প্রিয় বিদ্রোহী কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান একটি কবিতা লিখেছিলেন, আব্রাহাম লিঙ্কনের মৃত্যুর পর তাকে উদ্দেশ্য করে, যার শিরোনাম ছিল ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন (কবিতাটি লেখার শেষে যোগ করে দিলাম) এই শব্দগুলি আমার কানে আসলেই সবার আগে দুইটি মুখ মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, যাদের আমার জীবনের কাপ্তান মনে হয়, আমার একার না, সমগ্র মানবজাতির, তারাই যেন সত্যিকারের কাণ্ডারি, ঘোর তমনিশা পেরিয়ে মানবসমাজকে নিয়ে যান তারা আলো ভরা গন্তব্যের দিকে।
সেই দুই আলোর পথযাত্রীর সাথে ব্যক্তিগত কিছু কাকতালীয় ঘটনা মিলে গেছে জীবন পথের বাঁকে, তাদের জীবদ্দশায়ই পৃথিবীর একবারেই ভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত তাদের স্বদেশভূমিতে পদার্পণের দুর্লভ সৌভাগ্য হয়েছে, সামনাসামনি দেখা হবার সুযোগও ছিল, তাদের বয়স তখন আশি পেরিয়েছে। কিন্তু সেই পর্যায়ে ভাবলাম- উনাদের সামনাসামনি দেখার চেয়ে তাদের আদর্শ, জীবনকাহিনী, আমার সাথী হোক। তাদের তারুন্যময় প্রতিচ্ছবিই থাকুক হৃদি মাঝারে।
তাদের একজনকে সারা বিশ্ব মহান নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা করে, বিশ্বের সব দেশেই তাকে মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে গণ্য করা হয়, ধরা হয় অবিসংবাদিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে, নাম তার নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্ম নেওয়া একজন বিশ্বমানব।
আরেকজনকে স্বয়ং ম্যান্ডেলা অভিহিত করে থাকেন মাই প্রেসিডেন্ট বলে! কে সেই ব্যক্তি যাকে পৃথিবীর তাবৎ গণমানুষের নেতাও নিজের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা সন্মানের স্থানে বসান? নাম তার ফিদেল ক্যাস্ত্রো, সাম্যবাদী বিপ্লবের প্রতীক আরেক বিশ্বমানব।
ফিদেলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বহুগুণ বেড়েছে কিউবা ভ্রমণ করে নয়, আসলে ল্যাতিন আমেরিকার অন্যান্য কিছু দেশ দেখার সুবাদে, মূলত তার পাশেরই দেশ মেক্সিকো যথেচ্ছ ঘুরে বেড়ানোর সুবাদে। মেক্সিকোতে চার দশকের বেশী একই সরকার ছিল, আর্থিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোকটি সেই দেশেরই, অথচ দারিদ্রের প্রবল করাঘাত এবং মানবতার পরাজয় সেখানে দেখবেন প্রায় সবখানেই। প্রত্যন্ত গ্রামেও প্রতিটি স্পিডব্রেকারে গাড়ী থামানোর সময় স্থানীয় শিশুদের দল ঘিরে ধরেছে আমাদের, মাথার কলার ঝাঁকা, হাতে আম বা ভুট্টা, স্কুলে যাওয়া দূরে থাকে দুই বেলা অন্ন জুটে না নিয়মিত। মানুষ লড়ে চলে প্রতি মুহূর্ত একটু খাবার, একটু আশ্রয়ের জন্য। এক অশীতিপর ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কিছু মায়ান শো- পিস কেনার পর জিজ্ঞাসা করেছিলাম সরকার থেকে এই বুড়ো বয়সে সে কি সাহায্য পেয়ে থাকে? আমার প্রশ্ন বুঝতে না পেরে সেই দাদুভাই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিল। সাথের বন্ধুরা বলেছিল- এইটা মেক্সিকো, ফিনল্যান্ড বা কিউবা না!
কিউবার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখায় একজন পাঠক বলেছিলেন- কিউবায় পথশিশু নেই, এই একটা অর্জনের জন্য আমি তাদের সরকারের সমস্ত দোষ ক্ষমা করতে রাজি আছি। কথাটি ছিল খুবই মূল্যবান, তথাকথিৎ তৃতীয় বিশ্বের যে কোন দেশেই এর তাৎপর্য বোঝা যাবার কথা।
কিউবার ঘোড়ার পিঠে চড়ে উপত্যকা বিহারে চলেছি, সাথে এক সদালাপী বেলজিয়ান বলে বসল- কিউবার খুবই সুন্দর দেশে, মানুষেরাও ভাল কিন্তু এদের সবার হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এক ফিদেল, সেখানেই যত সমস্যা! চোখ পাকিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বলেছিলাম – ইতিহাস পড়া থাকলে তোমার জানা থাকার কথা মাত্র ৫ দশক আগে কিউবা কি রকম দেশ ছিল আর আজ সেখানে বিশ্বের সেরা শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চিত হয়েছে প্রতিটি মানুষের জন্য, সমগ্র আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ মেট্রোপলিস হাভানা, এই সমস্ত কি কোন অর্জনই না! আর এক ফিদেল এবং তার রাজনৈতিক সাথীরা যদি পশ্চিমা বিশ্বের ক্রমাগত হামলা এবং বিরুদ্ধতার মুখেও দেশকে এইভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় তারপরও তোমরা এক মানবাধিকারের কথা বলে আর অন্য কিছুই সাদা চোখে দেখতে চাও না! ( খুব বলতে ইচ্ছে করছিল আজ সবাই হিটলারের ৬ মিলিয়ন ইহুদীর নিধনযজ্ঞের কথা বলে, কিন্তু ভুলে গেছে বেলিজিয়ানরা ২ মিলিয়ন কালো মানুষকে নির্মম খুন করেছিল কঙ্গো এবং জায়ারেতে। ) আর তোমার নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে কিউবার মানুষ তাদের রাজনীতি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী অসন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র কতৃক অন্যায় ভাবে আরোপিত একপেশে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার জন্য, এই নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ৫ দশকে কিউবার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কি পরিমাণ অগ্রসর হত একটু মাথা খাটিয়ে বুঝে নিও!
গত কয়েক দশক ধরেই বিশ্বের জীবিত শ্রেষ্ঠ লেখকের মর্যাদা পেয়ে আসছেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, সারা বিশ্বের পাঠক সমাজ অধীর হয়ে অপেক্ষা করে তার পরবর্তী লেখা প্রকাশের, যেমন আমরা চাতকের মত অপেক্ষায় আছি তার আত্মজীবনীর ২য় খণ্ডের জন্য। অবাক হয়ে দেখি, জানি, শুনি- মার্কেজ তার লেখাগুলো প্রকাশের আগে ফিদেলকে দিয়ে পড়িয়ে নেন, তারমতে ফিদেল বিশ্বের শ্রেষ্ঠপাঠকদের এবং সম্পাদকদের একজন, যে কিনা স্বয়ং মার্কেজের কাহিনী বর্ণনে কোন দুর্বলতা থাকলে তা বুঝে লেখককে জানাতে পারবেন! এরপরে ফিদেলের সাহিত্যজ্ঞান এবং চর্চা নিয়ে আর কিছু বলার থাকে না। শুধু আফসোস উনি আমাদের জন্য কিছু কলাম বাদে সাহিত্যনির্ভর লেখা উপহার দেন না। ইস, যদি কমপক্ষে আত্মজীবনীটাও লিখে যেতেন!
যদিও এই দিক দিয়ে ম্যান্ডেলা আমাদের সম্পূর্ণ বঞ্চিত করেন নি, লং ওয়াক টু ফ্রিডম নামের এক আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জল আত্মকথা উপহার দিয়েছেন আমাদের, নিয়ে গেছেন শৈশবের খোলা প্রান্তরের স্মৃতি থেকে ঝাঁঝালো তারুণ্যে, কারাগারের প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তির পায়রার ডানায় চেপে বিশ্ব দরবারে।
কেপ টাউনের টেবিল মাউন্টেনে আরোহণ করে নির্নিমেষে চেয়ে থেকেছি মহাসাগরের মাঝে দুষ্ট ক্ষত চিহ্ন, এককালের কুখ্যাত কারাগার, রোবেন আইল্যান্ডের দিকে, যেখান থেকে বছরের পর বছর নেলসন ম্যান্ডেলা দূরের এই পর্বতের দিকে তাকিয়েই খুঁজে ফিরেছেন স্বদেশভূমিকে। জানতেন তিনি, ঐ যে আমার দেশ, ফিরবই আমি একদিন, এক নতুন সময়কে সাথী করে।
ফিরলেনও, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারের প্রকোষ্ঠে থেকে, সারা বিশ্বের মানুষের আশাকে যথাযোগ্য মূল্য দিয়ে মাথা উঁচু করে মুক্ত স্বাধীন মানুষ হিসেবে মুক্ত স্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকায়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন জনগণের ভালবাসায় ( অথচ তাহকে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হিসেবে জেলে পোরা হয়েছিল), অথচ যারা তার জীবনের সেই স্বর্ণালী সময়গুলো আঁধারময় করে রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধই নিলেন না! একটি বারও বজ্রকণ্ঠে হুংকার দিলেন না আফ্রিকার সিংহপুরুষ, শুধু সংযত ভাবে বললেন জাতিকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যেতে হবে সবাই মিলেই, হিংসা-দ্বেষ-প্রতিহিংসা ভুলে। এই সাউথ আফ্রিকার মাটিতেই মহাত্মায় পরিণত হয়ে ওঠা ব্যারিস্টার মোহনলাল করমচাঁদ গান্ধী বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই স্মিত হাস্যে বলতেন- আমার স্বদেশ আমার আদর্শ গ্রহণ না করুক, অন্তত যে লাল শুষ্ক মাটির দেশে আমি শান্তির বাণী প্রথম ছড়ানো শুরু করেছিলাম, সেখানের অন্তত একজন মানুষ আমার মর্যাদা রাখল।
শান্তিবাদী হিসেবে ম্যান্ডেলার কীর্তি সর্বজন বিদিত হলেও বহুলাংশেই ভুলে থাকা হয় ফিদেলের ভূমিকা। অস্ত্র হাতে এই তরুণ আইনজীবী গেরিলাযুদ্ধের মাধ্যমে স্বদেশের স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছিলেন, কিন্তু তাকে প্রথমেই বলা হয়েছিল একনায়ক বাতিস্তাকে গুপ্তহত্যার ব্যাপারে স্রেফ মত দিতে। দ্ব্যর্থহীন ভাবে ফিদেল বলেছিলেন- গুপ্তহত্যা কোন সমাধান নয়, এতে রাষ্ট্রের কোন কল্যাণ হবে না। আরেকটি ছোট ( ! ) উদারহণ- নামে- বেনামে আজ পর্যন্ত সি আই এ কতৃক প্রায় সাড়ে ছয়শ বার ফিদেলের জীবনের উপর হামলা করা হয়েছে, অদ্ভুত সব উপায়ে। এর বদলা নিতে কি আজ পর্যন্ত কিউবার কোন সংস্থা, কোন নাগরিক একটিবারও কোন হামলা চালিয়েছে মার্কিন কোন স্থাপনায়, বা তাদের দেশে! এমন তো না এটা অসম্ভব, কিন্তু ফিদেল এড়িয়ে চলেছেন এমন সংঘাতের পথ সর্বদাই, এর চেয়ে বড় শান্তির দূত আর কবে দেখবে মানববিশ্ব!
দুর্বল নন তিনি, কেনিডির সময় মার্কিন বাহিনী নির্লজ্জ আক্রমণ চালালে সারা বিশ্বকে অবাক করে তাদের যুদ্ধে হারিয়ে, যুদ্ধবন্দীদের আবার যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে ফেরতও পাঠিয়েছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন- আমরা ভদ্রলোক, কিন্তু আমার ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করে অপমান করতে এস না।
আবার একই ফিদেল বিশ্বের নানা দেশের মুক্তিকামী আন্দোলনে পাঠিয়েছেন সশস্ত্র সৈন্য। কেবলমাত্র আদর্শগত কারণে , একই সীমান্ত না থাকা শর্তেও অন্য দেশের স্বাধীনতার জন্য, বিশেষত হাজার মাইল দূরের অন্য মহাদেশ আফ্রিকার নানা দেশে কিউবার সৈন্যরা রক্ত বিসর্জন দিয়ে যে নজির স্থাপন করেছে এর তুলনা মানব ইতিহাসে আর নেই , চে গ্যেভারা স্বয়ং যুদ্ধ করেছেন কঙ্গোতে, ছিলেন মিশর, আলজেরিয়া, তাঞ্জানিয়াসহ নানা দেশের মুক্তিকামী নেতাদের সাথে, তাদের স্বাধিকারের লড়াইয়ে। কিংবদন্তীর গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে তো তাইই বলেছেন কিউবার অবদান ছাড়া বর্তমানের আফ্রিকা হতে পারত সম্পূর্ণ অন্য ধরনের, বিশেষ করে অ্যাঙ্গোলা হয়ত উপনিবেশই থেকে যেত। ( উল্টোটাই হয়েছে এবং হচ্ছে সবসময়- এককালে মঙ্গোলরা আধা বিশ্ব কচুকাটা করেছে, আরব, ইউরোপিয়ান, তুর্কিশ কারা করে নি জবরদখল! এখনো মার্কিনরা তাদের তথাকথিত সুসভ্য বন্ধু ন্যাটোর সাথে মিলিয়ে একের পর এক নির্লজ্জ আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছে অন্য দেশে)
এই জন্যই কি ফিদেলের প্রতি ম্যান্ডেলার এই শ্রদ্ধার্ঘ্য? তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটাতে, মানুষের মুক্তির প্রতি কিউবা এবং ফিদেলের নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা কি তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে ফিদেলকে সর্বসমক্ষে মাই প্রেসিডেন্ট বলার জন্য? নাকি এর পিছনে আছে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ত্যাগ, যা আমরা জানব না তাদের জীবিতাবস্থায়!
জোহান্সবার্গের যে কারাগারে ম্যান্ডেলা তার মালির জীবন শুরু করেছিলেন তা অবলোকনের সৌভাগ্য হয়েছিল বছর দুই আগে, অবাক হয়ে ভেবেছি অনেকবার কি পরিমাণ দৃঢ় চেতা হলে একজন মানুষ এমন সংগ্রামী হতে পারে! ইস্পাতের চেয়েও কঠিন তার স্নায়ু, নাহলে এই একাকীত্বেই পাগল হয়ে যাবার কথা সাধারণ মানুষের। প্রহসনের বিচারে দীর্ঘ জেল হয়েছিল ফিদেলেরও, তার জীবনের সেটিই ছিল অধ্যয়নের সুবর্ণ সময়, দিনে ষোল থেকে আঠারো ঘণ্টা বই পড়ে কাটাতেন তিনি, এখন দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলেন- এমন আর কোনদিনই পড়া হল না! পরবর্তীতে মেক্সিকোতে নির্বাসনে পাঠানো হয় ফিদেল ও রাউল সহ অন্যান্য কয়জন কিউবান বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টাকে। পরবর্তীতে ফিদেল এবং ম্যান্ডেলার ভাষণ নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয় How far we slaves have come! নামে।
এখানে একটি কথা প্রাসঙ্গিক হবে বলেই উল্লেখ করছি- অনেকেই আমাকে বলেছেন কিউবার সমাজ ব্যবস্থা যদি এতই ভাল হবে তাহলে দুই মিলিয়ন কিউবান ফ্লোরিডাতে থাকে কেন? কেন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাঙর ভরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে পাড়ি জমায় যুক্তরাষ্ট্রে? এখানে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিউবা একটি জুজুর মত ভয়াবহ ব্যধির নাম, যেখানের সবকিছুই ভয়ংকর, সেই সমাজ ব্যবস্থা ভাঙ্গার বিস্তর অপচেষ্টা তারা চালিয়েই যাচ্ছে গত ৫ দশক ধরে ( যাতে দেশটি ফিদেলপূর্ব কিউবায় মানে আমেরিকার তাঁবেদার উপনিবেশে পরিণত হয়) , যার অন্যতম প্রচেষ্টা- কিউবার যে কোন নাগরিক ফ্লোরিডার মাটিতে পৌঁছাতে পারলেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের যোগ্যতা অর্জন করবে। এখন বলুন গত বছর কেন ডিভি লটারি থেকে বাংলাদেশে থেকে ৭৭ লক্ষ আবেদন গেল? নিশ্চয়ই উন্নততর জীবনের আশায়! আমরা মিডিয়ার কল্যাণে আদম ব্যাপারিদের শিকার হতভাগ্য বাংলাদেশীদের কথা শুনি যারা গল্পের মাসুদ রানাকে হার মানিয়ে প্রতি পদে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সাহার মরুভূমি পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয় একদিন যে করেই হোক পশ্চিমা কোন দেশে যাব এই আশায়। এখন বলুন, যদি মার্কিন সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় যে বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক বৈধ বা অবৈধ, যে পথেই হোক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারলেই সেই দেশে বসবাসের সুযোগ পাবে তাহলে কত কোটি মানুষ সেখানে যাবে আগামী বছর! কেবল নিজের দেশ নয়- ভারত হোক, চীন হোক, মিশর হোক, হোক রাশিয়া- এমন সুযোগ পেলে আমেরিকার তথাকথিত চাকচিক্যময় নিরাপদ জীবনের খোঁজে যাবে না কে? দোষ কেবল কিউবানদের! কারণ তারা সমাজতন্ত্রের চর্চা করে!
কি হবে এই দুই মহামানবের প্রস্থানের পর তাদের স্বদেশ ভূমির? দক্ষিণ আফ্রিকা সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম ধনী দেশ হলেও আজও তা আটকা পড়া আছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বর্ণ বৈষম্যের ফাঁদে ( অদ্ভুত ভাবে এবার সেই বৈষম্য তৈরি করেছে কালোরাই, বিশেষত কিছু গোত্র, যেমন জুলু, যারা হতে চায় সর্বময় ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী)। অন্যদিকে কিউবাতে তৈরি হয় নি দক্ষ তরুণ নেতা যারা এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে প্রবল পরাক্রান্ত শত্রুকে উপেক্ষা করে, ইতিমধ্যেই পুঁজিবাদের প্রতিযোগিতা লেগেছে সেখানের শহরে- বন্দরে, অনেকেই চাইছে আদর্শ বিকিয়ে হলেও একটি গাড়ী মালিক হতে, আমেরিকায় থিতু হতে। তাহলে কি বৃথা যাবে এই দীর্ঘ সংগ্রাম? কোনদিনই না, বিশ্বের কোথাও না কোথাও মানুষ জেগে উঠবেই ফিদেলের দ্রোহের মন্ত্রে, ম্যান্ডেলার অবিচল সংগ্রামে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে, আধুনিক প্রভুদের হাত থেকে।
প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় তার এক উপন্যাসে লিখেছিলেন- জগতের সকল নিঃস্বার্থ নির্মৎসর লোক পরস্পরের স্বগোত্র- তা সে লোক গঙ্গাতীরে নবদ্বীপের আকাশেই প্রথম দিনের আলো দেখুন কিংবা দেখুন কপিলাবস্তু বা প্যালেস্টাইন বা আসিসির উপরকার ইতালীর ইন্দ্রনীল আকাশের তলে। এই জন্যই ক্যারিবিয় দ্বীপে জন্ম নেওয়া ফিদেল ভাই হয়ে যায় আফ্রিকার দক্ষিণের ঊষর ভূমিতে জন্ম নেওয়া ম্যান্ডেলার, তাদের ভাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাদের অনুসারীদের সংখ্যা, যারা স্বপ্ন দেখে শ্রেণী এবং বর্ণ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের, তাদের মিছিলে যোগ দেবার জন্য বাংলাদেশের পদ্মার তীরে বেড়ে ওঠা এক কিশোর বিস্ময়ভরা চোখে এগিয়ে আসে, শ্রদ্ধাবনত অস্ফুট কণ্ঠে বলে যায়- ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন।।
O Captain! My Captain!
1
O CAPTAIN! my Captain! our fearful trip is done;
The ship has weather’d every rack, the prize we sought is won;
The port is near, the bells I hear, the people all exulting,
While follow eyes the steady keel, the vessel grim and daring:
But O heart! heart! heart! 5
O the bleeding drops of red,
Where on the deck my Captain lies,
Fallen cold and dead.
2
O Captain! my Captain! rise up and hear the bells;
Rise up—for you the flag is flung—for you the bugle trills; 10
For you bouquets and ribbon’d wreaths—for you the shores a-crowding;
For you they call, the swaying mass, their eager faces turning;
Here Captain! dear father!
This arm beneath your head;
It is some dream that on the deck, 15
You’ve fallen cold and dead.
3
My Captain does not answer, his lips are pale and still;
My father does not feel my arm, he has no pulse nor will;
The ship is anchor’d safe and sound, its voyage closed and done;
From fearful trip, the victor ship, comes in with object won; 20
Exult, O shores, and ring, O bells!
But I, with mournful tread,
Walk the deck my Captain lies,
Fallen cold and dead.
( ব্যবহৃত আলোকচিত্রগুলো নেট থেকে সংগৃহীত।
লেখাটি আমাদের প্রিয় ইতিহাসবিদ ষষ্ঠ পান্ডবের জন্য। ভালো থাকুন পাণ্ডবদা, নিত্য নতুন লেখা দিয়ে আমাদের সুযোগ দিন আপনার জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের। )
মন্তব্য
যুক্তরাষ্ট্রের হাত নিশপিশ করছে কিউবার দিকে তাকিয়ে সন্দেহ নেই।
কিন্তু আপনি বলছেন -
এটাও যুক্তরাষ্ট্রের দোষ? নাকি এটা হচ্ছে এ কারণে যে মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রো রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মানুষকে অরাজনৈতিক ভোদাই বানাচ্ছে, সে কারণে? নেতা তৈরি হয় সংগ্রাম করে, নেতা তৈরি হয় মাঠে গণসংযোগ করে, মানুষের মাঝে সাহস জুগিয়ে। পার্টির প্রোপাগান্ডা মুখস্থ প্রচার করে না। এর চেয়ে বেশি কিছু করার সুযোগ যদি না থাকে, আগামি কিউবার বিপ্লব, সংগ্রাম আর দক্ষ নেতাটা আনফরচুলেটলি ফর ইউ অ্যান্টি-সমাজতন্ত্রী কিউবাবাসী থেকেই আসবে বলে মনে হয়।
মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সমস্যা, এই সিস্টেমে নিরঙ্কুশ "নিয়ন্ত্রণ" প্রায় অপরিহার্য। আর প্রয়োজন ওনার মতো একজন "খাঁটি" নেতা। মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রো নিজে মহান মানুষ সন্দেহ নাই। কিন্তু কোনো কারণে নেতা খাঁটি না হলে নিরঙ্কুশ সিস্টেম হয়ে পড়বে একটা ডিস্টোপিয়া। এখন খাঁটি নেতা হওয়া নিশ্চিত করবেন কীভাবে? মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রো নিজে গণমানুষের সমর্থন নিয়ে বিপ্লব করে এসেছেন। কিন্তু কীভাবে নিশ্চিত করবেন যে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উত্তরসূরী হবেন একজন খাঁটি নেতা? খালি একটা দুইটা অথবা একশটা খাঁটি নেতা হলেই দেশ উদ্ধার হবে যারা ভাবছেন, তারা নির্ঘাত একটা ধোঁকার মধ্যে আছেন।
ভাইরে হাত নিশপিশ করা এক জিনিস আর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাওয়া আরেক জিনিস, আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে আমেরিকার বাণিজ্যিক অবরোধের পরপরই কিউবা বাধ্য হয়ে সোভিয়েত ব্লকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, এটা ছাড়া কিন্তু ঘটনা অনেক অন্যরকমও হতে পারত।
খালি একটা দুইটা অথবা একশটা খাঁটি নেতা হলেই দেশ উদ্ধার হবে যারা ভাবছেন, তারা নির্ঘাত একটা ধোঁকার মধ্যে আছেন।------ বুঝলাম, এখন বলুন দেখি- তাহলে কিউবাতে কি করা উচিত ছিল, বিশেষ করে যখন দেশটা ছিল অপরাধী আর ধনী মার্কিনীদের আখড়া!
facebook
নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, বাক-স্বাধীনতা রোধ আর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ভিন্ন অন্য উপায় আছে নাকি নাই সেটাই তো প্রশ্ন। আমার মনে হয় এগুলোর সুযোগ কিউবা রাখতে পারতো। আপনি কি ভাবছেন একদমই পারতো না?
আচ্ছা, চিলির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সালভেদর আয়েন্দের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনার। বলুন দেখি কিউবাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কতটুকু ছিল, কতখানি আছে এবং কেন এখন পর্যন্ত ঘটে নি? কেবলমাত্র নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতার জন্য প্রশ্ন করলাম, আর কিছু না।
facebook
আমার প্রশ্নের উত্তর করলেন না যে? ওইসব নিয়ন্ত্রণ ছাড়া একেবারেই সম্ভব হতো না আপনি কি এমন ভাবছেন?
একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরোধী নয় আমি, কিন্তু নিয়মিত জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই হবে, এর অভাবেই কম্যুনিস্টিক পথে চলতে শুরু করা দেশগুলোতে স্ত্যালিন, চচেস্কু, পলপট, কিম জং ইলের সৃষ্টি হয়ে ছিল।
রাজনীতি নিষিদ্ধ সেই সময়ে করতেই হত, তারা খুব বেশী ভীত ছিলেন এবং এখনো আছেন আমেরিকার ফান্ডে চালিত বিরুদ্ধ পক্ষ নিয়ে, সেই সাথে আছে সেই সময়ে দেশ ত্যাগী ধনী কিউবানরা।
বাক-স্বাধীনতা রোধ- আসলে এই ব্যাপারটা নিয়ে যেটা বলা হয় সেই ব্যাখ্যাটা আমার পছন্দ হয় না। যেমন আজকে আমি ইতালি যেয়ে বললাম বারলুসকনি ইজ এ শিট, পুলিশ আমাকে বাঁধা দেবে না। কিন্তু তাতে বারলুসকনির কি কোন ক্ষতি হচ্ছে? আমার মত অনেকেই বললেও কোন ক্ষতি কিন্তু হচ্ছে না যদি আমার সেই বাক স্বাধীনতা আমলে নেওয়া না হয়।
facebook
সংগ্রাম করে, গণসংযোগ করে, সাহস জুগিয়ে- আমাদের তৃতীয় বিশ্বে কজন বিখ্যাত নেতা তৈরী হচ্ছেন, বললে ভালো হতো না?
এই ধরুন বাংলাদেশে, সারা বছর আমরা সংগ্রাম,গনসংযোগ আর সাহসের বন্যা দেখি, তাতে আমাদের দেশে কজন নেতা তৈরী হয়েছেন যারা ফিদেল এর ধারে কাছে ঘেষার মতো যোগ্যতা রাখেন? কিংবা বাংলাদেশকে কিউবার মতো একটি দেশে রুপান্তরিত করার সাহস রাখে?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
তৈরি না হওয়াটা বড় সমস্যা নাকি না হওয়ার সুযোগ না থাকাটা বড় সমস্যা? ফিদেল তৈরি হওয়ার সুযোগ তো আছে মুক্ত রাজনীতির বাংলাদেশে। দ্বিমত হবার সুযোগ আছে। সেই সুযোগ কিউবা দিচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন করছি। দ্বিমত না হয়ে কীভাবে রাজনীতি করবেন আর কীভাবে নেতা হবেন?
এই যেমন ধরেন নিরঙ্কুশ এক পার্টি শাসন, রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ আর বাক-স্বাধীনতারোধ এমন কিছু কি? আপনি যদি কিউবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্যে উপরের গুলো অপরিহার্য মনে না করেন, তাহলে আপনি হয়তো বাংলাদেশকে কিউবা বানাতে চান না।
কিউবাতে দক্ষ তরুণ নেতা তৈরির সুযোগটা কেমন আছে সেটা নিয়েই কিন্তু প্রশ্ন। সে ব্যাপারে কিছু বলুন।
আর নেতা যেভাবে তৈরি হয় বললাম, সে নিয়ে আপনি অসন্তুষ্ট মনে হলো। আমি ভুল হতেই পারি। কিন্তু যেভাবে তৈরি হয় বললাম, ফিদেল নিজে কি তার চেয়ে ভিন্ন কোনো উপায়ে তৈরি হয়েছেন? আর নেতা তৈরির এটা উপায় না হলে আপনার মতে শ্রেয়তর উপায়টা নিয়েও বলুন।
কেন সাধারণের সেবা করে, দেশের জন্য কাজ করে কিংবা দেশের উন্নতির কান্ডারী হয়ে কি নেতা হওয়া যায়না?
ফিদেল এর শাসনব্যবস্থায় কোথায় উল্লেখ আছে যে, এই কাজগুলো করা যাবেনা?
নাকি নেতা হওয়ার জন্য খালি গলাবাজি করা প্রয়োজন? মানুষের জন্য কাজ করলে মানুষ চিনবেনা? নাকি ওই নির্বাচনের সময়ে গণসংযোগের নামে এককালীন গলাবাজির গণতন্ত্র নেতা তৈরিতে মুখ্য? কয়জন এহেন ডাকসাইটে নেতাকে দেশে নির্বাচনের পরে আপন এলাকায় দেখা যায়? তার থেকে বড় কথা কজন দেশে থাকেন দীর্ঘসময়ের জন্য?
আর বাকস্বাধীনতা? ওহ গণতন্ত্রের মুলা?? কেন, যে কয়টা দেশে এই মুলা ঝুলছে সে কয়টা দেশে সত্যিকার অর্থে সাধারণ জনগনের বাক ঠিক কতোটা স্বাধীন তা তো দেখতেই পাচ্ছি !!
না ভুল বুঝলেন, প্রশ্ন করলেই অসন্তুষ্ট মনে করলে তো সমস্যা। আমি তো জানতেই চাইলাম। আপনি যেভাবে বললেন, ফিদেল এর শাসন রাজনৈতিক ভোদাই তৈরী করছে, সেরকম আমিও জানতে চাইলাম বাংলাদেশে সব থাকার পরেও কোন রাজনৈতিক মহাজ্ঞানী তৈরী হচ্ছে!!
আর যেই বাকস্বাধীনতা দিয়ে দেশের অসংখ্য মানুষ একবেলা ঠিকমতো খেতে পায়না, সেই বাকস্বাধীনতা ঠিক কই রাখে?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আর যেই বাকস্বাধীনতা দিয়ে দেশের অসংখ্য মানুষ একবেলা ঠিকমতো খেতে পায়না, সেই বাকস্বাধীনতা ঠিক কই রাখে?
স্টিল ইটস এ ফ্রি কান্ট্রি! কোন ব্যাটাই ফ্রি না, এইতাও বুঝে না।
facebook
যদি পার্টির উপায়ের বাইরে করার উপায় না থাকে, তাহলে সেটা একটা সীমিত উপায় তো বটেই।
তবে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, একপার্টি শাসন আর বাক-স্বাধীনতা রোধ এ নিয়ে আপনার বক্তব্যে আমি কিঞ্চিৎ অবাকই হয়েছি। হয় এ ব্যাপারে আপনার স্পষ্ট বক্তব্যটা বুঝি নি, না হলে আমার ভুল ধারণা।
অবশ্যই আমরা না খেয়ে মরতে চাই না। আমার কথা হচ্ছে, সেটা অর্জনের জন্য নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, একপার্টি শাসন আর বাক-স্বাধীনতা রোধ করা চলে কিনা। বেশ সহজ সরল প্রশ্ন এটা। আপনি বলতে পারেন, হ্যাঁ অবশ্যই চলে এবং এই এই কারণে চলে।
আমি মানুষের দেখভাল ভরণপোষণের অজুহাতে কোনো মহাজনকে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, একপার্টি শাসন আর বাক-স্বাধীনতা রোধ দেয়ার সম্পূর্ণ বিরোধী। আমি দ্বিমত হবার অধিকারকে, মতপ্রকাশের অধিকারকে মানুষের inalienable rights মনে করি। দ্বিমত হওয়া, মত প্রকাশ করা, এগুলো অঢেল সম্পদ। এতে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায়। দেশের মানুষকে তিনবেলা খাওয়ানোর অজুহাত এখানে খাটে না।
বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার এহেন ধারণা দেখে পুনরায় অবাকই হলাম।
আর যদি এটা সত্যিই হয়, রাজনৈতিক মহাজ্ঞানী কীভাবে তৈরি হয়? পার্টি দ্বারা ডিজাইন করে? দেখুন কথাগুলো শুরু হয়েছে দক্ষ তরুণ নেতার ঘাটতি থেকে। আপনার কী মনে হয় কেনো কিউবায় তার ঘাটতি? আমার মনে ঠিক সেই কারণে, সেই নিয়ন্ত্রণ, রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, যার কারণে কিউবা একটা শর্টটার্ম লোকাল অপ্টিমাতুল্য উন্নয়নাবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে। কিউবার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কার কারণটা উপলব্ধি করুন।
আমি মনে করি ডিজাইন করে স্ট্যাটিক বস্তু তৈরি করা যায়। অর্গানিজম, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের মতো একটা ডাইনামিক সিস্টেমের উন্নয়নের জন্যে ভ্যারিয়েশন ও সিলেকশান অ্যালাও করতে হয়। বৈচিত্র্য যার জন্যে অপরিহার্য। বিবর্তন আপনি তো ভালো বুঝেন।
কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে আলোকিত করুন, যেখানে ওই মুলো ঝুলছে এবং দয়া করে জানান সেখানে বাক স্বাধীনতার প্রকৃত কী অবস্থাটা আপনি আসলে দেখতে পাচ্ছেন।
বাক-স্বাধীনতা, মত প্রকাশ এগুলো তো সীমিত সম্পদ না, আবার খাওয়া দাওয়া করার মিন্সও না যে ওগুলো দিয়ে মানুষ খেতে না পারলে ওগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবেন। এটা তো যুতসই যুক্তি হলো না। পোশাক পড়লেও তো তিন বেলা খাবার মেটে না। তাতে কি তখন বলবেন যেই পোশাক পড়ার অধিকার দিয়ে তিনবেলা খাবার জোটে না, সেই পোশাক পড়া কই রাখে?
এই প্রশ্ন তারেক অণুর প্রতিও।
একটার সাথে আরেকটা বিষয়ের সম্পর্ক নেই দেখিয়ে বড়জোর এটা প্রতিষ্ঠিত করা যায় যে তারা অসংশ্লিষ্ট, কিন্তু অসংশ্লিষ্টতা তো নিয়ন্ত্রণকে বৈধ করে না। বরং মত প্রকাশের অধিকার যদি ভাত খাওয়ার সাথে অসংশ্লিষ্টই হয়, তাকে নিয়ন্ত্রণ অপ্রয়োজনীয়, অহেতুক, অবৈধ।
আপনি মনে হয় এই অসংলগ্ন যুক্তি দিতেও চান নি। আপনি হয়তো মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর তিনবেলা ভাত খাওয়া অসংশ্লিষ্ট দেখাতে চান না। বরং কিছুট মুখোমুখি খাঁড়া করাতে চান। সেটা না করলে কিন্তু কিউবার তিনবেলা খাওয়া দাওয়া করার জন্যে মতপ্রকাশের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণকে জায়েজ করা যাচ্ছে না।
পার্টির উপায় বলতে কি বোঝালেন বুঝলামনা!! দেশের মানুষের সেবায় নির্দিষ্ট "পার্টি উপায়" কবে থেকে উদ্ভাভিত হলো জানিনা। জানা মতে, কিউবাতে মানুষের সেবাদানে কোনো বাধা নেই।
অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। একজন মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো (খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা)পূরণ হওয়া দরকার সঠিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য| যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের শাসনব্যবস্থাকে শুধুমাত্র "বাক-স্বাধীনতার" মুলা দিয়ে জায়েজ করা যায়না| আর যখন অসংখ্য মানুষের এই চাহিদাগুলো অপূর্ণ থাকে তখন সে সরকার ব্যর্থ| আর এই পরিস্থিতিতে যদি আরেকটি রাষ্ট্র এই চাহিদাগুলো পূরণে সক্ষম হয় এবং সেখানে মানুষের নির্দিষ্ট বাক-স্বাধীনতা থাকে/ না থাকে, তাহলে আমি খুশি মনে এই সরকারকেই সমর্থন করবো| আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজন সবার আগে, বাক-স্বাধীনতা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য নয়| এটা মৌলিক কোনো চাহিদা নয়| আর এটাও দেখা উচিত কোনো রাষ্ট্রের বাক-স্বাধীনতার প্রভাবটা কতটুকু| আজকে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বাক-স্বাধীন হয়ে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন যখন আমরা করাতে পারছিনা, তখন আমাদের মতো সমাজের দেশগুলোতে এই স্বাধীনতার কোনো প্রত্যক্ষ গুরুত্ব নেই|
খুব বেশি তো দুরে যাওয়ার দরকার নেই, আপনি দক্ষিন এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংবাদপত্রগুলোতে চোখ রাখুন| এতো উদাহরণ পাবেন যে বছরের পর বছর সংগ্রহ করেও কুলাতে পারবেননা|
আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে, যদি কিউবা তাদের দেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করেও তাদের বাঁচার সব কয়টি মৌলিক অধিকার পূরণ করতে সক্ষম তাহলে আমি তাদের সমাজ ও সরকার ব্যবস্থাকে সমর্থন করতে রাজি এবং সমর্থন করি| আর যে সমস্ত দেশ, গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতার নামে দলীয় স্বৈরাচার, শ্রেণী বিভক্তি ব্যবহার এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ, তাদের শাসন ব্যবস্থাকে আমি সমর্থন করিনা| আর এই যে "বাক-স্বাধীনতা" নামের ফ্যান্সি বস্তুটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তাকে আমি মুলা বলতেই পছন্দ করবো|
অবস্থাটা কিছুটা এরকম, "আমাদের পেটে ভাত নাই তো কি হয়েছে, আমাদের বাক-স্বাধীনতা আছে, আমরা সরকারকে গালি তো দিতে পারি" !!!!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
সংশ্লিষ্টতা দেখতে হলে এই বিষয়টা আপনি হয়তো এই ধরণের রেভোলিউশনারি পার্টি্গুলির দৃষ্টিকোন থেকে দেখার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তার মানে এই না অবশ্যই যে তাতে কাজটা জাস্টিফাইড হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এতে বিষয়টার একটা মাত্রা হয়তো বোধগম্য হবে। প্রথমেই ধরে রাখি যে, পার্টিগুলির উদ্দেশ্য পুরোটাই সৎ। তা না হলে কারনটাও কমেনসুরেটলি অন্যরকম হবে - যা এখানে মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক।
রেভোলিউশনারি পার্টি্গুলি যখন ক্ষমতায় আসে এবং পরে শাসন করে, তখন তাদের নানা ফ্রন্টে লড়াই করতে হয়। এবং সেটা বস্তুজাগতিক ক্ষেত্রে যেমন, মনোজাগতিক ক্ষেত্রেও তেমন। বস্তুজাগতিক ক্ষেত্রে (এমনকি মনোজাগতিক ক্ষেত্রেও) তারা ক্ষমতায় আসতে পারলেও/সফল হলেও তারা দেখে যে সমাজে এবং বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ওলড্ ভ্যানগার্ড বা পুরোনো শোষনমূলক ব্যবস্থার সমর্থক শত্রুপক্ষের অনেক লোক বা শক্তি রয়ে গেছে। এরা সাময়িক ভাবে পরাজিত হলেও পাল্টা লড়াই দেয়ার জন্যে প্রস্তুত। আর সরাসরি ফিজিকালি লড়াই দেয়ার সামর্থ্য বা ইচ্ছা যাদের আপাতত নাই (বা থাকলেও), তাদের ক্ষেত্রে মনোজাগতিক ক্ষেত্রের লড়াইটা খুব চমৎকার একটা উপায়। মানুষের একটা স্বভাব হচ্ছে - আমরা সবসময় আমাদের সত্যি যেটা প্রয়োজন বেশি বা আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বা সার্বিকভাবে কল্যানজনক সেটাকে ঠিকমত বা সময়মত আইডেন্টিফাই করতে সফল হই না - উল্টে সেগুলিকে বাদ দিয়ে অনেক সময় অন্য জিনিষকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে ফেলি, আসলগুলির এক্সপেন্সে। ধর্মীয় মৌলবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক/গোষ্ঠীগত বিভেদচেতনা, শ্রেণীগত/গোষ্ঠীগত/ব্যক্তিগত লোভ/লালসা/স্বার্থ/ভয়/ঘৃণা/বিদ্বেষ/সন্দেহ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের মনোজগতে প্রভাব বিস্তারের করে তাকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত ও এক্সপ্লয়েট করা যায়। এমনকি তার বাস্তব/বস্তুগত প্রায়োরিটিগুলিকে ভুলিয়ে দিয়ে বা ডিপ্রায়োরটাইজ করে ভুল বা চূড়ান্ত বিচারে ক্ষতিকর বা এমনকি সামগ্রিক বিচারে আত্নস্বার্থহানিকর আকাঙ্খাকে প্রায়োরিটাইজ করতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। ইতিহাসে মনে হয় এটা অনেকবারই হয়েছে। আর এইসব কিছু করার সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ারগুলির একটা হল (বিশেষত ওভারহোল্মিং বিত্ত ও ক্ষমতার অধিকারীদের জন্য, তবে অন্যদেরও কাজে লাগে) - বাকস্বাধীণতা, মিডিয়া, ফ্লো অফ ইনফর্মেশন এণ্ড প্রোপাগেশন অফ ভিউজ। এই জিনিষটা যেমন সভ্যতার চাবিকাঠি, তেমনি অতিরিক্ত অসম পরিবেশে উল্টো অবস্থাও সৃষ্টি করতে পারে। অন্তত বিপ্লবীরা মনে হয় সেরকমই মনে করেন। নিউজ, ভিউজ আর ইনফর্মেশনকে (এন্টারটেইনমেন্ট সহ) নিজেদের স্বার্থ বা এজেন্ডা অনুযায়ী যে কতরকমভাবে ম্যানুফ্যাকচার, ম্যানিপুলেট, স্পিন, এডিট, সেন্সর, মনোপোলাইজ, প্রেজেন্ট আর প্যাকেজ করা যায় তা তো বলাই বাহুল্য।
এটাকেই হয়তো 'প্রোপাগাণ্ডা ওয়ার' বা 'সাইকলজিকাল ওয়ারফেয়ার' বলে। যা খুব দ্রুতই বাস্তব জগতে বাস্তব সমস্যা বা বিপদ তৈরিতে খুবই পারঙ্গম/কার্যকরী। সমস্যা হল এই যুদ্ধ যদি বেশি অসম হয়, অর্থাৎ ডোমেস্টিক ক্ষেত্রে বিরোধীদের হাতে যদি অনেক বেশি অর্থ বা ক্ষমতা থাকে - কিম্বা না থাকলেও তাদের যদি সেরকম অতিরিক্ত বিত্ত ও ক্ষমতাশালী বিদেশি সমর্থক/ব্যাকার থাকে - তখন শত্রুপক্ষের সাথে লড়াই করা সত্যি অসম্ভব হয়ে পড়ে। ডোমেস্টিকদের স্বাধীণতা দিলে, সেই স্বাধীণতার সাথে সাথে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী শত্রুস্বার্থও "ট্রোজান হর্স" হয়ে ঢুকে পড়ে যা শেষ পর্যন্ত হয়তো সামাল দেয়া যায় না। বাস্তব দুনিয়ায় ডেভিড ও পিপড়ারা কিন্তু গোলায়াথ ও হাতির বিরুদ্ধে জিতে না শেষ পর্যন্ত বা কোন কারনে সাময়িক জিতে গেলেও জয় ধরে রাখতে পারে না। লোভ/লালসা/স্বার্থ/ভয়/ঘৃণা/বিদ্বেষ/সন্দেহ আর অর্থ, চাকচিক্য ও শক্তির কাছে দূর্বল বা চাকচিক্য ও মাদকতার প্রলোভনহীণ শুভত্ব অনেক সময় হেরে যায় (এর অন্যতম কারন এই লড়াইটা দুই ব্যক্তির মধ্যে হয় না, হয় অনেক ব্যক্তির একাধিক সমাহারের মধ্যে - যেখানে পরিবর্তনশীলতার সম্ভাবনাসহ বহু মন, মত, পথ, মোটিভেশন ও স্বার্থগত ক্যালকুলাস থাকতে বা লড়াইর বিভিন্ন পর্যায়ে সৃষ্টি হতে পারে)। এইসব যুদ্ধে বহু সময়েই ন্যায়নীতি, বিবেক, যুক্তি, ডিসপ্যাসনেট অব্জেক্টিভ যুক্তি প্রয়োগজাত বিতর্ক বা উইকিপিডিয়ার কোন রেফারেন্স কাজে লাগে না।
ক্ষমতাসীন বিপ্লবী দলগুলির কাছে এটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় ডাইলেমা বাকস্বাধীণতার বেলায়। তারা ভয়ঙ্কর শোষনমূলক-অন্যায় ও অমানবিক একটা ব্যবস্থাকে উৎখাত করে, মানুষের বস্তুগত মুক্তি ও তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ আর একটা মহৎ আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য বহু ত্যাগতিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, কিন্তু তারপর দেখে যে লড়াইটা শেষ হয়নি - স্রেফ অন্য ফ্রন্টে সরে গেছে, যেখানে লড়াই করার যথেষ্ট শক্তি বা রসদ তাদের হয়তো নেই। এইরকম অবস্থাতেই তখন তারা সেই ফ্রন্টটাকে ব্লক করে অর্থাৎ বাকস্বাধীণতা ও তথ্যপ্রবাহকে কার্টেল করে পুরনো শোষক শক্তির প্রত্যাবর্তন বা নতুন কোন শোষক শক্তির অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করতে চায়।
আমার বুঝমত, ভরণপোষনের সাথে বাকস্বাধীণতার এই হল সম্পর্ক। বিপ্লবীদের দৃস্টিকোন থেকে।
==================
তবে আমার ব্যক্তিগত মত হল, এই ধরণের প্রতিরোধের মাধ্যমে আর্থিক ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক রিসোর্সের অভাব সামলানো গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্যাচমেন্ট এরিয়া/পপুলেশনে রাজনৈতিক ও সভ্যতাগত অভিযোজনক্ষমতার ঘাটতি সৃষ্টি করে এবং এইধরণের বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক/গোষ্ঠীকেন্দ্রিক শাসন সাস্টেইনেবল হয় না, তা সে যতই সদুদ্দেশ্য-প্রণোদিত বা কল্যানকামী হোক না কেন।
****************************************
অসাধারণ ভাবে দৃষ্টিকোণটাকে ব্যাখ্যা করেছেন যা আমি তখন লিখতে পারিনি, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই কথাগুলোই বলতে চাচ্ছিলাম, আপনি আলাদা আলাদাভাবে বিষয়বস্তুগুলোকে ব্যাখ্যা করে দিলেন| আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমি মনে হয় আপনি প্রতিমন্তব্য করার আগমুহূর্তে বা পরপরই আমার মন্তব্যটা একটু এডিট করেছি। বক্তব্যটা খোলসা করার জন্যই, অন্য কিছু না। তবু একটু দেখে নিয়েন।
****************************************
এই অংশটাতো, দেখেছি| সমস্যা নেই| সবার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা, কিন্তু উপরের অংশের ব্যাখ্যার সাথে একমত বহুলাংশেই| তার জন্যই ধন্যবাদ|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
চমৎকার লিখেছেন মনমাঝি। ধন্যবাদ।
facebook
মনমাঝি অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন বিপ্লবী সংগঠনগুলোর বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্রিক সমস্যাসমূহ। বিপ্লব মানেই সেখানে প্রতিবিপ্লবও থাকবে- আলোর সাথে অন্ধকারের মত। বস্তুত, প্রতিবিপ্লবই বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের মত একটি উন্নত আদর্শ ব্যর্থ হয়ে যাবার কারণটা তাত্ত্বিক নয় বরং প্রায়োগিক এবং সবচেয়ে বড় কারণ সমাজতন্ত্র-বিরোধী প্রপাগ্যান্ডা যা স্যাম চাচা ও তার বন্ধুরা মিলে চালিয়েছে। সোভিয়েতে টিনটিন পড়লেই বোঝা যায় এই প্রপাগ্যান্ডা কতটা সর্বগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক ছিল। স্বভাবতই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে স্তালিনকে উগ্রভাবে বাকস্বাধীনতা হরণ করতে হয়েছিল যা আসলে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সিস্টেম হিসেবে গণতন্ত্র একনায়কতন্ত্রের চেয়ে ভালো। কারণ এতে কাউকে 'ঈশ্বর' হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়া হয় না। সমাজতন্ত্রের 'প্রলেতারিয়েত এর একনায়কতন্ত্র' কথাটিকে যেভাবে ঢালাওভাবে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে, নিরপেক্ষভাবে দেখলে সেটাও একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রপ্যাগান্ডা। চে গ্যেভারা কি গণতান্ত্রিক ছিলেন না? ফিদেল বা মাও বা লেনিন কি অধিকাংশ সাধারণ মানুষের সমর্থন পান নি? জনসমর্থনের দিক থেকে সেটা কি গণতন্ত্রের মূল কথা নয়?
কাজেই সিস্টেমের সমালোচনা হিসেবে সমাজতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নেই- এই কথাটি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সিস্টেমের কোথাও এই বাণী ছিল না। বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের হরণ আসলে প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর একটি মরিয়া প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
আমার মতে গণতন্ত্রের সাথে সমাজতন্ত্রের মিলন সম্ভব এবং তার মাধ্যমেই একটি ওয়েলফেয়ার স্টেটের জন্ম হতে পারে। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও তাই চেয়েছিলেন, কিন্তু কিছু বিপথগামী লুটেরা তা হতে দেয়নি।
আচ্ছা, রাষ্ট্রবিরোধী বাকস্বাধীনতা কি আমাদের দেশের রাষ্ট্রবিরোধী ধনী শক্তিগুলোকে আরো মজবুত করছে না? মাহমুদুর রহমানের মত বিটকেল লোকগুলো কি এই সুযোগের অপব্যবহার করছে না। সীমিতভাবে হলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ কি রাখা উচিত নয়, বিশেষত বর্তমান প্রেক্ষাপটের বাংলাদেশে, যেখানে যাবতীয় পুঁজির সিংহভাগ নিয়োজিত রাজাকার-রক্ষা প্রকল্পে?
ওহ, আর একটা ব্যাপার।
আপনার উপরের বাক্যে যুক্তির সমস্যাটা দেখতে পারছেন? আমি কিউবার বাক-স্বাধীনতা নিয়ে জানতে চাইছি, তন্ত্র নির্বিশেষে বাক-স্বাধীনতার দাবির কথা বলছি। আপনি গণতন্ত্রকে টেনে এনে বলছেন সেখানেও অনেকখানে তো বাক-স্বাধীনতা নেই। এখানে দুটো সমস্যা। প্রথমত গণতন্ত্রের নামও আমি নেই নি, মূলত বাক-স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি। আপনি সেখানে গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ উদয় করছেন, তাকে হারিয়েও দিচ্ছেন, সেটা একধরনের red herring হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, কিউবায় কেনো বাক-স্বাধীনতা নেই, সেটা না থাকাটা কেনো বৈধ, অথবা বাক-স্বাধীনতা রোধ আদৌ সমর্থন করেন কিনা এবং কী কারণে - সেটার সরাসরি উত্তর না করে বলছেন অনেক গণতন্ত্রেও তো বাক-স্বাধীনতা নেই। এতে ফল্স ডিলেমা তৈরি হচ্ছে। অভিযুক্ত একটা জিনিসকে জাস্টিফাই করা হচ্ছে অন্যটাও তো অভিযুক্ত দেখিয়ে। আপনার প্রথম মন্তব্যের বাংলাদেশ প্রসঙ্গও একই সমস্যায় বিদ্ধ।
যেই গণতন্ত্র-নামধারী তন্ত্রে বাক-স্বাধীনতা নেই, সেটা সমালোচনা যোগ্য নয় সেটা তো কেউ বলছে না! কিন্তু সেটার কথা তুলে কি কিউবায় কেনো তা নেই সেটার মূল্যায়ন করা যায়?
আপনি যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে লিখেন। তর্কে সে তুলনায় বেশ খানিকটাই তাচ্ছিল্য বা অবহেলা থাকছে কিনা ভাবছি, নাহলে বার বার যৌক্তিক প্রমাদযুক্ত তর্ক তো ঘটার কথা না। সময় দিয়ে করা সে জিনিসে এতো প্রমাদের মুখোমুখি হওয়া আমারও প্রাপ্য না বলে অনুভব হয় (কিংবা কে জানে সেটাই হয়তো নিয়তি!)। এই দেখেন প্রমাদটা ধরতেই কতো সময় লেগে গেলো। আপনার মন্তব্যের উত্তরে উপরে গণতন্ত্রে বাক-স্বাধীনতা না থাকার উদাহরণ চাওয়ায় আমার মূল প্রশ্নটাই খানিকটা সরে গিয়েছে। এভাবে তর্কের খাতিরে তর্ক করতে চাইলে আমার মন্তব্যের উত্তরে একটা তর্ক ইমো দিলেই কিন্তু আপনারও খাটনিটা বাঁচে, আমারও কিঞ্চিৎ সময় অপচয় রোধ হয়।
গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা কি পারস্পরিক পরিপূরক নয়? তাহলে বাক-স্বাধীনতার কথায় তো গণতন্ত্রের বিষয় আসবে, অন্তত আমার কাছে তো তাই মনে হয়| না তাতে অবশ্যই কিউবার চলমান ব্যবস্থাকে জাস্টিফাই করা হয়ে যায়না, কিন্তু বিষয়টাকে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে যাচাই করা সম্ভব হয়| একটি শাসন ব্যবস্থার ত্রুটি অন্য শাসন ব্যবস্থার দৃষ্টিতে দেখলে অন্তত তুলনামূলক একটি পরিস্থিতি যাচাই সম্ভবপর, তাই নয় কি?
তর্কের খাতিরে তর্ক করে লাভ নেই, কারণ আমি আপনি তর্ক করলেও এই ব্যবস্থাগুলো পরিবর্তন হবেনা| কিন্তু অন্তত এতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যটা সামনে আসবে। তাতে যদি আমি নড়বড়ে অবস্থানে থাকি তাহলে আমার মানসিকতা পরিবর্তন করতে আমি মুক্তমনা বৈকি| যদি মনে হয় আমি ভুল তাহলে অবশ্যই পরিবর্তনের একটি সুযোগ থাকে, তাই না?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আরেকটা কথা ধ্রুবদা, আপনার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মনে পড়ল, কদিন আগে বন্ধুদের আড্ডায় এক ফিনিশ বন্ধু বলেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি খুব বেশী গণতান্ত্রিক? সোভিয়েতদের ছিল একটি রাজনৈতিক দল, আমেরিকায় আছে ২ টি! আসলে ইটস এ ফ্রি কান্ট্রি - এইটা বিশ্বের অন্যতম ফালতু কথা, যে দেশগুলো ( আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স-- অভাবে নেই) নিজেদের লাভের জন্য ইচ্ছামত অন্যদেশে যুদ্ধ বাঁধায় তাদের নীতি আসলে কি! এই ব্যাপারে আপনার মতামত পেলে ভাল লাগবে---
facebook
যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আলাপ করতেই পারি। কিন্তু লিখেছেন ফিদেল ও কিউবা নিয়ে, সেই আলাপ করতে যুক্তরাষ্ট্র আবশ্যক না। "এটা কেনো খারাপ" জিজ্ঞেস করলে যখন সেটার সরাসরি উত্তর না করে "ওটাও কেনো খারাপ" জানতে চাওয়া হয়, তখন ফলস ডিলেমা তৈরি হয়। নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তত্ত্বগত প্রশ্ন করেছি। আপনি নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ পছন্দ করতেই পারেন। আপনার ব্যক্তিগত অবস্থানটা আমার আলোচনার আগ্রহ না, তর্কটা মূল আগ্রহ। নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের পক্ষে যুক্তিগুলোই আমার আগ্রহের মূল কারণ।
আর ফ্রিডম বলতে আপনার ধারণা কী সেটাও প্রশ্ন। আপনার একটা মুরগির ফার্ম আছে। আপনি নিজে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের অধীন আছেন। পার্টির সাথে দ্বিমত করার সুযোগ আপনার নেই। ভিন্নমতের রাজনীতি দূরের কথা। অসাধারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। খাদ্যও পাচ্ছেন। আপনার ফার্মের মুরগিও পাচ্ছে। আপনি যদি এখানে ফ্রি হন তো আপনার ফার্মের মুরগিকেও ফ্রি বললে খুব দোষ হবে কিনা সেটাও একট প্রশ্ন।
যুদ্ধের শোধ যুক্তরাষ্ট্রকে একদিন চোকাতেই হবে। কিন্তু ভিন্নমতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্যে অন্যদেশে যুদ্ধ করতেই হয় তা তো আর না। যুক্তরাষ্ট্র একশবার যুদ্ধ করলেও সেটা সত্য হয় না। আমি যুক্তরাষ্ট্রের ঝাণ্ডা নিয়েও হাজির হই নাই যে তাদের নীতি নিয়ে বাক্যব্যয় করবো। যুক্তরাষ্ট্র চুলায় যেতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্নগুলো তাতে তারপরও জারি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল উদাহরণ হিসেবে ধরেছি, যেমন আমাদের বাংলাদেশেও তো দুটাই মূল দল! কি হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা আমাদের এইখানে, যে খানে ৬ কোটি লোক এখনো ৩ বেলা ঠিকমত খাবার পায় না।
আপনি আগেও ফার্মের মুরগীর সাথে তুলনীয় ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন ( কোন লেখাতে) , কিউবা অল্প দেখাতে এইরকম পরিস্থিতি মনে হয় নি আমার। আবার এটাও মনে হয়েছে স্বল্প ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কোন সদস্য দেশেই এমন সুব্যবস্থা অনেক কিছুরই ছিল না।
কিউবার সাথে অন্য যে কোন দেশের তুলনা করা দুরূহ কারণ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটি ( সামরিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ভাবে) তাদের যে ভাবে কোনঠাসা করে রেখেছে তাতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই যে কোন সরকারের নাভিশ্বাস উঠে যাবার কথা, সেখানে তাদের অগ্রগতি তো হয়েছেই অনেক অনেক ক্ষেত্রেই, এই জিনিসটাও যথেষ্ট সন্মানের দাবীদার।
facebook
যথেষ্ট সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করছি, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ত্যাগ, তিতীক্ষা, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, মহত্ব, কিউবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, সবই স্বীকার করছি। প্রশ্ন হচ্ছে এ থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই? একজন মহান মানুষ একহাতে দেশের কর্তৃত্ব ধারণ করলে দেশ উদ্ধার হয়? আর সেই উন্নয়নের জন্যে নিয়ন্ত্রণ, নিষিদ্ধকরণ, বাক-স্বাধীনতারোধ বৈধ? আপনি বাংলাদেশের এটা অ্যালাও করবেন? আওয়ামী লীগ ফেইসবুক ব্যান করলে সমস্যা, আপনি আমি প্রতিবাদ করছি, কিন্তু যদি একদিন দেখতে পারেন বাংলার কোনো চে গুয়াভারা এসে দেশটার দায়ভার লুফে নিয়েছে, তখন একবাক্যে মিডিয়ার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে দিতে রাজি হয়ে যাবেন? আমি যথেষ্ট সম্মানের দাবীদার এই বিষয়টা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টাও জানতে ইচ্ছুক। আমি কিউবা বা ক্যাস্ট্রোর অর্জনকে খাটো করছি না, কিন্তু আমার আগ্রহের বিষয়টা এখানে কী আশা করি বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ, বিষয়টা নিজেদের মধ্যে আলাপ করেই পরিষ্কার হবার চেষ্টা করছি।
ভাল্লাগলো প্রিয় দুজন মানুষ নিয়ে এই লেখা দেখে
ধন্যবাদ লীলেন দা, আপনার লেখা পড়ি না কিন্তু অনেকদিন! কবে আসছে?
facebook
এই লেখাটা অন্যরকম হইসে। দুই মহামানব এক ফ্রেমে। চমৎকার লাগলো
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
facebook
গত একশ' বছরের বেশি সময় ধরে দুনিয়াজোড়া প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতারা যত তত্ত্ব হাজির করেছেন সেগুলোর খুব অল্পই তারা প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। সে'সব নেতাদের বেশিরভাগের গোটা জীবন চলে গেছে শুধু তত্ত্ব কপচে। সেই তত্ত্ব বাস্তবের দুনিয়াতে প্রয়োগ করতে গেলে কী কী সুবিধা-অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে তা পরীক্ষণের চেষ্টাটা আর করেননি। এমনকি প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যে সব তত্ত্ব ফেল করেছে সেগুলোর পক্ষে কুযুক্তি দিয়ে এঁড়ে তর্ক করার মতো তাত্ত্বিকেরও অভাব নেই।
ফিদেল বা নেলসন কেউই দেবতা বা অবতার নন্। অমন দাবী তারা করেনও না। অল্প বয়স থেকে বাস্তবের শক্ত মাটিতে তত্ত্বের প্রয়োগ, তার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার সবই তারা করে গেছেন নির্দ্বিধায়। এখানেই "চক্ষু-কর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা" তাত্ত্বিক বা নেতাদের সাথে তাঁদের পার্থক্য। তাঁরা মানবিক সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে অমন ফালতু দাবী করবো না। তবে অনেক প্রলোভন ও মোহকে তাঁরা অনায়াসে ত্যাগ করতে পেরেছেন। তাঁরা এটা পেরেছেন তাঁরা মানুষকে ভালোবাসতে জানেন বলে। তাঁরা প্রতিপক্ষকে সুযোগ পেলে "হালাল" বা "উৎখাত" করে, আর সুযোগ না পেলে যথেচ্ছ গালি দিয়ে নিজের অভ্রান্ত অবস্থান জাহির করেননি। নিজে কাজ করে অন্যের জন্য স্পষ্ট দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
স্তালিন পরবর্তী সোভিয়েত ইউনিয়ন, মাও পরবর্তী গণচীন, তিতো পরবর্তী ইয়োগোশ্লাভিয়া, হো পরবর্তী ভিয়েতনাম আর হোজ্জা পরবর্তী আলবেনিয়া প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র এক একটি কেস - ইতিহাসের পাঠকদের কাছে ইন্টারেস্টিং এক একটি বিষয়। ফিদেল পরবর্তী ক্যুবা কেমন হবে সেটা অনেকেরই আগ্রহের বিষয়। ফিদেল ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে গেছেন, সুতরাং ফিদেল পরবর্তী ক্যুবা কেমন হতে পারে সেটার শুরু কিন্তু হয়ে গেছে। আস্থা আছে, ফিদেল যখন থাকবেন না ক্যুবা তখনও তার মানবিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবে না।
ভিভা ক্যুবা! ভিভা ফিদেল দে লা গেন্তে!
--------------------------------------------------------
গোটা লেখাটা পড়ার সময় একবার ভুলেও মনে হয়নি শেষে আমার জন্য কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে! আমি ইতিহাসবেত্তা নই, ঐতিহাসিকও নই - ইতিহাসের অনিয়মিত পাঠক মাত্র। মাঝে ইতিহাসের কয়েকটা ঘটনা নিয়ে টুকটাক লিখেছিলাম, এখন তাও লিখি না। এই লেখাটা দিয়ে তারেক আমাকে একটু দায়ে ফেললো। যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সে দায় শোধ করার।
তারেককে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, সে এমনিতে বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট। কামনা করি তার প্রতিটি অভিযাত্রা সফল, নিরাপদ, সুন্দর ও আনন্দময় হোক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নিজে কাজ করে অন্যের জন্য স্পষ্ট দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।---- এর চেয়ে স্পষ্ট ভাবে কি আর বলার আছে!
নিয়মিত একটু লিখলেনই না হয়!
আমাকে অণু বললেই হবে, শুভেচ্ছা।
facebook
facebook
নিজে কাজ করে অন্যের জন্য স্পষ্ট দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।---- এর চেয়ে স্পষ্ট ভাবে কি আর বলার আছে!
নিয়মিত একটু লিখলেনই না হয়!
আমাকে অণু বললেই হবে, শুভেচ্ছা।
facebook
লেখা পড়ি আর ভাবি, পদ্মা আসলে কর্ণফুলীর চেয়ে অনেক বড়! কর্ণফুলীর পাড় থেকে শুভেচ্ছা।
এ ইউসুফ
নদী মাতা, মাতা নদী!
facebook
ফিদেল, ম্যান্ডেলা, চে এই তিনজন আইকনকে নিয়ে যতই পড়ি ততই মনে হয় আরও জানার আছে। (গুড়)
ফিদেলের সমাজ ব্যাবস্থাকে অনেকেই সঠিক মনে করেন না। আসলে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও জীবনযাপন আমাদের এতটাই অন্ধ করে রেখেছে যে ফিদেল তার সমাজ ব্যাবস্থাকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচা যায়, ভোগ-বিলাস, প্রমোদ বা উচ্চাবিলাসি হওয়া যায় না। যে দেশে একটা পথশিশু নেই, সে দেশের সমাজ ব্যাবস্থাপক কতটা বিচক্ষণ হলে এই সুন্দর ও কঠিন ব্যাবস্থাটি বহাল করতে পেরেছেন। আহা!!! মাঝে মাঝে ভাবি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা যদি তাদের পথ অনুসরন করতো।
ধন্যবাদ অণু'দা সুন্দর একটি পোস্টের জন্য।
আমরা চাকচিক্যের পিছনে ছুটি যে সর্বদাই! আরো কিছু বিশদ ব্যাপার আছে, পরে লিখব, হয়ত বলিভিয়া নিয়ে।
facebook
facebook
শুধু এই একটি অর্জন এর জন্য যেমন আমি ফিদেল কে আভূমি প্রনাম করতে প্রস্তুত, তেমনি এই একটি লাইনের জন্যই তোমার এই লেখাটি আমার সব থেকে প্রিয় লেখা হয়ে গেলো।
কিউবা, ফিদেল, চে, সমাজতন্ত্র- এই চারটি বিষয় নিয়ে মনে হয় আমি অক্লান্ত তর্ক করে গেছি সেই সময় থেকে যখন থেকে বুঝতে শিখেছি এই বিষয়গুলোকে। সব সময়ই বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাওয়া লোকের সংখ্যাই বেশি ছিলো, আগে প্রচেষ্টা ছিলো এদের সবাইকে বোঝানোর, কিন্তু এখন আর তর্ক করিনা। কারণ যারা নিজেদের সামগ্রিক ভালো না দেখে অপরের দোষটাই আগে খুঁজে বের করতে চায় তাদের কিছু বোঝানো সম্ভব নয়!!
ফিদেল কিংবা ম্যান্ডেলা কিংবা চে, এরা রক্ত-মাংসের মানুষ, তাই সবক্ষেত্রেই নির্ভুল হবে তাদের পদক্ষেপ এটা আমি চিন্তা করিনা। কিন্তু এই মানুষগুলো যখন সমগ্র বিশ্বের অসংখ্য দেশের অসংখ্য নেতার থেকে আলাদা হয়ে জনসাধারণের উন্নতির জন্য সত্যিকার অর্থেই জীবন উত্সর্গ করে যাচ্ছেন তখন আমি অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধা করবো। এই শ্রদ্ধা আসবে তাদের চারিত্রিক গুনাবলীর জন্য, এই শ্রদ্ধা আসবে তাদের ত্যাগের জন্য।
শুধু এই মানুষগুলোর জন্যই হয়তো স্রোতের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার সাহস পায় আরও অসংখ্য মানুষ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ফিদেলের ব্যাপারটা কিন্তু বেশ আলাদা, কিউবা নিয়ে তার আরও অন্য ধরনের চিন্তা ছিল, কিন্তু মার্কিনীদের একগুয়ে একতরফা বিরোধিতার জন্য তার সামনে অন্য কোন পথ খোলা ছিল না।
facebook
প্রিয় দুজন মানুষকে নিয়ে অণুর অসাধারণ লেখা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অনেক অনেক তথ্য বাদ পড়ে গেছে, পরে আশা করি আলাপ হবে আবার। লন্ডনে কয়দিন থাকবেন আগস্টে?
facebook
লন্ডন আর অক্সফোর্ড মিলায়ে সপ্তাহদুয়েক থাকা হবে আশাকরছি। ছুটি আর ভিসা মিললে একটু সুইডেন আর ফ্রান্সে ঢুঁ মারার ইচ্ছেও আছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সুইডেন আসলে অবশ্যই হেলসিংকি আসবেন, আমি সময় ফ্রি রাখব আগে জানালে।
facebook
সত্যিকারে মানুষ । এই মহামানবদের জন্যই মানবমুক্তির স্লোগান বেঁচে থাকে- জ্বলে থাকে অনির্বাণ বাতিঘর ।
শ্রদ্ধা- অশেষ শ্রদ্ধা
facebook
ম্যান্ডেলা সত্যি একজন ইন্সপায়ারিং ব্যক্তিত্ব!
আমার মতে তার একটা ইউনিক বৈশিষ্টি হলঃ অন্য অনেক বড়মাপের মানুষের চেয়ে তিনি যেন আমাদের অনেক বেশি কাছের মানুষ, রক্তমাংসের ধরাছোঁয়ার মধ্যেকার মানুষ - যাকে কিছুটা হলেও সাধারণ সংসারী মানুষ অনুসরন করার চেষ্টা করে দেখতে পারে। ধর্ম, বিপ্লব, ইত্যাদি বিশাল সব বিষয় দিয়ে তিনি দূর্ভেদ্য নন। কয়জন সাধারণ মানুষ ফিদেল বা চে হতে পারবে বা এমনকি তাদের অনুসরন করারও চেষ্টা করতে পারবে? তাছাড়া আইডোলজিকাল কারনেও তারা অনেকের কাছে এ্যাক্সেসিবল হবেন না হয়তো। অনেকে ম্যান্ডেলাকে গান্ধীর সাথেও তুলনা করেন। এটাও মনে হয় ঠিক না। মানবতার পক্ষে বিশাল অবস্থান নিলেও গান্ধীর জীবনে ধর্ম একটা ড্রাইভিং ফোর্স ছিল, যার কারনে তিনি বা তার সব বিষয় অনেক বিদেশী মানুষের ঠিক এ্যাক্সেসিবল না। তাছাড়া গান্ধীর মত মানুষদের চতুর্পার্শ্বে একটা সন্তদের হ্যালো থাকে যা তাদের সাধারন মানুষ থেকে অনেকখানি দূরবর্তী করে দেয়, আমমানুষের কাছে যা তাদের স্বাভাভিক জীবনে অনুসরনঅযোগ্য এবং স্রেফ পূজার উপযুক্ত একটা ঠাকুরঘরের প্রতিমাতে পরিণত করে হয়ত। চে বা ফিদেলের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টা একটু অন্যভাবে প্রযোজ্য মনে হয়।
কিন্তু ম্যান্ডেলার চারপাশে যেন এমন কোন সন্তত্ব, ধর্ম, আইডিওলজি বা বিপ্লবের দূর্ভেদ্য হ্যালোর বর্ম নেই। হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যায় তাঁর রক্তমাংসের শরীর। তাঁর হাসি দেখলে বা সাধারন মানুষের সাথে মিশে নৃত্যরত ভঙ্গিতে নাচগান করতে দেখলে তাঁকে নেহাতই কোন আপনজন মনে হয়। তিনি অন্তত দু-দুবার প্রেম ও বিয়ে করেছেন, সন্তান-সন্ততি-নাতি-নাতনি ভরপুর সংসার নিয়ে পুরোদস্তুর একটা রেগুলার প্রাণবন্ত জীবনযাপন করেছেন জেল থেকে বেরুনোর পর - বেঁচে থেকেও নিজেকে কোন ধরাছোঁয়ার বাইরে দূরবর্তী বেদীর উপর দাঁড় করিয়ে অনন্তকাল পূজার উপযোগী জীবন্ত-মূর্তি বনে যাননি। অথচ এর পরেও তিনি অসাধারন!
এজন্যেই তাঁকে এত ভাল লাগে। প্রাণতপ্ত, এ্যাক্সেসিবল আর ইন্সপায়ারিং মনে হয়। মনে হয় তার অসাধারনত্ব কিছুটা হলেও আমমানুষের পক্ষে অনুসরনযোগ্য - বীর বা ফেরেশ্তা না হয়েও!
একটা মজার ঘটনা মনে পড়ছে। ম্যান্ডেলার প্রেসিডেন্সির সময় যখন ইনকাথা ফ্রীডম পার্টি (?) নামের প্রধান জুলু বিরোধী দলের সাথে বিরোধ তুঙ্গে, বিশেষ করে এর তৎকালীন নেতা যখন ম্যান্ডেলার আর এএনসির চরম (প্রায় রেইসিস্ট) বিরোধিতায় লিপ্ত, সেসময় একবার ম্যান্ডেলা একটা দীর্ঘ বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে ঐ চরম শত্রুতামূলক আচরনকারী নেতাকেই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। অনেকগুলো বছর আগের ঘটনা, তাই আমার স্মৃতিতে কিছু ভুলচুক থাকতেও পারে, কিন্তু ঘটনা এর কাছাকাছিই কিছু ছিল মোটামুটি।
আমি শুধু ভাবছি, আমদের দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীণ অবস্থায় কোন বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে অন্যজনের প্রতি এ্কই ধরণের কোন জেশ্চার দেখানোর মত উদার হতে পারবেন কি?
****************************************
খুব সুন্দর করে লিখেছেন, ম্যান্ডেলাকে নিয়ে নির্মিত একটা চলচ্চিত্রের রিভিউ লেখব শীঘ্রই, সেখানেও এমন কিছু ঘটনা থাকবে।
facebook
লেখা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। একই লেখায় ম্যান্ডেলা আর ফিদেল- কী আর বলবো যেন টাকা পয়সা জমাইয়া আইসক্রীম খাইতে গেলাম আর বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হ্ওয়ায় আরেকটা আইসক্রীম ফ্রী খাইয়া দিলো।
ফিদেল আইনজীবি এইটা জানতাম না।যাক স্বর্গে একটা আইনজীবি তো যাইবো।
(গুড়)
ফিদেল তো স্বর্গে বিশ্বাস করেন না, তাই মনে হচ্ছে না স্বর্গের আইনজীবী প্রাপ্তি হবে!
facebook
পছন্দের দুই নেতা। লেখা ভাল্লাগলো
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পছন্দের দুই মানুষ।
facebook
বরাবরের মত ভালোই লেখা।
নাহ, এইটা মনমত হয় নি, অনেক বিশাল কলেবরে লিখতে হত, পরে কোন সময়।
facebook
প্রিয় দু'জন মানুষ। ভাল একটা লেখা। শিরোনাম দেখে ভেবেছিলাম ডেড পোয়েটস সোসাইটি নিয়ে কোন রিভিয়্যু হবে বুঝি।
হা হা, হবে হবে ! এত প্রিয় একটা সিনেমা।
facebook
ভালো লাগলো।
দেব মুখার্জি
[db.dev.m@gmail.com]
--------------------------------------------------------------
দেব এর উঠোন ॥ ফেইসবুক ॥ গুগলপ্লাস
ধন্যবাদ।
facebook
ঘ্যাচাং
মান্দেলা ঠিক আছে।
কিন্তু কাস্ত্রো খুবই শস্তাদরের পেশাদার রাজনীতিবিদ - যেরকম বাংলাদেশে এখন কয়েকডজন মজুদ আছে। কেন কারন অনেক। সাম্য়বাদের বুলি কপচানো এই লোকটি কলম্বিয়া যাবার আগে পরযন্ত নিজে বাপের টাকা উড়িয়েছে, ছাত্রাবস্থায় হাভানায় বিলাসবহুল ফ্লাটে থেকেছে, খুঁজে পেতে বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করেছে (নিউ ইয়র্কে কাস্ত্রোর মধুচন্দ্রিমার বাজেট ও টাকার উতস দ্রষ্টব্য়), নিজ হাতে দেশের (উন্নত) শিক্ষাব্য়াবস্থা গড়ার পরে ঠিকই নিজের সন্তানকে উচ্চশিক্ষার্থে পাঠিয়েছে মস্কোতে। শোনা যায় তার সুইস একাউন্টের কথা। গণতন্তের কথা বলে নিজের দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতাকে সে গলা টিপে মেরেছে (২৬ জুলাই কমিতি বিতর্ক ও ৬০ এর প্রতিরক্ষা কমিটি দ্রষ্টব্য়), এবং রাজনঐতিক প্রতিপক্ষই শুধু নয়, নিজের জীবন বাচাতে সে সহযোদ্ধাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়েছে (৫৬ এর ডিসেম্বরে 'গ্রান্মা' যখন তীরে ভিড়ল, তার পরের ঘটনা দ্রষ্টব্য়) পাইকারি খুন
যেটা সে সবার জন্য় ঠিক মনে করেছে, নিজের বেলায় সেগুলোকে তার যথেষ্ট মনে হয়নি।
"পরবর্তীতে মেক্সিকোতে নির্বাসনে পাঠানো হয় ফিদেল ও রাউল সহ অন্যান্য কয়জন কিউবান বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টাকে।"
কাস্ত্রো ভাইয়েদের মেক্সিকোতে পাঠানো হয়নি, তারা সেখানে নিজে থেকেই গিয়েছিল।
"কিংবদন্তীর গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে তো তাইই বলেছেন কিউবার অবদান ছাড়া বর্তমানের আফ্রিকা হতে পারত সম্পূর্ণ অন্য ধরনের, বিশেষ করে অ্যাঙ্গোলা হয়ত উপনিবেশই থেকে যেত।"
কিউবার আফ্রিকা যুদ্ধের অনেকটা ফরাসি ও বেলজিক উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ঘটেছে বলেই প্রচারিত হয়। এই ভিত্তিতে প্য়ারিস ও ব্রাসেল্সের সাথে হাবানার বন্ধুত্ব সম্পর্ক থাকার কথা না। কিন্তু ৬০ সালে বেলজিল অস্ত্র ভরা ফরাসি জাহাজ ফরাসি জাহাজ কেন কিউবায় অস্ত্র সরবারহ করছিল (সি আই এ হতে দেয়নি শেষমেশ) কিভাবে? ফ্রান্স/বেলজিয়ামের উপনিবেশিকতা নিয়ে কাস্ত্রো-চে জুটির কি কোন ভুল হয়েছিল?
প্রিয় দুর্দান্ত, এই পোস্টটির একটি মূল বক্তব্য হচ্ছে ম্যান্ডেলা ফিদেলকে মাই প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করেন। কেন করেন? কি জন্য করেন? এই উত্তরটা আপনিই দিন।
কিন্তু কাস্ত্রো খুবই শস্তাদরের পেশাদার রাজনীতিবিদ - যেরকম বাংলাদেশে এখন কয়েকডজন মজুদ আছে। এই কথাটির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, একজন দেখান না , স্রেফ একজন! যে মানুষটি চার দশক রাষ্ট্রপতি থাকার পরও দেশের টাকাতে তার ছবি থাকে না, সেই দেশের কোন রাস্তা তার নামে হয় না, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার নামে হয় না, কোন মোড়ে তার মূর্তি শোভা পাই না= সেই লোক যদি আপনার দৃষ্টিতে শস্তাদরের পেশাদার রাজনীতিবিদ হয়ে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
কাস্ত্রো ভাইয়েদের মেক্সিকোতে পাঠানো হয়নি, তারা সেখানে নিজে থেকেই গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? নির্বাসনে বলাটা আমার ভুল তথ্য ছিল কিন্তু প্রাণ বাঁচাতেই সাময়িক ভাবে নয় কি !
সুইস ব্যাঙ্কে অ্যাকাঊন্ট শুধু নয়, আমেরিকান প্রচার যন্ত্র পারলে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কালো টাকার মালিক বলে প্রচার করে প্রতিদিন, প্রমাণ আছে ! প্রমাণ দেন।
নিজ হাতে দেশের (উন্নত) শিক্ষাব্য়াবস্থা গড়ার পরে ঠিকই নিজের সন্তানকে উচ্চশিক্ষার্থে পাঠিয়েছে মস্কোতে উন্নত বলতে যদি আপনার সন্দেহ থাকে তাহলে নেটে যাচাই করে নিন না ভাই! সন্দেহের কি আছে- যে কিউবার শিক্ষা ব্যবস্থা কতখানি উন্নত, এবং তা সবার জন্য উম্মুক্ত কিনা! যদি তার বড় ছেলে ফিদেলিতোর কথা বলে থাকেন রাজনৈতিক বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত করার জন্য সেটা হয়ত করা হয়েছিল, কিন্তু ফিদেলের বাকি কয়জন সন্তান এবং তাদের নাম জানেন কি? আপনি না, আমরা কেউই জানি না, তিনি স্বজনপ্রীতি করেন নি, এইটা কি তার প্রমাণ নয়!
নিজের জীবন বাচাতে সে সহযোদ্ধাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়েছে (৫৬ এর ডিসেম্বরে 'গ্রান্মা' যখন তীরে ভিড়ল, তার পরের ঘটনা দ্রষ্টব্য়) এই বিষয়টি নিয়ে কিউবার বিল্পবের জাদুঘর নামে আমার একটি পোস্ট আছে, গ্রানমার ছবি সহ।, হাতে সময় থাকলে পড়ে দেখেন, আপনার কাছে এই তথ্যগুলো মনে হচ্ছে ভুল পৌঁছেছে।
সাম্য়বাদের বুলি কপচানো এই লোকটি কলম্বিয়া যাবার আগে পরযন্ত নিজে বাপের টাকা উড়িয়েছে, ছাত্রাবস্থায় হাভানায় বিলাসবহুল ফ্লাটে থেকেছে, খুঁজে পেতে বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করেছে (নিউ ইয়র্কে কাস্ত্রোর মধুচন্দ্রিমার বাজেট ও টাকার উতস দ্রষ্টব্য়)
উনি কি জন্মথেকেই ফিদেল ছিলেন, না ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে হয়েছেন। নিজে তো ধনী পরিবারের দুলালই ছিলেন, তাহলে গণমানুষের পক্ষে আসলেন কেন? খুঁজে পেতে সে প্রথম বিয়ে করে নি, তাকে বিয়ে করার জন্য যারা উদ্গীব ছিল তাদের মধ্য থেকেই একজনকে করেছিলেন, এত্তেয়া ব্রাভোর ডকুটা দেখা থাকলে আপনার এগুলা জানা থাকার কথা।
facebook
আপনি দুজন মানুষকে আলোর দিশারি ভাবছিলেন, আমি বললাম অন্তত ফিদেলের বেলায় এই আলো কিছুটা স্তিমিত। ম্যান্ডেলা গাদ্দাফিকেও 'ভালবাসতো', সাদ্দামের প্রতিও তার দুর্বলতার আভাস পাওয়া গেছে। আমি ধরে নিচ্ছি খুব শীঘ্রই আপনি গাদ্দাফি ও সাদ্দামের আলোকিত দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
ফিদেলের পরে তার ভাই যে কিউবার প্রেসিডেন্ট হল, তার পদ্ধতিটা কি ছিল? জিয়ার পরে খালেদা, শেখের পরে হাসিনা - বিষয়টা এরকম হতে পারে কি? নাকি রাউল নিজেও একজন আলোকিত ব্যাক্তি। আচ্ছা, রাউল কি উপায়ে ২৬ জুলাই কমিটিতে উঠে এসেছিল, সেটা বলবেন কি? প্রেসিডেন্ট হবার আগে রাউল একাধারে দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান ও মন্ত্রীসভার প্রধান করা হয়েছিল কেন? কিউবায় কাস্ত্রোর ভাই ছাড়া আর কোন সুযোগ্য নেতা ছিলনা বিধায় আপন ভাইয়ের কাছে রাষ্ট্রের দুটি স্তম্ভের দায়িত্ব দেয়া হল, আর সরকারসহ ও দেশের সবাই ঘাড় কাত করে এটা মেনে নিল - শুধু এই বিষয়টাই বলে দেয় কিউবার শিক্ষাব্যাবস্থা ঠিক কতটুকু উন্নত। বাংলাদেশে যদি শেখ হাসিনা শেখ রেহানার কাছে সেনাবাহিনী ও ক্যাবিনেটের দায়িত্ব দেয়, আপনার কি মনে হয়, আমাদের খোঁড়া শিক্ষা/সরকার ব্যাবস্থায় (অ)শিক্ষিত মানুষজন জিনিসটাকে কিভাবে নেবে?
মূর্তি আর রাস্তার নামের দরকার হয় যাদের নিয়ন্ত্রনের ওপরে সন্দেহ আছে। কিউবায় কাস্ত্রো পরিবারের জমিদারি পাকাপোক্ত। তাদের মূর্তি, মূরাল আর নামের মোহ নেই। সরকার ও সামরিক বাহিনীতে যে ফিদেল ও রাউলের একচ্ছত্র আধিপত্য তা আগেই বলেছি। এবার আসুন খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-ওষুধ ইত্যাদির কথাঃ
১) ভাই রামোন কাস্ত্রো জতীয় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প ও আবাসিক জমি/বাড়ী বরাদ্দ ব্যাবস্থাপনার পরিচালক
২) স্ত্রী ভিলমা এস্পিন কিউবান নারী পরিষদের সভানেত্রী
৩) পুত্র দিয়াল বালাজ ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কিউবার পারমানবিক শক্তি কমিশনের প্রধান নির্বাহী
৪) রাউলের মেয়ের জামাই লুইজ কালেহা কিউবার সামরিক বাহিনীর ট্রাস্ট (যা কিনা সেদেশের সবচাইতে বড় বানিজ্যিক ও নির্মান প্রতিষ্ঠান ও বটে) এর প্রধান
৫) রাউলের আরেক মেয়ের জামাই মার্কস পোর্টাল কিউবার বুনিয়াদি শিল্প (লৌহ, লবন, সিমেন্ট, বন্দর, রেল) প্রতিষ্ঠানের প্রধান
৬) কাস্ত্রো ও রাউলের আরেক ভাস্তি জামাই হোজে আন্তোনিও ফ্রাগা কিউবার একমাত্র কেমিকেল, প্লাস্টিক, ফার্মাসিউটিকাল ও কীটনাশক তৈরীর প্রতিষ্ঠান (লিবিওফার্ম) এর প্রধান।
আপনি ফিদেলকে ভালবাসেন। আমি বাসিনা।
মনকাদা ব্যারাক আক্রমণ থেকে শুরু করে কিউবার সংগ্রামের প্রতি মুহূর্তেই কি রাউল ঠিক ফিদেলের পাশে পাশেই ছিলেন না? ভিলমা তো সেই সিয়েরা মাদ্রের যুদ্ধের দিনগুলো থেকেই তাদের সঙ্গিনী।
জানি ম্যান্ডেলা মহান মনের মানুষ, অনেককেই ভালবাসেন। কিন্তু বেছে বেছে তখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এং ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের চক্ষুশূল ব্যক্তিকে মাই প্রেসিডেন্ট বলে তখন অবাক হতেই হয়। এর মাঝেও অনেক প্রশ্নের উত্তর নিহিত থাকার কথা।
আমি তাদের দুইজনকেই আলোকিত মানুষ মনে করি।
facebook
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কলা দেখালে তারেক খুশি হতে পারে, কিন্তু তাতে কি কাস্ত্রোশুদ্ধি ঘটবে?
অনু'দার মন্তব্যে আমি খুশি হওয়াতে থাম্বসআপ দেখিয়েছি, উনি খুশি হলেন কিনা সেটা তো মুখ্য ছিলোনা!! আর উনি যদি খুশিও হন, তাতেই বা কি সমস্যা? মতের মিল থাকলে আমি তাদেরকে থাম্বসআপ দেখাবো তার জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয়না। আর কাস্ত্রোকে শুদ্ধ করতে যাওয়ার আগে নিজে যেই দেশের মানুষ আমরা, সেই দেশের দিকে একবার তাকানো দরকার।তারপরে নাহয় শুদ্ধিটা কার আগে দরকার ভেবে দেখা যাবে, কেমন?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কাস্ত্রোদের স্বজনপ্রীতি আপনার চোখে তাদের আলোকচ্ছটাকে অসুবিধায় ফেলতে পারেনি দেখে আমোদিত হয়েছি। আফ্রিকায় বেলজিক ফরাসি গুলিতে শত কিউবানে রক্ত ঝরিয়ে আবার সেই ফরাসি-বেলজিকদের সাথে অস্ত্রবানিজ্যে লিপ্ত হবার প্রসংগে আপনার মতামত জানা হলনা।
"বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এং ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের চক্ষুশূল ব্যক্তিকে মাই প্রেসিডেন্ট বলে তখন অবাক হতেই হয়। এর মাঝেও অনেক প্রশ্নের উত্তর নিহিত থাকার কথা।"
কি সেই প্রশ্ন? আর তার উত্তর ই বা কি?
রাজনীতিক কচকচানিতে না যেয়ে শুধু এটাই বলতে চাই কোন মানুষ সম্পূর্ণ রূপে দোষমুক্ত না কিন্তু ম্যান্ডেলা বা কাস্ত্রো তাদের দেশের জন্য যা করেছে তাতে মানুষ তাদের যুগযুগ সম্মান করবে
'কিউবায় পথশিশু নেই, এই একটা অর্জনের জন্য আমি তাদের সরকারের সমস্ত দোষ ক্ষমা করতে রাজি আছি।'
আমাদের দেশেও কোন সরকার যদি এই একটি অর্জন দেখাতে পারে তবে আমিও তার সব দোষ ক্ষমা করতে রাজি আছি।
ইসরাত
facebook
নতুন মন্তব্য করুন