অনেকেই প্রশ্ন করেন- দেশকে এত ভালবাস, দেশের ভাষা নিয়ে কাজ করতে চাও, তাহলে বিদেশ এলে কেন? পষ্টাপষ্টি সত্য উত্তর দিয়ে ফেলি, তারাদের জন্য। আকাশের তারা, যাদের বাংলায় বলে নক্ষত্র, যাদের থেকেই আরবিতে আমার মা নামের প্রথম অংশ রেখেছেন তারেক ।( এরচেয়ে বাংলা রাখলে কত চমৎকার হত, নাক্ষত্রিক অণু !)। আসলেই, কেবলমাত্র মহাকাশ নিয়ে লেখা-পড়ার জন্যই বাংলাদেশে ছেড়ে এসেছিলাম, সেই সময়ে আমেরিকার এক নামকরা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানে অ্যাডমিশনও পেয়েছিলাম ছোটখাট স্কলারশিপ সহ, কিন্তু ভিসা মিলে নাই! কারণ, ভিসা অফিসার দুই ভুরু সহ মুখ কুঁচকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ছেলে তুমি, মহাকাশ বিজ্ঞান পড়ে তারপর কি করবে? উত্তর হয়ত তার মনঃপুত হয় নি, ভিসা মিলল না, আমারও মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে আর পড়া হল না, কিন্তু চেষ্টা ছাড়ি নাই, স্বপ্নই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে , তাই না?
স্কুলে পড়ার সময়ে শুনলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধু শোভনের বাবা রাজশাহী বিশ্ব-বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর শিশির ভট্টাচার্য সারা বাংলাদেশে যে দুইজন মহাকাশ বিজ্ঞানের উপর পি এইচ ডি করেছেন তাদের মধ্যে একজন! মহাকাশবিজ্ঞানী ! শুনলেই কেমন একটা শ্রদ্ধা ভরা সমীহের মেঘ ঘিরে ধরে আমাদের, যে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের অবস্থান তার জন্ম, মৃত্যু, বয়স, অবস্থান নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের এই পৃথিবীর মানুষ মনে হতো না কখনোই, কিন্তু তাদেরই যে একজন আমাদের শহরে থাকে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। যে কাকুকে প্রতিদিন গম্ভীরভাবে বিশ্ব-বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পায়চারি করতে দেখি উনিই তাহলে সেইসব বিজ্ঞানীদের একজন! কি দারুণ ব্যাপার!!
অনেক বছর আগে একদিন বুক ঠুকে চলেও গেলাম তার বাড়ীতে, মহাকাশ বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে অজস্র প্রশ্ন নিয়ে। স্কুলের পোশাক পড়া পুত্রবন্ধুকে উনি নিজের মহামূল্যবানসময় ব্যয় করে বললেন মহাবিশ্ব, গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, পালসার, কোয়াসার, ব্ল্যাক হোল, অ্যান্টি ম্যাটার নিয়ে। সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ছাপিয়েও আমার মন উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল একজন মহাকাশ গবেষকের সাথে সামনাসামনি কথা বলার আনন্দ। যে আনন্দ আমি পুরোমাত্রাই অনুভব করি প্রতিবার শিশির কাকুর সাথে কথা বলার সময়, দেশে গেলে মুখোমুখি অথবা বিদেশ থেকে মুঠোফোনে। তার মত বিভিন্ন বিষয়ে অপরিসীম জ্ঞানের অধিকারী, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা, তীক্ষ কৌতুকবোধের অধিকারী অথচ নিভৃতচারী, মিতভাষী, প্রচারবিমুখ মানুষ আমাদের অলস, পরশ্রীকাতর, নিজের ঢোল নিজের পেটানোর সংস্কৃতির সমাজে অতীব বিরল।
অনেক দশকের সফল শিক্ষক জীবন কাটিয়ে বর্তমানে রাজশাহীতে অবসর জীবন-যাপন করছেন নিজস্ব ভুবনে মহাকাশ বিষয়ক লেখালেখি নিয়ে নিবিড় ভাবে মগ্ন থেকে। গত সপ্তাহে মুঠোফোনে নেওয়া সাক্ষাৎকারে উনি আলোকপাত করেছেন নিজের গবেষণা এবং মহাকাশের নানা বিষয় নিয়ে, পাঠকদের জন্য আফসোস হচ্ছে কেবল এই ভেবে যে সরাসরি শুনতে না পাওয়ায় আপনারা শিশির ভট্টাচার্যের অসাধারণ রসবোধ ( উইট) উপভোগে হয়ত পুরোপুরি সমর্থ হবেন না,কিন্তু পরবর্তীতে তা সম্ভব হতেও পারে—
অণু - এখন কোন বই নিয়ে কাজ করছেন?
শিশির ভট্টাচার্য – বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃবিজ্ঞান পড়াবার জন্য একটা বইয়ের কাজ কেবল শেষ হল, এটি ইংরেজিতে লেখা। দেশের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণিত বিভাগে জ্যোতিঃবিজ্ঞানের কোর্স পড়ানো হয়, তাদের জন্যই লেখা। এখন পর্যন্ত বিদেশী লেখকদের বই-ই পড়ানো হয়।
অণু- আপনার আগের বই দুটি নিয়ে বলুন
শিশির ভট্টাচার্য- প্রথম বইটির নাম মানুষ ও মহাবিশ্ব, এটিতে মূলত মহাবিশ্বে মানুষের স্থান কোথায়, মানুষ কি করে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছাল, নানা জাতির নানা সংস্কৃতিতে মহাকাশের বস্ত নিয়ে মানুষের সংস্কার-কুসংস্কার এইসব নিয়েই। এটি ছেপেছিল সময় প্রকাশন।
পরের বইটির নাম মহাজাগতিক মহাকাব্য, অবসর থেকে প্রকাশিত, এটিতে মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনা, বস্তু , মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নিয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করেছি।
অণু- মহাকাশ নিয়ে আপনার আগ্রহের শুরু কোথায় থেকে? এমন কঠিন বিষয় নিয়ে গবেষণার অনুপ্রেরণা কিভাবে আসল ?
শিশির ভট্টাচার্য- রাতের আকাশ, গ্রহণ, নক্ষত্র নিয়ে তো মানুষের স্বভাবজাত একটা আকর্ষণ থাকেই। তবে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে দৌলতপুর কলেজে গণিতে অনার্স করার সময় আমাদের শিক্ষক সুবোধ মজুমদার ( বিখ্যাত গণিতবিদ ও শিশির ভট্টাচার্যের দীর্ঘ সময়ের সহকর্মী সুব্রত মজুমদারের বাবা) এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেন, উৎসাহ দিতেন।
পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরে হবিবুর রহমান ( স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী) কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন ফলিত গণিতের শিক্ষক হিসেবে Astrophysics নিয়ে গবেষণা করলে তিনি ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি নিয়ে কিছু করতে পারবেন। সেখান থেকে আরো উৎসাহ পেয়েছিলাম।
এরপরে লন্ডনের কুইন মেরী কলেজে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানেই নিয়োজিত ছিলাম কয়েক বছর।
অণু – আপনার গবেষণার বিষয় কি ছিল?
শিশির ভট্টাচার্য - থিসিসের মূল জিনিসটা ছিল Birth of the Stars ( নক্ষত্রের জন্ম), সেখানে তারাদের গঠিত হবার সময়ের আচরণ এবং শুরুর দিককার গঠন নিয়ে গবেষণা চলত।
অণু – বর্তমানে বাংলাদেশে মহাকাশবিজ্ঞানের চর্চার কি অবস্থা?
শিশির ভট্টাচার্য – সত্যিকারের মহাকাশবিজ্ঞান চর্চা এখানে এখনো শুরু হয় নি, কেবল সূর্য গ্রহণের বা উল্কা পাতের মতো ঘটনাগুলোর সময় কিছু মানুষ ভিড় করে দেখতে যায়, মিডিয়াতে খবর আসে। দুয়েকটি বিশ্ব-বিদ্যালয়ে জ্যোতিঃবিদ্যা নিয়ে স্বল্প মেয়াদী কোর্স আছে, এর বাহিরে ব্যপকহারে কিছু হচ্ছে না।
অণু- আকাশ ও জ্যোতিস্ক নিয়ে তো আদি মানুষদেরও খুব কৌতূহল ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে-
শিশির ভট্টাচার্য- নিঃসন্দেহে আকাশ ছিল আদি মানুষের কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর বস্ত, অদ্ভুত গোলাকার একটা জিনিস, এর মাঝে চন্দ্র-সূর্য উদয় হয়, অস্ত যায়। গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়ে, কিন্তু আকাশের চন্দ্র, সূর্য পড়ে না ! কেন এমন হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা নিজেরাই আবিস্কার করে বসেন রঙ মাখানো সব গল্প। আর অধিকাংশ গোত্রের কল্পনায় এই দৃশ্যমান আকাশের পিছনেই আছে স্বর্গীয় ভুবন।
অণু- আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলের সাথে অনেক প্রাণীর অবয়ব মিলিয়ে ফেলেছিল আদি মানুষেরা, তৈরি করে ছিল নানা পুরাণ কথার-
শিশির ভট্টাচার্য – দীর্ঘ দিন ধরে মানব সম্প্রদায়ের দেখেছিল তারা প্রকৃতির সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী, তারা যেমন বলবান নয় তেমন তাদের শরীরে আত্মরক্ষার ব্যবস্থাটুকুও নেই। সেই অতীত থেকেই বিভিন্ন প্রাণী সম্পর্কে তাদের ভয় মিশ্রিত ভক্তি গড়ে উঠে। অনেকে বিশ্বাসের, নানা ধর্মের মূলে সেই কারণে অনেক প্রাণী দেবতাজ্ঞানে পূজিত হোত এবং এখনো হয়।
এখনো আমরা কথায় কথায় সিংহাসন, সিংহদ্বার ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করি নিজের অজান্তেই এদের গূঢ় অর্থ বিবেচনা না করে। এদের মাঝেই লুকিয়ে আছে মানুষ কিছু কিছু প্রাণীর শৌর্যবীর্যে কি পরিমাণ মোহিত ছিল ।
যেহেতু আদি মানুষকে কেউ বলে দেয় নি তারা কোথা থেকে এসেছে, পৃথিবীর জন্ম কিভাবে তাই তারা তাদের সীমিত পর্যবেক্ষণলন্ধ জ্ঞান দিয়ে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল।
অণু- মানুষ মহাবিশ্বের জন্য কি রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বলে আপনার মনে হয়?
শিশির ভট্টাচার্য – মানুষ মহাবিশ্ব কেন, পৃথিবীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, মানুষের উদ্ভব না হলেও এই গ্রহের কিছু যায় আসত না। মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীর মূল পার্থক্য বুদ্ধিমত্তায়, এছাড়া বিবর্তনের ফলে উদ্ভূত জীবনের বিস্তৃত শাখা-প্রশাখার অসংখ্য প্রাণীর চেয়ে সে আলাদা কিছু নয়। অন্য সকল প্রাণীর মতই মানুষেরও জন্মের আগে যেমন অন্ধকার, মৃত্যুর পরও ঠিক তেমন অন্ধকার।
অণু- বিশ্বের নানা অঞ্চলের লোককথা, বিশ্বাস, গল্পের মাঝে অপূর্ব মিল, এমনটা কি মানুষ এক জায়গা থেকে ছড়িয়ে পড়ে নানা জায়গায় গিয়েছিল বলে?
শিশির ভট্টাচার্য – হতে পারে, আবার মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে নিজস্ব পৃথক পৃথক ধ্যানধারণা দিয়েও যে গল্পটি তৈরি করেছে তা অনেক গোত্রের সাথে মিলতেই পারে।
অণু- মানুষ কি ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বের প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে বলে মনে হয় আপনার?
শিশির ভট্টাচার্য- মহাবিশ্ব আমাদের কল্পনার চাইতেও অনেক অনেক গুণ বড়। প্রাণ সেখানে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই বিশাল আয়তনের কারণে কোন দিন মানুষ তাদের সাক্ষাৎ পাবে কি না তা বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে বলা মুশকিল। হয়ত পাবে, হয়ত পাবে না, কিন্তু প্রাণ যে আছে এটুকু নিঃসন্দেহ হয়েই বলা যায়।
অণু- মহাকাশের দূরত্ব একটা বিশাল বাঁধা অবশ্যই, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা আলোর গতিকেই সবচেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন বলে মেনে নিয়েছি, ভবিষ্যতে যদি এর চেয়ে দ্রুততর মাধ্যম পাওয়া যায়, তখন এমন যোগাযোগস্থাপন সম্ভব হতেও পারে-
শিশির ভট্টাচার্য- আলোর গতি যে সবচেয়ে বেশী এটা কিন্তু কোন তত্ত্ব নয়, কিন্তু আলোর গতি সবচেয়ে বেশী এটা কল্পনা করেই আইনস্টাইন বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সমস্যার চমৎকার সমাধান করেছিলেন। যত দিন পর্যন্ত এর বিকল্প সত্য আমরা না পাচ্ছি ততদিন এইটিই ধ্রুব হয়ে থাকবে।
তবে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে মানুষ যে পরিমাণ উৎকর্ষ সাধন করে চলেছে তাতে মহাকাশ ভ্রমণ বিশেষ করে আমাদের সৌরজগতের মধ্যে ভ্রমণ কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হয়।
অণু- মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে বলে মনে করছেন আপনারা?
শিশির ভট্টাচার্য- এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের ধারণা দিয়ে যাচ্ছেন, বিশেষ করে মাল্টি ইউনিভার্স থিওরি অনেক জায়গাতেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে, অনেকেই এমনটা মনে করছেন বোতলে সৃষ্ট বুদবুদের মত কয়েকটা মহাবিশ্ব এক সাথে সৃষ্ট হয়েছিল, কিন্তু তারা কখনোই একে অন্যের সাথে মিলিত হবে না, এমনও হতে পারে তাদের মাঝে পদার্থ, রসায়নের সূত্র পর্যন্ত আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করে। কোয়ান্টাম স্ট্রিং তত্ত্বও বেশ জনপ্রিয়,
কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, আমরা কিন্তু সব তত্ত্বই দিয়ে যাচ্ছি আমাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, এখন ধরা যাক একটি অ্যাকোরিয়ামে অবস্থিত গোল্ডফিশের কথা, সে কিন্তু সব কিছুই বাঁকা ভাবে দেখে, কাজেই তার কাছে বিশ্বের সবকিছুই বাঁকা এবং সবাই বাঁকা ভাবেই দেখবে। কাজেই আমাদের পর্যবেক্ষণই যে ঠিক তা জোর গলায় বলার কোন উপায় নেই।
এটুকুই বলা যায়, মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ধারণা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
অণু- সেই সাথে মহাকাশে নিত্য নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হতেই আছে-
শিশির ভট্টাচার্য- এই কয়েক বছর আগেও ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি নিয়ে আমরা কিছুই জানতাম না, এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের মহাবিশ্বের অধিকাংশই এই অজানা বস্তু!
অণু- বর্তমানে কি বই পড়ছেন এই বিষয়ে?
শিশির ভট্টাচার্য- ব্রায়ান গ্রীনের The Elegant Universe এবং স্টিফেন হকিং-এর The Grand Design, শেষোক্ত বইটি বেশ উপভোগ করছি।
অণু- বিজ্ঞানের বাহিরের সাহিত্য জগতে আপনার প্রিয় লেখক কে?
শিশির ভট্টাচার্য- রবীন্দ্রনাথের সব বিষয়ের লেখা ভাল লাগে। বাংলা সাহিত্যের মাঝে হাসান আজিজুল হক এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বিশেষ প্রিয়। সেই সাথে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোও বেশ ভাল লাগে।
প্রফেসর শিশির ভট্টাচার্যের সাথে এর পরে কথা হয় মহাকাশের কিছু জ্যোতিস্ক নিয়ে, কিন্তু সেগুলোর আলাপ গড়ায় অনেক দূর, তিনি পরবর্তীতে কয়েক ধাপে এই বিষয়ে কথা বলতে সম্মতি দিয়েছেন, হয়ত আমরা কোন পর্বে গ্রহদের গঠন নিয়ে কথা বললাম, কোন পর্বে নক্ষত্র বা ছায়াপথ। এই বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরা অতি সত্বর তাদের প্রশ্ন মন্তব্যের জায়গায় লিখে দিতে পারেন। আমাদের জন্য এমন সুযোগ এক বিশাল পাওয়া -
( চলবে)
মন্তব্য
facebook
আহ, খুব একটা প্রিয় বিষয় শুরু করলেন।
আমার জীবন হলো বাগানে দাঁড়ানো গাছের মত। সেই আমার কাছে সারা পৃথিবীর খবর দিতেন এতদিন, মনে মনে ভ্রমণ করতাম, এখন নিয়ে চলেছেন মহাকাশে।
অনেক ধন্যবাদ নাক্ষত্রিক অণু ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মন্তব্য করলেন,নাকি কবিতা ! দারুণ হয়েছে, কোন স্পেশাল খবর চাইলে প্রশ্ন করে ফেলুন!
facebook
কবিতা! চরম উদাসের ফর্মূলায় ফেলে দিলেই কবিতা হয়ে যেতে পারে।
হ্যাঁ, প্রশ্ন তো করবোই, পরে আরো অনেক। এখন শিশির ভট্টাচার্যের বইটা, "মানুষ ও মহাবিশ্ব" পড়তে ইচ্ছা করছে। এটা কি পাওয়া সম্ভব?
জ্যোতির্বিদ্যা পড়ার খোঁজখবর করেছি একসময়, কিন্তু গোটা দেশে খুব অল্প কিছু জায়গায় সে ব্যবস্থা আছে শুনলাম আর ততকালীন পরিস্থিতিতে সেসব জায়গায় যাবার সামর্থ্য হলো না। তদুপরি সমাজ তো চোখ গোল গোল করে আছে, "এ পড়ে কী হবে, চাকরির কী ব্যবস্থা" হ্যানো ত্যানো নানা কান্ড। হইলো না আর পড়া কেবল একটি অসাধারণ বছর কাটলো এক প্ল্যানেটারিয়ামের কোর্সে ও কাজে।
তারপরে মহতোমহীয়ান ছেড়ে অণরোণীয়ানে চলে যেতে হলো, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রে। তবে কি জানেন, সেই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো সেই একবছরের কোনো রিকগনিশানহীন সেই পড়া আর কাজ সারাজীবন ধরে কাজে লেগে চলেছে।
লেখাটা দারুণ লিখেছেন, সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
facebook
আমিতো ভাই "ঘরের মধ্যে দাড়াঁনো গাছ"
ভাল লেগেছে লেখা পড়ে। উনার বিষয়ে জানতাম না। এত বিদ্বান মানুষ। ধন্যবাদ নক্ষত্র অনু ভাই। আগামী পর্বের জন্য
এত পপ্পন না খেয়ে প্রশ্ন পাঠান!
facebook
১: স্থান এবং সময় বলতে আসলে ঠিক কি বোঝায়?
২: পদার্থ আর প্রতিপদার্থের যুদ্ধে কেন পদার্থ'রা টিকে গেল?
৩: হলগ্রাফিক মহাবিশ্বের ধারণা সম্পর্কে সহজ ভাষায় জানতে চাই।
৪: স্থায়ী কণিকরা কি আসলেই নির্দিষ্ট কোন সময় এর পর অন্য কোন কিছুতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে?
love the life you live. live the life you love.
চমৎকার। আরও প্রশ্ন আসতে থাকুক।
facebook
চলুক
চলবে--
facebook
ভ্রমন বিষয়ক সিরিজের মতো এই সাক্ষাৎকারের সিরিজও বেশ চমৎকার লাগছে। সিরিজ চলুক নিয়মিত
ধন্যবাদ---
facebook
নিজেদের সম্পদের ব্যাপারে আমরা যে কতোটা উদাসীন, আপনার লেখা পড়ে সেটা বুঝতে পারলাম। গ্লানি নিয়েই স্বীকার করছি, এই মানুষটার নাম আমি শুনি নি।
এমন কোন ব্যবস্থা যদি থাকতো যে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ জন কিশোরকিশোরী, তরুণতরুণী উনার সংস্পর্শে আসবে, উনার কাছ থেকে কিছু হলেও শিখতে চেষ্টা করবে তাহলে আমরা বছরে ১২০০ নতুন মানুষ পেতাম। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে এই নতুন মানুষগুলোর স্বপ্ন, চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি একটা নতুন উচ্চতা পেত। জানি না কবে আমাদের বোধোদয় হবে।
একটা খাঁটি কথা বলেছেন।
এমন মানুষ আমাদের ঘেয়ো সমাজে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাতিঘরের মত।
facebook
ভালমানুষ গুলো নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ হয় – তাঁদের সংস্পর্শ না পাওয়ার পেছনের বড়ো কারণ এটি। আবার তাঁরাই যখন কিছু একটা করে, অনেকগুলো মানুষকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চান – আমরা যে যেভাবে পারি সেভাবেই তাঁদের পা চেপে ধরে বাঁধা দিই। এসব দেখে অন্য ভালোমানুষ গুলো আরও আড়ালে চলে যান।
এই “infinite loop” থেকে আমরা যতদিন বেরুতে পারবো না, ততদিন মুক্তি অসম্ভব।
১০০ % সহমত।
facebook
অসাধারন এক মানুষ সম্বন্ধে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ দিলাম এর জন্য। গোল্ডফিস উপমাটা গ্র্যান্ড ডিজাইনএ পেয়েছিলাম, ভালো লাগলো সেটা উদ্ধৃত করায়। তুইও মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার আশা ছাড়িস না, আশা করি মায়ান সভ্যতা ঘুরে আসার পর তোর ইচ্ছাটা আরো বেড়ে গেছে। শুভকামনা রইলো। এরকম আরো লেখা দে।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আপাতত পড়তে না পারলেও লিখতে থাকি
তুইও কিছু লেখা অনুবাদ করতে পারিস কিন্তু।
প্রশ্ন কোথায়?
facebook
ডাকঘর | ছবিঘর
facebook
— Carl Sagan
১। আকাশে ধ্রুবতারার কোন নড়াচড়া নাই। কাহিনী কি?
২। রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে-- রাতের ঐ ঐ তারাগুলাই কি দিনেও থাকবে? নাকি অন্য কোন তারা? ধরা যাক সূর্য গ্রহণ হচ্ছে। ভীষণ অন্ধকার। আমরা উত্তর আকাশে তারা দেখতে পাচ্ছি। তখন কি সপ্তর্ষি দেখব রাতের সপ্তর্ষির জায়গায়?
৩। নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ হয়--। তাহলে নক্ষত্র জন্মও নেয়। মহাবিশ্ব শুরুতে অতি ক্ষুদ্র ছিল। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে এর আকার। আমরা বাড়ির বারান্দা বানাই। দোতলাকে পাঁচ তলা করি। এই বাড়ানোর জন্য একটা স্থান লাগে। পাত্রও লাগে। প্রশ্ন হচ্ছে আদিতে মহাবিশ্ব কিছুই ছিল না। তখন কি এর বেড়ে উঠার স্থান এবং পাত্র ছিল? না থাকলে এলো কোথা থেকে? মহাবিশ্ব এখনো প্রসারিত হচ্ছে। প্রসার পেয়ে বেড়ে গিয়ে বারতি অংশটুকু কিসে আশ্রয় করছে?
নাক্ষত্রিক অণু ভাই-- আমার বুড়োখোকাবাবুর মতন প্রশ্ন শুনে হাসবেন না দয়া করে---
পৃথিবীর অবস্থানের এবং ঘূর্ণনের কারণে ধ্রুবতারাকে স্থির বলে মনে হয় ( সম্ভবত কেবল মাত্র উত্তর গোলার্ধে) , মনে হতে পারে সেই বিশেষ তারাকে কেন্দ্র করেই সমস্ত মহাবিশ্ব আবর্তিত হচ্ছে, এটি কেবল দৃষ্টিভ্রম।
অবশ্যই রাতের সব তারাই দিনেও থাকে, কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে প্রতি মুহূর্তে পৃথিবী যেমন নিজের অক্ষের উপরে ঘুরছে, তেমনি সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে এগোচ্ছে, আবার আমাদের সৌরজগতও বিপুল গতিতে অবস্থান পরিবর্তন করছে, কাজেই আমাদের এক মুহূর্ত আগের দেখা তারাগুলো কিন্তু আর আগেই অবস্থানের নেই, তাদের অবস্থান সর্বদাই পরিবর্তনরত।
মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে, সেই সাথে প্রসারিত হচ্ছে স্থানও, কিন্তু এই ব্যাপারটি বেশ জটিল, এটা নিয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করে তারপর উত্তর লিখব।
facebook
সহজ করে বলা সত্যির চেয়ে আর সুন্দর কিছু হতে পারে না।
ওনার চিন্তার গভীরতায় মুগধ হলাম। অনেক ধন্যবাদ অণু ভাই।
ব্রায়ান গ্রিনের বইটা পড়তে শুরু করেছি কিছুদিন আগ থেকে, চমৎকার লাগছে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
সহজ করে বলা সত্যির চেয়ে আর সুন্দর কিছু হতে পারে না।
facebook
facebook
প্রশ্ন নেই। পড়ছি, শিখছি।
ড:শিশির ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা আর আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কত অজানারে জানাইলে তুমি !
তারপরও- প্রশ্ন না হলেও কৌতূহলটা জানান !
facebook
লেখা ভাল লাগল।
এমন অনেক গ্রহ-নক্ষত্র আছে যেখানে পৌঁছাতে যা সময় লাগবে তাতে করে কোন মানুষই তার আয়ুস্কালে সেখানে পৌঁছাতে পারবে না। যেমন ধরুন ১৫০-২০০ বছর। আবার এখন অবধি আমাদের অধীত জ্ঞান বলে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে কিছু গেলে তা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাহলে সেখানে যাবার উপায় কি?
বায়োঅ্যাস্ট্রনমি বা অ্যাস্ট্রোবায়োলজি ব্যাপারটা আদপে কী?
এ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে কী ধরনের গবেষণা হচ্ছে?
উপায় এখন পর্যন্ত জানা নেই !
অ্যাস্ট্রোবায়োলজি মহাকাশে জীবনের সম্ভাবনা ও পরিবেশের সন্ধান নিয়ে গবেষণা, আরো বিস্তারিত জানা দরকার এই নিয়ে।
facebook
আপনি তো ধীরে ধীরে সব্যসাচী লেখকে পরিনতঃ হচ্ছেন ভাই!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
কি কথা!
facebook
তারকা+অণু= তারকাণু
facebook
অনু ভাই, আপনার এই লেখার মাধ্যমে ডঃ শিশির ভট্টচার্য্য সম্বন্ধে জানতে পারলাম। এই নিভৃতচারী বিদ্বান ব্যক্তিকে আমার সশ্রদ্ধ প্রনাম আর আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কিছুদিন আগে ব্রায়ান গ্রীন এর The Elegant Universe-11th Dimension ভিডিও টা দেখলাম, এক কথায় অসাধারণ । মহাকাশ নিয়ে কিছু লেখার অনুরোধ করছি এবং কোন সন্দেহ নাই যে ঐ লেখাগুলো ও আপনার ভ্রমন কাহিনীর মতই দারুণ হবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
চেষ্টা করব, শুভেচ্ছা।
facebook
লিঙ্ক দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। বারবার এই ম্যাসেজ টা পাচ্ছি। "To complete this form, please complete the word verification below." কেউ কি বলবেন কোথায় আমি word verification কমপ্লিট করবো?
facebook
আমি জানি।
আমাকেও কে যেন বলে দিয়েছিলেন।
একটা কাজ করুন প্রথমে আপনার কমেন্টটা কপি করে নিন।
এবারে 'নতুন মন্তব্য করুন' এ রাইট ক্লিক করে অন্য ট্যাবে ওপেন করুন।
সেখানে আগের মন্তব্য পেস্ট করে 'সংরক্ষন' এ ক্লিকে দিন।(ক্লিকে শব্দটা কেমন, এইমাত্র বানালাম )
এবারে দেখবেন নিচে ওয়ার্ড ভেরিফিকেশন দেখাবে।
এইগলা হইল দুই নাম্বারি বুদ্ধি।
কথায় কয় না, 'সমিস্যা থাইকলে সমিধানো থাকে'
facebook
অসাধারন।অসাধারন অসাধারন অসাধারন।
আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা।শিশির ভট্টাচার্যকে চিনি না। এর আগে মহাকাশ বিজ্ঞানী বলতে শুধু জামাল নজরুল ইসলামকেই চিনতাম। খুবই ভাল লাগলো।
প্রশ্ন: মহাকাশ ভ্রমনে যে ধরনের "বিম আপ" বা মানুষের ও প্রাণীর কনিকায় রুপান্তরিত হয়ে যাত্রা'র কথা আমরা কল্পবিজ্ঞানের মাধ্যমে জানতে পারি সেটা এখনকার তত্বমতে আদৌ সম্ভব কিনা, যদি সম্ভব হয় তবে এ গবেষণার কাজ কতদূর এগিয়েছে?
জিজ্ঞেস করে জানাব, তবে এখন পর্যন্ত কিছুই এগোনোর কথা শোনা যায় নি।
শ্রদ্ধেয় জামাল নজরুল ইসলামের পি এইচ ডির বিষয় ছিল রিলেটিভিটি, যেটি পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে, তবে তিনি ব্ল্যাকহোল নিয়ে কৃষ্ণবিবর নামে একটি অসাধারণ বই লিখেছিলেন বাংলা একাডেমীর জন্য, সেই সাথে তার অন্যান্য লেখালেখি তো আছেই।
facebook
সেদিন বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে চড়তে গিয়ে হুটহাট একটা স্বপ্ন দেখে ফেললাম... এই যে কোন একটি বড় পাহাড়ের ওপর আমাদের জাতীয় মানমন্দির স্থাপিত হবে। শিশির ভট্টাচার্যের উত্তরসুরি বঙ্গসন্তানেরা সেখানে গবেষনা করবে, আবিষ্কারের খেলায় মেতে উঠবে... বিশ্বকে নতুন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করবে...
আমি কি খুব বেশি অবান্তর এবং আবেগপ্রবন... ?
জানিনা...
স্বপ্ন দেখা আর সেটাকে বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টাই তো জীবন।
অবান্তর হবে কেন, চমৎকার কথা বলেছেন।
facebook
আলাপচারিতার কথাগুলো শুনতে পারছিলাম
বাহ, চমৎকার আপনার প্রকাশভঙ্গী !
facebook
এই মানুষটা আমার গাঁয়ের মানুষ আর উনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন - আমার জানার পরিধি ছিল এটুকু। আপনাকে স্যালুট ওনার সম্বন্ধে আমার যা জানার কথা ছিল সেগুলো অবশেষে দেরীতে হলেও জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
কাকুর সাক্ষাৎকার আরো আসছে, প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
facebook
এই মানুষটি সম্পর্কে জেনে খুশি হলাম অনু ভাই।আরও সাক্ষাতকারের অপেক্ষায় রইলাম
নতুন মন্তব্য করুন