গেলবার দেশে থাকার সময়ে বেশ অযাচিত ভাবেই রাজশাহী বিশ্ব-বিদ্যালয় রোটারি ক্লাব আমার মত ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো পাবলিককে কোন অজ্ঞাত কারণে ঘটা করে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর উপর আয়োজিত আলোচনা সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে মূল বক্তার স্থান দেয় এবং সম্বর্ধনা প্রদান করে, সেখানের শেষের আধা ঘণ্টা উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল, এক পর্যায়ে স্কুলপড়ুয়া অনুসন্ধিৎসু ছাত্র প্রশ্ন করেন – আপনার জীবনের প্রথম ভ্রমণ কখন, কিভাবে এবং কার সাথে?
তার প্রশ্নের সাথে সাথে আমি বেশ কবছর পিছনে ফিরে চললাম যেন, চারিদিকের কোলাহল ভুলে মনের পর্দায় বায়োস্কোপের মত ভেসে ওঠে একের পর এক সেই উতল মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন সময়ের মূল্যবান মুহূর্তগুলি, যখন জীবনের নেশায় মাতাল আমরা দেশকে জানার জন্য ছুটে চলেছি জনপদ থেকে জনপদে। উত্তর দেবার সম্বিত ফিরে পেতেই উপস্থিত সুধী মণ্ডলীর দিকে চেয়ে নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে অব্যাখ্যাত হাসি ফুতে উঠেছিল নিশ্চয়ই আমার, কারণ সেখানে উপস্থিত সেই প্রথম ভ্রমণের সফরসঙ্গী, অকৃত্রিম বাল্যবন্ধু উদয় শঙ্কর বিশ্বাসের মুখেও দেখলাম সেই মৃদু হাসি, নিশ্চিত ভাবেই সেও ফিরে গিয়েছিল সেই আনন্দঘন অতীতে।
কেবল ১৯৯৭ সালের এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি আমরা, বয়স পনের চলছে ( উদয় ছিল আমার দেড় বছরের বড়, কিন্তু আমরা এক ক্লাসেই পড়তাম, যেখানে তার ছোট বোন আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু সংগীতাও পড়ত), যখন ঝিম ধরা দুপুরে কেবল রবিনসন ক্রুসো না হয় এডমণ্ড হিলারি হবার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে, চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠে দূরদেশের গুপ্তধনের হাতছানি, ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার হবার চেয়ে মঙ্গোলিয়ায় ঘোড়সওয়ার যাযাবরদের জীবনযাত্রা অনেকগুণ বেশী আকর্ষণীয় মনে হয়। সব ছেড়েছুড়ে বেদের বহরে চলে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পাগলাটে স্বপ্নালু ইচ্ছেগুলো বাস্তবে পরিণত হয় না, একঘেয়ে স্কুল করি, নিয়মিত পরীক্ষা দিয়ে যায়, এভাবেই স্কুলের শেষ ধাপ পর্যন্ত চলে আসি, যাযাবর আর হওয়া হয়ে ওঠে না।
বন্ধুত্বের কারণে উদয় এবং আমাকে অনেকেই মানিকজোড় বলে ডাকত, বইপড়ার পাগলপারা নেশা ছিল আমাদের, এবং গর্বের সাথে জানাচ্ছি এখনো আছে ( আমার স্কুল জীবনের আর কোন বন্ধুর বইপড়ার নেশা টিকে আছে বলে শুনি নি, সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে বাস্তব জীবনে), পুরনো স্থাপত্যে প্রতি অপরিসীম আগ্রহ- আমাদের পাড়ার মঠটা দেখেই মনে হয় মিশরের পিরামিড দেখে ফেললাম, কুসুম্বা ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদ দেখে আপ্লুত হয়ে পড়ি মোঘল আমলের নির্মাণশৈলী চাক্ষুষ করে। স্কুল পালিয়ে পদ্মায় গেছি তার প্রমত্ত রূপ দেখার আশায়, সেই সাথে যদি মিলে যায় বালুচরে রোদ পোয়াতে থাকা ঘড়িয়াল কিংবা হুঁশশ করে এক পলকের জন্য আকাশ দেখে আবার ঘোলা জলের গভীরে চলে যাওয়া শুশুক তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ডাকটিকিট সংগ্রহ করি দুইজনের পাল্লা দিয়ে, বিচিত্র কিছুর খোজে চষে ফেলি গোটা রাজশাহী শহর। আর অনেক মাস ধরে পরিকল্পনা করি- দুই বন্ধু মিলে এস এস সির পরে দক্ষিণবঙ্গ সফরে যাব।
একে তো তখন স্বপ্নগ্রস্ত হবার সময়, তার উপরে মিলবে ছুটি- পারলে তো দেশের ৬৪ জেলার পদব্রজে হানা দিয়ে ফেলি এমন একটা অবস্থা, কিন্তু বাঁধা তো অনেকগুলো। প্রথম এবং সবচেয়ে কঠিন বাঁধা- অভিভাবকের অনুমতি! সেটি হলেই বাকীগুলো ধারাবাহিক ভাবে দূর হয়ে যাবে এমন বিশ্বাস আমাদের। অনেক যত্নে নিখুঁত অ্যামবুশ পাতলাম, যেন অভিভাবকেরা কোন রকম সন্দেহ না করে কিছু দিনের জন্য হলেও দুই স্কুলপড়ুয়া বালককে একলা ছেড়ে দেয়। সেই হিসেবেই বলা হল আমরা উদয়ের নানা এবং দাদাবাড়ী বরিশালের উজিরপুরে বেড়াতে যাব, পথে খুলনা, বাগেরহাট ঘুরে যাব, সেইখানেও পরিচিত বড়ভাই আছেন। তারাই যাবতীয় ব্যবস্থা করে রাখবেন ( ভাগ্যিস তখনো মোবাইল জনপ্রিয় হয় নি খুব একটা!)
এই প্রসঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি বছর দশেক আগেও বাংলাদেশে ঘোরা মনে কেবল আত্মীয়ের বাড়ীতে যাওয়া বোঝাত ( এখনো অধিকাংশক্ষেত্রে তাই-ই বোঝানো হয়) , কয়েক সহপাঠী চাচা-মামা-খালার বাড়ীর বা চাকরীর সুবাদে কক্সবাজার, টেকনাফ, শ্রীমঙ্গল, তেঁতুলিয়া, ময়মনসিংহ, সুন্দরবন সব সাবাড় করে ফেলেছে, আর আমার পরিবারের সমস্ত চাচা-মামা-খালু-ফুফা-নানা-দাদা ( চাচী-মামী-খালা-ফুফু-নানী-দাদী) কোন এক অজানা চুম্বকের টানে এসে গেড়ে বসেছে হয় পদ্মাপারের রাজশাহীতে না হয় পাশের জেলা নওগাঁতে! কি মুস্কিল, চক্ষু মেলিয়া দেখা হয় না কিছু, মন ত্রাহি ত্রাহি করে, ঢাকা গিয়েছি সাকুল্য মাত্র ২বার! অন্য কোন বিভাগ তখন নিউজিল্যান্ডের মতই দূর মনে হত, কাজেই দক্ষিণবঙ্গ ভ্রমণের এই অপরিপক্ক পরিকল্পনা যে আমাদের চেনা জানা মহাবিশ্বকে পাল্টে দেবে তাতে কোন সন্দেহ ছিল না।
অ্যামবুশ মোতাবেক বাড়ীতে অনুমতি বেশ সহজেই পাওয়া গেল, বাবা কিছু টাকাও দিলেন রাহা খরচ হিসেবে, আসলে এর আগে তো এভাবে নগদ টাকা চাওয়া হয় নি, তাই বেশ একটা কিন্তু কিন্তু ভাব ছিল, সেই সাথে দুইজনের রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে হেঁটে অর্জিত অমূল্য যৎসামান্য অর্থসম্পদ নিয়ে এক জীবনের আলো ভরা অন্যরকম দিনে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসে চেপে বসলাম আমরা , গন্তব্য - খুলনা।
বিভূতিভূষণের ছোট্ট অপু তখন আমাদের মনে-প্রাণে-চোখে, মুগ্ধতার আবীর লাগানো নতুন চোখে বিস্ময়ভরা জগৎ আমাদের উচ্ছাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, পেছনে পড়ে যায় এতদিনের চেনা শহর, পথ, ঘাট, প্রান্তর। সম্পূর্ণ নতুন এক গ্রহে নিয়ে যায় জাদু ট্রেনটি, মাঝে মাঝেই থামে নানা ষ্টেশনে, যাত্রীরা উঠে যায়, নামতে থাকে, দিনের আলোর অদৃশ্য হয়ে যাবার আগে দিগন্তে টকটকে লাল বিশাল সূর্য আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ, একসময়ে সেও বিশ্রামে চলে যায় কিন্তু আমাদের যাত্রা থামে না, নতুন সাথী রাতের আঁধারকে নিয়েই নিঃসঙ্গতার আঁধার সমুদ্র চিরে চলতে থাকে কপোতাক্ষ।
খুলনায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ রাতই হল, সেখান থেকে আবার আমাদের গন্তব্য বটিয়াঘাটা, কুচকুচে কালো আঁধারের মাঝে দাড় টানা নৌকায় পশুর নদী পার হতে হতে টের পেলাম আকাশের নক্ষত্ররাও বেশ খানিকটা নিচে নেমে এসেছে আমাদের সাহস জোগাতে। নদীর অপর পাড়ে চলছে লোডশেডিং, তার মাঝেই বিপ্লব দার বাড়ী খুঁজে বাহির করা হল কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে।
উদয়দের কাজলার বাড়ীর নিচতলায় ছাত্রাবাস ছিল অনেক দিন ধরেই, সেই সুবাদেই রাজশাহী বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পড়া অনেক বড় ভাইয়ের সাথে তার পরিচয় ছিল। তাদেরই একজন এই বিপ্লব দা, পরবর্তীতে যে দাদাদের বাড়ীতে আমরা আশ্রয় পেয়েছিলাম সবাই-ই সেই সুবাদেই পরিচিত। প্রায় মধ্যরাতে কাঁধে ব্যাগবোঁচকা নিয়ে দুই কিশোরকে দেখে বাড়ীর বাসিন্দারা যারপরনাই বিস্মিত হলেন, কিন্তু আতিথেয়তার কোন ত্রুটি হল না। যদিও একটু পরেই উদয় আমাকে আড়ালে ডেকে বলল- দোস্ত, আমি দাদাকে বলেছি আমরা খুলনায় ট্রেন থেকে নেমে আইড় মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছি, এত রাতে উনাদের আর সমস্যায় ফেলতে চাচ্ছি না, আজকের রাতটা আমার একটু কষ্ট না হয় করলামই! ( বিপ্লবদা যদি এই লেখা পড়েন নিঃসন্দেহে মাথা নেড়ে বলবেন, বিচ্ছু দুটোকে বিশ্বাস করা উচিত হয় নি ! )
ব্যাটার ব্যবহারিক জ্ঞান বরাবরই বেশী, আর কি উপোষ গেল ভ্রমণের প্রথম রাত, যদিও সকালে ঠেসে ফলাহার করে সেই শূন্যতা পুষিয়ে নেওয়া গেল পুরোমাত্রাই। পুরনো আমলের জমিদার বাড়ীর মত ভবনের বাহিরে পা দিতেই চমকে উঠে দুই পা পিছিয়ে এলাম, আগের রাতে ফিনকি দেয়া জ্যোছনা ছিল, বাড়ীর নিচেই পশুর নদীর জল পারদের মত জানান দিচ্ছিল তার অবস্থান, আর আজ সকালে সেই জল চলে গেছে অনেক অনেক দূরে, বাড়ীর নিচে এখন থিক থিক কাঁদা! কি ভোজবাজিরে বাবা?
আসলে উত্তরবঙ্গের নদীগুলোর জোয়ার-ভাঁটা কখন চোখে পড়ার মত প্রবল হয় না বললেই চলে, তাই জোয়ার, ভাঁটা, তেজ কটাল, মরা কটাল থেকে গেছে বইয়ের শব্দ হয়েই। আজ চাক্ষুষ দেখে সাথে সাথেই বুঝলাম কেন প্রিয় স্কুল শিক্ষক মনিমুল হক স্যার সবসময়ই বলতেন- মানুষ ২ ভাবে জ্ঞানার্জন করে, বই পড়ে এবং ভ্রমণ করে! সেদিন পশুর নদীর ভাঁটা দেখে খানিকটা হলেও তার কথার যথার্থতা বুঝতে পেরেছিলাম।
বেশ লাগল নদীর ধারে জনপদটি, সেই সাথে খুলনা শহর ঘুরে আসা হল এক বিকেলে, দিন কয় পর আমরা চললাম বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে। যাবার আগ মুহূর্তে বিপ্লবদার বাবা মৃন্ময় সাহা কালুর ( পরে জেনেছিলাম উনি বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির নিবেদিত প্রাণ আদর্শবান সদস্য, যিনি তাদের উচ্চ স্থানে আসীন নেতাদের মত নিজেকে বিকিয়ে দেন নি ) সাথে দেখা করলে উনি আমার ডায়েরীতে একটি বাক্য লিখে দিয়েছিলেন যা মানসপটে এখনো জ্বলজ্বল করে- শ্রেণী বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তোমরা অকুতোভয় ভূমিকা রাখবে, এটিই এই প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।
বাগেরহাটে যাবার এক পর্যায়ে সবচেয়ে প্রিয় মাধ্যমে ভ্রমণ করবার সুযোগ মিলে গেল- বাসের ছাদে! শো শো করে চলে যাচ্ছে গাছপালা ঢাকা রাস্তা, দুপাশে ফসলের ক্ষেত, মুখে লাগছে বুনো বাতাস, কি উল্লাসে ভরা চারিদিক। একবার অবশ্য ঝুকে পড়া পাতাসহ একটা ডাল বেশ একটু ছুয়ে গেল কপালের উপরিভাগ! ব্যস, অবস্থা খারাপ বুঝে নেমে বাসের ভেতরে সেঁধিয়ে গেলাম পরের স্টপেই।
বাগেরহাটে পৌঁছে আমরা হতবাক, এতদিন বই আর ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখে আসা বিশাল ষাট গম্বুজ মসজিদ আমাদের চোখের সামনে! তখনো তার উপর বিদঘুটে সংস্কারের নামে পুরু সিমেন্ট আর চুনকামের আঁচড় পড়ে নি, লালচে ইটে ইতিহাসময় গন্ধ। মসজিদের পাশেই ঘোড়া দীঘি, প্রাতঃ নমস্য ইতিহাসবিদ লেখক আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া ছিলেন (এখনো ) আমাদের অন্যতম প্রিয় লেখক , তার বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি ১ম এবং ২য় খণ্ড দুজনেরই ঝেড়ে প্রায় মুখস্থ করা ছিল, সেখানেই লেখা ছিল এককালে এই দীঘিতে কুমির থাকত। কিন্তু আজ কুমির থাকে কেবলমাত্র খাঞ্জালি দীঘিতে। সেই দীঘির দিতে যেতেই ছোট্ট এক গম্বুজ মসজিদ চোখে পড়ল, অপূর্ব তার নির্মাণ শৈলী ও কারুকার্জ এবং বিশালকার গম্বুজটি।
একসময় অবশেষে দেখা গেল খাঞ্জালি দীঘির কালচে জল, পাশেই খান জাহান আলীর মাজার ঘিরে জমজমাট ব্যবসা, ওপর পাড়েই আরেকটি প্রাচীন মসজিদ- সেটির নাম নয় গম্বুজ মসজিদ। সেটির মেহরাবের কাছের দেয়ালে এক জায়গায় দেখলাম বড় গর্ত মত, সেখান থেকে আবার তরল জাতীয় পদার্থ পড়ছে, উপস্থিত হুজুর ভক্তি ভরে বলল- এটি খান জাহান আলীর বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ, কয়েকশ বছর পরেও এখান থেকে ঘাম ঝরছে! অবশ্য সেখানে ঘোরাঘুরি করতে থাকা এক বালক মুসল্লি একটু আড়াল পেয়েই বলল- সব বাজে কথা, গত পরশুই দেখেছি হুজুরকে এখানে তেল ঢালতে! বিপ্লবদা বললেন, খান জাহান আলী ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, তাকে আমরা বানিয়ে ফেলেছি ধর্মীয় ঐশী পুরুষ।
সে রাতে আমাদের যাওয়া হল পিরোজপুর শহরের কাছে এক ছোট গ্রামে, পরের দিন হেঁটে সমস্ত দুর্গা সাগর ঘুরে দেখা হল, একটা জিনিস ভীষণ মনে আছে- দেড় টাকার মুচমুচে সুস্বাদু সিঙ্গারা! বাংলাদেশের নানা জেলায় ভিন্ন ভিন্ন দামের সিঙ্গারা খেয়েছি কিন্তু দেড় টাকা যে একটি সিঙ্গারার দাম হতে পারে তা কল্পনাতেই আসে নি কোনদিনই!
এত বছর পরে পরবর্তী দিনগুলো ক্রনিক্যালি মনে পড়ছে না, কিন্তু সেখান থেকে যে আমরা চালনা গিয়েছিলাম তা খুব মনে আছে। অনেক বইতে সমুদ্র বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামের পাশাপাশি মংলার বদলে চালনার নাম থাকত। সেখানেই থাকতেন আমাদের তপু দা, বাংলার ছাত্র ছিলেন- যেমন চমৎকার দীপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলতে পারতেন, তেমনি ছিল তার লেখার হাত। তাদের গ্রামের বাড়ীতেই দিন দুয়েক ছিলাম বলে মনে পড়ে। প্রচুর নৌকা সেখানে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হল বাড়ি ছাড়াও সেখানে হয়ত চলে কিন্তু নৌকা ছাড়া অসম্ভব। তার মা-বৌদিরা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মুখরোচক রান্না প্রতি বেলাতেই পাতে দিতেন মমতা ভরে, নারকোল-মুরগী আর বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করা ছোট কাঁকড়ার ঝোলের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। প্রথম রাতে পাতে বসার পর এক মজার ঘটনা ঘটল- বাড়ীর এক বৌদি জিজ্ঞেস করল, কাঁসার থালায় খেতে আপত্তি নেই তো? আমার উত্তরের আগেই পাশ থেকে এক মামা বলে বসলেন , হিন্দুর ছেলে কাঁসার থালায় খাবে না তো কিসে খাবে! বৌদি সলজ্জে বলে উঠলেন এই ছেলেটি হিন্দু না। তাহলে? শেষে উত্তর দিলাম- আমরা মানুষ।
চালনাতেই প্রথম চাক্ষুষ করলাম আজন্ম শুনে আসা গোলপাতার গাছ, কিন্তু মোটেই গোল নয় সে! অনেক নারকেল পাতার মত রীতিমত তীক্ষ, লম্বা পাতা! তারমানে নাম শুনেই আকৃতি কল্পনা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়! পথের বাঁকে বাঁকে কত রহস্য, কত জ্ঞান।
সেখানের চিংড়ির ঘেরের কথা খুব মনে পড়ে, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জমিতে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে, টলমল জল সবখানেই। সেই দিন ছিল পূর্ণিমা অথবা পূর্ণিমার পরের দিন, আমরা তপুদার সাথে ঘেরের পাহারাদারের ছাপড়ায় বসে, চারিদিকে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত, এমন রাতেই মনে হয় মানুষ চন্দ্রগ্রস্ত হয়ে গৃহত্যাগ করে। বিশ্বের যে অসহ্য সুন্দর কিছু মুহূর্তকে ছোঁয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ক্ষুদ্র জীবনে- সেই রাতটি তাদের অন্যতম। অনেকটা ঘোরলাগা মানুষের মত পথ চলেছিলাম সবাই।
এরপর একদিন মংলা ছুয়ে আমরা গেলাম বরিশাল- ধান, নদী, খালের দেশে। মংলায় জানতে চেয়েছিলাম মিঠেখালি নামের ঝংকৃত গ্রামটি কতদূরে, যেখান থেকে দীপ্ত শব্দাবলী আর গনেগনে আবেগ নিয়ে উঠে এসেছিলেন রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ নামের এক তরুণ কবি। নৌ পথে যাত্রা আমাদের, পথে থামা হল শর্ষিনায় কিন্তু লঞ্চ থেকে নামি নাই, শুনেছিলাম এখানকার পীর এক ঘৃণ্য রাজাকার, তার উদ্দেশ্যে দুই দলা থুথু নিক্ষেপ করে বানারিপাড়ার যাত্রা শুরু হল।
বরিশালের গ্রামগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্য তুলনাহীন, বিশেষত মাঠ ভরা পুষ্ট সোনালী ধানের সমুদ্রের মাঝে যখন নৌকা করে আলতো ভেসে চলে যাওয়া হয়, দূর গ্রামে তাল গাছের মাথায় মনে হয় আকাশটা নেমে এসেছে ঝপ করে। জলরঙে আঁকা ছবি মনে হয় সবকিছুকেই। এর মাঝে উঁচু উঁচু ভিটেতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বাড়িঘর। উদয়ের নানাবাড়ীতে থাকলাম বেশ কদিন, সেখানেই প্রথম বাদাম কিভাবে শিকড় থেকে আলাদা করে ধুয়ে, শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তত করা হয় তা দেখা হল। ধান মাড়াইয়ের মৌসুম চলছে, মউ মউ গন্ধ যেমন চারিদিকে ঠিক তেমনি সবখানের বাতাসে উড়ছে তুষ! প্রতি রাতেই একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানের পরিষ্কার আকাশের তারার মেলা দেখা। কিন্তু আমাদের বরিশালে অবস্থানের দিন শেষ হয়ে এল দেখতে দেখতে , মাঝে অল্প কয় ঘণ্টার জন্য যাওয়া হয়েছিল চাখার, শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের বাড়ি দেখতে। বাড়ীর পাশেই চাখার কলেজ, সামনে একটি খাল। ফজলুল হক কি এই খালেই কুমিরের সাথে পাল্লা দিয়ে সাঁতার কাটতেন? বাড়ীর উঠানে একটা কুয়োমত, শুনলাম সেখানে হক সাহেব কুমিরের বাচ্চা পুষতেন, সত্য না অতিরঞ্জিত তা আর খতিয়ে দেখা সম্ভব হল না।
অবশ্য এক গ্রামে স্থানীয় লোকেরা এক মজা পুকুরে নিয়ে গিয়েছিল ঘড়িয়াল দেখাতে, পড়ে দেখি গুইসাপ! কিন্তু বাঁশ ঝাড়ে ঘিরে থাকা জায়গাটি খুব মনে পড়ে।
বরিশাল থেকে খুলনার পথে ফেরার বেশ কষ্ট হচ্ছিল চমৎকার মানুষগুলোকে ছেড়ে আসতে, সেটা ঢাকতেই হয়ত দুজন একটি ব্যাগ ভাগাভাগি করে বহন করতে করতে তারস্বরে গান ধরতাম, নির্জন মেঠো পথে দর্শক না থাকায় গলা সাধা বন্ধের হুমকির ছিল না অন্তত! অবাক হয়ে দেখতাম সেখানের মৎস্যজীবীদের, কত বিচিত্র উপায়ে মাছ ধরেন তারা, নানা ধরনের জাল, কোনটা পেতে রাখা হয়, কোনটা নিক্ষেপ করতে হয়, কোনটা আবার বাঁশের আগায় বাঁধা!
সেই সাথে নিজেদের কাছে অঙ্গীকার করলাম- একদিন অবশ্যই জ্ঞান তাপস আরজ আলী মাতুব্বরের বাড়ি এবং গ্রন্থাগারটি দেখতে আমরা লামচরী যাব এবং যাব প্রিয় কবি জীবনানন্দের বাসগৃহ দেখতে।
খুলনার খালিশপুরে দিন দুই উজ্জলদার বাড়ীতে থেকে বি এল (ব্রজলাল) কলেজ ঘুরে শেষ আস্তানা হিসেবে যাওয়া হল আমাদের মাসীর বাড়ি- শহরের অদূরেই ফুলতলাতে। মাসী মুক্তি মজুমদার এবং কায়কোবাদ মেসো ( আমরা অবশ্য সোনা পিসে বলতাম) দুজনেই বি এল কলেজের ডাকসাইটে প্রফেসর, আমার দেখা শুদ্ধতম মানুষদের অন্যতম, তাদের বাড়ীটি ছিল সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল। আর ছিল হাজার হাজার বইয়ের সংগ্রহ, সেখানেই প্রথম পড়তে শুরু করি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি। এমন আলোকিত মানুষের সাথে দুদণ্ড থাকলেও প্রাপ্তির পরিমাণ যে কত বেশী তা আর ভাষায় প্রকাশ করার নয়।
ফুলতলার বাড়ীটি থেকে হাঁটা দূরত্বে দক্ষিণদিহি, যেখানে আছে কবিগুরু রবিঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি, মৃণালিনী দেবীর পিত্রালয়। যদিও বাড়ীটির বেশ ভগ্নদশা, তবে বাড়ীটির পাশেই বিশাল দুইতলার সমান শৌচাগার কিশোর মনে নানা কৌতূহলের উদ্রেক করেছিল বইকি, আর সবচেয়ে সুন্দর ছিল এক ঝাঁকড়া গাছকে ঘিরে সুন্দর একটা মঞ্চ- মৃণালিনী মঞ্চ! এখানেই নানা উৎসবে গানের আসর বসে এখনো। বাড়ীটি সামনে অবশ্য দুটি অকাজের আবক্ষ ভাস্কর্য ছিল, সেটি দেখে কবি গুরু, না লালন ফকির না সক্রেটিস তা বুঝবার কোন উপায় ছিল না। কিন্তু অদ্ভুত গৌরবে ও ভালবাসায় আচ্ছন্ন ছিলাম বেশ অনেক দিন এই চিন্তায়- অন্তত রবি ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাতে আমরা যেতে পেরেছি, তার পদচিহ্ন অনুসরণ করে।
যাত্রার শেষ দিনে যশোহর এসে ট্রেন ধরলাম রাজশাহী উদ্দেশ্যে। অসাধারণ এক ভ্রমণ শেষ হল আমাদের, নাকি শুরু হয়েছিল জীবন নামের ভ্রমণের?
( বন্ধু উদয়ের জন্মদিন আজ, আমরা ২জন এত বেশী অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত, যে কেউ যদি কোন দিন উদয় শঙ্কর বিশ্বাসকে নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক হয়, তাকে তারেক অণুর কথা বলতেই হবে, ঠিক তেমনি অণুর জীবনের কথা আসলে উদয় আসবেই। উদয় এখন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক, আশা করি তার জ্ঞানার্জন, লোকসংস্কৃতি ও ইতিহাসের অন্বেষণে যে পরিমাণ উৎসাহ ও প্রজ্ঞা আছে, তার কিছুটা যেন ছাত্র- ছাত্রীরা পায়।
শুভ জন্মদিন বন্ধু, ভালো থাকিস প্রতি মুহূর্ত)
মন্তব্য
পড়তে গিয়ে কান্না এসে গেল!
আবেগ পাত্তা দেয়া ঠিক না! কিন্তু কখনো কখনো পাত্তা না দেয়া বেশ কঠিন হয়ে ওঠে! বিশেষত যখন কেউ এইভাবে দেশ কৈশোর স্বপ্ন আর মানুষের কথা বলে...
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ আর্য ভাইডি, গোলপাতার কথা ভুলে গেছিলাম, তাড়াহুড়ো করে লেখা তো, অ্যাড করে দিলাম।
আবেগ ছাড়া জীবনে আর আছে কি !
facebook
এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমারও এইরকম একটা ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়েছিল...। কিন্তু পূরণ হলো না...
কোন ব্যাপার না, সামনের পরীক্ষা দিয়ে করবেন! আর পরীক্ষা দিতে না হলে, যখন ছুটি থাকবে তখন!
facebook
জীবনে প্রথম মুক্তভাবে দেশ ভ্রমন আর দেশ কে অনুভব করার বিষয়টি খুব মন ছুয়ে গেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সুবাদে উদয়ের সাথে পরিচিত হবার আর মেশবার সুযোগ হয়েছিল। গতানুগতিক ছেলে মেয়েদের থেকে ভিন্ন চিন্তাধারা আর সৃজনশীল মনের একটা ছেলে। ওর সংগ্রহের কিছু বই ও পরার সৌভাগ্য হয়েছিল। উদয় কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ! ভালো থাকুন আপনারা দুই বন্ধু ।
উদয়ের বইয়ের সংগ্রহ দারুণ, আমরা একসাথেই বই কিনতাম অনেক, এখনো সুযোগ পেলেই কেনা হয় !
facebook
আপনার বৈচিত্রময় ঐতিহাসিক জীবনের শুরুটা পড়ার অনেক ইচ্ছা ছিলো। মাঝে মাঝে এরকম লেখা পড়তে চাই যেখানে আপনার আজকের আপনি হয়ে উঠার স্তৃতিচারণ করবেন। আর আমার মত পাঠকেরা "It’s never too late" বলে ঘোরাঘুরি যেটুকু করা হয় বা করার ইচ্ছে আছে সেটুকু জিইয়ে রাখার উৎসাহ পাব।
আপনার মত বই পড়ে এবং ভ্রমণ করে দুভাবেই জ্ঞান অর্জন করার সৌভাগ্য খুব কম মানুষেরই হয়। বেঁচে থাকুন, পৃথিবী ঘুরে দেখুন আর লিখে যান আমাদের জন্য।
লেখায়
যাব্বাবা ! আমাকে ইতিহাস বানিয়ে ফেললেন, আরে বেঁচে আছি তো !
চেষ্টা করব, অনেক ঘটনা মনে পড়ে, মাঝে মাঝে লিখে ফেললে খারাপ হয় না।
facebook
'মাঝে মাঝে লিখে ফেললে খারাপ হয় না' ঠিক তা না। যা মনে পড়ে সেটা সহ বাকিটা মনে করে লিখে ফেললেই বেশি ভাল হয়।
কে জানে! আপনার মত জীবন তো আর সবার হয় না।সো, ইতিহাস গড়তে আর কি লাগে। তয় লেখায় ফাঁকি দিলে কিন্তু আমরা ছাড়বো না বলে দিলাম।
উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে পাখি দেখার উপরে লেখার খুব ইচ্ছে আছে, দেখি পরের বার এসে অনেক অনেক দিন থাকতে হবে।
facebook
কবে আসছেন? তাড়াতাড়ি চলে আসেন।
আর আপনাকে উৎসাহ দেয়া!! কি যে বলেন! আপনার লেখা সবসময় এ আমর মত পাঠকের জন্য জীবনটাকে গদবাধা ফ্রেমের মধ্য আটকে না ফেলার অনুপ্রেরণা।
এখনই বলতে পারছি না, কিন্তু অনেক দিনের জন্য আসতে চাচ্ছি, পূর্ব এশিয়াটা দেখা হয় নি। জানাব। নাহ, আপনার মন্তব্যে দেখি লজ্জার ইমো দিতেই হবে !
facebook
অব্যশই জানাবেন এবং তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন। বাড়ির কাছটা তো বেশি ভাল করে দেখা দরকার। নাহ আর লজ্জার ইমো দিয়েননা তাহলে এবার স্যতি চেয়ার থেকে পরে যাব।
facebook
facebook
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
facebook
চ্যাতো ক্যা ভাইডি?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আপনি কই গো দাদা, ডুব মারলেন যে!
facebook
আপনার বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
পৌঁছে দিলাম!
facebook
ইয়ে অণু ভাই, ঘুরে বেড়ানোর পক্ষে সবচে ভালো চাকরি কোনটি?
চাকরীর সন্ধান না করা! তবে, আমিও এমন চাকরি খুঁজছি এখন, সবাই তো আর ভবঘুরে হতে পারে না - সন্ধানে থাকলে জানিয়েন!
facebook
আত্মজীবনী লেখা শুরু করেন ম্যান
হৈ সুহান ভাই, এখনই ! মাইকেল ওয়েন তো ১৯ বছর বয়সে লিখেছিল আত্মজীবনী, যেন জীবন সেখানেই শেষ তার !
facebook
আপনার প্রথম ভ্রমনের দিনগুলির কথা পড়ে আমার জীবনের প্রথম স্বাধীনভাবে (মানে আব্বু আম্মু বা গার্জিয়ান লেভেলের কোন লোকজন ছাড়া আর কি ) ভ্রমনের স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল। ৩০ মিনিটের নোটিশে বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম মেডিকেলের প্রথম বর্ষে থাকতে। এরকম পাগলামি ইদানীং আর করতে পারছি না।
তবে আপনার জীবনের প্রথম ভ্রমনের গল্প শুনার খুব ইচ্ছে ছিল আমার, বলতেও চেয়েছি বেশ কয়েকবার। ধন্যবাদ ।
আপনার বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
সেই ভ্রমণটা শুনাবেন নাকি আমাদের !
পাগলামি ছাড়া জীবনটা মনে হয় একটু পানসে ঠেকে মাঝে মাঝেই
facebook
অণুদা, এত টুকটাক ডিটেইলস মনে রাখেন ক্যামনে???
কিছু জিনিসতো ভুলতে পারি না কখনো, আর বিশেষ তথ্যের জন্য রোজনামচার পাতা ঘেঁটে দেখতে হয়।
facebook
আমার এস এস সি র পরেও টুরে বেরিয়েছিলাম। সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দিল। অনেক ভালো হয়েছে লেখাটা।
কোথায় গেছিলেন? আরে, লিখে ফেলেন না !
facebook
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া--- ফুলতলায় আমার দাদুর বাড়ি, অথচ রবীঠাকুরের পরম ভক্ত হয়েও তাঁর শশুরবাড়ি /মৃণালিনী দেবীর বাবার বাড়িটি কখনোই চাক্ষুষ দেখা হয় নাই।
কিশোরবেলার গল্পের ঘ্রানই আলাদা!!
উদয় দাদাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
চীরকাল ভাল থাকুন দুই বন্ধু---
কি খবর আপা, বেশ অনেক দিন পর! পরের বড় দাদুবাড়ী গেলে দেখে আসবেন, খুবই কাছে, আমার মাসীর সাথেও দেখা করতে পারেন সময় থাকলে।
facebook
শুভ জন্মদিন উদয় স্যার।
স্যারকে পৌঁছে দিলাম।
facebook
অণুদা, আমি প্রথম বন্ধুদের সাথে এইচেসসির পর ২০০৬ এ যাই, এক ট্যুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-বান্দরবান সব ঘুরে আসি........অসাধারণ স্মৃতি গুলো...........স্কুলের বন্ধুদের সাথে ঘুরার থেকে মজার আর কিছু নাই.........
আপনার প্রথমদিককার ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল আজ কিছুটা মিটল........লিখে যাবেন আশা করি।
_____________________
Give Her Freedom!
আসলেই এর চেয়ে মজার আর কি আছে!
আপনার সেই কাহিনী লিখেছিলেন নাকি ছবিসহ, তাহলে লিঙ্ক দ্যান!
facebook
সেই গল্প লিখি নি যে দাদা, তবে পরের একটা লিখেছিলেম, সংক্ষিপ্ত এবং দায়সাড়া, তবু লিংক দিচ্ছি
_____________________
Give Her Freedom!
লিখেন নি বলেই তো লিখবেন !
facebook
এজন্যই কবিগুরু বলেছেন- উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই
এসেসসির পর আমরা চাইর বন্ধু মিলে যশোরের কেশবপুর গেছিলাম। সে এক তীব্র যাওয়া। ফুর্তি।
মনে পড়ে গেলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কি মনে পড়ল, জাতি জানতে ইচ্ছুক !
facebook
নিঃসন্দেহে আপনার সেরা লেখাগুলোর একটি। এইসব প্রগাঢ় বন্ধুতা বেঁচে থাকুক।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ধন্যবাদ দাদা। আপনের আফ্রিকার রূপকথা আবার কবে আসবে?
facebook
অপূর্ব সুন্দর একটা লেখা। আপনারা দুইজনই ভালো থাকেন প্রতি মুহূর্ত।
আপনিও, সবসময়।
facebook
জীবন এক অদ্ভুত কিশোরীর নাম, প্রতি পলে যার মিশে থাকে আরক্তিম বিমুগ্ধতা!
তোমার লেখা আমাকে চারুময় এক রোদের বাগানের কাছাকাছি নিয়ে যায়।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আহা, কি ভাষা! খাসা!
facebook
প্রিয় উড়ন্তঘুড়ি, আসুন একটা গানে তাল মেলাই http://www.youtube.com/watch?v=52T1jNZcfDQ
facebook
কিছু কিছু সৃষ্টিছাড়া লেখা ভরদুপুরে মন খারাপের বান ডাকে, নস্টালজিকতার সুর বোনে। এই লেখাটিও সেরকম কিছু।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নস্টালজিকতা ছাড়া আর আছে কি জীবনে !
facebook
আমার এই ধরনের প্রথম ভ্রমণ সাইকেলে। নজরুল, রুহুল নামে দুই বন্ধুকে নিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরি পার হয়ে ভাঙা, মাদারীপুর হয়ে বরিশাল, পটুয়াখালী, খেপুপাড়া, কলাপাড়া হয়ে কুয়াকাটা পৌঁছাই। সেখানে উদভ্রান্ত হাওয়ায় কিছুদিন কাটানোর পর আমতলী বরগুনা, পাথরঘাটা, পিরোজপুর এসব এলাকা ঘুরে আবার ঢাকায় ফিরে আসি। ঘোরাঘুরিসহ প্রায় এক হাজার কিলো।
আমি জীবনানন্দের বাড়ি, ধানসিঁড়ি নদী, চাখার, আরজ আলী মাতব্বরের বাড়ি দেখেছি। সেই সব অক্ষয় দিনগুলোর কথা কোথাও লেখা হয় নাই। একদিন লিখবার আশা রাখি।
আপানার লেখাগুলো তার অনুপ্রেরণা যোগায়।
সম্প্রতী উত্তর বঙ্গের ২২টি জেলা ঘুরে এলাম। আমরা যেমন দেশ ঘুরি, আপনিতো পৃথিবীটা তেমনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
দারুণ, লিখে ফেলুন এখন, চমৎকার হবে।
পৃথিবীই আমাদের সবার দেশ, একটাই দেশ।
facebook
সে কালে এসএসসির পরেই বোধহয় স্বাবালকত্বের সার্টিফিকেট পাওয়া যেত। আমিও একা বেড়াবার অনুমতি পেয়েছিলাম এসএসসি পরীক্ষার পরে। তবে সেটা ষাটের দশকে, আর ঐ যে বললেন, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। হ্যাঁ, নানী বাড়িতে গিয়েছিলাম, রেলগাড়ীতে। উত্তর বঙ্গের একটা শহর থেকে দক্ষিণ বঙ্গে। তখনতো আন্তনগর ট্রেন ছিলনা। প্রতিটা স্টেশনে ট্রেন থামে আর আমি ট্রেন থেকে নামি, ট্রেন হুইসেল দিলেই আমি তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে উঠি। সে কি উত্তেজনা!
ধন্যবাদ, অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। নিজের কৈশোর ফিরে পেলাম।
না না, কেবল মনে করে বিভোর হলে চলবে না , আমাদেরও জানাতে হবে !
facebook
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
facebook
অনুদা, আপনার এই লেখাটি পড়ে অন্যরকম ভালো লাগলো। আপনি খুলনা রিজিওন এর অনেক জায়গা ঘুরেছেন, আমিও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার সুবাদে ওই এলাকাগুলোএ ঘুরেছি। আপনার লেখাটি পড়ে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। আপনি নড়াইল যান নি এস এম সুলতান এর বাড়ি আর চিত্রা নদীর তীর ? জায়গাটি অনেক সুন্দর।
যাওয়া হয় নি, পরের বার আশা রাখি।
facebook
আজ আমার কাছে তোমাকে বলার জন্য কোন ভাষা নেই, কোন কথা নেই, টোটাল স্পিচলেস। এই লেখার রেশ মনে হয় কাটবে না সহজে।
তুমি ভালো থেকো।
ডাকঘর | ছবিঘর
রেশ থাকুক কিছুক্ষণ, কি আছে জীবনে--
facebook
সেটাই। [উদাস ইমো]
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
facebook
বাবার কাজের
বাবার কাজের সুবাদে ছোট বেলা থেকেই অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। আমাদের সময়ত মেয়েরা মেয়েরা দল বেঁধেও ঘুরে বেড়াবার চল ছিল না। প্রথমবার সিলেটে বেড়াতে গেলাম বিভাগীয় ছেলে মেয়ে আর স্যার দের সাথে। ছিলাম টিলার উপরে মুরারী চাঁদ কলেজের প্রিন্সিপাল এর বাসায়, বাসাটি তখন খালি ছিল। আমাদের স্যাররাও ছিলেন অবিবাহিত এবং অল্প বয়সী।
আমরা কয়েকটি মেয়ে মিলে সিলেট শহরে গেছি কিছু জিনিষ কিনতে, দেখি আশেপাশের লোকজন খুব অবাক হয়ে আমাদের দেখছে।পরে শুনলাম সিলেট অনেক রখহনশীল শহর মেয়েরা বাজারে বা দোকানে যায় না।
সেবার আমরা তামাবিল, জাফলং, মাধবকুণ্ড গিয়েছিলাম। তেত্রিশ বছর আগের কথা, মনে হয় সেদিন, সারা রাত ট্রেনে গান গেয়ে, মজা করে, গল্প করে , না ঘুমিয়ে যাওয়া। তখন ওইসব জায়গায় মোটেই ভিড় ছিল না।
অনুর লেখা পড়ে এত বছর পর সেই সময়টাতে, সেই ভাল লাগায় ফিরে গেলাম।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এত সুন্দর সুন্দর লেখা আর আনন্দ দেয়ার জন্য।
বলেন কি, প্রথমবার সিলেটে যেয়ে টিলাগড়ে যে বন্ধুর বাড়ীতে ছিলাম তার বাবা এক সময় এম সি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তারাও সেই বাড়ীতে থাকত অনেক আগে!
এখন একটু কষ্ট করেন, অনেক কিছুই যখন মনে পড়েছে সুন্দর করে লিখে ফেলেন, আমরাও জানি, আপনারও আরো অনেক কিছুই মনে পড়ে যাবে!
facebook
দারুণ!
আপনার এই লেখাটা অন্যরকম ভালো লাগলো, অণু।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ, অন্যরকম শুভেচ্ছা।
facebook
অণু দা,
চোখে জল আনা লেখা। আমিও আপনার মতন '৯৭ তে এস.এস.সি দিয়ে প্রথম ঘুরতে যাই। বিচিত্রার ঈদ সংখ্যার জন্য একমাস কামলার কাজ করে, সেই টাকা দিয়ে কাঞ্চনজঞ্জা দেখতে গিয়েছিলাম। মনে পরে গেল সেই সব দিন। অনেক ধন্যবাদ।
আহা, কোথায় গিয়েছিলেন, দার্জিলিং! ঝাউ বাংলো ? একটু জানান, শুনে খুব ভাল লাগছে।
facebook
১) অনেক কথা মনে পড়ে গেলো অণু, ধন্যবাদ
২) উদয়কে শুভেচ্ছা। গত ছুটিতে দেশে ফিরে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট পার হয়ার সময় বাসের জানালা দিয়ে দেখি উদয় দাঁড়িয়ে কথা বলছে কয়েকজনের সাথে। চেহারায় ওই ব্যাটা এখোনো সেই স্কুলে যেমন দেখেছিলাম তেমনি আছে। খুব ভাল লাগছিলো দেখে।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হ, এখখেবারে বাংলার ৫ !
facebook
কিছু আলো থাকে যা চোখে লেগে থাকে অন্ধকার রাতেও,
কিছু স্মৃতি থাকে যা থেকে যায় পুরোন বইয়ের হলুদ গন্ধের মত।
ফেলে আসা দিন, জীবনকে জড়িয়ে ধরার দিন আর ভালোবাসা মোড়া বন্ধুত্বকে আমাদের সামনে এত সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
কিছু আলো থাকে যা চোখে লেগে থাকে অন্ধকার রাতেও,
কিছু স্মৃতি থাকে যা থেকে যায় পুরোন বইয়ের হলুদ গন্ধের মত।
facebook
শৈশব বোধ হয় আমার মত পরাজিত মানুষদের জন্য একটা জানালা.... খুলে দিলেই টাটকা বাতাস ঢুকে.....
আবার নতুন করে হেরে যাওয়ার আগে এই জানালাটাই সীমানার বাইরের জগতে নিয়ে যায়......................................
মানুষ কখনোই পরাজিত হয় না, কিন্তু শৈশব আসলেই সবার জন্য অন্যভুবনের এক জানালা।
facebook
অসাধারণ,ভাই ! অনেক সুন্দর লিখেছেন। আহ! রাজশাহীর কথা মনে করিয়ে দিলেন! এই শহরেই আমার শৈশব-কৈশর,আমার প্রথম প্রেম! পদ্মার পাড়,সাহেব বাজারের রাস্তা, কুসুম্বা-বাঘা-পুঠিয়া,বড় কুঠি, রাস্তায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা!
দেশ ঘোরার প্ল্যান মনের মধ্যে আছে। এখন পর্যন্ত ৩৮ টা জেলায় পা দিয়েছি। এইতো এইবছরের প্রথমদিকেই রাত ৪টায় প্ল্যান করলাম যে চল খুলনা-বাগেরহাট যাই। ব্যাস, চলে গেলাম ! আপনার এই লেখা মনের অনেক গভীর থেকে স্মৃতিগুলো টেনে আনলো। অশেষ ধন্যবাদ।
নিজে একলা একলা রোমন্থন করলেই চলবে না, লিখে জানান আমাদেরও।
facebook
এক নিশ্বাসে শেষ করলাম।আপনার লেখা যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।ভালো থাকুন সবসময়,আরও সুন্দর লেখা উপহার দিন আমাদের।
অনেক ধন্যবাদ। চেষ্টা করব=
facebook
এক নিশ্বাসে শেষ করলাম।দারুন লিখেছেন।ভালো থাকবেন।
facebook
একলা বেড়ানোর মতন কপাল ছিলনা সেই সময় ।তবে মনে সপন ছিল , তাই বুঝি আজ ঘুরে বেড়াই মুকত বিহংগের মত । ইর্ষা থাকলো আর আপনার লেখনি চুম্বকের মত টানে ।
ধন্যবাদ। ঘুরে বেড়ানো জারি থাকুক।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন