আগুয়াস ক্যালিয়ান্তেসের তারা জ্বলা আকাশের নিচে চুটিয়ে আড্ডা মেরে ফুরফুরে মেজাজে নিদ্রাদেবীর কোলে নিজেকে সমর্পণ করে ছিলাম, খুশী হব নাই বা কেন- একে তো আড্ডার সঙ্গী আর পানীয়ের খানিকটা ব্যাপার আছে, তার চেয়েও ট্রিলিয়নগুণ আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে পেরুর আন্দেজের কোলের এই ছোট শহরটিই বিশ্বের বিস্ময় ইনকা সভ্যতার পাহাড়ি শহর মাচু পিঁচু যাবার পথে শেষ সভ্যতার ছোঁয়া লাগা জনপদ, এরপর বাসে চেপে বা পদব্রজে সোজা সেই পাহাড় শীর্ষে অবস্থিত শহরে গমন।
কবে থেকে শুরু হয়ে মাচু পিঁচুর সাথে এই সখ্য, সাল মনে পড়ে না কিন্তু পড়ি তখন প্রাইমারী স্কুলে, বড়দের অদ্ভুতুড়ে জগতের মায়াবী আকর্ষণ নিয়ে হাতছানি দিত কিছু আজব জিনিস, তার মধ্য একটি ছিল রহস্য পত্রিকা নামের এক আজব পত্রিকা, সেবা প্রকাশনীর মাসিক মুখপাত্র। সেটির মলাটে ছিল এক বিশ্রামরত বাঘের ছবি, সেই সাথে লেখক শওকত হোসেনের সাক্ষাৎকারের কথা। ভিতরের এক লেখাতে ছিল বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার না-পাওয়া গুপ্তধনের ফোলানো-ফাঁপানো বর্ণনা, সেখানে ছিল এক ভাঙ্গাচোরা শহরের সাদা কালো ছবি, নিচে লেখা- মাচু পিঁচু।
কেমন অদ্ভুত একটা ছন্দময় মজার নাম- মাচু পিঁচু, সেই প্রথম নামটির সাথে পরিচয়, এর পরে কত পত্রিকা, বই, তথ্যচিত্র, চলচিত্রে ( সত্যজিৎ রায়ের আগন্তকসহ) এর নাম শুনেছি তার লেখাজোখা নেই। এর মোহনীয় আকর্ষণে জড়িয়ে যাবার পর থেকেই স্বপ্ন দেখেছি একদিন, কোন এক দিন আন্দেজের পাহাড়ি এই শহরে যেতেই হবে আমাকে।
সেই লম্বা যাত্রা শেষ হয়েছিল গতকাল সন্ধ্যেয় আগুয়াস ক্যালিয়ান্তসের রেল ষ্টেশনে। কোন মতে সুপার ট্রাম্প হোস্টেলে মাথা গুজে পরের দিন ভোরে হিরাম বিংহ্যাম সড়ক ধরে মাচু পিঁচুর পথে আরোহণ চলবে এমনটাই ছিল পাকা পরিকল্পনা, সেই মোতাবেক স্থানীয় ইনকা গাইড এসে সব বুঝিয়ে দিয়ে গেল, সেই সাথে জানাল মাচু পিঁচুর পাশের সুউচ্চ শৃঙ্গ হুয়ানাপিচুতে তারা আরোহণের অনুমতি জোগাড় করে দেবে, কারণ হুয়ানা পিঁচুতে প্রতিদিন মাত্র ২৫০ জন পর্যটক প্রবেশ করতে পারে, যেখানে মাচু পিঁচুতে ৪০০০ জন, আর সেইখান থেকেই এক চিলতে স্বর্গের মতই মেঘের অপার্থিব রাজ্যে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায় মাচু পিঁচুকে। শুধু শর্ত একটাই, পরদিন কাক- চিল- শকুন ওঠার আগেই আমাদের উঠে পৌঁছাতে হবে মাচু পিঁচুর মূল ফটকে।
ভোর ৫ টায় অ্যালার্ম দেয়াই ছিল , কিন্তু বৃষ্টিপাতের প্রবল অস্তিত্ব জানান দেয়া উৎপাতে তার অনেক আগেই ঘুম ঠেলে সেই জায়গা দখল করে নিল উৎকণ্ঠা আর তার চিরসঙ্গী অধীর অপেক্ষা। এক সময় বাস ছেড়ে যাবার সময় হয়ে গেল, চলে গেল গাইডকে দিয়ে রাখা সময়টুকু, ঘড়ির কাঁটা ৫টা থেকে ৯টা পেরিয়ে গেল, কিন্তু আকাশের কান্নার বিরাম নেই, মনে হচ্ছে আদি গোষ্ঠীদের মত আমাদেরও সূর্যদেবতাকে যোগ তপস্যা বলে মেঘের আড়াল থেকে সামনে আনার জন্য যজ্ঞে বসতে হবে।
এমনিতে হয়ত খারাপ লাগত না, হোস্টেলের বারান্দা দিয়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের মিতালি এই ধূসর সকালেও অপূর্ব লাগছে, একটা আলসে দিন এইভাবে গড়িয়ে গেলে এমন কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু বিকেলে মাচু পিঁচুর ট্রেনে ফিরতে হবে, টিকিটের পুরো টাকা অগ্রিম দেওয়াতো আছেই, পরের সীট আবার কবে ফাঁকা পাওয়া যাবে কেউই বলতে পারে না, তাই এত কাছে এসে এমন আবহাওয়া মানে জগতের শ্রেষ্ঠ পরিহাস- মাচু পিঁচুর নিচে এসে দর্শন না পেয়ে ফেরত যাওয়া!
ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে যেতে কোন আপত্তি নেই, সমস্যা হচ্ছে ক্যামেরা ( স্থির ও ভিডিও) নিয়ে, ওদের ছাড়াই বা যায় কি করে! তবে সেরকম অবস্থা হলে সব ছাড়াই( এমনকি পরনের বস্ত্র) যেতে রাজী আছি, তিন বন্ধু মিলে বেশ খানিকক্ষণ ঝিমানো আড্ডা মেরে, এন্তার কোকা চা আর কফি ধ্বংস করে মোড়ের দোকানে থেকে সবচেয়ে সস্তা প্লাস্টিকের পনচো কিনে তাতেই কোনমতে ক্যামেরা সহ শরীর ঢেকে রওনা হয়ে গেলাম, জলবর্শার দলের তীব্রতা তখন অনেকটা কমে এসেছে।
একরত্তি শহরটার সাথেই বাসষ্টেশন, মিনিট পনের পরপরই বাস ছাড়ছে মাচু পিঁচুর উদ্দেশ্যে, হিরাম বিংহাম সড়ক দিয়ে একিয়ে বেঁকিয়ে চলেছে পাহাড় শীর্ষে, অনেকেই হাইকিং করে উঠে অবশ্য আবহাওয়া ভাল থাকলে, বেশী রোমাঞ্চপ্রিয়রা সাইকেলে!
মিনিট বিশেকের যাত্রা, জলভরা পোয়াতী মেঘদের বেয়াদবিতে পথের খুব একটা ঠাহর করবার আগেই গন্তব্য চলে আসল- এখন আধুনিক সভ্যতাকে বিদায় জানিয়ে আমাদের প্রবেশ ইনকাভুবনে।
যারা আলোকচিত্রের ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহী তারা আগে ছবিগুলো আরেকবার দেখে নিতে পারেন এই খানে !
মাচু পিঁচু নিয়ে তো সারা বিশ্বই মেতে আছে আর পুনরাবিষ্কারের পর থেকে, এর ইতিহাস নিয়ে এত কচকচির আলাদা ভাবে কিছু নেয়, কিন্তু বলুন তো মাচু পিঁচুর সবচেয়ে বড় রহস্যটা এখন পর্যন্ত কি? ভাবতে থাকুন, উত্তর মিলবে লেখার মধ্যেই।
সাগর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০০ ফিট উপরে অবস্থিত এই ইনকা শহরটি নির্মিত হয় ১৪৫০ সালে, সম্ভবত ইনকা সম্রাট পাচাকুটির নির্দেশে, কিন্তু এর মাত্র একশ বছর পরেই শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়, কেন তা আমাদের জানা নেয়, হয়ত কোন রোগের মহামারী আকারে প্রকোপের ফলে।
মূল ফটকে অবশ্যম্ভাবী ভাবে গাইডের দেখা মিলল না, বেচারির দোষ দিয়ে লাভ নেই- এমন আবহাওয়ায় কে এত ঘণ্টা বৃথা অপেক্ষা করবে! কিন্তু এর ফলে আমাদের হুয়ানা পিঁচুতে দাড়িয়ে মাচু পিঁচুর চমৎকার দৃশ্য দেখার এবং ছবি তোলার সম্ভাবনা এযাত্রায় থেমে গেল।
সেখানকার টিকেট চেকিং ব্যবস্থা বেশ কড়া, দিনে যেহেতু মাত্র হাজার চারেক দর্শনার্থী যেতে পারে তাই একেবারে নাম ডেকে ডেকে ঢোকাল! এরপরে পাথরের তৈরি রাস্তা, ইনকাদের আমলেরই, হয়ত এখানে একসময় পায়চারী করতেন ইনকা সম্রাট, শ্রমজীবী কৃষকেরা, সেই সাথে বহু শতাব্দী পরের অভিযাত্রীদের দল। এক জায়গায় মাচু পিঁচু আবিস্কারের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ধাতব ফলক বসানো ( এখন অবশ্য শত বর্ষ পূর্তি হয়েছে), আরেকটাতে হিরাম বিংহামের নাম বসানো সেই সাথে লেখা ১৯১১ সালে তার এই বিস্ময়শহরে পদার্পণের কথা।
আমেরিকার ইয়েল বিশ্ব-বিদ্যালয়ের এই তরুণ অভিযাত্রী শিক্ষককে অনেকে মাচু পিঁচু পুনরাবিষ্কারের জন্য সবটুকুই কৃতিত্ব দেয় যা মোটেও তার প্রাপ্ত নয়, প্রথম কথা হিরাম খুঁজছিলেন ভিলকাবাম্বা নামে ইনকাদের পাহাড়ি রাজধানী, সেটি তিনি পেয়েও যান, কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অভাবে সেটির তাৎপর্য বুঝতে পারেন নি, বরং অভিযান চালাতে চালাতে মাচু পিঁচু এসে উপস্থিত হবার পর ভাবেন এটিই ভিলকাবাম্বা! পরবর্তীতে অবশ্য তার ভুল ধারণার অবসান ঘটে।
সেই সাথে এই কথা দৃঢ় ভাবে বলা যায় হিরাম-ই এর একমাত্র আবিস্কারক নন, স্থানীয়রা অনেকেই এই ইনকানগরীর কথা জানত, এমনকি হয়ত মাঝে মাঝেই তীর্থযাত্রার মত সেখানে গমনও করত, কিন্তু আবিস্কারক হিসেবে তার স্থানীয় গাইডদের বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব না দিয়ে সম্পূর্ণ সাফল্যের ভাগিদার হিসেবে তার নামই বলা হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত হিরাম যে একজন নিষ্ঠ গবেষক ছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি, তিনি খানিকটা স্টান্টবাজির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনের চেষ্টাতেই বিভোর ছিলেন, এবং মাচু পিঁচু থেকে পাওয়া অগণিত ইনকা কীর্তি অনৈতিক ভাবে গবেষণার কথা বলে আমেরিকায় নিয়ে যান, যা নীতিগত ভাবে অত্যন্ত অন্যায়, যদিও এই বছর ইয়েল বিশ্ব বিদ্যালয় প্রায় ৫০০০ নিদর্শন পেরুর কাছে ফেরত দিবে বলে জানিয়েছে।
হিরাম বিংহাম তার জায়গায় থাক, আমরা এগিয়ে চলি অপূর্ব ভাবে পাথর বাঁধাই করা সেই রাস্তা ধরে, সামনে পিছনে মানুষের মিছিল আর স্বর্গ থেকে তো বৃষ্টি ঝরে পড়ছেই। বেশ কিছু গলি ঘুপচি পেরিয়ে ছাউনি দেয়া তিনটি চালাঘরের দর্শন মিলল, যাদের দেয়ালগুলো খোদ ইনকাদেরই নির্মিত, কিন্তু খড়ের চালা আধুনিক কালে তৈরি, কেবলমাত্র দর্শনার্থীদের একটা ধারণা দেবার জন্য যে কেমন ছিল সেই সময়ের ঘরগুলো।
কারণ, কয়েক শতাব্দী পরিত্যক্ত থাকার ফলে পচনশীল বস্তুর স্থাপনার কোন অবশিষ্টাংশ ছিল না মাচু পিঁচুতে। তাই আগের ইতিহাস ফিরিয়ে নিয়ে আসার কিছু বৃথা চেষ্টা মাত্র। সেই সাথে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরটিকে আগের অবস্থায় কিছুটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে গত একশ বছর ধরেই।
এমন ঘরগুলো মূলত ব্যবহার হত খাদ্যশস্যের গুদাম হিসেবে, কেবল কিছু ঘরে মানুষের আবাস ছিল। এদের পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই আক্কেল গুড়ুম করে চোখে পড়ল লামা ! ল্যাতিন আমেরিকার উট জাতীয় এই প্রাণী মনে হয় সারা বিশ্বের কাছে অতি পরিচিত তার মাংস, পশম, পাহাড়ে চড়ার নেশা এবং ইনকা সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য ( আলপাকা এবং ভ্যিকুনা নামের আরও দুই প্রজাতি উট আছে সেখানে, এর মধ্যে আলপাকার পশম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং দামী)।
মনের সুখে সে চরতে চরতে সবুজ লকলকে ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে প্রাচীন সেই চারণভূমিতে, তার দর্শন একটু নিকট থেকে পাবার জন্যই আরো কয়েক ধাপ সিঁড়ি টপকিয়ে ফাঁকা মত জায়গাটিতে যেতেই লামার ছবি আর তোলা হলে, অবাক বিস্ময়ে বোবা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম নিচের দিকে, যেখানে কুয়াশা-মেঘের অবগুণ্ঠন খুলে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য বইয়ের মলাটে দেখা একটি ছবি-
স্বপ্নের মাচু পিঁচু, সাথেই সাথেই মনে কড়া রোদে ঝকঝকে আকাশের নিচের মাচু পিঁচুকে হয়ত দেখতে ভালই লাগত, কিন্তু এর পরিপূর্ণতা যেন এমন রহস্যঘন পরিবেশে আধা উম্মুক্ত আধা দৃশ্যমান অবস্থাতেই। চারপাশে আকাশ ছোঁয়া সবুজ পাহাড়, অনেক নিচে খরস্রোতা উরুবামবা নদী, আর মেঘে ঘেরা মাচু পিঁচু, শিল্পীর আঁকা পটের ছবির মত, কেবল আকাশে উড্ডায়মান গোটাদুয়েক কনডর শকুন বাদ গেছে!
যে কারণে এত শাপশাপান্ত করে আসা মেঘ আর তার নিক্ষেপিত সন্তান বৃষ্টিকে খানিকটে ধন্যবাদই দিলাম এমন মোক্ষম পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। কিন্তু সেই সাথে সময়ের স্বল্পতা হেতু চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরতে থাকলাম প্রাচীন সেই নগরীর রাস্তায়, ময়দানে, শস্যক্ষেত্রে, ভাঁড়ার ঘরে, উদ্যানে, সূর্য মন্দিরে।
পাথরের উপর পাথর মাপমত সাজিয়ে বসিয়ে কি চমৎকার দেয়ালের মাঝে টেকসই জানাল আর দরজা বানিয়ে নিয়েছিল তারা,
এক জায়গায় স্থানীয় বেশ কিছু গাছের সমাহার দেখা গেল,
আবার সেইখানেই দেখা মিলল কিছু পালকময় বন্ধুর, যার মাঝে ছিল একমাত্র পেরুরই বাসিন্দা বিশেষ প্রজাতির হামিংবার্ড।
আধা বৃত্তের মত সূর্য মন্দির, অনেক ইতিহাসবিদই মনে করে থাকেন মাচু পিঁচু অত্যন্ত পবিত্র স্থান ছিল ইনকাদের কাছে, এবং এর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই হয়ত তারা এইখানে পাহাড়ি শহরটি নির্বাচন করেছিল, স্থাপন করেছিল উপাসনালয়।
সেই সাথে জল সেচের মাধ্যমে এই বন্ধুর ভূমিকেই তারা উর্বর করে তোলে, শস্যক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট ফসলের উৎপাদনের মাধ্যমে হয়ে ওঠে স্বয়ংসম্পূর্ণ তেমনি পশুপালনের মাধ্যমেও হয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ওঠে মাংস এবং পশমের জোগাড়।
বিশাল শহরটির সর্বত্রই যেন ইতিহাসের জাদু মাখানো, অবাক লাগে, ভাল লাগে, আপ্লুত হয় বিস্ময়ে, মুগ্ধতায়, সেই সাথে বারিধারায়! একবার তো সদলবলে সূর্য বন্দনাও করা হল মেঘমুক্ততার জন্য,
কিন্তু বিধি বাম, তাই বৃষ্টিস্নাত মাচু পিঁচুর অভিজ্ঞতা নিয়েই ট্রেন ধরার জন্য শুরু হল আমাদের দৌড় !
ও আচ্ছা, বলেছিলাম মাচু পিঁচুর সবচেয়ে বড় রহস্যের কথা, যা আমাদের কাছে আজও অজানা, সেটি হচ্ছে, আমরা যেন কোন শহর নিয়ে কথা বলছিলাম? কেন, মাচু পিঁচু ! আরে, সে তো আমাদের দেওয়া নাম, এর আসল নাম কি মানে ইনকারা শহরটিকে কি নাম ডাকত? উত্তর- আমাদের অজানা আজও !!!
( খুবই ছোট আমরা তখন, এত্তো ছোট যে ঠিক মত মনেও পড়ে না, টেলিভিশনে বিটিভির ইতিহাসের অন্যতম সেরা নাটক হুমায়ূন আহমেদের বহুব্রীহি দেখাত, যে নাটকটির তুই রাজাকার সংলাপটি নব আবেগে ভাসিয়ে ছিল সমগ্র জাতিকে।
নাটকটির অনেকগুলো সংলাপই ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, কিন্তু অসাধারণ শক্তিমান বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল খায়েরের ( পাকুন্দের ইমদাদ খোন্দকার) সবসময় বলা, আপনারা বটবৃক্ষ কথাটি কানের পর্দায় লেগে আছে আজও। মনে হত ব্যাটা মহা ধড়িবাজ, মানুষ কখনো বটগাছ হতে পারে নাকি?
কিন্তু এখন জানি পারে, কিছু কিছু মানুষ তাদের চারিত্রিক মহত্ত্ব, দৃঢ়তা,মহানুভবতা দিয়ে একটি প্রাচীন বটের চেয়েও বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে রাখতে পারে, অন্যদের তাদের সেই বিশাল চরিত্রতলে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে পারে। তেমনি একজন আমার ইমন দা ( ডঃ রহমতুল্লাহ ইমন)।
যার মত বিনয়ী, সত্যবাদী, অসাম্প্রদায়িক, উৎসাহী, বন্ধুত্বপরায়ণ, মুক্তমনা, জ্ঞানী শিক্ষকতো অনেক দূরের কথা, এমন মানুষই আমাদের আত্মঅহমিকায় জর্জরিত সমাজে অতীব বিরল। আমার সৌভাগ্য ইমনদাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ অল্প হলেও মিলেছিল, যদিও তার মত বিনয়ী আমি কোনদিনই হতে পারব না, দুর্ভাগ্যবশত ইমনদাকে শিক্ষক হিসেবে পাওনা হল না এখনো।
দাদা, আপনি বলেছিলেন পেরু আপনার স্বপ্নের দেশ, মাচু পিচু আপনার অন্যতম ভবিষ্যৎ গন্তব্য। আমি জানি, আপনার এই আশাও অন্য অনেক আশার মতই পূরণ হবে শীঘ্রই। ভালো থাকুন, সবসময়। বটবৃক্ষের মত আশ্রয় দিন আমাদের বরাবরের মতই আপনার ছায়ার নিচে। )
মন্তব্য
পোস্টে
তয় লোভ লাগানোর জন্য
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আবার কি হল !
facebook
অসাধারণ! জটিলস্!!!!!!1 !!1!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ধন্যবাদ
facebook
অসাধারণ ............
facebook
আমি কিছু দেখি নাই।
আপনার পোস্টের খালি শিরোনাম দেখি, তারপর বাকেট লিস্টে টুকে রাখি। তারপর মনে মনে আপনাকে একটা মেরে লগ আউট করে জোরে জোরে কয়টা দম নেই মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য।
একদিন আমিও .... হুঁ হুঁ বাবা... অনুচন্দ্র!!! একদিন আমিও তোমারে দেখে নেব।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
মেজাজ ঠাণ্ডা এখন! তাহলে আসেন, একসাথে প্ল্যান বানায়---
facebook
চলেন। ভিসার ক্যাচালে পড়ে ২/১ বছর উত্তর আম্রিকায় আটকা আছি। এই দিকটা আপনার দেখা হয় নাই এখনো।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
স্টেটের নাম বলেন ! উত্তরে বার দুই গেছি কিন্তু আম্রিকা আর কানাডা বাদ আছে
facebook
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন স্টেট। সেইটা বেপার না। আমি এবং আমার গাড়ি ( নাম বুলা) ঘুরতে ব্যাপক পছন্দ করি। ৮ মাস আগে কিনার পর এরি মধ্যে বুলা আটলান্টিক আর আর প্রশান্ত মহাসাগর দুইটাই দেখে আসছে। আর আমি নিজে উত্তর সীমান্ত থেকে দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত ঘুরে আসছি। আমি আর বেটার হাফ প্রায়ই জিপি এস ভরসা বলে নিরুদ্দেশ রওনা দেই, মাথা মুথা ঠান্ডা হইলে জিপিএস রে বলি "গো হোম"। পরিচিত জায়গা গুলার বাইরে অনেক হাইওয়ে ছেড়ে অজানা রাস্তায় অদ্ভুত সব প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জায়গা চোখে পড়ে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দারুণ! তাহলে আর গ্রে হাউন্ডে উঠতে হবে না বলছেন! দেখি, আসলে আম্রিকা গেলে হাতে অনেক সময় নিয়ে যাবার ইচ্ছা।
facebook
মুগ্ধ !!!!!!!!!!!!!
আমিও---
facebook
ইচ্ছে করছে এখনই ডানা মেলে হারিয়ে যেতে গভীর রহস্যের মাঝে।
আসলেই---
facebook
ছবিগুলো ফেবুতে যতটা না ভাল লেগেছে তারচেয়ে এখানে আরও বেশী প্রাণবন্ত লাগছে। ধারাবিবরণীও ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ--
facebook
ফেবুতে ছবিগুলা যত না ভাল লেগেছে তারচেয়ে এখানে আরও বেশী ভাল লাগছে। বিবরনিও অনেক সুন্দর হয়েছে।
facebook
দারুন লাগলো পড়ে। অসাধারন
ধন্যবাদ, পরের লেখা কবে দিচ্ছেন ?
facebook
আবারও গুল্লি ফুডাই ভাইডি
ভীষণ ভাল্লাগ্লো।
ডাকঘর | ছবিঘর
কই গো দাদা, লাপাত্তা যে !
facebook
আপনার গায়ে পলিথিন কেনু ভাই!
আবে বুটা পলিথিন না, পনচো, সস্তার হলেও জিনিসটা বেশ কাজের ছিল !
facebook
সুকারু শব্দচয়নে সুলিখিত ভ্রমণকাহিনী। আপনার জন্য 'জানার মাঝে অজানার সন্ধান' কিন্তু আমার জন্য 'কত অজানারে'! অভিনন্দন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
কই ছিলেন গো রোমেল ভাই, আপনের চীনের লেখার অপেক্ষা করতে করতে মনে হচ্ছে চলেই যাব নাকি !
কিছু বই নিয়ে লিখে ছিলাম মাঝখানে, আপনের ফিডব্যাক পেলে ভালো লাগত।
facebook
facebook
অসাধারণ ছবি আর সুন্দর বর্ণনা। হ্যা, অণু ইমনদা আসলেই একজন খাঁটি মানুষ।
ধন্যবাদ জামী ভাই, সে আর বলতে !
facebook
আইলেন তো না এই বছর, আপনাকে ফেলেই ইয়োলো স্টোন এর পরিকল্পনা করে ফেলছি, ৪ঠা জুলাই এর সময়। গিয়ে পতকা পুতে আসবো "এইখানে তারেক অণুর আগে চরম উদাস এসেছিলেন " লেখা।
হলদে পাঁথরে যাবেন! এই সামার ভালো গিটটু লাগছে, ঘুরে আসেন, তারপর যে কোন সময় চলে আসব আম্রিকা!
বুড়ো বিশ্বস্তকে নোংরা কইরেন না কিন্তু, উদাসী কসম !
facebook
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
facebook
আহারে ! এই অণু ছেলেটার পথে পথেই জীবনটা যাচ্ছে ! একটু তিষ্ঠানোর সুযোগও কেউ দিচ্ছে না ! তাইলে যদি এই বাউণ্ডুলেপনা কমতো ! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
থামলাম দাদা !
facebook
আহআ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
facebook
কি চমৎকার দেখা গেল!
অসাধারণ স্থান !
facebook
প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি নতুন নতুন চমকের। প্রতিবারি চমকে উঠি।
আবার চমকানোর কি হল ! ছবি কিছুতো আগেই দিয়েছিলাম !
facebook
দারুন--------------- দাদা আপনি কি করেন,এত জায়গায় কিভাবে যান?
কিছু করতে চাচ্ছি না, বিশ্বাস করেন- শুধুই ঘুরে বেড়াতে চাচ্ছি, কিন্তু হচ্ছে না ।
facebook
সুন্দর
facebook
আমি শুধু 'মাথাপিছু' পড়ি
হিংসা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মস্করা কইরেন না নজু ভাই, আপনেও ইদানীং মন্তব্য করা কমায় দিছেন, ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম উঠল বলে !
facebook
আপনার ছবি তোলার হাত খুব ভালো। লেখাটা ছাড়াছাড়া ভাবে পড়লাম; ছবিগুলি খুব ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ পিপিদা, হাত যতই ভাল বলেন, কারিগরি তো শিখা হল না কিছুই এখনো। কিন্তু ইচ্ছে আছে ।
facebook
"প্রায় ধবংসপ্রাপ্ত শহরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে একশ বছর ধরেই।"
আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত। আমাদের পানাম নগরের কী দুরবস্থা করে রাখল দেখেন!
ইয়ে মানে অনুভাই...আপনার লেখায় কমেন্ট করতে গেলে বা আপনার কমেন্টের জবাব দিতে গেলে আমার ইমোটিকনরা দল বেঁধে ভ্রমণে চলে যায়। এর পিছনের রহস্য কী, কোন আলোকপাত করতে পারেন?
বলতে পারছি না, হয়ত কেউ স্যাবোটাজ করেছে !
facebook
আপনার তোলা ছবিগুলো আজ এক অবাঙালীকে দেখালাম, বল্লাম দেখ ব্যাটা, আছে তোদের এমন কেউ?
হায়, হায়, আর কাজ পান নি! খবর আছে এবার আপনার !
facebook
আপনার লেখা পড়লে মনে হয় পৃথিবীর অনেক কিছু দেখা হয়ে যায়। আর বাকিটুকু দেখার লোভ হয়। সবসময় শুভকামনা আপনার জন্য।
না না, পৃথিবী অনেক অনেক বড়! তারপরও অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দেবার জন্য।
facebook
বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেলের জন্য আপনি একটা ট্রাভেল-শো জাতীয় কিছু করতে পারলে দারুন হত। দুয়েক'টা চ্যানেলে এরকম কিছু ছিল বা আছে, কিন্তু আমার খুব ভাল লাগেনি শুধু 'ট্রাভেল অন'-টা (নাম ভুল হতে পারে) ছাড়া। এটাও অবশ্য খুব আহামরি কিছু ছিলনা।
কিন্তু এরকম কিছু করতে আপনি মনে হয় খুব উপযুক্ত ব্যক্তি হবেন !
আমি মিশর থেকে ফেরার পর পর হঠাৎ এক রোজার মাসে দেখি চ্যানেল আই-তে মিশরের উপর একটা ট্রাভেল মিনিসিরিজ (১৫-৩০ মিনিট করে পর্ব) জাতীয় কিছু দেখাচ্ছে। এক বাঙালি মৌলভী সাহেব উপস্থাপক। সম্ভবত টু-ম্যান টিম। এমন বিদ্ঘুটে, হাস্যকর জিনিষ জীবনে দেখিনি। যেমন থার্ড-ক্লাস ক্যামেরার কাজ, আর তার চেয়েও সাংঘতিক ঐ উপস্থাপক। মোল্লার দৌড় মসজিদের মতই প্রায়। একেকটি দর্শনীয় জায়গায় উনি যান আর ঘুমায় ঘুমায় বিরস মুখে কথা বলে যান - আর চেয়েও খারাপ হল কথা শুনেই বুঝতে পারছিলাম উনি হোমওয়ার্ক তেমন কিছুই করেননি, বা করার আগ্রহও বোধ করেননি। সারবত্তা কিছুই ছিল না। ফারাওদের মন্দিরে গিয়ে কোরান-হাদিস থেকে 'ফেরাউন'-দের সম্পর্কে কোট দিয়ে দিয়ে উলটে নিন্দামন্দ করে গেছেন। কোন বিস্ময়বোধ নাই, কোন আবিষ্কারে আনন্দ নাই, কোন প্রাপ্তিবোধ নাই! বিরক্তির চোটে আমার তখন মনে হয়েছিল, আমার সাথে ভিডিও ক্যামেরা থাকলে আমার মত ফটো-কানা নন-টেকি যদু-মধু পাব্লিকও বোধহয় এরত্থেকে অনেক ভাল কিছু বানাতে পারত। সেখানে আপনার কথা তো বলাই বাহুল্য! একটা কিছু করেন না এরকম ?!
****************************************
ভাল কথা! আসেন, আমি আর আপনি টুম্যান টিম বানায়ে ফেলি, প্রথম টার্গেট মিশর !
আসলে এমন কাজে জড়িত থাকতে পারলে ভাল লাগত, কিন্তু সিস্টেম জানি না যোগাযোগের!
facebook
যাবার ইচ্ছা আছে সামনে। এইসব কাজ নিজের চোখে দেখা উচিত। জীবনে কাজে দেয়।
দারুণ বলেছেন।
facebook
অনেক দেরীতে পড়লাম।
ছবিগুলো নতুন করে দেখে ভালো লাগলো।
আপনাকে প্রশংসা করে কি লাভ!
আপনি প্রশংসার বাইরে চলে গেছেন, নিজেকেই অতিক্রম করে যাচ্ছেন বারবার।
ভালো থাকবেন অনু।
দেখা হবে, কথা হবে।
----------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন