এক চির তরুণ গল্প বলে যান, পুরাণ কথার দেবতাদের হার মানিয়ে চিরযৌবন যার বশ মেনেছে, কন্ঠে আছে জাদু, তার গল্পের গতিধারার সাথে সাথে দৃশ্যাবলীর পট পরিবর্তন হতে থাকে অবিরাম- লেক ভিক্টোরিয়ার টলটলে নীল বুক থেকে গোলাপী ফ্ল্যামিঙ্গোর দল উড়াল দেয় তার কথায়, রকি পর্বতে মশার ঝাঁক চেটেপুটে খায় বিশাল ভালুক, নিউজিল্যান্ডের আঁধার সৈকতে মৃদু আলোয় হাঁটতে আসে অদ্ভুত দর্শন কিউই পাখি, ব্রাজিলের বৃষ্টি অরণ্যে ক্যানোপির মাথায় শোনা যায় হাওলার বানরের গর্জন, মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে চরে বেড়ায় বিশ্বের শেষ বুনো ঘোড়ার পাল, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রীফে অতল জলে রংধনু সৃষ্টি করে প্রবাল সাগরের মাছের দল, ইন্দোনেশিয়ার গুহায় কোটি তেলাপোকার দল চলে খাদ্যের সন্ধানে, পদ্মা নদীতে ডুব দেয় শুশুক, পেঙ্গুইনের দল বরফ প্রান্তর পেরিয়ে চলতে থাকে উম্মুক্ত সাগর পানে, ফিলিপাইনের শিকারি ঈগল মুখে বানরের মৃতদেহ নিয়ে ছুটে যায়, ফিনল্যান্ডের বিশালাকার ধূসর পেঁচার ভুতুড়ে অবয়ব নেচে যায় উত্তরের বনের মাঝে, মাদাগাস্কারের লিমারেরা দল বেঁধে সান্ধ্যসঙ্গীত গায় তীক্ষধার পাথরের কিনারে বসে, জাপানী সারসের দল নেচে যায় আপন বৃত্তে, চিতাবাঘের পান্না সবুজ চোখ জ্বলজ্বল করতে থাকে আসন্ন শিকারের উত্তেজনায়, কুৎসিত শুঁয়োপোকা পরিণত হয় অপূর্ব প্রজাপতিতে, মৃত সীলের দেহ নিয়ে খেলা করে বিশাল হাঙর, ফুলে ফুলে ভরে ওঠে প্রেইরির তেপান্তর, ভেনিজুয়েলার মাউন্ট রোরায়মাতে ঝরতে থাকে বৃষ্টির অঝোর ধারা, ম্যানগ্রোভ বনে দেখা যায় বাঘের ঝিলিক—সব কিছুকেই কল্পনা মনে হয়, ক্যামেরার কারসাজী মনে হয়, আর মানুষটিকে অলীক মনে হয়।
জীবনে যে মানুষটির সাথে সবচেয়ে বেশী সময় কাটিয়েছি তার নাম ডেভিড অ্যাটেনবোরো, গত ছয় দশক ধরে এই গ্রহের সবচেয়ে পরিচিত এবং জনপ্রিয়তম মানুষ। আসলে ঠিক তার সাথে না, তার সৃষ্টির সাথে, প্রতিদিন। ডেভিডের নির্মিত বিশ্ব সেরা তথ্যচিত্রগুলো দেখা হয় সুযোগ পেলেই, বারংবার, তারা চিরসবুজ, তাদের নির্মাতার মতই, আবেদন অটুট সবসময়ই, সর্ব যুগে। আছে তার অসাধারণ বইগুলো, যা ধারণ করে আছে বিশ্বের তাবৎ জ্ঞান ভাণ্ডার, অতীব সরল ভাষায় জটিল বিষয়গুলো বর্ণিত সেখানে ঝকঝকে সব ছবির সাথে। সেই সাথে ডেভিডের সাক্ষাৎকার, যা সবসময়ের জ্ঞানের আঁকর বলেই প্রতীয়মান।
হাইস্কুলে পড়ার সময় এক বড় আপুর বইয়ের তাকে Life on Earth এবং Living Planet দেখে একটির মলাটে ক্যাটক্যাটে সবুজ রঙের গেছো ব্যাঙের চুনিলাল চোখের কৃষ্ণকালো মণিতে চোখ আঁটকে গেল ( তখনো জানতাম না সেই ছবিটি স্বয়ং ডেভিডেরই তোলা, পানামাতে বিশ্রামের সময় তার সাথে কুশল বিনিময়ের জন্যই হয়ত এসেছিল সেই ক্ষুদে বন্ধু),
আলগোছে বইটি নিয়ে পাতা উল্টানো শুরু করলাম। এ কি অপরূপ বিস্ময় প্রতি পাতাতে ছড়ানো! এক পৃষ্ঠা লেখার সাথে সাথে পাতা জুড়ে রঙ ঝলমলে সব আলোকচিত্র- পর্বত, নদী, সাগর, তৃণভূমি, বরফপ্রান্তর, প্রবালদ্বীপ, উপত্যকা, মরুভূমি, বাদা বন কি নেই সেখানে! তারাই যেন একেকটি স্বয়ং সম্পূর্ণ গল্প, আমাদের গ্রহটির, এখানের জীবনের। শুধুই মনে হল- কি সুন্দর এই পৃথিবী, কি চমৎকার এই বেঁচে থাকা। বইটির শেষে নীল শার্ট পড়া স্মিত হাসি মুখে নিয়ে দাঁড়ানো লেখকের প্রতি মুগ্ধতায় এবং কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে গেল অন্তর, আজো সেই মুগ্ধতা বর্তমান এবং তা বেড়েছে কোটি কোটি গুণ।
সেই আপুর কাছে জেনেছিলাম ভদ্রলোকের নাম ডেভিড অ্যাটেনবোরো, গান্ধী সিনেমার পরিচালক এবং জুরাসিক পার্কের সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক রিচার্ড অ্যাটেনবোরোর ছোট ভাই।
আর সেই বইগুলো ছিল ডেভিডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত তথ্যচিত্রের সারসংক্ষিপ্ত। পরের কয়েক বছরগুলোতে একে একে জোগাড় করে দেখে ফেললাম
Life on Earth , The Living Planet , The Trials of Life , Life in the Freezer , The Private Life of Plants , The Life of Birds , The Life of Mammals , Life in the Undergrowth, Life in Cold Blood , First Life যাদের একসাথে বলা হয় বিবিসির লাইফ সিরিজ, এখন বলা হয়ে থাকে ডেভিড একটিমাত্র পর্ববাদে জীবন সম্পর্কিত সমস্ত কিছুই ফ্রেমে আটকেছেন , যেটির নাম হবে Life after Death!
সেই সাথে অনন্য সব তথ্যচিত্রগুলো যেগুলোতে তিনি উপস্থিত না থাকলেও জাদুকরী কণ্ঠে ধারাভাষ্য দিয়ে আমাদের বুঝিয়েছেন, দেখিয়েছেন নীল গ্রহটার সৌন্দর্য, প্রাণের বিস্তার। Wildlife on One , BBC Wildlife Specials , The Blue Planet, Planet Earth, Nature's Great Events , Life ,Frozen Planet দেখেই চলেছি প্রতিনিয়ত মুগ্ধচিত্তে।
সেই সাথে হাতে এসেছিল ৭ খণ্ডের তথ্যচিত্র Attenborough in Paradise and Other Personal Voyages যাতে ছিল Attenborough in Paradise, A Blank on the Map, The Lost Gods of Easter Island, Bowerbirds: The Art of Seduction, The Song of the Earth ,Life on Air: David Attenborough's 50 Years in Television, The Amber Time Machine
এর মধ্যে বিবিসিতে ডেভিডের পাঁচ দশকের জীবন নিয়ে মাইকেল প্যালিনের উপস্থাপনায় অসাধারণ অনুষ্ঠানটির বর্ণনা নিয়ে লিখেছিলাম এই লেখাটি, কিন্তু ডেভিডের প্রতিটি প্রোগ্রামের প্রতিটি শট নিয়েই লেখা যায় বিশাল সব পোস্ট, যা এক করলে নিশ্চিত ভাবেই মহাভারত- ইলিয়াডকে অনায়াসে হারিয়ে দেবে আকৃতির দিক থেকে, তাই সেই চেষ্টা থেকে সামান্য সরে এসে আলোচনা করি এই মহামানবের জীবনের কিছু মুহূর্ত নিয়ে।
সং অফ দ্য আর্থ দেখে মহা অভিভূত হয়েছিলাম সংগীত নিয়ে ডেভিডের জ্ঞানের গভীরতা এবং প্রকৃতি থেকে আদি মানুষের সংগীত সৃষ্টির প্রেরণার প্রমাণ দেখে, সেই সাথে বিশেষ প্রজাতির পাখির ডানা ঝাপটানো দেখে কোন সুরকার কোন বিশেষ সুর সৃষ্টি করেছেন তার বর্ণনা শুনে। বাখ তার প্রিয় সুরকার তা অবশ্য তিনি বলেছেন নানা অনুষ্ঠানে, যার সঙ্গীতের মূর্ছনায় তিনি খুঁজে পান শান্তি, শুদ্ধতা।
অ্যাম্বার দ্য টাইম মেশিন দেখার আগ পর্যন্ত কোন ধারনাই ছিল না মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের গাছের রস জমে পরিণত হওয়া এই প্রাকৃতিক বিস্ময় নিয়ে যার মাঝে আটকা পড়া পোকা-মাকড়, ব্যাঙাচি সেই প্রাচীন জীবনের কথা বলে। জানলাম পাথরসদৃশ সেই সুদৃশ্য বস্তটির সবচেয়ে বড় বাজার বাল্টিক সাগর তীরের দেশ লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ায়, বছর কয় পরে সেখানে ভ্রমণের সময় এমন এক অ্যাম্বারের বাজারে যেয়ে মনে পড়েছে প্রিয় মানুষটির কথা।
ঠিক তেমনি পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর উপত্যকা কালীগন্ডকিতে অন্নপূর্ণা এবং ধবলগিরির আশ্রয়ে হিমালয়ের চেয়েও প্রাচীন নদীটির শীতল বাতাসের ছোঁয়ায় মনে হয়েছে এই তথ্যটিও প্রথম জেনেছিলাম ডেভিডের মাধ্যমেই।
তুয়ারেগ, সাহারায় বসবাসরত এই যাযাবর মানবগোষ্ঠীর নামই জানতাম কেবল, বিশেষ কিছু নয়। ডেভিডের ধারা বিবরণীতে এক ঘণ্টা সাহারার সেই আদিগন্ত বালুকা সমুদ্রে উটের কাফেলায় চেপে বাণিজ্য করতে গিয়েছে দূরের শহরে, সাথে পণ্য সোনা বা হীরের চেয়েও দামী তুয়ারেগদের কাছে- লবণ! এক তুয়ারেগ কিশোরের সঙ্গী হয়ে ডেভিড আমাদের পরতে পরতে দেখালেন সেই যাযাবর জীবনের আনন্দ-বেদনা, সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা।
ডেভিড অ্যাটেনবোরো কেবল একা দেখেন না, তার দেখা, অনুভূতি, স্বচ্ছ আবেগকে ছড়িয়ে দেন কোটি কোটি মানুষের মাঝে- আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বৃহত্তম প্রাণী নীল তিমি দেখে তার শিশুসুলভ উচ্ছাস ছুয়ে যায় আমাদের সবাইকে, বিশ্বের গোমড়াতম মানুষটির মুখেও এক চিলতে বিরল হাসি ফুটে উঠে পার্বত্য গোরিলাদের সাথে খুনসুটিতে মেতে ওঠা ডেভিডকে দেখে।
যখন আগ্রাসী ক্যাপকেইলি পাখির তাড়ায়, অথবা হিংসুক পুরুষ হাতি সীলের তাড়ায় ডেভিড ভূলুণ্ঠিত হন ৭ বিলিয়ন মানুষ তার সঙ্গী থাকে।
পাপুয়া নিউ গিনিতে বার্ডস অফ প্যারাডাইসের খোঁজে যেয়ে ফিসফিসিয়ে ডেভিড বলেন আকাঙ্ক্ষিত কোন কিছুকে পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরে ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে হবে, আমিও এই পাখিকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখার চেষ্টা করছি গত ৬০ বছর ধরে, আজ সফল হলাম!
মাদাগাস্কারের বিলুপ্ত হাতি পাখির ডিম নিয়েও তিনি ব্যক্তিগত উৎসাহে ছয় দশক পড়ে ফিরে যান দ্বীপটিতে, অসাধারণ এক আলেখ্য নির্মাণের পাশাপাশি ধারাবিবরণী দেন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপটি নিয়ে তিন পর্বের একটি সিরিজে।
সারা বিশ্বে যেখান পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে ব্যপক ভাবে সেখানে ৬০ বছর ধরে ডেভিড সারা গ্রহ খুঁজে নিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত সুন্দরের পরশ, ইংল্যান্ডে তার বাড়ীর বাগান থেকে শুরু করে বরফ ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত, কোন জাদুতে, কিভাবে!
এবং কেন তিনি তার সেরা অনুষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ ধবংসে মানুষের সেই সব ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ দেখান না, এই ব্যাপারে তিনি সরাসরি উত্তর দেন- অনুষ্ঠানে যদি আমি সারাক্ষণ বলে যায় প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আমাদের কিছু করতে হবে, বন কেটে উজাড় করা হচ্ছে, নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে, হিমবাহের বরফ গলে যাচ্ছে , আর তোমরা অলসেরা টেলিভিশনের সামনে বসে আছ! তোমাদের কিছু করতেই হবে। তাতে যে প্রতিক্রিয়া হবে তার চেয়ে অনেক বেশী কাজ হবে যদি প্রকৃতির সেই জাদুময় সৌন্দর্য দেখে কেউ অস্ফুট ভাবে বলে উঠে- কি সুন্দর! তাহলেই হয়ত এই সুন্দর রক্ষায় মানুষ এগিয়ে আসবে একসময়।
ধর্ম নিয়ে ডেভিডকে কথা বলতে শুনি না সচরাচর, আর সেটাই স্বাভাবিক হয়ত! যে মানুষটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশী প্রাকৃতিক বিস্ময়কর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি এসব রূপকথার ইতিহাসে আগ্রহী হতে পারেন কিন্তু বিশ্বাসী যে হবেন না তা তো জানা কথাই। টেলিভিশনের একাধিক সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেছেন ডেভিড ধর্মে কোনদিনই বিশ্বাস ছিল না তার। আর সর্বক্ষমতাশালী পরম দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নিজের জীবনের একটি ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন---আফ্রিকার এক নদী তীরে এক শিশুর চোখে এক ক্রিমি ( Warm) বেড়ে উঠতে দেখেছিলাম, এর ফলে শিশুটি নিশ্চিত অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। এখন আমাকে বল যদি সব প্রাণের সৃষ্টি এবং পালন সেই দয়ালু ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই হয় তাহলে কেন তিনি সেই ক্রিমির বেড়ে ওঠার জন্য আর কোন জায়গা বেঁছে নিলেন না, কেন এক নিষ্পাপ শিশুর চোখই তার পছন্দ হল?
মুগ্ধ দর্শক অনেক সময়ই ভুলে বসেন যে জ্ঞানপিপাসু ডেভিড আমাদের কেবল পৃথিবী গল্প এবং জীবনের কাহিনীই শোনাচ্ছে না, সে জানাচ্ছে প্রাণের আবির্ভাব এবং বিবর্তনের ফলে তার বর্তমান পরিস্থিতিতে পৌঁছানোর ইতিহাস, প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছরের ঘটনা ধারা।
বাল্যকাল থেকেই জীবাশ্ম সংগ্রহের দিকে ব্যপক ঝোঁক ছিল তার, সেই উদ্দীপনা এখনো বিরাজমান, প্রাগৈতিহাসিক জীবন নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র FIRST LIFE-এ তার প্রমাণ আরেকবার পাওয়া যায়, বিশেষ করে এই ২ পর্বের সিরিজ নির্মাণের জন্য সারা গ্রহ জুড়ে ডেভিডের ভ্রমণ নিয়ে নির্মিত Attenborough's journey তে তাকে দেখা যায় মরক্কোর জীবাশ্মের বাজারে দস্তুর মত দরাদরি করে ট্রাইবোলাইটদের জীবাশ্ম কিনতে যার কিছু তার ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য।
সহকর্মীদের চোখে ডেভিড একজন অতিমানব, সবসময়ই কর্ম ব্যস্ত এবং বইয়ের পাতায় চোখ নিবদ্ধ। তার ব্যক্তিগত পাঠাগারের সমস্ত বইই পড়ে ফেলেছেন এবং সংগ্রহ করেই চলেছেন অবিরাম ( পাপুয়া নিউ গিনি নিয়ে ছাপা বইয়ের উপর তার বিশেষ দুর্বলতা আছে), সেই সাথে দলের সবচেয়ে উৎসাহ ব্যক্তিটি তিনিই। যদি আর কিছু নাও থাকে কিন্তু সামনে একদল অপরিচিত মানুষ, ডেভিড তাদের নিয়েই মেতে উঠেন- কি তাদের নাম, কে কি করে, তাদের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত। এই জন্যই বলে ডেভিড মনে হয় বিশ্বের সবচেয়ে ENTHUSIASTIC ব্যক্তি, এবং এই উৎসাহ, এই কৌতূহলই তার চিরতরুণ, চিরসজীব থাকার রহস্য।
সেই সাথে প্রতিদিন সকালে কাজের সময় সবার আগে উঠবেন ঘুম থেকে, পরিবহণ করবেন সবচেয়ে ভারী ব্যাগটা, সুযোগ পেলেই খাবেন পছন্দের ডোনাট! কাজের ফাঁকে ফাঁকেই ভাব জমাবেন বুনো প্রাণীদের সাথে চিরচেনা বন্ধুর মত।
আছে সমমনাদের সাথে একত্রে নানা মিশন, ছবিতে তাকে রিচার্ড ডকিন্সের সাথে আলাপচারিতায় নিমগ্ন দেখা যাচ্ছে-
এবং বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ পিটার স্কটের ( মেরু অভিযাত্রী রবার্ট স্কটের ছেলে) সাথে ডেভিড।
বিখ্যাত সেই নীল শার্ট ব্যবহারের বিশেষ কোন কারণ ব্যাখ্যা তিনি করেন না, বলেন শুধু মানুষ এভাবেই আমাকে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, এখন অন্য পোশাক পরলে আবার তারা চিন্তা করে বসবে- এই পোশাক পরিবর্তনের মাধ্যমে কি ডেভিড কিছু বলতে চাইছে আমাদের! তাই যেখানেই যান, ব্যাগে কয়েকটা নীল শার্ট থাকে তার, তবে একবার কেনার ভুলে মহিলাদের শার্ট পড়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষটির পারিবারিক জীবন নিয়ে খুব একটা তথ্য পাওয়া যায় না, কেবল জানা যায় ১৯৫০ সালে তিনি তারুণ্যের প্রথম দেখায় প্রেম জেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, সবে মাত্র চাকুরী জীবনে প্রবেশ করেছেন , ৩৫০ পাউন্ড উপার্জনের টানাটানির সংসার, চেলসির এক বদ্ধ স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ীতে শুরু হয় সংসার। দম্পতির কোল আলো করে আসেন রবার্ট এবং সুসান। ১৯৯৭ সালে ৪৭ বছরের সুখময় দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটে জেনের মৃত্যুতে। যদিও অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করতেন এত ঘোরাঘুরির মাঝে ডেভিড পরিবারকে সময় দেন কি করে তাদের জন্য জানিয়ে রাখি ডেভিড তখন বছরে তিন মাস শুটিঙয়ের কাজে বাহির থাকতেন, তার মতে অনেক পাইলট বা নাবিক এর চেয়ে বেশী সময় বিদেশে থাকেন, আর জেন ধরে রেখাছিলেন সংসারের হাল, এইভাবেই চলেছিল পারিবারিক জীবন পারস্পারিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে।
মাঝে কয়েক বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময়ে বেশ উৎকর্ণ থাকতাম, ভাবতাম এবার যোগ্যতম মানুষ হিসেবে তা ডেভিডের হাতেই যাবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা আঁটকে আছে রাজনীতির প্যাঁচে, শিমন পেরেজের মত যুদ্ধবাজ নেতা আর ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দেওয়া কিন্তু বাস্তবায়নের অসফল বারাক ওবামা হয় শান্তিতে নোবেল জয়ী । একজন ডেভিড অ্যাটেনবোরোর খ্যাতির জন্য নোবেল দরকার হয় না, তাকে পুরস্কারটি প্রদান করে নোবেল কমিটি নিজেদেরই সন্মানিত করত, না হলে আজ যেমন তারা বলছে গান্ধীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার না দেওয়া ছিল নোবেল কমিটির সবচেয়ে বড় লজ্জা, তেমনই একদিন বলতে হতে পারে ডেভিড নিয়েও।
ডেভিড যে আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বেশী এলাকা এবং ঘটনা চাক্ষুষ করা মানুষ তা নয় কিন্তু, তিনি জীবিত সকল প্রাণীর মধ্যে এই কৃতিত্বের দাবীদার। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথ্যচিত্রনির্মাতা এবং লেখক ডেসমণ্ড মরিস, যিনি নিজেও ব্যপক ভ্রমণের জন্য সুপরিচিত ঠাট্টা করে বলেছিলেন- আমার বাড়ীতে পৃথিবীর এক বিশাল ম্যাপ আছে যাতে আমি আলপিন দিয়ে চিহ্নিত করি আমার যাওয়া জায়গাগুলো, আর ডেভিডের ম্যাপে গুটিকয় জায়গা চিহ্নিত করা আছে যেখানে তার পা পড়ে নি, এবং এমনতর জায়গাও কমতেই আছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু একটা জায়গায় এখনো ডেভিডের পদচিহ্ন পড়ে নি, যদিও সেখানে যাবার সাধ ছিল তার- আমাদের গ্রহের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট! তরুণকালে এই ইচ্ছে থাকলেও পরে আরো অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ায় ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণটি হয়ে উঠে নি তার।
এখন হৃদয়ের গভীরে লালিত একটি পুরনো ইচ্ছার কথা বলি- যেদিন আমি এভারেস্টের চুড়োয় পা রাখব, সাথে অবশ্যই অবশ্যই থাকবে ডেভিড অ্যাটেনবোরোর হাস্যোজ্জল ছবি। গিরিশিখরে সেই ছবি রেখে মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দী করে পাঠাব প্রিয় মানুষটাকে। নিশ্চয়ই বহাল তবিয়তে তত দিন নিজের প্রিয় গ্রহটাতে চলবে তার অবিরাম পথ চলা, জ্ঞানে অবগাহন।
কেবল তো ৮৫ হল, অন্তত শতায়ু হন আপনি ডেভিড অ্যাটেনবোরো- আপনার জন্য, আমাদের জন্য, মানবতার জন্য, বিশ্বের প্রতিটি জীবকোষের জন্য।
( ব্যবহৃত আলোকচিত্রগুলো ডেভিডের অফিসিয়াল ওয়েবপেজ সহ একাধিক সাইটে থেকে নেওয়া হয়েছে)
মন্তব্য
facebook
শুভ জন্মদিন স্যার। আপনার কল্যাণে মানুষ হযে জন্মেছি ভাবতে ভালো লাগে...
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
facebook
মাঝে মাঝেই মনে হয় পশুবহুল দুনিয়ার একমাত্র মানুষ এই ব্যাটা। শুভ জন্মদিন বস।
ঠিক।
facebook
লেখাটার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । এই লোকটা যেন অনন্তকাল বেঁচে থাকেন । শুভ জন্মদিন ।
সেটাই আশা করি--
facebook
শুভ জন্মদিন বস। লাইফ যখন রিলিজ হলো, মহা উৎসাহে এক বন্ধুর বাসায় ব্লুরেতে দেখার আয়োজন করলাম, শুরু হতেই ওমা! এ কার গলা! দেখি উইটনি হিউস্টন!!! সাথে সাথে ফেরত আনা হলো, এটনবুড়োর গলার যেই উত্তেজনা, ভালোবাসা এসব ছাড়া কি জমে?
না, একেবারেই জমে না।
facebook
আর ও অনেক অনেকদিন বেঁচে থাকুক এই চিরতরুন মানুষটা।
থাকবেন আশা রাখি, তার বড় ভাই এখনো বেশ ভালই আছেন--
facebook
এইরকম কিছু মানুষ জন্মছিলেন বলেই জীবন এতো সুন্দর। পৃথিবী এতোটা মায়াময়।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ঠিক বলেছেন রিটন ভাই। ডেভিডকে নিয়ে কোন ছড়া আছে নাকি আপনার?
facebook
মুগ্ধ হলাম, যাই Frozen Planet নামাতে দেই
facebook
শুভ জন্মদিন বুড়ো। বেশিদিন নাই আর বিলাত পারি দেয়ার। তোমার সাথে দেখা করেই ছাড়ব।
facebook
এই একটি মানুষের অর্জনের দিকে তাকালে পৃথিবীর অনেক বড় বড় অর্জনকে তুচ্ছ লাগে।
ধন্যবাদ চমত্কার এই লেখাটির জন্য।
এই সুযোগে মুস্তাফিজ ভাইকেও ধন্যবাদ চমত্কার ব্যানারটির জন্য।
দারুণ বলেছেন।
facebook
হ্যাঁ, একটা লোক বটে !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
facebook
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
facebook
এতো কষ্ট করে মন্তব্য করার পরে কই যেন হারিয়ে যায়।
কি আর করা
শুভ কামনা ও শুভ কামনা এবং শুভ কামনা।
আপনার গোপন ইচ্ছেখানা দরুন!!!!
দেখি পূরণ হয় কি না !
facebook
জন্মদিন শুভ হোক চিরতরুন এই মানুষটার!
"একজন ডেভিড অ্যাটেনবোরোর খ্যাতির জন্য নোবেল দরকার হয় না"
-সহমত
facebook
শুভ জন্মদিন ডেভিড অ্যাটেনবোরো।
ধন্যবাদ, তারেক অনু।
facebook
শুভ জন্মদিন অ্যাটেনবোরো। লিখালিখি হইছে ।
facebook
আসলেই এই মানুষগুলোর বেঁচে থাকাটা খুব বেশী দরকার।
শুভ জন্মদিন ডেভিড অ্যাটেনবোরো।
আপনাকেও ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্য। আপনিও শতায়ু হন।
হে, হে ১০০ ! পালালাম---
facebook
ডেভিড অ্যাটেনবোরো।
প্রথম নাম শুনি এই সচলায়তনে। কিছুই জানতাম না আগে থেকে। ভাবতাম মজার কোন চরিত্র। তাই একদিন হাতে অফুরন্ত সময় থাকায় দিলাম গুগল এ। তার পর সেই অফুরন্ত সময় মনে হল অতি অল্প (টরেন্ট আর ফাইল শেয়ার এর কারনে)।
আর অনু ভাই, শিমন পেরেজ অথবা বারাক ওবামাকে কতদিন লোকে মনে রাখবে? হয়ত ৫ বা ১০ বছর। হয়তবা ২০ , কিন্তু ডেভিড অ্যাটেনবোরোকে আমার মনে হয় আজ থেকে আরো ১০০ বছর পরেও লিজেন্ড হিসেবে বেছে থাকবেন ।
শুভ জন্মদিন ডেভিড অ্যাটেনবোরো।
দেশে গেলে আমার কাছে থেকে সবগুলো কপি করে নিয়েন।
facebook
অ্যাটেনবুড়ো শতায়ু হোক, জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অন্তত ১০০ !
facebook
৮৫ বছরের খোকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
facebook
আহ। বুড়ো!
কত ভালোবাসা জমলে পরে মানুষ অমানুষরেও ভালোবাসে !
ডকিন্স আর এটেনব্যুরোর ডকু ইউটিউবে সুযোগ পেলেই দেখতে বসে পড়ি। শুভ জন্মদিন প্রিয় বুড়ো। মুস্তাফিজ ভাইকেও আবার থ্যাংকস।
facebook
খুব প্রিয় ব্যক্তিত্ব এই অ্যাটেনবুড়োর জন্মদিনে দূর থেকেই শুভেচ্ছা জানাই। আর এরকম শ্রমসাধ্য একটা লেখার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
কিছুই লিখতে পারলাম না, পরে বিশাল করে একটা লেখায় হাত দিতেই হবে।
facebook
নিচের এই ভিডিও অংশটা ছাড়া এই সবুজ মানুষটার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোটা আমার কাছে অসম্পূর্ণ মনে হলো...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
facebook
হায় হায়, আমি তো ভাবতাম বাঙ্গালীদের মধ্যে তাঁর সবচে বড় ফ্যান আমি। যাহোক, আপনার সাথে এটা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতে রাজি আছি । তিন বছর হলো প্রায় এই ব্যাটা জীবনটাকে পালটে দিলো, নতুন আঙ্গিকে জীবনকে দেখতে শিখালো। লন্ডন যাবার ইচ্ছার পেছনে একমাত্র কারণ তার সাথে একবার দেখা করা। তাঁর ৮৬ তম জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে দেয়া আমার স্ট্যাটাসটাতেও এই আকুতি-ই জানিয়েছি যেন মরার আগে একবার দেখার সুযোগ হয়। বন্ধুর মাধ্যমে কিছু খোঁজ নেয়াও শুরু করেছি। তবে খবর খুব ভালো না। ভদ্রলোক দেখা-টেখা কম করেন শুনলাম। ব্যাপার না, একদম বাসায় যামুগা।
সময় কোথায় তার, তবে উনি দক্ষিণ চীনের বিশেষ এক প্রজাতির বানরের ব্যাপারে খুব উৎসাহী, যদি তাদের উপরে বা পাপুয়া নিউ গিনির উপরে বই জোগাড় করতে পারেন, ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তেও পারে!
facebook
শুভ জন্মদিন ডেভিড।
অণু লেখা দারুণ (গুড়)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কুতি গো !
facebook
নতুন মন্তব্য করুন