা পাতায় শরীর ডুবিয়ে ঘুমালে মাঝে মাঝে যে বিকট হ্যাচ্চো দিবেন, তার কথা খেয়াল আছে দেঁতো হাসি

তাসনীম এর ছবি

ঝালমুড়ির ঠোঙ্গাতে হাতে লেখা ছিল এই কবিতাটা। আমার খুব প্রিয়। পরে দেখেছি টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ কাহিনি করেছে এই কবিতার শিরোনাম দিয়ে। আমি এরপর থেকে ঠোঙ্গা ফেলে দেওয়ার আগে ভালো মতো পড়ে দেখতাম যে কোন অমূল্য রতন ছুড়ে ফেলছি কিনা।

Fire and Ice

Some say the world will end in fire,
Some say in ice.
From what I've tasted of desire
I hold with those who favor fire.
But if it had to perish twice,
I think I know enough of hate
To say that for destruction ice
Is also great
And would suffice.

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

খুব প্রিয় কবিতা আমার। এখানে উল্লেখ করা হয় নি, গতকাল রাতে আপনের বই পড়লাম।

তারেক অণু এর ছবি

এই অনুবাদ পড়িনি কিন্তু আগে ! আপনার করা নাকি! বেড়ে ছন্দময় !

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এইখানে দেখুন। ইনফেরনো পড়েছেন?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

একটু অফটপিক। মাধ্যমিক ক্লাসে রবার্ট ফ্রস্টের "রোড নট টেইকেন" কবিতাটা পাঠ্য ছিল এক সময়ে। এখনো আছে কি?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের সময়ে ছিল না, এখন বলতে পারি না।

কাজি_মামুন এর ছবি

ফ্রস্ট আমার অন্যতম প্রিয় কবি। জীবনানন্দ দাস যেমন রহস্য ঘেরা সুন্দরের মায়া তৈরি করে, ফ্রস্টও তেমনি। তাঁর অতলান্তিক চরণগুলো স্বর্গীয় সৌন্দর্যের আভাস দিয়ে যায়, যদিও তার কাছে পৌঁছুনো সম্ভব হয় না কখনই। তার কবিতার ভাষাতেই,
Heaven gives its glimpses only to those
Not in position to look too close
ফ্রস্টকে নিয়ে আপনার এই লেখাও কাব্য সুষমায় ভরপুর। আমার পড়া আপনার সেরা লেখাগুলির একটি।

তারেক অণু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আশা রাখি তার জীবন নিয়ে একদিন লিখতে পারব

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভাল লাগলো, রবার্ট ফ্রস্ট। আর ভাল লাগলো বই ফেরত না দেওয়ার অজুহাত।

চুরি বা মিথ্যা আমি একেবারেই পছন্দ করিনা। তবে একটা দুষ্প্রাপ্য বই আমিও লাইব্ররিতে ফেরত দিইনি, জরিমানা দিয়েছিলাম। সেই বইটাই একজন পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। চাইলে বলতো, "বইতো আপনাকে ফেরত দিয়েছি।" চোরের উপর বাটপাড়ি।

তারেক অণু এর ছবি

মন খারাপ খুব খারাপ

সৌরভ কবীর  এর ছবি

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি
প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

এমন একজন অসামান্য কবির সম্বন্ধে এতকিছু জানতে পেরে দারুন লাগল দাদা ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ।

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

চলুক

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
বন্দনা এর ছবি

বরাবরের মতই দারুন একখান লিখা।

তারেক অণু এর ছবি
নিলয় নন্দী এর ছবি

আচ্ছা, এই কারণে আমার অনু গল্প পড়ে আপনি মন্তব্য করেছিলেন- শব্দচয়ন আরো ভালো হতে পারত।
ঠিক আছে, মনে থাকবে হাসি

তারেক অণু এর ছবি

না না, আপনি ইচ্ছামত লিখে যান, এমনিতেই খুব ভাল হচ্ছে, কেবল মনে হয়েছিল চাইলে কিছু জায়গায় তীক্ষ শব্দাবলী আসতে পারত।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ফ্রষ্টের বর্ণনার মাঝে মিশে রয়েছে জটিল সামাজিক ও দার্শনিক বিষয়বিন্দু

সাদা চোখে কি তার সন্ধান মেলে?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

না, সেই জন্যই তেমন চোখ লাগে-

শাহাব আহমেদ এর ছবি

রবার্ট ফ্রস্টকেও নিয়ে একটি তথ্যবহুল অনবদ্য লেখা , লেখকের স্টাইলটি খুব চমৎকার , এই ধরনের আরো লেখা কামনা করি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।