তীব্র বাজনার ঝঙ্কারের সাথে সাথে কঠোর জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এক বৃদ্ধ পিতার একঘেয়ে কর্তব্যপোদেশ প্রবেশ করে শিশু অ্যাডলফের কানে, বিরক্তি ধরে যায় তার এমন জীবনধারার প্রতি, বিশেষ করে কলম পেষা কেরানীর ভূমিকায় আপন অভিভাবককে সারাজীবন অতিবাহিত করতে দেখে, বাবার মৃত্যুও ঘটে অতিসাধারণ ভাবে।
কৈশোর পার করে তারুণ্যের দরজায় কড়া নাড়ার সাথে সাথে চিত্রশিল্পী হবার বাসনায় ভিয়েনায় পাড়ী জমায় অ্যাডলফ, এই সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত মা চিরবিদায় নিয়ে বৈমাত্রেয় এক বড়বোন ছাড়া বিশ্বসংসারে একা করে যায় তাকে। ১৯০৭ সালের ভিয়েনার চিত্রকলা অ্যাকাডেমীর শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মোটামুটি উদ্বাস্ত জীবন-যাপন করছিল অভিমানী তরুণ, এখান থেকেই নানা কারণে-অকারণে বাড়তে থাকে তার ইহুদী বিদ্বেষ।
১৯১৪ সালে জার্মানীর মিউনিখের উদ্দেশ্য রওনা দেয় সে ভাগ্যবদলের আশায়, নিয়তির ফেরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটায় নাম লেখায় জার্মানীর সেনাদলে। যুদ্ধে আসন্ন পরাজয়ের সম্মুখে দাড়িয়ে এই গ্লানির জন্য একতরফা কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ছাড়াই ইহুদীবিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়াতে থাকে সে, যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেল জার্মানীর কোন ইহুদী সৈন্যের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার তার যে ধারণা তা একান্তই বালখিল্যতা, কারণে অনেক ইহুদী সৈন্যই ছিল তার সহকর্মী। বিশ্বযুদ্ধের শেষ ভাগে ১৯১৮ আসে বেলজিয়ামে গ্যাসবোমার আঘাতে আহত হয় কর্পোরাল অ্যাডলফ, পরাজিত পক্ষের সৈন্য হিসেবে হাসপাতাল থেকে ফেরে জার্মানীতে।
এই হল ২০০৩ সালে কানাডায় নির্মিত তিন ঘন্টার টিভি সিরিজ হিটলার-দ্য রাইজ অফ দ্য ইভিলের প্রথম পর্বের ঘটনা, অ্যাডলফ হিটলারের শৈশব, তারুণ্যের দিকগুলোর সাথে সাথে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে র্জামানীর দন্ড-মুন্ডের সর্বময় কর্তা হবার কালো অধ্যায়গুলো চিত্রিত করা হয়েছে বাস্তবতার নিরিখে। স্থান, কাল, পাত্রের সাক্ষ্যে। যদিও রূপোলী ফিতেয় নিবন্ধের তাগিদে কল্পনার স্থান কোথাও কোথাও স্থান করে নিয়েছে রূঢ় বাস্তবতার মাঝে, চলচ্চিত্রের প্রয়োজনের হয়তো বোদ্ধারা এটুকু ছাড় দিয়েই যাবেন সবসময়।
এর মূল আকর্ষণ হিটলারের ভূমিকায় অভিনয়কারী বিখ্যাত স্কটিশ অভিনেতা রবার্ট কার্লাইল- একজন দক্ষ বক্তা, অভিমানী তরুণ, উম্মত্ত প্রেমিক, নিষ্ঠুর রাজনীতিবিদ, ক্ষ্যাপা নেতা, প্রতিশোধমত্ত আবেগী নৃশংস এক মানুষের একটি মাত্র চরিত্রে সবগুলিরূপ ফুটিয়ে তোলার প্রায় অসম্ভব অভিনয় তিনি সম্ভব করেছেন নিপুণ শিল্পী দক্ষতায়। সেই সাথে সেই সময়ের সাজ-পোশাক, সামরিক অস্ত্র, সাজোয়া যানবাহন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে ২য় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব জার্মানীকে।
( সতর্কীকরণ—এখানে প্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের গল্প বলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছি মাত্র, এটা কোন মুভি রিভিউ নয়, কারণ এমন চলচ্চিত্র নিয়ে রিভিউ লেখার জ্ঞান বা প্রজ্ঞা কোনটাই আমার নেই, এটি স্রেফ ধারা বিবরণী। কাজেই যাদের চলচ্চিত্রটি এখনো দেখা হয় নি, তারা আগে দেখে ফেললেই ভাল হয়, নতুবা সব ঘটনা জানলে হয়ত আগ্রহ কিছুটা কমে যাবে। এমন লেখার ব্যাপারে সকল ধরনের পরামর্শ স্বাগতম। )
জার্মানী ওয়ার্কাস পার্টিতে যোগ দেয় কর্পোরাল অ্যাডলফ হিটলার, শুরু থেকেই ইহুদীদের সমূলে উৎপাটিত করার অমানবিক উম্মাদ মতবাদ লিখিত আকারে প্রকাশ করে সে রাজনৈতিক দলটির কিছু নেতাদের কাছে, জার্মানীর পরাজিত সেনাবাহিনীর মনোকষ্টে ভুগতে থাকা অনেকেই অদ্ভূতভাবে এই অসুস্থ চিন্তাধারাতেই দেখতে থাকে নতুন দিনের স্বপ্ন, এদের একজন ব্যাভারিয়ার ক্ষমতাবান ক্ষমতাবান পুলিশ অফিসার আর্নেস্ট রহ্ম।
শুরু হয় অ্যাডলফ হিটলারের মূল আকর্ষণ, তার তুখোড় বাগ্মীতায় উপচে উঠতে থাকে হলঘর, আস্তে আস্তে ধীর কন্ঠে শুরু করা ভাষণ দিয়ে গলা চড়াতে চড়াতে একসময় সমস্ত শ্রোতাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে অ্যাডলফ, তার উগ্র জাতীয়তাবাদের কথায়, আগামী দিনের রঙিন স্বপ্নে মন নেচে ওঠে আপামর জনসাধারণের, বক্তৃতাবাজীর ফুলঝুরিতে তারা ভুলে যায় এইসমস্ত বর্ণবাদীতাপূর্ণ বক্তব্যই আসলে অসাড়, কেবল বাজার গরম করে সস্তা জনপ্রিয়তার উপলক্ষে বলা- এতে যুদ্ধ বিধ্বংস জাতির কোন উপকার হবে না।
১৯২০ সালের আগষ্টে এমন এক বক্তৃতায় ইহুদী, বিদেশী অভিবাসী, বামপন্থী সকলকেই জার্মান জাতীয়তাবাদের শত্রু হিসেবে অভিহিত কে অ্যাডলফ, কথার ফুলঝুরি ছোটানোর সময় তার আবেগ যেমন কন্ঠের সাথে ওঠা-নামা করে, তেমন ঘামের ঝর্ণা বইতে থাকে সারা শরীর জুড়ে। রহ্ম বাহিনীর প্রতক্ষ্য সহযোগিতায় বামপন্থীদের সভার মাঝে নিমর্মভাবে লাঠিপেটা করে তারা। এই সময় রঙ্গমন্চে আর্ভিভাব ঘটে সিনেমার অন্যতম চরিত্র ধনকুবের এর্নষ্ট হ্যানফ্ষ্টাঙ্গেল ও তার স্ত্রী হেলেন হ্যানফ্ষ্টাঙ্গেলের। অ্যাডলফের প্রবল ব্যাক্তিত্ব মুগ্ধ এর্নষ্ট এই তরুণ নেতার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে মোটা চাঁদাতো জুগিয়েই যান, সেই সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তার রাজনৈতিক জগতের প্রভাবশালী বন্ধুবান্ধবদের।
১৯২১ সালেই জুলাই মাসের সভায় অ্যাডলফ হিটলারকে নাৎসী বাহিনীর নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয় প্রবল উদ্দীপনা নিয়ে, প্রাচীন বুদ্ধ প্রতীক স্বস্তিকাকে সামান্য পাল্টে নিয়ে করা হয় তাদের দলের চিহ্ন, হিটলারও তার সাদামাটা চেহারায় পরিবর্তন আনার জন্য নাকের নিচে একচিলতে গোফ রাখা শুরু করে( যা সারা বিশ্বে হিটলারী গোফ হিসেবে ব্যপক পরিচিতি পায়, কিন্তু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন সবসময়ই বলে এসেছেন হিটলার তার গোফের আইডিয়া চুরি করেছে! ) ।
ঘটনা প্রবাহের এই পর্যায়ে ঘটে যায় অকস্মাৎ বিপর্যয়, ক্ষমতার লোভে অন্ধ হিটলার ব্যাভারিয়া রাজ্যে বাহুবলে অস্ত্রের মুখে দখল করতে যায় ক্ষমতা, ঘটনাচক্রে সেনাবাহিনীর হাতে এই হঠকারিতার জন্য বন্ধী হয়ে কারাবরণ করতে হয় জার্মানীর আগামী দিনের নেতাকে, জেলে থাকাকালীন সময়েই ঝুড়ি ঝুড়ি মনগড়া তথ্য আর ইহুদী বিদ্বেষী মতবাদ দিয়ে রচিত করে তার কুখ্যাত ম্যাইন ক্যাম্ফ (আমার সংগ্রাম) গ্রন্থ।
নানা শর্তে জেল থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে রাজনৈতিক দুরভসন্ধি চরিতার্থে আশায় শহর ছেড়ে পার্বত্য এলাকার এক বাড়ীতে আস্তানা গাড়ে হিটলার, সেখানে তার পরিচারিকা হিসেবে আসে তার সৎ বোন ও বোনের কিশোরী মেয়ে গেলি, সৎ ভাগ্নী গেলির প্রেমে পড়ে যায় পাগলাটে প্রেমিক মামা, ইতিহাস বলে মামার এই দুঃসহ প্রেম ও শাসনের কারাগার থেকে পালাবার জন্য আত্মহত্যাকেই শ্রেয় মনে করে রূপবতী গেলি।
অবশেষে যে কারণে এই স্বেচ্ছা নির্বাসন সেই আকাঙ্খিত জার্মান নাগরিকত্ব মিলে তার ১৯৩২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারীতে, নাৎসী বাহিনীর সকল সদস্যের সামনে তার অন্যতম সুহৃদ গোয়েবলস এই পরম প্রয়োজনীয় সনদটি। সাথে সাথে র্জামানীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ব্যক্তি চ্যান্সেলর হবার দৌড়ে পূর্ণোদ্যমে সামিল হয়ে যায় উচ্চাভিলাষী ক্ষ্যাপাটে রাজনীতিবিদ, যদিও সিনেমাটির এই পর্যায়ে তাকে চিত্রিত করা হয়েছে এক পরম প্রেমিকের ভূমিকায়, তার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রেমিকা এভা ব্রাউনের সাথে রোমান্টিক ভূমিকায়( উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে এভার সঙ্গে আত্নহত্যার পূর্ব মুহুর্তে বিবাহের গাটছড়া বাধে হিটলার), যদিও জার্মান জনগনের কাছে হিটলারের নিষ্কাম চিরকুমারচরিত চরিত্রই সবসময় তুলে ধরত তার নিয়ন্ত্রনাধীন মিডিয়া।
শতকরা তিরিশ ভাগ ভোট নিয়ে অ্যাস্মেবলীতে আসা হিটলারের নাৎসী বাহিনী দাপটে জার্মানীর রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল হিন্ডেনবার্গ ( এই ভূমিকায় মনকাড়া দৃঢ় অভিনয় করে আরেকবার নিজের জাত চেনালেন বিশ্বখ্যাত অভিনেতা পিটার ওটুল) হিটলারকে ভাইস- চ্যান্সেলরের পদ প্রদান করতে বাধ্য হয়, কিন্তু এই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে কায়দা করে নতুন নির্বাচন করে ১৯৩২ সালের ৩১ জুলাই ২৩০ আসন নিয়ে সর্বগরিষ্ঠ দল হিসেবে জার্মানীর সংসদ ভবন রাইখষ্টাগে আসে নাৎসীরা। জার্মানীর চ্যান্সেলরের আসনে অধিষ্ঠিত হয় অ্যাডলফ হিটলার।
এরপরে রাজনৈতিক শত্রুদলে ঘায়েল করার জন্য হিটলারের দোসররা ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে আগুন লাগিয়ে দেয় রাইখষ্টাগে! সদর্পে ঘোষণা করে হিটলার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এখন থেকে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, বিরুদ্ধমত প্রকাশকারী সাংবাদিক, মুক্তকামী, বামপন্থী সবাইকেই অস্ত্রের জোরে চিরনীরব করে দেয় নাৎসীরা, অনেককেই পাঠানো হয় জল্লাদখানা কনসেনট্রেসন ক্যাম্পে।
হিটলারের এমন উচ্চাভিলাষী পাগলামিপূর্ণ কর্মকান্ডে বাধা হয়ে দাড়ানোয় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সাবেক বন্ধু এর্নষ্ট রহ্ম, আরেক সহযোগী এর্নষ্ট হ্যানফ্ষ্টাঙ্গেল হিটলারের প্রকৃতরূপ আচ করতে পেরে পালিয়ে যান ইংল্যান্ডে, সেখান থেকে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় আমেরিকা যেয়ে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
চলচ্চিত্রের শেষ ভাষণে গর্বোমত্ত হিটলার ঘোষণা দেয় তার তৈরী এই নাৎসী স্রামাজ্যের রাজত্ব কাল হবে কমপক্ষে হাজার বছর, এর পরপরই আবহ সঙ্গীতের সাথে সাথে হিটলারের শাসনামলে তার সৃষ্ট যুদ্ধে কত কোটি মানুষের প্রানক্ষয় হয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ভেসে ওঠতে থাকে, কিন্তু সেই কালো অধ্যায়ের কথা তোলা থাক আরেক সময়ের জন্য।
মন্তব্য
অভিমানী বললে খানিকটা ছাড় দেয়া হয়ে যায়! খানিকটা সমবেদনা জাগে। কিন্তু সৃষ্টির নৃশংসতম এই প্রাণিটি কোনরকম ছাড় পাবার যোগ্য নয়! তার অভিমান এবং প্রেম দুইটাই অসুস্থতা ছিল!
মেয়েটা একটা বাচ্চা মেয়ে ছিল। আর তার মামার কোন প্রেম ছিল না। নোংরা অসুস্থতা ছিল! মেয়েটা আত্মহত্যা করে বেঁচে যায় শেষ পর্যন্ত!
এই মহিলাটিও হিটলারের সমান ঘৃণা পাওয়ার যোগ্য!
আসলে সারা পৃথিবীর মানুষ এই প্রাণিটিকে অনন্তকাল ঘৃণা করেও পুষিয়ে উঠতে পারবে না!
লেখাটা একটু ছোট লাগল! হিটলারকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে অবশ্য পরিসর ছোট রাখা শক্ত। ভালো লেগেছে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ। এটা কেবলমাত্র শুরুর দিকের ঘটনা, ক্ষমতা হাতে পাওয়া পর্যন্ত।
পরের দিক নিয়ে লিখা শুরু করব।
facebook
আপনের কাহিনীতে তো হিটলু আছিল, এরশাদেরটাই !
facebook
এডলফ হিটলারের আত্মজীবনীর সাথে মুভি চিত্রনাট্যের সামঞ্জস্য আছে বেশ খানিকটা, দেখা যাচ্ছে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক।
লেখনী, বরাবরের মতোই দুর্দান্ত।
ধন্যবাদ। বাস্তবভিত্তিক বলে এমনটাই হবার কথা।
facebook
কেউ যখন তাঁর জ্ঞান খারাপ দিকে প্রবাহিত করে তা কতটা ভয়ংকর হতে পারে এর সাক্ষ্য বহন করে সময় প্রকাশ করে ইতিহাস ।
কড়িকাঠুরে
জ্ঞান না কুচিন্তা, কি যে বলব?
সব সত্য এখনো প্রকাশ হয় নি, হবে নিশ্চয়ই।
facebook
জ্ঞান বলেন- বিজ্ঞান বলেন- অজ্ঞান বলেন আর কুজ্ঞান বলেন-
ও ব্যাটা একটা পিস আছিল- কেউ যারে টুকরা করতে পারে নাই
হবে নিশ্চয়ই
কড়িকাঠুরে
টুকরাই তো হইল শেষ পর্যন্ত!
facebook
হ- টুকরাই হইল, ইতিহাস রে সাথে নিয়া ।
সত্যতো এখনো অনেক অজানা ।
কড়িকাঠুরে
জানা যাবে, ভোর সবসময়ই হয়।
facebook
দারুন লিখেছেন। আমার মনে হয় হিটু ব্যাটা নির্ঘাৎ "সিন্ড্রোম ই"- ভুগতো (টার্মটা নতুন শিখসি )।
আমি তো জানতাম স্বস্তিকা মূলত (অরিজিনালি) হিন্দু/বৈদিক প্রতীক- যার প্রাচীণতম নিদর্শন সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া যায়। শব্দটাও সংস্কৃত। (উইকি লিংক)। হিন্দু প্রতীক হিসেবেই বিখ্যাত বলেই তো জানতাম আমি - যদিও পরে বৌদ্ধরাও এটা এডপ্ট করেছে।
একটা মজার ঘটনা শুনেছিলাম কোথাও - কোন এক ভারতীয় দূতাবাসের রিসেপশনে নাকি স্বস্তিকার এক বিশাল প্রতীক দেখে কোন এক পাশ্চাত্য কূটনীতিক নাকি এটাকে জর্ম্মন 'সোয়াস্টিকা'-র অনুকরন মনে করে নাৎসিবাদ ও এন্টিসেমিটিজম সমর্থনের অভিযোগ করেছিলেন এবং এ নিয়ে বেশ তোলপাড়ও হয়েছিল। তখন ভারতীয় দূতাবাস থেকে স্বস্তিকার আসল উৎস, সহস্র বছরের প্রাচিনত্ব, এর মহিমা ও নাৎসিবাদের সাথে সম্পর্কহীণতা এবং জর্ম্মন 'সোয়াস্টিকা'-র বালখিল্য অর্বাচীন আধুনিক নকলিপনা সম্পর্কে তাদের সবক দেয়া হয়। ঘটনাটা ঠিক হুবহু মনে নেই, তবে এরকমই কিছু ছিল।
যাই হোক, উইলিয়াম শিরারের দুই খণ্ডের "The Rise and Fall of the Third Reich" পড়েছেন নাকি? ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের উপর আমার পড়া সবচেয়ে গতিময়, চমকপ্রদ আর সুপাঠ্য বই এটা। লম্বা ডকুও হয়েছে, তবে সেটা দেখিনি।
****************************************
হুম, লেখার সময় বৈদিক প্রতীক উল্লেখ করা হয় নি।
পড়েছি ছাড়া ছাড়া ভাবে, দারুণ।
facebook
সহমত, স্বস্তিকা হলো আর্য্যদের "শক্তি"র প্রতীক। নর্ডিক জনগোষ্ঠি আর শ্বেতকায় গথ (জার্মান) রাই যে প্রকৃত "আর্য্য" দের পূর্বপুরুষ আর "আর্য্যরাই শুধুমাত্র পৃথিবী নিয়ন্ত্রনের আধিকার রাখে" এধরণের দর্শন থেকে নাৎসি বাহিনীর জাতীয়তাবাদের উদ্ভব। সে জন্য এই লোগো হিটলারের বহুত পছন্দের ছিল।
শুধু তাই না, কোলকাতার কুখ্যাত নাৎসি এপোলোজেটিক সাবিত্রী দেবী আর তাঁর স্বামী অশিত কৃষ্ণ মূখার্জী মিলে নাৎসিদের দর্শন কে বাংগালী সমাজে জনপ্রিয় করার জন্য বহুত মেহনত করেন এবং এতে বেশ সফলতাও পান (যার কিছু উচ্ছিষ্ট আজও আমাদের অনেকের ভিতর পাওয়া যায়)। এঁদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নেতাজী সুভাষ বোসের মদদ ছিল বলেও গুজব আছে।
সাবিত্রী দেবির লেখা নিচের লিঙ্কে পাবেন কিছু, বেশির ভাগই লেখা গুলো "মুসলিম দের হাতে কিভাবে ভারতের আর্য্য ঐতিহ্য নষ্ট হইল" বা "মুহম্মদ কিভাবে আর্য্য ঐতিয্য আরবের মাটি থেকে মুছায় দিছে" টাইপের, পড়ে বড়ই মজাক পাইবেন আশা করি --
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Savitri_Devi
২. http://en.wikipedia.org/wiki/Asit_Krishna_Mukherji
উইকির লিঙ্ক দিলাম, ওখান থেকে শুরু করতে পারেন। গুগল সার্চ মারেন, আরও পাবেন।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
facebook
facebook
ডেয়ার উন্টারগাঙ্গং (পতন) হিটলারের ভূমিকায় " ব্রুনু গান্স"-এর অভিনয় অসম্ভব রকমের অথেন্টিক। হিটলারে খোমার সাথে এতো নিখুঁত ভাবে শরীর চেহারা মিলিয়েছে, ভাবাই যায় না। আর মানুষীক ভারসাম্যহীনতা এতো দুর্দান্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কী আর বলব! এর এর চেয়ে ভাল করে হিটলারকে আর কোন অভিনেতা এখনো তুলে ধরতে পারেনি। ভিডিওটার লিংকটা দিয়েছিলাম অন্য একটা পিসি থেকে। সেটাতে বাংলা নেই। তাই মন্তব্য লিখতে পারি নি। উত্থানের নামভূমিকায় অভিনয়কারীও ভীষণ ভাল অভীনয় করেছেন। শুধু শারীরিক কাঠামোটা হিটলারের মতো না বেচারার।
হিটলারের জীবনি লেখক কিন্তু ইতিহাস বিক্রিতির দায়ে উত্থান ছবি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেছেন।
রাইখস্টাগ বর্তমান জার্মান পার্লামেন্ট। সংক্ষেপের ভেতরে এই ছোট-খাট ডিটেল্সগুলো আসতে পারতো।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ধন্যবাদ। রাইখস্টাগের ভিতরে গিয়েছিলাম আগে, ভাল বলেছেন, এই নিয়ে লিখতে হবে।
facebook
অনু ভাই ফাটাফাটি তবে ওর নৃশংসতা নিয়ে আরও লিখুন। তবে এই মানুষটার হায়াত আসলে অনেক বেশি ছিল তাই ৪২ বার চেষ্টা করেও তাকে মারা যায় নি।
ফোরটি টু ওয়েজ টু কিল হিটলার ।
ডকুমেন্টারিটা দেখেছেন নিশ্চয়।
ধন্যবাদ, লিখব। দেখা হয় নি এখনো।
facebook
এর মূল আকর্ষণ হিটলারের ভূমিকায় অভিনয়কারী বিখ্যাত স্কটিশ অভিনেতা রবার্ট কার্লাইল- একজন দক্ষ বক্তা, অভিমানী তরুণ, উম্মত্ত প্রেমিক, নিষ্ঠুর রাজনীতিবিদ, ক্ষ্যাপা নেতা, প্রতিশোধমত্ত আবেগী নৃশংস এক মানুষের একটি মাত্র চরিত্রে সবগুলিরূপ ফুটিয়ে তোলার প্রায় অসম্ভব অভিনয় তিনি সম্ভব করেছেন নিপুণ শিল্পী দক্ষতায়।
>একজন শিল্পী যখন একসাথে নিজের মধ্যে এসকল গুনের সমাবেশ ঘটান, ধরে নিতেই হবে অনেক কুশলী তিনি, আপনার উপস্থাপনার কৌশল নিয় বলার কিছু নেই, অসাধারন, ভাল থাকুন।
নিঃসন্দেহে কুশলী অভিনেতা।
facebook
মেইন ক্যাম্ফ কি আসলেই নাকি পুরোটাই মন গড়া মিথ্যা দিয়ে সাজানো ? এটা জানতাম না ভাইয়া , বইটাও পড়া হয়নি , নেক্সট টাইম যেখানে পাই কিনে নিতে হবে ।
অনেক কিছুই জানলাম। সিরিজ টার টরেন্ট আছে কিনা দেখতে হবে ।
পড়লেই বুঝবেন!
facebook
বরাবরের মতই চমৎকার বর্ণনা অণু দা।
হিটলারের কথা উঠলেই আমার মার্টিন নায়মোলারের কথা মনে পড়ে। জার্মান চিন্তাবিদ মার্টিন নায়মোলার প্রথম মহাযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ইউ বোট (সাবমেরিন) ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নাৎসি ডিক্টেটরশিপের কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। সে জন্য ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু আদালত তাকে হাল্কা সাজা দিয়ে ছেড়ে দিলে ক্রুদ্ধ হিটলার ব্যক্তিগতভাবে তাকে বন্দিশিবিরে আটক রাখার নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তিনি সে শিবিরে আটক ছিলেন, প্রায় নিঃসঙ্গভাবে। সে সময় জার্মান বুদ্ধিজীবীদের নিস্ক্রিয়তা ও সাহসের অভাব কিভাবে নিজেদের ও বিশ্বের সর্বনাশ করেছে, সেটা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় লিখেছেন মার্টিন নায়মোলার :
প্রথমে ওরা এসেছিল কমিউনিস্টদের ধরতে, আর আমি প্রতিবাদ করিনি; কারণ আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না;
তারপর তারা সোশ্যালিস্টদের ধরতে এসেছিল, আমি প্রতিবাদ করিনি; কারণ আমি সোশ্যালিস্ট ছিলাম না;
তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়নপন্থীদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি¬; কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নপন্থী ছিলাম না;
তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে, তখনো আমি প্রতিবাদ করিনি¬; কেননা আমি ইহুদি ছিলাম না;
তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো; তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করতে কেউ অবশিষ্ট ছিল না।’
জার্মানির বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেননি, তারা নিস্ক্রিয় ছিলেন। তার পরিণতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে, পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গেছে। মার্টিন নায়মোলারের অনুশোচনার কথাগুলো সে জন্যই যে কোন হিটলার ঠেকানোর জন্য গভীর অর্থবহ।
অসাধারণ তার সেই বক্তব্য
facebook
facebook
দেখতে হবে মুভিটা।
টিভি সিরিজ কিন্তু, ২ পর্বের ।
facebook
হিটলারের মতো লেখা হইছে!! একদম জটিল-কুটিল
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
মানে!
facebook
না মানে মোচ দিয়ে যায় চেনা হিটলার
লেখা দিয়ে যায় চেনা অনুদার ।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
তার মোচ তো নকল! মানে অন্যের অনুকরণে
facebook
তাতে কি? কাউকে কখনো এরকম মোচ রাখতে দেখলে কেউ কি চার্লি এর মোচ বলেছে? বা আর কারো নাম? সবাই কিন্তু বলে "হিটলার (টাইপ) মোচ ".
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
হ, এমন নজির আরো আছে মানে নকলবাজের নাম বেশী!
facebook
ডাকঘর | ছবিঘর
facebook
তবে এই সিরিজটার হিটলার চরিত্রটাকে অতটা ক্রুর মনে হচ্ছে না (ছবিটা দেখে)।
'ডাউনফল' মুভিটার কথা মনে পড়লো। ওটা মোটামুটি হিটলারের কাছাকাছি ছিল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ডাউনফল আসলেই বেশ ভালো!
দেখব, ধন্যবাদ। এইটা হয়ত ক্ষমতা পাবার আগ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে বলেই--
facebook
facebook
বাংলাদেশে হিটলারের অনেক ভক্ত। ইতিহাসের নিকৃষ্টতম এই জীবের ছবিও দেখি অনেকের প্রফাইল পিকচারে। মানুষ বড়ই অবুঝ প্রাণী!
না জেনে ভক্ত, যেমন জোকার নায়েক হইয়ে গেছে নবী!
facebook
দেশে আসেন, আপনাকে সামনাসামনি একটু দেখি!
পিলান করছি, জানাব।
facebook
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
facebook
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
facebook
দেখতে হবে, রিভিউ ভালু হইছে অণুদা।
facebook
এরকম ছবির সমস্য়া হল এগুলোতে কেন্দ্রীয় চরিত্রকে এককভাবে কৃতিত্ব দেয়া হয়। এর ফলে যেটা হয়, হিটলার নামক মানবতার শ্রেষ্ঠ আবর্জনার নিচে ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ দশকগুলোতে জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, ও রাশিয়ার জাতীয়্তাবাদি জোশ আর সেইসাথে হিহুদি/জিপ্সি বিদ্বএশের গল্প চাপা পড়ে থাকে।
১৯৩৮ এর গ্রীষ্মকালে জার্মানি ঘোষনা করে, অন্য় যেকোন দেশ চাইলে তাদের দেশের ইহুদিদের আশ্রয় দিতে পারে। মিত্রবাহিনীর প্রতিটি দেশের জনগনের মাঝে না হোক অন্তত মন্ত্রীসভা, বিশ্ববিদ্য়ালয়সহ সুশীলসমাজের কাছে ইহুদিদের জন্য় জার্মানি কিরকম নারকে পরিনত হয়েছে, সেটা অজানা নয়। তথাপি, মিত্রবাহিনীর কোন কোন দেশ ইহুদিদের আশ্রয় দিতে এগিয়ে এল?
পোল্য়ান্ড আর রাশিয়ার কথা এখন থাক। অন্য়দের কথা বলি।
এই ঘোষনা আসার সাথে সাথেই ব্রিটেন তার ইমিগ্রেশন আইন সংশোধন করে অন্য়ান্য় রেফুজিদের থেকে ইহুদিদের আলাদা করে তার ওপরে একটি কোটা আরোপ করে। শুধু তাই নয় ১৯৩৯ সাল থেকে ব্রিটেন তার প্রতিশ্রুত প্য়ালেস্টাইনেও ইহুদিদের ঢুকতে দিতে বাধা দেয়।
আমেরিকায় ওয়াগনার-রজারস আইন করেও মাত্র ২০ হাজার রেফুজি শিশুকে সেদেশে ঢুকতে দিতে পারেনি। সেন্ট লুইস নামক জাহাজ ৯৩৬ জন ইহুদিকে নিয়ে আমেরিকায় ঢুকতে না পেরে ইউরোপে ফিরে আসে।
হাংগেরি ও চেকোস্লোভাকিয়া তাদের সীমানায় ইহুদিদের গতিরোধে অতিরিক্ত পাহারা বসায়।
অস্ট্রেলিয়া সেদেশে ইহুদিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে জাতিগত মিশ্রনের ভারসাম্য়তা হানি (disturb the racial balance) এর অজুহাতে।
কানাডার ফ্রেড্রিক ব্লেয়ার বললেন এটা জারমানির নিজস্ব সমস্য়া, এখানে কানাডার কিছু করার নেই।
আরজেন্টিনা আর ব্রাজিল রেফুজিদের কিছুদিন ঢুকতে দেয়, একটি সহজ শর্তে - তাদেরকে আগে ব্য়াপ্টাইজ্ড হতে হবে। খুব সম্ভত প্রচুর পরিমানে নাতসিদের আশ্রয় দিতে গিয়ে তাদের জায়গা ফুরিয়ে এসেছিল বলে কিছুদিন পরে তারা সেটাও বাতিল করে দেয়।
হুমম, পরাজিতের কাঁধেই কই সব দোষ চাপানো হয় সবসময়ই !
facebook
History never written by the heroes but its victors!
ইতিহাস মনে রাখে বিজয়ীদের নাম আর বীরেরা ঝরে যায় সবার অলক্ষ্যে। কিন্তু আফসোস্ বাংলাদেশে আমরা দুপক্ষকেই হারিয়ে ফেলতে বসেছি।
ফয়সাল ইজা
নতুন মন্তব্য করুন