২০১১ সালে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হয় সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেমের রাশিয়ার দিনলিপি, নানা খবরের কাগজে বইটির ভূয়সী প্রশংসা শুনে সেটি ফিনল্যান্ডে আনাবার ব্যবস্থা করি অন্যান্য আরও কিছু বইয়ের সাথে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে। এক কথায় বলতে গেলে বইটি বেশ ভিন্ন ধরনের, তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া নিয়ে এমন ঝরঝরে স্বাদু গদ্যের বর্ণনা রীতিমত বিরল, সেইসাথে আছে আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ইত্যাদি অনেক দূরদেশের আখ্যান এবং বিশাল ভূখণ্ডটির রকমারি খাদ্য সম্ভারের জিভে জল আনা রসঘন বর্ণনা।
শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মা বইটির ভূমিকা লিখেছেন, সেখানে একাধিক উল্লেখ করেছেন সমাজতন্ত্রের প্রতি, মানুষের অধিকারের প্রতি লেখক নাজমুদ্দীন হাশেমের দৃঢ় বিশ্বাসের কথা, যে বিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই তিনি সোভিয়েত সমাজে অবস্থান করে ছিলেন দুটি বছর, লিখেছেন এই তথ্যপূর্ণ ৫টি প্রবন্ধ যার সংকলন রাশিয়ার দিনলিপি।
চমৎকার স্মৃতিকথাটির অল্প কয়েক জায়গায় আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে কিছু তথ্য উপেক্ষিত থেকে গেছে, অনেক দেশের শোষণের কাহিনী উঠে আসেনি, যেগুলো লেখার প্রয়োজনে উল্লেখ করা যেত, সেই সাথে কয়েকজন ঐতিহাসিক সোভিয়েত চরিত্র আঁকার সময় লেখক পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছেন কি না সেই ভূমিকাটিও প্রশ্নবিদ্ধ। সেই ধারণা থেকেই লেখাটি আসল-
প্রথমেই অনিন্দ্য সুন্দর নগরী সেইন্ট পিটার্সবার্গ ( তৎকালীন লেলিনগ্রাদ) ভ্রমণের আলাপচারিতায় লেখক তুলে ধরেছেন হিটলারের নাৎসি বাহিনীর লেলিনগ্রাদ আক্রমণের কথা, তার ভাষায় ১৯৪১ সালের ২২ জুন স্তালিনের গলায় শহরের মোড়ে মোড়ে লাউড স্পিকারে সবাই শুনল হিটলারের কাপুরুষোচিত অতর্কিত আক্রমণের কথা। এখানে বলতে বাধ্য হচ্ছি লেখক গোটা বইটিতে একবার উল্লেখ করেন নি যে হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং রাশান লাল ফৌজের মাঝে গোপন আঁতাতে সাক্ষরিত করেছিল পরস্পরকে আক্রমণ না করার নির্লজ্জ চুক্তি যাতে নিজ নিজ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিল মলোটভ এবং রিবেনট্রপ।
১৯৩৯ সালে তারা আক্রমণ করে বসল পোল্যান্ডকে। এখানে হিটলারের চেয়ে স্তালিনকে আমি অনেক বেশী দোষী বলে মনে করছি, কারণ হিটলার একজন ফ্যাসিবাদী, উম্মাদ, চরম নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও গণতান্ত্রিকতা জিনিসটা ছিল না তার মধ্যে কোন ভাবেই, জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে দমন-পীড়ন চালিয়েছে সবার উপরে, অন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপরে হামলা তারমত উম্মাদ করতেও পারে, কিন্তু স্তালিন কেন! সে তো মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের রাষ্ট্রসমূহের জোট সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্ণধার, সাম্যবাদের ঝাণ্ডা উড়ানো লাল বাহিনী এই কাজ করল কি করে ! ( এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের অংশগ্রহণ নিয়ে যে গুজব চলছিল সেই কথা মনে পড়ল, অনেকেই সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন এইভাবে যে আমেরিকা বেনিয়ার দেশ তারা আমাদের বিরুদ্ধে যেতেই পারে, কিন্তু যে চীন মানুষের অধিকারের কথা বলে তারা কি করে এই ন্যায্য লড়াইয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সেনা পাঠাবে)।
সেই সাথে বইয়ের একাধিক জায়গায় প্রসঙ্গক্রমে একদা সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্ণধার নিকিতা ক্রুশ্চেভের কথা এসেছে বিশেষ করে তার সমাধিপ্রাঙ্গণে লেখক বেশ সন্মান নিয়েই ক্রুশ্চেভের কথা স্মরণে এনেছেন এবং বেশ ঘৃণা ভরেই উল্লেখ করেছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান ব্রেজনেভের কথা। এই ভুলটা অধিকাংশ মানুষই করে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস লিখতে গিয়ে, সমস্ত দমন পীড়ণের জন্য স্তালিনকে দায়ী করে ক্রুশ্চেভকে বরমাল্য দেওয়া হয় সেই বিভীষিকাময় যুগের অবসান ঘটানোর জন্য। কিন্তু সবাই-ই ভুলে যান স্তালিনের পরপরই পার্টিতে ছিল ক্রুশ্চেভের অবস্থান, সে নিশ্চিত ভাবেই অজস্র অন্যায়- খুন- নির্বাসন সম্পর্কে জানত এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিত। ৩০ বছর রাষ্ট্র প্রধান ছিল স্তালিন, একা কি সব করত সে? কখনোই না, তার অনুগততে ভরে ছিল মন্ত্রণালয় এবং দেশ।
এই প্রসঙ্গে রাশিয়ার দুটি কৌতুক ব্যাপক প্রচলিত-
১) স্তালিন মারা যাবার সময় ক্রুশ্চেভের হাতে দুটি চিরকুট দিয়ে বলল- কোন সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালে একটা চিরকুট খুলে দেখ, এতে উপায় বাতলানো আছে! এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ক্রুশ্চেভ ১ম চিরকুট খুলে দেখল তাতে লেখা- রাষ্ট্রের সমস্ত দুরবস্থার জন্য তুমি আমাকে দায়ী করে যথেচ্ছ গালিগালাজ দিয়ে কথা বলা শুরু কর ! ক্রুশ্চেভ তাই শুরু করল, বেশ কিছু বছর ভালই গেল, এরপর আবার ব্যপক সমস্যা দেখা দিলে সেই শরণাপন্ন হল ২য় এবং শেষ চিরকুটটির, সেটাই লেখা- এখন তোমার সময় এসেছে এমন ২টি চিরকুট তৈরি করে বিদায় নেবার!
২) সেনাবাহিনীর সভাতে সকল দুষ্কর্মের জন্য স্তালিনকে দায়ী করে আগুনঝরা ভাষণ দিচ্ছিল ক্রুশ্চেভ, পিছনের সাড়ী থেকে কেউ বলে উঠল- আপনি তো স্তালিনের সাথে ছিলেন সবসময়, তখন কেন প্রতিবাদ করেন নি? জবাবে তেড়ে ফুঁড়ে উঠে ক্রুশ্চেভ বলল- কে করল এই প্রশ্ন?
কোন উত্তর নেই! পিনপতন নীরবতার মাঝে মুচকি হেসে ক্রুশ্চেভ বলে উঠল- এখন বুঝেছ তো কেন কিছু বলি নি !
যাক গে কৌতুক, কৌতুকই ! তবে কিনা দুষ্ট লোকে বলে থাকে কৌতুক রস নাকি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই রচনা করা হয়, যাক সে কথা, সবার কথায় কান দেবেন না।
সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের অন্যতম কারণ ছিল তাদের শীর্ষনেতারা, লেলিনের পরবর্তী কোন নেতাই আদর্শের সাথে তার উপরে অর্পিত মহান দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম ছিল না, বরং ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এবং অদ্ভুত পাবেই সবাই তাদের পূর্ববর্তী নেতাদের একতরফা দোষারোপ করে গেছে রাষ্ট্রের বেহাল অবস্থার জন্য। মিখাইল গর্বাচেভ যে সাম্যবাদে আদৌ বিশ্বাসী ছিল না তা সে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই পরিষ্কার হয়ে যায়, তাহলে কি আমরা ধরে নিব ক্ষমতা হাতে পাবার জন্য সে এতদিন অভিনয় করে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা বলে গদিতে বসার পথ পরিষ্কার রাখছিল! যে কাজটি তা আগের সব নেতাই করে গেছে। ( বর্তমানে দেশটি দখল করে রেখেছে কেজিবির সাবেক এজেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। প্রহসনের নির্বাচন, প্রতিদন্ধীদের জেলে পোরা, বিরুদ্ধচারণকারীদের গুম খুন, সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরে পুতিন ক্ষমতাশালী হবার সাথে সাথে হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন)
এখন মনোনিবেশ করা যাক সোভিয়েত বিপ্লবের সন্ধিক্ষণে, যেখানে ভ্লাদিমির লেনিন সুস্পষ্ট ভাবে বললেন- রুশ জাতিভুক্ত জনসাধারণ তথা শ্রমিক ও কৃষক অন্য কোন জাতিকে পীড়ন বা অত্যাচার করার কোনো ইচ্ছাই পোষণ করে না। রুশ দেশের সীমানার অন্তর্ভুক্ত অরুশ কোন জাতিকে জবরদস্তি করে বেঁধে রাখার কোন ইচ্ছাই রুশ জাতির নেই এবং কস্মিনকালেও করবে না। এর অর্থ হলো যে, বৃহত্তর রুশ জাতির পোল্যান্ড, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, আর্মেনিয়া কিংবা অন্য কোন জাতিকে জবরদস্তি করে বেঁধে রাখবে না। বৃহত্তর রুশ জাতির অন্য সকল জাতিকে স্বেচ্ছায় এক মৈত্রইমূলক সংযুক্ত সংঘে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
কিন্তু আদপেই কি না ঘটেছিল- লেনিনের জীবিত অবস্থাতেই লাল বাহিনী হানা দিয়েছিল ক্ষুদের দেশ এস্তোনিয়াতে, মাত্রে ১ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটি তারা দখল করে রেখেছিল ১৯৯১ পর্যন্ত, যে দীর্ঘ সময়ে তাদের মাতৃভাষায় জাতীয় সংগীত ছিল নিষিদ্ধ, শুনতে হয়েছে শুধু চাপিয়ে দেওয়া রুশ ভাষার জয়গান।
পরবর্তীতে চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, ইউক্রেইন, মলদোভা কোথায় অস্ত্রের মুখে রুশ সাম্রাজ্যবাদকে সাম্যবাদের মুখোশে ঢেকে বিস্তারের চেষ্টা করে নি রুশী বাহিনী!
যেহেতু লেনিনের সময়েই এই অরাজকতার শুরু হয়েছিল তা হলে আমরা কি ধরে নিব- যে মুখে মানুষের মুক্তি বুলি আউড়ানো সমাজতান্ত্রিক বিল্পবের ঝাণ্ডা উড়ানো এই নেতাও ছিলেন আর দশ জন রাজনীতিবিদের মতই? না হলে অন্য দেশ দখলে যায় কি করে তার সেনাবাহিনী? তার চেয়েও বড় কথা- উনি বললেন, সবাইকে স্বেচ্ছায় যোগ দিতে, পরবর্তীতে যোগ না দেওয়ায় আক্রমণ চলল! তার মানে কি – ভালোয় ভালোয় বলছি আমার সাথে থাক, আর না থাকলে মুণ্ডু উড়িয়ে দিব?
প্রতিরোধের নগরী স্তালিনগ্রাদ প্রবন্ধটির শুরুতেই লেখক বলেছেন- স্তালিনগ্রাদ। কি জাদু সেই নামে!
আসলেই কি জাদু? লেনিনের মৃত্যুর পরে ব্যপক ঘুঁটি চেলে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের নৃশংস ভাবে হত্যা করে ক্ষমতায় আসা স্তালিন তার নামে প্রাচীন এই ভলগোগ্রাদ শহরের নাম পাল্টে আত্মম্ভরিতায় নিজের নামে রাখল। পরবর্তীতে তার সাবেক বন্ধু বর্তমানের শত্রু হিটলার যখন সকল চুক্তি মূত্র বিসর্জন করে ভাসিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করে বসল তার অন্যতম নির্দেশ ছিল স্তালিনগ্রাদকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেল, ঐ শহরের নামে সাথে স্তালিনের নাম আছে, তার দর্পচূর্ণ করার জন্য এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে!
সেই সাথে রণনীতিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিপুল সংখ্যক রাশান সৈন্য এখানে মজুত থাকতে বাধ্য হয়, ফলে অন্য অনেক এলাকা হয়ত কব্জা করতে সুবিধে হবে। যদিও বাস্তবে বিপুল লোকক্ষয়ের স্বীকার হয় দুইপক্ষই এবং স্তালিনগ্রাদ কবজা করতে ব্যর্থ হয় নাৎসিরা।
এরপরে ক্ষুদে দেশ আর্মেনিয়া নিয়ে লেখক এক চমৎকার স্মৃতিচারণ করেছেন এবং আমাদের তার সাথে নিয়ে গিয়েছেন মস্কোতে, সেখানের নানা ইতিহাস বর্ণনার এক ফাঁকে আবার উল্লেখ করেছেন ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিষয়টি, দীর্ঘ ৮০০ বছর সুইডেনের রাজা এবং রাশিয়ান জারের শাসন অধিষ্ঠিত ছিল সীমান্তবর্তী এই দেশটিতে পালাক্রমে। ১৯১৭ সালে তারা ছিল জারের সাম্রাজ্যের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য বা ষ্টেট, যাদের ছিল নিজস্ব সিনেট, মুদ্রা। বলশেভিক বিল্পবের ফলে তারা জারতন্ত্রের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং লেনিন নিজেও এটি অনুমোদন করেন।
( উল্লেখ্য, লেনিন অনেকগুলো বছর ফিনল্যান্ডের নানা শহরে আত্মগোপন করেছিলেন, লেনিন ও স্তালিনের প্রথম সাক্ষাৎও হয়েছিল ফিনল্যান্ডের তামপেরে শহরে তার নিবাসে, যা বর্তমানে লেনিন জাদুঘরে রূপান্তরিত) কিন্তু অন্য শীর্ষ নেতারা কেউই এই সিদ্ধান্ত উদারতার সাথে মেতে নিতে পারে নি, ফলে সবসময়ই তাদের শোষণমূলক মনোভাব জারি ছিল শিশুরাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে, তাই কেবলমাত্র স্তালিন বাহিনীর কবল থেকে রক্ষা পাবার জন্য হিটলারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে বাধ্য হন ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ফিনিশ সরকার ( বাঙ্গালী নেতা সুভাষ বসু যেমন ইংরেজদের শত্রু হিসেবে হিটলারের সাথে জোট বাঁধতে চেয়েছিলেন)।
ফলে বিশ্বযুদ্ধের পর রাশান সেনাবাহিনী ফিনল্যান্ডের ২য় বৃহত্তম শহর ভিপুরিসহ কারেলিয়ায় অঞ্চলের বিশাল এলাকা দখল করে নেয় যা আজ পর্যন্ত রাশিয়ার দখলেই আছে। লেখক ইতিহাসের এই অংশটুকু উল্লেখ করলেই তা যুক্তিযুক্ত হত। সেই সাথে লেনিন কি আদর্শগত কারণে এই স্বাধীনতা অনুমোদন করেছিলেন নাকি কৌশলগত কারণে সেটিরও উল্লেখ পাওয়া দুষ্কর।
কেবলমাত্র স্তালিনের বিরুদ্ধাচারন করলেই ইতিহাসের দায় শোধ হয়ে যায় না, যার তিন দশকের শাসনমলে চার কোটি মানুষকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হত্যা করা হয়েছে( ধারণা করা হয় সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কিও ছিল তার ক্রোধের বলি), সেই স্তালিনের অনুগতরাই কিন্তু তার সাথে সবকাজে উৎসাহ জুগিয়েছে, তারাই পরবর্তীতে দেশ চালিয়েছে, তারাও কি এমন দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখে নি।
লেখক পশ্চিমা মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন বলশেভিক বিপ্লবকে যথাযথ কভারেজ না দেওয়ায়, কথাটি শতভাগ সত্য, যে কারণে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে যে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ২ কোটি ৬০ লক্ষ রাশিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছিল (যেখানে ব্রিটিশ সৈন্য মারা গিয়েছিল আধা মিলিয়ন, আমেরিকান সৈন্য আধা মিলিয়ন সেখানে রাশিয়ান সৈন্য ২৬ মিলিয়ন, অন্যদের চেয়ে ৫২ গুণ বেশী) ।
স্তালিনের শত নৃশংস কাহিনী প্রচার পেলেও বলা হয় না তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জ্যাকব নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে কয়েকজন বন্দী নাৎসি অফিসারের মুক্তির বিনিময়ে তারা জ্যাকবকে মুক্তি দিতে রাজী হয়, কিন্তু স্তালিন এমন প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় তারা জ্যাকবকে হত্যা করে। কবি পাবলো নেরুদা যেমন বলেছিলেন, আমরা ইতিহাসের অনেক কালো অধ্যায় জানতাম না, আমাদের চোখে স্তালিন ছিলেন সেই নেতা যিনি হিটলারকে যুদ্ধে হারিয়েছিলেন।
কিন্তু লেখক এটিও উল্লেখ করেন নাই যে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কি রকম একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা হত, বাঁক স্বাধীনতা ছিল না কারো, এবং তাদের প্রেসেও কোন সময়ই পশ্চিমা বিশ্বের ভালো কোন খবর ছাপা হয় নি, আর স্তালিনের সময়তো ছবি পর্যন্ত বিকৃত করে, অপছন্দনীয় চরিত্রদের মুছে ফেলে ( লেনিনের ভাষণ দেবার ছবিতে ট্রটস্কিকে মুছে ফেলা হয়েছিল) ছাপানো একটা রেওয়াজ ছিল ।
সেই সাথে ১৯৮৪ এবং অ্যানিমেল ফার্মে লেখক জর্জ অরওয়েলকে খানিকটা ব্যঙ্গ করেই নাজমুদ্দীন হাশেম লিখেছেন, সোভিয়েত বিদ্বেষী অরওয়েলের মতে সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থায় সবাই সমান, তবে কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে বেশী সমান। অরওয়েল কি খুব ভুল বলেছিলেন? যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সকলের সমান অধিকার থাকার কথা সে দেশটি ভেঙ্গে পড়ার পরপরই দেখা গেল সেখানে কিছু মানুষের হাতে এসে গেছে জারের ঐশ্বর্য, তারা পরিণত হয়েছে বিশ্বের সেরা ধনীতে এবং তারাই ছিল তথাকথিত কম্যুনিস্ট দলের হর্তাকর্তা ( পুতিনও তাদেরই একজন), কি করে হল এমনটি? অন্য সকল দেশে হোক, কিন্তু সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশে এটা কেন হবে?
বইটির শেষ প্রবন্ধটির নাম সোভিয়েত খাদ্যসম্ভার, নামেই বুঝতে পারছেন বিশাল দেশটির রকমারি খাবার এবং তাদের প্রস্ততপ্রণালী উল্লেখ করেছেন এখানে লেখক, ভোজনরসিকদের জন্য অধ্যায়টি অবশ্য পাঠ্য।
শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মা ভূমিকায় লিখেছেন- নির্দ্বিধায় বলা যায়, সোভিয়েত দেশ সম্পর্কে বাংলায় অদ্যাবধি প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সেটি আদর্শিক বিষয়টি সত্ত্বেও।
পরিশেষে বলি, বইটিতে উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলোর সমাগম ঘটলে হয়ত আমরা, পাঠকেরা, সেই ইতিহাসকে আরো নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে যাচাই করতে পারতাম।
( লেখাটি মুহিত হাসান দিগন্তর জন্য, সে তাড়া না দিলে দূর ভবিষ্যতেও এটি বাস্তবে রূপ নিত না)
মন্তব্য
ফেবুতে নিয়েও রাখলাম,এখন সময় নাই, এটা সময় নিয়ে পড়ব।
( আপনারে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে দেখাতে আমার আঙ্গুলই ব্যাথা হয়ে গেল)
পরে পড়ে জানিয়েন!
facebook
চমৎকার লাগল। আপনি বই পড়ুয়া হিসেবে কতটা সার্থক তাও বুঝা গেল। আমরা শুধু পড়েই যাই, বুঝি কতোটুকু ।
ধন্যবাদ। বুঝি না তো, চেষ্টা করি।
facebook
facebook
facebook
বইটা আমি পড়েছি। বলতে কি, আমি স্রেফ ভ্রমণকাহিনী হিসেবেই পড়েছি। ।
প্রশ্ন হচ্ছে ভ্রমণকাহিনী লিখলে ইতিহাসের বর্ণনার দায় এড়িয়ে যাওয়া যায় কি না। আপনার মতন মনোযোগী পাঠক থাকলে সম্ভব না মনে হয়, আমার মতো কাঠভোদাই থাকলে সম্ভব
এমনিতে বেশ ভালই লেগেছে, বিশেষ করে কিছু বর্ণনা একেবারেই আনকোরা। ইতিহাসের দায় মনে হয় কখনোই এড়ানো যায় না এবং সেটা উচিতও না।
আপনি কাঠভোদাই, মিয়া ফিলিংস লন আমার সাথে!
facebook
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই।
facebook
মিষ্টি কোঠায় !
facebook
খুব মৌলিক কিছু তথ্যের অনুপস্থিতির কথা বললেন -- রাশিয়া/স্তালিন নিয়ে লেখা বইয়ে এগুলো থাকবে না, চিন্তাই করা যায় না। আমার ধারণা ছিলো সব বইয়েই এটুকু তথ্য থাকবেই। এগুলো তো ইতিহাসের দলিল!
হুমম, তারপরও অনুপস্থিত! অনেকক্ষেত্রে বেশী ভালবেসে লিখলে একপেশে প্রকাশভঙ্গী চলেই আসে।
facebook
facebook
পড়ে দেখতে হবে।
facebook
অসাধারণ একটা পোস্ট দোস্ত!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তুই ছিলি কই এতদিন! ভাবলাম, ভূতেরা আবার গুম করে ফেলল নাকি !
facebook
বুঝলাম।
'কিনতে হবে' তালিকায় বই আরো একটা বাড়ল।
ইঁচড়েপাকা শিশু 'দিগন্ত'কে প্যাঁদানোর বদলে পোস্ট উৎসর্গ করার মানে অবশ্য বুঝিনি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এইটা পড়ে ফেলেন জলদি।
দিগন্ত শিশু! আমার তাহলে জন্মই হয় নি, ওটা একটা আদু ভাই!।
facebook
facebook
আমাকে প্যাঁদালে ওর কী হবে আপু
কার !
facebook
সবই মায়া!!
facebook
facebook
তথ্যবহুল পোস্টটি ভালো লাগলো। জানা তথ্যের সাথে কিছু অজানা তথ্যও পেলুম।
facebook
লিখা জটিল হয়ছে। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
যাহ্, আমি তো সরল করার চেষ্টা করলাম।
facebook
আমার মোটা মাথায় সবি জটিল লাগে আর কি।
facebook
আপনার গ্রন্হালোচনারও পাংখা হয়ে গেলাম।
চালিয়ে যান।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ, পাংখা হন কিন্তু ঘুরতে লাইগেন না
facebook
আমি আর ঘুরমু কখন ? আপনের ঘুরাঘুরির পোস্ট দেইখাই তো কুল পাইনা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আরে ফাকে ফাকে ঘুরবেন !
facebook
আপনার লেখা পড়ে পড়ে তো আমার জ্ঞান অনেক বেড়ে যাচ্ছে !!
অনেক ধন্যবাদ দাদা।
কি কথা, জ্ঞানার্জন এতই সহজ, নিজেই নাগাল পাচ্ছি না !
facebook
আর জ্ঞানে কাম নাই, পাছে জ্ঞান হারাই !!
facebook
facebook
#রাশিয়া যেতে মুন চায়
>ম্যাক্সিম গোর্কি মা উপন্যাসটি লিখেও রেহাই পায়নি।।।।।।
#দুর্দান্ত পোষ্ট, রাশিয়া যেতে মুন চায়না
>ভাল থাকুন সর্বক্ষণ
>টিটিকাকায় সাতার দিয়ে শরীর ফিট রাখতে চাই।
ওরে বাবা, খুব ঠাণ্ডা।
facebook
ওরে বাবা, খুব ঠাণ্ডা।
#সমস্যা নাই, মাউন্ট এটনায় চলে যাব
যান না, কত ভুট্টায় কত দানা বুঝে যাবেন !
facebook
কত ভুট্টায় কত দানা বুঝে যাবেন !
#আপনি তাইলে ভুট্রাও চেনেন?
অবশ্যই, কিন্তু বেশী বড় ভূখণ্ড !
facebook
(গুড়)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
facebook
আরেকটু হার্শ হতে পারতেন।
একটা বিষয়। আপনি সোভিয়েত সমাজতন্ত্রে বাক-স্বাধীনতা রোধের কথা বললেন। আমি সমাজতন্ত্রে বাক-স্বাধীনতা বজায় থাকার দুয়েকটা উদাহরণ দেখতে আগ্রহী (দুয়েকটা সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদাহরণ)।
আর ভুল থাকলে শুধরায়ে দিয়েন। কিন্তু সামাজতান্ত্রিক ধারণায় 'গণ-মানুষের অধিকারের' মধ্যে বাক-স্বাধীনতা হয়তো পড়ে না। ফার্মের মুরগির 'সুস্বাস্থ্য' ও 'সুশিক্ষার' জন্যে একটা 'সুষম রাষ্ট্র ব্যবস্থা' যখন 'ডিজাইন' করা হয়, তখন মুরগির বাক-স্বাধীনতা কে কেয়ার করে?
যা বলেছেন, হার্শ হতে হবে বাল্টিকের ইতিহাস নিয়ে, মানে সত্যভাষণে।
ব্যাপারটা বড়ই জটিল, যেমন কিউবাতে তারা অনেক অবস্থার ব্যপক উন্নতি করেছে কিন্তু প্রেসের স্বাধীনতা দিতে পারছে না, বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইসরায়েলের মত মহাশক্তিধর রাষ্ট্র সদা তৎপর কিউবায় যে কোন নাশকতা সাধনে, সেখানে প্রেসের না টেলিভিশনের স্বাধীনতা থেকে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করে তারা সর্বদাই।
facebook
ব্যাপারটা আসলেই জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের মুখে ঝামা মারার কিউবা হিম্মতকে কদর করি। কিন্তু জনগণের তকদির তাদের নিজেদের নির্ধারণ করতে না দিয়ে মহাজন ফিদেল কাস্ট্রো একহাতে যেভাবে 'ডিজাইন' করে শাসন করেন, তাতে সেটাকে নানা 'ব্যাপক উন্নতি' সত্ত্বেও সমর্থন করতে পারি না। কেবল আশা করি যে কিউবার মানুষ নিশ্চয়ই তা-ই চায়। কিন্তু আফসোস, সেটা জানার সত্যিকারের কোনো উপায় নেই। উত্তর কোরিয়ানরাও খেতে বসতে তাদের মৃত প্রেসিডেন্টদের জন্যে কান্নাকাটি করে।
বাক-স্বাধীনতা দূরের কথা, রাজনীতি করার অধিকারই কি কিউবায় বা কোনো সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো কালে ছিলো (সংযোজনঃ সেটাও কি যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের নাশকতার ভয়ে বন্ধ)? রাজনীতি করার অধিকার ছাড়া মানুষের অধিকারের কথা আর কী অর্থে বলা হয়? খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা আর বাসস্থানের অধিকার? মুরগিকে যখন সুষম খাবার সমবণ্টন করা হয়, তখন কি সেটাকে মুরগির অধিকার হিসেবে দেখা হয়? নাকি তাকে উৎপাদনে সক্ষম করার কারণে করা হয়? সমাজতন্ত্র মানুষকে মূলত রাষ্ট্রীয় উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবেই দেখে বেশি। অধিকারসম্পন্ন মুক্ত সত্তা হিসেবে নয়। রাজনীতি ও মতপ্রকাশের অধিকারবিহীন মানুষের খাদ্য, সুস্বাস্থ্য, 'সুশিক্ষা' ও বাসস্থান প্রাপ্তিকে বড়জোর আমি ফার্মের মুরগি সমতুল্য উন্নয়ন হিসেবে দেখতে পারি।
'সত্যিকারের জানার উপায়' ছাড়াও অনেক কিছু জানেন প্রত্যয় হয়। সেগুলার কী উপায়?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
'জানি' বলে কী দাবি করলাম? আশা-ই না বরং করলাম। আর মত দিলাম।
মানুষের রাজনীতি করার অধিকার নিয়া আপনার কী মত? (ডরাইয়েন না, আপনার উত্তররে মত হিসাবেই দেখা হবে, 'জানা' হিসাবে না।)
"জনগণের তকদির তাদের নিজেদের নির্ধারণ করতে না দিয়ে মহাজন ফিদেল কাস্ট্রো একহাতে যেভাবে 'ডিজাইন' করে শাসন করেন" --- এইট্টুক তাইলে আপনের জানা না, 'আশা'
এ এক দারুণ অরিয়েন্টালিস্ট আশা, এমনটা আশা করি না আপনের থাইকা বড় ভাই। (অরিয়েন্টাল আশা = সাদারা আইসা নিজেদের শাসকের হাতে নিগৃহিত কালাগো মুক্তি দিবো একদিন, আমেন।)
মানুষের রাজনীতি করার অধিকার আছে একশো ভাগ। কিন্তু 'রাজনীতি' রাজনীতি করার অধিকাররে প্রিসিড করে। ভাষা যেমন বাক্যরে প্রিসিড করে। বাক্য ভাষা তৈয়ার করে না। ভাষায় বাক্য তৈয়ার হয়।
এখন আপনে রাজনীতি বলতে যেইটা বুঝেন, সেইটা ভিন্ন আরো রাজনীতি থাকতে পারে। প্রথমত এইটা মাইনা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত যদি অপর-রাজনীতিরে স্থান দিতে চান, তাইলে সেইটা লেজিটিমেট হবে তখনই যখন ঐ অপর-রাজনীতি আর অপর-রাজনীতি থাকবে না, অফিসিয়াল ভাষায় রূপ নিবে। এবং ঐ অফিসায়াল ভাষার জন্ম হওয়া মানেই আরেকখানে অপর-রাজনীতির জন্ম। সুতরাং স্ব আ অপর-রাজনীতির নিরন্তর ডাইকটমি থাইকা বাইর হইতে গেলে খালি অ্যানার্কি পাইবেন। আর অ্যানার্কিতে ভাষা নাই। যেইখানে ভাষা নাই, সেইখানে 'অধিকার'রে কী নামে ডাক দিবেন?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
"জনগণের তকদির তাদের নিজেদের নির্ধারণ করতে না দিয়ে মহাজন ফিদেল কাস্ট্রো একহাতে যেভাবে 'ডিজাইন' করে শাসন করেন" ধারণা = অরিয়েন্টালিস্ট আশা = সাদারা আইসা নিজেদের শাসকের হাতে নিগৃহিত কালাগো মুক্তি দিবো একদিন, এরকম কিছু কি বলতে চাইলেন? তাইলে আপনে স্ট্রম্যান খেলতেছেন (দ্রষ্টব্যঃ যুক্তরাষ্ট্রের মুখে ঝামা মারার কিউবা হিম্মতকে কদর করি) আর আমার মুখে আপনে কথা গুঁইজা দিতেছেন। সমস্যা নাই, সেইটা হয়তো আপনের থেইকা আশা করতেও হইতে পারে।
যাক। রাজনীতি নিয়া আপনার কথাটা ভালো লাগলো। তয় আপনার সংসদের সুপ্রিমেসি মাইনা নেওয়ার কী হইলো? 'রাজনীতি' রাজনীতি করার অধিকাররে প্রিসিড করে আর অ্যানার্কিতে ভাষা নাই বইলা দিয়া রাজনীতি করার অধিকার নিয়া আলাপরে আপনি আগাইলেন বইলা তো মনে হইলো না, এর দাফন করলেন বরং। জিয়া বা এরশাদের অবৈধ শাসনরেও 'রাজনীতি রাজনীতি করার অধিকাররে প্রিসিড করে' বইলা হালাল করা চলে। কারণ, "এখন আপনে রাজনীতি বলতে যেইটা বুঝেন, সেইটা ভিন্ন আরো রাজনীতি থাকতে পারে।" কিন্তু আসলে তো চলে না। তাইলে কী দাঁড়াইলো?
এইটাই দাঁড়াইলো যে ভাষা এখানে ধারণারে প্রিসিড করতেছে। আপনিও যেহেতু ভাষায় আছেন, আমিও যেহেতু আছি, আমরা নিজেরাও ফলে স্ব- আর অপর-রাজনীতির নিরন্তর ডাইকটমির বাইরে নাই, অ্যানার্কিতে নাই। সেখানে আপনি রাজনীতির কাঠামোর বিভিন্নতারে দেখাইতে পারলেও, আপনে নিজে কিন্তু বিভিন্নতায় নাই, থাকতে পারেন না। ফলে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিয়া আপনার একটা অবস্থান আছে। যেমন আমারও আছে। এবং সেই অধিকার নিয়া আপনার অবস্থান আপনি রাজনীতির বিভিন্নতার উপস্থাপন দিয়া কি আড়াল করতে পারলেন?
তবে পুনর্বার বলতেছি। আপনার এই রিলেটিভিজম ভালো পাইলাম। তবে এই রিলেটিভিজম কিন্তু আলোচনার শেষ দাফন হবার কথা না। বরং আলোচনারে তার আরো আগাইয়া নিতে পারার কথা। কিউবার সার্বভৌমত্ব নিয়া যখন আমার প্রশ্ন না, তখন কিন্তু তার শাসন ব্যবস্থা নিয়া আলোচনায় আর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের ভাষা খুঁইজা পাওয়াটা অনর্থক। বরং এখন আমরা নিশ্চিন্তে কিউবার ব্যবস্থার পরিণতি নিয়া আলাপ করতে পারি। আর আমার কিউবা বয়ানে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিয়া আমার অবস্থান উৎসারিত হইতেছে, সেইটারে আমি অস্বীকার করতেছি না। সেইটারে আমি বাইরের প্রভাবে পরিবর্তন কইরা দেওয়ার প্রস্তাবও করতেছি না। কিন্তু এই কথাটা পরিষ্কার করতে চাইতেছি যে সমাজতন্ত্রে একটা একক ক্ষমতা গণমানুষের তকদির ডিজাইন করে। আর তারে মূলত রাষ্ট্রীয় উৎপাদনের যন্ত্র হিসাবে দেখে, যতোটা না একটা মুক্ত অধিকারসম্পন্ন মানুষ হিসাবে দেখে। আপনার নানা রকম রাজনীতির রূপরে মাইনাও তো এই আলাপ করা যায় নাকি? আপনিও যেমন বলতে পারেন যে ঞলিবারেলিজমও মানুষরে মূলত উৎপাদনের (অথবা ভোগের, অথবা দুইয়েরই) যন্ত্র হিসাবে দেখে, যতোটা না একটা মুক্ত অধিকারসম্পন্ন মানুষ হিসাবে দেখে। তেমন বললে আপনার কথাটার ভাবনাটারে নিয়া কিন্তু ভাবা যায় বইলাই মনে করবো, চাই কি আরো আগাইয়া নিবো। তার বদলে - "এখন আপনে রাজনীতি বলতে যেইটা বুঝেন, সেইটা ভিন্ন আরো রাজনীতি থাকতে পারে, এবং ঞলিবারেল রাজনীতিও মানুষের রাজনৈতিক অধিকাররে প্রিসিড করতে পারে", এইসব বইলা কিন্তু আলাপের দাফনে পেরেক ঠুইকা দিবো না। কসম!
সংযোজনঃ আলাপের শুরুটা ছিলো সমাজতন্ত্র যে গণমানুষের অধিকার চাইতেছে, সেইটার মধ্যে যে বাক-স্বাধীনতা আর রাজনীতি করার অধিকার কখনোই পড়তেছে না, সেইটা বোঝার চেষ্টা করা। আপনি "রাজনীতি রাজনীতির অধিকাররে প্রিসিড করে" বললেও আমার বোঝাটায় দ্বিমত করতেছেন না বইলাই মনে হইতেছে। এখানে আমার বলার ছিলো এই টুকুই। ব্যাপার যদি এমনই হয়, সমাজতন্ত্রীদের সেইটা মাইনা নেয়াই ভালো। সেই প্রতিপাদনে আশা করি যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের আগ্রাসন ঘটতেছে না।
'সত্যিকারের জানার উপায়' ছাড়াও অনেক কিছু জানেন প্রত্যয় হয়। সেগুলার কী উপায়?
প্রথমত আমি তো বললামই 'অন্য' যেইগুলা জানেন বইলা মনে হয়, সেইগুলা কী উপায়ে জানছেন সেইটা জানতে চাই।
এ এক দারুণ অরিয়েন্টালিস্ট আশা, এমনটা আশা করি না আপনের থাইকা বড় ভাই।
দ্বিতীয়ত, এইখানে আমার 'জানা' ব্যক্ত করি নাই। 'আশা' ব্যক্ত করছি। অর্থাৎ, আমার আশা যে এইটা (অরিয়েন্টালিসম) আপনের আশা না।
'জিয়া বা এরশাদের অবৈধ শাসনরেও 'রাজনীতি রাজনীতি করার অধিকাররে প্রিসিড করে' বইলা হালাল করা চলে। কারণ, "এখন আপনে রাজনীতি বলতে যেইটা বুঝেন, সেইটা ভিন্ন আরো রাজনীতি থাকতে পারে।" কিন্তু আসলে তো চলে না। তাইলে কী দাঁড়াইলো?'
দাঁড়াইলো এই, যে জিয়া/এরশাদ যদি সংবিধান না মানে (তারা সেইটা মানে নাই, সুতরাং ভাষায় অপর-রাজনীতি ঢুকাইছে, আমার দৃষ্টিকোণ থাইকা), তাইলে সংবিধান তাদের জন্য অপর-রাজনীতি। আমার জন্য না। এবং অপর-রাজনীতি তাদের এবং আমার কারোর জন্যই লেজিটিমেট না। কারণ আমার হিসাবে অপর হইল ঠিক সেইটাই যেইটা লেজিটিমেট না। যেই মাত্র অপর লেজিটিমেট হইল, সেইমাত্র সে আর অপর নাই।
আরেকটা ছোট্ট হাইপোথিসিস আছে। তাইলে আমার মডেল (যেইটা আমি কীয়ৎকাল আগে আপনার সাথে উৎপাদনশীল বাতাম্বরের ভিতর দিয়া বানাইলাম, আপনারে ধন্যবাদ) স্ব এবং অপরের মধ্যে ভাষিক নেগসিয়েশন এলাউ করে নাই বইলা সন্দেহ করা যায় (আমি কিন্তু শিওর না)। সুতরাং এইখানে কোনো লেনদেনের দরোজা বা ডাবলিং কইরা একলগে থাকার স্কোপ নাই। স্ব-এর ঘরে স্ব, আর অপরের জায়গায় (অর্থাৎ ঘরের বাইরে) অপর। স্ব-এর ঘর দখল করতে পারলে অপর স্ব এ পরিণত হয়। স্ব বাস্তুচ্যুত হইয়া অপরে পরিণত হয়।
সমাজতন্ত্র আপাতত ঘরের বাইরে আছে। আরো অনেক কিছুর লগে। কিন্তু সমাজতন্ত্র সম্পর্কে আমার ধারণা সীমিত এবং বিভক্ত। কিউবার কী আছে সেইটাও আমি পরিস্কার জানি না (আপনি কৈত্থাইকা জানলেন, সেইটার প্রশ্ন থাইকাই কিন্তু আমাদের বর্তমান আলোচনার সূত্রপাত) । আমি মোটামুটি সার্টেইন সংসদীয় গণতন্ত্র বিষয়ে। পুরাপুরি না।
ঘরের বাইরে যে আছে তারে ঘরে ঢুকতেই হবে। সে সমাজতন্ত্র-গণতন্ত্র বুঝে না। কারণ, বাইরে ব্যাপক ঝড়-বাদলা (জোকিং) আমি ঘরের ভিত্রে আরামে আছি, আপনের মতনই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
সেইরকম ধন্যবাদ তো আপনারও প্রাপ্য।
কিউবার ব্যাপক উন্নয়নরে ’জানা’ কি এর থেইকা বেশি সহজ?
একটা ছোট্ট বিষয়। শব্দের নিচে লাইন টাইনা কি টেক্সটের পাঠরে বাইন্ধা রাখা যায়? অনেকেই দেখি শব্দের নিচে লাইন টাইনা হরফ মোটা কইরা একটা সবকদান ভূমিকায় অবতীর্ণ হন (আপনে করতেছেন সেইটা কিন্তু বলি নাই)। সবক দান খারাপ না । তয় তার জন্যে তো শব্দই আছে। এর বাইরে হরফ মোটা করলে আর শব্দের নিচে লাইন টানলে চোখে লাগে, শব্দগুলা চেঁচামেচি করে (আমার কাছে লাগে)। এরাই বোধহয় ইংরেজিতে সবক দিতে নিলে বড় হাতে লেখে। তয় আজকে আপনার এইটা কইলাম খ্রাপ লাগে নাই। কথাটা বুঝবেন এই আশায়।
ডিভেন্সিভ আন্ডারলাইনগো ভাই, অফেন্সিভ না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারটা পুরাই ফাউল। সার্কাসের বলি হচ্ছে জনগণ।
কিউবা আমার কাছে আলাদা মনে হয়েছে কিন্তু কেন সেটা নিয়ে একাধিক লেখা দিয়েছি সচলে।
facebook
facebook
আর্থার কোয়েসলারের স্তালিন যুগ নিয়ে সেই অসাধারন উপন্যাস "ডার্কনেস এট নুন"-এর কথা মনে পড়ে গেল।
****************************************
পড়া হয় নি
facebook
বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা মডার্ন লাইব্রেরি এটাকে ২০শ শতাব্দীর সেরা ১০০ উপন্যাসের অন্যতম (৮ম) হিসেবে র্যাংক করেছে। এমন র্যাংকিং যদিও সবসময়ই বিতর্কিত হতে বাধ্য, তবে আমার মতে এক্ষেত্রে তারা বোধহয় খুব ভুল করেনি। দারুন কিন্তু অতি ছোট্ট বই, পারলে পড়ে ফেলেন। ইউ ওন্ট রিগ্রেট ইট।
****************************************
লিঙ্ক আছে?
facebook
facebook
নিরপেক্ষ বর্ণনা খুবই কঠিন......আর তা যদি হয় স্মৃতিকথা.........
আমি আমার স্বল্প জ্ঞান নিয়ে বুঝতে পারি না আমাদের মুক্তির পথটা কি? যেহেতু আমি মানুষ তাই অন্যের ডিজাইন করা জীবন আমার হতে পারে না আবার এই তথাকথিত ব্যাক্তিস্বাধীনতা কি আসলেই স্বাধীনতা...... এই স্বাধীনতা দিয়েও আমরা ডিজাইনকৃত জীবনকেই বেছে নিতে বাধ্য হই.....
আমরা সভ্যতার এই পর্যায়ে এসেও একটা মানবিক সমাজ তৈরী করতে পারিনি। জীবনকে পরিসংখ্যান বা প্রয়োজন কোনটা দিয়েই মূল্যায়ন করা সম্ভব না..... মানুষ সংবেদনশীল প্রাণী তার জন্য মানবিক সমাজ তৈরী করতে হবে।
কোনটা যে ঠিক, তার চেয়ে কোনটা কোনটা বেঠিক এইটা মনে হয় বাহির করা বেশি সহজ।
facebook
আমি যতটুকু জানি, খোদ বলশেভিকদের মাঝে অসন্তোষ ছিলো স্তালিনকে নিয়ে। এমনকি স্তালিনের উত্থান সম্পর্কেও যথেষ্ঠ ধোঁয়াশা রয়েছে। একবার কোনো একটা আর্টিকেলে দেখেছিলাম, লেনিনের সময়ে স্তালিনের থেকেও যোগ্য নেতা ছিলো যারা সরাসরি অনেক অপারেশনের সাথে জড়িত ছিলো বিদ্রোহের সময়টাতে কিন্তু এদের কেউই ক্ষমতার লড়াইয়ে স্তালিনের সমতুল্য হতে পারেনি।
আমার মনে হয় এতে আদর্শের থেকে কৌশলগত কারণই বেশি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সে সময়ে কোনভাবেই পুরোপুরি অনুকূলে ছিলো বলা যায়না। তাই কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করার জন্য লেনিনের এই সিধান্তগুলো বিবেচনায় আনা যায়।
তবে এটা ঠিক, মিডিয়া যেভাবে স্তালিনকে শুধুমাত্র একজন স্বৈরশাসক হিসেবে তুলে ধরেছে সবসময় তাতে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে তার অনেক কাজই ঢাকা পড়ে গেছে। বিশ্বযুদ্ধের সময় স্তালিনের লৌহকঠিন পরিচালনা প্রশংসার দাবি রাখে বলে মনে হয়।
মানুষ নিজস্ব স্বার্থপরতা থেকে কোনদিনই বের হয়ে আসতে পারবেনা, তাই আমাদের কোনো সমাজেই সাম্যব্যবস্থা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। কোনো সমাজে আপাতদৃষ্টিতে একটি সাম্য প্রতিষ্ঠা করা গেলেও শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে পরিচালনাকারী গোষ্ঠী ঠিকই নিজেদের মধ্যে একটি মনোপলির সৃষ্টি করে নিয়েছে। এর উত্খাতের জন্য আবারও বিপ্লবের প্রয়োজন হবে। এরকম একের পর এক বিপ্লব চলতেই থাকবে, সমাজের গঠন কখনোই স্থিতিশীল হবেনা। তাই সাম্যবাদের নামে যেসব অত্যাচার এবং দুর্নীতি করা হয়েছে, তা কখনোই "সাম্যবাদ" এই ধারণাটির ব্যার্থতা নয়। এটি মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অপরিবর্তনীয় একটি সমস্যা। রাশিয়া পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত থাকলেও আমার মনে হয় এর পরিচালনাকারীরা ঠিকই সেই মনোপলি চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতা এবং সম্পদ কুক্ষিগত রাখার জন্য, যার পরিবর্তন একমাত্র আরেকটি বিপ্লবের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু আবার যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা তার নিঃশ্চযতা কোনভাবেই দেয়া সম্ভব নয়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ধন্যবাদ, বিশ্লেষণী মন্তব্যের জন্য।
facebook
এই গ্রন্থ আলোচনার মাঝে একটি প্রশ্ন আবার জেগে উঠলো মনে,
সাম্যবাদী সমাজে যদি ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়, তাহলে এর বিপরীতে আমাদের বর্তমান যুগে প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতেও কি সঠিক ভাবে ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষিত হচ্ছে?
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যক্তির মত প্রকাশের ক্ষমতা হচ্ছে মূলস্তম্ভগুলোর একটি, কিন্তু আমার কাছে এটিকে সব সময়ই একটি অলংকার হিসেবে মনে হয়েছে এর থেকে বেশি কিছুনা। এই মত প্রকাশের স্বাধীনতার মুলো দেখিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে এমন কিছুই হচ্ছেনা বরং দলীয় ভাবে একই পদ্ধতিতে দুর্নীতি ও নির্যাতন জারি রয়েছে।
নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতে তুলে দিচ্ছে। আর এই ক্ষমতার মাধ্যমে সেই জনগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থই উদ্ধার করে চলেছে সার্বিক ভাবে, তাহলে কি এমন হচ্ছেনা যে, জনগণ গণতন্ত্রের নামে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসলে একটি "এলিট ক্লাস" বা "উচ্চ শ্রেণী" তৈরী করছে যাদের কাছেই আসল ক্ষমতা ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষিত। শুধু তাই নয়, উচ্চ-ধনী শ্রেণী নির্বাচনকে একটি বিনিয়োগ খাতে পরিনত করেছে। এই খাতে তারা নিজেদের স্বার্থ দেখেই বিনিয়োগ করছে এবং দেখতে গেলে আসল ক্ষমতা এই নির্দিষ্ট বিনোয়োগকারী শ্রেনীর কাছেই। তাহলে জনগনের সামনে যে পাপেট সরকার কাজ করছে তার পেছনেই আসলে কাজ করছে আসল ক্ষমতাধারী সরকার।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ঠিকই বলেছেন। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার কথায় ধরা যাক, কয়জন মানুষ আসলেই চেয়েছে ইরাককে আক্রমণ করতে? চেয়েছে গুটিকয় ধান্দাবাজ, শেষ পর্যন্ত তারাই টিকে থাকল!
facebook
নতুন মন্তব্য করুন